ঋণের ফাঁদে বাজেট

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতিবছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায় নিম্নমুখিতা।

২

চলমান আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আদায়ের পরিমাণ যেমন কম, তেমনি করের আওতাও বাড়েনি। গত বছরের জুনে ঘোষিত এ বছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বিধায় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ঘোষিত ও সংশোধিত বাজেটের কর আদায়ের পরিমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। ২০১৮-১৯ সালে কর থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর কর্তৃক মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধিত হয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৮৪৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা হলেও এনবিআর জানাচ্ছে, এ বছরের মার্চ নাগাদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৯ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। অন্যদিকে একই অর্থবছরে এনবিআর–বহির্ভূত করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। অতীত অভিজ্ঞতা বলে এ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হবে না।

মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ করদাতা। প্রতিবেশী দেশে অপেক্ষাকৃত কম হলেও করদাতার পরিমাণ ১৮ শতাংশের মতো। পরিসংখ্যান বলছে, সামর্থ্যবান মানুষের ৬৮ শতাংশই করের আওতায় নেই। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কর-জিডিপি হারও কম। জাতীয় আয়ের যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়, তার সঙ্গে সংগতিহীন। একদিকে কর আদায় ঠিকমতো হচ্ছে না, অন্যদিকে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার প্রয়াস বিদ্যমান।

অন্যদিকে ব্যয় বেড়েই চলছে। ব্যয় দুই প্রকার—রাজস্ব ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়। ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী মোট ব্যয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিগত ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয় ৫৫ শতাংশের কোঠায় থাকলেও মে ও জুন মাসে ব্যয়ের তথাকথিত উল্লম্ফন ঘটবে। রাজস্ব ব্যয় মোটামুটি ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ ঘাটতি মোকাবিলায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

৩

ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব ব্যয়ের ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের গুণগত সার্বিক রূপান্তরে অত্যধিক প্রয়োজনীয় মানব পুঁজি বা দক্ষ শ্রমশক্তি বিনির্মাণে, তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। উপরন্তু ঋণের পরিমাণ সুদসহ জমতে জমতে পাহাড়সম হলে পরিশোধের কোনো দিকনির্দেশনাও বাজেটগুলোতে নেই।

বাজেট ঘাটতি মেনে নেওয়া যায়, যদি তা অর্থনীতিতে গুণক প্রভাব তৈরি করে। ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি, গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতনকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এ অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব ব্যয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পত্রিকান্তরের হিসাব অনুযায়ী, উপসচিবের ৮৫০টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৫৫৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। যুগ্ম সচিবের ৪৫০টি পদের বিপরীতে ৭৮৭ জন, অতিরিক্ত সচিবের শতাধিক পদের বিপরীতে ৪৩৫ জন কর্মরত আছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। ২০১৭ সালে বিভিন্ন সংস্থায় ১৪২ জন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে কর্মরতদের মধ্যে ১২ জন সচিবকে অবসরের পর পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত ব্যয় কতটা গুণসম্পন্ন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বারবার সংশোধনের ফলে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অস্বাভাবিক খরচও চোখে পড়ার মতো। পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চার লেন সড়ক তৈরিতে যেখানে ভারতে ১১ থেকে ১৩ লাখ ও চীনে ১৩ থেকে ১৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশে ৫০ লাখের বেশি। সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে অনিয়মের খবর জনসমক্ষে এসেছে। বিভিন্ন প্রকল্পে কোন পর্যায়ের দুর্নীতি হচ্ছে, সহজেই অনুমেয়। এ ছাড়া অর্থবছর শেষে জোড়াতালি দিয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯০-৯২ শতাংশ দেখানো হয়, যা প্রথম ১০ মাসের হিসাবের সঙ্গে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়।

৪

দেখা যাচ্ছে, দেশের সাধারণ করদাতারাই ঋণ শোধ ও উন্নয়নের মূল উৎস হিসেবে কাজ করছেন। বারবার বলা হলেও আয়কর এখনো কর আদায়ের প্রধান উৎস নয়। মূল্য সংযোজন করের মাধ্যমেই ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে। এই আয়-নিরপেক্ষ পরোক্ষ করের বোঝা পুরোটাই সাধারণ জনগণের কাঁধে চেপে বসে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের ওপর করের ভার বর্তাচ্ছে। বিপরীত দিকে উচ্চবিত্তদের কর পরিহার ও ফাঁকি দেওয়াটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে!২০০৯-১০ অর্থবছরের বাস্তবায়িত বাজেটে মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এ অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনায় ভ্যাটের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ বছরে ভ্যাটের হার প্রায় ৩৮০ শতাংশ বেড়েছে! ভ্যাট সরকারের কাছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস! এ প্রক্রিয়ায় করব্যবস্থা আরও ব্যাপকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল (রিগ্রেসিভ) হয়েছে।

আবার সাধারণ জনগণকে বড় ঋণখেলাপিদের জন্যও প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে সরকারি ব্যাংকের মূলধন সংকট মেটাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি কর থেকে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ জনগণ করের বোঝা বহন করে চললেও এর বিনিময়ে জনসেবা পাওয়ার চিত্র হতাশাজনক। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুণগত উন্নয়ন প্রশ্নের সম্মুখীন। এ ছাড়া নিরাপদ সুপেয় পানি, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ অন্যান্য জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড মন্থর গতিতে এগোচ্ছে।

৫

৪ কোটি ৮২ লাখ তরুণ বেকার। ৪৭ শতাংশ স্নাতক বেকার।

বাজেটে মৌলিক সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। জিডিপিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর জন্য চাকরির বাজার অপর্যাপ্ত। আবার চাকরির বাজারের সঙ্গে শিক্ষার মান সমানতালে বেড়ে উঠছে না। বিদেশ থেকে দক্ষতার ঘাটতি পূরণে জনবল আমদানি করতে হচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। বর্তমানে ৪ কোটি ৮২ লাখের মতো তরুণ বেকার। ৪৭ শতাংশ স্নাতক বেকার। ২০১৬-১৭ সালের শ্রমজরিপ মতে, ১৪ লাখ মানুষ স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে, বিপরীতে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা ও প্রার্থীদের দক্ষতার অভাব নিয়েও বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

দারিদ্র্য কমার হার কমছে

অসমতা বাড়ছে হু হু করে। ২০১৬ সালে বৈষম্য পরিমাপকারী জিনি সূচক শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল। ২০১৬ সালে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের আয়ের অংশীদারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় কমে ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হয়েছে। ২০১০ সালে ২ শতাংশ ছিল। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিবছর দারিদ্র্য কমার হার ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে এ হার কমে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। দারিদ্র্য কমার হার কমছে, দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলমান থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত লোকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ নেপাল ও ভুটান থেকেও কম।

উৎপাদনশীল খাতের পরিমাণ বাড়ছে না ও বহুমুখীকরণ হচ্ছে না। এক খাতকেন্দ্রিক নির্ভরতা অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে নতুন কোনো নির্ভরযোগ্য উৎপাদনশীল খাত তৈরি হচ্ছে না। গত ছয় বছরে শিল্পকারখানার সংখ্যাও বাড়েনি, কমেছে ৬০৮টি। ২০১২ সালে বড় শিল্পকারখানা ছিল ৩ হাজার ৬৩৯টি, ২০১৯ সালে সংখ্যা কমে ৩ হাজার ৩১টি হয়েছে। মাঝারি শিল্পকারখানা ৬ হাজার ১০৩টি থেকে কমে ৩ হাজার ১৪টি হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার সংখ্যাও কমেছে। শিল্প খাতে বর্তমানে ১ লাখ ২৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ২০-২২ লাখ চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীর তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। মৌলিক সমস্যাগুলোর এরূপ প্রকটতার মুখ্য কারণ হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর ভঙ্গুরতা, বিনিয়োগে আস্থাহীনতা ও পুঁজি পাচার।

বাংলাদেশের বাজেট–ব্যবস্থায় জবাবদিহির চর্চা নেই। বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংশোধিত হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সংশোধিত বাজেট সংসদে উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় আলোচনা ছাড়াই আইনে পরিণত হয়। কেন সংশোধনের প্রয়োজন হলো বা কেনই–বা বাস্তবায়িত হলো না, কোনো তর্কাতর্কি হয় না। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, কণ্ঠভোটে বাজেট পাস করা ছাড়া সাংসদদের কোনো প্রকৃত ক্ষমতাও নেই। বাজেট–ব্যবস্থার আমূল সংস্কার আশু প্রয়োজনীয়।

• ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন। 

 কার্টসি —  প্রথম আলো/জুন ১৩, ২০১৯। 

জনগণকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে হবে — মির্জা আলমগীর

হাসান মোল্লা/যায়যায়দিন 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বৈরশাসন হঠিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে হবে। শোষণ, বৈষম্য ও দীর্ঘ মেয়াদের অবিচার, অপশাসনের কবল থেকে আর পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না মনে করে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিলে কোনোদিনই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে না। এজন্য প্রথমে জনগণকে স্বপ্ন দেখাতে হবে, আর বিএনপি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেই স্বপ্ন পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

উত্তরার বাসবভনে যায়যায়দিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা আলমগীর এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিএনপি ও দেশের আগামী দিনের রাজনীতির নানা পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি খোলামেলা আলোচনা করেন। রাজনৈতিক দল যতই চেষ্টা করুক অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ যতক্ষণ মাঠে না আসবে ততক্ষণ কোনো পরিবর্তনই সম্ভব নয় বলেই মত দেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে বাংলার মানুষ সুখী সমৃদ্ধশালী সুশাসনের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু অনিয়মের নির্বাচনের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এজন্য মানুষ চরম হতাশ। সেই হতাশা থেকে জনগণকে উজ্জীবিত করা বিএনপির প্রথম কাজ।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই কেমন আছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল শারীরিকভাবে ভালো আছেন জানিয়ে বলেন, তবে অন্যায়ভাবে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা এবং বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অধিকার বঞ্চিত হওয়ার কারণে মন ভালো নেই।

প্রশ্ন: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার এক দশকের দাবি স্বল্পসময়ে কেন পরিবর্তন হয়েছিল? কেন নির্বাচনে গেলেন?

উত্তর: নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপির কাছে আর কোনো অপশন ছিল না। সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টর সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে। চরম অনিয়মের আশঙ্কা দেখেও দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কারণ সরকার কথা বলার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে সংসদ কথা বলার একটা জায়গা হতে পারে। সেই ন্যূনতম সুযোগটা ব্যবহার করার জন্য বিএনপি নির্বাচনে গেছে।

প্রশ্ন: আপনাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছিল। তাদের ভূমিকায় আপনারা সন্তুষ্ট ছিলেন?

উত্তর : একদম সন্তুষ্ট হতে পারিনি। খুবই হতাশ হয়েছি। তারা অনিয়ম দেখেও নির্বাক পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কাছে অনিয়মের অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি।

প্রশ্ন: নির্বাচনের আগে পুলিশ অফিসারদের অনিয়মের অভিযোগ করে তালিকা দেয়াটা কি বিএনপির সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল?

উত্তর :এটা এখনই বলা যাবে না। সময় বলে দেবে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কিনা।

প্রশ্ন:নির্বাচনের পরই ফল প্রত্যাখ্যান করে শপথ না নেয়া এবং পরবর্তী সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েও পরে কেন তা পরিবর্তন করলেন?

উত্তর: সব কিছু দলীয় কৌশলের অংশ। ফল প্রত্যাখ্যানের বিষয় থেকে আমরা এখনো সরে আসিনি। যে নির্বাচনে ভোটারা ভোট দিতে পারেনি সেই নির্বাচনে ফল প্রত্যাখ্যান করাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: নির্বাচিতরা সবাই শপথ নিলেন অথচ দলীয় সিদ্ধান্তের পরেও কেন আপনি শপথ নিলেন না ?

উত্তর: এটা অবশ্যই কৌশলগত কারণে। এই নির্বাচন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ মেনে নেয়নি। সংসদে বিএনপি যাক জনগণ তা চায়নি। কিন্তু কথা বলার নূ্যনতম স্থানের সুযোগ নিতে জনগণের স্বার্থে বিএনপি সংসদে গেছে। অন্যদিকে জনগণের আবেগকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাই সংসদে যাওয়ার পক্ষে যেমন যুক্তি আছে তেমনি প্রতিবাদেরও দরকার আছে বলে মনে করেছেন। এজন্য শপথ নেননি। তাতে সংসদে গিয়ে বিএনপির কথা বলার সুযোগ রইলো। পাশাপাশি তার প্রতিবাদকেও নেতাকর্মী এবং জনগণ স্বাগত জানিয়েছেন। এসবের কোনো কিছুই দল ও হাইকমান্ডের সম্মতি ছাড়া হয়নি।

প্রশ্ন: শপথ নেয়া বিএনপির এমপিদের সংসদে এখন পর্যন্ত ভূমিকায় আপনি সন্তুষ্ট কিনা?

উত্তর:এখন পর্যন্ত তারা ভালো করছেন। তারা তাদের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছেন। সামনে যত আইন আসবে, কালাকানুন আসবে সেগুলোর বিষয়েও তারা জনগণের পক্ষে কথা বলবেন।

প্রশ্ন: বারবার নির্বাচনে অনিয়মের কথা বলছেন, অনিয়ম ঠেকাতে আপনাদের প্রস্তুতি ও কৌশল কি ছিল? কেন আপনারা ব্যর্থ হলেন?

উত্তর: নির্বাচনে প্রস্তুতি প্রধান বিষয় হচ্ছে জনগণের ভোট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সেই প্রস্তুতি তাদের শতভাগ ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রেই আসতে দেয়া হয়নি। আর বিএনপি সশস্ত্র বিপস্নবী দল না যে, সন্ত্রাসী কায়দায় এর জবাব দেবে। তাই বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে তা বলা যাবে না।

প্রশ্ন: দশম সংসদে অংশ না নেয়া এবং একাদশ সংসদে অংশ নেয়ার দুটি সিদ্ধান্তই কী সঠিক ছিল?

উত্তর: দুটি সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এ বিষয়টি প্রমাণ করতে একাদশ সংসদে অংশ নেয়েছেন। আর গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এজন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন এটা জনগণের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন: নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের এ বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া কি?

উত্তর: একটি মিথ্যা কথা কিভাবে কখন বললে জনগণ সত্য বলে মেনে নেবে এ কৌশল জানেন আওয়ামী লীগে কয়েকজন নেতা। সব ধরনের রাজনৈতিক কৌশল জানেন তারা। সেসব নেতাদের একজন মোহম্মদ নাসিম। যেহেতু ঐক্যফ্রন্টে অস্থিরতা চলছে একটি গুজব রাজনৈতিক মহলের আলোচনা হচ্ছে সেই সুযোগে নাসিম সাহেব এমন একটা বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে সবাই বিশ্বাস করে।

প্রশ্ন: আসলে কামাল সাহেবের নির্বাচনে কি ভূমিকা ছিল?

উত্তর: গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা ছিল শতভাগ ইতিবাচক। ড. কামালের মতো ভদ্র, দেশপ্রেমিক, সৎ-সাহসী রাজনীতিবিদ খুব একটা পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি গুণগত পরিবর্তন আনতে ড. কামালকে বিএনপি সামনের দিকে আনার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির রঙটা সবসময় জামায়াতের সঙ্গে লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। সবমিলে বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল, আ স ম বর, কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নাদের আনতে পারাটা রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত। দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে এটাকে সবার প্রশংসা করা উচিত।

প্রশ্নঃ ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কি?

উত্তর : ভবিষ্যৎ ভালো মনে করি। শুধু ঐক্যফ্রন্ট নয় ২০ দলকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। রাজনীতিতে সুস্থধারা আনতে হলে আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এক সঙ্গে সোচ্চার হতে হবে।

প্রশ্ন: জামায়াত থাকবে জানলে ড. কামালরা আপনাদের সঙ্গে নির্বাচনে আসতেন না। এ ব্যাপারে বিএনপি প্রতারণা করেছে বলে তার অভিযোগ কতটা সত্য?

উত্তর: জামায়াতের সঙ্গে ড. কামাল রাজনীতি করতে চাননি এটা সত্য। রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে তারা আলাদা জোট করেছেন। বিএনপি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে। এটা অভিনব কৌশল ছিল। প্রতারণা করার কোনো কারণ নেই।

প্রশ্নঃ আগামী দিনের বিএনপির সাংগঠনিক ও আন্দোলনের পরিকল্পনা কি?

উত্তরঃ রাজপথের কঠোর আন্দোলনের পরিস্থিতি বা সুযোগ কোনোটাই এখন নেই। সংগঠন গোছানো হচ্ছে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান এবং নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে অঙ্গ সংগঠনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা এখন প্রধান কাজ। পার্টির চেয়ারপারসন কারাগারে আছেন, এখন সেটাই দলের সবচেয়ে বড় সংকট। তিনি যতক্ষণ না বের হবেন ততদিন আন্দোলন গতি পাবে না। এজন্য তাকে কিভাবে বের করে আনা যায় সেজন্য চেষ্টা হচ্ছে। মানুষকে রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় সামনের দিকে এগুতে হবে। তা না করা গেলে ফলপ্রসূ কিছু আসবে না।

প্রশ্ন: কবে নাগাদ এটা হতে পারে?

