Search

Sunday, November 22, 2020

তারেক রহমান — নেতা, নেতৃত্ব ও বাংলাদেশ

—  আহাদ আহমেদ 




নভেম্বর ২০, ২০২০ — বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান’র  শুভ ৫৫তম জন্মবার্ষিকী। দেশবাসী শুভেচ্ছা জানায়, ভালবাসা জানায় তাদের প্রিয় এই নেতাকে!বাংলাদেশের সব চাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক   ব্যক্তিত্ব  শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান ও মাটি মানুষের  নেতা তারেক রহমান। 

সংবিধানে বা আইনের কোথাও ফ্যানের সাথে, সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে হাত পা বেঁধে ওপর থেকে ফেলে দেয়ার বিধান কী আছে? ইতোপূর্বে কোন জাতীয় নেতাকে এমন শাস্তিভোগ করতে হয়েছে? মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে নাগরিককে পঙ্গু করার বিধান কি আছে সংবিধানে? শাসকের ইচ্ছাই কি মামলার ভিত্তি হতে পারে? একদম অবাক শোনালেও এর সব হয়েছে বাংলাদেশে। আর এই ভয়ঙ্কর অন্যায়, জুলুমের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি  জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীও এই জুলুমের শিকার মামলায়-হামলায়। যদি জুলুমের পরিমাপ করা হয় তবে আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে তারেক রহমানের চেয়ে বড় কোন রাজনৈতিক নেতা পাওয়া যাবেনা। তারেক রহমান নিজে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানবাধিকারহরণের শিকার তালিকায় সবার ওপরে আছেন।

নেতৃত্বের বয়স  বিতর্ক 

বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বয়স নিয়ে এক কিম্ভূতকিমাকার ধারণা বিদ্যমান। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক তাঁর কথোপকথনে (প্রফেসর সরদার ফজলুল করিম এর সাথে) বলেছিলেন,যে লোকের বয়স ৭০ বছর তাকে আগামীর স্বপ্নের কথা বললে সে তার বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণেই বেশী দূরে দেখতে পাবেনা। তাই এই দেখার বিষয়টা ৩০ বছরের হাতে ছেড়ে দিতে হবে যে সামনের ৭০ বছরকে দেখতে পাবে। এটা তাঁর একটা বক্তব্য, যেখানে দেখার চোখের চেয়ে কল্পনা শক্তির গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার বিরুদ্ধে যখন কোন যুক্তিসঙ্গত  সমালোচনা দাড় করানো যায় নি। কোন অভিযোগ যখন ভিত্তি পাচ্ছিল না,তখন তার চরিত্রহণন হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র ক্ষেত্র। পরিশেষে, অভিযোগটা এখানে এসে দাঁড়ায় যে-  তারেক রহমান রাজনীতিতে ‘শিশু’!! ‘তিনি যথেষ্ঠ  সাবালক নন’ — এসব খেলো যুক্তি। এই আলোচনার কি জবাব হতে পারে। এটার জবাব ইতিহাসের কিছু তথ্য হতে পারে।

তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর।এখন তার বয়স ৫৫ বছর। ২০০২ সালে তিনি যখন  দায়িত্ব নেন দলের একটি পদে তখন তার বয়স ৩৭ বছর। তিনি ২৯ বছর বয়সেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালান। তার দক্ষতার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ২০০১ এর অক্টোবরের  জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাফল্য এনে দিয়ে। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০২ সালেই। তার মানে দাঁড়ায় রাজনৈতিক পরিবারের আবহে থেকে তারেক রহমানের নিজস্ব রাজনৈতিক জীবনের দৈর্ঘ প্রায় ৩০ বছর তথা তিন দশক।

যারা তার বয়স ও ‘সাবালকত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তাদের জন্য বলা যায় একটু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন।

