Search

Tuesday, January 29, 2019

ডাকসু নির্বাচন - সুষ্ঠু ভোটের জন্য গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনুন

সম্পাদকীয়

ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকেরা যেমন, তেমনি সাধারণ মানুষও সন্দেহের দোলাচলে। সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের আকাঙ্ক্ষা হলো কোনো একটি জায়গা অন্তত সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে মুক্তি পাক। প্রায় তিন দশক পরে যে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটুক, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের যে বাস্তব চিত্র, তাতে কর্তৃপক্ষের ওপর যথেষ্ট ভরসা রাখা কঠিন। কিন্তু এই নির্বাচনের গুরুত্বকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আসন্ন ডাকসু নির্বাচন ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন করা সম্ভব হলে দেশের অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে সুনির্বাচন করা সহজতর হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের আসন্ন সভায় কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপরে নির্বাচনটি অবাধ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে নাকি কমবে, তার অনেকটাই নির্ভর করবে। তিনটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ভোটার ও প্রার্থীদের যোগ্যতা। বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু নিয়মিত ছাত্ররাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। পিএইচডি ও এমফিল ছাত্ররা ভোটার হতে পারেন, কিন্তু প্রার্থী নন। ছাত্রসংগঠনগুলো এই বিধান শিথিল করার জন্য যেসব যুক্তির অবতারণা করছে, তা দৃঢ়তার সঙ্গে নাকচ করাই সমীচীন। দীর্ঘদিন নির্বাচন হয়নি বলে কারও তথাকথিত বঞ্চনা প্রশমনের বিষয়টি বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এটা খাল কেটে কুমির আনার শামিল হবে। বরং অনেকেই মনে করেন যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়ার পরে কারও নিয়মিত ছাত্র থাকার সুযোগ থাকতে পারে না। তাই প্রার্থী হওয়া দূরে থাক, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তাঁদের ভোটাধিকার থাকার বিধান বিলোপ করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, ভোটকেন্দ্র হলের ভেতরে না বাইরে হবে, তা নির্ধারণ করা। এটা আমাদের সবারই জানা যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং হল প্রশাসন প্রধানত দলীয় বিবেচনায় ঢেলে সাজানো হয়েছে। হলের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতাসীন দল–সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের হাতেই রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ১৪টি ছাত্রসংগঠনের মধ্যে ছাত্রদল ও বামদের ১১টি সংগঠন হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের যে দাবি করেছে, তা যুক্তিসংগত। তারা বলেছে, প্রতিটি হলে ছাত্রলীগের যে আধিপত্য গড়ে উঠেছে, সেটা হলের ভেতরে কেন্দ্র স্থাপন করা হলে ভোটাভুটির নিরপেক্ষ পরিবেশকে ব্যাহত করবে। ছাত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আবাসিক হলগুলোর বাসিন্দা নন। সুতরাং হলের ভেতরে যাওয়াটাই তাঁদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং গঠনতন্ত্র সংশোধন করে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র নিয়ে আসতে হবে।

এবং তৃতীয়ত, ছাত্র সংসদের ওপর উপাচার্যের ক্ষমতা প্রয়োগকে ভারসাম্যপূর্ণ করা। গঠনতন্ত্রের বিদ্যমান বিধানমতে উপাচার্য ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতাদের বরখাস্ত করার এখতিয়ার রাখেন। এটা সবারই জানা যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যরা আর অতীতের মতো কোনোভাবেই দলনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখেন না বা রাখাটা সম্ভব হয় না। তাই উপাচার্যের হাতে এই এখতিয়ার থাকা উচিত নয়। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে আমরা একমত হয়ে বলতে পারি যে অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতির নেতৃত্বে উপাচার্য ও ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কাউন্সিলের হাতে এই এখতিয়ার অর্পণ করা যেতে পারে।

৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে যা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তেমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ যাতে না ওঠে—তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ক্যামেরা রাখার যে দাবি উঠেছে, তা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। নির্বাচনী প্রচারণায় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতেই হবে। ছাত্ররা যদি নিজ নিজ ভোট না দিতে পারেন, তাহলে এই কলঙ্কের দায় থেকে জাতির পরিত্রাণ মিলবে না।

  • Courtesy: Prothom Alo/ Jan 29, 2019

Air quality falls in capital

Tk 802.25cr project yields no result


The capital’s air quality deteriorated after implementing a Tk 802.25 crore air quality improvement project in nine years since 2009. The project cost included Tk 769.74 crore provided by the World Bank as credit carrying 0.75 per cent service but no interest.

The Tk 802.25 crore clean air and sustainable environment project for the capital was implemented by the Ministry of Environment, Forests and Climate Change.

