Search

Wednesday, January 9, 2019

শ্রমিক বিক্ষোভ সংঘর্ষ, ভোগান্তি

পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় কমিটি


নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও বেতন বৈষম্য রোধের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শিল্প শ্রমিকরা। রাজধানীর কালশি, উত্তরা, সাভার এবং গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাভারে গুলিতে সুমন মিয়া নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা। মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল ও থানা পুলিশ নিশ্চিত করলেও কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল উত্তরার আজমপুর ও সাভার এলাকায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় বিমানবন্দর সড়ক থেকে উত্তরার জসিমউদ্দিন মোড়, আজমপুর রেলক্রসিং এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে মিরপুরের পল্লবীর কালশিতে। এ সময় এসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকালে জরুরি বৈঠকে ডাকে সরকার। ওই বৈঠকের বিষয়টি শ্রমিকদের অবগত করার পর তারা রাস্তা থেকে সরে যায়। বৈঠক শেষে জানানো হয় মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান করারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। 

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ  করছেন গত চার দিন ধরে। গতকালও একই দাবিতে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। ওই এলাকার নীপা গার্মেন্ট, চৈতি গার্মেন্ট, ফ্লোরা ফ্যাশন, অ্যাপারেলস গার্মেন্টসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা এতে অংশ নেন।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গার্মেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা বিমানবন্দর সড়কের দিকে এগিয়ে যায়। আগে থেকেই সেখানে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিলো। এমনকি আশেপাশে ছিলো সাঁজোয়া যান। বিমানবন্দর সড়ক অবরোধকালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে জসিম উদ্দিন মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের একাংশ জড়ো হয় আজমপুরে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ সময় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও শ্রমিকরা অবস্থানে অটুট থাকে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। দুপুরের পর আবারো তারা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

ওদিকে মিরপুরের পল্লবীতে জড়ো হয়ে দাবি আদায়ের জন্য নানা স্লোগান দেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল ৯টার পর থেকে তারা কালশি সড়কে অবস্থান নেন।  এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে ২২ তলা গার্মেন্ট এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। একপর্যায়ের শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। পল্লবী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) জানান, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। তবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সাভারে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, নিহত ১: সাভার-আশুলিয়ায় বেতন বৈষম্যের অভিযোগ এনে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা  ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মিয়া (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মো. মকুল নামে আরো এক শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, পুলিশ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা যায়। পরে সাভার মডেল থানার ওসি আবদুল আউয়াল স্বাক্ষর করে নিহতের মৃতদেহটি নিয়ে যায়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, মো. সুমন মিয়া এক শ্রমিককে তার সহকর্মী রিপন মিয়া ও পুলিশ বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নিয়ে আসে। তার বুকের বাম পাশে গোল চিহ্ন রয়েছে তা গুলি কিনা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। এ ছাড়া মো. মকুল নামে আরো এক শ্রমিকের বাম উরুর পেছনে গুলি পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহতের খবর শুনেছি। তবে ওই কারখানায় আমাদের কোনো লোক না থাকায় বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামিনুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। তবে আমাদের সঙ্গে ওই কারখানার শ্রমিকদের কোনো সংঘর্ষ কিংবা গুলির ঘটনা ঘটেনি।

সকালে সাভারের হেমায়েতপুরে পদ্মার মোড় বাগবাড়ি এলাকায় এই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের এই সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সকাল ৮টা থেকে দুপুর  পর্যন্ত চলে। এ সময় ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় যানচলাচলসহ সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, হেমায়েতপুরের পদ্মার মোড় বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে পার্শবর্তী দীপ্ত অ্যাপারেলস কারখানাসহ আরো বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও আন্দোলনে যোগ দেন। পরে তারা হেমায়েতপুর-শ্যামপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে অবরোধ করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

সংঘর্ষে এ সময় পুলিশসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে শ্রমিক পুলিশের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুরো এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন শাখা সড়ক ও গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে শ্রমিকদের প্রতিহত করে। শ্রমিকরা জানায়, আমাদের ন্যূনতম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন গত ডিসেম্বরে জারি হয়েছে।