রাজনীতিকদের বয়স

শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নেন ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে। ১৯৪৭ সালে বিএ পাশের বছর তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে একজন মুসলিম রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন।  তখন তার বয়স মাত্র ২৭। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে তিনি ভাসানীর নেতৃতাধীন  আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। তিনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পাকিস্তানে মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট  জিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় তিনি ১৯৩৬ সালে ১৯ জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন।তিনি ৩৫ বছর ৩ মাস বয়সে পাকিস্তানের  সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের  মেজর হিসেবে বিদ্রোহ করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তার এই ঘোষণার বিবরণ ভারতের প্রথম বাংলাদেশ মিশন প্রধান  জে.এন দীক্ষিত এর লিবারেশন এন্ড বিয়ন্ডঃ ইন্দো- বাংলাদেশ রিলেশন্স এ বিস্তারিত এসেছে। এর অনেক স্বাক্ষী আছে মইদুল হাসান তার উপধারা একাত্তরঃ মার্চ-এপ্রিল এ লিখেছেন। জাতীয় সংসদের ২০০৯ এর এক অধিবেশনে জাসদ নেতা মঈনুদ্দীন খান বাদল শহীদ জিয়ার ঘোষণার কথা বলেছেন। সিপিবির সভাপতি মঞ্জুরুল 

আহসান খান সাক্ষাৎকার  দিয়েছেন এই ব্যপারে। আর এর সাথে নিজের কানে শোনা সেই লক্ষ লক্ষ জনতা। ৪০ বছর বয়সে সেনাপ্রধান হন। মাত্র  ৪১ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট  হন। ৪৫ বছর বয়সেই প্রেসিডেন্ট  জিয়া একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধান নেতায় পরিনত হন। তিনি অপরিনত বয়সে এক হত্যাকাণ্ডের  শিকার হন।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের  ৩ জানুয়ারি  বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ২৮ নভেম্বর ১৯৮৩, ৩ মে ১৯৮৪, ১১ নভেম্বর ১৯৮৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ (তারেক রহমানসহ) ও ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ এই ৫ বার বেগম খালেদা জিয়া  কারাবরণ করেন।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তার মত এত কারাবরণের শিকার কেউ হয় নি। এরশাদ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের   প্রতিহিংসার শিকার এই রাজনৈতিক  পরিবার। বেগম খালেদা জিয়া ৩৯ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপির মত একটি বিশাল রাজনৈতিক  দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নেন। তিনি রাজপথে লড়াকু দল হিসেবে গড়ে তোলেন বিএনপি। তিনি ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর  থেকে ৭ দলীয়  জোটের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন  গড়ে তোলেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনিই মধ্যপন্থী মুসলিম প্রধান দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসের স্বচ্ছ ভোটে নির্বাচিত হন । নিউজউইক সম্পাদক ফরিদ জাকারিয়া তার এক নিবন্ধ - ‘Why do they hate us’ এ  এই বিষয়ের প্রতি তাবৎ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ  করেন। 

শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালে- শেখ মুজিবুর রহমান যে বছর ডিগ্রী পাশ করেন সেই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তিনি তার বয়স ৩৪ হবার আগেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামীলীগের সভানেত্রীর  দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা ৪৮ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন।

আমাদের বুদ্ধিজীবি মহলে আরেক সাংস্কৃতিক বৈকল্য কাজ করে। এরা  এমনভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যেন সবাই তাদের বয়সে ছোট একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রেসিডেন্ট জিয়ার চেয়ে বয়সে এক বছরের ছোট ছিলেন। জিয়ার একুশে পদক প্রবর্তন এনাদের মহিমান্বিত  করেছে। কবির চৌধুরী  জিয়ার চেয়ে বয়সে প্রায় ১২ বছরের বড় ছিলেন। শামসুর রাহমান ছিলেন ৭ বছরের বড়। আহমদ ছফা ছিলে বছর সাতেকের ছোট। আর হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন জিয়ার ১২ বছরের ছোট। এই সব ব্যক্তিদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ অনেক নিরপেক্ষ মুল্যায়ন করেছেন জিয়ার।