Under the project the implementing ministry engaged the two city corporations, the Department of Environment and Dhaka Transport Coordination Authority to construct roads, sidewalks, foot-over-bridges, passengers sheds at bus stops and installing traffic signals. 

The feasibility studies for introduction of Bus Rapid Transit linking the Hazrat Shahjalal International Airport and Mohakhali was carried out by Dhaka Transport Coordination Authority with money from the clean air and sustainable environment project.

The Department of Environment opened 11 air quality monitoring stations with money from the same project.

The DoE conducted studies for innovating brick kilns capable of emitting less carbon also spending money from the project for the capital’s air quality improvement and sustainable environment. 

On February 17, 2014, when air quality monitoring began, the capital’s air quality was unhealthy with an average air quality index value of 172. On Saturday the capital’s air quality was ‘very unhealthy’ with average air quality index value of 264.

The World Health Organization set the standard air quality index value at 50. At midnight the capital’s air quality index value often crosses 300, which is considered by the WHO as ‘extremely unhealthy’.

In 2018, the Bangladesh capital was ranked by the US Environmental Protection Agency as the world’s 4th most polluted city with average annual air quality index value of 195.

Since 2014, average fine particles suspended in the capital’s air increased four times, Dhaka University chemistry professor Abdus Salam, who studied the problem for years, told new Age.

‘The fine particles suspended in our capital’s air is eight times higher than the WHO set standard of 25 microgram per cubic metre, indicating high level of carbon, sulfite, nitrate and heavy mineral like chromium and lead in the air,’ he said.

Jatiya Shshtya Adhikar Andolan president Dr Rashid-E-Mahbub said, ‘Polluted air is extremely harmful for the public as it might cause chronic skin, lung, kidney, stomach and other diseases besides failure of organs.’

The Transparency International, Bangladesh as well as environmentalists questioned the logic of implementing an unproductive clean air and sustainable environment project spending public money and WB credit. 

They called it illogical to spend Tk 461 crore for construction of roads, sidewalks, drains, foot bridges, passengers sheds at bus stands and installation of traffic signals by the capital’s two city corporations. They called it totally illogical to spend Tk 54.48 crore on feasibility studies for a proposed bus rapid transit project. 

‘The bureaucrats who misled the government for taking such projects should be punished for wasting scarce funds,’ said architect and joint secretary of Bangladesh Paribesh Andolon Iqbal Habib.

‘I am surprised over how the World Bank could extend loan for the construction of foot bridges, footpaths, passenger sheds at bus stands and the installation of traffic signals under clean air project,’ he said.

TIB’s executive director Iftekharuzzaman said that for implementing ineffective and inappropriate project like this, the government was denied grants from the climate resilience trust fund.

Environment ministry additional secretary M Mozahed Hossain refuted all the criticism saying the project was taken to mitigate adverse impacts of climate change and environmental degradation. 

He said that roads, footpaths, foot bridges, drains were constructed to ease the capital’s traffic congestion as it emits lot of carbon.

In her written reply, World Bank media relations officer Mehrin Mahbub claimed air pollution remained stable despite increased population and economic activities.

  • Courtesy: New Age /Jan 29, 2019

২০১৮ সা‌লে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৪৩৯ জনের


গত এক বছ‌রে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জন মানুষ প্রাণ হা‌রি‌য়ে‌ছেন। ওই বছর সারা‌দে‌শে মোট ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘ‌টে‌ছে। এ তথ্য জা‌নি‌য়ে‌ছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠ‌নের সভাপ‌তি ই‌লিয়াস কাঞ্চন।

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২৯, রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আ‌য়ো‌জিত ২০১৮ সা‌লের সড়ক দুর্ঘটনার প‌রিসংখ্যান প্র‌তি‌বেদন প্রকাশ অনুষ্ঠা‌নে তি‌নি এসব তথ্য তু‌লে ধ‌রেন।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৮ সালে সড়কে ৫ হাজার ৫১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথের মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮টি। এসব দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন। আহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮০।

লি‌খিত বক্ত‌ব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন ব‌লেন, ‘২০১৮ সা‌লে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন মানুষের প্রাণ গে‌লেও ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন। হাসপাতা‌লে ভ‌র্তির পর ৭৪০ জন মারা গে‌ছেন। ত‌বে মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৭ সা‌লের চাই‌তে ২৪৬ জন কমেছে।’
  • জাগো নিউজ/ জানু ২৯, ২০১৯ 

৫ বছরে বেওয়ারিশ লাশ ৬২১৩


২০১৮ সালের নভেম্বরের ১ তারিখ। বাংলাদেশের বেওয়ারিশ লাশ দাফনের দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম একটি লাশ ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল করে আঞ্জুমান মুফিদুলের কাছে দিয়ে দেয় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফনের জন্য। 

ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো আরো হাজার খানেক বেওয়ারিশ লাশের মতই। কিন্তু ঘটনার মোড় নেয় যখন আঞ্জুমান মফিদুলের কর্মীরা তাকে দাফনের আগে গোশলের জন্য নেন। মৃত ব্যক্তির কোমরে কিছু কাগজ খুঁজে পান তারা। সেই সময় উপস্থিত থাকা একজন কর্মী ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবে, তিনি বলছিলেন ‘আমরা তার কোমরে আইডি কার্ড আর ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাই। আইডি কার্ড দিয়ে শনাক্ত করা যায়নি। এরপর পুলিশকে জানালে তারা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তার পরিচয় বের করেন। দেখা যায় তিনি চট্টগ্রামের বিশাল বড়লোক ফ্যামিলির লোক। পরে তাদের খবর দিলে তারা এসে লাশ নিয়ে যায়’। চট্টগ্রামের এই পরিবারটির সাথে আমি কথা বলেছি। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। কিন্তু পরিবারটি বলেছে- তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই ঘটনায় এতটাই বিপর্যস্ত যে, এখন আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না তারা। 

বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা

বেওয়ারিশ লাশের ওয়ারিশ বা পরিবার-পরিজনের খবর পাওয়া যায় হাজারে দুই থেকে তিনটা। আঞ্জুমান মফিদুল বলছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্ব^র এই পাঁচ বছরে ৬ হাজার ২১৩ জনকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেছে তারা। অর্থাৎ প্রতি বছরে ১ হাজারের বেশি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে যাদের কোনো ওয়ারিশ পাওয়া যায়নি। 

ঢাকায় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের কার্যালয়। সংস্থাটি ২০১৮ সালের নিখোঁজদের যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে এর সংখ্যা ৩৪। পরবর্তীতে ১৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন মামলায় পুলিশের কাছে আটক আছে। আর বাকি ১৫ জন নিখোঁজ। 

পরিবারগুলো কি খোঁজ করে?

এই নিখোঁজদের একজন মোহন মিয়া। যিনি ঢাকার মিরপুর থেকে ২০১৮ সালের ১০ জুন নিখোঁজ হন। মোহন মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলছিলেন তারা আঞ্জুমান মফিদুলে যাননি। কারণ তার আশা তার স্বামী একদিন ফিরে আসবেন। তিনি বলছিলেন ‘তার শত্রুতা ছিল বাড়ি ঘর নিয়ে। মুদি দোকান ছিল আমার স্বামীর, সে তো কোনো সন্ত্রাসী না, নেতাও না যে, তারে মেরে ফেলবে। নিখোঁজের পর আমরা অনেকবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু আঞ্জুমান মফিদুলে যাইনি। আমরা বিশ্বাস করি সে ফিরে আসবে একদিন’। আরো একজন নিখোঁজ ব্যক্তির বাবা বলছিলেন তার ছেলের খোঁজে একাধিক বার থানা-পুলিশ করেছেন কিন্তু আঞ্জুমান মফিদুলে যাননি। কারণ পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তার ছেলেকে তারা খুঁজে বের করবেন। সে ঘটনার পার হয়ে গেছে ছয় মাস। 

তিনি বলছিলেন ‘অনেক কিছু করলাম। মিডিয়া করলাম, থানা-পুলিশ করলাম। পুলিশ বলতো আপনার ছেলেকে পাবেন। এখন সেই ওসিও ট্রান্সফার হয়ে গেছে’। বেশির ভাগেরই লাশের খোঁজ করতে কেউ আসে না এখানে। যেসব পরিবারে কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ থাকেন দীর্ঘদিন, তারাও যান না কারণ তাদের আসা থাকে একদিন হয়ত নিখোঁজ ব্যক্তিটি পরিবারের কাছে ফিরে আসবে এই আশায়। এছাড়া অনেক সময় লাশগুলো এমন অবস্থায় থাকে যে, সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। বলছিলেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একজন কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম। 

মি. ইসলাম বলছিলেন, ‘যদি কোনো পরিবার এসে একটা টাইম লিমিট বলতে পারেন যে, ঐ সময়ের মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে বা ব্যক্তির বর্ণনা দিতে পারে তাহলে আমরা আমাদের নথি ঘেঁটে মেলানোর চেষ্টা করি। তবে সেটা খুব কম হয়। বছরে দুই-তিনটা এমন কেস থাকে। তারপর আগে ছবি তোলার সিস্টেম ছিল না। এখন কিছুদিন হল হয়েছে। কিন্তু লাশগুলো এত বিকৃত অবস্থায় থাকে যে, পরিবারের লোক আসলেও শনাক্ত করতে পারে না’। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পরিচয় শনাক্ত করতে পারে? 

একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, জিডি, মামলা সব কিছু হয় সংশ্লিষ্ট থানাতে। এর একটা কপি দেয়া হয় আঞ্জুমান মফিদুলে। এছাড়া দেশের সব থানাতে এই বিবরণ বা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাহলে কেন একটা ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায় না? আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর (মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন্স) সোহেল রানার সাথে। 

প্রশ্ন: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে একটা বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার পর আপনারা কী করেন তার পরিচয় বের করার জন্য?

উত্তর : ময়নাতদন্ত হয়, পরিচয় জানার জন্য থাম্প ইম্প্রেশন থেকে এনআইডির সাথে মেলানোর চেষ্টা করি, প্রাথমিকভাবে যদি না পরিচয় পায় সেেেত্র ডিএনএ নমুনা নিয়ে সিআইডিকে পাঠায়। এছাড়া মামলা হয়। জনপ্রিয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেয়, সব থানার ইউনিটগুলোকে জানানো হয়। 

প্রশ্ন: আপনি ডিএনএ নমুনা, পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনের কথা বলছেন এসব কি বিশেষ কেসের ক্ষেত্রে নাকি সব ক্ষেত্রে করেন?

উত্তর : এসব আমরা সব অশনাক্তকৃত লাশের ক্ষেত্রে করে থাকি।

প্রশ্ন: যেহেতু একটা লাশের সব তথ্য আপনাদের কাছে থাকে সেেেত্র এটা কি খুব কঠিন কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য খুঁজে বের করা?

উত্তর : নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে পারে খুঁজে না পাওয়ার পিছনে, যে সকল েেত্র অনেক সময় বা কখনো কখনো সম্ভব নাও হতে পারে।

পুলিশ বলছে এভাবে তারা একটি লাশ শনাক্তের জন্য তিনমাস তদন্ত করতে থাকেন। তারা দাবি করছেন এর ফলে সন্তোষজনক সংখ্যক লাশের শনাক্ত করা গেছে তবে সেই সংখ্যাটি দিতে পারেননি। এদিকে সেটাই যদি হয় তাহলে আঞ্জুমান মফিদুলের পাঁচ বছরে ৬ হাজারের বেশি বেওয়ারিশ লাশের যে হিসেব দিচ্ছে তার সংখ্যাটা অনেকটা কম আসতো। 

আদৌ কি সম্ভব পরিচয় বের করা? মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলছিলেন, যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সব রকম তথ্য রয়েছে সেেেত্র একটা লাশের শনাক্ত করা কঠিন কিছু না। 

তিনি বলছিলেন, ‘কেন একটা লাশের শনাক্ত করা যাবে না, নিশ্চয় যাবে। এটা শুনলে মনে হবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কি সচেতন কিন্তু এটা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যদি পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে সেই নির্দেশনা থাকে, পলিটিকাল উইল (রাজনৈতিক ইচ্ছা) থাকে তাহলে এটা হবে। পুলিশের অনেকগুলো কাজের মধ্যে এটাকে হায়েস্ট ইম্পর্টেন্স দিয়ে করা উচিত। এখন অনেক প্রযুক্তি বের হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে অবশ্যই বের করা যায়। তবে তার জন্য দরকার বাহিনীগুলোর সদিচ্ছা’। বাংলাদেশের বেওয়ারিশ লাশের দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ২৭টি শাখা সক্রিয় রয়েছে সারা দেশে। তবে দেশের যে কোনো প্রান্তে কোনো বেওয়ারিশ লাশ পেলে পুলিশ তাদের নির্দিষ্ট কার্যক্রম শেষ করে সৎকারের বা দাফনের জন্য ঢাকাতে পাঠিয়ে দেন। 

ঢাকার দুইটি স্থানে সেসব লাশের দাফন হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে পরিবারগুলো অপোয় থাকেন তাদের নিখোঁজ আপনজনের, অপরদিকে হাসপাতালের মর্গ, থানা-পুলিশ সব পার করে একজন মৃত ব্যক্তির হয়ত স্থান হয় বেওয়ারিশ লাশের তালিকায়। যেটার খবর শুধু তার পরিবারের কাছেই যায় না।
  • দিনকাল/ জানু ২৯,২০১৯ 

বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে, সূচকে চার ধাপ অবনতি — টিআই


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ সূচকে ১০০ এর মধ্যে স্কোর করেছে ২৬। আগের বছর এটি ছিল ২৮। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থান ছিল নিচের দিক থেকে ১৭। ২০১৮ তে হয়েছে ১৩।

ওপরের দিক থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯। ধারণা সূচকে পাকিস্তানের স্কোর ৩৩, ওপরের দিক দেশটির অবস্থান ১১৭। ভারতের অবস্থান ৭৮। তাদের স্কোর ৪১।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