কিন্তু সেখানে আমাদের সব দাবি-দাওয়া উত্থাপন হয়নি। অপারেটর ও হেলপারের বেতনের মধ্যে অনেক বৈষম্য ও ব্যবধান রয়েছে। আমরা এগুলো দূর করার কথা বলছি। কিন্তু মালিকপক্ষ আমাদের দাবিতে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। অন্যদিকে সাভার পৌর এলাকার দক্ষিণ দরিয়াপুর মহল্লার জেকে গ্রুপের তনিমা নিট কম্পোজিট, উলাইল, আশুলিয়ার কাঠগড়া ও চারাবাগ এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা একই দাবিতে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ করেছে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক মাহববুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো ঝামেলা এড়াতে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য গত তিনদিন ধরে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে জানান, বেতন ভাতার বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, বিকালে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার একটি গার্মেন্ট কারখানা শ্রমিকরা বেতন ভাতার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে, কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একই দাবিতে সকালে চক্রবর্তী এলাকায় দুটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা চন্দ্রা নবীনগর মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে। পুলিশ কাঁদানি গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। অন্যদিকে বিকালে কোনাবাড়ি এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।

মজুরি কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল মতিঝিলের শ্রমভবনে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ নেতা আবদুুস সালাম মুর্শেদী, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মালিক পক্ষের ৫ জন, শ্রমিক পক্ষের ৫ জন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে মোট ১২ সদস্যের কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।

তিনি বলেন, মজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা আলোচনা করে এক মাসের মধ্যেই সমাধান করা হবে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা না করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানান নতুন এ বাণিজ্যমন্ত্রী। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা তিন দিন ঢাকার রাস্তায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকে ডাকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। 

জানুয়ারি মাসে কোনো শ্রমিককে কম বেতন দেয়া হবে না। কোনো গ্রেডে কারও যদি বেতন কমে যায়, তবে সেটা হিসাব করে সমন্বয় করা হবে। বকেয়া আকারে শ্রমিকরা সেই বেতন পেয়ে যাবেন বলে জানান টিপু মুনশি।

বর্তমান শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে শিল্পের বাইরের লোকের ইন্ধন আছে বলেও নিজের সন্দেহের কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শ্রমিকরা যাতে কোনো রকম গুজব কিংবা উস্কানিতে পা না দেন আমরা সেই অনুরোধ করছি। এরপর থেকে ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তারা শ্রমিক না। তারা এ ট্রেডের বন্ধু না। তাদের কঠোর হাতে দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক একটা বাইসাইকেলের দুই চাকা। তাদের একসঙ্গেই এগোতে হবে। কোথায় কোনো ইরেগুলারিটি থাকলে সেটা দেখা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। 

তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রকম প্রচারপত্র লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে অনলাইনে। আমরা বরাবর দেখেছি, প্রত্যেক ঘটনার ক্ষেত্রে এ ধরনের অপকর্ম ঘটছে। এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত শ্রমিকবান্ধব। তিনি নিজেই সুপারিশ করে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। এখন নতুন মজুরি কাঠামোর কোথাও কোনো অসুবিধা থাকলে আলোচনা করে তা ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই আর কোনো বিশৃঙ্খলা নয়। সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে একই কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন।

এদিকে পোশাক শ্রমিকদের সব গ্রেডে সমান হারে মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি বকেয়া বেতন পরিশোধ, ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। গতকাল বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবুর যুক্ত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে তারা বলেন, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও সব গ্রেডে সমান হারে মজুরি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উত্তরা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক ছাঁটাই, টার্গেট চাপ বাড়ানো এবং শ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, সমপ্রতি শ্রমিক আন্দোলন বিভিন্ন গ্রেডে মজুরি সমান হারে বৃদ্ধি না পাওয়ারই কারণ। এ ছাড়া বেতন বকেয়া, ছাঁটাই-নির্যাতন, টার্গেট চাপ ইত্যাদির ক্ষোভ রয়েছে।