রাষ্ট্রনায়ক জিয়া থেকে তারেক রহমান

জেমস স্মিথ একজন ব্রিটিশ ফ্রীল্যান্সার সাংবাদিক। তিনি তারেক রহমানকে যেভাবে মুল্যায়ন করেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রথাগত নেতাদের থেকে ভিন্ন কিন্তু তার প্রয়াত পিতার অনেক কাছাকাছি। আর সেটা হলো মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, মানুষকে  চাক্ষুষ করেছিল প্রেসিডেন্ট জিয়া। মাইলের পর মাইল হেটে মানুষকে বোঝার চেষ্টা ছিল তাঁর নিরন্তর। মানুষের  দুঃখ বেদনা ও চাওয়া পাওয়ার সাথে সম্পর্ক  গড়া। বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট, তার ওপর হামলায় প্রথম যে তৎকালীন তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ ঘোষণা  করেছিলেন। তিনিই জিয়া,শহীদ জিয়া। ঠিক পিতার দেখানো পথেই হেটেছেন তিনি। একদম মুলে, তৃনমূলে ছুটে গেছেন তিনি। নেতাদের বাসায় বসে ‘সাক্ষাৎ’ দেবার রাজনীতিকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন ৬৪ জেলায় ২০ টি রাজনৈতিক  অঞ্চলে। নেতারা মঞ্চে বসে মাটির সাড়া ও শব্দ  শুনেছেন।

জেমস স্মিথ এও বলেছেন যে, যদি জনগনকে তার অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে  সচেতন করা যায় তবে তার প্রতিফলন  ঘটে রাজনৈতিক  প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। তারেক রহমান জনতার ক্ষমতায়ন  করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন জিয়ার এই মানুষের কাছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবার কারণেই তাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু তার অসময়ে প্রস্থানের পর তার জানাজায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ  জমায়েত হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া যখন ২০১০ সালে সারাদেশব্যাপী  রোডমার্চ করেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ  রাত জেগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনগনের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ  দেখে  ভারত দাওয়াত দিয়ে নিয়েছিল তাকে। কিন্তু জামাত ও কিছু দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়ায় সেই কূটনৈতিক তৎপরতা  বাধাগ্রস্থ  হয়। ভারত প্রত্যক্ষ অবস্থান নেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। আন্দোলনকে সরকারের গোয়েন্দা তৎপরতায় নিশ্চিহ্ন  করা হয়। অর্থাৎ  বিএনপি যখনই তৃনমুল রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে তখনই তার ওপর হামলে পড়া হয়েছে।

উন্নয়ন ধারণা ও তারেক রহমান

স্মিথ উল্লেখ করেছেন, তারেক রহমান  ১৯৯৬- ২০০১ এর আওয়ামীলীগ সরকারের ভয়াবহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তিসংগত রাজনৈতিক প্রচার  চালিয়েছেন। তিনি তার পিতার মতই  দেশব্যাপী ব্যপক পরামর্শ সভা করেছেন। তিনি তার সফরের সময়ে জনতার  জীবনমান উন্নয়নের  জন্য কৃষকের জন্য বীজ,সার, হাস-মুরগী- ছাগল বিতরণ  করেছেন।সর্বোপরি তিনি তার হাসি দিয়ে কৃষককে উজ্জীবিত  করেছেন।এই পরামর্শ সভার সরাসরি ফলাফল হলো ২০০১ এর বিএনপির ভূমিধসবিজয় ও সরকার গঠন।সবাই চেয়েছে তিনি নেতৃত্ব দিক।কিন্তু তারেক রহমান সলাজ দুরত্ব রেখে জনতার কাতারে তাদের কাধে কাধ রেখে চলেছেন।