আজ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো অবস্থা নেই।’

দুর্নীতির ধারণা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে আছে শুধু আফগানিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটান কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ২৫ নম্বরে স্থান পেয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আছে ডেনমার্ক। সবচেয়ে বেশি সোমালিয়া। দেশটি গত ১২ বছর ধরে একই অবস্থানে আছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সেরকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক ও অন্যান্য জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। গণমাধ্যম ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগতভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদকের কাজ নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে সীমাবদ্ধ উচ্চ পর্যায়ে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্সের’ যে ঘোষণা আছে সেটা কার্যকর করার জন্য পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে টিআইবির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
  • প্রথম আলো/ জানু ২৯, ২০১৯ 

ডাকসু নির্বাচন — হলে ভোট নিলে কঠোর আন্দোলন!

  • ডাকসু নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ চাইল ছাত্র ইউনিয়ন
  • ডাকসু নির্বাচন : আচরণবিধি সংশোধনে ছাত্রদলের প্রস্তাব
  • ডাকসু নির্বাচন : কোটা আন্দোলনকারীদের ৫ দাবি


আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের হাওয়া লেগেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। আলোচনা চলছে ঘটা করেই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি হবে না, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। সব ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ২৮ বছর পর উপহার দিতে পারবে কি না, এখন সেটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল আলোচনার বিষয়।

ক্যাম্পাসজুড়েই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সেই হাওয়ায় মিশে আছে নির্বাচনী শঙ্কাও। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ধরনের শঙ্কাবোধ না থাকে—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা আদায় করে নিতে তৎপর ছাত্রসংগঠনগুলো। বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা কোনোভাবেই চায় না বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক। তাদের দাবি, হলে ভোট গ্রহণ করলে সেই ভোটে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক পক্ষ কারচুপির চেষ্টা করবে।

এ ছাড়া আরো কয়েকটি ছাত্রসংগঠন হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চুপ করে বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। সংগঠনটির নেতারা জানান, হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় অনড় থাকলে তারা (কোটা আন্দোলনকারী) কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা ছাড়াও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তাপ চরমে। চায়ের আড্ডায় ডাকসু নির্বাচনী আবেশ বিরাজ করছে। টিএসসির মোড়ে জালালের চায়ের দোকানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের চার বন্ধু গল্পে মাতেন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। এই প্রতিবেদক তখন চায়ের দোকানেই উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা এনটিভি অনলাইনের। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নাজমুল হুদা নামের একজন শিক্ষার্থী বলে উঠলেন, ‘হলে ভোট গ্রহণ করা হলে অনাবাসিক ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ঝামেলা হতে পারে। ভোট কারচুপির সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। আগের রাতেও ব্যালট বাক্স ভর্তি হয়ে যেতে পারে!’

জবাবে নাজমুলের বন্ধু তরিকুল ইসলাম বললেন, ‘আচ্ছা, নির্বাচনী সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি কি একেবারেই গেল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন নিয়েও কী সব ভাবছি আমরা! তবে সত্যিই যদি এই পরিস্থিতির ভেতরে দিয়ে নির্বাচন হয়, আমি চাইব ভোট না হোক। প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের জন্য কলঙ্কিত হবে, সেটা আমি চাই না। প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সব ছাত্রসংগঠন অংশগ্রহণ করবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। তবেই হবে নির্বাচনের আসল মজা। ভোটই যদি হয় তবে সিলেকশন না হোক!’

জালালের চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে এসব ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে। নাজমুল হুদার সঙ্গে সুর মিলিয়ে হাসান আল মামুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে কঠোর আন্দোলনে যাব। কারণ, হলে ভোট গ্রহণ করা হলে সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে ভয়ে ও আতঙ্কে থাকবে। হলের বাইরে থাকা অনাবাসিক ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহাও প্রকাশ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে পাশে থাকি, তারা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী সংস্কৃতি প্রশ্নবিদ্ধ হোক। বিশ্ববিদ্যালয় তো আমাদের প্রাণের ও আবেগের স্থান। তাই নির্বাচনী কমিটি হলে ভোট গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সামনে কঠোর আন্দোলন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’

হাসান আল মামুন আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু গৌরব-ঐতিহ্য আছে, সেটা কর্তৃপক্ষ ভালোভাবেই জানে। সেই গৌরব ও ঐতিহ্যকে নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব। আমরা প্রত্যাশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সবার দাবি মেনেই হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবে। মুক্ত স্থানে ব্যবস্থা করলেও আমাদের সমস্যা নেই। আমরা চাই প্রকাশ্যেই সবকিছু হোক। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাটা ফিরে আসুক। জনপ্রিয় প্রার্থীরাই সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ভিপিসহ অন্য পদগুলোতে নির্বাচিত হোক। আর যদি হলেই ভোট গ্রহণ করা হয়, তাহলে আমরা সেটা মেনে নেব না।’

