Search

Thursday, January 17, 2019

স্বৈরশাসনের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ — অস্ট্র্রেলিয়ান অধ্যাপক

৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ স্বৈরশাসনের পথেই এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. এম ইহতেশামুল (তানিম) বারী। তিনি এশিয়ার রাজনীতি ও সাংবিধানিক আইন নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন। ডেকিন মিডিয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় দেশটিতে নতুন এক শঙ্কার ক্ষেত্র তৈরি করেছে, কেননা এর মাধ্যমে সেখানে একদলীয় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

ড. বারী তার নিবন্ধে বলেন, বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে এলেও দলের নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতির কারণে তারা গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। নির্বাচনে সরকারি দলের লোকেরা প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলেন। এই ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তারা পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের জনগণকে নিজেদের ভোটে সত্যিকার অর্থে একটি চিন্তাশীল সরকার গঠনে তাদের অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।

ড. বারী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে বিজয়ী হয় এবং বিরোধীদের ওপর নির্মম দমন অভিযান চালানোর মাধ্যমে অর্জিত এই বিজয় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনের পর যারা নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন এবং যারা বিরোধী দলকে ভোট দিয়েছেন তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার ওপর জোর দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যেসব সাংবাদিক নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন তাদের ২০১৮ সালে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া বিরোধী দল বিএনপিকে ভোট দেয়ায় চার সন্তানের জননী এক নারীকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ কয়েকজন মিলে গণধর্ষণ করেন।

ড. বারী বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ২০১১ সালে বাতিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার ওপর তাদের কর্তৃত্ব সংহত ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পথ সুগম করে। তিনি বলেন, প্রতিটি সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পার্লামেন্ট বাতিল ও নতুন পার্লামেন্ট গঠনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন হিসেবে কেবলমাত্র রুটিন কাজগুলো করে থাকে।

উদাহরণ স্বরূপ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করে না এবং সরকারি সম্পদ নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর এই সরকার ১৯৬৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযাগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়ার পর বাংলাদেশ কার্যত একদলীয় একনায়কতন্ত্রের পথেই এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম এ পথে পা রাখে। বিরোধী দল বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে।

তিনি বলেন, এই বিতর্কিত নির্বাচন দেশের জনগণের দৃষ্টিতে কোন অর্থেই আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিতে পারেনি। বরং এই সরকার নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, উচ্চ আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করা, বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ করে বিরোধীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করাসহ নানাবিধ দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরপর পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার ভঙ্গুর নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে তাদের কর্তত্ববাদী শাসন পাকাপোক্ত করেছে।

ড. বারী বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে হলে সংবিধানে ‘অর্থবহ সংস্কার’ আনা প্রয়োজন যাতে এর মাধ্যমে অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন নিশ্চিত করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি অর্থবহ পরিবর্তনই কেবল সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকারের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত এবং বাংলাদেশকে স্বৈরতন্ত্রের পথে আরো এগিয়ে যাওয়া থেকে ফেরাতে পারে। 
  • নয়া দিগন্ত / ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করতে হবে — মির্জা আলমগীর


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন, এককভাবে সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক বিজয় লাভ করবেন, তাহলে তিনি সত্যটা উপলব্ধি করতে পারছেন না।

বুধবার, জানুয়ারি ১৬, জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাবেক এই মন্ত্রী।

মির্জা ফখরুল বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল তারা মানেন না। এই নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন হতাশার জন্ম না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকারকে পরাজিত করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের সেতুবন্ধ আরও দৃঢ় করা প্রয়োজন। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপি সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। অবশ্যই এর ঐতিহাসিক প্রয়োজন ছিল। এখন আরও বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।

ঐক্য নিয়ে সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেক প্রশ্ন আছে। রাজনীতি করলে প্রশ্ন থাকবে। কোন পরিস্থিতিতে কোন পর্যায়ে কোন উদ্যোগ সঠিক না বেঠিক সেই বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেই আলোচনার জন্য ফোরাম রয়েছে। আশা করি সেসব ফোরামে বিষয়গুলো আলোচনা হবে।

নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হতাশ হবেন না। হতাশাই তো শেষ কথা হতে পারে না। নতুন প্রজন্মের সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ। তারা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে, আরও বেশি দেশকে ভালোবাসবে। দেশকে ভালোবেসে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। সূর্য উদয় হবেই। তাদের সামনে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য এএসএমএস আলম, নওয়াব আলী আব্বাস খান, শফি উদ্দিন ভুঁইয়া, প্রয়াত নেতার মেজ ছেলে মইনুল রাব্বি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
  • কার্টসিঃ সমকাল / জানু ১৬, ২০১৯ 

Wednesday, January 16, 2019

ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে — মাইলাম


যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হলো বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ‘নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে’, আর যারা নিজেদের সরকার বলে দাবি করছে তারা ‘অবৈধ’।

বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্য ফ্রাইডে টাইমসের চলতি সংখ্যায় লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন মাইলাম।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে নিবন্ধে কড়া সমালোচনা করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, তাতে বিশ্বশান্তিরক্ষা মিশনে বাহিনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রশ্ন তৈরি হবে।

মাইলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক কাঠামোর মাধ্যমে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে ২০১১ সাল থেকেই বিদেশী পর্যবেক্ষকেরা ধারণা পোষণ করে আসছিলেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগও প্রকৃতপক্ষে তা প্রমাণসহ দেখিয়ে দিলো। বিরোধীদলগুলোর ওপর যতরকমের সন্ত্রাস চালানো যায় তার সব প্রয়োগ করেই ৩০ ডিসেম্বরের ভোট হয়েছে। ভোট চুরির সব নোংরা কৌশল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা এবং তার দল ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ফলাফল নিজের দলের জন্য ভাগিয়ে নিয়েছেন।’

জাতীয় নির্বাচনের ভোটের চিত্র তুলে ধরে মাইলাম বলেন, ‘বিরোধী দলের প্রার্থীরা যেন তাদের আসনগুলোতে কোনো রকমের প্রচার-প্রচারণা না চালায়, বাইরে না যায়, সে জন্য হুমকি আর ভয় দেখানো হয়েছিল। মিথ্যা মামলায় অনেককে আটক করা হয়। অনেকের নামে আগেই আদালতে প্রহসনের মামলা দায়ের করা ছিল। কিছুসংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়।

নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রাণশক্তি পোলিং এজেন্টদেরকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। আর এ ভয়েই অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস করেননি। ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেয়া হয়েছে ভোটারদেরও।

গ্রামে মহিলা ভোটারদের ভোট না দিতে ভয় দেখিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর যারা ভোট দিতে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে তাদেরকে হুমকি দিয়ে কিংবা পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে। আর কেন্দ্রের ভেতরে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। আমার এক বন্ধু জানিয়েছে, ‘সে যে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল তার সবগুলো ভোট কাস্ট করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষে’।

ভোটের ফল ‘অস্বাভাবিক’ এমনকি তা আওয়ামী সমর্থকেরাও বিশ্বাস করবে না মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ এই কূটনীতিক লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কী ধরনের আতঙ্ক আর সহিংস পরিবেশ তৈরি করেছিল তা লিখতে গেলে পুরো নিবন্ধেও শেষ করা যাবে না। অস্বাভাবিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটি ভোটের ফলাফল দেখাতে সব শক্তি ব্যয় করা হয়েছে।

পুলিশকে এবং তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি যেটা বলি এ রকম নির্বাচনের ফল বাংলাদেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও না। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থকও এ ভোটের ফলকে অতিরঞ্জন মনে করে যদিও তারা মুখ ফুটে এ কথা বলার সাহস পাবে না।’

মাইলাম লিখেছেন, ‘যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছিলেন তারা জানতেন, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে, কয়েকদিন আগে এবং নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তা ছিল দলকে জেতানোর পরিকল্পনা। তাই পর্যবেক্ষকেরা হতবাক হননি। এটাও স্পষ্ট ছিল যে, আওয়ামী লীগ কী করবে তা ছক করে রেখেছে। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কেমন ভূমিকা রাখবে সেটা নিয়ে কারো আগাম ধারণা ছিল না।

আমার ধারণা, নির্ধারিত সময়েরও দুই সপ্তাহ পর সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের মধ্যে এখনো যাদের স্মৃতি উজ্জ্বল তাদের মনে আছে, অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল আশাব্যঞ্জক। ধারণা করেছিলাম তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করবে এবং নির্ভুল গণনায় সহায়তা করবে। আমরা যারা সেনাবাহিনীকে নিয়ে আশা করেছিলাম যে, এবারো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে তারা গভীরভাবে হতাশ হয়েছি।’

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে মাইলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে না অভিযোগ তোলে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নিরপেক্স তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানসম্পর্কিত সংবিধানের ধারাটি বাতিল করে দেয়। 
১৯৯১ সাল থেকে এই সংবিধানের ধারা অনুসারেই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রধান দু’টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল। শাসন যাই হোক ভোটাররা পালাবদল করে প্রতি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘কোনো বিরোধী দল ছাড়াই আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে একদলের শাসন কায়েম করে। এরপরই যুক্তি উঠে এ সরকার অবৈধ, নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। বিএনপি নির্বাচন বয়কট না করলে সরকার জয়ের কোনো সুযোগ পেত না এ রকম কথাও শুনা যায়।’

শেখ হাসিনা স্বৈরতন্ত্র আঁকড়ে ধরেছেন মন্তব্য করে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যদি কোনো কিছু, কোনো শক্তি জেগে উঠে বা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তাকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মতো করে পুরোপুরি দমিয়ে দেয়া হবে। এমনকি প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতাদের বিরুদ্ধেও যদি একই পন্থা অবলম্বন করা হয় তাহলেও অবাক হবার কিছু নেই।’