বিবৃতিতে সরকার ও মালিক পক্ষকে পোশাক কারখানার ৩য়, ৪র্থ, ৫ম গ্রেডের শ্রমিকদের মূল মজুরি অন্যান্য গ্রেডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বাড়িয়ে শিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অপারেটররাই গার্মেন্ট শিল্পের প্রাণ, প্রধান চালিকা শক্তি, সংখ্যার দিক থেকেও এরাই বেশি। শ্রমিকদের এ অংশকে বঞ্চিত করে, অংকের মার-প্যাঁচে ফেলে বেসিক কমিয়ে দিলে শেষ পর্যন্ত শিল্পের মঙ্গল আসবে না এ কথা মালিকদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে। পুলিশ ও মাস্তান দিয়ে নির্যাতন করে, মামলা ও গ্রেপ্তার করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না। ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের গন্ধ খুঁজলে সমাধানের পথ পাওয়া যাবে না, বরং যে হারে ৭ম গ্রেডের মূল মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মূল মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করার আহ্বান জানানো হয়। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৯, ২০১৯  

মজুরি বৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন

  • গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত
  • ১০ কারখানা ভাঙচুর, পুলিশের টিয়ারশেল, আহত ১০


সরকারি মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি, বাস্তবায়ন ও সাভারে নিহত শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতে চতুর্থদিনের মতো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১০ কারখানায় ভাঙচুর চালিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানা। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।  

বুধবার, ০৯ জানুয়ারি, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মিরপুরের কালশীর ২২ তলা ভবনের সামনে ও সাড়ে ৯টা থেকে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন  গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এতে সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। 

জানা যায়, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, উত্তরা ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

পুলিশের পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক করিম জানান, মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে তারা মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। গত তিনদিন ধরে একই দাবিতে বিমানবন্দর, উত্তরা, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুরে সড়কে অবস্থান নেয় গার্মেন্টস কর্মীরা। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৯, ২০১৯  

মামলা, সংলাপ ও সফর তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের


ভোটে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের অনিয়ম তুলে ধরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের, জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পর্যায়ক্রমে সফর। এজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেট সফরে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যাতে তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

নিজেদের কর্মসূচি নির্ধারণে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ওই বৈঠক শেষে এসব কথা জানান জোটের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবৃতি পড়ে শোনান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগণের শাসন; অর্থাৎ জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া পদ্ধতি। সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ক্ষমতা ও দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশের মালিক জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অপব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকাকে নিষ্ক্রিয় করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নীল নকশা অনুযায়ী ভোটের পূর্ব রাতে নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে, সরকারি সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙল মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখতে সাহায্য করেছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সরকারি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ফলে জনগণ নিজেদের মত প্রকাশের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার তথ্য-সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইউ.এন কনভেনশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের মতে, শুধু সাংবিধানিক অধিকার নয় বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের মানবাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড গুরুতর অপরাধ।

নির্বাচন কমিশনের নিকট আমাদের জোর দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে নির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। জনগণ যেন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের অনুলিপি পাওয়ার পর তা আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার।

Tuesday, January 8, 2019

দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড - উৎকৃষ্ট ব্যাংকের অপকৃষ্ট কাজ

হাছান আদনান 
দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংকের তকমা ছিল বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের। কিন্তু সুশাসনের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতি, খেলাপি ঋণের জাতাকলে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালে মুনাফার দিক থেকেও বড় ধাক্কা খেয়েছে সিটি ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডসহ রিটেইল ব্যাংকিংয়েও দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকটির অবস্থান। সিটি ব্যাংকের দৈন্যদশা উঠে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেও।

সিটি ব্যাংকের ২০১৭ সালের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর সম্প্রতি বিশদ পরিদর্শন চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিদর্শনে উঠে এসেছে ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র। সিটি ব্যাংকের এ ধরনের অন্তত এক ডজন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১১ বছর ধরে ঋণ অবলোপনে অনিয়ম: ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে আংশিকভাবে অবলোপন করেছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৩ সালের বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর-২-এর নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (আইএসএমডি) কাছে ধরা পড়ে।

তখন সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ মর্মে নির্দেশনা দেয় যে, যেসব ঋণ আংশিকভাবে অবলোপন করা হয়েছে, সেসব ঋণ হিসাবের যে অংশ এখনো অবলোপন করা হয়নি (সিএল স্থিতি ২৭৪ কোটি টাকা) তা ২০১৭ হিসাব বর্ষসহ পরবর্তী পাঁচ বছরে অর্থাৎ, ২০২১ সালের মধ্যে আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় কিংবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের মাধ্যমে অবলোপন করতে হবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশনা মান্য করেনি সিটি ব্যাংক।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসএমডির নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি ব্যাংক ২০১৭ সালের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণ তো করেইনি, বরং প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা-সম্পর্কিত পরিদর্শন দলের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত কোনো প্রভিশন সংরক্ষণে রাজি নন বলে জানান। ব্যাংকের এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে পরিদর্শক দল মন্তব্য করে।