তারেক রহমান আদর্শ  হিসেবে ইতো  মধ্যেই  ঠিক করেছিলেন তিনি পিছিয়ে পড়া কৃষি  ও কৃষককে আর্থিকভাবে নিরাপদ করবেন। দারিদ্র্যের অভিশাপ বিমোচন করবেন। এই কাজের অংশ হিসেবে পশুপালন ও সম্পদ  সাহায্য নিয়ে তিনি গ্রামীন জনগোষ্ঠীর পাশে দাড়িয়েছেন। ছোট বড় পোল্ট্রি , মাছ চাষ, পশুখাদ্যের আমদানীবিকল্প শিল্প গড়তে সহযোগিতা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।২০০১-২০০৬ মেয়াদে পোল্ট্রি শিল্পে এক নিরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এর সব  ছিল তারেক রহমানের মাটিমুখীনতার রাজনীতি। এখনকার সরকার কোন অসামান্য কাজ সাধন করেনি। এরা শুধুমাত্র উপভোগ করেছে। যেমন  বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন  জিয়ার হাত ধরে। রেমিট্যান্সের গোড়াপত্তন শহীদ জিয়ার হাত ধরে। কিন্তু এই বিকাশের পতপত উড়ানো পতাকার ভিত্তির কথা কেউ বলে না। ঠিক তেমনি আজকে সারাদেশে এই যে সহজলভ্য ডিম, মুরগীর মাংশ তার কৃতিত্ব খালেদা জিয়ার-তারেক রহমানের নীতির। পেটে খেলে পিঠে সয় এই নীতির কারণেই ২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যখন মন্দা, বাংলাদেশে তার হাওয়া লাগেনি-সেটার কারণও জিয়ার শাসনামলে নেয়া কৃষিনীতি আর ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়ার নেয়া কৃষিবান্ধব নীতি। এই নীতির স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে ২০০১- ২০০৬ সালের মৎস, পোল্ট্রি ও শষ্যবহুমুখীকরণ প্রকল্প।

শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রসারে তারেক রহমান

তারেক রহমান ছাত্রদের শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। এক্ষেত্রে তিনি কোন দলীয়করণ  প্রশয় দেন নাই। তৃনমুল  সম্মেলন আয়োজন  করে তিনি যৌতুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরে এর ভিত্তিতেই নীতিমালা গৃহীত হতো। ফলে এই গৃহীত  নীতিমালার ভিত্তিও ছিল তৃনমুল ধারনা। যেমন জেমস স্মিথ উল্লেখ করেছেন, উদাহরণ দিয়েছেন যে বাংলাদেশের ৫ শতাংশ মানুষ এজমারোগে ভুগতো যে তথ্য তারেক রহমান তৃনমুল সম্মেলন থেকে গ্রহন করেন। তখন সারাদেশে মাত্র একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিল।তিনি এক বছরের মধ্যে দুইটি কেন্দ্র গঠন করেন।

স্মিথ বলেন তারেক রহমান শুধু বর্তমানকেই নিয়েই  থাকেন না। তিনি শিক্ষা ও যুবসমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দেখেন। এইসব  গুনাবলী কিন্তু আওয়ামীলীগের চোখে অপরাধ। তারেক রহমান তার প্রাগ্রসর চিন্তা দিয়ে ধ্বসিয়ে দিয়ে ছিল আওয়ামীলীগের সাজানো পরিকল্পনা। তাই তারা তারেক রহমানের প্রতি ক্ষমাহীন।

স্বৈরাচার বিরোধী তারেক রহমান

তারেক রহমানকে পঙ্গু করে ফেলা, রাজনীতিতে অপাঙতেয় করে তোলা ছিল দেশী ও বিদেশী চক্রান্তের অংশ। চক্রান্তে অস্বীকৃতি জানানোর পরিনামে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭ এ অবৈধ সেনাসমর্থিত উদ্ভট সরকার তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। এরপর তার ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন। তিনি গুরুতর স্পাইনাল ড্যামেজের শিকার হন।তাকে প্রয়োজনীয়  চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয় যাতে তিনি পঙ্গু হয়ে যান। আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে এই ধরণের প্রতিহিংসামূলক নির্মমতার শিকার কোন রাজনৈতিক নেতা হন নাই। তাই তারেক রহমান হলেন এক নির্যাতিত নেতার প্রতিকৃতি।

