Search

Wednesday, March 28, 2018

হিটলারের দেশ থেকে গণতন্ত্রের শিক্ষা

আলফাজ আনাম


ক্ষমতাসীনেরা জানেন, অধিকার হরণের রাজনীতির বিপরীতে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তাদেরকে কী ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। এ কারণে নির্বাচনব্যবস্থাও তারা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে ফেলেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার নিজ থেকেই নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল একই পথে হেঁটেছে। আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার একই ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। 

বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে জার্মানির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের মানদণ্ড কি আমাদের জার্মানদের কাছ থেকে শিখতে হবে? হিটলারের দেশ থেকে? আমরা আসলে কার কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখব তা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জার্মানদের কাছ থেকে আমরা গণতন্ত্র শিখব না মিসরের কাছ থেকে শিখব তা আলোচনার বিষয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পরাজয়ের পর জার্মানির রাজনীতিতে নাজি পার্টি শুধু নিষিদ্ধ হয়নি, ইউরোপে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ ও চর্চায় ছেদ পড়েনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও আমরা দুনিয়ার বহু দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী একদলীয় শাসনের রূপ দেখেছি; কিন্তু জার্মানি, জাপান বা ইতালিতে এমন অবস্থা দেখা যায়নি। ১৯৪৯ সালের পর থেকে জার্মানিতে গণতন্ত্রের বিকাশ, নাগরিক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। বেশি উন্নয়ন কিংবা কম গণতন্ত্রের প্রয়োজন সেখানে হয়নি। আবার বিরোধী দলবিহীন ভোটের চিত্র ছিল না। হিটলারের দেশ হয়েও সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে ও হচ্ছে। হিটলারের মতো শাসকের আর আবির্ভাব ঘটেনি। নতুন কোনো হিটলার জার্মানি শাসন করবে, জার্মানরা অন্তত তা কল্পনাও করে না।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জার্মানির গবেষণা প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেছেন। নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন। জার্মানির এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত ৯টি বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমীক্ষার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসনের একটি সূচক নির্ধারণ করেছে। এই বিষয়গুলো ছিল রাষ্ট্র পরিচালনাব্যবস্থা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, ক্ষমতার একক ব্যবহার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও নাগরিক অধিকার। প্রতিষ্ঠানটির সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১২৯টি দেশের মধ্যে ৫৮টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং ৭১টি দেশকে গণতান্ত্রিক বলে তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৬ সালে তাদের আগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ৭৪টি দেশে গণতান্ত্রিক এবং ৫৫টি দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছে।

১২৯টি দেশের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে যে সূচক এই সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। একই অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বেশ মিল আছে। মাত্র কয়েক দিন আগে রাশিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান বিরোধী প্রার্থী অ্যালেক্সি নাভালনিকে নির্বাচনের বাইরে রেখেই আরো এক মেয়াদের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনের ফলাফলেও ছিল না অবাক করার মতো কোনো কিছু। ধারণা মতোই পুতিন জিতেছেন বড় ব্যবধানে। রাশিয়ায় যে পুতিনের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে, সেটি অনেকটাই নিশ্চিত।

১৯৯৯ সালের আগস্টে তিনি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। চার মাস পর ডিসেম্বরে ইয়েলৎসিনের পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে রাশিয়া ফেডারেশনে যে পুতিন যুগের সূচনা হয়, তা চলছে এখনো। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে থেকেই ২০০০ সালের নির্বাচনে জেতেন। পুনর্নির্বাচিত হন ২০০৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে। রাশিয়ার সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া যায় না। তাই নিজে প্রার্থী হতে না পারায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে পুতিন তার পছন্দের রাজনীতিক দিমিত্র মেদভেদেভকে প্রার্থী করেন। মেদভেদেভের সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন নিজে। মূলত এ সময়টিতেও পুতিনই রাশিয়াকে শাসন করেছেন বলে মনে করা হয়।

২০১২ সালের নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়। আবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন পুতিন। ২০১৭ সালে শেষ হয় তার তৃতীয় মেয়াদ। এবারের নির্বাচনে জিতে শুরু হতে যাচ্ছে চতুর্থ মেয়াদের পুতিন যুগ, যা চলবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। বর্তমান নিয়মে ২০২৪ সালের নির্বাচনে (পরপর তিনবার) প্রার্থী হতে পারবেন না পুতিন। তবে রাশিয়ার রাজনীতিতে তার যে অবস্থান, তাতে এই মেয়াদের মধ্যেই সংবিধান থেকে মেয়াদের এই সীমাবদ্ধতাসংক্রান্ত ধারাটি তুলে দিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। পুতিনের ক্ষমতা স্থায়ী করতে রাশিয়ার সংবিধান পরিবর্তিত হতে পারে অথবা সংবিধান ঠিক রেখে অন্য কোনো বিকল্প কৌশলে তার শাসন দীর্ঘায়িত করার ব্যবস্থা হতে পারে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে ক্রমেই নিজের অবস্থান সুসংহত করেছেন সাবেক এই কেজিবি এজেন্ট। সেই সাথে ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগও আছে। সমালোচকেরা বলছেন, দেশটিতে মুক্ত গণতন্ত্র শুধু নয়, পুতিন যুগ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্নভাবে বিরোধীদের রাজনীতির মূল অঙ্গন থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। যার বড় উদাহরণ অ্যালেক্সি নাভালনি। রাশিয়ায় পুতিনবিরোধীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা নাভালনি। দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হলো, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানদণ্ডে বাংলাদেশ কেন রাশিয়ার সাথে অবস্থান করছে। আমরা যদি জার্মানির প্রতিষ্ঠানটির মানদণ্ডের বিষয়গুলো দেখি, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা রাশিয়া থেকে খুব ভিন্ন কিছু নয়। জার্মানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব দেশের ওপর সমীক্ষা চালায়, সেসব দেশের মধ্যে পাঁচটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা। এ পাঁচটি দেশ এখন আর গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পর্যন্ত মানছে না। এসব দেশে বহু বছর ধরেই গণতন্ত্রকে ক্ষুণœ করা হচ্ছিল। এসব দেশের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণেই এটা ঘটেছে বলে মন্তব্য করা হয় এই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে। যে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা বিজয়ী হয় তা নিয়ে বহু প্রশ্ন আছে। তৎকালীন সেনাসমর্থিত সরকারের সাথে ক্ষমতাসীনদের বোঝাপড়ার বিষয়টি গোপন কোনো বিষয় নয়; যেখানে প্রতিবেশী দেশের বিশেষ ভূমিকা ছিল। দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার নিজের লেখা বইয়ে এর বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই নির্বাচনের পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক। যেখানে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে কোনো ভোটে অংশ নিতে হয়নি। এ নির্বাচনের সাথে কেবল মিসরের সামরিক স্বৈরাচার আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির নির্বাচনের তুলনা করা যেতে পারে। পুতিনের টার্গেট যেখানে ২০১৪ সাল, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের টার্গেট কিন্তু ২০৪১ সাল পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার চাবিকাঠির রহস্য কেবল পুতিন বলতে পারেন। আর তার কৌশলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কিংবা আইনের শাসন কোন অবস্থায় আছে, তা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে প্রমাণ হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে প্রেস ক্লাবের আঙিনা কিংবা পল্টনের পার্টি অফিসের সামনেও স্থান হচ্ছে না। দেশের প্রধান বিরোধী দল সভা-সমাবেশের জন্য বারবার অনুনয় করে অনুমতি পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের পালিত বিরোধী দল সাড়ম্বরে সভা-সমাবেশ করছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সামরিক স্বৈরাচার হিসেবে জেনারেল এরশাদের পদত্যাগের দাবিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও আন্দোলন করেছিল। এই এরশাদ দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উচ্ছেদ করে ২৪ এপ্রিল ১৯৮২-তে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরশাদের জন্য হয়তো সুখের বিষয় তিনি যখন ঢাকায় সমাবেশ করছেন, তখন তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দুই নেত্রীর একজনকে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্বৈরশাসক হিসেবে তুলে ধরেছে। এরশাদের জন্য এর চেয়ে আনন্দের কী হতে পারে?