উত্তর:তা বলা মুশকিল। অবশ্যই রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এজন্য আগে দেখতে হবে তাদের সংগঠন আছে কিনা। পরিস্থিতি অনুকূল কি-না। কারণ বিএনপির ২৬ লাখ নেতাকর্মী আসামি। ১ লাখ মামলা। ১ হাজারের উপরে নেতাকর্মী জেলে আছেন। এই পরিস্থিতিতে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। অনেকে '৯০ এর আন্দোলনের কথা বলেন। কিন্তু ১৯৯০ আর ২০১৯ এক না এটা মাথায় রাখতে হবে। '৯০ সালে এমন ভয়াবহ সরকার ছিল না। চরম নির্যাতনকারী সরকার ছিল না। তখন নির্বিচারে গুম, খুন, গুলি হতো না।

প্রশ্ন: ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ কি?

উত্তর: বিএনপি একটি বড় দল। সব সিদ্ধান্ত পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে হয়তো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক দলের সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এটা খুব বড় বিষয় নয়।

প্রশ্ন: কবে সপ্তম কাউন্সিল করত চান?

উত্তর :দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের জাতীয় কউন্সিল করতে চায় বিএনপি। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঠিক হয়নি। কাউন্সিলের আগে মূল কাজ হচ্ছে জেলা কমিটিগুলো আপডেট করা। এগুলো প্রায় শেষের দিকে। পুরোপুরি সম্পন্ন হলেই কাউন্সিল করা যাবে। এগুলো শেষ হলে কাউন্সিলের প্রস্তুতি এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে।

প্রশ্ন: দল ৩০০ আসনে যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদের অনেককেই সাংগঠনিক বা আন্দোলনে কর্মীরা পাচ্ছে না, এর কারণ কি?

উত্তর: এই অভিযোগ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেকেই আছেন দলের জন্য কাজ করছেন। গুটিকয়েক নেতার দায় সবার উপরে চাপানো ঠিক হবে না। যারা নির্বাচন করেন তাদের একটি দায়িত্ব থাকে নেতাকর্মীদের খোঁজ নেয়ার। সেই দায়িত্ব অনেকেই পালন করছেন। কিন্ত মামলা-মোকাদ্দমা এত বেশি হয়ে গেছে যে, সব চালিয়ে তারাও হিমশিম খাচ্ছেন। সবার প্রত্যাশা পূরণ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য কিছু মান অভিমান থাকতেই পারে।

প্রশ্ন: বিগত সময়ে এমন আলোচনা ছিল আপনি খালেদা জিয়ার আর তারেক রহমানের আস্থাভাজন রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু এখন বিভিন্ন কার্যক্রমে আপনাকে তারেক রহমানের সবচেয়ে আস্থাভাজন মনে করা হয়। আসল বিষয়টা ব্যাখ্যা করবেন কি?

উত্তর: মহাসচিব হিসেবে আমাকে দলের আস্থাভাজন হতেই হবে। দলীয় হাইকমান্ডের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের আমার প্রতি আস্থা আছে বলেই আমি মহাসচিব। উনি হাইকমান্ডের আস্থাভাজন আর তিনি হাইকমান্ডের বিরাগভাজন এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।

প্রশ্ন: রুহুল কবির রিজভীর দীর্ঘসময় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করা নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। আসলে কেন তিনি সেখানে আছেন?

উত্তর: রিজভী কিন্তু সেখানে আনন্দে নেই। অসুস্থ শরীর নিয়ে ছোট একটা রুমের মধ্যে থাকছেন। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। অন্যদিকে বিএনপি অফিসে সার্বক্ষণিক লোক দরকার। তাই দলের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্তেই তিনি সেখানে আছেন।

প্রশ্ন: ১৯৭১ আর ২০১৯ এর জামায়াত এক নয়, বলার পাশাপাশি আলাদা মঞ্চ করেছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। এ বিষয়ে আপনার মত কি?

উত্তর: অলি সাহেব উনার ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। নিজেরা কিছু করতে চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তো ২০ দল ছেড়ে যাননি। একমাত্র পার্থ বিৃবতি দিয়ে ২০ দল ছাড়ার কথা বলেছেন। অন্য কেউ বলেননি। তাই যারা আছেন তাদের একটি দল আছে। গণতান্ত্রিক যেকোনো উদ্যোগ যে কেউ নিতে পারেন তাতে সমস্যার কিছু দেখছি না।

প্রশ্ন: জামায়াত নিয়ে বিএনপির ভাবনা কি?

উত্তর: এর উত্তরে বরাবরের মতোই বলতে হয়, জামায়াত আর বিএনপির রাজনীতি আলাদা। নির্বাচনী ও জোট রাজনীতির অংশ হিসেবে তারা ২০ দলে আছে। এর বেশি কিছু নয়।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় দলের কর্মকান্ডে আগের মতো শুভাকাঙ্ক্ষীরা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন না বা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, এ তথ্যটি কি সঠিক? দলের ফান্ড ক্রাইসিস আছে কি?

উত্তর: এটা অস্বাভাবিক নয়। এদেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি তাতে এই পরিস্থিতিতে পৃষ্ঠপোষকের সংখ্যা কমবে তা স্বাভাবিক। তবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এটা ভুল কথা। দলীয় ফান্ডেরও কোনো ক্রাইসিস নেই। লেকশোর-ওয়েস্টিনসহ বড় বড় সব স্থানেই বিএনপির অনুষ্ঠান হয়। ফান্ডে কোনো ক্রাইসিস কি কারো চোখে পড়ে? আর অর্থের জন্য দলের কোনো কর্মকান্ডও থেমে নেই।

প্রশ্নঃ খালেদা জিয়ার বয়স এখন প্রায় ৭৪। বর্তমান সরকার পূর্ণ মেয়াদে থাকলে খালেদা জিয়ার বয়স হবে ৭৮। বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আরও কতটা অবদান রাখতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের বয়স ৯৩। তিনি এই বয়সেও দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বে থাকার সময় মার্গারেট থ্যাচার বয়স কত ছিল বা আঙ্গেলা মার্কেলের বয়সও একেবারে কম নয়। এছাড়া দেশনেত্রীর কাছাকাছি বয়সের আরও রাজনৈতিক নেত্রী আছেন এবং ছিলেন যারা রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। বেগম জিয়া শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কিছুটা খারাপ হলেও পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচালনা বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা তার আছে। বয়সের কারণে কোনো সমস্যা হবে না।

প্রশ্ন: শপথসহ বিভিন্ন ইসু্যতে সরকারের সঙ্গে খালেদার মুক্তি নিয়ে সমঝোতার গুঞ্জন কতটা সত্য?

উত্তর: কোনো ভিত্তি নেই।

প্রশ্ন: গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাতিল কি সঠিক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল?

উত্তর: অবশ্যই। কাউন্সিলেই তা বাতিল করা হয়েছে।

প্রশ্ন: আন্দোলন ছাড়া সরকার পতনের আর কোনো উপায় আছে কিনা?

উত্তর: আন্দোলন লাগবে। নির্বাচনের মাধ্যমে তারা বর্তমান সরকারকে সরাতে চান। সে রকম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনও হবে না যদি আন্দোলন না হয়। মনে রাখতে হবে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করছেন না। তারা বলেছেন অবিলম্বে নির্বাচন দিতে। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হবে।

 কার্টসি —  http://bit.ly/2XE6ISm 

পরিবর্তনের জন্য চাই চিন্তাশক্তির পরিবর্তন

শায়রুল কবির খান 

পুঁজিবাদী সভ্যতার নিয়ম অনুসারে পুষ্ট হতে থাকা শহরগুলোর নিষ্ঠুর, নির্দয় আক্রমণে গ্রামগুলোর অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছে। কুটিরশিল্পের ভিত্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। একটা ভেঙে পড়া ঘরের তলায় দম আটকানো মানুষের অবস্থা যেমন, বর্তমান অর্থনীতিতে কৃষকদের অবস্থাও ঠিক সে রকম। পক্ষান্তরে কৃষকদের যে অংশ শহরে এসে রিকশা চালায়, কলকারখানায় মজুরি করে, অফিসের পিয়ন-দারোয়ান অথবা ছোটখাটো কাজের ব্যবস্থা করে, তারা নিজেদের স্ব-গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে মনে মনে ভাগ্যবান মনে করে। বেঁচে থাকার জন্য তারা শহরের ধনিক-শ্রেণির কাছ থেকে ছিটেফোঁটা যা পায়, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অল্প। তবু তা তুলনামূলকভাবে কৃষকদের চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমান বাংলাদেশের শ্রেণিগুলোর বিন্যাস বিচার করে দেখলে কোন শ্রেণিটি সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত-বঞ্চিত, তা বিচার করে দেখার জন্য কষ্ট করে গবেষণা প্রয়োজন হবে না।

