Search

Wednesday, January 23, 2019

ময়মনসিংহে শিক্ষককে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে থানা ঘেরাও-ভাংচুর, আহত ১৫


ময়মনসিংহ শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষক শেখ শরিফুল আলমকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে হামলা ও ভাংচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এতে ৫ পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে শহরের জেলা স্কুল মোড়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক শেখ শরিফুল আলম প্রাইভেটকারে কলেজ যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। জেলা স্কুল মোড়ে পৌঁছালে একটি অটোরিকশা তার প্রাইভেটকারে ধাক্কা দেয়। এ সময় অটোচালকের সঙ্গে শিক্ষকের প্রাইভেটকার চালকের বাকবিতণ্ডা হয়।

এ সময় ওই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে গেলে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় অধ্যাপক শেখ শরিফুল আলমের। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে কলার ধরে লাঞ্ছিত করে এবং পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে অধ্যাপক শেখ শরিফুল আলমকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরই প্রতিবাদে বুধবার সকালে জেলা স্কুল মোড়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ গুলিও করেছে। এতে ৫ পুলিশসহ ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মনসুর আহমেদ জানান, জেলা স্কুল ও টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে হামলা ও ভাংচুর করেছেন। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের হামলায় ৫ পুলিশ আহত হয়েছে।
  • শীর্ষকাগজ/জানু ২৩, ২০১৯ 

গায়েবি মামলা — পঙ্গু তারা মিয়া চাপাতি, হকিস্টিক দিয়ে পুলিশকে হামলার আসামি!


সুনামগঞ্জের অধিবাসী শারীরিক প্রতিবন্ধী এই তারা মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছেন। তিনি ঢাকার হাইকোর্টে এসেছেন জামিনের আশায়। গতকাল (২২ জানুয়ারি ২০১৯) তাকে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায়। ছবি: পলাশ খান

ডান হাতটি অস্বাভাবিক চিকন, নাড়াতেই কষ্ট হয়। কিছু ধরতে বা কাজ করতে পারেন না ডান হাত দিয়ে। এমনকি ডান হাতে খেতেও পারেন না। এটি তার জন্মগত সমস্যা। বাম হাত  তুলনামূলকভাবে লম্বা এবং বাঁকানো। খুব কষ্ট করে বাম হাত দিয়ে খেতে হয়। ছবির এই মানুষটির ডান হাত অচল, বাম হাতও প্রায় অচল। তিনি সুনামগঞ্জের অধিবাসী, নাম তারা মিয়া।

তারা মিয়া চাপাতি, হকিস্টিক ও লোহার রড় হাতে নিয়ে আক্রমণ করেছেন পুলিশের ওপর। ভিক্ষা করে জীবনযাপন করা তারা মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুদিন আগে বিকাল ৪টার পর মল্লিকপুর বাজারে এই আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ৫২ জনকে আসামী করে মামলা করেছে পুলিশ। তারা মিয়া সেই ৫২ জনের একজন।

ঘটনার দুদিন পর জামালগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় তারা মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়। ঢাকায় হাইকোর্ট চত্বরে দ্য ডেইলি স্টারের এই সংবাদদাতাকে তিনি বলেন, “আমার হাতের যখন এই অবস্থা তখন আমি কীভাবে পুলিশকে আক্রমণ করতে পারি? একদিকে ডান হাত ব্যবহার করতে পারি না, অন্যদিকে, বাম হাতটাও তেমন কাজ করে না।”

উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আশায় আসা ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আরও বলেন, “আমি রাজনীতি করি না। আমি ভিক্ষা করে জীবন চালাই।… আমার পরিবারের অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”

জামালগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম জানান, মামলাটিতে অভিযুক্ত হিসেবে ৫২ জনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাত রয়েছেন আরও ৭০ থেকে ৮০ জন।

মামলার বিবরণীতে রয়েছে, সেদিন (২৮ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে অভিযুক্তরা অবৈধভাবে মল্লিকপুর বাজার এলাকায় জড়ো হয়ে ‘ধানের শীষের’ পক্ষে মিছিল বের করে। তারা রাস্তা আটকায় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এতে অভিযোগকারীসহ ৫জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