পরিদর্শক দল মনে করে, আংশিক অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করলে সিটি ব্যাংকের নিট মুনাফায় টান পড়বে। এজন্য ব্যাংকটিকে ২০১৮ সালের মুনাফা থেকে ১০০ কোটি টাকা পৃথকভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণ করলে চলতি বছরে ব্যাংকটির সমপরিমাণ আয় কমে যাবে।

প্রভিশন সংরক্ষণে গড়িমসি: ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেডের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অন্য সাবসিডিয়ারি মালয়েশিয়ায় সিবিএল মানি ট্রান্সফার এসডিএন-ও লোকসানে আছে। ২০১৭ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান ছয় কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকের দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত লোকসান ৬৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত মূলধন ছিল ৩৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মোট ৬৪ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মূলধন কমে ২৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ এ লোকসানের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থ প্রভিশন সংরক্ষণের কথা থাকলেও সেটি রাখেনি সিটি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সাল শেষে সিটি ব্যাংকের মোট প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে একই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটি ৬৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। এ হিসাবে সিটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৪ কোটি টাকা। অথচ আর্থিক পরিস্থিতি ভালো দেখাতে প্রভিশন ঘাটতি দেখায়নি ব্যাংকটি।

শুধু প্রভিশন সংরক্ষণে অনিয়মই নয়, বরং খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখিয়েও ব্যাংকের অবস্থা ভালো দেখানো, ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে সিটি ব্যাংক। বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে ব্যাংকের আর্থিক চিত্র ‘উত্কৃষ্ট’ এবং নিজেদের পারফরম্যান্স ‘অতি উত্তম’ দেখানোর জন্য যতটা আগ্রহী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা এবং প্রযোজ্য আইন ও বিধিবিধান পরিপালনে ততটাই উদাসীন ও অনাগ্রহী। এর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো প্রদর্শন করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যাংকের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায়।

আইন বিভাগে বেআইনি কর্মকাণ্ড: ২০১৬ সালের ১৬ মে সিটি ব্যাংকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাফায়েত উল্যাহকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মাত্র নয় মাসের মধ্যেই নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেয়া হয় তাকে। একই সঙ্গে বেতন বাড়ানো হয় ৬ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের ২০ মার্চের মধ্যে আবারো শাফায়েত উল্যাহর ২৬ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের পদোন্নতি-সংক্রান্ত নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিগ্যাল বিভাগের প্রধান শাফায়েত উল্যাহকে দ্রুত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের পদোন্নতি প্রদান ও বিশেষ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ও যৌক্তিকতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবীদের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাফায়েত উল্যাহ ব্যাংকের লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত। অথচ তার লিগ্যাল কনসালট্যান্সি ফার্ম ‘চৌধুরী অ্যান্ড উল্যাহ’ ব্যাংকটির প্যানেলভুক্ত আইনজীবী। এটি সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভূত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ অনিয়মের বিষয়ে সিটি ব্যাংকের প্রতি তিন দফা নির্দেশনা প্রদান করে পরিদর্শক দল। এর মধ্যে রয়েছে অনিয়মগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান, ভবিষ্যতে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ ও শাফায়েত উল্যাহকে ব্যাংকের কর্মকর্তা অথবা প্যানেল আইনজীবী— যেকোনো একটি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সিটি ব্যাংকের আইনসংক্রান্ত ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালে তা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বেড়ে ৫ কোটি ২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আইনি খাতে ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও ব্যাংকের আদায় অগ্রগতি যৎসামান্য। মামলার জন্য আইনজীবীদের ফি দেয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতি: পরিদর্শক দলের কাছে সিটি ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের অভ্যন্তরে ৪০টি জাল-জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকে ১২টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এসব জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্ট অর্থ ১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকে ৩৩ কোটি টাকার জাল-জালিয়াতির ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে।

চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা অবলোপন: ব্যাংকের ব্যালান্স শিট ভালো দেখাতে ঋণ অবলোপনকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি ব্যাংক। শুধু ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরে ৯৬৬ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৩৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। বিদায়ী বছরেও ২৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকটি। স্বাভাবিক পন্থায় আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় এ ঋণগুলো অবলোপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে সিটি ব্যাংক।

চার বছরে ৮৮ কোটি টাকা মওকুফ: ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ঋণখেলাপিদের ৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা মওকুফ করেছে সিটি ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালেও ঋণখেলাপিদের ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মওকুফ করে দিয়েছে ব্যাংকটি।

পরিচালকরা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা: সিটি ব্যাংকের পরিচালকরাই ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরিচালকদের প্রত্যক্ষ এ ঋণ সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর পরোক্ষভাবে পরিচালকরা ১ হাজার ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণগুলো নিয়মিত রাখার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের কাছে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ: সিটি ব্যাংক থেকে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোর ৯ জন পরিচালক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭০৭ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু পরিচালকের ঋণ হিসাবে সীমাতিরিক্ত ঋণ সুবিধা রয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সীমাতিরিক্ত ঋণগুলো সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে পরিদর্শন দল।

ঋণের সিংহভাগই ৪১ গ্রুপের কাছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকাই বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৪১টি শিল্প গ্রুপের মধ্যে। পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৪১টি গ্রুপের কাছে সিটি ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ গ্রুপগুলোর কাছেই ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার পরোক্ষ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

খেলাপি না দেখাতে পুনঃতফসিল: বিভিন্ন সময়ে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ৪১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ৩৮টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকটি পুনঃতফসিল করেছে ১৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু এসব ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু শ্রেণীকরণ এড়ানো, অনাদায়ী সুদ আয় খাতে নেয়া এবং ব্যাংকের পারফরম্যান্স কৃত্রিমভাবে ‘উত্তম’ দেখানোর জন্যই প্রচলিত বিধিমালা ও ব্যাংকিং রীতি অনুশীলন বহির্ভূতভাবে ব্যাংকটি বিরূপমানের শ্রেণীকৃত/শ্রেণীকরণযোগ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে আদায় অসম্ভব এমন ঋণ পুনঃতফসিল করে চলছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব ঋণ অনাদায়ে স্বল্প সময়েই আবারো খেলাপি হয়ে যাবে।

টাকা ফেরত দিচ্ছে না শীর্ষ খেলাপিরা: ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ছিল ৪৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অথচ এ শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে বিদায়ী বছরে ব্যাংকটির আদায় হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পরিদর্শক দল।

৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই আটকে গেছে মামলায়: সিটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকাই মামলায় আটকে আছে। গত পাঁচ বছরেই ব্যাংকটি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৬৯টি মামলা করেছে। এসব মামলায় আটকা পড়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার ঋণ। সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ১৯২টি মামলা করেছেন গ্রাহকরা। এসব মামলার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ৬১৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে দ্য সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাই। যেকোনো অডিট বা পরিদর্শন প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সুশাসন কার্যকর হয়। প্রতিবেদনটি সিটি ব্যাংকের পর্ষদে তুলে ধরা হবে।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের বিষয়ে বেশকিছু আপত্তির কথা বলেছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অবস্থান এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেসব ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি করার উদ্যোগ নেব।

লিগ্যাল ডিভিশনের প্রধান শাফায়েত উল্যাহর ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে সোহেল আর কে হোসেন বলেন, তিনি আমার আত্মীয় নন। পর্ষদে কোনো পরিচালকের আত্মীয়স্বজন আছে বলেও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কাজের স্বীকৃতিই তিনি পেয়েছেন। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিগুলো আমরা পর্যালোচনা করব।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 08, 2019

শপথগ্রহণের বৈধতা নিয়ে স্পিকার-সিইসিকে আইনি নোটিশ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের বৈধতা নিয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৮, দুপুরে ডাকযোগে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়। 

এতে তিনি বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) ও ১৪৮(৩)-এর পরিপন্থী।

এতে উল্লেখ করা হয়, ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে এ নোটিশের জবাব না দিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

নোটিশে বলা হয়, ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা আগামী ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন সম্পন্ন করে শপথ অনুষ্ঠান করেছেন।

‘বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হলে অংশগ্রহণমূলক হয়েও লাভ নেই’ — মাহবুব তালুকদার


