— আজিজুল বারী হেলাল
কিছুই হচ্ছে না।
বন্ধ্যা সময়।
গণতন্ত্র আইনের শাসন নির্বাসিত।
থমকে গেছে স্বাধীন মতপ্রকাশ।
রাজনীতি যেন গাঙের তলায় অচল জল। গুম-খুন-হামলা-মামলার দমকা বাতাস সরকার বিরোধী প্রতিবাদী মানুষের
পরিবারকে দুমড়ে মুচড়ে ছারখার করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রেমী মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ, স্বজন হারানো হাহাকার আজ সর্বত্র। আর এই বন্ধ্যা-উষর পরিস্থিতিতে ২০শে নভেম্বর দেশবাসী পালন করবে ‘ভবিষ্যত বাংলাদেশের কারিগর’ দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫৫তম জন্মবার্ষিকী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান |
এই দিনে জন্ম নেয়া অনেক অনন্য অসাধারণ মানুষের মত তিনিও আলোকিত করেছেন এই ধরিত্রী। রংধনুর সাতরঙ রাঙিয়ে, পলকা বাতাসে রঙীন
বেলুন উড়িয়ে দিনটি সজ্জিত হয়ত হবে না, হয়তো গরীব-দুস্থ – অসহায়দের সাহায্যার্থে তেমন কিছুই হবে না। উৎসবের ঘনঘটায়দিনটি পালিত না হলেও দেশবাসী তারেক রহমান কে স্মরণ করে আর করবেও অগনিত ভালোবাসা নিয়ে। শুধু ২০ নভেম্বরই নয় ,উৎসবের আমেজেই নয়, তিনি আছেন, থাকবেন আপামর জনতার নিত্যদিনের আটপৌরে দিনলিপিতেও।
২০০৭ সালে সামরিক-বেসামরিক জান্তার কঠিন আঘাতের ধকল কাটাতে চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে যান। তারপর থেকে প্রায় এক যুগ যাবত তারেক রহমানের যাপিত জীবন নির্বাসনে, বিদেশ বিভূঁইয়ে জনারণ্যে থেকেও নির্জনে।কিন্তু নির্বাসন দিয়েই কি আর বিস্মৃত করা যায় তারেক রহমান কে !!
তারেক রহমান তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক দক্ষতা-সাংগঠনিক যোগ্যতা- দিয়ে জীবন প্রত্যাশা ( Life expectation) বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ভাবনা - নতুন শতাব্দীর নতুন নতুন চ্যালেন্জ মোকাবেলার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় জনপ্রিয়তা যার অপরিমেয় ।
বর্তমান দখলদার শাসক গোষ্ঠী ও তার সৈন্য-সামন্তের ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভেই বাধ্য করছে তারেক রহমানের এই প্রবাস যাপনকে । ‘ভোটের রাজনীতিতে দখলদার গোষ্ঠীর পরাজয় নিশ্চিত’ জেনেই, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জনপ্রিয় তারেক রহমানকে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাধা প্রদান করছে। অথচ দেশের আদালতে তিনি নির্দোষ বলে প্রমাণিত। আর যে বিচারকের রায়ে তা প্রমাণিত, সেই বিচারকও বাধ্য হয়েছেন দেশ ছাড়তে !!!