এখন কথা হলো—গণতন্ত্রহীনতার মধ্যে যেখানে শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেখানে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যে শ্রেণিটি বঞ্চিত ও নির্যাতিত, সেই সমাজের বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন সাধনেই তো একটি সমাজের প্রধান লক্ষ্য।

আমি মনে করি শ্রমিক শ্রেণি পূর্ণভাবে বিকশিত না হওয়া পর্যন্ত, সামাজিক বিপ্লব সম্ভব নয়। আগে শিল্পায়িত হবে, শ্রমিক শ্রেণির সংখ্যা বাড়বে, তারা সত্যিকার সর্বহারায় পরিণত হবে, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করার সুযোগ আসবে, তারপর সামাজিক পরিবর্তনের সংগ্রাম শুরু হবে, এটা একটা কষ্ট কল্পনা।

ধরে নিলাম আগামী কয়েক বছরেও কোনও রকমের কার্যকর শিল্পায়ন হলো না, রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র চলমান থাকলো, তাহলে পরিবর্তনের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিতে হবে, এভাবে সুযোগের আশায় থেকে থেকে একশ’ বছর কাটিয়ে দেওয়া যাবে, কোনও দিন সংগঠিতভাবে পরিবর্তন সম্ভব হবে না। কারণ, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী এবং উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর লেজুড়ে পরিণত হচ্ছে।

এরকম পরিস্থিতিতে যখন কৃষকদের মধ্যে তীব্র অভাববোধ তৈরি হবে, শ্রমিকদের মধ্যে শ্রমের ন্যায্যতার চেতনা জাগ্রত হবে, নালিশ থাকবে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করবার স্পৃহা থাকবে এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবে এখানে একটি বিশেষ শ্রেণি নেতৃত্ব দিতে পারে কিন্তু সমাজের অধিকাংশ মানুষ না চাইলে কিছুতেই সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে না।

আগামী দিনের বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংগঠনটি শ্রেণিসংগ্রাম ভিত্তিতে একটা সামাজিক গুণগত পরিবর্তন সাধনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করবে, তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে বর্তমান সমাজ কাঠামোতে প্রকৃত বঞ্চিত এবং লাঞ্ছিত করা, কোন শ্রেণিটি সবচেয়ে বেশি সর্বহারা, সে বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করা। যদি কৃষকশ্রেণি হয়ে থাকে তাহলে এই কৃষকশ্রেণিকে দিয়েই সামাজিক পরিবর্তনের কর্মসূচি রচনা করতে হবে, তাতে করে রাজনীতির চরিত্রের গুণ এবং কৌশলের আমূল পরিবর্তন দরকার হবে। এযাবৎকাল রাজনৈতিক আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী ছিল যে শ্রেণিটি, তাকে স্বজ্ঞানে এবং সচেতনতায় ধীরে ধীরে সমন্বয় করে নতুন কেন্দ্রিক সহায়ক শ্রেণিগোষ্ঠীর ওপর অর্পণ করতে হবে। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রকৃত সর্বহারা কারা, কাদের জন্য সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন, কারা সমাজের এই পালাবদলে লাভবান হবে, তাদের বুঝিয়ে একটি গুণগত পরিবর্তনে বিশ্বাসী করে তুলতে হবে। গতানুগতিক রাজনীতিতে আছে দাম্ভিকতা, মিথ্যাচার, শঠতা এবং পোশাকী প্রচার। এ ধারার রাজনীতি দিয়ে গুণগত পরিবর্তন আনা যাবে না।

আজকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদের চেতনায় বিশ্বাসীদের কাছে শহীদ জিয়ার রাজনীতির প্রজ্ঞার প্রয়োজন সর্বাধিক। বর্তমানে ফ্যাসিবাদী মনোভঙ্গির স্থলে মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য চিন্তা গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহারে বলতে চাই, বাংলাদেশের কৃষকদের দুর্দশার আজ আর অন্ত নেই। তারা ঘরহারা, জমিহারা, সংস্থানহারা রুটি-রুজির কঠিন পরিস্থিতিতে। তারা এ অবস্থার নিশ্চয়ই পরিবর্তন চায়। কৃষকদের জীবনমান অবস্থার পরিবর্তন না হলে গোটা সমাজের পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। এই কৃষকদের আকাঙ্ক্ষা ত্বরান্বিত করার জন্য সে অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদ

Ballot Boxes Are Stuffed The Night Before General Polls In Bangladesh

Shakhawat Hossain

Opposition candidate Salahuddin Ahmed speaks to reporters after being stabbed at a polling place in Dhaka, Dec. 30, 2018.

Chief Election Commissioner (CEC) KM Nurul Huda’s recent comments over the last controvercial general polls have sparked fury and strong criticism in political arena. At an event held on March 8, the CEC Nurul Huda said, “It is possible to prevent stuffing ballot boxes the night before elections by introducing electronic voting machines or EVMs.” 

His specific comments were, “We have to formulate an electoral code of conduct, laws. We have to take stern measures. The situation is deteriorating. We have to overcome this.” 

The Election Commission (EC) is planning to introduce Electronic Voting Machine (EVMs) to resist the evil attempt of stuffing ballot boxes on the night before elections, he further said. He made the remarks at a workshop of trainers of the fifth phase of the upazila parishad elections at the Election Training Institute (ETI) in the city. 

It seems that previously it had been only the opposition or the independent candidates that made such allegations. Or the media, even BBC, came up with such reports.

But now there are direct and indirect admissions of such discrepancies and that is coming from small allies of the ruling alliance as well as the constitutional institution – the election commission.

Such admissions about the votes being cast on the night before the election are important, no doubt, for the truth to emerge. But even more alarming is the invisible force that spreads its influence over the election. The chief election commissioner KM Nurul Huda and Workers Party president, former minister Rashed Khan Menon, made significant comments in this regard. Menon’s statement is not just a perfunctory political one.

In parliament, he raised the issue of malevolent forces influencing the election. He said that if various facets of the state machinery enforce their control over the country, then political parties lose relevance not only in the election, but in running the state itself. 

Another ally of the ruling alliance, Bangladesh JSD, also blamed over enthusiastic quarters of stuffing the ballot boxes on the night before the election.

In the very same week, chief election commissioner Nurul Huda and the other commissioners started speaking out too. It was first election commissioner Mahbub Talukdar who opened his mouth. He said that an inclusive election wasn’t necessarily a fair one. Then the chief election commissioner Nurul Huda that that the election in certain areas wasn’t carried out properly.

Then another election commissioner Shahadat Hossain said that that there would be no ballot stuffing on the night before the upazila election. And the very day after that, the chief election commissioner said, “We will use the EVMs (Electronic Voting Machines) from the next election, then there will be no scope to stuff the ballot boxes on the night before.” All these remarks are clearly admissions, albeit indirect, of the ballot boxes being stuffed on the eve of the election.

A policeman stands guard at Faridabad High School in Shyampur where voting started after more than a 40-minute delay for reasons unknown. Moreover, few voters were seen there when the photo was taken around 9:45am on Dec 30, 2018. Photo: Prabir Das/The Daily Star

There were several allegations of stuffing of ballot boxes overnight, thus depriving people of their voting rights. A BBC journalist had earlier witnessed a ballot box full of ballot papers before the election in Chattogram.  On the other hand, TIB published a post-election report where it found irregularities in 47 constituencies out of 50. Immediately after the December 30 general election, Transparency International Bangladesh released its findings about 50 of the 300 constituencies. According to the findings, irregularities including stuffing of ballot boxes, violation of electoral code of conduct and violence took place in 47 of the 50 constituencies it monitored. It said that incidents of irregularities included a silent role played by law enforcers and administration officers, ballot box stuffing, fake voting and capture of polling stations. Ballots were stamped in the night before the elections in at least one or more polling stations in 33 while polling booths were captured and ballot boxes were stuffed in 30 of the 50 constituencies, the study revealed.

‘Some election monitoring organisations were not allowed to observe the polls for their alleged political link while some organisations linked to the ruling party were allowed,’ the study stated.

Besides, some 70 candidates of the BNP and Gono Forum have lodged cases with the High Court on allegations of irregularities at the national election.Speaking for the government, Prime Minister Sheikh Hasina rejected the allegations of vote rigging. For its part, the Election Commission also termed the 11th parliamentary election as having been free and fair.

Against such backdrop, though voting at the Chattogram center in question was cancelled immediately, the Election Commission, however, did not pay any heed to other allegations.

A man carrying a ballot box stuffed with votes in Lalkhan Bazar, Chattogram. BBC photo

Immediately after the polls, Election Commissioner Mahbub Talukder had, however, said that he did not change his stance and reiterated that participatory polls does not necessarily equate to a fair election. He made the remarks in a written statement to clear his stance regarding “confusion” over his comments at a programme organised to thank Election Commission (EC) officials on January 3. At the programme, Mahbub said that the EC has held a participatory election and that created confusion. “Several reporters asked me whether I changed my stance. So, it is necessary to clear the confusion,” he said.