জেমস স্মিথ আরো বলেন-তারেক রহমান সব সময় বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তার  মাটির কাছাকাছি জনতার হাতে,তৃনমুলের হাতে। তিনি তাদের নেতা একদম নিচ থেকে উঠে আসা এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক। 

তৃনমূল ও বিএনপির অখন্ডতায় তারেক রহমান

রাজনীতিকে তারেক রহমান যে তৃনমুলে নিয়ে গেলেন তার ফলাফল কি? এই ফলাফলের জন্য বাংলাদেশকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর উত্তর হলো ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর লগি লাঠি বৈঠা  থেকে অদ্যাবধি সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ও এরই ধাবাহিকতার আওয়ামী মহাজোট সরকার’র রাজনীতি। এই জবরদস্তির সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১৪ বছরে (২০০৭-২০২০) আওয়ামী লীগ  তার সাথের, জোটের, ভোটের সব দলকে টুকরায় পরিনত করেছে। আওয়ামী লীগ এদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, ইমরান এইচ সরকার, মওলানা শফি হুজুর, ভিপি নুরুল হক নুর কেউ বাদ যায় নি এই ভাঙ্গন থেকে। শুধু তাদের সাফল্য আসেনি বিএনপির ক্ষেত্রে। বিএনপিকে রাজনৈতিক ক্লিঞ্জিংয়ের শিকার হতে হয়েছে,৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী ও মামলায় আক্রান্ত দলটি। রুটি রুজিতে হামলার শিকার হয়েছে নেতাকর্মীরা। কিন্তু দল ভাঙ্গতে পারে নি। এটাই তারেক রহমানের তৃনমুল রাজনীতির সাফল্য। এটা ঠিক দল ক্ষমতায় থাকলে সুযোগ-সন্ধানী ও ব্যাপারীর দল ঘিরে ফেলে। কিন্তু অনেক অত্যাচার করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করা সম্ভব হয় নাই।

তারেক রহমান ও মাটিমুখীনতা

চীনা দার্শনিক ও পন্ডিত কনফুসিয়াসকে ৫০০০ বছর আগে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এত যে বিপুল জনগোষ্ঠী  এ নিয়ে কি করা যায়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন - এদের ধনী বানাও আগে। তারপর? এরপর এদের শিক্ষিত করো, জ্ঞানী বানাও। কনফুসিয়াস  বলেছিল, " Don't want to do things quickly and don't seek petty gains.You cannot reach your goals if you want to be quick and you you cannot accomplish great things if you seek petty gains."

এছাড়াও সরকার নিয়ে কনফুসিয়াসের বেশ কিছু ধারণা চীনের বুদ্ধিমান নেতারা কাজে লাগিয়ে চীনকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক (Meritocratic) রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। কনফুসিয়াস অতি ঘনত্বের দেশে জনগণকে প্রথমে ধনী করার কথা বলেছেন, এরপর বলেছেন শিক্ষিত করার কথা।  ‘What a dense population! Make them rich." ধনী বানিয়ে এই জনতাকে দিয়ে কি করবেন?  এই প্রশ্নের উত্তরে কনফুসিয়াস  বলেন,  ‘Educate them’।  

