“... তেহাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে নির্বাচন করে। তাদের প্যানেলে ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নূহ-উল-আলম লেনিন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ছাত্রলীগের ইসমত কাদির গামা। পক্ষান্তরে জাসদ-ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আ ফ ম মাহবুবুল হক ও জহুর হোসেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনার সময় দেখা গেল, মাহবুব-জহুর পরিষদ বিপুল ভোটে এগিয়ে। তাদের জয় সুনিশ্চিত। হলগুলোতেও অবস্থা একই রকম। রাত আটটার দিকে লেনিন-গামার সমর্থকেরা ভোট গণনার কেন্দ্রগুলোতে হামলা করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এক হল থেকে অন্য হলে যান। প্রতিপক্ষ দলের ছাত্ররা এবং ভোট গণনার কাজে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা আতঙ্কিত হয়ে যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে 'মুজিববাদী ছাত্রলীগে'র একজন কর্মীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উদ্ধৃত করা যেতে পারে :
‘... সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বে আমরা মিছিল নিয়ে বের হয়েছি। সেদিন আমাদের সাথে ৫০-৬০ জন নেতৃস্থানীয় নেতা-কর্মী ছিল। এদিকে নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থিত পরিষদ জয়ী হতে পারে আর মুজিবপন্থী পরিষদ পরাজিত হতে চলেছে এমন খবর পেয়ে শেখ কামাল ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে। মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় আমরা দেখি শেখ কামাল বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে রযেছে। তার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা, শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। তার পায়ের কাছে কয়েকটি ব্যালট বাক্স। শেখ কামালের আশপাশে কয়েকজন বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিছিল নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমরা ধারণাও করিনি যে শেখ কামাল ইতিমধ্যে ডাকসুর বাক্স ছিনতাই করে ফেলেছে। (ইজাজ আহমেদ বিটু / হতভাগা জনগণ - প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, রাঢ়বঙ্গ, রাজশাহী)।’
... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেটা ছিল একটা কলঙ্কজনক দিন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন জিতে যাবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো উদারতা আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না। জাসদ থেকে অভিযোগ করা হয়, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ জানালে তিনি কোনো রকমের ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি একজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগ দেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান॥”
- মহিউদ্দিন আহমদ/ জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি
[প্রথমা প্রকাশন - অক্টোবর, ২০১৪ । পৃ: ১০৫-১০৬]
No comments:
Post a Comment