Search

Wednesday, March 6, 2019

বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা — উদাসীনতার আড়ালে রাষ্ট্রের বর্বরতা

অরুন রহমান 


বেগম জিয়া একজন মা, দেশের সিনিয়র সিটিজেন। চল্লিশ বছরধরে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান চরিত্র, উন্নয়নের কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রোল মডেল, বিশ্বে গণতন্ত্রের অন্যতম আইকন। 

জীবনের এই পর্যায়ে এই বয়সের একজন ব্যক্তির, পরিবার-পরিজনের সার্বক্ষণিক সেবা নিয়ে নিয়মমত প্রতিদিন খাবার, ঔষধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিত্যদিন জীবন যাপন করতে হয়। একবেলা খাবার বা ঔষধ গ্রহণে দেরি হলে মুহুর্তেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের শারীরিক বিপর্যয়। হঠাৎ পড়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইনস্ট্রোক আর কিডনি ফেওলিয়ার ঘটে যেতে পারে যেকোন মুহুর্তে। 

বেগম জিয়া গত ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাতে আক্রান্ত। তাছাড়া ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে, ১০ বছর যাবত উচ্চ রক্তচাপ ও আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন।

১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যে কারণে তার গিটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক।

সুচিকিৎসার অভাবে এইরোগ গুলো খারাপ অবস্থায় উপনীত হয়েছে এবং অন্য নতুন রোগ আক্রমন করেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, চোখে সমস্যা তৈরি হয়েছে। হাত-পা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। হুইল চেয়ারই এখন একমাত্র ভরসা । ওজন কমে শরীর ভেঙ্গে পড়েছে।  

বেগম জিয়া যেদিন কারাবন্দি হন সেইদিন পর্যন্ত তিনি নিজে হেঁটে আদালতে নিয়মিত গিয়েছিলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন। 

এই পরিস্থিতিতে জনমনে দুটি প্রশ্ন —

প্রথমত, বেগম জিয়ার নিম্ন আদালতের রায় কিংবা চলমান সব মামলায়ই তিনি জামিন যোগ্য। বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক এই ধরনের পরিস্থিতিতে জামিন পেয়ে থাকেন। একমাত্র বেগম জিয়াই জামিন পাচ্ছেন না! কেন ব্যতিক্রম শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে?  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অন্য রাজনীতিবিদরা জেলে থাকা অবস্থায়ই দেশের শীর্ষ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। এমনকি বিদেশে গিয়েও চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কেন ব্যতিক্রম শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে?  

সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছর পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাঁকে। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থ শরীর। একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা। তারপরও টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে আনা হচ্ছে নির্দেশিত ক্যাংগারু কোর্টে। 

সর্বশেষ, রোববার, মার্চ ৩, ২০১৯, বেগম জিয়া আদালতে দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীরকে বলেছেন, তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছে না। থেরাপি দেয়া হচ্ছে না। 

বেগম জিয়ার প্রতি রাষ্ট্রের এই বর্বরতার পরিণামের দায়িত্ব এই সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।  


  • লেখক — ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট। 

No comments:

Post a Comment