এ বিষয়ে তারা মিয় জানান, “আমি কখনো কোনো মিছিলে অংশ নেই নাই। আর পুলিশকে আক্রমণ করা তো দূরের কথা।”

এরপর তাকে দেখা যায়, উদ্বেগের সাথে আদালত চত্বরে এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করতে।
  • The Daily Star/ jan 23, 2019 

দেশে গণতন্ত্রের কবর হয়ে গেছে — ডা. জাফরুল্লাহ


গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আগে রাজনৈতিক কর্মী গুম হতো। এখন গুম হয়েছে দেশের গণতন্ত্র। দেশটিই গুম হয়ে গেছে। আর কোনো কিছু বাকি থাকলো না। আগামী ৩০ তারিখে যে সংসদ বসবে, সেই সংসদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই। এর প্রতিবাদে গণতন্ত্রের কফিন নিয়ে আমরা একটি মিছিল করি, চলেন। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশবাসী ক্ষিপ্ত। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। চলেন না, চেষ্টা করে দেখি। এখানে কান্নাকাটি করে লাভ নাই, সামনে আসতে হবে। মানুষের মধ্য ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। ক্ষোভ কি তোফায়েল সাহেব, আমু সাহেব, নাসিম সাহেব ও মেনন সাহেবের নাই? সুতরাং ইতিহাস যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তবে আমাদেরকে মাঠে নামতে হবে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে’ এ সভায় অনুষ্ঠিত হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হয়দার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. জসীম উদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পালিয়ে বেড়াতে থাকলে কোনো লাভ হবে না। আসুন, গ্রেফতার করুক না আরো ৫০ হাজার। আর আমি প্রত্যাশা করি, গণতন্ত্র হত্যা করার প্রতিবাদে আপনারা প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা শহীদ মিনারে অনশন করবেন। এটা করতে সহজ হবে না মারও খেতে পারেন। তবে আমরা আপনাদের সাথে থাকবো, মারও খাবো। এছাড়া কোনো না কোনো কর্মসূচি দিতেই হবে। আমাদেরকে রাজপথেই থাকতে হবে। বিদেশীরা আমাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাবে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরাও আন্দোলন করি। জিরো টলারেন্সের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি ৩০ ডিসেম্বরের ভোট। আমি বলি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সাথে আমরাও আছি, আগে নিজের ঘর ঠিক করুন।

ইসির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি কিছু হবে না। কারণ বিচারবিভাগ ক্রীতদাস হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে হয়তো আরেকটা মামলা হয়ে যাবে! পুলিশের দুই আইজিপি ও ব্যারিস্টার নাজম্লু হুদার দুর্নীতি মামলায় জামিন হয়েছে। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হচ্ছে না!

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরো ৫ বছর সময় পেয়েছেন। উনি দখল করে নিয়েছেন। সুতরাং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে তাদের এখন আর কি অজুহাত থাকবে।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো ছিল। কিন্তু এখন নাই। আর রাজপথে থেকে শুধু এই সরকারকে হটানো যাবে না। সুতরাং ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে হবে।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জানু ২২, ২০১৯ 

সেই ‘ভুইফোঁড়’ আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষকও নতুন নির্বাচন চান

নির্বাচন নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন


বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণ নিয়ে ভোটের আগে অনেক পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল। এখন পর্যবেক্ষণে যুক্ত হয়ে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামে অননুমোদিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ও তাদের একজন কানাডীয় স্বেচ্ছাসেবী। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে নতুন করে ভোট হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ‘ভুইফোড়’ ফাউন্ডেশনটির প্রধান মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা ব্যালট বাক্স ভরে রাখেন এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। প্রিসাইডিং অফিসার ও ভোটারদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ শোনার পর তার এখন মনে হচ্ছে, আবার নতুন করে নির্বাচন হওয়ার দরকার।