গণতান্ত্রিক যেসব জোট নির্বাচনের এই কথিত ফলাফল দেখেছে তারা বিষয়টাকে কিভাবে নেবে সে প্রসঙ্গে উইলসন সেন্টারের সিনিয়র এই স্কলার বলেন, ‘কিছু মৌলিক সত্য বিষয় তাদের বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। প্রথম কথা যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ভঙ্গুর নীতিসগুলোকে ধারণ করে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ন্যূনতম মূল্যবোধ যেখানে অনুপস্থিত তাদের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়, দ্বিতীয় স্পষ্টতই যে সরকার নির্বাচনে চুরি করে জয়ী হয় তাদের নির্বাচিত বলে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। তাদের বৈধ সরকার বলা যাবে না। যারা শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল করে তারা ‘সিভিল অভ্যুত্থান’ সংঘটিত করে। তৃতীয় যে সরকার শক্তি প্রয়োগ করে সব ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয় এবং এটা নির্বাচন বলে দাবি করে তাকে ‘সেনা অভ্যুত্থানে’ ক্ষমতাদখলকারী মনে করতে হবে।’

নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে উল্লেখ করে মাইলাম আরো বলেন, ‘ভোট চুরির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনের অবস্থাটা কেমন তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপের উদাহরণ টেনেই বুঝিয়ে দেয়া যায়। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একটি ক্লাসরুমে পাঠ নিতে বসে আছে ১০-১১ বছর বয়সী ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী। কাসে এসে শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন ২+২=৫ এবং সব ছাত্রকে নির্দেশ দিলেন এটাই সত্য, মানতে হবে। 

একজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো এবং বলল, না- এটা সত্য নয়। আমরা সবাই জানি ২+২=৪। অবশেষে প্রতিবাদ করায় ছাত্রটিকে শাস্তি দেয়া হয় এবং হত্যা করা হয়। তারপর শিক্ষক আবার পাঠে মন দিলেন এবং উচ্চস্বরে পড়া শুরু করলেন ২+২=৫। শেষ দিকে দেখা যায় ভুল লেখা থেকে পেন্সিল একবার সরে আসে এবং হিসাবে পাঁচের বদলে শিক্ষার্থীরা সেটাকে চার লেখা শুরু করে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার বার্তাটা তুলনা করা যায় ব্রিটিশ উপন্যাসিক এবং সাংবাদিক জর্জ ওরওয়েলের সেই বার্তার সাথে। বার্তাটা এমন, সরকার নিজের ইচ্ছেমতো করে কোনটা সত্য সে ঘোষণা দেয় কিন্তু দিন শেষে মানুষ সেটাকে আসলে মেনে নেয় না। তারা প্রকৃত সত্যের ছাঁকুনি দিয়েই সব কিছু বিচার করে। প্রকৃত কথা হলো নির্বাচনের ফলাফল (৩০ ডিসেম্বরের ভোট) চুরি করা হয়েছে। আর যারা নিজেকে সরকার দাবি করছে তারা অবৈধ।’
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জানু ১৬, ২০১৯ 

শাস্তির বদলে পদোন্নতি! লেক দূষণ রোধের ৫০ কোটি টাকা নয়ছয়

অমিতোষ পাল


গুলশান-বারিধারা লেকের দূষণ রোধে ৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। উদ্দেশ্য ছিল, লেকের পাড়ের যেসব বাসাবাড়ির আউটলেটের মাধ্যমে মানবসৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য লেকের ভেতরে পড়ে, সেগুলো বন্ধ করে পানি দূষণ রোধ করা। ঢাকা ওয়াসা ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি শেষ করলেও দেখা যায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আউটলেটগুলো আগের মতোই রয়ে গেছে। সেগুলো দিয়ে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি লেকের ভেতরে গিয়ে পড়ছে। কাজ না করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ওই টাকা নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির রিপোর্টে এর প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে গত দুই বছরে ওয়াসা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে উচ্চতর পদে বসিয়েছে। এর মধ্যে ওই প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত কর্মকর্তা আটজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পেয়েছেন বিস্ময়কর পদোন্নতি।

সম্প্রতি সরেজমিন লেক পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, আউটলেটগুলো আগের মতোই বিদ্যমান। সেগুলো দিয়ে স্যুয়ারেজ বর্জ্য লেকে পড়ছে। গুলশান-২ নম্বরের ১০৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর হাউসের পেছনে দেখা যায়, বড় একটি পাইপ। সেটা দিয়ে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি লেকের ভেতরে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পানি। একই চিত্র দেখা যায় ১০৪ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাড়ির পূর্বদিকে। সেখানেও পাইপ দিয়ে স্যুয়ারেজের পানি লেকে পড়ছে। ৯৬ নম্বর রোডের পূর্ব পাশেও একই অবস্থা। দূষণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে কিছু পাইপ দিয়ে বর্জ্য পড়তে দেখা যায়নি। 

বারিধারার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান জানান, লেকের সঙ্গে এ রকম অনেক আউটলেট আছে। এ কারণেই লেকের পানি দূষিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গুলশান-বনানী লেকেও এ ধরনের ৫০টি আউটলেট ছিল। আনিসুল হক মেয়র থাকাকালে ৪৫টি বন্ধ করা হয়েছিল। আরও পাঁচটি আউটলেট থেকে গেছে। কিন্তু গুলশান-বারিধারা লেকে এ রকম আউটলেট আছে অসংখ্য। 