রাজনৈতিক নেতৃত্বের  ধারাবাহিকতা 

বিবিসি সাংবাদিক এলেস্টেয়ার লসন  লিখেছিলেন - তারেক রহমানের বাবা ও মা দুজনেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব  দিয়েছেন। "বাংলাদেশের মানুষ  বলে, জিয়াউর রহমান আমাদের নেতা ছিলেন,খালেদা জিয়া আমাদের নেতা এবং তারেক রহমান  আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা"। এখানে অত্যুক্তি কিছু নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভিত্তি কি শেখ মুজিব নয়? এই যে জনতার প্রচার-লক্ষ কোটি মানুষের  আকাঙ্খা - তারেক রহমান তাদের নেতা এটা অসত্য নয়। এটাই সত্য। তারেক রহমান বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই  দলের নেতা হবার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছেন। যে সব কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক পরিবারে নেতৃত্বের  সংস্কৃতি গড়ে উঠে তার ব্যতিক্রম তার ক্ষেত্রে কেন হবে?  মতিলাল, জওহরলাল নেহেরু পরিবারে ইন্দিরা-রাজীব-রাহুল যেভাবে বিকশিত হয়েছে সেই একই পথ ধরে মুজিবের রাজনৈতিক  উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা। আর একই নিয়মে  তারেক রহমানও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, তিনি কোন ব্যতিক্রম নন। এখানে নেপোটিজমের প্রশ্ন অবান্তর।

উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলের ঐক্যের  কেন্দ্র ( Center of Unity) এখনো পরিবারগুলো ধরে আছে।এটা ভাল বা মন্দ এই বিবেচনার ভিত্তি পশ্চিমের মতামত হতে পারে না। পশ্চিমের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য সংখ্যা উপমহাদেশের একটি দলের রাজনৈতিক জেলার সদস্যের সমানও নয়। তাই ভিন্ন সাংস্কৃতিক মানের কোটি সদস্যের দলের ঐক্য  "লিবারেল" ধারণা দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যে কারণে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রীরা জড়ো হবার আগেই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ধারায়  বিভক্ত হয়ে পড়ে।

অসম বিচারের শিকার নেতা

২০০৪ সালে দি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক সম্পাদকীয় লেখেন। সেখানে তিনি তারেক রহমানের অনেক সমালোচনা করেন। এই সমালোচনা ছিল এরকম যে, বেগম খালেদা জিয়া তার ছেলেকে  রাজনীতিতে এনে ঔদ্ধত্যের (Audacity) পরিচয় দিয়েছেন। কারণ তার যুক্তিতে তারেক রহমান তখনও তার চোখে ‘নাবালক শিশু’।এই চিন্তার ধরণের একটা ব্যখ্যা হলো এটা একটা রোগ - যার নাম বিচ্ছিন্নতা (Alienation)। এই চিন্তার ফলে মাহফুজ আনাম তার সমবয়সী ছাড়া কাউকে ধর্তব্যের মধ্যে নেবে না। তিনি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন এভাবে- "তিনি নিরলসভাবে পুরানা নেতাদের সরিয়ে তার বলয়ের নেতাদের মাধ্যমে নেতৃত্ব  প্রতিষ্ঠা করতে চান"।এই মাহফুজ আনামরা কি  শেখ হাসিনা বা সজিব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারবেন?  

প্রচারবিমুখ  তারেক রহমান

তবে প্রথিতযশা  অনেক সাংবাদিক তারেক রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, তিনি পিছনে থেকে অনেক কাজ করতেন। নাম ফুটানোর বাতিক তার ছিলনা। তিনি খুব বিখ্যাত ছিলেন তার স্বল্পভাষিতার জন্য। তার গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সমালোচিত হয়েছে। কারণ তার বিরুদ্ধে আনীত দূর্নীতির কোন অভিযোগ প্রমানিত হয় নাই এবং তাকে বলির বকরা (scapegoat) বানানো হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে  গণমাধ্যমে অতিরঞ্জন  ও ফাপিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হতো। কিন্তু এইসব ভিত্তিহীন অভিযোগের সবগুলিই ছিল সত্য থেকে অনেক দূরবর্তী। প্রফেসর আসিফ নজরুল যেমনটা বলেছিলেন যে,সরকারের উচিৎ তার বিরুদ্ধে কি কি দূর্নীতির অভিযোগ আছে সেটা জানানো।