আজকে ক্ষমতাসীন দলের দেউলিয়াত্ব কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, একদিকে হিটলারের দেশ বলে জার্মানির সমালোচনা করা হচ্ছে; এর দুই দিন পর জার্মান রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকেরা সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। সেখানে তারা দাবি করেছেন, এ আইনের অন্তত তিনটি ধারা জনগণের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। রাজনৈতিক অধিকার ছাড়াও বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা কিংবা আইনের শাসন কোন পর্যায়ে আছে, তা দেশের মানুষ যেমন জানে, তেমনি বিদেশীরাও জানে।

নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে যখন কোনো সরকার ক্ষমতাসীন হয়, তখন টিকে থাকার জন্য যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেন। সেখানে রাজনৈতিক অধিকার, আইনের শাসন বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষমতাসীনেরা জানেন, অধিকার হরণের রাজনীতির বিপরীতে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন তাদেরকে কী ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে। এ কারণে নির্বাচনব্যবস্থাও তারা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে ফেলেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার নিজ থেকেই নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল একই পথে হেঁটেছে। আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার একই ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ দেশটি স্বাধীন করেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। একটি নির্বাচনের ফল মেনে না নেয়াকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সে দেশের মানুষ এখন ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলছে। যে দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছাড়া জনপ্রতিনিধির নাম জানতে পারছে। আরো দুর্ভাগ্য, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সে দলটি, যে দলটি স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বৈরশাসনের এই তকমা ক্ষমতাসীনদের কারণে জাতি হিসেবে এ দেশের মানুষের জন্য লজ্জার।

  • নয়াদিগন্ত/২৮ মার্চ ২০১৮

২০১৮ সাল, নেতৃত্ব এবং পরিবর্তন

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম


বাংলাদেশের মানুষ, সব রাজনৈতিক দলের মানুষ, বিশ্বাস করে যে, ভারতের কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এবং ভারতীয় বুদ্ধি পরামর্শেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীগুলো সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। অতএব আমি মনে করি, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানুষকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব নেতাদের। জনগণের দায়িত্ব নেতা বেছে নেয়ার। এটা হচ্ছে পারস্পরিকভাবে অনুঘটকের ভূমিকা।

স্বাধীনতা অর্জন, রক্ষা এবং ২৬ মার্চ

স্বাধীনতার মাস মার্চ মাস। এই মাসের অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি হলো, স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট, স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মহানায়ক-নায়ক-খলনায়কদের কর্ম বিশ্লেষণ, স্বাধীনতার বর্তমান অবস্থা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা। বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম। অতএব তাদের উপকারার্থেই এ ধরনের আলাপ-আলোচনা বেশি বেশি প্রয়োজন। দেশবাসী সেই প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। টেলিভিশনগুলো মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা উপস্থাপন করে। পত্রিকাগুলো সারা মাসব্যাপী প্রত্যেক দিন প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯৭১-এর কোনো না কোনো স্মৃতি রোমন্থন করে। ২৫ ও ২৬ মার্চ উপলক্ষে টেলিভিশন এবং পত্রিকাগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা বা রচনা উপস্থাপন করেছে।

মুক্তিযোদ্ধাগণ যারা এখনো বেঁচে আছেন এবং সক্ষম, তারা ফেসবুকে তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন স্কুল কলেজে ২৫-২৬ তারিখে বা তার আগেও দু-একদিন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সবই ভালো। ভালোর মধ্যে শুধু একটি ‘কিন্তু’ আছে। কিন্তুটি হলো, লেখক বা উপস্থাপক বা আলোচকের দৃষ্টিভঙ্গি তথা তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। আক্ষরিক অর্থেই নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গিতে, রাজনীতিনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো কিছু বলা বা লিখা বা উপস্থাপন করা কঠিন ব্যাপার; কঠিন ব্যাপার হলেও কেউ-না-কেউ এরূপ করার চেষ্টা করেছেন এবং করেই চলছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্পষ্ট আঙ্গিক আছে। প্রথম আঙ্গিকটি হলো, মুক্তিযুদ্ধের অনেক বছর আগে থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু পর্যন্ত সময়ের রাজনৈতিক আঙ্গিক। দ্বিতীয় আঙ্গিকটি হলো, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের রাজনৈতিক আঙ্গিক। তৃতীয় আঙ্গিকটি হলো, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের কর্মগুলো, যুদ্ধগুলো, ত্যাগগুলো, আত্মত্যাগগুলো। যত কিছুই বলি সব ত্যাগের নির্যাস ছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশ স্থাপন করা। স্বাধীন বাংলাদেশ স্থাপনের পর সবার আগ্রহ ও চেষ্টার নির্যাস হলো সেই অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা, অর্থবহ রাখা। এই প্রেক্ষাপটেই ২০১৮ সাল গুরুত্বপূর্ণ।

১৯ মার্চ ১৯৭১ : তখন ছিল ঐক্য, এখন আছে বিভাজন 

আমি ব্যক্তিগতভাবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমান গাজীপুর জেলার সদর দফতর যেখানে অবস্থিত, সেই ভাওয়াল রাজাদের আবাস ভবনে স্থিত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কনিষ্ঠতম অফিসার এবং কনিষ্ঠতম বাঙালি অফিসার ছিলাম। এখন ওই স্থানটি গাজীপুর জেলা সদর বলে পরিচিত। ১৯৭১ সালে এটা জয়দেবপুর থানা সদর বলে পরিচিত ছিল। আমাদের জন্য তথা দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্য, মুক্তিযুদ্ধ ১৯ মার্চ ১৯৭১ ধরা দেয়। আজ (২৮ মার্চ) থেকে ৯ দিন আগে সোমবার ১৯ মার্চ ২০১৮ সেই গাজীপুর জেলা সদরে ১৯ মার্চ-এর ঘটনার স্মরণে, স্থানীয় স্টেডিয়ামে বিরাট জনসমাগম হয় এবং আলোচনা সভা হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগপন্থী সাবেক এমপি মেজর জেনারেল অব: কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম ব্যতীত, ১৯ মার্চ ১৯৭১-এর সঙ্গে জড়িত অন্য কোনো সেনাবাহিনীর অফিসার বা সৈনিক এবং যেই সব জ্যেষ্ঠ জননেতা এখন আওয়ামী লীগ করেন না, তাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় এবং নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ; সেই মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের অংশগ্রহণকারীরাও গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সব মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানানো এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির সাথে জড়িত রাখা, সরকারের দায়িত্ব।

কথাগুলো বললাম এ জন্য যে, বাংলাদেশকে এখন এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তৃতীয় পক্ষ থাকার জায়গা নেই, যেখানে কোনো মধ্যম পক্ষ থাকার জায়গা নেই। এই বিভাজনটি বর্তমান বাংলাদেশ শাসনকারী রাজনৈতিক দলটিই করেছে। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলেও, পারিনি এবং পারার কোনো লক্ষণ এখনও দেখছি না। এরূপ পরিস্থিতির কাছে আমরা সবাই জিম্মি।

মুক্তিযুদ্ধ ছিল সবার, স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্বও সবার 

উপরের দু’টি অনুচ্ছেদের আলোচনা কেন করলাম? আলোচনাটি করলাম এ জন্য যে, সম্মানিত পাঠকের কাছে আমার মনের আকুতি যেন স্পষ্ট হয়। আকুতিটি হলো : মুক্তিযুদ্ধ ছিল সবার, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় হলো সবার, বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা হলো সবার এবং সেই স্বাধীনতার রক্ষার দায়িত্বও সবার। আমরা মনে করি, সবার শব্দটি বলতে সব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা শামিল, রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরের কোটি কোটি জনতা শামিল, সব ধরনের ছাত্র, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, পেশাজীবী সবাই শামিল তথা এটা সবারই দায়িত্বের আওতায় পড়ে। অতএব যদি স্বাধীনতার ওপর হুমকি আসতে পারে এমন কিছু মনে হয়, অথবা অর্থবহ-স্বাধীনতার অর্থকে যদি কেউ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে, তাহলে অবশ্যই আমাদের সাবধান সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। সেই সাবধানতা, সেই সচেতনতা এবং সেই উচ্চারণ প্রকাশের কোনো অলঙ্ঘনীয় সময়সূচি নেই কিন্তু নির্বাচনের বছরে সময়টি যে তুলনামূলকভাবে উত্তম ও প্রয়োজনীয় এতেও কোনো সন্দেহ নেই। তাই বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে নিয়ে আজ বুধবার ২৮ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত, মোট ছয়টি বুধবারে ৬ কলাম উপস্থাপন করলাম। সম্মানিত পাঠকদের কাছে ইতোমধ্যে নিবেদন করেছি, যেন কলামগুলো ধারাবাহিকভাবে পড়েন। এই পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আরকাইভসে প্রবেশ করে পড়া যাবে অথবা আমার নামের ওয়েবসাইটে (www.generalibrahim.com.bd) প্রবেশ করে পড়া যাবে।

২০১৮ সালের গুরুত্বের আঙ্গিকগুলো

আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিতে ২০১৮ সালটি বাংলাদেশের জন্য একাধিক আঙ্গিকের দ্বন্দ্বের বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত। ওই দ্বন্দ্বগুলোর সাথে অবশ্যই আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে পড়ে না এমন অনেক কিছুই জড়িত বা সংশ্লিষ্ট। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি মাত্র আঙ্গিক উল্লেখ করছি। এক. আন্তর্জাতিক রাজনীতি তথা পৃথিবীর পরাশক্তিগুলোর রাজনীতিতে ছোট দেশগুলোর ভূমিকা (ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স) জড়িত; দুই. আঞ্চলিক রাজনীতি তথা দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নামক ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলে আঞ্চলিক সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর (রিজিওনাল পলিটিক্স) জড়িত; তিন. আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব (কালচারাল কনফ্লিক্ট) জড়িত। অতএব, বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে বা বাংলাদেশের কোন দিকে যাওয়া উচিত বা বাংলাদেশকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সন্ধান করা সব সচেতন নাগরিকের জন্যই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ওই মর্মেই বা ওই প্রেক্ষাপটেই গত পাঁচ বুধবারের পাঁচটি কলাম এবং আজকের কলামটি (শেষ) লিখলাম। এই অনুচ্ছেদে যেই তিনটি আঙ্গিক উল্লেখ করলাম, তার সম্পূরক কিছু বক্তব্য নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে উপস্থাপন করলাম।