ঢাকার মিরপুরের একটি ভবনে এই ফাউন্ডেশনের প্রধান অফিসের ঠিকানা। এর সভাপতির দায়িত্বে থাকা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ৭৫ বছর বয়সী আব্দুস সালাম বলেন, এখন আমি সবকিছু জানতে পেরেছি। বলতে দ্বিধা নেই যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করা কানাডীয় নারী পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টার জানালেন, তার কাছে এখন মনে হচ্ছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ না নিলেই বোধ হয় ভালো হতো।

নির্বাচন চলাকালীন অনিয়মের জন্য ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের তরফ থেকে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা দেশগুলোর বড় বড় ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকের গুরুত্বপূর্ণ রফতানিকারক হচ্ছে বাংলাদেশ। গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

গত সপ্তাহে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৫০ আসনে জরিপ চালিয়ে ৪৭টিতেই অনিয়ম দেখতে পেয়েছেন তারা। এতে জাল ভোট, জোর করে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা, কেন্দ্রে বিরোধী দলীয় এজেন্ট ও ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির বাংলাদেশ শাখা জানায়, তাদের জরিপ করা সব এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারে কেবল ক্ষমতাসীন দলটিই সক্রিয় ছিল। কখনো কখনো স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি সম্পদের সহায়তা নেয়া হয়েছে।

তবে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের কথা বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তদন্ত নাকচ করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সংস্থাটিকে বিরোধী দল বিএনপির ‘পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আওয়ামী লীগ ও দলটির জোট সদস্যরা ৯৫ শতাংশ আসন নিশ্চিত করার পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ভোট জালিয়াতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে।

নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অসন্তোষ জানিয়ে বলেছে, প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে ভিসা ইস্যু না করায় ভোট পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন তহবিলের বেশকিছু পর্যবেক্ষক। ভিসা বিলম্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।

কানাডা, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে পর্যবেক্ষক এনেছিল সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। নির্বাচনের দিন ও তার পরে নির্বাচনের স্বচ্ছতার কথা বলেছে সংস্থাটি।

নির্বাচনের বিজয় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর নতুন বছরের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসভবনে সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সামনে বক্তৃতা দেন। তখন তিনি বলেন, আপনারা আমাদের দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার মাধ্যমে গণতন্ত্র কীভাবে কাজ করে তা প্রদর্শনের একটা ভালো সুযোগ দিয়েছেন। মাইক্রোফোন যখন কক্ষের ভেতর ঘুরছিল, অন্যদের সঙ্গে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে বিজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। সৌদিভিত্তিক সংস্থা ইসলামিক কো-অপারেশনের পর্যবেক্ষকরাও তখন উপস্থিত ছিলেন।

ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি কানাডীয় নারী তানিয়া ফস্টার তখন সবার আগে কথা বলেন। তিনি নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু বলে উল্লেখ করেন। আমি মনে করছি, বাংলাদেশে কানাডার মতোই নির্বাচন হয়েছে।

মহাজোট নেতাদের সংশ্লিষ্টতা

ফাউন্ডেশনের নামের প্রথমাংশ ও লোগো দেখতে সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশেনের (সার্ক) মতো। তবে এ দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আবেদ আলী রয়টার্সকে বলেন, সার্কের কাছে অনুমোদন পেতে তারা আবেদন করেছেন। দ্রুতই তারা অনুমোদন পাবেন বলে আশা করছেন।

কিন্তু কাঠমান্ডুভিত্তিক সার্কের একজন মুখপাত্র বলেন, তিনি কখনোই আবেদ আলী কিংবা এই ধরনের কোনো ফাউন্ডেশনের নাম শোনেননি। এ ধরনের কোনো সংস্থাকে স্বীকৃতি দেয়নি সার্ক। কাজেই এ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

জানা গেছে, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দু’জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া প্যানেলে বিএনপি আমলের এক মন্ত্রীরও নাম দেখা যায়। তবে এতে বর্তমানের বিরোধীদলীয় কোনো সদস্য নেই।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের আইনে বারণ আছে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আবেদ আলীর গ্রুপের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তার জানা ছিল না।