রাজধানীর ভিআইপি ও কূটনৈতিক এলাকা গুলশান-বারিধারার বাসিন্দারা লেক দূষণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিড়ম্বনায় রয়েছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে ২০১০ সালে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে 'গুলশান-বারিধারা লেক দূষণমুক্তকরণ প্রকল্প' গ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসা ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করে কাগজপত্র দাখিল করে। এ সময় জানানো হয়, ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৫ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পরও এলাকাবাসীর কাছ থেকে লেক দূষণের অভিযোগ আসতে থাকে। এর পরই বিষয়টি আমলে নেয় দশম জাতীয় সংসদের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির ১১তম বৈঠকের সুপারিশের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব অমিতাভ সরকারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, লেক দূষণ রোধে যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল তা সফল হয়েছে কি-না, সফল হয়ে থাকলে কী কারণে লেক পুনরায় দূষিত হচ্ছে এবং এ জন্য দায়ী কে, তা চিহ্নিত করে রিপোর্ট দেওয়া। 

কমিটির সদস্যরা সরজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পান, লেকপাড়ের বাসাবাড়ির বর্জ্য লেকে পড়ার আউটলেটগুলো বন্ধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা সফল হয়নি। প্রকল্প এলাকা সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, এখনও গুলশান-বারিধারা লেকটি সরাসরি স্থানীয় জনগণের পয়ঃবর্জ্য ও মনুষ্যসৃষ্ট অন্যান্য বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই দেখা যায়, লেকের পানির দূষণের মাত্রা গ্রহণযোগ্য সীমার অনেক ঊর্ধ্বে।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, গুলশান-বারিধারা লেকের দূষণ রোধে ঢাকা ওয়াসা ৫০ কোটি টাকার যে প্রকল্প নিয়েছিল, সেটি কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, কোনোভাবেই সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। তা ছাড়া এখনও অনেক আউটলেট দিয়ে পয়ঃবর্জ্য ও অন্যান্য মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি গুলশান-বারিধারা লেকে এসে পড়ছে। এ ছাড়া সর্বউত্তরে ডিওএইচএস ক্যানেলের বারিধারা অংশে দুটি আউটলেটের মাধ্যমে প্রচুর বর্জ্য গুলশান-বারিধারা লেকে পড়ছে। যার মধ্যে পূর্ব পাশের আউটলেট থেকে খুব বেশি পরিমাণে বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্য এসে পড়ছে। যদিও ওয়াসার প্রতিনিধি দাবি করেন, গুলশান-বারিধারা লেক দক্ষিণে প্রবাহমান নদীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় এবং লেকের পানি প্রবাহমান থাকায় দূষণ তুলনামূলক কম। কিন্তু পরিদর্শন টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, গুলশান-বারিধারা লেকে বর্তমানে পানির প্রবাহ নেই। লেকের পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি ওয়াসা গুরুত্ব দেয়নি। ঢাকা ওয়াসার প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাব স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা দায়ী মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে।' ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলে ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শও দেয় তদন্ত কমিটি। 

নথিপত্রে দেখা যায়, প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা কাজী মো. ফারুক হোসেন, একই বিভাগের সহকারী প্রধান মো. আব্দুল কাদের, উপপ্রধান মো. শামসুল আলম ও ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. জিএএম শওকত হায়াত খান। তবে প্রকল্প অনুমোদনের পরপরই শওকত হায়াত খান অবসরে চলে যান। প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামানকে। প্রকল্পের পুরো খরচ তার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। 

এদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেয় কমিটি। এর মধ্যে তিন সদস্যের কমিটির মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব অমিতাভ সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব মো. জাহিদ হোসেন ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। তবে প্রতিবেদনের সঙ্গে নোট দিয়ে লেখা হয়, 'প্রতিবেদনে আতিকুর রহমান স্বাক্ষর করলেও তদন্ত প্রতিবেদনের সার্বিক মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন।' 

সার্বিক মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়, 'লেকের পানি দূষণমুক্ত করণের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি দূষণ রোধে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। তদুপরি লেকে এখনও অনেকগুলো বর্জ্যপানির আউটলেট বিদ্যমান, যা অপসারণ বা বন্ধ করার দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পটি কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেনি। এ কারণে তাদের ব্যর্থতার দায়িত্ব ডিপিপি ও আরডিপিপি প্রদানের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবার ওপর বর্তায়।'

২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ঢাকা ওয়াসাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ফারুক-উজ-জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, 'এ জন্য দায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে চিহ্নিত করে বিভাগীয় মামলা দায়েরপূর্বক আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।' কিন্তু এতদিনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি-না, সে প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে গেলে জনতথ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি নন। তবে ঢাকা ওয়াসার সচিব আ ন ম তরিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ওই ঘটনায় ওয়াসা কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে তার জানা নেই। 

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান অমিতাভ সরকার সমকালকে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর তিনি আর কোনো খবর রাখেননি। তার দায়িত্ব ছিল রিপোর্ট দেওয়া। তিনি সেটাই করেছেন। 

এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পরে তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। গত বছর তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ আট কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী আ. মান্নান বলেন, তদবির ও টাকার জোর আর সিবিএর কারণে এসব সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে আক্তারুজ্জামান সমকালকে বলেন, ওয়াসার যে কোনো বিষয়ে তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব জনতথ্য বিভাগের। কথা না বাড়িয়ে জনতথ্য বিভাগে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। জনতথ্য বিভাগে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, কারও ব্যক্তিগত অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জনতথ্য বিভাগ কথা বলে না। সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাই বলবেন।
  • কার্টসিঃ সমকাল/ জানু ১৬, ২০১৯ 

Exporters suffer blow as govt makes contract farming mandatory

Mandatory contract farming

Yasir Wardad

The government has made 'contract farming' mandatory for shipment of agro produce aiming to ensure the quality, said officials. The decision came as a big blow to the exporters who found themselves in a difficult situation searching for contract growers during this peak winter harvesting season.