চীন ও রোহিঙ্গা সমস্যা

আমরা বাংলাদেশ প্রতিদিন নামক বিখ্যাত দৈনিকের বৃহস্পতিবার ২২ মার্চ ২০১৮ প্রথম পৃষ্ঠার দিকে দৃষ্টিপাত করতে চাই। সেখানে বাংলাদেশে নবাগত চীনা রাষ্ট্রদূত তার আগের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে যা যা বলেছিলেন, সেখান থেকে, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি আলাদাভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওই খবরটি হুবহু উদ্ধৃত করছি। উদ্ধৃতি শুরু। ‘রোহিঙ্গা সমস্যার আশু সমাধান হবে না। ঢাকায় চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেছেন, ঐতিহাসিক, জাতিগত ও ধর্মীয় সব বিষয় মিলিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটটি এতটাই জটিল যে, তার আশু কোনো সমাধান নেই। খবর বিডিনিউজের। গতকাল প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট নিয়ে তিনি তার দেশের এ মনোভাবের কথা জানান। নির্বাচনের বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেইজিং গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখছে বলেও চীনের প্রতিনিধি জানান। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিতে নজর রাখার কথা জানান চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের অবস্থান সম্পর্কে জানি, আপনাদের উদ্বেগও বুঝি।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে এর একটি সমাধান খুঁজে নেবে। রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে চীনের কোনো স্বার্থ নেই। ঢাকায় চীনের দূতাবাসে দোভাষীর মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যেন সমস্যার সমাধান করতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করছে তার দেশ। এ প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, তবে আমরা দেখছি যে, রাখাইন রাজ্যের সমস্যা সমাধানের আশু কোনো উপায় নেই; কারণ এটি একটি জটিল সমস্যা; ঐতিহাসিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় বিষয় এতে জড়িত। উদ্ধৃতি শেষ।

এ পর্যায়ে কলাম লেখক সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মন্তব্য : মাননীয় রাষ্ট্রদূত যেটা বলেননি, সম্ভবত কূটনৈতিক সৌজন্যের কারণেই, যে এতে এক দিকে ভারত ও বাংলাদেশ এবং অপর দিকে চীন ও বাংলাদেশ এই উভয়ের সম্পর্কের সমীকরণ প্রয়োজন। আমি এই অনুচ্ছেদের বক্তব্যের সঙ্গেই (তথা চীন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে) দু’টি পত্রিকার দু’টি ভিন্ন কিন্তু একই রকমের বা একই মর্মের শিরোনাম উদ্ধৃত করছি। শনিবার ১৭ মার্চ ২০১৮ ‘বণিকবার্তা’ নামক বাণিজ্য ও অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার কালো হরফের বড় শিরোনাম ছিল এরূপ- ‘বাংলাদেশে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগগুলো প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে’। বুধবার ২১ মার্চ ২০১৮ সালের বহুল প্রচারিত নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় সবার উপরে বড় কালো রঙের শিরোনাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি; শিরোনামটি ছিল- ‘আবারো আটকে গেল চীনা বিনিয়োগ প্রস্তাব’। আমি, বণিকবার্তার বা নয়া দিগন্তের পূর্ণ দীর্ঘ সংবাদগুলো এখানে উদ্ধৃত করছি না স্থান বাঁচানোর জন্য; পাঠক ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে নিতে পারবেন।

ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং ভারত

শনিবার ২৪ মার্চ ২০১৮ বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর প্রথম পৃষ্ঠার সবার উপরে ডান দিকে প্রকাশিত একটি ছবিসহ সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ওই সংবাদটির উৎস হচ্ছে (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি) প্রখ্যাত চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রকাশিত সংবাদ পুরোটা উদ্ধৃত করলাম না স্থান বাঁচানোর জন্য। চারটি বাক্য উদ্ধৃত করছি। উদ্ধৃতি শুরু। ‘বাংলাদেশের সব সমস্যার জন্য দায়ী হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে। এটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে বিএনপিকে মাশুল দিতে হবে। ভারতকে চিনতে ব্যর্থ হলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ উদ্ধৃতি শেষ। সংবাদের বাকি অংশ সম্মানিত পাঠক ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখে নিতে পারবেন।

ইবরাহিমের মন্তব্য 

চীন এবং ভারত প্রসঙ্গে একাধিক সংবাদ উপরে উদ্ধৃত করলাম। কিছু দিন আগে ভারতীয় দূতাবাস একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল যেখানে বাংলাদেশের অনেক সম্মানিত সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সম্মানিত বাংলাদেশীগণকে বলা হয়, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়, বন্ধুত্ব হবে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে। এরকম একটি ক্লারিফিকেশন বা ব্যাখ্যা দেয়ার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ হলো, বাংলাদেশের মানুষ, সব রাজনৈতিক দলের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ভারতের কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এবং ভারতীয় বুদ্ধি পরামর্শেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীগুলো সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। অতএব আমি মনে করি, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মানুষকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব নেতাদের। জনগণের দায়িত্ব নেতা বেছে নেয়ার। এটা হচ্ছে পারস্পরিকভাবে অনুঘটকের ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে তথা নেতা প্রসঙ্গে নিচের অনুচ্ছেদে অন্য একজনের কথা তুলে ধরলাম।

বাবরের মন্তব্য

প্রখ্যাত কলাম লেখক সালাহউদ্দিন বাবরের লেখা, এই পত্রিকাতেই, ১৯ মার্চ ২০১৮ কলামটির একটি অনুচ্ছেদ এখানে উদ্ধৃত করছি। উদ্ধৃতি শুরু। ‘এমন অবস্থা নিয়ে দেশ চলছে। ষোলো কোটি মানুষের দেশ, হাজারো সমস্যা এখানে। এ থেকে বেরিয়ে আসার লড়াইয়ে পথ দেখাবে কোন সেই সৎ ও সাহসী মানুষ। জনগণ এমন এক নেতৃত্বের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে। আর এ কথা সত্য, এমন সৎ সাহসী মানুষ আকাশ থেকে নামবে না। আমাদের মধ্য থেকেই তারা আসবে। যারা ভালো কাজ করতে চায়, তারা কদাচিৎ যেচে এগিয়ে আসে, তাদের খুঁজে বের করতে হয়। সভ্য সমাজে এই খোঁজার প্রক্রিয়া হচ্ছে নির্বাচন। দেশ এখন সেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার দ্বারপ্রান্তে। নেতৃত্ব বাছাইয়ের... এ পর্যন্ত যারা দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সততা নিষ্ঠা এবং যোগ্যতার বিপুল ঘাটতি ছিল তাদের। তারা ক্ষমতার চর্চা করেছেন। যারা তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীন করেছে, তাদের কল্যাণে তারা মনোযোগী ছিলেন না। আগামীতে এমন... যারা ক্ষমতায় যাবেন, তারা কল্যাণের পথে অগ্রসর হবেন। যারা ভোট দিয়ে নেতা বানিয়েছে তাদের সজাগ থাকতে হবে।’ উদ্ধৃতি শেষ। এখানেও ইবরাহিমের মন্তব্য : নেতা বেছে নেয়ার এই প্রক্রিয়া পৃথিবীব্যাপী অনুসৃত কিন্তু আমাদের দেশের জন্য শতভাগ ফলপ্রসূ নয়। কারণ, আমরা আমাদের দুর্নীতিযুক্ত চিন্তা দিয়ে, আমাদের লোভী মানসিকতা দিয়ে জনগণকে প্রভাবান্বিত করি।

সচেতনতা ও সজাগতা কিভাবে

বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, সেই মালিকানা শুধু পাঁচ বছরে একদিন। অর্থাৎ ভোটের দিন। এটা আমাদের সংবিধান ও রাজনৈতিক রেওয়াজের সীমাবদ্ধতা। যে নিয়মে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন করে, সেখানে শুধু একটিই চাওয়া : অর্থাৎ ভোট দিন। সত্যিকার অর্থে অঙ্গীকারের অভাব থাকে। সেই অঙ্গীকারের অভাব কিভাবে পূরণ করা যায় এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার বিষয়।

পরিবর্তন

আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। অতএব আমার দলের নামটি নিতেই পারি। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জন্মলগ্ন থেকেই যেই নীতিবাক্য বা মটো প্রচারিত আছে সেটা হলো ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’। আমরা বিদ্যমান অবস্থা থেকে পরিবর্তন চাই। কিন্তু বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি বা কোনো একক ব্যক্তি বা অন্য কোনো ক্ষুদ্র দল, এরূপ দেশব্যাপী পরিবর্তন আনতে পারবে না যাদি না দেশের জনগণের পক্ষ থেকে সমর্থন আসে। সমর্থন প্রকাশের রূপ দু’টি। এক হলো দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের সময় ভোট দেয়া। আরেকটি রূপ হলো নির্বাচন ব্যতিরেকেই পছন্দের রাজনৈতিক নেতা বা পছন্দের রাজনৈতিক দলের নীতির প্রতি সমর্থন দেয়া এবং সেই নীতিকে প্রকাশে ও প্রচারে সাহায্য সহযোগিতা করা। প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে; কিন্তু সেগুলো নিয়ে আলোচনা বিপজ্জনক এবং স্পর্শকাতর। একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদাহরণ দিই। চট্টগ্রাম বা ঢাকা মহানগরের যেকোনো এলাকার বড় খাল বা বড় ড্রেন বা যেকোনো নালা যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব সেখানে পলিথিন জমে জমে পাহাড় হয়েছে। এই পলিথিন কোথা থেকে আসে? এগুলো আমরা তথা সমাজের মানুষ ব্যবহার করে ফেলে দিচ্ছি। ফেলছি নালার মধ্যে। একবারও চিন্তা করছি না যে, নালার মধ্য দিয়ে পানি যেতে পারবে না স্তূপ করা পলিথিনের কারণে। অথচ পানি যেতে না পারলে রাস্তায় পানি উঠবে। তখন আমরা সবাই মিলে অন্যকে দোষ দিতে থাকব। আমরা কেউই বলি না বা বলতে চাই না যে, পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। অর্থাৎ পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি মানে চিন্তাচেতনায় এবং কর্মপন্থা বাস্তবায়নের পদ্ধতিগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন।