অপরদিকে ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ ও জাপা সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদ আলী বলেন, তারা কেবল আমাদের মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা করছেন। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরের একটি ভবনের নিচতলায় ধুলোয় ঢাকা দুটি কক্ষে ফাউন্ডেশনের মূল কার্যালয়। সংস্থাটির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, তাদের পর্যবেক্ষকরা মাত্র কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন। কাজেই এতে নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে, তা পরিষ্কার মূল্যায়ন করা যায় না।

তিনি বলেন, কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার তাকে জানিয়েছেন ব্যালট বাক্স ভরতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সত্য বলতে চাই। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ পেতে আমি এসব বলছি না। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সংগঠিত করতে সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলেও জানান তিনি।

অবশ্য সভাপতির কথা নাকচ করে দিয়ে মহাসচিব আবেদ আলী বলেন, কে কী বলছে, তার ওপর ভিত্তি করে কি আপনি কিছু লিখতে পারেন?

কানাডার সাচকাচাওয়ান প্রাদেশিক সরকারের নীতি বিশ্লেষক তানিয়া ফস্টার এ বিষয়ে বলেন, তার দেশে বসবাস করা বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তিনি শুনতে পান যে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বিদেশি পর্যবেক্ষক খুঁজছে। এটাকে একটা মজার অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করে পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা জানতে চান তিনি।

তিনি বলেন, এরপর আমি ফাউন্ডেশন ও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করলাম। তার আমাকে যাচাই করে পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তার মেয়ে ক্লয় ফস্টারও পর্যবেক্ষক প্যানেলে ছিল। তবে এর আগে কোনো জাতীয় নির্বাচনে তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেননি।

ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ও সার্কের সঙ্গে যে এটির কোনো সম্পর্ক নেই, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। এটাকে চমৎকার কিছু বলে মনে হয়নি তার কাছে। খুব সাধাসিধা মনে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেদন যে খুবই মূল্য বহন করছে- সে সম্পর্কেও আমার ধারণা নেই। আমরা কেবল ঢাকার ৯টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। অথচ আবেদ আলী জানিয়েছেন, ওই নারীর কানাডায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোনো সংস্থার পক্ষেই সব নির্বাচন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না।

এ কথা সত্য যে ফাউন্ডেশনের সব পর্যবেক্ষকরা নিজেদের অংশগ্রহণ নিয়ে অনুশোচনা করেননি। কলকাতার গৌতম ঘোষ, নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির হাকিমুল্লাহ মুসলিম ও নাজির মিয়া বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু বলে প্রথমে তারা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, এখনও তাতে অটল আছেন। 

নাজির মিয়া বলেন, আমরা সহিংসতার ঘটনা শুনেছি, কিন্তু নিজেদের চোখে দেখিনি। অন্যত্র কী ঘটছে- তা নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারব না। আর গৌতম ঘোষ অতি সুন্দর নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন।
  • নয়াদিগন্ত / জানু ২২, ২০১৯ 

Tuesday, January 22, 2019

আওয়ামী লীগ মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত — রুহুল কবির রিজভী



আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার, জানুয়ারি ২২, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন,  আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ভুয়া ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। আসলে আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। 

নিচে সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ দেওয়া হল -

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ভুয়া ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বলছেন-‘এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। বিএনপি নেতারা পরাজিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।‘ বন্ধুরা, আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, কৃত্রিম লাইন তৈরী করে ভোটাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, মহাজোট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষনা করা, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকাছাড়া করা, এসবই হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভুয়া ভোটে এমপি-মন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এখন বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে আওয়ামী নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। 

বন্ধুরা, 
গত কয়েকদিন আগে সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ও গতকাল ভুয়াভোটের সরকারের মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট ডাকাতিকে এড়িয়ে গেছেন, যা দেখে গণমাধ্যমের কর্মীরাও বিস্মিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে-শনিবারের জনসভায় বহু মানুষের চোখ ছিল-নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন, কিন্তু তা নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেছেন-বর্তমান সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। দুর্নীতি ও মাদক বিরোধী কথা বলে সবক দিচ্ছেন। 

