ড. আবদুল লতিফ মাসুম
আধুনিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একটি অনিবার্য বিষয়। ‘রাজনৈতিক দল ছাড়া আধুনিক গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না’ (Schattschneider : 1942:1)। লর্ড ব্রাইস যুক্তি দেখান, ‘রাজনৈতিক দল ছাড়া আধুনিক গণতন্ত্র বাস্তবায়নের কোনো উপায় আজো আবিষ্কৃত হয়নি’ (Bryce 1921:119)। এ রকম একটি অনিবার্যতার ধারাবাহিকতায় জনগণের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়াসে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গঠিত হয়। ১৯৭৫-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ইতঃপূর্বেকার রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি জনগণের লালিত ক্ষোভের কারণে নির্বাচন তথা গণতন্ত্রায়নের কোনো তাগিদ ছিল না।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্রায়নের পদক্ষেপ নেন। কাঙ্ক্ষিত সাংবিধানিক পরিবর্তন, গণভোট অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক দল গঠন, অধিকতর ঐক্যপ্রয়াসী ফ্রন্ট গঠন, অবশেষে জনগণকে একক রাজনৈতিক সত্তায় সংগঠিত করেন। রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্য অর্জন করে।
সামরিক রাজনীতির গতানুগতিক ধারা অগ্রাহ্য করে জিয়াউর রহমান হৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রবক্তারা ‘এক নেতা, এক দল, এক দেশ - বাকশাল’ কায়েম করেছিল। জিয়াউর রহমানের ধাপে ধাপে সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ন ছিল সমসাময়িক ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। সাধারণত সামরিক শাসকেরা বছরের পর বছর স্বৈরতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে তাদের শাসনকে চিরস্থায়ী করে। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্রায়ন ছিল নিপাতনে সিদ্ধ একটি ঘটনা। একজন ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মন্তব্য করেন : ‘He withdrew martial law, civilianized the government, set in motion, a Parliament, allowed open political activities and became a civilian himself' (Baladas Ghoshal : 1982:159)। উদার গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সসম্মানে স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান স্বীকার করেন, ‘The BNP has long been committed to democracy though the party was founded by a military ruler' (Rounaq Jahan : 2015:78)। জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতা পোষণ করতেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন।
আজকের চলমান সঙ্কট থেকে জিয়াউর রহমানের গণতান্ত্রিক মানসিকতার একটি উদাহরণ দেয়া যায়। চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। সে সময়ের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই একক ক্ষমতার মালিক। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা বিচারপতিদের হাতেই অর্পণ করেন। গঠিত হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। দীর্ঘ সময় ধরে (১৯৭৮-২০১৪) তা বিচারপতিদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। ২০১৪ সালে সেই ক্ষমতা ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার প্রত্যয়ে সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। বিএনপি সব সময়ই অভিশংসনের দায় বিচারপতিদের হাতে থাকাকেই নিরাপদ মনে করেছে। এতেই দলগতভাবে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিএনপির গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, নেতা নির্বাচন বিধান, অধিকতর গণতান্ত্রিক।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্রায়নের পদক্ষেপ নেন। কাঙ্ক্ষিত সাংবিধানিক পরিবর্তন, গণভোট অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক দল গঠন, অধিকতর ঐক্যপ্রয়াসী ফ্রন্ট গঠন, অবশেষে জনগণকে একক রাজনৈতিক সত্তায় সংগঠিত করেন। রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্য অর্জন করে।
সামরিক রাজনীতির গতানুগতিক ধারা অগ্রাহ্য করে জিয়াউর রহমান হৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রবক্তারা ‘এক নেতা, এক দল, এক দেশ - বাকশাল’ কায়েম করেছিল। জিয়াউর রহমানের ধাপে ধাপে সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ন ছিল সমসাময়িক ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। সাধারণত সামরিক শাসকেরা বছরের পর বছর স্বৈরতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে তাদের শাসনকে চিরস্থায়ী করে। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্রায়ন ছিল নিপাতনে সিদ্ধ একটি ঘটনা। একজন ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মন্তব্য করেন : ‘He withdrew martial law, civilianized the government, set in motion, a Parliament, allowed open political activities and became a civilian himself' (Baladas Ghoshal : 1982:159)। উদার গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সসম্মানে স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান স্বীকার করেন, ‘The BNP has long been committed to democracy though the party was founded by a military ruler' (Rounaq Jahan : 2015:78)। জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতা পোষণ করতেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন।