এ বছর ২০১৮ সাল, যদি নির্বাচন হয় তাহলে আমাদের চেষ্টা করা উচিত, পরিবর্তনের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। যদি আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি তাহলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। পরিবর্তন করার জন্য আমার পক্ষ থেকে যেসব চিন্তাভাবনা সেগুলো আমি মাঝেমধ্যেই পত্রিকার কলামে উপস্থাপন করি তথা লেখার মাধ্যমে প্রতিফলন করি। কিন্তু এর পরের ধাপের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য সমাজের সচেতন অংশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন; আমি সেটা কামনা করি। মাত্র দু’দিন আগে স্বাধীনতা দিবস গেল; মাত্র পনেরো দিন আগে জাতিসঙ্ঘ থেকে সুপারিশপত্র পাওয়া গেল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রমোশন পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া বাংলাদেশ শুরু করতে পারে; শুক্রবার ২৩ মার্চ, বিবিসি প্রকাশ করল একটা গবেষণা রিপোর্ট, যেখানে বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেখানেও নিচের দিক থেকে পাঁচটির মধ্যে অবস্থানে আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। সব ধর্মের মূল্যবোধের পুনঃস্থাপন প্রয়োজন; মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সঠিক স্থানে পুনরুদ্ধার প্রয়োজন এবং সর্বোপরি বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব স্থাপন প্রয়োজন।

পাঠক প্রসঙ্গে সংখ্যা তত্ত্ব এবং আমার আবেদন

পাঠক সম্প্রদায়ের কাছে আমার একটি আবেদন আছে। প্রথম আবেদনটি মুদ্রিত কপি বা হার্ড কপির পাঠকদের কাছে। দ্বিতীয় আবেদনটি অনলাইনে যারা পড়েন সেসব পাঠকের কাছে। পাঠক সংখ্যার বিষয়টি আমার অনুমাননির্ভর। নয়া দিগন্তের মুদ্রিত বা হার্ড কপির সার্কুলেশন আড়াই লাখের মধ্যে সর্বাধিক এক লাখ এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার পাঠক কলামটি পড়বেন। যারা কলামটি পড়লেন তাদের মধ্যে আনুমানিক চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ সর্বনিম্ন তেরো হাজার এবং সর্বাধিক পঁচিশ হাজার এটা নিয়ে চিন্তা করবেন। যারা চিন্তা করবেন তাদের মধ্যে প্রতি দশজনে একজন অর্থাৎ আনুমানিক এক থেকে দেড় হাজার ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করবেন। তাহলে মুদ্রিত কপির পাঠকদের মধ্য থেকে ওই এক থেকে দেড় হাজার গভীরভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তির কাছে আবেদন : আপনারা মেহেরবানি করে মতবিনিময় করুন। আপনাদের চিন্তাটি সমাজের অন্যদের সাথে শেয়ার বা বিনিময় করুন।

এবার অনলাইন পাঠকদের কাছে আবেদন। ধরে নিচ্ছি পঞ্চাশ লাখ ব্যক্তি নয়া দিগন্ত অনলাইনে পড়েন। প্রতি পাঁচজনে একজন অর্থাৎ আনুমানিক ১০ লাখ পাঠক সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় গমন করেন। যারা সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় যান তাদের মধ্যে আনুমানিক প্রতি পাঁচজনে একজন (অর্থাৎ দুই লাখের মতো ব্যক্তি) আমার কলামটি পড়ার উদ্যোগ নেবেন। যারা কলামটি পড়ার উদ্যোগ নেবেন, তাদের মধ্যে এক লাখ সিরিয়াসলি পড়বেন বলে মনে করি। যারা সিরিয়াসলি পড়লেন, তাদের কাছে আমার আবেদন, মেহেরবানি করে আপনার চিন্তা ও উপলব্ধিটি সমাজের সচেতন অংশের সাথে বিনিময় করুন। আমার চিন্তা বা আমার বক্তব্য, আপনাদের চিন্তা ও বক্তব্যের সম্পূরক।

আমার চিন্তা ও বক্তব্য কোনোমতেই নির্ভুল বা অলঙ্ঘনীয় বা ত্রুটিমুক্ত নয়। আমার এবং আপনাদের চিন্তার মিলিত স্রোত, পাঠক সম্প্রদায়ের পরিচিত মহলের কাছে পৌঁছাক। তাহলেই ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে শুরু করে ২৮ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত ছয়টি কলাম লিখতে গিয়ে যেই পরিশ্রম হলো সেটি কিছুটা স্বার্থক হবে; সেই ছয়টি কলাম সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ যেই সৌজন্য দেখিয়েছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সৌজন্য ও ত্যাগেরও কিছুটা মূল্যায়ন হবে এবং সর্বোপরি আমাদের সবার সম্মিলিত লেখা এবং পড়ার পরিশ্রমের বিনিময়ে মহান আল্লাহ যেন আমাদের মনের আর্জি কবুল করেন তার একটি অবকাশ সৃষ্টি হবে। আগামী দু’টি বুধবার কলাম লিখতে পারব না, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করে স্বাধীনতা দিবসের বিলম্বিত অভিনন্দন পাঠককে জানিয়ে কলাম শেষ করছি। 

  • Noyadigonto/march 28,2018
  • লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি 

Nine banks suffer Tk 194.67b capital shortfall in 2017

Two new ones grace the list of capital-deficient banks last calendar year to push up the shortage


Siddique Islam


Nine banks, six owned by government, suffered an aggregate capital shortfall worth over Tk 194.67 billion in the last calendar year mainly as their swelling classified loans took a toll.

Sources in the banking circles indicated a worrying feature of the syndrome as two more banks hit the list of capital-deficient ones during the third quarter of 2017.

The nine banks-four state-owned commercial banks (SoCBs) out of total six, three of 40 private commercial banks (PCBs) and two specialised banks (SBs)--were put on the list of capital-deficient ones, according to the central bank officials.

Of the two latest entrants, one is a SoCB and another one fourth-generation PCB.

In 2016, seven banks were suffering from capital shortfall worth Tk 153.04 billion.

The overall capital shortfall of the four SoCBs rose to Tk 88.53 billion as on December 31 last year from Tk 76.26 billion three months before.

However, the capital shortage of two specialized banks (SBs) stood at nearly Tk 85.90 billion in the fourth quarter (Q4) of 2017 in a rise from Tk 82.83 billion as on September 30, 2017.

The capital shortfalls of three PCBs amounted to Tk 20.24 billion in the Q4 from Tk 17.91 billion in the Q3 of 2017.

"The banks had kept aside more money from their capital for maintaining provisioning requirements against their classified loans," a senior official of the Bangladesh Bank (BB) told the FE while explaining the capital shortages of the banks.

Overall shortfall in provision against both classified and unclassified loans in the country's banking system jumped by nearly 24 per cent or Tk 12.97 billion in the last calendar year.

Nine banks out of 57 failed to keep requisite provisions against loans, particularly classified ones, in 2017 following higher classified loans along with conditional rescheduling of credits.

The volume of non-performing loans (NPLs) in the country's banking system jumped by 19.51 per cent or Tk 121.31 billion in the last calendar year despite close monitoring by the central bank.

The amount rose to Tk 743.03 billion as on December 31 last year from Tk 621.72 billion on the same day of the previous year, the BB data showed.

On the other hand, the overall capital-to-risk weighted-asset ratio (CRAR) of all banks rose to 10.83 per cent in the final quarter of 2017 from 10.65 per cent three month before following lower trend of NPLs, the central banker added.

He also said stronger recovery drives by the commercial banks and the rescheduling of loans pushed down the NPLs in the final quarter of 2017.

During the October-December period of 2017, the classified loans dropped by more than 7.0 per cent or Tk 60.04 billion to Tk 743.03 billion from Tk 803.07 billion in the Q3.

All PCBs' CRAR was found, on average, 12.52 per cent as on December 31 last while the CRAR of nine foreign commercial banks stood at 24.90 per cent.

However, the capital position of public banks is still a matter of grave concern, the BB official noted.

The CRAR of six SoCBs stood at 5.04 per cent as on December 31 last calendar while the CRAR of two SBs was in the negative territory at 35.45 per cent, the BB data showed.

However, the total regulatory capital of all banks rose to Tk 945.61 billion during October-December from Tk 901.01 billion three months ago.

Bangladesh started implementing the Basel-III standard for calculation of CRAR of all banks in Q1 of 2015 for consolidating stability in the banking sector.

Under a roadmap to comply with the Basel-III, the banks will have to maintain 11.875 per cent of CRAR in 2018. Finally in 2019, it will hit the desired level of 12.50 per cent.

Basel-III is a new global regulatory standard on banks' capital adequacy and liquidity as agreed by the members of the Basel Committee on Banking Supervision.

The third of the Basel Accords was developed in response to deficiencies in financial regulation revealed by the financial crisis of the late 2000s.

The Basel-III is set to strengthen bank capital requirements and introduce new regulatory requirements on bank liquidity and bank leverage.