CEC opens Pandora’s Box, says BNP

BNP, the ruling Awami League’s arch rival, has seen the recent comments made by Chief Election Commissioner KM Nurul Huda as evidence of vote rigging allegations raised by the Jatiya Okay Front in the 11th parliamentary elections. 

About the recent CEC’s remarks, opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) senior joint secretary general Ruhul Kabir Rizvi at a press conference on Saturday last said that CEC unconsciously spoke his mind about ‘mid-night’ election of ballot stuffing the night before the voting day of 11th parliament polls.

He said that the CEC could not ‘keep the cat inside the bag’ for so many days and claimed that ‘real things’ were now coming out of ‘Pandora’s box’. Rizvi said that his (CEC) statement would remain an ‘important document’ to the nation. 

‘You (CEC) have accomplished the transparent fraudulence and grand vote rigging on December 29 night,’ he said, adding that the chief election commissioner must answer to people for what he did. 

 “The CEC has let the cat out of the bag,” said BNP Senior Joint-Secretary Ruhul Kabir Rizvi at a news conference on March 9. According to BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir, “The CEC’s statement is an important hint to the nation of how the stuffing of ballot boxes overnight was done.”His EVM comment proves that votes were rigged in the December 30 election, Fakhrul added.

‘Democracy was buried on Dec 30”, says Dr Kamal

Gono Forum President Dr Kamal Hossain has alleged that democracy was “buried” in the country by holding a “tainted” national election on December 30. Speaking at a meeting of Gono Forum’s presidium members, Dr Kamal, however, hoped that people will surely protect the country from destruction, said a party press release. “The national unity must be cemented and intensified to restore democracy, the rule of law and people’s voting rights,” said Dr Kamal.  He said people are active to resolve the current situation. “We’ll have to work in this regard.”  At the meeting, the Gono Forum presidium members decided to hold the party’s national council on April 27 in the capital instead of March 23. 

Vote rigging to happen in daylight during Upazila Polls,  Says Menon

Vote rigging would not take place at night in the upcoming upazila election, it would be done in broad daylight, said Workers Party President Rashed Khan Menon, whose party is a component of the ruling Awami League-led grand alliance. “Many chairman candidates are now winning the election without any vote. Such an election will not bring any good result for the country,” he said while addressing a reception at Barishal city’s Rajanigandha Community Centre on March 6, 2019.

Demand for re-polling as CEC comment causes stir

Political parties and governance campaigners on Saturday iterated their demand for re-election saying that chief election commissioner’s remark about ballot stuffing the night before polling proved that the December 30 general election was a faulty one.

Expressing their recation, they have said that all quarters but ruling Awami League demanded another fresh general election as the election was largely marred by flaws and faults. 

Communist Party of Bangladesh president Mujahidul Islam Selim said the CEC admitted now what they were alleging for long. He said that his party would keep on demanding a free, fair and credible general election soon.

Former caretaker government adviser M Hafizuddin Khan said that the demand for a fresh election was more logical after the CEC admitted that the elections was basically held on the night of December 29, not on December 30 morning. He said that now all but AL were demanding a fresh election.

Sushasoner Jonno Nagorik secretary Badiul Alam Majumdar said that the commission failed to ensure a free and fair election.  ‘In his remark, the CEC himself admitted that they failed to conduct a credible election,’ he added.

He said that the EC should investigate the matter and take necessary actions as they had the authority to cancel the polls. 

Sharmeen Murshid, Chief Executive Officer of Brotee (an election monitoring agency), said the Election Commission had failed to gain public confidence over the December general election. The commission did not even investigate the allegations properly, she added.

Is it a ploy to justfy use of controvercial EVM machines for digital rigging?

It is not yet clear why the chief election commissioner is so keen to use EVMs in the name of preventing the ballots being stuffed into the boxes the night before the election although all over the world there is talk of manipulating votes cast though EVM, by means of hacking or remote control. The arguments against such contentions are weak and flimsy. The chief election commissioner himself admitted to the problems in the EVMs used in six constituencies during the last general election. Does that mean he wants to resort to technology to rig the vote digitialy once again? Or is he trying to justify the huge expenditure involved in procuring such machines purches hurriedldly even after the expiray parliament session?

Even more worrisome is his comment that this election commission doesn’t have the power or the competence to give lessons on how to determine who is responsible for the irregularities in the election and what action is to be taken against them. He said the commission didn’t have the scope to say why all this was happening, who was behind it and who was responsible. Though being empowered by the constitution on all matters regarding the election, he declines to take responsibility of determining those responsible for the discrepancies and also to take action against them. This brings forward a host of questions.

And finally, if the ballot boxes were indeed filled on the night before the polls, why should the result of the election be accepted? There are demands at home and abroad for investigations to be made into the admissions that are seeping out here and there. Such demands must be taken into cognizance.

Paradigm shift in Bangladesh Election & Democracy? 

The first phase of the 5th Upazila Parishad elections began in the country on March 10, with balloting taking place in 80 upazilas of 12 districts under four divisions.  In the light of the recent remarks of CEC KM Nurul Huda, the political arena has become heated in the last few days but now the election commission is making a big noise about ensuring that the upazila election is competitive one even without major opposition BNP.  It has ordered certain MPs to leave their areas and has suspended the voting in three upazilas as the environment was not conducive to fair election there. But after the huge damage done in the national election, such drama will make no difference. Already there will be no need to vote for chairmen in 96 of the 481 upazilas, that is, one in every five. The left front was quite right then in saying, after the Dhaka North city corporation polls, that there was no justification in wasting public funds on such farcical elections.

AL men fight it out among themselves in UZ polls; results from 57 available; AL takes 42

Boycotts by the BNP and other political parties have dampened the spirit of the first phase of elections to 78 upazilas, making the results irrelevant. As expected, ruling Awami League candidates were leading the polls that saw poor presence of voters.  Voting was held in 78 upazilas under Kurigram, Lalmonirhat, Sirajganj, Rajshahi, Sunamganj and Habiganj districts amid stray incidents of violence and irregularities. The unofficial results of 76 upazilas available until Sunday midnight show Awami League-nominated contestants won chairman post in 57 upzilas, including 15 uncontested. Independent candidates won in 19 upazilas. Authorities suspended voting at 28 polling centres in Kurigram, Lalmonirhat, Sirajganj, Rajshahi, Sunamganj and Habiganj districts over allegations of irregularities, violence and ballot box snatching, according to the Election Commission (EC). Apart from 15 chairmen, six vice-chairmen and seven reserved vice-chairmen candidates were elected unopposed. According to the latest information from 57 out of 78 upazilas as of 12:30am today, the AL candidates won 42 chairman posts while their rebels secured 12. Two BNP men who participated in the polls defying the party decision won the race for chairman posts and an independent candidate secured another. It is also noted here that in some upazilas the candidates were facing obstacles to file nominations as some quarters were discouraging the candidates to take part in the elections saying that the results of the elations were predecided.  But it is widely feared that the country’s democracy would face danger and authoritarian rule would occupy the void if the local government election system was also destroyed. 

Ducsu polls also get tainted with midnight stuffing

Tthe much-delayed Ducsu polls were stigmatised with overnight stuffing of ballot boxes as happened on the night of December 29, right before the national election.  

What began as a means to end the 28-year-long wait for Dhaka University Central Students’ Union (Ducsu), led to an eruption of protests at campus. Mass protests rolled out to the streets of campus after the opposition panels boycotted the Ducsu election alleging irregularities and vote rigging.

All the student organisations at Dhaka University, except Bangladesh Chhatra League, have finally boycotted the long waited Dhaka University Central Students’ Union (Ducsu) polls terming it a farce. 

Pragatishil Chhatra Oikya, General Student Rights’ Council and independent candidates in a joint press briefing at around 1:00pm at Madhu’s Canteen declared this on Monday. Liton Nandi, leftists’ panel leader, made the announcement in a joint press briefing with other panel leaders, five hours after Ducsu elections began.

“This is a farce. We reject the election. We demand fresh election schedule and fresh voting,” said the vice president candidate of Ducsu.

ARM Asifur Rahman, an independent general secretary candidate, announced students strike at campus the next day of the poll day to press home their demand. They were accompanied by leaders of the quota reform panel, independent panel, and Chhatra Federation panel at the briefing held at Modhur Canteen.

Last reported, the panels and their followers and activists were staging protests at campus, demanding resignation of the university’s vice chancellor. Later, at a separate press briefing, Mostafizur Rahman, VP candidate for JatiyatabadiChhatra Dal also announced of pulling out from the race.  Jatiyatabadi Chhatra Dal brought out a separate procession on the campus boycotting the election.

