Search

Monday, July 20, 2020

পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র যখন এক ভয়ানক সিন্ডিকেটের খপ্পরে


রুমিন ফারহানা 

করোনা মোকাবেলা করতে গিয়ে এই দেশের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা সবকিছু যেমন লেজে-গোবরে করে ফেলেছে সেটা দেখে আমরা কেউ কি অবাক হয়েছি? সেটা হলে আমরা এই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি খোঁজ খবর রাখি না।



রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবার ওপরে মানুষের অনাস্থা এতটাই যে সেখানে সেবা নিতে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সমাজের ওপরের দিকের মানুষরা কখনোই যান না, যান বেসরকারি হাসপাতালে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে হতদরিদ্রদের চিকিৎসার জায়গা রাষ্ট্রীয় হাসপাতালগুলো। কিন্তু সেখানেও তারা পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা পান না, অনেককেই ঋণ করে, জমি বিক্রি করে বেসরকারি চিকিৎসা নিতে হয়। যেহেতু আমাদের দেশের 'সচেতন নাগরিকগণ' সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান না, তাই এই হাসপাতালগুলোর সমালোচনাও আমাদের সামনে খুব বেশি আসে না। তবে করোনা আমাদের সেই 'কমফোর্ট জোন' ভেঙে দিয়েছে - আমরা বাধ্য হয়েছি কিংবা বাধ্য হবার আশংকায় থেকেছি রাষ্ট্রীয় হাসপাতালে যেতে। সে কারণেই এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা আমাদের এতটা চোখে পড়লো।

যারা কিছুটা খোঁজ-খবর রাখেন, তারা জানতেন - এই দেশের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বছরের পর বছর সীমাহীন লুটপাট, অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে যে একেবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। এই প্রবণতা এই দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং পরিষেবার। করোনা এসে এই দেশের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে নতুন কিছু কি জানিয়েছে আমাদের? আমি মনে করি না, করোনা এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বীভৎস পচনটা প্রকাশ্য করেছে, প্রমাণ করেছে মাত্র। 

স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সামনে যা যা উন্মোচিত হলো তার মধ্যে আছেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ। এই ব্যক্তি শুধু স্বাস্থ্যখাত নয় আমাদের সামনে প্রকাশ করে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটা নিয়ে কথা বলার আগে তার সম্পর্কে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা তথ্য আবার একটু জেনে রাখা যাক - 

• চেক জালিয়াতির মামলায় ১০ বছর আগে ২০১০ সালে তার ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল। পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল, কিন্তু সে ১০ বছর কোনরকম সমস্যা ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষের সাথে ওঠাবসা করেছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজে পায়নি পুলিশ! আদালতও ছিল নির্বিকার!

• ২০১১ সালে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এ সাধারণ পারস্যের ৫০০ কোটি টাকা মেরে দিয়ে জেলে গিয়ে কয়েক মাস পর বেরিয়ে এসেছে। তার আর কিছু হয়নি। শত শত কোটি টাকা মেরে দিয়ে কয়েক মাসের জেল খেটে মুক্তি পাওয়া গেলে, কে করবে না সেটা?

• ২০১৬ সালে একবার চেক প্রত্যাখ্যান মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল সাহেদ। কিন্তু নানা পর্যায় থেকে তদবিরের কারণে এক সপ্তাহর মধ্যে বেরিয়ে আসেন তিনি। সেই প্রভাবশালী কারা পত্রিকায় তাদের কথাও এসেছে।

• সাহেদকে ভয়ঙ্কর প্রতারক উল্লেখ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর অধীনে চাকুরী করা পুলিশ মহাপরিদর্শক এর চিঠি আমলে নেন না, চমৎকার না?

• রিজেন্ট হাসপাতালে যখন অভিযান চালানো হচ্ছে তখন সেই খবর পেয়ে শাহেদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরাসরি ফোন করেছিল এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজেই মিডিয়াকে জানান। তিনি তাকে কোন সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে বলেছেন। এমন একজন প্রতারকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করার স্পর্ধা এই সরকারের আমলেই হয়। 

এই সাহেদই আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন ২০১৬ সাল থেকে। সর্বসাম্প্রতিক কমিটিতে সাহেদ ছিলেন না, কিন্তু দলের প্রতি প্রভাবশালী এক সদস্যের সাথে তিনি নিয়মিত বর্তমান কমিটির বৈঠকেও যেতেন। 

একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে রাষ্ট্রব্যবস্থাটিকে ভেঙেচুরে, সমাজের বীভৎস সব প্রতারককে কিভাবে দলীয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় একজন মোটামুটি ক্ষমতাবান মানুষে পরিণত করে মো. সাহেদ সেটা আমাদেরকে দেখিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা সবকিছু এক যোগ হয় সাহেদের পক্ষে কাজ করেছে, বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তাকে। 

এই দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বিভৎস রকম অনিয়ম-দুর্নীতি ঢুকে গেছে, এবং সেসব করেও মানুষ যেমন বহাল তবিয়তে থেকে যায়, তাতে খুব যৌক্তিকভাবেই অনুমান করা যায় - এই সব মানুষের পেছনে ক্ষমতাসীন দল সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মদদ দেয়। ঠিক যেমন একেবারে অন্যায়ভাবে আমাদের দলের সর্বোচ্চ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলেও এই পরিস্থিতি হতো না।

সাহেদের বিরুদ্ধে হটলাইন চালু করা হয়েছে, ভুক্তভোগী মানুষ যেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে। আমাদেরকে নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে - কতটি অভিযোগ জমা পড়ল। সবকিছুর একটাই উদ্দেশ্য - সাহেদকে এক বিরাট দানব বানিয়ে তোলা আমাদের সামনে। ‌ সরকারের আমাদের বোঝাতে চাইছে সাহেদই যত নষ্টের গোড়া। কিন্তু টিআইবি যেমন বলেছে আমরাও তেমনি জানি, সাহেদ চুনোপুঁটির বেশি আসলে কিছুই না। 

সাহেদ গ্রেফতার হওয়ায় সরকারের যেমন লাভ আছে, লাভ আছে আমাদের‌ও। আগে যেমন সম্রাট জি কে শামীম এবং পাপিয়াকে গ্রেফতার করে সরকার সেসবকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান বলে প্রোপাগান্ডা চালাতে পেরেছে, সাহেদকেও সেরকমভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। বছরের পর বছর এসব ফালতু নাটক দেখে এই দেশের মানুষ এখন ক্লান্ত, এসব প্রোপাগান্ডায় কাজ হয় না আর। মানুষ খুব ভালোভাবেই জানে এদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, তাও সেটা অতি স্বল্প সময়ের জন্য। এরা স্বরূপে ফিরে আসবে খুব দ্রুতই।

সাহেদের গ্রেফতার আমাদের একটা লাভ আছে। এরকম একজন 'চুনোপুঁটি' সাহেদ কিভাবে তৈরি হয় সেটা নিয়ে আমাদের নিজস্ব যৌক্তিক অনুমান ছিল। তার গ্রেফতারের পর সেটা আমাদের সামনে প্রকাশ্য হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে। তার জীবনের যে কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ আমি এখানে করলাম আর তার ফেসবুকে ভরে থাকা দেশের সব মহলের প্রভাবশালীদের সাথে তোলা ছবি তার উত্থানের পথ ও পদ্ধতির গল্প বলে যাবে আরও বহুকাল।

— লেখক জাতীয় সংসদ সদস্য ও আইনজীবী। 


Sunday, July 19, 2020

Rebooting economy through public money to public

LENDING EAR TO LAMENTS OF MANY


by Rashed Al Mahmud Titumir


THE slowdown in the economy induced by the surge of the COVID-19 outbreak has undoubtedly been heavily incident on the relatively poorer population that has barely anything to fall back on. As hopes of flattening the novel coronavirus infection curve in the near future diminish, it is not solely the poor who are in misfortune. Households in the middle- and lower middle- class tiers also face rapidly eroding incomes. Vast informal sectors are struggling to survive. The formal private sector is slaying through furlough and income and job cuts. Women, home-makers and job-holders alike, are submerged in increased work burden. Prospects of the youth are in jeopardy. More and more households spiral into uncertainty of securing the next meal as anxieties and sufferings only escalate each day, with the prolonging of the outbreak.