  •  Courtesy: The Financial Express Mar 28, 2018


সম্পাদকীয়- জিডিপিকেন্দ্রিক উন্নয়ন

আনু মুহাম্মদ


বাংলাদেশে গত এক দশকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো হচ্ছে। এ ধারায় জাতিসংঘের তালিকাবিন্যাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করেছে। এ শর্তপূরণকারী দেশ ও দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে আরো আছে লাওস এবং মিয়ানমার। তিনটি দেশকেই আরো কয়েক বছর পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য। অবশ্য এদিক থেকে আরো এগিয়ে আছে ভুটান, কিরিবাতি সাওতোম ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। তারা এরই মধ্যে সব শর্ত পূরণ করে অর্থাৎ জাতীয় আয় ও শিক্ষা-চিকিৎসার শর্ত পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ থেকে বের হওয়ার এবং উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করেছে।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন বার্ষিক ১ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মাথাপিছু আয় ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারও বেশ ভালো। তবে তার পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে সেখানকার অর্থনীতিবিদরা অনেক প্রশ্ন তুলছেন, বিতর্ক হচ্ছে। তার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যেও এ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হচ্ছে। ডাটার গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্ত, পরিসংখ্যান, হিসাব-নিকাশ, প্রবৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ অনেক বেশি থাকলেও বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই, কোনো বিতর্ক নেই। সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে মেলে না এ রকম যুক্তি, তথ্য, প্রশ্ন আর বিতর্ক সরকার পছন্দ করে না বলে প্রায় সব অর্থনীতিবিদ, থিংক ট্যাংক, মিডিয়াও বিনা প্রশ্নে সব গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। জিডিপি উচ্ছ্বাসে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অনেক জরুরি প্রশ্ন।

যা-ই হোক, কতটা এবং কীভাবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্নের অবকাশ থাকলেও জাতীয় আয় যে বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো দেশের অর্থনীতিকে জিডিপি/জিএনপি দিয়ে পরিমাপ করায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফই প্রধান পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাংকই সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকে। এগুলো হলো: ১. নিম্ন আয়ভুক্ত দেশ (মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত) ২. নিম্নমধ্যম আয়ভুক্ত দেশ (১ হাজার ২৬ মার্কিন ডলার থেকে ৪ হাজার ৩৫ ডলার) ৩. উচ্চমধ্যম আয় (৪ হাজার ৩৬ মার্কিন ডলার থেকে ১২ হাজার ৪৭৫ ডলার) ৩. উচ্চ আয়ভুক্ত দেশ (১২ হাজার ৪৭৬ মার্কিন ডলার থেকে বেশি)।

সে হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক গড় আয় মাথাপিছু ১ হাজার ২৫ ডলার অতিক্রম করায় বাংলাদেশ ২০১৩ সাল থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের নিম্ন আয়ভুক্ত দেশের তালিকা থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের তালিকায় প্রবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিয়মকানুন অনুযায়ী সুবিধা-অসুবিধার কিছু পরিবর্তন হবে। যেমন— নিম্ন আয়ভুক্ত দেশগুলোর জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিশেষ সুবিধা আর পাবে না। এছাড়া স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার বিবেচনার মধ্যেও বাংলাদেশ আর থাকতে পারবে না।

ভারতের অর্থনীতির ভিত বাংলাদেশের চেয়ে শক্ত হলেও গতি-প্রকৃতিতে অভিন্নতা আছে। সে দেশে মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ১ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয় জনগণের আয় দৈনিক ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারেরও নিচে (বৈশ্বিকভাবে গৃহীত দারিদ্র্য সূচক) বা ১০০ রুপির নিচে, যদিও তাদের জাতীয় গড় মাথাপিছু আয় বছরে ১ লাখ রুপি বা দিনে ২৫৫ রুপি।

একটি দেশে জিডিপি অনেক বেশি হলেও টেকসই উন্নয়ন দুর্বল হতে পারে। মাথাপিছু আয় বেশি হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন হতে পারে। এ বিষয়ে অমর্ত্য সেন অনেক কাজ করেছেন। ভারতের ভেতরেই রাজ্য থেকে রাজ্যের তফাত দেখিয়েছেন। আফ্রিকার বহু দেশে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, মধ্যম আয়ের বিবরণে তারা বাংলাদেশ থেকে অনেক আগে থেকেই এগিয়ে, কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্ন। মিয়ানমারে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের সমান, মানে তারাও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। মিয়ানমারও একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। নাইজেরিয়ার মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ ভালো, এটা বলা যাবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং আরো খারাপ। সেজন্য মানব উন্নয়ন সূচকে নাইজেরিয়া বাংলাদেশেরও পেছনে।   

সেজন্য মাথাপিছু আয় দিয়ে একটি দেশের আর্থিক লেনদেন বা বাণিজ্যিক উৎপাদন, বিতরণ, পরিষেবার বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কিন্তু তা দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা যায় না। যে সমাজে বৈষম্য বেশি, সেখানে গড় আয়ের হিসাব বরং বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। একটি পরিবার যদি ১০ লাখ টাকা আয় করে, পাশাপাশি অন্য একটি পরিবার যদি ১০ হাজার টাকা আয় করে, তাহলে উভয় পরিবারের গড় আয় হবে ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। এতে কি দুই পরিবারের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায়? বর্তমান মাথাপিছু আয় হিসাবে আমাদের দেশে চার সদস্যের পরিবারের বার্ষিক গড় আয় হয় প্রায় ৬ দশমিক ৫ হাজার মার্কিন ডলার, অর্থাৎ মাসে প্রায় ৫২ হাজার টাকা। তার মানে বাংলাদেশের সব নাগরিক— শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবারই মাথাপিছু আয় মাসে এখন প্রায় ১৩ হাজার টাকা। অথচ সরকারি পরিসংখ্যান বলে, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষের মাসিক আয় এর থেকে অনেক নিচে।

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় যত, ৮০ শতাংশ মানুষ পায় তার মাত্র ৩০ শতাংশ। জাতীয় আয়ের বিন্যাসে ৫ শতাংশের হাতে ২৭ শতাংশ। এ হিসাবে চোরাই টাকার হিসাব ধরা হয়নি, যারা লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে, তাদের সম্পদের বড় অংশ এ হিসাবে নেই। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে জিডিপি ফুলেফেঁপে উঠলেও মানুষের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। সেজন্য গত সাত বছরের পরিসংখ্যানে আমরা দেখছি মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু কার্যত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রশ্ন, আমার আয় কোথায় গেল? শিক্ষিত বেকারদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে, আমার কাজ আমার আয় কোথায় গেল?

বস্তুত, বাংলাদেশের জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান হচ্ছে প্রবাসী আয়ের। এছাড়া আছে গার্মেন্টস ও কৃষি। অথচ এ তিন ক্ষেত্রে যুক্ত শ্রমজীবী মানুষের আয় এবং জীবনের নিরাপত্তা দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ, অনিশ্চিত। চোরাই অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিমূলক  তত্পরতায় জিডিপি বাড়ে কিন্তু সমাজের বড় একটা অংশের জীবন-জীবিকা বিপদগ্রস্ত হয়। নদী-নালা, খাল-বিল, বন দখল ও ধ্বংসের মাধ্যমেও জিডিপি বাড়তে পারে কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে না; বরং অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। এসব তত্পরতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পায় না; বরং জীবনমান বিপর্যস্ত হয়। দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও তার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও বড় দেখায়, জিডিপির অংকও বাড়ে। একই সময়ে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ কমে এসেছে এর ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। কিন্তু এ ব্যয় বৃদ্ধি আবার জিডিপি বাড়ায়। 

জিডিপি/জিএনআই ও মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিমাপ করা নিয়ে মূলধারার অর্থশাস্ত্রেও এখন সংশয় ও প্রশ্ন ক্রমেই বাড়ছে। সেজন্য মানব উন্নয়ন সূচক (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স), টেকসই উন্নয়ন পরিমাপ করার জন্য প্রকৃত উন্নতি নির্দেশক  (জেনুইন প্রগ্রেস ইন্ডিকেটর), মোট জাতীয় সুখ (গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস) ইত্যাদি বহু পথ ও পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে এ বিষয়ে উদ্যোগ দেখা যায়। তথাকথিত অনুন্নত দেশ হলেও ভুটান মাথাপিছু জাতীয় আয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে, আইএমএফের বৈশ্বিক রিপোর্টে বাংলাদেশে যখন মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২০০ ডলার অতিক্রম করেছে, তখনই ভুটানে মাথাপিছু আয় তার দ্বিগুণেরও বেশি, আড়াই হাজার ডলার। তার পরও ভুটান মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে সীমাহীন উচ্ছ্বাসে গা ভাসায়নি, বরং এ হিসাব পদ্ধতিকেই প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্বকে দেয়া তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে মোট নয়টি ক্ষেত্র বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়— মানসিক ভালো থাকা, সময়ের ব্যবহার, সম্প্রদায়, জীবনীশক্তি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিস্থাপকতা, জীবনযাত্রার মান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশাসন। এছাড়া এসব ক্ষেত্রের সঙ্গে মাথাপিছু আয়সহ ৩৩টি নির্দেশক আছে। অন্যান্য নির্দেশক হলো— নিরাপত্তা, সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক, সাক্ষরতা, বাস্তুতান্ত্রিক বিষয় এবং ঘুম ও কাজে ব্যয়কৃত সময়।