They said such a decision put the shipment of farm produce at stake as local exporters would lose their traditional markets.

The Plant Quarantine Wing (PQW) under the Department of Agriculture Extension (DAE) of the agriculture ministry issued a directive on November 13 last year, making good agricultural practice (GAP) and contract farming mandatory for exporting vegetables, fruits, potato, betel leaf and other produce.

PQW director Mir Nural Alam said the decision is a continuation of an objective set by the government to ensure safe and quality produce both for internal and external trade.

Total exports of farm produce to Europe have come under contract farming as the exporters are now buying produce from their contract growers, he added.

"And now we have made it compulsory for every market," Mr Alam said, adding that exporters would not be allowed to send produce without documents on contract farming from January 15.

The exporters will have to show documents detailing that they have maintained GAP, hazard analysis and critical control points (HACCP), traceability and maximum residue limit (MRL) and their produce has been collected from contract growers under the supervision of upazila agriculture officers, he said.

Secretary of Bangladesh Fruits, Vegetables and Allied Product Exporters Association (BFVAPEA) Mohammed Mansur told the FE that exports of farm produce to Middle-East, Far East Asia and other regions have almost come to a halt.

He said the PQW is showing 'unnecessary' enthusiasm for contract farming when importers in non-EU regions have no such requirements.

"They need quality and safe produce which we collect from the farmers who have adopted good agricultural practice (GAP)."

He added: "It takes 40 years to tap market potentials in the Middle-East and Far East which we are going to lose." They sent a letter to the PQW after getting their directives, he said, adding that they also urged the wing to give them time until December 31 this year.

The wing issued a letter on November 20 which they got on January 09. "PQW has given us time till January 15," he said.

Adviser to BFVAPEA Manjurul Islam said contract farming usually starts from sowing seed in particular.

The decision was taken at a time when the farmers are almost ready to harvest their winter crops, he said.

The country's exporters collect produce from 20,000 to 25,000 farmers and 6,000-7,000 of them have been able to be contract growers.

"We need few more years to make formal contracts with all the suppliers," he said, adding that the government cannot attain the target of exporting farm produce worth US$711 million if "it doesn't review its decision."

He said the sector achieved a tremendous growth in the first half of the current fiscal year by attaining a 66 per cent growth over that of last year.

"But it will start affecting the export earnings badly from this next half," he added.

Preferring anonymity, a leading exporter said his company recently sent a consignment of 26 tonnes of pumpkin and cabbage to Chattogram port for Malaysia.

"The port authority asked me about relevant documents on contract farming that I don't have. So what should I do now?" he questioned with frustration.

He said pumpkin is cultivated in September, but the PQW issued the directive on November 13.

  • Courtesy: The Financial Express/ Jan 16, 2019

Man 'commits suicide' in Natore police custodyRepresentational image

The hanging body of an individual in custody of police was recovered from Natore’s Bagatipara Police Station on Tuesday. Police claimed the arrestee Mohsin Ali, 30, son of Mahiruddin of Chakgoash village in Bagatipara upazila, committed suicide by hanging himself.

Police found Mohsin hanging from the window grill inside his cell on Tuesday noon and recovered it in presence of executive magistrate Najmul Alam, said additional superintendent of Natore police Akram Hossain, UNB reports.

Earlier on Monday, Gazipur police arrested Mohsin from Maona area in Gazipur city for his alleged involvement in the killing of three van drivers and snatching their vehicles. He was, later, handed over to Bagatipara Police Station, Najmul Alam added. 

  • Courtesy: The Financial Express /Jan 16, 2019

৭ বছরেও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিষ্পত্তি করতে পারেনি দুদক

জেসমিন মলি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন ও বিধি অনুযায়ী কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান করতে হয় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে। আর মামলা দায়েরের পর তদন্ত শেষ করতে হয় সর্বমোট ১৮০ দিনে। কিন্তু বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি অনুসন্ধান থেকে শুরু করে মামলা ও তার তদন্ত সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি দুদক। যদিও সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে।

বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ পায় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। এরপর অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। একাধিকবার অনুসন্ধান কর্মকর্তা বদল করে সাড়ে চার বছর পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। যদিও একটি মামলার তদন্তকাজও এখনো শেষ করতে পারেনি দুদক। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ আসার পর ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। তাকে পাঁচ দফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তার পরও মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংকই নয়, অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্তে অগ্রগতি দেখতে পাবেন। আর্থিক খাতসহ সব খাতের দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স। তবে কতগুলো বিষয়ে আমাদের প্রধান ফোকাস থাকবে। আর্থিক দুর্নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা আমাদের পরিপূর্ণ শক্তি দিয়ে আর্থিক দুর্নীতি বন্ধের চেষ্টা করব।