Earlier, Rokeya Hall students have found hidden stash of ballots during Dhaka University Central Students’ Union (Ducsu) elections. The discovery was made after nearly four hours of protests over discrepancy with the number of ballot boxes available for voting. Liton Nandi, panel leader for leftists and a vice president candidate, told the reporters the hall had nine ballot boxes. “The authorities only showed six while commencing voting.”

The voting of Dhaka University Central Students’ Union (DUCSU) election at Bangladesh-Kuwait Maitree Hall was also suspended for some time due to ballot stuffing as sacks filled with stamped ballots were found on the dormitory premises on Monday morning.  The proctor of the hall confirmed the suspension of voting. Notable, the ballots were stamped on the symbols of the candidates of Bangladesh Chhatra League (BCL).

And more unforunately, Nurul Huq Nur, the vice president candidate from quota reformist panel, was assaulted allegedly by some Bangladesh Chhatra League (BCL) activists at Ruqayyah Hall during its union election on Monday.  Witnesses said some BCL activists attacked and beat up Nur when he went to the hall during protests by students over alleged irregularities in the election, leaving him injured. Nur was taken to hospital, witnesses said. The students staged demonstrations alleging that ballots were stuffed overnight. They later vandalised polling booths and snatched ballot papers. 

• Shakhawat Hossain is Dhaka-based freelance Journalist and Political Commentator

ফিরে দেখা ডাকসু

 

মহিউদ্দিন আহমদ

“... তেহাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে নির্বাচন করে। তাদের প্যানেলে ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নূহ-উল-আলম লেনিন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ছাত্রলীগের ইসমত কাদির গামা। পক্ষান্তরে জাসদ-ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক ও জহুর হোসেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনার সময় দেখা গেল, মাহবুব-জহুর পরিষদ বিপুল ভোটে এগিয়ে। তাদের জয় সুনিশ্চিত। হলগুলোতেও অবস্থা একই রকম। রাত আটটার দিকে লেনিন-গামার সমর্থকেরা ভোট গণনার কেন্দ্রগুলোতে হামলা করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এক হল থেকে অন্য হলে যান। প্রতিপক্ষ দলের ছাত্ররা এবং ভোট গণনার কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হয়ে যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে 'মুজিববাদী ছাত্রলীগে'র একজন কর্মীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উদ্ধৃত করা যেতে পারে :

‘... সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে আমরা মিছিল নিয়ে বের হয়েছি। সেদিন আমাদের সাথে ৫০-৬০ জন নেতৃস্থানীয় নেতা-কর্মী ছিল। এদিকে নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থিত পরিষদ জয়ী হতে পারে আর মুজিবপন্থী পরিষদ পরাজিত হতে চলেছে এমন খবর পেয়ে শেখ কামাল ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে। মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দেখি শেখ কামাল বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে রযেছে। তার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা, শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। তার পায়ের কাছে কয়েকটি ব্যালট বাক্স। শেখ কামালের আশপাশে কয়েকজন বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিছিল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমরা ধারণাও করিনি যে শেখ কামাল ইতিমধ্যে ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে ফেলেছে। (ইজাজ আহমেদ বিটু / হতভাগা জনগণ - প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, রাঢ়বঙ্গ, রাজশাহী)।’

... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেটা ছিল একটা কলঙ্কজনক দিন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন জিতে যাবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো উদারতা আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না। জাসদ থেকে অভিযোগ করা হয়, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি কোনো রকমের ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগ দেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান॥”

• মহিউদ্দিন আহমদ/ জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি 

[প্রথমা প্রকাশন - অক্টোবর, ২০১৪ । পৃ: ১০৫-১০৬]

পরাজিত হলেন শিক্ষকরা

গোলাম মোর্তোজা 

আশঙ্কা ছিলো, আশাও ছিলো। যদিও আলামত ছিলো না আশাবাদী হওয়ার।

আশাবাদীরা আশা করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানে শিক্ষকরা থাকবেন ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্বে। শিক্ষকরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, শিক্ষার্থীরা ভোট দিবেন। সেখানে শিক্ষকরা নিশ্চয়ই এমন কিছু করবেন না, যা শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সম্মানহানি ঘটায়। শিক্ষকরা সেই আশ্বাস দিয়েছিলেনও।

তাছাড়া, ডাকসুর গৌরবময় ঐতিহ্যও বলে, সারাদেশের নির্বাচনের প্রতিফলন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিফলিত হয় না। ২৮ বছর আগে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিলো সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের আমলে। সেই নির্বাচন শিক্ষকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন, শিক্ষার্থীরা কোনো বাধা ছাড়া ভোট দিয়েছিলেন। তখনও দেশে নির্বাচন বলতে কিছু ছিলো না। কিন্তু, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিলো। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘রাতে বেলা ব্যালট বাক্স ভরার’ স্বীকারোক্তির পরও, অনেকে আশা করেছিলেন ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও হতে পারে। বাস্তবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা ঘটলো, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলো শিক্ষকদের সম্মান-শ্রদ্ধা-মর্যাদার প্রসঙ্গ। এই নির্বাচন থেকে প্রাপ্তি কী? কে বা কারা হারলেন, জিতলেন কারা?

সেসব বিষয়ে দু’একটি কথা।

১. শুরুতেই দু’টি ঘটনা, দুজন শিক্ষকের প্রসঙ্গ।

ড. শবনম জাহান

ক. যে রুমে ব্যালট বাক্স রাখা, সেই রুমের ভেতরে আরেকটি দরজা। সেই দরজা দিয়ে ব্যালটবাক্স রক্ষিত রুমে ঢোকা যায়। ছাত্রীরা আশঙ্কা করছিলেন, রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করে রাখা হতে পারে।

শিক্ষার্থীরা সন্দেহ করছেন শিক্ষককে। তা নিয়ে রাতেই শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকদফা তর্ক-বিতর্ক হয়। শিক্ষক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আমি শিক্ষক হয়ে তোমাদের সঙ্গে এমনকিছু করব না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কথা বিশ্বাস করেননি। সমঝোতা হয়, শিক্ষার্থীরা দরজায় তালা দিয়ে রাখবেন। চাবি থাকবে শিক্ষার্থীদের কাছে। সেই অনুযায়ী দরজায় তালা দিয়ে শিক্ষার্থীরা চাবি রাখেন নিজেদের কাছে। সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা দেখেন দরজার তালা খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেই রুমে ঢুকতে চাইলে, শিক্ষক বাধা দেন। শিক্ষার্থীরা তবুও রুমে ঢুকে দেখেন কোনোকিছু ভর্তি অবস্থায় কয়েকটি বস্তা। খুলে দেখা যায়, বস্তা ভর্তি ভোট দেওয়া ব্যালটপেপার। শিক্ষক তার অনুগত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে বস্তাগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সম্ভবত দু’একটি বস্তা সরিয়ে নিতে সক্ষমও হন।

ব্যালটবাক্স, পেপার রাতে শিক্ষকের কাছে পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সকালে ব্যালটপেপারে ভোট দিয়ে বাক্সে ফেলবেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক সেই ব্যালটপেপারে রাতে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে বস্তা ভর্তি করে রেখে দিয়েছেন। সকালে সবার সামনে খুলে দেখাবেন ব্যালটবাক্স খালি। সিলগালা করে বুথে রাখবেন।ভোটগ্রহণ শুরু হলে, ভেতরের দরজা খুলে বস্তার ব্যালটপেপার ঢুকিয়ে দেওয়া হবে ব্যালটবাক্সে।

এ বক্তব্য ব্যালটপেপার উদ্ধারকারী শিক্ষার্থীদের। গণমাধ্যমের সামনে তারা একথা বলেছেন।

সাধারণত শিক্ষার্থীরা অন্যায় বা অনৈতিক কিছু করে শিক্ষকের হাতে ধরা পড়েন।

এক্ষেত্রে শিক্ষক ধরা পড়েছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। প্রথমে সন্দেহ, তারপর হাতেনাতে ধরা। কথাগুলো শিক্ষার্থীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, লিখছি খুব সহজে। লেখার পর কেমন যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। শিক্ষক...? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মনীষী জি সি দেবের মতো মানুষেরা!

সবার জীবনেই তো শিক্ষকের ভূমিকা আছে। আপনি একবার কল্পনা করে দেখেন তো ঘটনাটি?