Lives, livelihood of many in peril

AS THE control over life diminishes, reinforced by measures of physical distancing and the halting of non-essential economic and social activities, the prevailing uncertainty aggravates manifold. The pandemic has not only been centred on the contagion of the virus, but also by widespread anxieties of people regarding their chances of survival and insecurities regarding food, income and standards of living. As a large part of the population is dependent on daily wages to run family, drastic measures such as lockdown lead to even greater disasters at the household level. A recent survey of 5,461 households in rural and urban slums found that their average income decreased by about 70 per cent and food expenditure by 26 per cent, as BRAC and the PPRC estimate.

The outbreak and the economic slowdown it has caused have affected not only informal sector employees, but those in the formal sector too. Assuming that the richest and poorest constitute around 20 and 20 per cent of the population respectively, the middle class constitutes around 60 per cent of the population. Around 51.6 per cent of the lower middle class is employed in the private sector and 17 per cent is involved in entrepreneurial roles. Workers involved in the industrial and technical sector have faced a 28.4 per cent decrease in their salary. Services sector workers have lost their salary by 31.2 per cent. Amidst the outbreak, the poor have fallen down the rungs to being extreme poor, the middle class to lower middle class, and the lower middle class to poor.

Escalation in joblessness, poverty and inequality

UNNAYAN Onneshan estimates that the fall in economic growth will result in unemployment rising by more than 3 percentage points for the first time in 35 years. The rate of poverty is likely to worsen by more than double, depending on the speed of the recovery. The outbreak has severely impacted the life and livelihood of the marginalised section of society — particularly the low-income people, women, children, the elderly, the unemployed, informal sector workers, lower middle-class and middle-class groups. Income erosion resulting from losses in various sectors from the shutdown will create a new class of poor. In the absence of prudent policy intervention, around 43.5 per cent of household incomes will soon be below the poverty line and in case the economic slowdown is prolonged, the figure may even rise to 47.43 per cent. The rate of poverty will exhibit an upward movement for the first time since 1992.

Novel coronavirus has also exposed the deep divide in society. Income cuts disproportionately affects those living in mediocre standards of living and the extraction of liquidity from the powerful elite being neglected as a source of revenue is likely to worsen the pre-existing income inequality. Inequality is mounting and is expected to cross the fault line of 0.5 in the Gini coefficient if a universal social security is not instituted. The real wage growth is at its lowest in five years. Individuals in urban and rural areas are likely to face an income erosion of 75 per cent and 62 per cent respectively, implying that around seven crore people will be unemployed and be living below the poverty line, according to estimates released by BRAC and the PPRC.

Formal, private sector in adversity

AROUND nine million people are employed in the formal sector. Out of them, only 1.5 million work in government jobs; the other 7.5 million work in the private sector. Many private firms, however, have not paid out salary to their employees during general holiday that the government ordered. Some have paid out only 30 to 40 per cent of the salary, with no provision for Eid allowances. Services sector incomes have decreased by 31.2 per cent. The income of those in the transport sector has diminished by 46.3 per cent whilst that of household services workers has dwindled by 16.5 per cent. Workers of 350 apparel facories have lost their job. Around 2.2 million wage labourers are now facing unemployment.

Earnings of state-owned, commercial and multinational banks have decreased by 66 per cent because of the economic shutdown. The salary of employees is curtailed to keep expenditure in check whilst many employees remain at the brink of being laid off. While most citizens are already suppressed under the colossal burden of unemployment, the government has shut down 25 publicly-owned jute mills, leading to a further 25,000 permanent personnel facing unemployment. Most private universities pay out salaries of teachers and staff only partially, or often none. Economic adversities have forced people to advertise the sales of private educational institutions in different regions, leaving thousands of teachers, students and guardians in gross uncertainty.

Informal sector in jeopardy

MORE than 86 per cent, or around 60 million, of people are employed in the informal sector, as the Bangladesh Bureau of Statistics estimates, contributing to 40 per cent of the gross domestic product. The informal agricultural sector employs more than 23.8 million workers. Simultaneously, industry and services sectors employ 11.1 million and 17 million labourers respectively. These workers often live hand-to-mouth, without any savings to fall back on. At the same time, they remain deprived of the minimum wage jurisdiction and benefits laid out by the labour laws.

It is evident that two out of three private-sector employees are involved in micro, cottage, small and medium enterprises. According to a BIDS survey, 25 per cent of the GDP is contributed by this sector. Around 86 per cent of the employment generated by the industry is in this sector, amounting to one crore employees. More than 52 per cent of enterprises in this sector, however, have been compelled to close down whilst 28 per cent of the enterprises have had their revenue halved. Because of stringent conditions laid out for availing stimulus packages, small and medium enterprises have been unable to swiftly draw loans from the banking sector.

In the agriculture sector, 46 per cent of the fishermen have been forced to resort to taking loans at high rates of interest because of an extreme shortage of food. BRAC estimates that in just one and a half months of the infliction of the outbreak, crop and fisheries have suffered losses of Tk 150 billion and Tk 390 billion, which amount to a loss of around Tk 207,000 a farmer.

The youth in trouble

THE International Labour Organisation estimates that 27.39 per cent of the youth population had not been in employment, education or training before the outbreak. In the aftermath, the scope of income generating activities has thinned down for the youth. There is a large number of students who bear their own expenses from tutoring. The outbreak has left them out of work. Many worked part-time in informal roles in event management, photography, tourist guides and so on, which have been halted because of the COVOD-19 outbreak. Activities have also been brought to a standstill in the sports and cultural sphere. As a result, the youth and their families have encountered grave insecurities.

The youth are staring ahead into a chasm of lost opportunities as organisations scale down their operations and unwilling to hire new employees. A mechanism for incentivising these firms to hire someone under the age of 29 may be put in place by introducing a government-financed financial incentive scheme. These financial incentives could then be provided to the firms each time they hired an employee from the youth population, thus contributing to curbing the youth unemployment that is expected to be grossly exacerbated in the post-COVID-19 era.

Miseries of women, elderly and children

WOMEN constitute a half of the population. The size of the ageing population is expected to rise to 12 million. Those aged between zero and 25 years account for 60 per cent of the population. Any calamity affects the women, children, the elderly and children with special needs of society in a proportionally worse manner. People have suffered emotionally and psychologically from bearing the brunt of anxieties, uncertainties and risks from the contraction of the economy that has affected their personal well-being, family and social life. Income erosion has made it quite impossible to fulfil the basic needs of the elderly and children.

Although women are entitled to receive 15 per cent of the SME loans, it does not appear to be the case. Allocation for women, children and elderly in the social security remains largely insufficient compared with the size of the population. Women are experiencing a time burden along with the physical and psychological burden during the current outbreak. Home-makers and caregivers who are not engaged in institutional occupations outside home are experiencing more work pressure because of the constant presence of all the family members at home, resulting in an increase in domestic works. Development practitioners reported an escalation in child marriage mainly because of financial uncertainties and the closure of educational institutions. Hostility and violence have intensified whilst the social code of conduct is threatened to collapse. Violence towards women and children has worsened by 65 per cent where 98 percent of the women living in slums have been suffering from domestic violence.

Return of millions of migrants

BOTH internal and external migrant workers of Bangladesh encounter serious social, economic, political as well as psychological adversities amidst the outbreak. The story of progress in Bangladesh was driven by the migration of rural workers to urban areas and domestic workers across international borders in search of employment. Some 50,000 of rural-urban migrants have, meanwhile, left the city. Many of them have, however, failed to receive government relief packages because e of their staying away from villages for a long period of time.

On the other hand, 200,000 migrant workers have returned from abroad. Millions of other migrant workers are waiting to return home unemployed. However, there will not be any employment opportunities for them at home right away. The number of unemployed individuals in rural areas is around 7.7 million, which is expected to increase when those in disguised unemployment and those newly unemployed are added to the equation. As the destination countries have imposed shutdown and travel bans, workers returned to their home countries strewn into extreme uncertainties. The global economic downturn has placed their job security in peril, hampering future earning potential. Furthermore, they have fallen victim to stigmatisation as being ‘virus carriers’ and have often been the centre of paranoia for their communities.