সাংবাদিক বন্ধুরা, 
মূলত: মহাভোট ডাকাতি, মহাভোট জালিয়াতি ও মহাভোট কারচুপির ইস্যুগুলো ধামাচাপা দিতেই এখন প্রধানমন্ত্রী এসব পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, রাতের আঁধারে ভোট দিয়ে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজে ব্যবহার করে, বিরোধী দলকে নির্মূল করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন করে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হরিলুট করে এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রেখে শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি গণতন্ত্রের সমাধিসৌধের ওপর কোন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান ? আসলে শেখ হাসিনার মুখে সুশাসনের অর্থ হলো দেশব্যাপী মৃত্যুর দোলাচলে এক মরণ-হরণের অভিযান, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা। কারণ তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে যা বলেন তার উল্টোটাই বাস্তবায়ন করেন। পৃথিবীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার রেকর্ড একমাত্র শেখ হাসিনারই। শেখ হাসিনা সাড়ম্বরে এখন ভাল ভাল উদ্যোগের কথা বলে মানুষের মন থেকে তাঁর অপকীর্তি মুছতে পারবেন না। সময় থাকতে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে সরকারের বিপজ্জনক অবতরণ হবে। তাই দ্রুত নিজে পদত্যাগ করে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিন। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধ।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
প্রতিদিন দেখছি-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব সারাদেশে ছোটাছুটি করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেবের দৌড়াদোড়ি কেবল ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ। বন্ধুরা, প্রতিদিন সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়-সড়কে মৃত্যুর মিছিল। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সড়কে। সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হচ্ছে প্রায় ২০ জন মানুষ। দু:শাসনের কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে সড়ক ব্যবস্থা। রাজধানীতে একদিকে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম, অন্যদিকে পরিবহন নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ মানুষ। নিরাপদ সড়ক দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকার লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী তো প্রতিদিন বিরোধী দলকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে থাকেন, তিনি গণপরিবহনে নৈরাজ্য ও অকালে হাজার হাজার প্রাণ ঝরে যাওয়ার রোধ করতে ব্যর্থতার জবাব দেবেন কি ? ওবায়দুল কাদের সর্বকালের ব্যর্থ একজন সড়ক মন্ত্রী। যেহেতু মন্ত্রণালয় চালাতে তিনি ব্যর্থ, তার নেতৃত্বের কারণে সড়কে শুধু লাশের ছবি, সেহেতু এই মূহুর্তে পদত্যাগ করে তাকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ। নইলে সড়কে মৃত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে না।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অসংখ্য বিরুদ্ধে গতকাল একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

জনপ্রিয় অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে ফেনীর লালপুল এলাকা থেকে গতকাল র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত তাকে কোথায় রাখা হয়েছে কিংবা তাকে আটকের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

রেশন দিতে গড়িমসি, খাদ্য গুদামে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের হামলা-ভাঙচুর


বরিশালে খাদ্য বিভাগের গুদামে ভাঙচুর চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রেশন দিতে গড়িমসি ও ওজনে রেশনের পরিমাণ কম দেয়া নিয়ে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাদের দাবি প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার উপর হামলা ও মারধর করেন খাদ্য বিভাগের কর্মচারীরা। এতে বেশ কয়েকজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী হাসপাতালেও ভর্তি রয়েছেন। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নগরীর বান্দ রোডস্থ খাদ্য বিভাগের গুদামে এই ঘটনা ঘটে। এসময় তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ম্যান রেজাউল করিমকে থানায় নিয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস কর্মী জামাল হোসেন বলেন, সদর স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের রেশনের চাল ও গম উত্তোলন করার জন্য খাদ্য অফিসে ৫ দিন যাবত তারা ঘোরাঘুরি করছেন। সদর উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে ঘোরানো হচ্ছিল। বিকাল ৪টার দিকে তিনিসহ কয়েকজন সহকর্মী আবারও উপজেলা খাদ্য অফিসে গেলে তাকে পরদিন আসতে বলেন।