বলছি কুয়েত মৈত্রী হলের কথা।

আর সেই শিক্ষকের নাম ড. শবনম জাহান। তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

খ. ‘রোকেয়া হলে উদ্ধার হলো বাক্স ভর্তি ব্যালট’ (মানবজমিন, ১১ মার্চ ২০১৯)।

রোকেয়া হলে বাক্সভর্তি ব্যালটপেপার লুকিয়ে রেখে শিক্ষার্থীদের কাছে ধরা পড়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

শিক্ষক ভোট গ্রহণ শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের ছয়টি ব্যালটবাক্স দেখান। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, আরও তিনটি ব্যালটবাক্স থাকার কথা, সেগুলো কোথায়? শিক্ষার্থী-শিক্ষক তুমুল তর্ক, হৈচৈ শুরু হয়েছে। দেখানো ছয়টি ব্যালটবাক্স সিলগালা করতেও রাজি হচ্ছিলেন না হল প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা। তৈরি হয় গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ।

সেখানে হাজির হন কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূরসহ অনেকে। বন্ধ দরজা খুললে সন্ধান পাওয়া যায় ব্যালটপেপার ভর্তি তিনটি বাক্সের। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা দরজায় দাঁড়িয়ে রুমে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন।

প্রভোস্ট যদিও বলছেন- এগুলো নিরাপদ রাখার জন্যেই ঐ রুমে রাখা হয়েছিলো।

রোকেয়া হলে ভোট গ্রহণ শুরু হয় দেড়-দুই ঘণ্টা দেরিতে।

রোকেয়া হলের পাঁচজন শিক্ষার্থী নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে, পুনরায় নির্বাচন এবং প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদার পদত্যাগের দাবিতে অনশন করছেন। আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন করছেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে।

কুয়েত মৈত্রী হলের বস্তা-ভর্তি ব্যালটপেপারে ছাত্রলীগ প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়া ছিলো। রোকেয়া হলের ব্যালটপেপারে ভোট দেওয়া ছিলো না।

৩. ডাকসু নির্বাচনে বড় রকমের এই অন্যায়-অনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। অন্য তিনটি মেয়েদের হলেও প্রতিরোধ হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা যা ধারণা করেছিলেন তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। শামসুন নাহার হলে শিক্ষার্থীরা সারারাত জেগে পাহারা দিয়েছেন, শিক্ষকও অনৈতিক পথে হাঁটেননি। শিক্ষক শিক্ষকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে বস্তা-ভর্তি বা ব্যালটবাক্স আগে থেকে ভর্তির ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পেরেছেন। ছাত্রীরা যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, ছাত্র হলগুলোতে তেমন প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

৩. ছাত্ররা কী প্রতিরোধ করতে পারেননি?

ছাত্র হল আর ছাত্রী হলের পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বাম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সক্রিয় আছে। এক সময় ছাত্রলীগ করতেন বা ছাত্রলীগ ভাবাপন্ন বহু ছাত্রী এক ধরণের স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ।

ছাত্রদের হলে ছাত্রলীগ একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে অন্য কোনো দল-মতের শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রবেশাধিকার নেই। গণরুম-গেস্টরুম নিপীড়ন চলে মূলত ছাত্রদের উপর। ছাত্রীদের মতো বহু ছাত্র যারা ছাত্রলীগ করতেন বা ভাবাপন্ন, তারা ছাত্রলীগ থেকে দূরে সরে গেছেন। ছাত্রলীগ তাদের আদর্শ বা ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে চায়নি। ক্ষমতা দিয়ে বশে রাখতে গিয়ে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। নতুন শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেন না। অমানবিক গণরুমে থাকার বিনিময়ে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যান।

এমনকি, নির্বাচনের সময়ও ছাত্রলীগ তাদেরকে শ্রমিকের মতো কাজ করিয়েছে। প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

ছাত্রমত ছাত্রলীগের পক্ষে না থাকলেও, হলের নিয়ন্ত্রণ ঠিকই থেকেছে। নিয়ন্ত্রণ থাকার ক্ষেত্রে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় শিক্ষকরা ছাত্রলীগকে সহায়তা করেছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এসব শিক্ষকরা কখনো কোনো অবস্থান নেননি।

বাম এবং ছাত্রদলসহ অন্যান্য সকল সংগঠন নির্বাচনের আগের কয়েকদিন এবং নির্বাচনের দিন সমগ্র ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকলেও, হলগুলোতে সক্রিয় থাকতে পারেননি। প্রচারণা কাজে হলে গিয়ে আবার বেরিয়ে আসতে হয়েছে। নির্বাচনের দিন তারা হলে ঢুকতে পারেননি বললেই চলে। ফলে নির্বাচনের যে চিত্র ছাত্রী হলগুলোতে দৃশ্যমান হয়েছে, ছাত্র হলগুলোর ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। প্রকৃত অর্থে জানা যায়নি ছাত্র হলগুলোর ভেতরে কী ঘটেছিলো। প্রতি মুহূর্তে ক্যাম্পাসে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। যদি গণমাধ্যমের স্বাধীন প্রবেশাধিকার থাকতো, তাহলে এই বিভ্রান্তি তৈরি হতো না। ছাত্রী হলের মতো ভোটের চিত্র যদি ছাত্র হলে না ঘটে থাকে, সেটাও জানা যেতো।

৪. নির্বাচনের প্রস্তুতিকালীন সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, যা শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছিলো। তারা শিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারছিলেন না, দলীয় কর্মী বা নেতার মতো হয়ে যাচ্ছিল তাদের আচরণ। কয়েকটি নমুনা-

ক. ছাত্রলীগ ছাড়া সকল সংগঠনের চাওয়া ছিলো ভোটকেন্দ্র হলে নয়, একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে না। একথা কারো অজানা ছিলো না। কিন্তু, শিক্ষকরা ছাত্রলীগের চাওয়া অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র হলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা ছিলো অধ্যাপক মিজানুর রহমানের। তিনি ঐতিহ্য বিবেচনায় নিয়েছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে যেতে পারবেন কী না, তা বিবেচনায় নেননি।

হলে ভোট কেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত যে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় ছিলো, নির্বাচনের দিন তা দৃশ্যমান হয়েছে।

খ. অন্য সব সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে হলগুলো থেকে বহিরাগতদের বের করে দেওয়া ও সহাবস্থান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উদ্যোগের প্রথম দিন জসীম উদ্দীন হল থেকে ছাত্রলীগের বিরোধিতার মুখে পিছিয়ে আসেন শিক্ষকরা। ফলে সহাবস্থান নিশ্চিত করার আর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

গ. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বাধীন, মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে পরিচিত। তারাই গণমাধ্যমের উপর অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। যে গণমাধ্যম শিক্ষকদেরও প্রতিটি ন্যায্য দাবির পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।

ঘ. প্রায় ৪৩ হাজার ভোটারের ভোট সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে নেওয়া কঠিন হবে। এই যুক্তিতে ভোট গ্রহণের সময় ৪টা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়েছিলো ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সবগুলো সংগঠন। যৌক্তিক হলেও সেই দাবি মানেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ভোট গ্রহণ চলাকালীন অনিয়ম প্রকটভাবে দৃশ্যমান হওয়ার পর ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য প্রায় সব সংগঠনের প্রার্থী-কর্মীরা নির্বাচনে অনিয়ম, বস্তাভর্তি ব্যালটপেপারসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের কাছে গেছেন। তিনি অভিযোগগুলোর কোনোটাই অস্বীকার করেননি। এক ধরণের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে তার কথায়।বলেছেন, ‘আমি বিব্রত’। ন্যায়ের প্রতি দৃঢ়তার সন্ধান পাওয়া যায়নি তার বক্তব্যে। বলেছেন ‘আমি একা কিছু করতে পারব না। তোমরা মামলা করো। দায়িত্বশীলদের কাছে তোমাদের কথা পৌঁছে দেব।’

যিনি নিজে প্রধান রিটার্নিং অফিসার, যিনি সব সংগঠনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে নির্বাচনে এনেছিলেন। নির্বাচন বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তার আছে। অথচ তিনি তার শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বিব্রত’ হয়ে ‘মামলা’ করার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন! আবার এই সময়েই উপাচার্য বলেছেন, ‘দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’

৫. এবার আসি ফলাফল প্রসঙ্গে। ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক নুর। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী কোটাসংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরকে ছাত্রলীগ যে কতোবার পিটিয়ে আহত- রক্তাক্ত করেছে, সেই হিসাব সম্ভবত ছাত্রলীগের কাছেও নেই।

নির্বাচনের দিনও ছাত্রলীগ নুরুলকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলো। প্রক্টর গোলাম রাব্বানী সবকিছু দেখেছেন, জেনেছেন। গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘নুরকেই জিজ্ঞেস করেন, কেনো ছাত্রী হলে গিয়েছিলো’।

এতো প্রতিকূলতার মুখেও বিষ্ময়করভাবে নুরুল তার অবস্থান থেকে কখনো সরে যাননি। ধৈর্য-সাহস-দায়বদ্ধতা-নৈতিকতার প্রতিটি পরীক্ষায় নুরুল প্রতিবার উত্তীর্ণ হয়েছেন। নুরুল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুহসীন হল ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

নির্বাচনের আগেই লিখেছিলাম, ছাত্রলীগ ছাত্রদলকে নিয়ে চিন্তিত থাকলেও, তাদের জন্যে চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