হলে ভোট গ্রহণের বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে হাসান আল মামুন বলেন, ‘দেখুন, হলে কিন্তু ছাত্রলীগের একক আধিপত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হলে ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও কিন্তু ভয়ে থাকবে। যারা ঝামেলা চায় না, তাদের ভেতরে কেউ কেউ কিন্তু নানা অজুহাতে হল ত্যাগ করারও চেষ্টা করবে। হলের বাইরের শিক্ষার্থীরা তো হলে যেতেই চাইবে না। হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সঠিক মতামত প্রদান করতে পারবে না বলে আমার মনে হয়। সুতরাং যেখানে এত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে কেন্দ্র করার প্রশ্নই ওঠে না। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। আশা করছি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা সবাই একমত। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ভোট গ্রহণ করা হলে আমরা আন্দোলনে যাব। আমরা জানি, আজকে হলগুলোকে কীভাবে একটি সংগঠন তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই আমাদের সবার দাবি থাকবে, হলের বাইরেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা। সেটা যদি প্রশাসন করতে না পারে, তবে এখানে নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হতে দেবে না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী শুভ বলেন, ‘গত ২৮ বছরে বিভিন্ন ক্ষমতার পালাবদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন যদি ডাকসু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে সে নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোনো প্রহসনকে ছাড় দেবে না।’ 


  • এনটিভি অনলাইন/ জানু ২৯,২০১৯

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবে ছাত্রদল


ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত  সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির  এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে এক ঘন্টার এ বৈঠকে  দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,  ব্যারিস্টার  মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার  জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ডাকসু নির্বাচন ছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের দাবি করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সব নেতারা একমত হয়ে এর জন্য প্রয়োজনীয়  প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে পার্থী নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠনের বিষয়েও  সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রী দলের প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের  প্রস্তাবনা তৈরী করেন নেতারা। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ট্রাইব্যুনালে মামলার  কর্মসূচীর বিষয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্ত মতামত চলে আসে। বেশিরভাগ নেতা জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা করে কোন ফায়দা হবে না। সরকার আদালতকে  নিয়ন্ত্রণে   নিয়ে তাদের পে রায় নিয়ে নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য করার সহৃযোগ নিবে।

আবার দলের প্রার্থীরাও মামলার বিষয়ে তেমন আগ্রহী না বলেও জানান তারা। অন্যদিকে একজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের অনিয়মের প্রতিবাদ স্বরুপ এই মামলা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে কাজে লাগবে। ফলাফল যাই আসুক না কেনো এটাকে  কর্মসূচী হিসেবে নিয়েই তা পালন করা দরকার। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়নি বলে জানা গেছে। 

  • যুগান্তর/ জানু ২৯, ২০১৯ 

মজুরিকাঠামো - জাতীয় শ্রমনীতি কি উপেক্ষিত হচ্ছে?

আসজাদুল কিবরিয়া  

মজুরিকাঠামো ঘিরে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আপাতত শেষ হয়েছে। নামমাত্র মজুরির হার সংশোধনের পাশাপাশি সরকার ও মালিকপক্ষের কঠোর অবস্থান শ্রমিকদের কারখানায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। এই আন্দোলনের কিছু মূল্যও গুনতে হচ্ছে তাঁদের। কিছু শ্রমিকের কাজ খোয়া গেছে, কিছু শ্রমিক আছেন পুলিশি হয়রানিতে। আর বাকিরা ভবিষ্যতে কর্মচ্যুতির হুমকি মাথায় নিয়ে ন্যূনতম জীবিকার তাগিদে উদয়াস্ত খেটে যাচ্ছেন। অথচ এমন পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত ছিল না, এখনো নয়। তারপরও হয়েছে। এটা যেন তৈরি পোশাক খাতে অনিবার্য হয়ে গেছে।

দেশে আরও অনেক শিল্প খাত রয়েছে, সেখানেও মজুরি নিয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ কমবেশি আছে। কিন্তু বৃহত্তম রপ্তানি খাত এবং ৪০ লাখ শ্রমিকের কাজের স্থান হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতে সামান্য ক্ষোভ-অসন্তোষই অনেক বড় হয়ে দেখা দেয় এবং দ্রুত নজরে চলে আসে। এই খাতের ন্যূনতম মজুরি এখন আট হাজার টাকা, যেখানে বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরির হার ৫ হাজার ৭১০ টাকা। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। আবার ওষুধশিল্প খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৫০ টাকা আর কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। সুতরাং, নিম্নমজুরি নিয়ে সমস্যাটা এককভাবে পোশাক খাতে নয়।