এতে দমকল কর্মীরা ক্ষুব্দ হলে তাদের সঙ্গে খাদ্য দপ্তরের কর্মচারীদের বাকবিতান্ডা হয়। জামাল বলেন, এ খবর পেয়ে সদর ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কক্ষে যান। ওই কর্মকর্তা তখন তার কক্ষে ছিলেন না।

ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা সেখানে যাওয়ার পর খাদ্য অফিসের কর্মচারীরা তার সঙ্গে দুরব্যবহার করে। এক পর্যায়ে একজন অফিস সহায়ক চেয়ার দিয়ে স্টেশন অফিসার মো. আলাউদ্দিনকে আঘাত করেছে। খাদ্য অফিসের আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি গাড়িতে ভেপু বাজিয়ে ২০/৩০ জন সেখানে যায়। তারা খাদ্য অফিসের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, কক্ষের প্লাস্টিকের ভাঙ্গা চেয়ারগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তছনছ করা হয়েছে কাগজপত্র।

খাদ্য বিভাগের এলএইচডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন রেশন নিতে আসে। তবে সেই সময় পর্যাপ্ত লোকজন না থাকায় তাদের অক্ষেপ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা ধৈর্য্যহারা হয়ে ৩/৪টি গাড়ি নিয়ে এসে খাদ্য গোডাউনে ভাঙচুর চালায় এবং এখানকার উপ পরিদর্শক হুমায়ন কবির, নিরাপত্তা কর্মী রেজাউল করিমসহ বেশ কয়েকজনকে বেধরক মারধর করে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো: আলাউদ্দিন জানান, আমরা ৫ দিন যাবৎ রেশন নিতে গুদামে আসছি। কিন্তু তারা নানাভাবে গড়িমসি করছে এবং রেশন নিতে টাকা দাবী করছেন। এছাড়া প্রতিমাসে রেশন ওজনে ১শ থেকে দেড়শ কেজি কম হয়। এই নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আমার উপর প্রথমে হামলা চালায়। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপর হামলাও চালায় তারা। এই নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তাদের সাথে। এই ঘটনায় আহত হয়ে আমরা বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি।

এই বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এছাড়া এই ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকেই অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
  • শীর্ষকাগজ/ ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

‘ভিপি-জিএস তো তোমরাই হবা, আগের রাতে সিল মেরে রেখো না’


ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে উদ্দেশ করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ‘ভিপি-জিএস তো তোমরাই হবা, দেইখো ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখো না।’

সোমবার ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্লাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদ’র সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময় সভা শেষে এ কথা বলেন ছাত্রদল নেতা।

সভা শেষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বের হন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের হাত ধরে ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মী ও দলীয় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনা দেখা যায়। পরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ এই দুই নেতা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন।

এ ছাড়া উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

ফেরার পথে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দেখলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভিপি-জিএস তো তোমরাই হবা, দেইখো ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখো না।’

এ সময় সেখানে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ তৈরি হয়। পরে স্মৃতি চিরন্তনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে বিদায় জানান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।

জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে — জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট


বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। মানুষ একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনের রাতে ভোট চুরি ও দিনে ডাকাতির ক্ষোভ এবং খুন গুম ধর্ষণের শোককে শক্তিতে পরিণত করে আন্দোলন মুখর হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলন দুর্বার তরঙ্গে রুপ নিবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই গণশত্রুকে সরিয়ে দিতে হবে।

সোমবার, জানুয়ারি ২১, দুপুরে লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাটে ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের হাতে নিহত ইউনিয়ন বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেন স্মরণে প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লিয়াক আলীর সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র লুট হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যে দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তারাই এখন গণতন্ত্রকে লুট করেছে, ডাকাতি করেছে। আর খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তাকে সাজানো মামলায় কারাগারে নেয়া হয়েছে।

