Search

Monday, October 30, 2017

দৃঢ়তায় হাস্যোজ্জ্বল বেগম জিয়া

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে



কক্সবাজার উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার পথে ফেনীর ফতেহপুর, দেবীপুর ও বিসিক সড়কের মাথায় এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এতে সাংবাদিক বহনকারী ৮টি গাড়িসহ ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলায় সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। ওই সংবাদ তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ছাড়াও গতকালের অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকে প্রথম পাতায় প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি দৈনিক ভোরের কাগজ ‘খালেদার সড়কযাত্রায় উত্তাপ’ শিরোনাম সংবলিত ৩ কলামের সংবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তোলা ছবিতে ‘পথে পথে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভিবাদন জানান’ ক্যাপশনটি রয়েছে। কিন্তু এই গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় ৫৪ বছর আগে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যার দলিলাদি অবমুক্ত করে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের দুটি গণমাধ্যম উৎস ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কিত’ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। তাতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যে ব্যবধানগত মনস্তাত্ত্বিক নমুনা উদ্ভাসিত, সেখানে বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি বোধ করি তার জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে নিরূপিত ও বিবেচিত।

এই কথাটি এ কারণে প্রাসঙ্গিক যে, সকালে বেগম জিয়ার যাত্রা শুরুর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পুলিশের মহাপরিদর্শক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এবং এই সফর যাতে সুন্দরভাবে হয়, সে জন্য সহযোগিতা করবেন’। অর্থাৎ এখানে একজন সাধারণ নাগরিক নয়, বরং গুরুত্ব বিবেচনায় সৌজন্যবশত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কথাটি উহ্য, একজন দলীয় প্রধানের সফর নিয়ে সহযোগিতার আশ্বাসটি পুলিশের মহাপরিদর্শক থেকে নিতে হয়েছিল। কিন্তু কী হলো? বিএনপির মহাসচিব গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি দৈনিককে বলেন, ‘এটা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের মানবিক কর্মসূচি। ক্ষমতাসীনরা এই কর্মসূচিতে হামলা করে খালেদা জিয়ার অগ্রগতি ব্যাহত করতে চেয়েছে। তারা গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে’। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি দৈনিক লিখেছে যে, দুর্বৃত্তরা লাঠিসোটা নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়, এমনকি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। পাশাপাশি ফেনীতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং দাগনভূঁইয়া উপজেলার তুলাতলি, বেকেরবাজার ও রামনগরে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রথম আলো লিখেছে, ‘কাঁচপুর সেতু এলাকায় উল্টো পথেও এলোপাতাড়ি গাড়ি আসতে দেখা যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ছিলেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়’।

কিন্তু যাকে প্রতিরোধ ও প্রতিবন্ধকতায় এত সব আয়োজন, সেই বেগম খালেদা জিয়া কী শংকিত? ছবিতে দেখা গেছে, তিনি দৃঢ়তায় হাস্যোজ্জ্বল ও অভিবাদোন্মুখ। সে কারণেই তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে ৯ বছরের এরশাদীয় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়ে ১৯৯১ সালে অপরাজিতা সরকার প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল নয়, বরং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রচলন করেছিলেন। এমনকি মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থাটিও আইনসিদ্ধ করেছিলেন। আবার মাতা, ভ্রাতা ও পুত্রের মৃত্যুশোক ধারণ করেও অদম্য সাহসিকতায় জনগণের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। 

স্মর্তব্য, পাশ্চাত্যে একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘ফিয়ার ইজ টেম্পরারি। রিগ্রেট ইজ ফরেভার’। অর্থাৎ শংকা অস্থায়ী, অনুশোচনা চিরস্থায়ী।

No comments:

Post a Comment