আসলে শ্রমিকদের মজুরিজনিত সমস্যার অন্যতম কারণ হলো শ্রমনীতিকে বিভিন্নভাবে উপেক্ষা করা। জাতীয় শ্রমনীতিতে মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘ন্যায্য মজুরি’র ওপর সুস্পষ্টভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে শ্রমিক ও তাঁর পরিবার যেন মানসম্মত জীবন ধারণ করতে পারেন এবং সেই জীবনধারণ–উপযোগী ন্যায্য মজুরি যেন শ্রমিক পান, সরকার সেই ব্যবস্থা করবে। তার মানে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দায়িত্বটা সরকারের। ন্যায্য মজুরি কী, তা নিয়ে কূটতর্ক হতে পারে। তবে জীবনধারণের ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম মজুরি আর যা–ই হোক ন্যায্য হতে পারে না। অথচ দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিল্প খাতে যে ন্যূনতম মজুরি আছে, তা জীবনধারণের মজুরির চেয়ে অনেক কম। অবশ্য যাঁরা মাত্র কাজে ঢুকেছেন বা বছরখানেক কাজ করেছেন, স্বাভাবিকভাবে তাঁরাই সবচেয়ে কম মজুরি পান। তাঁদেরই ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর একেবারে নিচের ধাপে থাকতে হয়। ফলে তাঁরা জীবনধারণের মজুরির চেয়ে কম মজুরি পেয়ে থাকেন, এটাই বাস্তবতা। যেসব শ্রমজীবী কয়েক বছর বা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই সমস্যা থাকে না।

শ্রমনীতিতে ন্যায্য মজুরির পাশাপাশি মজুরির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই। মজুরি বিতর্কে এ বিষয়টি প্রায়ই হারিয়ে যায় বা অনুপস্থিত থাকে। ফলে প্রকৃত মজুরির চিত্রটিও পরিষ্কার হয় না। নগদ টাকা মজুরি পাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের আরও যেসব ন্যায্য ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, সেসব কতটা মিলছে বা মিলছে না, তা চিহ্নিত করাও জরুরি। বলা দরকার যে বাংলাদেশের একটি লিখিত ও অনুমোদিত শ্রমনীতি আছে। এটির আনুষ্ঠানিক শিরোনাম ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’। শ্রমনীতির লক্ষ্য হলো, ‘বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য উৎপাদনমুখী, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার ও শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।’

অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও অস্বীকার করা কঠিন যে ‘শোষণমুক্ত, শোভন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ’ এখনো অনেক দূরে। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এরপর গত পাঁচ বছরে দেশের পোশাক কারখানাগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কাজের পরিবেশ উন্নত করায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, আরও অনেক খাতের বেশ কিছু শিল্পকারখানায় এসবের ঘাটতি এখনো রয়েছে, যা বিভিন্নভাবে দৃশ্যমান হয়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর দেশের ৩২ হাজার ৯২৪টি শিল্পকারখানা পরিদর্শন করেছে এবং এগুলোর মধ্যে ৬ হাজার ৯৮৫টি কারখানায় শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে; যেগুলো কিনা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকৃত কারখানা ও প্রতিষ্ঠান। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৬৫। তার মানে কাজের পরিবেশ উন্নত এমন কারখানার সংখ্যা বাড়ছে, যদিও এর হার এখনো দেশের মোট কলকারখানার এক-পঞ্চমাংশ। বিষয়টাকে অবশ্য হতাশাজনকভাবে দেখার কিছু নেই। শ্রমনীতিতে শোভন কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন শ্রমজীবী মানুষের কাজকে ধীরে ধীরে শোভন পর্যায়ে উন্নীত করতে সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

শ্রমনীতিতে শ্রমিক সংঘ কিংবা শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন, এর মাধ্যমে মালিকপক্ষ ও সরকারের সঙ্গে দর–কষাকষি এবং ত্রিপক্ষীয় সংলাপকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো শ্রমিক সংঘ বা ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম ক্রমে সংকুচিত ও বিকৃত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংঘ একাধারে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এর কার্যকারিতা হারিয়েছে। আর বেসরকারি খাতের শিল্পকারখানায় মালিকেরা শ্রমিক সংঘ নিয়ে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতায়। ফলে শ্রমিক সংঘ আর শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে ও উৎপাদশীলতা রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমনীতি মোটামুটিভাবে ভারসাম্যপূর্ণ, বাস্তবানুগ ও শ্রমিকবান্ধব। তবে এটি কোনো অবশ্যপালনীয় আইন নয়; বরং বৃহত্তর দিকনির্দেশনার এক দলিল। এই দিকনির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটে শ্রম আইন ও বিধিমালার মাধ্যমে। আবার শ্রম আইন প্রয়োগে ও সংশোধনে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, যা কমাতে শ্রমিক-মালিক-সরকার তিন পক্ষেরই ইতিবাচক তৎপরতা দরকার। তাহলে শ্রমনীতি আর অতটা উপেক্ষিত হবে না।  