Crisis of tenants and house owners

TENANTS find themselves unable to pay their rent. House-owners are also in a crisis as most tenants are leaving. In most cases, loans were taken from leasing companies outside the banking sector where the interest rate was around 12 to 16 per cent. Home-owners are now unable to repay their loans, and are struggling to bear household expenses. They will not be able to reduce the rent unless interest payment is temporarily called off or a lump sum allocation is given for providing them with financial assistance.

Flooding and inflation in prices

THE present situation has been described as one of the worst cases of flooding and water stagnation in a decade as almost a third of the country may be inundated, affecting more than 1.5 million. It is feared to affect people in 23 districts, according to the disaster management and relief ministry. Three hundred and fifty thousand people in 14 districts are stranded by floods. Around 1.4 million people in flood-affected areas have suffered destruction of homesteads and crops. Houses and various structures have been engulfed by river erosion caused by floods. Dams lay destructed.

This, coupled with a crunch in the market for essential goods that is driving prices of basic necessities skyrocketing, is likely to deteriorate the chances of survival and sustenance of the affected population. Inflation has exceeded 6 per cent in June alone.

Conventional targeted social security measures

Women, the elderly and marginalised communities are evincing to be the most vulnerable to both the outbreak and the economic costs of an ongoing shutdown as the infection spreads across Bangladesh. As these communities are dependent on informal employment and because most of them are in poor and crowded living conditions which make social distancing and access to sanitation exceedingly strenuous, they are distinctly vulnerable to the new coronavirus infection. The government has announced Tk 321.66 billion in the budget for the 2021 financial year for social security purposes. This accounts for a real change of only 2.5 per cent as compared with the budget of the previous financial year.

The existing social security programmes are certainly not adequate. Once pension and interests on savings certificates are subtracted, the allocation for the 2019–20 financial year, indeed, decreased from 9 per cent to 7.6 per cent. As many as 3.4 million out of the 5 million that the government promised to provide financial assistance are yet to receive it. Mismanagement is difficult to be put under a leash even under the supervision of senior officials in the administration. This is because the measures are not universal, but rather centred on specific groups or parties. In most cases, the determination of beneficiaries is politically biased. For a population set back by unequal access, a well-rounded social security will have long-term, multiplied; benefits, for instance, the provision of a child benefit will improve nutrition levels and lower fertility rates that eases up more of the household income to be spent on the child. The chances of nurturing a skilled and productive work force are thereby enhanced by leaps and bounds.

Rebooting economy through universal basic income

APPROXIMATELY 70 per cent of the total tax revenue is sourced from indirect taxes, of which 39 per cent is sourced from value-added tax. It implies that the lion’s share of the tax revenue is extracted from the average hard-working citizen. Therefore, money should be given out in cash transfers, disbursed till December to help them to cope through the crisis. Emergency accounts should be opened using national identification cards to make the transfers. A monthly basic income grant of Tk 4, 845 should be sent out as per the international poverty line income of $1.90 a day to stave off people sliding down to become new poor. Payroll data collected from the National Board of Revenue can be used to include employees in the formal sector, apart from government officials. This should be followed by a mission-driven scheme of protecting job, involving fiscal incentives and creating jobs, encompassing investment in infrastructure, green recovery and rural economy generation.

The COVID-19 outbreak has triggered a swelling of fiscal incentives worldwide as governments emphasise paying out fiscal support to the people that has, however, also worsened the public debt situation for countries. The International Monetary Fund has advocated the continuation of financial support provision for people, prioritising it over the public debt deterioration. Despite having a debt-to-GDP ratio of 73.8 and 83.35 per cent respectively, India and Pakistan have disbursed cash transfers to assist the general public. In comparison, Bangladesh has a debt-to-GDP ratio of only 33 per cent. There is no better alternative to cash transfers to ensure the protection of lives and the preservation of social stability whilst rebooting the economy.


  • Dr Rashed Al Mahmud Titumir is a professor of economics at the development studies department in Dhaka University and chairperson of Unnayan Onneshan.
  • NewAge/ July 19, 2020

Friday, July 17, 2020

‘বলো বাপু’ শুনব না আর

শরিফুজ্জামান

এমাজউদ্দীন আহমদ

এমাজউদ্দীন স্যারের মৃত্যুর খবর শুনতেই কানে বেজে ওঠে, ‘আচ্ছা বাপু’ অথবা ‘বলো বাপু’। এই দুটি শব্দ ওনার মুখ দিয়ে শুনেছি অসংখ্যবার। তাঁর ছাত্র বা কনিষ্ঠদের অনেকেই এই শব্দ দুটির সঙ্গে পরিচিত।

আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া এই শিক্ষাবিদের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। নরম ভাষায় কথা বলতেন। যুক্তির বাইরে যেতেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে (১৯৯২-১৯৯৬) ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা দাবি নিয়ে তাঁর সামনে যাওয়ার পর ছাত্রনেতাদের চুপসে যেতে দেখতাম। ওনাকে রাগতে দেখিনি, খ্যাপতেও দেখিনি। তিনি উপাচার্য থাকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছি, ওনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাই মূলত সে কারণেই।

এমাজউদ্দীন আহমদ উপাচার্য থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উত্তপ্ত অবস্থায়। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন নতুন আবহ, ক্ষমতায় বিএনপি। বিএনপির প্রথম দুবছর উপাচার্য ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা। এরপর আসেন এমাজউদ্দীন আহমদ। সরকারি ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের তখন সীমাহীন দৌরাত্ম্য, ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলও। বিরোধী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তখন টিকে থাকার যুদ্ধে লিপ্ত। ক্যাম্পাসে প্রায়ই গোলাগুলি, ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগে থাকত। এখনকার মতো ক্যাম্পাস তখন একপক্ষের দখলে ছিল না। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলেও ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ছিল দাপটের সঙ্গে। হলগুলোতে সহ-অবস্থানে কিছুটা ঘাটতি ছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ের মতো ভিন্নমতের ছাত্রদের হল ছেড়ে যেতে হয়নি। এ নিয়ে ছাত্রদলের ক্ষোভ ছিল এমাজউদ্দীন আহমদের ওপর। ছাত্রদল চাইত, উপাচার্য তাদের পক্ষেই থাকবে। কিন্তু এমাজউদ্দীন আহমদের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য লক্ষ করতাম। সবাই তাঁর কাছে ছিল আগে ছাত্র, পরে তার মতাদর্শগত পরিচয়।

মনে পড়ে, ১৯৯৪ সালের মার্চে ছাত্রলীগ ওনার কার্যালয় ভাঙচুর করেছিল। তখন ওনার সহনশীলতা দেখার সুযোগ পাই। আবার ১৯৯৫ সালের দিকে ছাত্রলীগের একজন ক্যাডার ওনার কক্ষে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এত বড় অপরাধের পর কেন কোনো ব্যবস্থা নেননি? ওনার জবাব ছিল, ‘আমি পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু ও তো আমার ছাত্র।’ পরে শুনেছি, তিনি ওই ক্যাডারকে অনেক বুঝিয়ে তাঁর ক্ষোভ মিটিয়ে কক্ষ থেকে বিদায় করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ছাত্রটিও উপাচার্যের কাছে ভুল স্বীকার করেছিল।

তখন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ছিল ছোট একটি কক্ষের মধ্যে। নব্বইয়ে এরশাদ পতনের পর গণতান্ত্রিক আবহ শুরু হলে একের পর এক সংবাদপত্র প্রকাশ হতে থাকে, প্রতিটি পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার থাকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ছোট কক্ষে আমাদের বসার জায়গা হতো না। টিএসসির পরিচালক তখন আলমগীর ভাই। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টারদের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা। তিনি চেষ্টা করলেও পাশের কক্ষটি আমাদের দিতে পারছিলেন না। আমরা দল বেঁধে উপাচার্যের কাছে যাই। অনেক দেনদরবার করে তিনি কক্ষটি সাংবাদিক সমিতির নামে বরাদ্দ করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিক সমিতিকে অনুদান দেওয়া হতো ২০ হাজার টাকা। আমরা একদিন দল বেঁধে গিয়ে স্যারকে বললাম, বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় দ্বিগুণ। আমরা ৫০ হাজার টাকা বার্ষিক অনুদান চাইলাম, উনি ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেন।