শুধু পরিমাণগত দিক ঊর্ধ্বে তুলে ধরায় অনেক গুণগত দিক আড়াল করা সম্ভব। এটি করপোরেট শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অর্থশাস্ত্রের জন্য সুবিধাজনক। বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গৃহীত বৃহৎ প্রকল্পে ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি, আর্থিক খাত থেকে অভাবনীয় মাত্রায় লুণ্ঠন ও পাচার অব্যাহত থাকার কারণে জিডিপি বাড়ছে, আবার এজন্যই সরকারকে আরো বেশি বেশি আয়ের উৎস খুঁজতে হচ্ছে। যেহেতু চোরাই কোটিপতিদের থেকে কর আদায়ে সরকার অনিচ্ছুক, সেহেতু সহজ পথ জনগণের ঘাড়ে বোঝা চাপানো। সেজন্যই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমলেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি, সেজন্যই ভ্যাট অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে বিস্তৃতভাবে। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরভাড়া, গাড়িভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বেশি দিতে হবে। জিনিসপত্র  কিনতে হবে আরো বেশি দামে। নিত্যব্যবহার্য সব পণ্যেই মানুষকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। বন-নদীবিনাশী তত্পরতা চলবে।

বিভিন্ন প্রকল্পের ধরনের কারণেই দেশে ঋণ ও কর বৃদ্ধি পেলেও জনগণের নিরাপত্তাহীনতা কমবে না; বরং তার ওপর উন্নয়নের নামে সন্ত্রাস বাড়বে। সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেবে না। কারণ জনগণের কাছে তার কোনো দায় নেই। আলোচনাও তেমন হবে না, কেননা স্তুতিগান ছাড়া সংসদসহ নানা প্রতিষ্ঠানের আর কোনো ভূমিকা নেই। আমাদের খুশি থাকতে হবে, কারণ সরকারি প্রচারণা বলতে থাকবে— আমাদের জিডিপি বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পথে প্রবেশ করেছে!

  • বনিকবার্তা/মার্চ ২৮,২০১৮
  • লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Govt must punish errant officials in TB control fund theft

Editorial


A PORTION of the money, a small amount though, that the Geneva-based Global Fund gave to the National Tuberculosis Control Programme of Bangladesh coming to have been embezzled is unpalatable. A report of the Global Fund in January says that the health ministry officials misappropriated at least Tk 9.2 million out of 2.64 billion that the organisation gave to the National Tuberculosis Control Programme.

The Global Fund report says that an unspecified number of officials working on the tuberculosis control programme pocketed the money by submitting false documents related to training-related expenses. An investigation done in Bangladesh by the Global Fund’s Office of the Inspector General in 2016 shows that tenders floated for the procurement of medical equipment worth about Tk 25 million had bidders that were non-existent. The investigation was triggered by audit findings in 2011 which made the Global Fund Secretariat cut down on the allocation for Bangladesh in 2014–2016. The incidents of misappropriation took place between July 2015 and September 2016 in gross violation of the government’s procurement rules and protocols. A further audit in 2017 notes that financial controls of the National Tuberculosis Control Programme has not improved since the 2011 audit.

Bangladesh, which is said to have a tuberculosis prevalence rate of 434 per 1,00,000 people, lags behind in tuberculosis control in that it ranks the sixth worldwide in the absolute number of tuberculosis cases while it is among the 22 high tuberculosis-burden countries and among the 30 high multi-drug resistant tuberculosis-burden countries. With the management of the disease remaining poor, there are other issues that the government has left ignored. The diagnosis rate of tuberculosis is far from what it should be. A large number of tuberculosis patients becoming multi-drug resistant primarily because of irregular medication also paints a bleak picture. Childhood tuberculosis still remains a cause of concern.

As statistics show, 10,062 child tuberculosis patients account for 4.32 per cent of the country’s total tuberculosis patients. While the age of the child tuberculosis patients vary within the range of 0 and 14 years, the disease is not diagnosed in at least 10 per cent of the child tuberculosis patients. In a situation like this, while Bangladesh should put in more efforts to improve the screening of the population for the disease, despite services being offered free in hospitals at the upazila and district level and even in clinics run by no-governmental organisations, such misappropriation of fund is unacceptable.

The Global Fund report holds the then tuberculosis control programme line director and manager for procurements responsible for the irregularities as they endorsed all the statements of expenditures. The government has already instituted an investigation committee. Yet it seems to remain complacent after transferring a statistical officer, a photocopy machine operator, personal secretary to the line director and another member on the staff. The government must hold to account the people who are responsible for the misappropriation so that the tuberculosis control programme does not come to be affected.

  • Courtesy: New Age Mar 28, 2018

AL men demolish minority right group leader’s house in city



Local Awami League activists demolished the under construction tin-sheds of a rights activist at Kalunagar under Kamrangirchar in the capital and looted valuables and construction materials from there early Sunday.

The victim, Rabindra Ghosh, president of Bangladesh Minority Watch, said that the attack was launched to grab his land and as he declined to pay the amount demanded by the attackers.



 
Rabindra, now residing at RK Mission Road in the city, said that he bought two kathas of land at Kalunagar Mouja under Kamrangirchar in 2010 and local influential had several times threatened him to evict from the land.

‘On Sunday, sometimes after 1:00am’, he alleged, ‘the attackers attacked the under construction buildings, demolished them, beat up the workers staying there, took away their mobile phones, cash money, construction materials, tins and timbers from the house.’

He said he was not on the spot then.

‘Those who attacked and destroyed my building are ruling Awami League men,’ he said.

He alleged that he began construction works on his land in the first week of March and erected two tin-shed buildings.

Rabindra’s wife Krishna Ghosh lodged a case with Kamrangirchar Police Station on March 25 naming seven local people and 50 to 60 unidentified others for the attack, destruction and looting.

The accused named in the case are Md Lokman, Md Shahidullah, Md Jinu, Siraj, Ismail, Maksudur Rahman and Md Siraj, all residents of Kamrangirchar.

Kamrangirchar Police Station officer-in-charge Shahin Fakir told New Age that they arrested Md Siraj. ‘Drive is on to arrest others.’

National Human Rights Commission chairman Kazi Reazul Hoque expressed his concern and condemned the attack.

One of the accused, Ismail, told New Age that Rabindra’s wife Krishna lodged case against Awami League men and claimed that he was not involved in the attack or demanding toll.

Local ward councillor Nure Alam, also vice-president of Kamrangirchar thana AL, told New Age that Rabindra had been constructing tin sheds grabbing and filling a canal. ‘Local people resisted it and foiled his illegal activities.’

- Mar 28,2018

Tuesday, March 27, 2018

সরকারি কাজে ১২ আনাই ফাঁকি



সম্পাদকের নোট - 

বাংলা দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এ রোববার, মার্চ ২৫, প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সরকারি রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব নির্মাণেই ব্যাপক দুর্নীতির তথ্যচিত্র উঠে এসেছে। বরাদ্ধের পুরো অর্থই অপচয় হচ্ছে। কাজের কোন মান রক্ষা করা হচ্ছে না। নতুন নির্মিত ভবনগুলো ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। রাস্তার কাজ করার পরই আবার তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বসে যাচ্ছে। জনগণের কষ্টের উপার্জন থেকে আদায় করা ট্যাক্সের টাকা বা বিদেশ থেকে আনা ঋণের টাকা এই ভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে। দুর্নীতির এই মহামারির দায়ভার কে নিবে অথবা এর শেষ কোথায়? 


বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টের পূর্ণপাঠ নিচে দেয়া হলো - 

সরকারি কাজে বারো আনাই ফাঁকিবাজি। কোথাও কোথাও ষোল আনাই ফাঁকি। সরকারি বিদ্যালয় কিংবা কলেজের ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। সরকারি ভবন ও সড়ক নির্মাণে ষোল আনা কাজের বাস্তবায়নে মনোযোগও নেই ঠিকাদারদের।

আগ্রহ শুধু কাজ পাওয়া ও বিল তোলায়। সরকারি অফিস ম্যানেজ করে নানারকম চাঁদা দিয়ে কাজ পাওয়ার পর সেই কাজের আর মানও থাকে না। এ কারণে যে সড়ক এক বছর স্বাভাবিক থাকার কথা তা তিন মাসও টেকে না। যে সরকারি ভবন ৫০ বছর স্থায়ী হওয়ার কথা, পাঁচ বছর না যেতেই তাতে ফাটল ধরে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় যন্ত্রাদি সরবরাহেও ফাঁকিবাজি বারো আনা।

শুধু উন্নয়ন কাজ নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সরবরাহের ক্ষেত্রে ফাঁকিবাজি এখন চরমে। দুদক এখানেও কাজ করছে অসংগতি দূর করতে। এ গেল উন্নয়ন কাজের মানের কথা। কাজ শুরুর আগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতারও যেন সীমা-পরিসীমা নেই। নানান ঘাট পেরিয়ে আমলাতন্ত্র শেষ হলে, শুরু হয় ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্য। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না কেউই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় বারো মাসই চলে উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ি। অভিজাত এলাকা গুলশানের এক অধিবাসীর আক্ষেপ, ‘গত এক বছরে আমরা উন্নয়ন ভোগান্তিতে রয়েছি। আজ ওয়াসা কাজ করলে, কাল করে ডেসা। কয়েক দিন পর টেলিফোন, তারপর রাজউক। কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন।’ সংকট আরও তীব্র হয়েছে জেলা ও উপজেলাগুলোয়। ভাঙা রাস্তাঘাটে যানবাহনে চড়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলা যেতে একদিকে যেমন সময় ক্ষেপণ হচ্ছে অন্যদিকে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছাচ্ছে চরমে। সড়কপথে কলকাতা থেকে ফিরে এসে এক সাংবাদিক বললেন, বেনাপোল থেকে যশোর সড়ক মানুষের চলাচলের উপযোগী নয়। মনে হয় যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চিত্র। যশোর থেকে খুলনা সড়কও বেহাল। নির্মাণকাজের ফাঁকিবাজির কারণে গ্রামে-গঞ্জে উপযোগিতা হারিয়েছে।

খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রকাশ্যে বলেছেন, এক লাখ কোটি টাকার এডিপি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে দেশের চেহারা বদলে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। নির্মাণের কাজে মান বজায় থাকছে না। রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নিয়ম অনুসারে একটি রাস্তা তৈরির আগে ওই রাস্তার নিচে পানি থাকতে পারবে না। আবার পানি যেন জমতে না পারে সে ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে রাস্তা তৈরির কিছুদিন পর ভেঙে যাচ্ছে। নিয়ম-কানুন না মেনে কাজ করার কারণেই এমনটা হচ্ছে। জানা যায়, সরকারের প্রকল্পগুলোর কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়েছে খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশন। 

সরকারি কাজের মান বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) গত বছরের ২৪টি প্রকল্পের ওপর সমীক্ষা করে তৈরি করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘খুলনার ডুমুরিয়ার একটি সড়ক নির্মাণে ডব্লিউবিএম স্তরে কমপ্যাকশনের জন্য ১০ টনের পরিবর্তে মাত্র ৪ টন রোলার ব্যবহার করতে দেখা গেছে।’ আরও উদাহরণ দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এভাবেই দেশে নিম্নমানের সড়ক নির্মাণ হচ্ছে।’

বাংলাদেশের সাবেক মহানিরীক্ষক ও বর্তমানে দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি কাজের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা সবাই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকছে তাদের সমর্থক বা সমর্থনপুষ্ট ঠিকাদাররাই শুধু টেন্ডার জমা দিচ্ছেন এবং কাজ পাচ্ছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এসব ঠিকাদার এতটাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী যে সরকারি কর্মকর্তারাও তাদের কাজের বিষয়ে কিছু বলতে অনেক সময়ই ভয় পাচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রভাব খাটিয়ে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল তুলে নিচ্ছেন। আর ঠিকাদার একবার বিল পেয়ে গেলে সেই কাজের বিষয়ে তেমন কিছু করার থাকে না।

সরকারি কাজের মান নিয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকারি কাজের ষোল আনার মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বারো আনা ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে চার আনা কাজও হচ্ছে না। আবার কাজই হয়নি কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় হয়েছে সেটাও এ দেশে নতুন কিছু নয়। সেসব ক্ষেত্রে তো ষোল আনাই ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা না হওয়ার সুযোগে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ সড়ক। রাস্তার মান যাচাই বা নিয়ন্ত্রণও হচ্ছে না। সড়কের মান যাচাইয়ের পর সার্টিফিকেট দেওয়ার রেওয়াজও এখানে নেই। রাজনীতির চাপে কাজ দেওয়া হচ্ছে অদক্ষ ও অপেশাদার ঠিকাদারদের। চাহিদা অনুযায়ী রাস্তার ডিজাইনও নিরূপণ করা হচ্ছে না। ইচ্ছামতো নির্মাণসহ সড়কের মেরামত হচ্ছে। তাই সড়কের স্থায়িত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভেঙেচুরে খানখান হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক।

  • রোববার,  মার্চ ২৫, ২০১৮ 


ঢাকা এখন গডফাদারদের শহর


সম্পাদকের নোট -


লাগামহীন দুর্নীতি-অনিয়মের ফলে ঢাকায় মানুষের জীবনযাত্রা বিশ্বের অধিকাংশ শহর থেকে কষ্টকর ও নিম্নমানের। ঢাকার বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য শহর থেকে বেশি। বাসা বাড়া, পরিবারের খাবার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, গ্যাস, পানি ও পরিবহন ব্যয়সহ  দৈনন্দিন সবখরচ মিটাতে পারছে না অধিকাংশ নগরবাসী। এরমধ্যে দিনে দিনে পরিবহণ খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি রয়েছে ভালো পরিবহনের অভাব। ঢাকা শহরের রাস্তায় প্রতিদিনই দূর্ঘটনায় নিহত-আহত হচ্ছে নাগরিকেরা। এমন পরিস্থিতিতে  ঢাকা শহরে পরিবহণ খাতের চরম নৈরাজ্যের চিত্র উঠে এসেছে এক গোলটেবিল আলোচনায়।  এক ডজন মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিক সরাসরি ঢাকা শহরের পরিবহণ খাত নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা বাস, মিনিবাসসহ বিভিন্ন পরিবহণ ও ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা আদায় করে এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। চাঁদাবাজির ফলে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এবং বেশি টাকা আয়ের জন্য ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো হয়, যার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। পরিবহণ খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।


দৈনিক প্রথম আলোয় এই সংক্রান্ত রিপোর্টের পূর্ণপাঠ নিচে দেয়া হলো - 

ঢাকার অন্যতম পরিচয় এটি মসজিদের শহর। কেউ কেউ বলেন রিকশার শহর। এবার নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গডফাদারদেরও শহর। এই শহরের রিকশা থেকে গণপরিবহন, ফুটপাত থেকে টার্মিনাল—কোনো কিছুই চাঁদা ছাড়া চলে না। এসব চাঁদার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রাজনীতিক, সরকার-সমর্থক সংগঠন ও ব্যক্তিদের হাতে। অবশ্য সরকার বদল হলে নিয়ন্ত্রকও বদলায়।

শনিবার, মার্চ ২৪, ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শিরোনামে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজক ছিল বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

এই বৈঠকে একাধিক আলোচক বলেন, ঢাকা বর্তমানে নাগরিকদের শহর নয়, ‘গডফাদারদের’ শহর। ঢাকার কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রিকশা এবং ফুটপাতের কয়েক হাজার অবৈধ হকারের কাছ থেকে চাঁদা আদায়কারীদের গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আলোচকেরা বলেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতেও গডফাদারদের দৌরাত্ম্য। তাই যাত্রীসেবার বদলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, ঢাকা ও এর আশপাশে বাস-মিনিবাস চলাচল করে প্রায় সাত হাজার। অন্তত এক ডজন মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিক সরাসরি এই পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এঁদের অনেকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা হয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি নিজেই বাস নামিয়ে ব্যবসা করছেন।

পরিবহন সূত্রগুলো বলছে, ওয়েবিল (যাতায়াতের হিসাব), জিপি (গেট পাস), পার্কিং চার্জ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা—এসব নামে প্রতিদিন প্রতিটি বাস-মিনিবাস থেকে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাঁদার টাকা পরিবহননেতা, মালিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পকেটেও যায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আসছে না। এই খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে যাত্রীভাড়া আরও কমে যেত। ভোগান্তিও থাকত না।

হকার সমিতিগুলোর হিসাবে, ঢাকার ফুটপাতে ৫০-৬০ হাজার হকার আছেন। রাস্তায় থাকা হকারদের ধরলে সংখ্যাটা ১ লাখে দাঁড়ায়। প্রত্যেক হকারের কাছ থেকে গড়ে দিনে ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। সে হিসাবে হকারদের কাছ থেকেই দৈনিক চাঁদা আদায় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

গত বছরের প্রথম ভাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কিছু কিছু এলাকার হকারদের সংখ্যা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। সেই হিসাবে, গুলিস্তান এলাকায় শুধু ফুটপাতে হকার আছে আড়াই হাজার। নিউমার্কেট এলাকায় পৌনে নয় শ।

অভিযোগ রয়েছে, চাঁদার এই টাকা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পুলিশ ও চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত লাইনম্যান এবং তাঁদের সহযোগীরা ভাগ করে নেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজেরা হকারদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চাঁদা আদায় করে, এটা সরকার নিজে তুললে হকারদের পুনর্বাসন হয়ে যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও হকারদের পুনর্বাসন হচ্ছে না। চাঁদাবাজেরা পকেট ভারী করছেন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধিত বৈধ রিকশা আছে ৮০ হাজার ৪৭৩টি। ১৯৮৬ সালের পর আর কোনো রিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। তবে রাজধানীতে চলে প্রায় পৌনে ৭ লাখ রিকশা। উৎসব-পার্বণে রিকশার সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখে দাঁড়ায়। সরকার-সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রিকশার নিবন্ধন দিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে কিছু কিছু রিকশা জব্দ করে। এরপর সেগুলো সাংসদ, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের নামে পুনরায় নিজ দলের লোকদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করা হয়।

গতকাল গোলটেবিল বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ শহরকে নাগরিকদের বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। সরকারি সংস্থাগুলোকে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নিবন্ধিত নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা, ফুটপাত হকারমুক্ত করা, বাস, লঞ্চ টার্মিনালগুলো সরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে।


  • তথ্যসূত্র - দৈনিক প্রথম আলো, লিঙ্ক - https://bit.ly/2G5y6wj

ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে লোকসানে ফারমার্স

• টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা 
• আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি
• সিদ্ধান্ত হলেও তিন মাসেও মূলধন জোগান হয়নি 
• সংকটের প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে


সংকটে পড়া ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৩ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ায় ফারমার্স ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংকটির শাখাগুলোতে প্রতিদিন ভিড় করেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। অন্যদিকে নানা অনিয়ম করে দেওয়া ঋণও আদায় করতে পারছে না তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়া ফারমার্স ব্যাংকের অনিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব গুরুতর আর্থিক তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে নতুন করে ব্যাংকটির আরও যেসব আর্থিক অনিয়ম বেরিয়ে আসছে, তা হিসাবে নিলে লোকসান বাড়বে কয়েক গুণ। বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি ফেরত না আসার আশঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা বের করা হয়েছে মূলত মতিঝিল ও গুলশান শাখার মাধ্যমে। এর মধ্যে মতিঝিল শাখার ঋণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ও গুলশান শাখার ঋণ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এসব অনিয়ম হয়েছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর সময়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ‘ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের দেওয়া ঋণের ভাগ নিয়েছেন তাঁরা। এর মাধ্যমে দুজনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।’ মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে সংসদের সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি।

এদিকে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে। আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য ব্যাংক থেকে আমানত তোলার প্রবণতা বাড়ায় ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। বেড়ে গেছে সুদের হার। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রমেও একধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ নিয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের প্রভাব পুরো ব্যাংক খাতে পড়েছে। এত বড় দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী, তাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করে ভালো প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। এ থেকে যে টাকা আসবে, তা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া যেতে পারে। এ প্রক্রিয়া সফল না হলে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’

যোগাযোগ করা হলে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের মান খারাপ হওয়ায় লোকসান হয়েছে। ব্যাংকটি যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এ জন্য কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যে নতুন মূলধন জোগানের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর ব্যাংকটিতে বিভিন্ন পরিবর্তন এনে নতুন করে যাত্রা করবে।

এহসান খসরু আরও জানান, সংকটে পড়ার পর গ্রাহকদের ২৬০ কোটি টাকা আমানত ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন আমানত এসেছে ৬০ কোটি ও ঋণ আদায় হয়েছে ২১০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, তারল্যসংকটে পড়ায় এখন নতুন করে মূলধন জোগান দিয়ে ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উদ্যোগে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক থেকে মূলধন সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে ব্যাংকগুলোর কেউ বাড়তি ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এ জন্য ব্যাংকগুলো মূলধন জোগান দেওয়ার পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে বসতে চাইছে। তবে ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ তা মানতে কিছুটা দোটানায় রয়েছে। এ কারণে গত জানুয়ারিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।

৮ মার্চ প্রাক্-বাজেট আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফারমার্স ব্যাংকের ৬০ শতাংশ শেয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের নামে লিখে দিতে হবে। ওই পরিমাণ শেয়ার লিখে দিলেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হবে। এ সময় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আলোচনায় পরামর্শ এসেছিল যে লেট দেম ডাই। ফারমার্স ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংককে কলাপস হতে দেব না। যেকোনোভাবেই একে রক্ষা করতে হবে।’

যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। কী প্রক্রিয়ায় ফারমার্স ব্যাংককে সহায়তা করা হবে, তার সিদ্ধান্ত এলেই মূলধন দেওয়া হবে।’

ফারমার্স ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যাত্রার পর ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ৩ কোটি, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ও ২০১৬ সালে ২৩ কোটি টাকা। এরপর ২০১৭ সালে এসে লোকসান হয় ৫৩ কোটি টাকা। বিতরণ করা ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭২৩ কোটি টাকাই খেলাপি। এটি ব্যাংকের নিজস্ব তথ্য।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয়টি ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়ার আগেই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দপ্তর খুলে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছিল ব্যাংকটি। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর বছর না ঘুরতেই ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে, যার ভুক্তভোগী এখন সাধারণ আমানতকারীরা।

ব্যাংকটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছে বিস্তারিত তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির দায় পরিশোধের সক্ষমতা নেই। সাধারণ আমানতকারী ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে আমানত নেওয়া এবং ধার করে বর্তমানে টিকে আছে ফারমার্স ব্যাংক। ফলে ব্যাংকটি পুরো ব্যাংক খাতে পদ্ধতিগত ঝুঁকি (সিস্টেমেটিক রিস্ক) তৈরি করেছে, যা আমানতকারীদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

এরপরই মূলত ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলে নেওয়া শুরু হয়। এর ফলে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে গেলে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যাংক পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপরই বেরিয়ে আসে যে সরকারি খাতের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের আমানত আটকে গেছে ব্যাংকটিতে। এর মধ্যে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ৪৯৯ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা আছে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান, মতিঝিল ও গুলশান সাউথ অ্যাভিনিউ শাখায়। সুদসহ যা ৫১০ কোটিতে পৌঁছেছে। এ ছাড়া জীবন বীমা করপোরেশনের আটকা পড়েছে শতকোটি টাকার বেশি।

ব্যাংক সূত্র জানায়, মূলধন সংকট কাটাতে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি পায় ফারমার্স ব্যাংক। বন্ডটির নাম দেওয়া হয়েছে দি ফারমার্স ব্যাংক প্রসপারেটি বন্ড-২০১৭। বন্ডটির বিপণনের দায়িত্ব পায় রেইস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট। তবে এখন পর্যন্ত সেই বন্ড বিক্রি করতে পারেনি ব্যাংকটি।

গত জানুয়ারিতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। ফোনে যোগাযোগ করে গতকাল তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মহীউদ্দীন খান আলমগীরকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

সব মিলিয়ে বড় ধরনের সংকটে আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেওয়া এই ফারমার্স ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটাও জরুরি। যেমন সাবেক ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের যথাযথ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তাহলে সবাই শিক্ষা নেবে। নইলে অনেকে উৎসাহ পাবেন।

  • প্রথম আলো/মার্চ ২৭,২০১৮

ভুয়া উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ?

অরূপ রায়


ঢাকার সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে অন্তত আটটি প্রকল্প সরেজমিনে দেখা হয়। দেখা যায়, ছয়টি প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। দুটি প্রকল্পে আংশিক কাজ হয়েছে।

সাংবাদিকতার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তথ্য না পেয়ে কাবিটা ও ইজিপিপি প্রকল্পের তথ্য জানতে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৫ মার্চ, ১৫ মে ও ১৭ ডিসেম্বর প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পৃথক চারটি আবেদন করা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না পেয়ে তিনটি আবেদনের জন্য একই বছরের ৮ মে, ১০ জুলাই ও ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে আপিল করা হয়। এরপর একটি আবেদনের তথ্য পাওয়া গেলে ৪ জুন ও ২১ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পিআইওর কার্যালয় থেকে ধাপে ধাপে প্রায় সব তথ্য সরবরাহ করা হয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণের পর সরেজমিনে জানা গেল, কংক্রিট ও ইট বিছানো সড়কেও মাটির কাজ দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভাকুর্তা ইউনিয়নে কাগজ-কলমে ৪৪টি প্রকল্প দেখিয়েছে সাভার পিআইওর কার্যালয়। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ২৬৮ টাকা। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইজিপিপি প্রকল্পে দুই দফায় ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে।

ইজিপিপির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলাশী জয়নালের বাড়ি থেকে হাসিমের বাড়ি, স্কুল থেকে বাবুর বাড়ি ও সিরাজের বাড়ি থেকে আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওই প্রকল্পে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৮০ জন। একই রাস্তায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাবুর ঘাট থেকে শ্যামলাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও হাসেমের বাড়ি থেকে জালাল সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটির কাজ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৪১ জন। অথচ এ দুই প্রকল্পের সিংহভাগ রাস্তাই কংক্রিট ও ইটের তৈরি।

শ্যামলাশী মোস্তফার বাড়ি থেকে দুদু মার্কেটের রোড পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়নের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৩০ জন। কিন্তু এ বছর ওই রাস্তায় কোনো মাটি ফেলা হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় মোগড়াকান্দা সড়ক থেকে মজিবর রহমানের পোলট্রি ফার্ম পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পোলট্রি ফার্মের কাছে ১০০ ফুট জায়গায় দুই ফুট প্রশস্ত করে মাটি ফেলা হয়েছে। একই অর্থবছরে চুনারচর সামনহাটি রাস্তা হতে চুনারচর খাল পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৩৫ জন। কিন্তু রাস্তার দুই প্রান্তে ১০০ ফুট করে মাটি ফেলেই কাজ শেষ করা হয়েছে।

কাবিটার আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মোগড়াকান্দা হাজি ইব্রাহীমের বাড়ি থেকে মিয়াচান্দের বাড়ির কাছে কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকায় রাস্তা পুনর্নির্মাণের পরিবর্তে পুরোনো রাস্তার ওপর কয়েক ট্রাক ভাঙা ইট ফেলা হয়। একই রাস্তায় সরকারের অন্য একটি প্রকল্প থেকে মিয়াচান্দের বাড়ির কাছে ইট বিছাতে দেখা যায়। কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি মোগড়াকান্দা-হিন্দুভাকুর্তা-সাভার সড়কের জসিমের বাড়ি থেকে কান্দিভাকুর্তা মোসলেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার। রাস্তাটি পুনর্নির্মাণের জন্য ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৮ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

কোনো কাজ হয়নি ডোমড়াকান্দা রমজানের বাড়ি থেকে নলাগারিয়া আলী মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে। স্থানীয় মুদি দোকানি ইস্কান্দার বলেন, তিন মাস ধরে তিনি সেখানে দোকান দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ওই রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি।

ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বচ্ছতার সঙ্গে তা খরচ করা হয়। ভুয়া প্রকল্প দিয়ে বা কাজ না করে অর্থ তছরুপ করা হয় না।’

অবশ্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আলী ইজিপিপি প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি এসব বিষয়ে গত বছর মে মাসে ঢাকা জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

  • প্রথম আলো / ২৭ মার্চ ২০১৮