প্রয়াত জনপ্রিয় নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাধীনতা পরবর্তী বাকশালী আমলে মানুষের নৈতিক স্খলন- মুল্যবোধের যে অবক্ষয় হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ‘সুবচন নির্বাসনে’ নামক এক প্রতিবাদী নাটক রচনা করেন ।
আর আজ নতুন শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই সৎ-কর্মযোগ্য-প্রতিবাদী মানুষ যেভাবে গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে , দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে তা যদি নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন বেঁচে থেকে দেখতেন , তাহলে হয়ত এবার লিখতেন ‘সুজন নির্বাসনে’।
ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার বলতেন, “তোমার মতের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মত প্রকাশের জন্য আমি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতেওনপ্রস্তুত আছি।” আর তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, শত ফুল ফুটুক, শত মত প্রকাশ হোক।
মুক্ত চিন্তা-মুক্ত বুদ্ধি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ আজ অবারিত। কিন্তু এদেশে রাজনীতি-ভাবাদর্শ-শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞান সবখানেই দখলদার শাসকগোষ্ঠীর জগদ্দল শাসন সব রকমের অগ্রগতি এবং বিকাশের অন্তরায় হয়ে আছে ।
দখলদার সরকার দেশ ও জনগনের উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের সকল বক্তৃতা প্রচারে মিডিয়াকে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। ভলতেয়ার এদেশে জন্মালে এর প্রতিবাদে নির্ঘাত জীবন উৎসর্গ করতেন।
তারেক রহমান বহুধা বিভক্ত-বহু ধারার রাজনীতি ও আদর্শকে সম্মান করে নি:শঙ্ক চিত্তে মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা, শেখ মুজিব, শহীদ জিয়াকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্ববান জানান।
তিনিই প্রথম শেখ হাসিনার প্রবাসী সন্তানকে দেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে চিঠিতে আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমার-আপনার পূর্বপুরুষরা স্বাধীনদেশ নির্মানে অবদান রেখেছিলেন। আসুন আমরা দেশের উন্নয়ন-উৎপাদনে একমত হই।’
রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ঈদ, বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি জাতীয় উৎসবে বিরোধী রাজনীতিক নেতৃবৃন্দকে উপহার পাঠিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ককে অম্লান করেছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি চর্চায় তিনি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন । কারণ, রাজনীতিকে তিনি অন্যসকল পেশার মত জীবিকা নির্ভর মনে না করে একটি অংশগ্রহনমূলক অবিভাজ্য বিষয় হিসেবেই দেখেন। যেখানে অংশ নিতে পারে ছাত্র-শিক্ষক-নারীপুরুষসহ চিকিৎসক-প্রকৌশলী- শ্রমিক বিভিন্ন স্তরের দেশে-বিদেশে অবস্হানরত বাংলাদেশী জনগণ।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ শুধু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নয় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিরও দেশ।
তিনি অতীতকে অবগাহন করে বর্তমানকে স্পর্শ করতে চান। এজন্য চিরায়ত বাংলা নববর্ষে রমনার বটমূলে পান্তা -ইলিশ, দেশীয় ঐতিহ্যর গান এবং চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশাপাশি আধুনিক ব্যান্ড সংগীতের সংমিশ্রনে তিনি পালন করেন নববর্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বিকালে আয়োজন করেন দেশের সেরা সেরা ব্যান্ড সংগীতদলের অংশগ্রহনে কনসার্ট । তিনি দেশ ও জনগনের উন্নয়নে রাজনীতি ছাড়াও সামাজিক কর্মসুচীও গ্রহন করেছেন বিশেষ করে সবুজ বৃক্ষের বনায়ণ কর্মসূচী, দারিদ্র বিমোচনে, “একটু চেষ্টা, একটি উদ্যোগ, দেশে আনবে স্বনির্ভরতা” ইত্যাদি কর্মসূচী ব্যাপক সফলতা লাভ করে।
তারেক রহমানের প্রতিষ্ঠিত ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’ দেশের দারিদ্র বিমোচনে এখনো অবদান রেখে যাচ্ছে।
রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারেক রহমানের বিচরণ বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার মতনই । যে দ্যুতি আলোকিত করে চারধার। নির্বাসন তাঁর হৃদয় থেকে বাংলাদেশকে নির্বাসিত করতে পারেনি, বরং এদেশ আরও গভীর ভাবে প্রোথিত তাঁর এই একাকী হৃদয়ে । এক হৃদয়েই তিনি ধারন করে আছেন ১৬ কোটি আমাদের।
আমাদের দেশে একদিন দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে রচিত হবে প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ তাঁর এই জন্মক্ষণে, তাঁরই ফেরার অপেক্ষায়। শুভজন্মদিন প্রিয় তারেক রহমান।