একজন উপাচার্য হিসেবে ওনার বড় গুণ ছিল, সব সময় তাঁকে পাওয়া যেত। ওনার বিরুদ্ধে লিখলেও ক্ষুব্ধ হতেন না। বিনয়, ভদ্রতা, শিষ্টাচার—এসবের দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। বড় ঘটনা ঘটলেই বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টাররা দল বেঁধে ওনার বাসভবন বা কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হতাম। উনি কথা বলতেন। লুকিয়ে থাকতেন না, এড়িয়ে যেতেন না।

সেই নব্বইয়ের দশক থেকে আজও পর্যন্ত মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় এতটুকু কমতি হয়নি। ফোন করলেই বলতেন, ‘বলো বাপু’। ওনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়-পরবর্তীকালে কথা হতো মূলত গণতন্ত্র বা রাজনীতি নিয়ে। প্রায় সব গণমাধ্যমের এ-সংক্রান্ত খবরে ওনার উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হতো। প্রতিবেদন সমৃদ্ধ করতে বা লেখায় ভারসাম্য আনতে ওনার মন্তব্য বা মতামত আর পাওয়া যাবে না।

স্যারের মধ্যে আর যে গুণ ছিল, তা হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বিরোধী মতের সমালোচনায় তাঁর বক্তব্যে থাকত যুক্তি ও গঠনমূলক পরামর্শ। শেখ মুজিবুর রহমানকে উনি বঙ্গবন্ধু সম্বোধন করেই কথা বলতেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলতেন।এখনকার সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা উনি যুক্তির মাধ্যমেই করতেন।         

জীবনভর এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। পরিচয় ছিল বিএনপি-সমর্থক বুদ্ধিজীবী হিসেবে। দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছেন সব সময়। সরাসরি বিএনপির কোনো পদে না থাকলেও দলটি তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিত। বিএনপি-সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত শত নাগরিক কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে তাঁর অস্বস্তি ছিল সব সময়। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন। এই সম্পর্ক যে বিএনপির জন্য ক্ষতিকর, এটা বলতে দ্বিধা করেননি। যদিও বিএনপি তাঁর এই পরামর্শ শোনেনি।

রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে কাজ করেছেন এমাজউদ্দীন আহমদ। তাঁর মাপের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এখন এ দেশে বিরল—এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা, তুলনামূলক রাজনীতি; রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট, সমাজ ও রাজনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। সংবাদপত্রে কলাম লিখেছেন; সুস্থ অবস্থায় প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেছেন।

আত্মসম্মানবোধের পরিচয় দিয়ে গেছেন এমাজউদ্দীন আহমদ। যত দূর জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচজন উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এঁদের একজন ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে প্রথম পদত্যাগ করেছিলেন মাহমুদ হুসেইন, তিনি ১৯৬২ সালে প্রাদেশিক গভর্নর আবদুল মোনায়েম খানের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে পদত্যাগ করেছিলেন। একাত্তরের মার্চে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে মোহাম্মদ শামসুল হক স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অন্যায় আদেশ না মেনে পদত্যাগ করেছিলেন। আর ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের চাপে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন উপাচার্য ফজলুল হালিম চৌধুরী।

১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের পর একজন প্রভোস্ট নিয়োগকে কেন্দ্র করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেকের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে পদত্যাগ করেছিলেন উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ। এ বিষয়ে তিনি খোলামেলা কোনো অভিযোগ করেননি। আমরা যতবার তাঁর কাছে পদত্যাগের কারণ জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে পদত্যাগ করেছেন। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তিনি বাইরের অনুরোধে প্রভোস্ট নিয়োগ করতে চাননি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রভোস্ট নিয়োগের একক ক্ষমতা উপাচার্যের। সেখানে বাইরের হস্তক্ষেপ তাঁর পছন্দ হয়নি। একজন কোমল ও মৃদুভাষী ব্যক্তি যে এমন সুদৃঢ় অবস্থান নিতে পারেন, তা-ও একজন প্রভোস্ট নিয়োগের মতো ইস্যুতে—এটা ছিল আমার মতো ওই সময়ের অনেক তরুণ রিপোর্টারের কাছে ভাবনার বিষয়।

  • শরিফুজ্জামান সাংবাদিক
  • কার্টসি - প্রথম আলো/ জুলাই ১৭, ২০২০ 

Wednesday, July 15, 2020

ক্রসফায়ার ও মিথ্যা মামলার সংস্কৃতি বন্ধ হোক

মো: আসাদুজ্জামান




সাহেদ গ্রেফতার, ধন্যবাদ Rapid Action Battalion-RAB কে। তবে, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে, আমিও । বিগত এক দশকে প্রায় তিন হাজার ক্রসফায়ারের গল্প, প্রায় সাতশ’র মত গুমের কাহিনি , অজস্র মিথ্যা মামলা জনমনে যৌক্তিক সন্দেহের উদ্রেক করেছে। Circumstantial পরিস্থিতি বলে না যে, বোরকা পরে কোন ভীরু-কাপুরুষ, অর্থ ও নারী লোভী দালাল  কোমরে পিস্তল নিয়ে এভাবে পালানোর চেষ্টা করবে । এইভাবে কোমরে অস্ত্র নিয়ে বলিভিয়া কিংবা কিউবা বা আর্জেন্টিনার বিস্তৃত প্রান্তরের মতো বিশ্বের দেশে দেশে আত্মগোপনে যেতে পারে একমাত্র আর্নেস্টো চে গুয়েভারা কিংবা তাঁর আদর্শের উত্তরসূরীরা, সাহেদদের মত বাটপাররা নয় । সাহেদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার যদি অতিরঞ্জিত হয়, তবে সেটা কাম্য নয়। অনেকেই সাহেদ-সাবরিনা-আরিফ গংদের ক্রসফায়ার চেয়েছেন । রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার কর্মী হিসাবে আমি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধেই অস্ত্র উদ্ধার কিংবা গুম/ক্রসফায়ারের নাটক চাই না । আমি চাই, সাহেদ-সাব্রিনা-আরিফ গং এবং তাদের গডফাদারদের প্রচলিত আইনে বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক । মিথ্যা অস্ত্র উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুভ নয় । 



বর্তমান সরকার যদি তাদেরকে বৈধ বলে দাবী করে, তাহলে সাহেদ গংদের অপরাধ কি দন্ডবিধির ১২৪এ ধারার অধীনে sedition বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়? কারন, করোনার মিথ্যা সার্টিফিকেট বিক্রি করাতো তাদের দ্বারা visible representation, or otherwise, brings or attempts to bring into hatred or contempt, or excites or attempts to excite disaffection towards, the Government established by law! এধরনের অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে, অস্ত্র উদ্ধার করে অতি উৎসাহী হওয়ার প্রয়োজন নেই । বন্ধুদের জন্য দন্ডবিধির ১২৪এ ধারা তুলে দিলাম - 

      “ 124A. Whoever by words, either spoken or written, or by signs, or by visible representation, or otherwise, brings or attempts to bring into hatred or contempt, or excites or attempts to excite disaffection towards, the Government established by law shall be punished with imprisonment for life or any shorter term, to which fine may be added, or with imprisonment which may extend to three years, to which fine may be added, or with fine.

Explanation 1.-The expression "disaffection" includes disloyalty and all feelings of enmity.

Explanation 2.-Comments expressing disapprobation of the measures of the Government with a view to obtain their alteration by lawful means, without exciting or attempting to excite hatred, contempt or disaffection, do not constitute an offence under this section.

Explanation 3.-Comments expressing disapprobation of the administrative or other action of the Government without exciting or attempting to excite hatred, contempt or disaffection, do not constitute an offence under this section.”
   
এই ধারা কিন্ত রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না । কারন, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদ দ্বারা protected !

  • লেখক আইনজীবি ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি। 


Sunday, July 12, 2020

‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ কে, কারা?

