Search

Sunday, March 10, 2019

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ — ৩০ ডিসেম্বর মার্কা নীলনকশা নির্বাচনের শঙ্কা এবং প্রত্যাশা

মাকসুদুর রহমান 

আগামী কাল সোমবার, মার্চ ১১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ  —  ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সারাদেশের সচেতন মানুষদের উত্তেজনা, আবেগ, আশাঙ্কার শেষ নেই।  তবে ৩০ ডিসেম্বরের ভয়াবহ ভোট জালিয়াতির নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করে তাতেই এ নির্বাচনের পরিণতি সম্পর্কে সবাই আঁচ করতে পারেন। আর সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত যে ‘ডাকসু’ সেখানেও এবার  ‘সিইসি’ নুরুল হুদার ভুত ভর করেছে! যেখানে প্রধান ক্রীড়াণক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন বিতর্কিত ভিসি আখতারুজ্জামান। তিনি যে সিইসি নুরুল হুদার দেখানো পথেই একটি নীলনকশার ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছেন তা প্রমাণের জন্য নিন্মোক্ত কারণগুলোই যথেষ্ট  —  

১। ছাত্রলীগ ছাড়া ক্রিয়াশীল সকল  ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের  দাবী উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্র হলে স্থাপন।

২। ব্যালট বক্স স্টিলের তৈরি।  স্বচ্ছ নয়, তাই  বাহির থেকে কিছুই দেখা যায় না।

৩।  ভোট প্রদানের জন্য ব্যবহৃত  ব্যালট পেপারে নামের পাশে খালি ক্রস চিহ্ন দিতে হবে।

৪। ব্যালট পেপার ভাঁজ করা যাবে না (ভাঁজ করলে নাকি ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে)। 

৫।  প্রার্থীরা নিজেদের কোনো পোলিং এজেন্ট রাখতে পারবে না। নির্বাচনী পোলিং এজেন্ট থাকবে হাউজ টিউটর স্যাররা ( গত ১০ বছরে যেসব ছাত্রলীগ  ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন,মূলতঃ তারাই নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালন করবেন)। 

৬।  ভোটকেন্দ্রে বুথ এলাকায় কোন সাংবাদিক ঢুকতে পারবেন না। তারা হলের গেস্টরুম পর্যন্ত যেতে পারবেন বড়জোর (স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত চিত্র জানার সুযোগ আর থাকছে না)! 

৭। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে সময় মাত্র ৬ ঘন্টা। প্রতি ভোটারকে ৩৮টি ভোট দিতে হবে  (যারা হলের বাইরে থাকে মূলতঃ ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত)। 

প্রশ্ন উঠতে পারে এতসব সন্দেহ, অবিশ্বাস, আশাঙ্কা মাথায় নিয়ে কেন ছাত্রসংগঠন ও সর্বোপরি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবাই উৎসাহিত বা পরিস্কার করে বললে উত্তেজিত। এর কারণ একটাই, ‘ডাকসু’ই পারে বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান স্থবির গণতান্ত্রিক অচলাবস্থা দূর করতে আলোর পথ দেখাতে।

সেটা যদি হয়, ৭৩ এর ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা ২০১৮ এর নীলনকশার  ধরনের নির্বাচন তবুও। কারণ ‘ডাকসু’ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের চেতনা জাগ্রত হয়েছে, তা আগামী দিনে বাংলাদেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপ নেয়ার সমূহ সম্ভাবনার পথ সুগম করবে।


  • লেখক —  রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। 


No comments:

Post a Comment