২০০৯-১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এ অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় যে ৫৬টি মামলা দায়ের হয়, তাতে আসামির সংখ্যা ১৫৬। মামলায় আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে দুদক। এর মধ্যে ছয় ব্যাংক কর্মকর্তা বর্তমানে কারাগারে আছেন। বাকি নয় ব্যবসায়ী জামিনে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজে-কলমে থাকলেও বেসিক ব্যাংকের এসব ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই অস্তিত্বহীন। এ কারণে বারবার যোগাযোগ করা হলেও গ্রাহকপক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ফলে তাদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা।

বেসিক ব্যাংকের এ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে ৫৬টি মামলা হলেও কোনোটিতেই ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও পর্ষদ সদস্যদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেই মামলার তদন্ত আটকে আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

তদন্ত শেষ করতে এত বেশি সময় লাগার বিষয়টি বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত ঘটনা। এটি শুধু অভিযোগ নয়, এ নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তার পরও তদন্ত শেষ করতে দুদকের এত সময় কেন প্রয়োজন হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এক হতে পারে তাদের সামর্থ্যের ঘাটতি, আরেক হতে পারে সদিচ্ছার ঘাটতি। এছাড়া আমি আর কোনো কারণ দেখি না। আমি মনে করি, দুদকের যে আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, সেটা যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে এ ধরনের কেলেঙ্কারি দ্রুতই নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকেও একাধিকবার পর্যবেক্ষণ এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণের পর ব্যাংকটির তত্কালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নেয় দুদক। পাঁচ দফা জিজ্ঞাসাবাদে ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল হাই বাচ্চু দাবি করেন, ঋণ দেয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে তিনি নেননি। তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফখরুল ইসলাম যেসব ঋণ অনুমোদনের নথি পর্ষদে উপস্থাপন করতেন, সবার অনুমতি সাপেক্ষে তিনি সেসব অনুমোদন দিতেন। এখানে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে সেটি ভুলে হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি আবদুল হাই বাচ্চুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর অংশ হিসেবে তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্নার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখতে চেয়েছে দুদক। গত বছর বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকিং লেনদেনের সব ধরনের নথিপত্র চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে উপপরিচালক শামসুল আলমের সই করা একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল।

উল্লেখ্য, আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর পদত্যাগ করেন আবদুল হাই বাচ্চু।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 16, 2019

Coercive Digital Security Act sections must be repealed

EDITORIAL

AT LEAST 63 people have been arrested, as New Age reported on Tuesday, under the Digital Security Act, which was signed into law on October 8, 2018. The arrested include online and cultural activists and journalists mostly on charge of activities on social networking sites, especially Facebook and YouTube, against ranking dignitaries and the government. The Rapid Acton Battalion is reported to have arrested 37 people, the cyber security and crime division of the Dhaka Metropolitan Police and the Police Bureau of Investigation 15 people and the Criminal Investigation Department 11 people. The charges are mostly posting ‘maligning’ comments, giving out ‘fake information’, ‘misinformation’ and ‘distorted information’, posting ‘doctored photographs’, making ‘derogatory’ remarks, circulating ‘negative’ contents and the like. 

While there is no arguing that no one has the right to post ‘maligning’ comments, give out ‘fake information’ or ‘distorted information’, make ‘derogatory’ remarks or post ‘doctored’ photographs — which should be dealt with accordingly to keep public order — what comes to be worrying is that many of them are reported to have been arrested for being critical of the government and its action. The situation warrants an impartial investigation of the cases to ensure justice as being critical of the government or its actions and decisions can easily construed as ‘derogatory’ and ‘maligning.’

The application of the Digital Security Act also seems to be partisan in that it has largely not been applied to cases where people gave out misinformation or made derogatory comments about people or groups that are outside the ruling sphere. Information activists allege that most of the arrested people were linked to opposition political parties or ideologies. 

The Facebook authorities identified more than a dozen pages, which look like independent news outlets, giving out contents against opposition views and ideologies. In such cases, the law does not appear to have been applied. The application of the Digital Security Act appears to have an underlying proposition which was typical of its precursor, the Information and Communications Technology Act, especially its Section 57. Between 2013 and April 2018, the police are reported to have submitted 1,271 charge sheets against people who include teachers and pro-opposition activists. In view of  all this, while the cases that have been filed under the Digital Security Act and the people arrested under the act warrant a judicious enforcement of the law, the government should repeal the controversial clauses that the Editors’ Council has exception to.

The Editors’ Council is opposed to nine sections of the Digital Security Act that could practically threaten the freedom of expression and of the media as they are opposed to the basic practice of democracy and the fundamental principles of journalism. The sections, as the council says, would also expose to threat free thinking and the expression of thoughts in the whole of digital sphere. The government, under the circumstances, must repeal the sections in the law that are constraining for the freedom of expression and, thereby, eliminate any space for their misuse or abuse. 