গত ৩রা জানুয়ারির নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের(ইসি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে নিজের দেয়া বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘আমি যে বক্তব্য রেখেছি তাতে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এমন কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। লিখিত বক্তব্যে এই কমিশনার বলেন, অনেক সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করেছেন। আমি আমার অবস্থান পরিবর্তন করেছি কিনা! এ সর্ম্পকে বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

আমি বক্তব্যে বলেছি, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়েছি।’ ইতোপূর্বে ১৭ই ডিসেম্বর বক্তব্যে আমি বলেছিলাম , ‘সব দল অংশগ্রহণ করলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে এর সর্ম্পক নেই। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটা প্রাথমিক প্রাপ্তি। আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হচ্ছে কিনা এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি না? নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোন লাভ নেই।’ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আমি কোন কথা বলিনি।

কেমন নির্বাচন হয়েছে সাংবাদিকদের এহেন প্রশ্নের জবাবে আমি পূর্বে বলেছি, ‘নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, তাহলে এ প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।’ এখনও আমি সে কথাই বলি। আমার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

বিগত ৩রা জানুয়ারির অনুষ্ঠানটি ছিল ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। কাউকে প্রশংসাসূচক কথা বলে ধন্যবাদ জানাতে হয় এবং সেটাই সৌজন্যের প্রকাশ। আমার ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা ঠিক হবে না। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৮, ২০১৯ 


‘নতুন সরকার গঠন হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়’ — মির্জা আলমগীর


নতুন সরকার গঠন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যে নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখান করেছি যে নির্বাচনের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই, জনগণ পুরোপুরিভাবে এটাকে বর্জন করেছে বলা যেতে পারে। এই নির্বাচনের ফলাফল কখনোই মেনে নেয়নি৷ সেই নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে কোনো পার্লামেন্ট গঠন বা সরকার গঠন এটা নিয়ে মন্তব্য করার তো হাস্যকর ছাড়া কিছু না। 

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ০৮, দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছি, পার্লামেন্ট গঠন প্রত্যাখ্যান করেছি, এবং সরকার গঠন পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখান করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের কোনো অধিকার নেই যে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের উপর তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার৷ এই জন্য এটা কখনোই জনগণের ভোট করে নাই, জনগণ ভোট দিয়ে এদেরকে নির্বাচিত করে নাই। 

২০১৪ সালে এই প্রেক্ষাপটই ছিলো এবং এরপরও ৫ বছর তারা শাসন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পাকিস্তান থাকে নাই? থাকছে তো। বিভিন্ন জায়গায় থাকছে না? জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নাই কিন্তু সরকার আছে। সরকার তো থাকেই, একটা কিছু না কিছু থাকতে হবে। তার সঙ্গে এটাকে মিলিয়ে লাভ নাই।

আপনি এটা চিন্তা করেন না কেন যে আপনার গোটা জাতি ডেপ্রাইব (বঞ্চিত) হয়ে গেছে। একবারও ভাবেন না গোটা বাঙালি জাতিটাকে আজকে প্রতারণা করলো৷ একবারও ভাবেন মনের মধ্যে আপনাদের মনের মধ্যে আবেগ আসে না যে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, যে চেতনার ভিত্তিতে সেই চেতনাকে আমি ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে কিছু লোকের দখলদারিত্বের জন্য আপনি সরকার গঠন করেছেন দেশ পরিচালনার জন্য। আবার আপনারা রেফারেন্স টানবেন। 

বিএনপি এখন কি করবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, বিএনপি এখন যা করার তা করবে৷ জনগণের দল, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করবে জনগণের সরকারের জন্য।

এক ব্যাংকের পর্ষদ থেকেই দুই মন্ত্রী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ও গোলাম দস্তগীর গাজী। নির্বাচিত হয়ে দুজনই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভায়। মো. তাজুল ইসলাম পেয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। গতকাল বিকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তারা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে মো. তাজুল ইসলাম কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর গোলাম দস্তগীর গাজী একই প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে।

একই ব্যাংকের দুজন পরিচালকের মন্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়ে মো. তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্যবসায়িক সম্পর্কের দিক থেকে আমরা দীর্ঘদিন থেকে যমুনা ব্যাংকের পরিচালক। তবে একই ব্যাংক পর্ষদের দুজন পরিচালক মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি কাকতালীয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের দুজনেরই দীর্ঘ পরিচিতি রয়েছে। দুজনই পৃথক দুটি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’