  • Courtesy: Prothom Alo /Jan 28, 2019

Monday, January 28, 2019

‘এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে আ.লীগের বড় ক্ষতি হয়েছে’ — মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেভাবে আওয়ামী লীগকে জেতানো হয়েছে, তাতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানের প্রতি আঘাত করা হয়েছে। যারা এই কাজে জড়িত ছিলেন, তারা কেউ আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খী না। এতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। 

রোববার, জানুয়ারি ২৮, দিবাগত রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টকশোতে তিনি একথা বলেন। 

এসময় তিনি আরো বলেন, সবাই দেখেছে বৃষ্টি হয়েছে। পানি শুকিয়ে গেছে বলে বৃষ্টি হয়নি বলা যায়, কিন্তু সেটি মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় না। যত কথাই বলি না কেনো, কোটি কোটি মানুষের চোখকে ফাঁকি দেয়া যায় না। প্রশাসন যেভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে কাজ করেছে, সেটি না করলেও চলতো।

মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আমি ছিলাম লাঙ্গলের প্রার্থী। সেজন্য আমাকে হ্যালমেট আর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরেই নির্বাচন করতে হয়েছে। ২৫ বছর পরে এবার নির্বাচনে এসেছিলাম। আমার নির্বাচনী আসনের ও আশে-পাশের প্রায় সবাই জানে আমার গ্রহণযোগ্যতা কী রকম। মানুষের স্বতস্ফূর্ততা দেখে আমি ধরে নিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ বিএনপি একসঙ্গে কাজ করলেও আমি জিততাম।

অফিসার অর্ডার দিয়ে বলেছেন, কীভাবে কী করতে হবে। অফিসার একজন, কিন্তু অর্ডার মান্য করছেন একশ’ জন। ওই একশ’ জন তো জানে কিভাবে অন্যায় হয়েছে। যেভাবেই হোক, যারা এতে জড়িত, তারা কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর শুভাকাঙ্খী নয় বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সহজেই ইলেকশনে জিততো বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ক্ষতি করা হয়েছে এবং এতে করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও ক্ষতি করা হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এই মেয়র। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো, টোটাল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সেজন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম।
  • শীর্ষকাগজ/ ২৮ জানুয়ারী, ২০১৯ 

ভোটের অনিয়ম জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় টিম যাচ্ছে খুলনায়


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম, গায়েবি রাজনৈতিক মামলা ও হামলা-নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও অবস্থান সরেজমিন পরিদর্শন করতে খুলনায় আসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দেশের সাতটি বিভাগের জন্য কেন্দ্র থেকে সাত শীর্ষস্থানীয় নেতাকে প্রধান করে গঠন করে দেওয়া হয়েছে পৃথক সাত কমিটি। খুলনা বিভাগীয় কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে একটি টিম দুইদিনের সফরে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি খুলনায় আসছে।

খুলনা সফরকালে তারা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতায় নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্ত এবং নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের বাড়িতে যাবেন। কারাগারে বন্দি থাকা কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। হামলায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও অসুস্থ তাদের সঙ্গেও এ সময় কথা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর সফল করতে খুলনা মহানগর বিএনপির এক সভা রোববার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সেখানে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, শাহজালাল বাবলু, স ম আবদুর রহমান, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, শফিকুল আলম তুহিন, এহতেশামুল হক শাওন, ইকবাল হোসেন খোকন, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, শেখ সাদী, শামসুজ্জামান চঞ্চল, একরামুল হক হেলাল, কেএম হুমায়ুন কবির, হেলাল আহমেদ সুমন প্রমুখ।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, খুলনায় একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনেরও প্রস্তুতি চলছে। এ বৈঠকে খুলনা বিভাগে অবস্থানরত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, বিভাগের ১০ জেলা ও এক মহানগর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগের ৩৬টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থী অংশ নেবেন। তারা নির্বাচনে অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন। অনিয়মের অডিও-ভিজ্যুয়াল চিত্রও তুলে ধরার চিন্তা রয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে এ গোলটেবিল বৈঠক করার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, রোববার অনুষ্ঠিত সভায় নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে নির্বাচনকালীন সহিংসতা, নির্বাচনে অনিয়ম, হামলা-মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরির জন্য ওয়ার্ড কমিটিগুলোর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
  • সমকাল/ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