জবরদস্তির শাসনামল ও তারেক রহমান

একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের ভিত্তি হলো জনতার আকাঙ্খা। তাই এই আইন প্রনয়ন হবার আগে সেটা সংসদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়। নিয়ম হলো চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া,বিতর্ক হওয়া এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সেটা গৃহীত হওয়া। এর পরের ধাপ, সেটা প্রেসিডেন্টের  অনুমোদনের জন্য পাঠানো।প্রেসিডেন্ট  অনুমোদন দেক বা না দেক সেটাই পরে আইনে পরিনত হবে। এটাই সংসদীয় পদ্ধতির নিয়ম। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন  হলে এবং সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্টের হাতে জমা হয়।এখানে সংসদীয় ব্যবস্থা বলে একটা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু সংসদে গৃহীত বিল আইন হিসেবে অনুমোদন -পুরোই  নির্ভর করে প্রেসিডেন্টের ওপর। ব্যবস্থাটির নাম  প্রেসিডেন্টশিয়াল পদ্ধতি।

বাকশালী শাসনের শিকার বাংলাদেশ

বাকশাল ব্যবস্থার সমালোচনা যারা করেন তারা শুধু এর একদলীয় বিষয় নিয়েই বলেন বা এর নীপিড়নমূলক বিষয় হাইলাইট করেন। কিন্তু বাকশালের গুরুত্ব ও ভয়ংকর দিক হলো এর আইনী কাঠামো। এখনো আকাশ থেকে পড়ার বাকীই আছে! সবাই জানেন যে, ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ  পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট  ইয়াহিয়া খান LFO বা ‘লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক’ ইস্যু করেন যেখানে ৫ দফাকে  ‘মৌল নীতি’ (Fundamental Principles)  হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রের ফেডারেল প্রজাতান্ত্রিক চরিত্র, ইসলামী আদর্শ  ও স্বায়ত্তশাসন নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর ছিল। স্বায়ত্বশাসন নিয়ে যা বলা ছিল, সেটাকে Quid Pro Quo বা  এক হাতে দিয়ে অন্য হাতে ফিরিয়ে নেবার মত! এলএফওতে বলা হয়েছিল - "ফেডারেল  সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে - যার মধ্যে সংসদীয়, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক  ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা দিয়ে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা রক্ষা করা যায়"। (Bangladesh: A Struggle for Nationhood by Mohammed Ayoob* Anirudha Gupta*Rahmatullah  Khan* GP Despande* R Narayanan* Sisir Gupta,  1971, Vikas Publication, Delhi,India page - 33-34, This part written by  Mohammed Ayoob at his Article named - Background and Developments)। এই পুস্তকের লেখকেরা জওহেরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক  ছিলেন। এপ্রিল ১৯৭১ সালেই এই বই লিখিত হয় - অনুবাদক)। দুইটি অধ্যায় বিশেষত ২৫ ও ২৭ নিয়ে পুর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। যার মুলে ছিল ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রনয়ন ও এলএফও-এর ব্যখ্যা নিয়ে। ২৫ নম্বর অধ্যায়ে বলা ছিল - সাংবিধানিক বিল সংসদে পাশ হলেও তার চূড়ান্ত অনুমোদন একমাত্র প্রেসিডেন্ট প্রদান করবেন। যদি প্রেসিডেন্টের সেই অনুমোদন/অস্বীকৃতি  সংসদে প্রত্যাখ্যাত হয় তবে প্রেসিডেন্ট  সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারবেন!! 

২৭ নম্বর অধ্যায়ে বলা ছিল-"LFO সংক্রান্ত  যে কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ পোষন করা হলে  একমাত্র প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং কোন আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবেনা"। এখানে এমনও যুক্ত ছিল যে-"প্রেসিডেন্ট বা জাতীয় সংসদ এই আদেশের কোন সংশোধনী  আনতে পারবে না"(ibid, page 34)।

এখন কি বাকশাল ব্যবস্থার সাথে ইয়াহিয়ার এলএফও-এর কোন মিল খুজে পাওয়া যায়? যারা বাকশালকে মহান করে কিংবা বিরোধীতা করে সবাই এই মৌলিক বিষয়  এড়িয়ে যায়। ফলে বাকশালওয়ালাদের কাছে সেটা দেখা দেয় ‘দ্বিতীয়  বিপ্লবের  কর্মসূচী’ হিসেবে।। আর বিরোধীতাকারীদের কাছে শুধুই ‘একদলীয় শাসন’  হিসেবে।আসলে বাকশাল হলো ইয়াহিয়ার এলএফও -এর প্রেতাত্মা শুধু মোড়কটা ভিন্ন।