গোলাম মোর্তোজা


একটি মিসাইল ছোঁড়ার পর তার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই প্রযুক্তি মানুষের আয়ত্তে। কিন্তু মুখ দিয়ে একটি কথা বলে ফেললে, তা ফেরানোর সামর্থ্য মানুষ আয়ত্ত করতে পারেনি। সেই কথাটি যদি অসত্য হয় এবং তা যদি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে আরও দশটি অসত্য কথা বলতে হয়। এতে পূর্বের কথাটা চাপা তো দেওয়া যায়ই না, অসত্য-বিভ্রান্তির পরিধিই শুধু বাড়ে।

আর তা যদি মুখের কথা না হয়ে লিখিত হয় এবং সঙ্গে ছবি থাকে, তবে চাপা দেওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না। তারপরও চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করে। এমন নজির তৈরি করে জটিলতায় আটকে পড়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরীক্ষা না করে কোভিড-১৯ রোগের সনদ বাণিজ্য করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদন পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট ও জেকেজি।

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি সিদ্ধান্ত ও তার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি লিখিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে কিছু কথা।

১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর ও জেকেজি নামক প্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দেওয়ার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ১১ জুলাই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে:

ক. মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

খ. সাহেদ করিম বিষয়ে আগে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবহিত ছিল না।

গ. এ বছরের মার্চ মাসে দেশে আকস্মিকভাবে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।

ঘ. বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি করতে চাইছিল না।

ঙ. ক্লিনিক দুটি পরিদর্শনকালে চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ দেখতে পেলেও ক্লিনিক দুটির লাইসেন্স নবায়ন ছিল না।

চ. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ওভাল গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী আরিফুল হক চৌধুরী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চিকিৎসকদের সংগঠনের অনুষ্ঠানের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে ওভাল গ্রুপ। আরিফুল হক চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসে বলেছেন তিনি ‘জোবেদা খাতুন হেলথকেয়ার (জেকেজি)’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চান। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। পুরো কাজের জন্যে তাদের কোনো অর্থ দিতে হবে না। তাদের অনুমতি দেওয়া হয়।

গোলাম মোর্তোজা
২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে সচিব বা মন্ত্রীকে বোঝায়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তারা দুজনই উপস্থিত ছিলেন। তার মানে সচিব বা মন্ত্রীর বা দুজনের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল বলে প্রতীয়মান হয়। যদি না ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’র আলাদা কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাহেদ করিমের বিষয়ে আগে থেকে অবহিত ছিল না। নির্দেশদাতা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ নিশ্চয় হয় জেনে-বুঝেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথবা না জেনে নির্দেশ দিয়েছিলেন। মহামারিকালে বা জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ‘নির্দেশ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে?

মার্চ মাসে ‘আকস্মিকভাবে’ কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, তথ্য বিশ্লেষণ করলে বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ হয় না। মার্চ মাসের ৮ তারিখে দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় এবং সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শনাক্তও ‘আকস্মিকভাবে’ হয়নি, প্রত্যাশিতভাবেই হয়েছে। সংখ্যাও ‘আকস্মিকভাবে’ নয়, সাধারণ ধারণা অনুযায়ী বেড়েছে।

‘বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি করতে চাইছিল না’-এই বক্তব্য খণ্ডিত বা আংশিক সত্য। সম্পূর্ণ সত্য হলো, শুরুতে বেসরকারি হাসপাতাল বা বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বেসরকারি কোনো হাসপাতালকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা বা শনাক্তের অনুমতি না থাকলে তারা কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করবেন কীভাবে?

সরকারি প্রণোদনা ঘোষণার ক্ষেত্রেও বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে বাইরে রাখা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর’র সেব্রিনা ফ্লোরা একাধিকবার ধারণা দিয়েছেন, কোভিড-১৯ পরীক্ষা তারা ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করতে রাজি ছিল না, তা পুরোপুরি অসত্য নয়। তবে তাদের বাধ্য করার সুযোগ ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুরের হাসপাতাল দুটি পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ’ দেখেছে। জেনেছে লাইসেন্স নবায়ন না থাকার বিষয়টি। লাইসেন্স নবায়ন নেই, এই তথ্য পরিদর্শনে যাওয়ার আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানা ছিল। কারণ গত ৮ জুলাইয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে ‘তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি’।

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিশ্চয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগেই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। নির্দেশদাতা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’কে কি লাইসেন্স নবায়ন না থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন?

‘চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কী সাধারণ চিকিৎসার কথা বোঝাচ্ছেন? বিজ্ঞপ্তির ভাষায় তেমনই ধারণা হয়। কারণ কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা সক্ষমতা যে রিজেন্ট হাসপাতালের ছিল না, তা তো পরবর্তীতে পরিষ্কারভাবেই জানা গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শন করে রিপোর্টে কী লিখেছিল? সাধারণ চিকিৎসার জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ, না কোভিড-১৯ চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ? আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা পরিষ্কার করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর?

এবার আসি জেকেজি প্রসঙ্গে। আরিফুল হক চৌধুরী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ওভাল’র সত্ত্বাধিকারী। একজন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক এসে বললেন, তিনি জেকেজির প্রধান সমন্বয়কারী-কোরিয়া মডেলে বুথ করতে চান, এ কথার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমতি দিয়ে দিল? কোরিয়া মডেলের বুথ স্থাপনের জন্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কতটা সক্ষমতা থাকতে হয়, তা নিশ্চয় জানা ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কি জেকেজি পরিদর্শন করেছিল, তাদের সক্ষমতা যাচাই করেছিল? বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। পরে জানা গেল জেকেজি একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শনে গেলেই তার প্রমাণ পেতেন। তার মানে পরিদর্শন না করে, যাচাই না করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছিল। অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবায় কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের আরিফুল হক চৌধুরীকে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো কিছুই অজানা ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছিল, জেকেজিকে কোনো সহায়তা দিতে হবে না। পরে জানা গেল, বিছানাসহ অনেক কিছুই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের সরবরাহ করেছিল।

এখানে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এসেছে আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফুল হকের মুখ দিয়ে। ডা. সাবরিনা জেকেজির চেয়ারম্যান। ‘সময়’ টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, জেকেজির প্রতারণা বিষয়ে তিনি ‘ডিজি স্যার’ ও ‘এডিজি ম্যাডাম’কে আগেই জানিয়েছিলেন। ডা. সাবরিনার বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেকেজির প্রতারণা বিষয়ে আগে থেকেই অবহিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

এই লেখা চলাকালে জানা গেল ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও জানা গেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সাহেদ-সাবরিনা-আরিফুলরা কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। টাকার চেয়েও বড় বিষয়, মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। সেই খেলার অংশীজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নজিরবিহীন সমন্বয়হীনতা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডে জনস্বাস্থ্য পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান। এসব সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন, তারা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতেও অস্বচ্ছ, অসত্য বা অর্ধ-সত্য তথ্যের উল্লেখ থাকছে। দায় এড়ানোর প্রবণতা সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে কোনো বিভ্রান্তি দূর হচ্ছে না। পরিণতিতে জাতীয়ভাবে জন অনাস্থা বা অবিশ্বাস বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। সাময়িকভাবে হলেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পৃথিবীর একটি বড় অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ‘সাময়িক’ বিচ্ছিন্নতা যাতে স্থায়ী রূপ না পায়, তার জন্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।

  • কার্টসি - The daily star bangla/ july 12, 2020

Saturday, June 27, 2020

করোনায় এত চিকিৎসকের মৃত্যু কেন

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ


সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। তার মধ্যে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক! সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও প্রায় সবাই একমত, কভিড আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মতো প্রতি দেড় হাজার মৃত্যুতে ৫০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হলে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোয়া লাখ মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মারা যাওয়ার কথা চার হাজারের বেশি। ব্রাজিল বা যুক্তরাজ্যে প্রায় দুই হাজার করে চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা করোনায়। এমনকি পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচশ চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা। কিন্তু ওইসব দেশে চিকিৎসক মৃত্যুর হার তেমন নয়। ৩১ মে পর্যন্ত ভারতে ৩১ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম। করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক ও নার্স মারা গেছেন বলে আলোচনায় আসে। কিন্তু সেই ইতালিতেও ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। ওই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নার্স মারা গেছেন ৩০ জন (এনডিটিভি, ৯ এপ্রিল ২০২০)।