আওযামী লীগ এখন গণশত্রুতে পরিনত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ইউএনও, ডিসি, সেনাবাহিনী নিয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে ভোটের রাতে সিল মেরে রাখে এবং ভোটের দিন আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি করেছে। এরমাধ্যমে তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। জনগনের সেই মনের ভাষা আর মুখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আর আওয়ামী লীগের নেই। কখনও হবেও না।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, যতই জুলুম হোক না কেন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। জনগণের ঐক্য এবং জাতীয় ঐক্য একত্রিত হয়ে এই আওয়ামী লীগ নামের এই দানব সরকারকে উৎখাত করা হবে। আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন খালেদা জিয়াকে মুক্তির আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন খুন, গুম, ধর্ষণর শিকার হওয়া, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি ও নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনে একটি সমৃদ্ধশালী সবার জন্য বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন। তাই অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।

খুন হওয়া বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে গণতন্ত্রের জন্য শহীদ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেনে, ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক গুন্ডারা রাজপুরের তোজাম্মেল হককে হত্যা করেছে। তোজাম্মেল গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন। এরকম আরও ২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে। আমাদের এক যুবদলের নেতার স্ত্রীকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য ধর্ষণ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভোটের আগে জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছিলাম। সেসময় মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। মানুষ ভেবেছিল ভোটাধীকার প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের ভয়াবহ শাসন থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু মানুষ সেটা পারেন নি। জনগনের ভোটাধিকার অধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, তারা নিজেরাই নিজেদের জিতিয়ে নিয়ে এখন উৎসব করছে। গত ১০ বছরে দেশকে একটি বিভিষিকাময় পরিস্থিতি তেরি করেছে আওয়ামী লীগ। মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের লোকজন বিভিন্ন লোকের কাছে টাকা দাবি করছেন, টাকা না দিলে তাদের গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। খুন-গুম-ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১০ বছরের অনেক মা ও স্ত্রীরা রাত জেগে আশায় থাকেন কখন তাদের গুম হওয়ার স্বামী সন্তান আসবেন। সারাদেশে ৯৮ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। কমবেশি ২৬ লাখ নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে পুলিশসহ প্রশাসনকে মানুষের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছে।

জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ভোট হয়নি। ২৯ তারিখ রাতে চুরি হয়েছে। ৩০ তারিখ দিনের বেলা ভোট ডাকাতি হয়েছে। ধানের শীষে ভোট দিতে যাওয়ার অপরাধেই তোজাম্মেলকে খুন করা হয়েছে। তোজাম্মেল হত্যার বিচার করতে হবে। দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। বাংলার মটিতে এসব হত্যার বিচার হবেই।

সম্মিলিতভাবে ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে রব বলেন, বাংলাদেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত না হলে কেউ শান্তিতে তাকতে পারবেন না। যে বিভিষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কখনও শেষ হবে না।

রব বলেন, এককভাবে এই ভোট ডাকাতদের মোকাবেলা করা যাবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, মানবসভ্যতার স্বার্থে, আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বার্থে এদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা লড়বো। মাঠ থেকে কখনও সরবো না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছি। এখনও আমি শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে পারি। কিন্তু তার কন্যা ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন করেছেন, তা সারা বিশ্বে সেরা ডাকাতির নির্বাচন হয়ে কলংকের ইতিহাস তৈরি করেছে। যদি আমরা নির্বাচনে না যেতাম তাহলে বিশ্বের সেরা ভোট ডাকাতির প্রমাণ পাওয়া যেতো না। এখন সারা বিশ্বে এটি প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ ভোজ সভা করার মাধ্যমে সেটার দলিল দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মহা জয় নয় মহা পরাজয় হয়েছে।

আন্দোলনে জনগন বিজয়ী হবে উল্লেখ করে বঙ্গবীর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনে তোজাম্মেল হোসেন খুন হয়েছেন। এই সরকার ভোটের রাতে চুরি করেছে। আর দিনে করেছে ডাকাতি। আমরা পাকিস্তার হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছি। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি তাদের থেকে বড় নয়। এখন আওয়ামী লীগ উৎসব করছে। এরপর সেটা কাল হয়ে দাড়াবে। মাঝখানে তারা জিরো হয়ে যাবে। আপনারা বিজয়ী হবে। জনগন বিজয়ী হবে।