  • Courtesy: New Age /Jan 16, 2019

বড় ঋণ কেলেঙ্কারির হোতারা এখনো অধরা

মোর্শেদ নোমান


অধরাই থেকে যাচ্ছেন দেশের ইতিহাসে বড় কেলেঙ্কারির নেপথ্য নায়কেরা। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং আইনের মারপ্যাঁচে আইনের আওতায় তাঁদের আনা যাচ্ছে না।

ব্যাংক খাতে জালিয়াতির কয়েকটি ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত করলেও অদৃশ্য ইশারায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন অনেকে। বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকসহ কয়েকটি বড় জালিয়াতির হোতা হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিরা এখনো দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে ‘ব্যাংকিং সেক্টর ইন বাংলাদেশ: মুভিং ফ্রম ডায়াগনোসিস টু অ্যাকশন’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে বলা হয়, বড় কয়েকটি জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাতে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের বড় কয়েকটি ব্যাংক থেকে এ অর্থ লোপাট হয়।

সরকারি-বেসরকারি এসব ব্যাংকে যা হয়েছে, তাকে চুরি নয়, ‘ডাকাতি’ ও ‘হরিলুট’ বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসায়ী নামের কিছু লুটেরা মিলেমিশে ভাগ-বাঁটোয়ারার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর অর্থ লুটপাট করেছেন।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টি জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় বা সামাজিক অবস্থান বিবেচনা না করে অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নির্মোহভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে তাঁদের বিচার করতে না পারলে এ ধরনের অপরাধ কমবে না।

বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় ৪০ মাসেও অভিযোগপত্র নেই

বেসিক ব্যাংকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৫৬টি এবং পরের বছর আরও পাঁচটি মামলা করে দুদক। এসব মামলা করার পর ৪০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযোগপত্র দেয়নি সংস্থাটি। মামলায় ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের আসামি করা হলেও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাউকেই আসামি করা হয়নি।

বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা বলা হলেও মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়নি। মামলা হওয়ার পর তদন্ত–পর্যায়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অভিযোগপত্র এখনো জমা দেওয়া হয়নি।

বেসিক ব্যাংকের ঘটনায় করা মামলাগুলোয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা অনেক দিন ধরে কারাগারে। ঋণগ্রহীতা কেউ কেউ ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা জামিনে বেরিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়েছেন। যাঁরা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁদের সবাই এখন বাইরে আছেন।

বেসিক ব্যাংকের তদন্ত সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, শুধু বেসিক ব্যাংক নয়, সব আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হবেন তাঁরা।

জনতা ব্যাংকে জালিয়াতির হোতারা বাইরে 

জনতা ব্যাংকের বড় কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদক একের পর এক অনুসন্ধান-তদন্ত চালালেও প্রতিবারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন হোতারা। দুদক সূত্র জানায়, ২০১২ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয় গ্রাহকদের মধ্যে। ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদক কিছু ব্যক্তিকে ‘অভিযুক্ত’ করতে পেরেছিল, যদিও তাঁরা পালিয়ে আছেন দেশের বাইরে। কিন্তু অধরাই থেকে যায় ব্যাংকটির তৎকালীন ঋণ প্রদানকারী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। যখনই ব্যাংকটি ওই জালিয়াতির ঘটনার পর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিল, তখনই উদ্‌ঘাটিত হয় অ্যাননটেক্স গ্রুপের পাঁচ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি। আলোয় আসে ক্রিসেন্ট ও রিমেক্স ফুটওয়্যারের চার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি।

এসব কেলেঙ্কারির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ পায়। ২০১২-১৩ সালে উদ্‌ঘাটিত বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানেও দেখা যায়, ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির সুযোগটি তৈরি করে দেওয়া ২০০৮ সালে। ঘটনা চাউর হওয়ার আগেই লাপাত্তা হয়ে যান বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলায়মান, পরিচালক আনোয়ার চৌধুরী, নওরীন হাসিবসহ ঋণগ্রহীতারা। ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন জনতা, বেসরকারি যমুনা, প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কোনো কোনো কর্মকর্তা।

সম্প্রতি উদ্‌ঘাটিত অ্যাননটেক্স গ্রুপ, ক্রিসেন্ট ও রিমেক্স ফুটওয়্যারের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গেও বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার তথ্য মিলেছে।

জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপ্রক্রিয়ায় সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুদকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জানান, ব্যাংকটিতে অনেক জালিয়াতির ঘটনাই ঘটেছে, যার দালিলিক প্রমাণ কষ্টসাধ্য। বৃহৎ ঋণগুলোর প্রস্তাব প্রেরণ, একেকটি ধাপ অতিক্রম এবং ঋণ মঞ্জুরের সময়কাল খুব সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ দ্রুতগতিতেই ঋণগুলো মঞ্জুর এবং টাকা ছাড় হয়। এ সময়কালে কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করলে দেখা যায়, আত্মসাতের সঙ্গে শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। অথচ এটি প্রমাণ করা দুঃসাধ্য। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির সূচনা হয় ২০০৮ সালের দিকে। সে বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। ওই সময় অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও রিমেক্স ফুটওয়্যারের মতো ঋণগুলো অনুমোদন পায়। ওই আমলে দেওয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি। এসব আত্মসাতের ঘটনায় দুদক এখন অনুসন্ধান শুরু করতে পারছে না।

দুদকের আরেকটি সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের একাধিক ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধান চলমান থাকলেও ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের ধরা যাচ্ছে না। দুদকের একাধিক অনুসন্ধানে ওই সময়ের ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীদের নাম এলেও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