দেশের গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ, কাগজ, বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে মো. তাজুল ইসলামের। ফেবিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তিনি। দশম জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যমুনা ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিনবার নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে বেসরকারি চ্যানেল গাজী টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদে রয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে।

নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মোট ১৭ জন পরিচালক। এর মধ্যে ১৫ জন বেসরকারি ব্যাংকের আর ২ জন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পর্ষদে রয়েছেন। বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে দায়িত্ব পালন করা সংসদ সদস্যরা হলেন ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচএন আশিকুর রহমান, যমুনা ব্যাংকের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী ও তাজুল ইসলাম, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী ও বিএইচ হারুন, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক শেখ ফজলে নূর তাপস ও দিদারুল আলম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক মোর্শেদ আলম, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক আবদুল মান্নান, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক এনামুল হক শামীম, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন এবং জনতা ব্যাংকের পরিচালক সেলিমা আহমাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

  • Courtesy: Baninkbarta /Jan 08, 2019

মালিকের কৌশলে শ্রমিকের ক্ষোভ

  • পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা
  • মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা
  • একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে
  • সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ
  • ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন



নতুন মজুরিকাঠামোতে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম বা ৭ নম্বর গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। তার মধ্যে মূল মজুরি ১ হাজার ১০০ টাকা। একই হারে অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও বেড়েছে। সরল এই অঙ্কের মধ্যেই রয়েছে গলদ। কারণ, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। সে জন্য ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পুরোনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরিকাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কারখানায় এই তিন গ্রেডেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন।



মূল মজুরি কম হারে বাড়ানোর পুরোনো কৌশলটি মালিকপক্ষ এবারও নিয়েছে। তার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। ফলে  ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না তাঁদের। পাঁচ বছর পর নতুন মজুরিকাঠামোতে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন, এমনটিই জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিকনেতা।

আট হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে গত ২৫ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। চলতি মাস থেকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা। তবে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই মজুরিকাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শ্রমিকেরা। নির্বাচনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আজমপুর, আবদুল্লাহপুর এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে দীর্ঘসময় বিক্ষোভ করেন। সাভারের হেমায়েতপুরেও শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

মজুরি নিয়ে শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের সব মজুরিকাঠামোতেই বেসিক (মূল মজুরি) কম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল মালিকপক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভাতা বৃদ্ধি করে মূল মজুরি কমানো হয়েছে। মালিকদের এই কৌশলই শ্রম অসন্তোষের অন্যতম কারণ। গতবারের মজুরিকাঠামো বাস্তবায়নের পর থেকে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেসিক বেড়েছে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, নিম্নতম মজুরি আট হাজার টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ওপরের গ্রেডে, যেখানে দক্ষ শ্রমিকেরা কাজ করেন। সেসব গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানো দরকার ছিল, সেটি  হয়নি। সে জন্য শ্রমিকেরা খুশি হতে পারেননি।

অবশ্য মালিকপক্ষ কোনো কৌশল করেনি বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কৌশল করা হয়নি। প্রত্যেক শ্রমিকের মোট মজুরি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। বেসিক (মূল মজুরি) কমতেই পারে। মোট মজুরি যত বাড়বে, বেসিক তত কমবে। তিনি বলেন, মজুরি যথেষ্ট বেড়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবারই সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে।

মজুরির বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন কারখানা–মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদেই বেশি শ্রমিক কাজ করেন। নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া আগের মজুরিকাঠামোতে গ্রেডটির মূল মজুরি ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় এই গ্রেডে কর্মরত পুরোনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে গত বছরই ৪ হাজার ৬১৫ টাকা হয়েছে। এবার নতুন কাঠামোর পরিবর্তে ইনক্রিমেন্ট হলে সেই মজুরি ৪ হাজার ৮৫১ টাকায় দাঁড়াত। তার মানে নতুন কাঠামোতে গ্রেডটিতে থাকা পুরোনো শ্রমিকদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭৯ টাকা। একইভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি বেড়েছে ১৬৪ টাকা। তবে ৩ নম্বর গ্রেডে উল্টো মূল মজুরি কমে গেছে ৪৪ টাকার মতো।