সভায় ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রতিবাদ সমাবেশে বিপুল পরিমান মহিলাদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে তারা ভোট না দিতে পেরে ক্ষুব্ধ। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও প্রশাসনের লোকজনদেরকে দিয়ে যেভাবে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে তা কলংকের ইতিহাস তৈরি করেছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোন উপায় নেই।

এসময় রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সেক্রেটারী শহিদুল ইসলাম মিজু, সহ সভাপতি এ্যডভোকেট রেজেকা সুলতানা ফেন্সি, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সেক্রেটারী রইচ আহমেদ, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবলু, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লেমন, জেলা যুবদল সভাপতি জাহিদুল ইসলাম খোকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, জেএসডির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, সেক্রেটারী ডা. সাদেক আলী, হারাগাছ পৌরসভা সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় এবং রংপুর ওলালমনিরহাটের নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবাদ সমাবেশের আগে মির্জা ফখলরুল ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে নিহত তোজাম্মেল হোসেনের কবরে ফাতেহা পাঠ শেষে মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তারা নিহত তোজাম্মেল হোসেন ও আহতদের পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানান এবং আর্থিক অনুদান দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন লালমনিরহাট সদরের রাজপুর ইউনিয়নের পাগলাহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ভোট দিতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফার নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হোসেনকে ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় আরও ৯ জন আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মোফাসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন নিহতের পুত্র মোস্তফা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
  • নয়া দিগন্ত/ জানু ২১, ২০১৯ 

প্রভাবশালীদের কারণে আদায় হচ্ছে না খেলাপি ঋণ!


রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে প্রভাবশালী ঋণ গ্রহীতারা। এই বাধা দূর করতে অর্থ ঋণ আইন সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারার প্রধান কারণগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় নিয়ে এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। বৈঠকে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ২শ’ ৫৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।

একইভাবে নভেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৪৭ কোটি টাকা বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯শ’ ৬৩ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। ১১ মাসে এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ২৫১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৮ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ কোটি টাকা। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৭৭১ কোটি টাকা।

একইভাবে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। নভেম্বর শেষে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৬ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।

সরকারি পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি বাড়লেও একই সময়ে ৯৬০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমেছে একমাত্র সোনালী ব্যাংকের।  ২০১৮ সালের নভেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ১৩ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতারা অনেক প্রভাবশালী। টাকা আদায়ের সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হয়। আইনগত জটিলতার কারণে সেই মামলাও স্থগিত করে রাখেন প্রভাবশালীরা। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ হওয়াকেও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু খেলাপি ঋণ আদায়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপকরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি পর্ষদকে চাপ না দিলে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। ঋণ দেওয়ার আগে জেনে বুঝে অনুমোদন বন্ধ করা যাবে। খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। ঋণ খেলাপিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি কার্যকর করতে হবে।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকের বরাত দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে এমডিরা অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। সবগুলো প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ না বাড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা নেওয়ার সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়াদে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। এ সময়ে অবলোপন করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার ঋণ। 
  • বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ জানুয়ারি ২২, ২০১৯

Monday, January 21, 2019

এই সরকার-ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয় — মির্জা আলমগীর


এই সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

সোমবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের খলাইঘাট চরে জাতীয় নির্বাচনের দিন নিহত ইউনিয়ন বিএনপির পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক তোজাম্মেল হকের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট কারচুপি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এ কারণে এ নির্বাচনে জয়ী বা বিজয়ী বলে কিছু নেই। এ নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব হয়নি। জনগণের ভোটাধিকার ডাকাতি করা হয়েছে।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ নির্বাচন বয়কট করেছে। তাই আমাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়া না নেয়ার কিছু নেই বলেও জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই মুখপাত্র।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুসহ রংপুর ও লালমনিরহাটের স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।