১৫ এপ্রিল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ কভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেটিই বাংলাদেশে কভিড আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো চিকিৎসকের মৃত্যু। এর ১৮ দিন পর ৩ মে করোনা কেড়ে নেয় অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনিরুজ্জামানকে। তারও আট দিন পর এ তালিকায় যুক্ত হয় অত্যন্ত পরিচিত মুখ রেডিওলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবুল মুকারিম। তারপর থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই এ তালিকায় যোগ হচ্ছে কোনো না কোনো চিকিৎসকের নাম। তাদের প্রায় সবাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে তরুণ চিকিৎসক, কেউ বাদ যাননি করোনার হাত থেকে। তাদের সবারই যে অন্য কোনো রোগ ছিল এমনও নয়। একেবারেই নীরোগ সুঠামদেহী তরতাজা চিকিৎসকও হেরে গেছেন করোনার কাছে।


                        সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে এত ব্যাপকসংখ্যক চিকিৎসক প্রাণ হারাচ্ছেন কেন? এর আংশিক উত্তর পাওয়া যাবে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ নামে একটি সংগঠনের জরিপের ফলাফল থেকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের ২৬ শতাংশ মে মাস পর্যন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী বা পিপিই পাননি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিইর মান এবং ব্যবহারের প্রশিক্ষণ না থাকায় উদ্বিগ্ন। নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। হেলথ ওয়াচের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ (প্রথম আলো, ২০ জুন ২০২০)।

রিপোর্টে আরও লেখা হয়, মে মাসে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা তখন পর্যন্ত পিপিই পাননি। তাদের মধ্যে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এমবিবিএস চিকিৎসক, ৫০ শতাংশ নার্স ও মিডওয়াইফ এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্যারামেডিকস।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মনের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, বিশেষ করে চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বাড়তে থাকা চাপ কমাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানের পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেজন্য গবেষণায় পিপিইর পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্র্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এই সুরক্ষাসামগ্রী না দেওয়া বা এর মান নিয়ে যারাই প্রশ্ন তুলেছেন, তারা ভোগ করেছেন শাস্তি। যেখানে শিষ্টের দমন আর দুষ্টের পালনের দিকে সরকার বেশি মনোযোগী সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা জানি, সরকারি মাস্ক সরবরাহ না থাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিজ উদ্যোগে চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে বলায় তাকে পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিম্নমানের মাস্ক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকেও বদলি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাবনার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালে। এন৯৫ মাস্কের প্যাকেটে নকল মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে করা হয়েছে ওএসডি! নিম্নমানের পিপিই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নোয়াখালীতে শোকজ করা হয়েছে চিকিৎসককে। এমন বহু উদাহরণ আছে আমাদের সামনে।

বহু জায়গায় এমন নিম্নমানের বা নকল পিপিই সরবরাহের অভিযোগ আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা মহানগর হাসপাতালে মাস্ক নিয়ে নয়ছয় হওয়ার বিষয়ে অবহিত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দেশবাসীকে। এসব নিয়ে তিনি তার ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অবহিত হওয়ার পরও যেসব চিকিৎসক অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন, তাদের শাস্তি পেতে দেখেছি আমরা। আর যারা অভিযুক্ত, তাদের কী শাস্তি হয়েছে, তা আজও জানা গেল না!

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে অর্ধশতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যু ছাড়াও চার হাজারের বেশি চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা যে আরও বেশি, তা বলাই বাহুল্য। কারণ অনেক প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারই আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়িতে অবস্থান করেন এবং খুব সিরিয়াস অবস্থা না হলে কাউকে জানান না।

সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের কারণে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার বাংলাদেশে এত বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। সেই সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের অভাব। এসব সুরক্ষাসামগ্রী কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং তার ডিসপোজাল কীভাবে করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। সারা দেশের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়া হয়নি বলে অনেক চিকিৎসক যথাযথ নিয়মে এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন না বলেও অনেকে ধারণা করেন। চিকিৎসকদের এ ট্রেনিংয়ের ঘাটতির কথাটা উঠে এসেছে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের জরিপেও।

আমরা জানি, কভিড আক্রান্ত হলে তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। উপসর্গ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে কভিড রোগীদের চিকিৎসা চালাতে হয়। এ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মনোবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে যে শত্রু আক্রমণ করবে, তার শক্তি-সামর্থ্য ও তার বিরুদ্ধে শরীরের ভেতরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারার সক্ষমতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে একজন রোগীর কী পরিস্থিতি হবে। এই দুয়ের যোগফল কখনো হবে শূন্য। অর্থাৎ কভিড হলেও কোনো উপসর্গ থাকবে না। কখনো দেখা দিতে পারে মৃদু উপসর্গ। আবার কারও বেলায় ভয়াবহ জটিলতা, এমনকি হতে পারে মৃত্যুও!

অন্যান্য দেশে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী থাকার পরও বহুসংখ্যক চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মনোবল দুর্বল করে দিয়েছে শুরুতেই। আর চিকিৎসকদের চাকরি ও প্র্যাকটিসের ধরন পৃথিবীর খুব কম দেশেই বাংলাদেশের মতো পাওয়া যাবে। এখানে একজন চিকিৎসক সকালে হাসপাতালে যান। বিকেলে যান প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। কখন বাসায় ফিরতে পারবেন তা নির্ভর করে কার রোগীর সংখ্যা কত, তার ওপর। সার্জনরা আবার এই দুয়ের মধ্যে দুপুরে বা রাতে করেন প্রাইভেট ওটি। ফলে তাদের শারীরিক ব্যায়াম ও বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। অথচ ফিজিক্যাল ফিটনেস ও বিনোদন একজন মানুষের ইমিউনিটি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে চিকিৎসকরা জাতির স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তারাই করেন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। শুধু অর্থ উপার্জন আর ভালো খাবার খেয়েই যে শরীর-মন ফিট রাখা যায় না, সেটা কে না জানেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জীবনযাপন পদ্ধতিও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বাড়িয়ে তুলেছে, সেটাও ভেবে দেখা উচিত।

দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা জীবনযাপনের ধরন হয়তো সহসাই পরিবর্তন করা যাবে না। শরীর-মনে যে জঞ্জাল বাসা বেঁধেছে, সেটাও হয়তো এখনই দূর হবে না। তাই চিকিৎসকদের বাঁচাতে আমাদের হাতে আছে মূলত দুটি জিনিস। এক. মানসম্পন্ন করোনাপ্রতিরোধী সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিতকরণ ও দুই. যথাযথ প্রশিক্ষণ। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে নিঃসন্দেহে চিকিৎসকদের মনোবল বাড়বে, কমবে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি।।

মনে রাখতে হবে, কভিড মূলত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ বাঁচব না।


  • সায়ন্থ সাখাওয়াৎ- লেখক, চিকিৎসক ও কলামনিস্ট
  • কার্টসি - দেশরূপান্তর

Monday, June 22, 2020

অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ও ভিন্নমত দমন

কামাল আহমেদ


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তাকে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো বলে বর্ণনা করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দলের নেতা ডা. লি ওয়েন ঝিও। বাংলাদেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই বিশেষজ্ঞ দল সপ্তাহ দুয়েক ধরে অবস্থান করছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালের পরিস্থিতি, রোগ শনাক্তকরণ পদ্ধতি পরিদর্শন করেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে। এই সপ্তাহেই তারা দেশে ফিরে যাবে। ডা. লির কাছে যুগান্তর পত্রিকা জানতে চেয়েছিল, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোন মাত্রায় আছে এবং ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ হবে কি না। যাতে না হয়, সে ক্ষেত্রে চীনের পরামর্শ কী হবে। এ ছাড়া যদি হয়, তাহলে চীন কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