ফারমার্স ব্যাংকের জালিয়াতি নিয়ে ধীরে চলছে দুদক 

ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ (বাবুল চিশতী) কয়েকজন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়। কোনো মামলায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে আসামি করা হয়নি।

অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তদন্তে ব্যাংকটির সাবেক দুই শীর্ষ ব্যক্তির অনিয়ম তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির গ্রাহকের ঋণের ভাগ নিয়েছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির জনবল নিয়োগ হয়েছে মূলত এ দুজনের সুপারিশেই। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরসিএল প্লাস্টিকের সঙ্গে ব্যাংকের গ্রাহকদের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও বেরিয়ে আসে।

২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সংকট তৈরি হলে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। পরিচালকের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তাঁরা।

জালিয়াতির হোতারা আইনের বাইরে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় জালিয়াতির ঘটনাগুলোয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করেছে, সরকারের কাছে সব তথ্য আছে। নতুন অর্থমন্ত্রীর কাছে বড় প্রত্যাশার কথা জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট। তিনি এ বিষয়গুলো বোঝেন। আমরা চাই সব কটি বিষয়ে যেসব প্রতিবেদন আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে নতুন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ১৬,২০১৯ 

বাংলাদেশে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ — নিউইয়র্ক টাইমস

নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পর্ষদের মত


বাংলাদেশের গরিবি হটানো এবং জীবনমানের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। তারা বলেছে, সরকারে পরপর দুই মেয়াদে এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য গত নির্বাচনে তাঁদের নির্বাচনী সফলতার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সদস্যদের নানাভাবে চাপে রাখা এবং তাঁর দলের একচেটিয়া জয় সে অর্জনকে মলিন করেছে। পত্রিকাটি আশঙ্কা করেছে, বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসনের শিকার হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের এই অভিমতের সূচনায় জানিয়েছে, এটি তাদের বার্তাকক্ষ এবং মতামত বিভাগের চেয়ে ভিন্ন। এটি পত্রিকার পরিচালকমণ্ডলী, সম্পাদক ও প্রকাশকের সমন্বয়ে গঠিত সম্পাদকীয় পর্ষদের অভিমত। নিচে অভিমতটি প্রকাশ করা হলো।

টানা প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের জন্য দারুণ কাজ করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১৫০ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যসীমায় বসবাসকারী জনসংখ্যার হারও ১৯ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে প্রায় ৯ শতাংশে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে জয় পায়, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৯৬ ভাগ, তাঁর অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের সপ্তাহ ও মাসগুলোতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিরামহীন ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা, বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা থেকে শুরু করে নজরদারি ও কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ লক্ষ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ‘আক্রমণাত্মক বা ভীতি উদ্রেককারী’ লেখা প্রকাশের জন্য কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে ‘সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশের’ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ‘ভীত’ বিচার বিভাগ বা নির্বাচন কমিশনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য স্বৈরশাসকেরা মানবাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। গত ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই মনোভাব পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারলে সেটাই মানবাধিকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ নিয়ে বিরোধীরা কী বলছে বা নাগরিক সমাজ বা আপনাদের এনজিওদের আমি পাত্তা দিই না। আমি আমার দেশকে জানি। আমার দেশের উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব, তাও জানি।’

শেখ হাসিনা যে তাঁর দেশকে জানেন, সে বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবেন না। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তিনি বিদেশে ছিলেন। আওয়ামী লীগের হাল ধরতে ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এখনো তা ধরে রেখেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তাঁর দল এবং আরেক ক্ষমতাধর নারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তনের প্রতিবাদে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধীরা। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরেক দফা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পান শেখ হাসিনা। দুর্নীতির দায়ে গত বছর খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে এবং শেখ হাসিনা আরেক দফায় ক্ষমতায় এসেছেন। এতে (বাংলাদেশ) একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত হওয়ার পথে।

কিন্তু কেন এই অযৌক্তিক নির্বাচনী ফলাফল তৈরির প্রয়াস? জরিপের ফলাফলেই এমন আভাস তো ছিল যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা সহজ জয় পাবেন। শেখ হাসিনার অর্জনগুলো এখন কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় মলিন হবে। তাঁর সমালোচকেরা দেশ ছাড়ুক বা আত্মগোপনে যাক, তাঁরা আরও গলা ফাটাবে এবং তাঁর বিদেশি সহযোগীরা সতর্ক হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী ও বৃহত্তম একক বাজারের দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণাকালে ‘হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য খবরাখবরে’ উদ্বেগ জানিয়েছিল। এসব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায় পররাষ্ট্র দপ্তর। অনুরূপভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও নির্বাচনী সহিংসতা ও ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতাসমূহ’ যা নির্বাচনী প্রচার ও নির্বাচনকে ‘ম্লান’ করেছে, তা তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে।

শেখ হাসিনা এসব সমালোচনা সম্ভবত আমলে নেবেন না। কিন্তু যেসব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করছে এবং দেশটি দারিদ্র্য থেকে উঠে আসায় আনন্দিত, তাঁকে ও তাঁর মিত্রদের তাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে মানবাধিকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ১৬,২০১৯