গত কয়েক বছর আগের পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারী নিপীড়ন, নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটাসংস্কার আন্দোলনসহ যতোগুলো জনসম্পৃক্ত দাবিতে শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়েছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ তার বিরোধিতা করেছে। আন্দোলনকারী ছাত্রীদের নিপীড়ন করেছে, যৌন নিপীড়ন করেছে। ছাত্রী হলগুলোতে যে এতোটা প্রবল প্রতিরোধ দৃশ্যমান হলো, এর নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। ছাত্রলীগ কখনো হেলমেটবাহিনী, কখনো হাতুড়িবাহিনী রূপে আবির্ভূত হয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে।

বাম সংগঠনগুলো সব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাম সংগঠনগুলোর ভালো করার সম্ভাবনা ছিলো।

এখন নুরুল ভিপি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কী প্রমাণ হয় না যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কারচুপির যে অভিযোগ এসেছে তা সত্যি নয়? বস্তাভর্তি ব্যালটপেপার এবং ব্যালটবাক্স ভর্তির ঘটনা তো ঘটেছে মাত্র দু’টি হলে। অন্য হলগুলোতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। অনেকেই তুলছেন, সামনেও তুলবেন।

যে বাস্তবতায় ছাত্রী হলের অনিয়ম দৃশ্যমান হয়েছে, ছাত্র হলের চিত্র দৃশ্যমান হয়নি- তা লিখেছি। একটি নির্বাচনে কখনো প্রতিটি কেন্দ্রের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা যায় না। আর নির্বাচন পরিচালনাকারীরা যদি অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েন, তাহলে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে অনিয়ম তুলে ধরার সকল দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীদের। তাদের এজেন্টও দিতে দেওয়া হয়নি।

যদি গণমাধ্যমের গতিবিধি এতোটা নিয়ন্ত্রণ করা না হতো, তবে সব কেন্দ্রের মোটামুটি একটি চিত্র পাওয়া যেতো। অত্যন্ত সীমিত সুযোগের মধ্যে গণমাধ্যম যখন কেন্দ্রের বাইরের অপেক্ষমাণ লাইনের নানা অনিয়ম তুলে ধরেছে, তখন শিক্ষককে দেখা গেছে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে যারা এমন আচরণ করেছেন, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে (বুথের কথা বলছি না) যেখানে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিলো না (থাকলে ভোট গ্রহণে কোনো সমস্যা ছিলো না) সেখানে তারা সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন, কাউকে কি তা বিশ্বাস করানো যাবে?

দেশের সকল নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ব্যবহার করা হয়। কর্তৃপক্ষ একরোখা থাকলেন নিজেদের ঐতিহ্য, নিজেদের অস্বচ্ছ স্টিলের ব্যালটবাক্সই তারা ব্যবহার করলেন। অনিয়মের চিত্রগুলো দৃশ্যমান হওয়ার পরে, শিক্ষকদের সম্পর্কে ছাত্রদের তো বটেই জনমানুষের মনেও কী এই বিশ্বাস স্থায়ী হয়ে গেলো না যে, রাতে ভোট দিয়ে ব্যালটবাক্স ভরে রাখার জন্যেই অস্বচ্ছ ব্যালটবাক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো?

রাতের বেলা হলে ব্যালটপেপার ও বাক্স পাঠানোর বিরোধিতাও করেছিলো সব সংগঠন, ছাত্রলীগ ছাড়া। শিক্ষকরা তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে যে সিদ্ধান্ত নিলেন, ব্যালটপেপারের বস্তা আবিষ্কারের পর শিক্ষার্থীরা কী ভাবলেন? দেশের মানুষ কী ভাবলেন?

শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হলের ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। শিক্ষকের জিম্মায় থাকা ব্যালটপেপারে রাত ভোট দিয়ে বস্তা ভর্তি করা হলো। ভোট কারা দিলেন, বস্তা ভর্তি কারা করলেন? শিক্ষক কী করলেন?

ষড়যন্ত্র করলেন কারা? যড়যন্ত্রই বা কীসের?

সুতরাং ভিপি হিসেবে নুরুলের বিজয় এবং অনিয়মের দৃশ্যমানতা সাপেক্ষে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’ তা বলার সুযোগ আছে কী না, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্যে গবেষণার প্রয়োজন হয় না।

নুরুল ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর, ছাত্রলীগও এই নির্বাচনকে প্রহসন বলেছে। পুনরায় নির্বাচন চেয়েছে। হাসপাতাল থেকে ফেরা নুরুলকে আবারও ধাওয়া দিয়েছে। তারপর ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী শোভনের নেতৃত্বে নুরুলকে ভিপি হিসেবে মেনে নিয়েছে। নুরুলও এখন পুনরায় নির্বাচন চাইছেন।

যে আটজন শিক্ষক নিজস্ব উদ্যোগে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা বহুবিধ অন্যায়-অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছেন।

অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচন বাতিল করে, নতুন নির্বাচন দেওয়ার সুপারিশ করেছেন পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকরা।

নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কোন হলে কে কত ভোট পেলেন, কোথায় কে বেশি বা কম ভোট পেলেন, তা জানা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনটি নিয়ে আরও বহুবিধ প্রশ্ন ও সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

৬. ২৮ বছর পরের ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কয়েকটি দিক উন্মোচিত হলো-

ক. ডাকসুর সবচেয়ে সম্মানজনক ভিপি পদে বিজয়ী নুরুল হক নুর এবং সমাজসেবায় কোটা আন্দোলনের আকতার ছাড়া অন্য সব পদ ছাত্রলীগের। পরাজিত হলেন কারা? পরাজিত হলেন শিক্ষকরা। কোটাসংস্কার আন্দোলনের একজন নেতা বলছিলেন, ‘ছাত্রলীগ নয়, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষকরা। ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীরা ভোট দিবে না জানতাম। কিন্তু, শিক্ষকরা ছাত্রলীগকে রাতে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবুও নুরুল আর আকতারকে হারাতে পারেনি। চিন্তা করে দেখেন আমরা কতো বেশি ভোট পেয়েছি, আর ছাত্রলীগ কতো কম ভোট পেয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলেন। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং দেশের মানুষকে লজ্জায় ফেলে ইমেজ হারালেন। মানুষ দেখলেন ‘রাতে ভোট’র মতো নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শিক্ষকরাও সম্পৃক্ত। আবার মানুষ এটাও জানলেন, সংখ্যায় কম হলেও কিছু শিক্ষক এখনো আছেন যারা নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে কোনো প্রকার আপোষ করেন না।

খ. আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সুযোগে ছাত্রলীগ দৃশ্যমানভাবে আছে, বিএনপির ছাত্রদল অদৃশ্য হয়ে গেছে। ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে নেই, সমর্থনে কতোটা আছে তা বোঝা যেতো সুষ্ঠু নির্বাচন হলে। ছাত্রলীগের দৃশ্যমান দাপট আর সমর্থনে যে ব্যাপক ফারাক, তা বুঝতে কষ্ট হয় না।

গ. ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের প্রচলিত ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রতি যে শিক্ষার্থীদের মোহ কেটে গেছে- তা মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে।

ছাত্রদলের অনুপস্থিতিতে, ছাত্রলীগের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে, বাম ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সফল আন্দোলন করেছেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সরব থাকায় কোটাসংস্কার আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় ছাত্রনেতায় পরিণত হয়েছেন। বাম ছাত্রনেতারা তাদের ইমেজ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।

ঘ. ভিন্নমত হলেই ‘জামায়াত-রাজাকার’ আখ্যা দেওয়ার নীতি যে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা কিছুটা হলেও বোঝা গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তা আরও বড়ভাবে বোঝা যেতে পারতো।

৭. নির্বাচন বর্জন করেও, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ভিপি নুরুল হক নুর। বর্জন করেছেন আরও চারটি প্যানেলের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে, নির্বাচিত হয়েছেন ভিপি পদে নুরুল ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আকতার হোসেন। নুরুলের জন্যে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কঠিন পরীক্ষা। নুরুল ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে থাকতে পারেন অন্যদের সঙ্গে। আবার ভিপি পদে থেকে একই সঙ্গে ভেতরে-বাইরে আন্দোলনে সক্রিয় হতে পারেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার ও অন্যায্য দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে পারেন।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নুরুলের চেয়েও বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে বর্জনকারী অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে।

ডাকসু নির্বাচনের মতো একটি নির্বাচন পরিচালনা করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু, সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা পেলো না যে, তারা নৈতিকতা বজায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছেন।

একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাজে কোন পরিচয়ে নিজেদের পরিচিত করলেন, তা কী ভেবে দেখার মতো সময় তাদের আছে!

কার্টসি —  দি ডেইলি স্টার/ বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৪, ২০১৯। 

লিঙ্ক —  http://bit.ly/2T7MbPr