প্রশ্নগুলো আমাদের সবার। তবে এ রকম নিষ্ঠুর সত্য উচ্চারণ করা এখন যে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে, তার আলামত মেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের হিড়িক দেখে। ফেসবুকে সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগে সক্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের পরিণতির কথা মোটামুটিভাবে বেশ আলোচিত হয়েছে। প্রতিদিনই এ রকম অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, যাঁদের কথা আলোচনায় নেই এবং আমরা অনেকেই তাঁদের কথা জানি না। তবে সে প্রসঙ্গ থাক। চীনা বিশেষজ্ঞ লির বক্তব্য কী ছিল, সেটা আগে জেনে নেওয়া যাক। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রায় ১৫ সপ্তাহ পর একটা নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন পাওয়া যায় এই সাক্ষাৎকারে (বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো কাজ হচ্ছে। যুগান্তর, ২০ জুন ২০২০।)

ডা. লি বলেছেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চীনে যেটা হয়েছে যে শত্রু কোথায়, অর্থাৎ করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটা আমরা জানি। ফলে শত্রু দমনে আমরা সুরক্ষা মেনে যথাযথভাবে কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলাদা। এখানে সমস্যা হলো করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটাই জানা দুষ্কর। বলা যায়, জানা যাচ্ছে না। এখানে কাজ হচ্ছে অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এভাবে ভাইরাস মোকাবিলা করা সত্যি দুষ্কর। আমরা মনে করি, যদি কার্যকর লকডাউন, দ্রুত পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো যায়, তবে উত্তরণ সম্ভব। তা ছাড়া চীনের আর্থসামাজিক কাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। চীনে লকডাউন মানে শতভাগ লকডাউন। করোনা উপদ্রুত এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও স্বল্প ঝুঁকি এলাকায় ভাগ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীন কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেও ভালো ফল পেয়েছে। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়, তাদের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করা হয়। ফলে উপসর্গ অনুযায়ী তাদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা সহজ হয়েছে।’

করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. লি ভাইরাস মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন, সেগুলো অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মতোই। তিনি পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর বিষয়ে, তা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর বলেছেন দক্ষতা বাড়ানোর কথা। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পিপিই পরা থেকে শুরু করে সুরক্ষার জন্য যত বিষয় আছে, সব বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার প্রায় চার মাস বা পনেরো সপ্তাহ পর পরিস্থিতি অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এ রকম দুরবস্থা অন্য দু-চারটি দেশে যে হয়নি, তা নয়। তবে সে জন্য সেসব দেশে অনেককে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। জিম্বাবুয়েতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) কেনায় দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মহামারির গোড়ার দিকে গত মার্চেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারার দায়ে কসোভোয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। আমাদের কথা অবশ্য আলাদা। মহামারি শুরুর পর থেকে রাজনীতিকেরা কার্যত নিষ্ক্রিয়—মন্ত্রিসভার চার ভাগের এক ভাগ মন্ত্রীও গণছুটির সময়ে সক্রিয় ছিলেন কি না, তা বোঝা যায়নি। সংকটমুক্তির জাতীয় উদ্ধার কার্যক্রমে চালকের আসনে আছেন আমলারা। কিন্তু পরিকল্পনাহীনতা, প্রস্তুতিশূন্য বাগাড়ম্বর ও নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগের পরিণতি হয়েছে পদোন্নতি আর বদলি।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা কিংবা যেকোনো ধরনের চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগের যেসব ছবি গণমাধ্যমে উঠে আসছে, তাতে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার লক্ষণগুলো অবশ্য বুঝতে কষ্ট হয় না। সমালোচক আর ভিন্নমত প্রকাশকারীদের দমনের বাড়াবাড়ি পুলিশি ব্যবস্থাও তার অন্যতম লক্ষণ। বাস্তবতা যে ছবির চেয়েও কঠিন, তা কেবল তাঁরাই বুঝতে পারছেন, যাঁরা করোনা অথবা করোনা নয়, কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। ভিআইপিদের সিএমএইচে স্থান সংকুলান হবে এমন ধারণাও যখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তখন তিন মাস বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল তাঁদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বিত্তবানদের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে এখন পালাক্রমে শহরের তারকাওয়ালা হাসপাতালগুলোয় করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রভাবশালী পেশাগুলোর সদস্যদের জন্যও আলাদা আলাদা কিছু করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সীমিতসংখ্যক সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলানোর প্রশ্ন এলে, সব তৎপরতা যেন থমকে যাচ্ছে।

নতুন স্থায়ী বা অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো, আইসিইউ প্রতিষ্ঠা, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার প্রকল্প হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিদেশি দাতাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে। অথচ এসব কাজ ছয় মাস আগে জানুয়ারিতে শুরু করার কথা না ভাবতে পারলেও, মার্চ-এপ্রিলে উদ্যোগ নেওয়া হলে এত দিনে সেগুলো সচল হয়ে যেত। ‘আগে খরচ, পরে আয়ের চিন্তা’ এমন অঙ্গীকার প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন পূরণের জন্য ঘোষিত হতে পারলে মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কেন উচ্চারিত হয়নি, সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয় নয়।

সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে গেছে বলে একটি ভাষ্য প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা এই সত্য আড়াল করছেন যে বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী তথ্য ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে বড় যে সত্য আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, তা হলো দায়িত্বশীলদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা। নিজেদের সামর্থ্যের ঘাটতি কাটানোর জন্য প্রশাসন এবং দলের বাইরে আরও যাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে, তাঁদের সংগঠিত করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। গত তিন থেকে পাঁচ বছরে যেসব সরকারি ডাক্তার ও নার্স অবসরে গেছেন, তাঁদের জাতীয় প্রয়োজনে কাজে ফিরিয়ে আনার মতো ন্যূনতম উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে যে মানবিক দায়িত্ব পালন কতটা অর্থবহ হতে পারে, তার নজির দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একজন কাউন্সিলর এবং অন্য একজন নেতার স্বেচ্ছায় করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকারের কাজে। স্বেচ্ছাসেবায় সারা দেশে এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও মানুষ। সংকট মোকাবিলায় একটা জাতীয় ঐক্যের একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে আরও অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ সেই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। উপরন্তু সরকারের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরার পরিণতি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ আর বিরোধীদের নিন্দা।

সমালোচনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সারা বিশ্বেই রাজনীতিচর্চার একটি স্বীকৃত বিষয়। এমনকি রাজনীতিকেরা মৃত্যুর পরও সমালোচনার শিকার হয়ে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিরুদ্ধে বিজয়ী নেতাদের মধ্যে উইনস্টন চার্চিলকে ঘিরে এখন কী ধরনের বিতর্ক হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই কারও দৃষ্টি এড়ায়নি। আরেক নেতা জোসেফ স্তালিনকে এখন রাশিয়াতেও অনেকে নিষ্ঠুর কসাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। সুতরাং মহামারির কালে সমালোচক কিংবা সাংবাদিকদের জেলে ভরে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

  • কামাল আহমেদ - সাংবাদিক
  • কার্টসি - প্রথম আলো/ জুন ২২, ২০২০ 

Sunday, June 14, 2020

করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ!

মির্জা আব্বাস

এবার সবিনয়ে জানতে চাই, 'কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপ কে পাবে' ?