নিচের দিকের গ্রেডের মতো ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে বেশি না বাড়ায় মালিকেরা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। গাজীপুরের এক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সপ্তম গ্রেডে ৫১ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। সেই হিসাবে আমাদের খরচ ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। তবে বেড়েছে ২৫-২৬ শতাংশ। কারণ হচ্ছে, ওপরের গ্রেডের শ্রমিকের মজুরি প্রকৃতপক্ষে খুব বেশি বাড়েনি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের এক কারখানার মালিক জানান, মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর কারখানার শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ব্যয় বেড়েছে ১৪-১৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে নিম্নতম মজুরি বোর্ড হয়েছিল। এবার হয়েছে পাঁচ বছর পর। সেই হিসাবে শ্রমিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মজুরি বাড়েনি। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই সমস্যা আছে। এই গ্রেডগুলোর মজুরি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সরকার, মালিক ও শ্রমিক—তিন পক্ষ বসে পুরো বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ তাঁর।

Courtesy: Prothom Alo Jan 08, 2019

Mob beats 'extortionist' to death in Chattogram


Angry traders and locals yesterday morning beat a former Bangladesh Chhatra League (BCL) leader to death, for alleged extortion, at Pahartali Railway Bazar in the port city.

The dead was identified as Md Mohiuddin Sohel, 35, son of Abdul Barek, from Chandpur, police sources said.  His father was a former sub-assistant engineer of the Bangladesh Railway east zone.

During the incident, agitated traders of the market, the second largest wholesale market in the port city, torched what they claimed was Sohel's “torture cell”. They also protested by keeping their shops closed for two hours, demanding an end to extortion.

Sohel was a former general secretary of BCL Chittagong Government Commerce College unit and was also a member of the BCL's central committee, Hasan Murad Biplob, a former vice president of the college's student union, told this correspondent. He added that Sohel had later gotten detached from political activities.

AKM Mohiuddin Selim, officer-in-charge (OC) of Double Mooring Police Station, said the incident took place around 10:00am. A chase and counter chase took place between the traders of the market and Sohel's followers.

He also said that police rescued Sohel and one of his aides around 11:00am. Sohel was taken to Chittagong Medical College Hospital (CMCH) where he succumbed to his injuries, the OC said, adding that the traders claimed the incident was a protest against extortion.

A murder case would be lodged in this connection, the OC said.

Two other people, including local trader Osman Khan, who is also the joint secretary of the Chattogram unit Jatiya Party, were injured during the incident. They were also being treated at CMCH, Jahir Hossain, inspector (investigation) of Double Mooring Police Station, said.

According to witnesses and traders, Sohel had been extorting money from the traders and also the market-bound trucks with the help of several of his aides for the past year and a half.

He had allegedly grabbed several railway quarters in the adjoining area of the market and built an office there called MN-IP Foundation. Traders also alleged that Sohel used to take people into his “office” and torture them.

They added that several of Sohel's aides around 9:00am picked up a vegetable vendor and took him to the office.

On information, some traders, led by Osman, went to the office at 9:30am to rescue the vendor.

As soon as they arrived, Sohel's aides attacked them with sharp weapons injuring Osman. A chase and counter chase then took place, said Nur Nabi Talukder, former joint secretary of Pahartali Railway Bazar Traders' Welfare Association.

After the attack, Osman immediately went to the traders' association office and made an announcement on loudspeakers informing people about the incident.

Infuriated traders then took to the street and surrounded the office. Agitated locals, who were also agitated by Sohel's unruly activities for long, joined the traders.

The angry mob entered the office and set it ablaze from the inside, said Arif Khan, a trader, adding that the people took Sohel and one of his aides out of the office and beat them up.

Former leaders of the traders' association, after a meeting with police officials, announced that they would open the shops at 12:30pm after a two hour-long shut-down.

Speaking to The Daily Star the traders said they were angry as their association's convener, also local ward councillor, Saber Ahmed did not appear at the scene.

Contacted, Saber said there was previous enmity between Sohel and Osman. He, however, admitted that Sohel had been engaged in extortion in the area and that Saber himself had filed complaints to the local administration several times in this regard.

Shamsul Alam Chowdhury, a former joint secretary of the association, said that the traders had become enraged as Sohel's extortion and other unruly activities had increased over the last six months.

  • Courtesy: The Daily Star/ Jan 08, 2019