আজকের চলমান সঙ্কট থেকে জিয়াউর রহমানের গণতান্ত্রিক মানসিকতার একটি উদাহরণ দেয়া যায়। চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। সে সময়ের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই একক ক্ষমতার মালিক। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা বিচারপতিদের হাতেই অর্পণ করেন। গঠিত হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। দীর্ঘ সময় ধরে (১৯৭৮-২০১৪) তা বিচারপতিদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। ২০১৪ সালে সেই ক্ষমতা ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার প্রত্যয়ে সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। বিএনপি সব সময়ই অভিশংসনের দায় বিচারপতিদের হাতে থাকাকেই নিরাপদ মনে করেছে। এতেই দলগতভাবে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিএনপির গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, নেতা নির্বাচন বিধান, অধিকতর গণতান্ত্রিক।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ, অনুকরণ ও অনুশীলনে বিএনপির চেয়ে অন্য যেকোনো দলের একক কৃতিত্ব নেই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যতবারই গণতন্ত্র বিনাশে পদক্ষেপ নিয়েছে, ততবারই বিএনপি তা পুনরুদ্ধার করেছে। সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি এবং এর নেত্রীর আপসহীন ভূমিকা। বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরশাদের শাসনামলে যে দুটো সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার কোনোটিতেই বিএনপি অংশ নেয়নি। রওনক জাহান তার সাম্প্রতিক গবেষণায় বেগম খালেদা জিয়াকে কৃতিত্ব দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘She succeeded in transforming the BNP from a state-sponsored sarkari party to an opposition party...’। আন্দোলন শেষে ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিএনপি রাষ্ট্রপতির শাসনপদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় ব্যবস্থা মেনে নেয়। এটি ছিল বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা। সবাই জানে বিএনপি জিয়াউর রহমান অনুসৃত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পক্ষে ছিল। তাদের ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচনী ইশতেহারে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার কথা বলা হলেও জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি সংসদীয় পদ্ধতি বেছে নেয়। শুধু তাই নয়, যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসে তখন বিএনপি বিনাদ্বিধায় সংসদীয় পদ্ধতি মেনে নেয়। জনগণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙক্ষার প্রতিধ্বনি করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মেনে নেয়।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির ওপর অন্যায় অত্যাচার এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেন। গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বেগম খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত স্বৈরাচার শ্রেয়।’
পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়ার এই মন্তব্যের বিপরীত ঘটনা ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবশেষে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তারা অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনে সামরিক সরকারকে অতিক্রম করে। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখোমুখি হয়, তখন বিএনপি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে জাতীয় স্বার্থে চলমান সরকারকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়। অথচ ১৯৮২ সালে সেনানায়ক এরশাদ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে এরশাদকে স্বাগত জানায়। বিএনপি সব সময় বলে আসছে, তারা পেছনের দরজার রাজনীতি তথা সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল অনুমোদন করে না।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন একটি অনিয়মতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের আয়োজন করে তখন বিএনপি নীতিগতভাবে এর বিরোধিতা করে। এখন জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নপর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতঃপূর্বে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটি ছিল বিএনপির একটি সৎ ও সাহসী নীতিগত অবস্থান। বিএনপিকে প্রতারিত করার জন্য টেলিফোন সংলাপ ও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা সেই ফাঁদে পা দেয়নি। কারণ, বিএনপি ছল-বল-কলে বিশ্বাস করে না। তাদের দৃঢ়বিশ্বাস অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থায়। ক্ষমতা অন্যায়ভাবে নেয়ার জন্য বিএনপি কখনোই ষড়যন্ত্র ও সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি।
অথচ বিএনপিকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না - এটা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ষড়যন্ত্র অথবা রক্তপাত- যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলে অনঢ় ছিল। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের নীলনকশা প্রতিহত করার জন্য বিএনপি আন্দোলনের সূচনা করে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট জালিয়াতি বৈধতা পেত। অনেকেই আজকাল আওয়ামী প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বিএনপি ভুল করেছিল বলে মনে করেন। নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। জনমত বিভ্রান্ত করার জন্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে-বিদেশে এ ধারণা দেয় যে, ওই নির্বাচনটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে করা হয়েছে। পরে তারা ডিজিটাল ডিগবাজি দেয়। ক্ষমতা দ্বিতীয়বারের জন্য সংহত করতে শক্তি প্রয়োগ করে।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির ওপর অন্যায় অত্যাচার এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেন। গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বেগম খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত স্বৈরাচার শ্রেয়।’
পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়ার এই মন্তব্যের বিপরীত ঘটনা ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবশেষে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তারা অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনে সামরিক সরকারকে অতিক্রম করে। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখোমুখি হয়, তখন বিএনপি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে জাতীয় স্বার্থে চলমান সরকারকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়। অথচ ১৯৮২ সালে সেনানায়ক এরশাদ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে এরশাদকে স্বাগত জানায়। বিএনপি সব সময় বলে আসছে, তারা পেছনের দরজার রাজনীতি তথা সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল অনুমোদন করে না।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন একটি অনিয়মতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের আয়োজন করে তখন বিএনপি নীতিগতভাবে এর বিরোধিতা করে। এখন জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নপর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতঃপূর্বে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটি ছিল বিএনপির একটি সৎ ও সাহসী নীতিগত অবস্থান। বিএনপিকে প্রতারিত করার জন্য টেলিফোন সংলাপ ও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা সেই ফাঁদে পা দেয়নি। কারণ, বিএনপি ছল-বল-কলে বিশ্বাস করে না। তাদের দৃঢ়বিশ্বাস অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থায়। ক্ষমতা অন্যায়ভাবে নেয়ার জন্য বিএনপি কখনোই ষড়যন্ত্র ও সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি।
অথচ বিএনপিকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না - এটা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ষড়যন্ত্র অথবা রক্তপাত- যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলে অনঢ় ছিল। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের নীলনকশা প্রতিহত করার জন্য বিএনপি আন্দোলনের সূচনা করে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট জালিয়াতি বৈধতা পেত। অনেকেই আজকাল আওয়ামী প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বিএনপি ভুল করেছিল বলে মনে করেন। নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। জনমত বিভ্রান্ত করার জন্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে-বিদেশে এ ধারণা দেয় যে, ওই নির্বাচনটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে করা হয়েছে। পরে তারা ডিজিটাল ডিগবাজি দেয়। ক্ষমতা দ্বিতীয়বারের জন্য সংহত করতে শক্তি প্রয়োগ করে।
পরে ২০১৫ সালে নির্বাচন জালিয়াতির প্রথম বর্ষের প্রাক্কালে বিএনপি যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা করে তাকে ক্ষমতাসীনদের প্রচারযন্ত্র সহিংস ও সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস পায়। এ ক্ষেত্রে তারা দেশী-বিদেশী শক্তির মদদ পায়। বিশ্বব্যাপী উত্থিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আওয়ামী লীগ নিজ স্বার্থে এবং বিরোধী নির্মূলে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। ফলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিএনপি কখনোই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপরীতে কিছু চিন্তা করেনি। গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির আস্থার প্রমাণ হিসেবে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে তাদের অংশ নেয়ার কথা বলা যায়।
বর্তমান সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে ব্যাপৃত। বিএনপি ও বিশ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনকল্যাণে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। সরকারি দলের গুম, খুন, জখম, হামলা, মামলা অতিক্রম করে বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারি দলের নিপীড়নের শিকার হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে পাঠিয়ে বা সাজা দিয়ে সরকার নির্বিঘ্নে একটি সাধারণ নির্বাচন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নেই। অতি সম্প্রতি বিচার বিভাগ বনাম শাসন বিভাগ যে অভাবনীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে।’
বেগম জিয়া আরো বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিএনপির বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি এখন দেশবাসীর কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অকুণ্ঠ রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় বিএনপি আগামী দিনগুলোতে বলিষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাধারণ জনগণও ওই একই আশাবাদ পোষণ করে।
বর্তমান সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে ব্যাপৃত। বিএনপি ও বিশ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনকল্যাণে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। সরকারি দলের গুম, খুন, জখম, হামলা, মামলা অতিক্রম করে বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারি দলের নিপীড়নের শিকার হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে পাঠিয়ে বা সাজা দিয়ে সরকার নির্বিঘ্নে একটি সাধারণ নির্বাচন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নেই। অতি সম্প্রতি বিচার বিভাগ বনাম শাসন বিভাগ যে অভাবনীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে।’
বেগম জিয়া আরো বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিএনপির বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি এখন দেশবাসীর কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অকুণ্ঠ রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় বিএনপি আগামী দিনগুলোতে বলিষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাধারণ জনগণও ওই একই আশাবাদ পোষণ করে।
- লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।
[নয়া দিগন্ত]
No comments:
Post a Comment