  • মৃত্যুর হার কমাতে এখনি সর্বসাধারণের জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন এর ব্যাবস্থা করুন 
  • করোনা উপসর্গে অসুস্থদের দ্রুত পরীক্ষা নিশ্চিত করুন




করোনা মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ করে ফেলেছে, সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে লাশের মিছিল। এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তার উপর এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলো নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার জন্য একপ্রকার দখলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পত্রিকার পাতায় প্রায় প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে কোন না কোন হাসপাতালে অক্সিজেনের জন্য হাহাকারের খবর।  অসুস্থ অবস্থায় এসে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ঘুরে ঘুরেই জীবন দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। করোনা উপসর্গে অসুস্থরা দিনরাত ঘুরেও পরীক্ষাটি পর্যন্ত করাতে পারছে না, এদিকে মর্গের লাশের হিসেবের সংখ্যার সাথে মিলছেনা সরকারি হিসেব। কবরস্থানে সারিবদ্ধ ভাবে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর। সত্যিই এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারিপাশে।

এসবের মধ্যে গত ক'দিন ধরে কাছের কয়েকজন মুমূর্ষু স্বজনের জন্য প্রয়োজন পড়ে আইসিইউর বেড। পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত হাসপাতালগুলোতে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মিলাতে পারিনি একটি আইসিইউ বেড। মনোকষ্টে নির্ঘুম যাচ্ছে রাত। অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ হয়, আইসিইউ খালি হওয়া মাত্রই আমার একজন রোগীকে তারা উঠাবে এই শর্তে।

এখানে কি বা করার আছে আমাদের, যেখানে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গেলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য স্বজনদের হাহাকার। দেখা যায় হাতে পায়ে ধরে মিনতির চিত্র। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদেরও। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।

খোদ চিকিৎসকরাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলেই আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন একই কারণে মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মো. মনিরুজ্জামান। শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে ভর্তি হতে হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেড না থাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরই তিনি মারা যান।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আরও আছে, কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক (মোট আটটি) হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করতে হলো। অপরদিকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবারই পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা! করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।


বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরেও সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমদী গ্রামের মেধাবী ছাত্রী ইসরাত জাহান উষ্ণ।

প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বিকালে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

সাধারণত প্রতিনিয়ত অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও আইসিইউ প্রয়োজন হয়, কিন্তু হাসপাতালগুলো ঘুরে এলেই বোঝা যায় আসলেই কতজন সেবা পায়। প্রত্যেকটি কোভিড হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা পেতে দির্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।

অন্যদিকে  হাসপাতালগুলোতেও চলছে একপ্রকার দখলে রাখার প্রতিযোগিতা, কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র বিশেষ মানুষের জন্য, আবার কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এভাবে যদি এক এক করে হাসপাতালগুলো বিভিন্ন বেড়াজালে আটকে ফেলেন তবে চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষগুলো কোথায় যাবে ?

অপরদিকে, করোনা পরীক্ষার নামে আমরা দেখছি নাটক। যে করোনা পরীক্ষা আমরা করাতে পারতাম মাত্র ৩০০ টাকায়, সেখানে এখন ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকায় করাতে হচ্ছে।

যদি চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তবে সাধারণ জনগণের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো। কিন্তু সেটাও আজ আপনারা একটি গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। আমরা দেখলাম রাজধানীতে শুধুমাত্র পাঁচটি জায়গায় এই করোনা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে কেন আরো বেশি জায়গায় এ পরীক্ষা ব্যবস্থা করা গেল না ? অতএব এখানে ধরেই নেয়া যায় এই মহামারীতেও কমিশন বাণিজ্যের কথা !

তাই অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, যদি সবকিছুতেই ব্যবসা আর মুনাফা খুঁজেন, তবে এবার দয়া করে জানিয়ে দিবেন, কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপটা কাকে দিবেন। যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাফনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে দাফন করতে মানুষ না পারে ! তাহলে এখান থেকেও একটা ভালো ব্যবসা হবে!

সম্প্রতি একটি সচিত্র প্রতিবেদনে দেখলাম রায়েরবাজার বধ্যভূমি কবরস্থানে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে, প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় একদিকে করোনার রোগীদের দাফন হচ্ছে অন্যদিকে ভেকু দিয়ে সারিবদ্ধভাবে নতুন নতুন কবর তৈরি হচ্ছে। আমার এলাকা খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানেরও একই চিত্র দেখা গেছে ।

পরিশেষে দাবি জানাচ্ছি,  আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনগণকে এভাবে আর আঁধারে না রেখে, মৃত্যু কমাতে দয়া করে এখনি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডসহ অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করুন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা সকল অসুস্থ রোগীর পরীক্ষা দ্রুত নিশ্চিত করুন, প্লিজ একটু গুরুত্ব দিন, একটু ভাবুন।

Monday, June 1, 2020

Post COVID19 world politics: Implications for Bangladesh-India relations


A new world order?

The world is certain to be a different place post COVID19. It will take some time for the world political economy to overcome the shock of the devastating impact that COVID19 will have on the world system. People across the world will face challenges with a sharp break from the recent past of day to day life. Thus, it is no surprise to conclude the politics of international affairs will be different or more so conducted and balanced in a different paradigm. One of the key questions will be, would a post Covid19 world move backwards or forwards in visioning a global future? Another will be, whether the future will be a globally connected one or a draw back to the old Realpolitik narrative of States? Unquestionably, the US as the leading superpower will see its designation challenged in the balance of international politics or amongst equals with a powerful and influential China as a leading political and economic counter balance. 

I believe, Post COVID19 will provide further opportunity for countries to integrate and engage rather than disintegrate and disengage from global connectivity. The US and the Western democracies albeit incapacitated by economic pressures must not move away from the sponsorship of the democratic project.

The more the US integrates and embraces itself with democracies around the globe, the more likely it is to remain an influential and impactful force in great power politics. It will need to adjust its foreign policy to collectively leading on the universal values of democracy and human rights rather than attempting to do anything in isolation. Simply speculating that China’s post COVID19 dominance is as an ill intended project will not get the global traction it may desire. Rather the US should reach out on the values of freedom, democracy and rights with more priority globally. China with its economic resources on the other hand, has already started on a goodwill programme following the outbreak of the pandemic by offering support to countries across the region and beyond by placing the importance of people before regime, as part of its outreach to connect globally.

The recent example of Beijing distributing masks across political parties in Bangladesh regardless of ideological considerations further qualifies this approach to building diplomatic goodwill and empathy. Post-COVID provides for different kinds of opportunities to integrate, connect and maintain 34 relevance for powerful state actors rather than choosing the path of disconnection.

Therefore, I foresee big powers in world politics moving more toward projecting a collective approach to leadership rather than a simplified state centric approach to foreign and economic policy in balancing their influence across the globe.

Where do Bangladesh-India relations sit post-COVID19?


Neither Bangladesh nor India or any other country in the world had any idea that such a devastating pandemic was on the way.

Therefore, to plan to deal with such a crisis in advance of that magnitude was not possible. This pandemic has shown how important it is for countries to establish trust and legitimacy with its citizens in re-assuring the security and future of its people and territory. India in this regard to an extent has been able to establish some of the governance infrastructure to deal with such problems by turning to its own scientific community of experts, on the other hand we have seen a contradictory approach in Bangladesh, where the government has lacked co-ordination and failed to work in a joined up way with scientific experts to establish transparency and trust with its people and instead opting for malign influence which may arouse internal and external security concerns. Without dwelling further on internal politics, I would like to stress on the opportunities and challenges post-COVID presents to strengthen relations between our respective countries.

Bangladesh in some way is fortunate to share geographical proximity with two big powers like India and China providing its sovereign space does not become the battleground of power struggles between these regional powers. The people of Bangladesh in my view would welcome connectivity and integration providing it does not infringe on their right to development and advancement. India like the US was founded on the principles of liberty and freedom and right to self-determination.

Post COVID19 provides an opportunity for South Asian countries to give leadership on formulating and promoting an ‘ethical foreign policy’. Should India integrate its founding principles within its foreign policy and push for an outward looking ethical foreign policy to reach out to nations across the neighbourhood and its people, then it can become an influential leader in the region and beyond, given its size, capacity and resources to connect and lead widely across the globe as well. Political parties in Bangladesh and India will come and go from office, the people and the State will always remain.

Therefore, it is important that both India and Bangladesh exercise an ethical dimension within their foreign policy that is based on national security interests and international values of human rights at the heart of it. Such a policy position will ensure that people to people relations remain intact regardless of internal political scenarios.

Therefore, Post-COVID19 provides India with an opportunity to become a regional leader in striking an embracing foreign policy entrenched by the values in her formation putting emphasis on people to people outreach to strengthen and sustain relations with Bangladesh and the world. Bangladesh on the other hand, cannot hedge between regional powers. It must look to its own interests for the development of its people by encouraging trade, development and cooperation with important development partners to ensure its national interest and regional security.

Therefore, the exercise of ‘soft power influence’ at all levels of the Bangladesh-India relationship might be a more sustainable option for strengthening sustainable relations between both countries in a Post-COVID world.

  • — Humaiun Kobir, Secretary for International Affairs, National Executive Committee, Bangladesh Nationalist Party (BNP) and Special Adviser to Tarique Rahman, Acting Chairperson - BNP.
  • — Policy Watch.