 

আইন বিচারবুভুক্ষা ও মামলার শিকার তারেক রহমান

আইনের  ভিত্তি নিয়ে কথা হলো। কিন্তু বিচারের ভিত্তি কী হবে? বিচারের ভিত্তি হবে আইন। তাই পরিশেষে, বিচারের ভিত্তি আসলে জনগনের আকাঙ্খাই হয়।

তারেক রহমান আধুনিক রাজনৈতিক  ইতিহাসে সবচাইতে  নির্মম রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও সবচাইতে বেশী মামলার শিকার। প্রায় ৩৪ টি মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। এসব মামলায় রাষ্ট্রের সংক্ষুব্ধতা লক্ষনীয়।মামলা সমুহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ — 

  • ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা। ২০১১ সালের ৬ জুলাই এ মামলার বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৩ তারেক রহমানকে খালাস দেন। উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২১ জুলাই নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।
  • ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।
  • দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা (মামলা নং ২৯/১১ ও ৩০/১১) 
  • গুলশান থানার ৩৪(৩)০৭ নম্বর দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলা বিচারাধীন। 
  • ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১২৩৩/১৪ নম্বরের মামলাটি। 
  • ৯৫৪/১৪, ৮৪১/১৪, ৩৮০/১৫, ৭২০/১৫ এবং ১৯৬/১৫ নম্বর মামলা রয়েছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন।
  • মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৮০/১৪ নম্বর মানহানির মামলা। 
  • ঢাকার অন্যান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১৯৬/১৫, ৬১৭/১৫, ৯৪১/১৫ ও ৩৯৩/১৪ নম্বরের মামলা। 
  • গুলশান থানার ১০২(৩)৭ ও ১৩(৫)০৭ নম্বর মামলা এবং কাফরুল থানার ৫২(৯)০৭ ও ৬৮(৩)০৭ নম্বর মামলাটি  তদন্তাধীন রয়েছে।
  • কাফরুল থানায় ২০০৭ সালে দায়ের করা (মামলা নং ১৭/২০০৭) চলছে।
  • ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা (১৫৫৮২/১৭) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা চলমান রয়েছে। 
  • ঢাকার সিএমএম কোর্টে চারটি মানহানি মামলা (৪৯৯/৫০০ ধারায়) চলমান।

 

জনগণের নেতা তারেক রহমান

দুই দশটি মামলা, বার কয়েক পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ ও জেল ঘুরে এলেই ভারতীয় উপমহাদেশে ‘কারানির্যাতিত’ নেতার মোহর পড়ে যায়। এর মধ্যে নির্যাতন যে নেই,অবশ্যই  আছে। কিন্তু যে শারিরীক  নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান হয়েছেন তার তুলনা হতে পারে না। উপমহাদেশ কেন সারাবিশ্বেই তার তুলনা নেই। এটাকে কোন যুক্তিতে যুক্তিযুক্ত যারা করে, তারা আসলেই ঘাতকের দল। যারা মনে করেন নেতৃত্ব পায়ে হেটে তারেক রহমানের কোলে চড়ে বসেছে তারাও পক্ষান্তরে অন্যায় ও জুলুমেরই সমর্থক। কঠিন অগ্নিপরীক্ষা  দিয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের  জনগনের নেতা।


লেখক রাজনীতিবিদ । 

তথ্যসুত্র —  

Political Thoughts of Tarique Rahman: Empowerment of the grassroots people

2.Sayings of Confucious,Compiled and Translated  Ding Wangdao,13.17)

Sayings of Confucious,Compiled and Translated by Ding Wangdao,13.9)


No comments:

Post a Comment