Search

Friday, November 27, 2020

তারেক রহমান সম্পর্কে যা শুনেছি ও শুনছি আর যেরকম দেখেছি


—  মিনার রশীদ 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর সাথে লেখক মিনার রশীদ। 
সবকিছু নিজের চোখে কিংবা নিজের অনুভবে পরখ করে নেওয়ার স্বভাবটি আমার মজ্জাগত। আমার ব্যক্তিগত , পারিবারিক এবং পেশাগত জীবনেও আমি এই পলিসিটি অনুসরণ করি । আমার মা বোন সম্পর্কে আমার স্ত্রীর বর্ণনা কিংবা আমার স্ত্রী সম্পর্কে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কোনো মন্তব্যকেও একই ভাবে পরখ করে নেই। যাতে কারো সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টিতে সেই ব্যক্তির উপর অবিচার করে না বসি । এর ফলে আমার পরিবারে বড় কোনো জটিলতা দেখা দেয় নাই । পেশাগত জীবনেও অনেক মানুষের কাছ থেকে এমন অপ্রত্যাশিত ভালো ব্যবহার, আচরণ পেয়েছি যা শুনে অন্যরা অবাক হয় । আমি কান দিয়ে যা শুনি , অন্য চার ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে তা পরখ করে নেই ।

২০১৬ সালের অক্টোবরে এই অনুসন্ধিৎসু মন নিয়েই লন্ডনে যাই তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে। বিষয়টি আমি কখনোই পাবলিক করতে চাই নি । কারণ অনুসন্ধানটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, খরচ সম্পূর্ণ নিজের পকেট থেকে । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ বিষয়ে কিছু না লিখলে কোথায়ও অবিচার করা হবে । 

তাই আজ চার বছর পর সেই ঘটনাটি কিঞ্চিৎ লিখছি । তখনকার একটি ছবিও সংযুক্ত করলাম। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আগে শোনা অনেক কিছুই মেলাতে পারি না । আমি এদেশের কেউকেটা কেউ নই । তারপরেও আমাকে যতটুকু সময় দিয়েছেন, আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন তাতে তাকে এতবড় দলের সেকেন্ডম্যান বলে মনে হয় নাই। আমি  সেখানে থাকাবস্থায় দলের বেশ কয়জন সাধারণ নেতা কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি । তাদের সকলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও এমন কিছু চোখে পড়ে নাই। 

আমি চলে আসার দিন হোটেল থেকে নেমে আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন!

আমার তিন দিন অবস্থানের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়েই ওয়ান টু ওয়ান আলোচনা করেছি। একটা নলেজ বেইজড পার্টি ও দেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি। আমি বলেছি আমার থিওরিটিকাল কথা বার্তা। জবাবে উনি বলেছেন উনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা। সেগুলোর কিছু পাল্টা জবাব দিয়েছি। অনেকগুলির জবাব দিতে পারি নাই।

একুশে আগস্ট নিয়েও  খুচিয়ে খুচিয়ে প্রশ্ন করেছি। ক্ষমতা গ্রহণ করলে নেতা কর্মীদের এতদিনের  ক্ষোভ কিভাবে সামাল দিবেন  — এক পর্যায়ে সেটাও জানতে চেয়েছি। নির্বাসিত একজন নেতা যার শত শত নেতা কর্মী গুম হয়েছে, হাজার হাজার জেল খাটছে, লাখ লাখ নেতা কর্মীর মাথায় মামলা  — সেই নেতার পক্ষে  এমন প্রশ্নের  জবাব দেয়া সত্যিই কঠিন।  উনার জবাব আমার মন:পুত না হলে পাল্টা প্রশ্ন করেছি । এই সব প্রশ্ন এবং পাল্টা প্রশ্নে আমার মনে কোনো ভয় জাগেনি  যে আমি একজন ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্মির একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর তারেক রহমানকে বেশ কিছু নসিহত  করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তারেক রহমান দলের বয়স্ক নেতাদের সম্মুখে  হাত নেড়ে নেড়ে  কথা বলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিডিওটি দেখে একটু খটকা খেলাম।  বয়েস হিসাব করে দেখলাম উনি নিজেও তারেক রহমানের জুনিয়র হবেন। একজন সিনিয়রকে তিনি যেভাবে আদব শিক্ষা দিচ্ছেন, সেটিও অনেক দৃষ্টিকটু ঠেকেছে ।

আজকে যেখানে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের প্রয়োজন সেখানে এই ধরণের একা একা গোল দেয়ার প্রবণতা কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার বিষয়। আমরা ফ্যাসিবাদি শক্তির সার্বিক শক্তি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল না থাকার কারণেই এরকম আচরণ করছি ।

আমরা যেভাবে ফ্রি স্টাইলে একজন আরেকজনকে সমালোচনা করি, সবাই নিজেকে হিরো এবং অপরকে জিরো জ্ঞান করি তাতে এই ফ্যাসিবাদকে সরানো দুরূহ হয়ে পড়তে পারে

আমরা এখন একমত যে একটি গণজাগরণ ও গণঅভ্যুত্থান  ছাড়া  এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না । তজ্জন্যে সকল মহলের বোধ আর ভাবনায় পরিবর্তন জরুরি। বড় রাজনৈতিক দলকে যেমন তার বড়ত্বের অহমিকা ও নেতৃত্ব হারানোর ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তেমনি ছোট খাট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও একা একা হিরো বনার বৃত্ত তথা ফ্যান্টাসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । একটা ফায়ার বা আগুনের জন্যে যেমন একটি স্পার্ক দরকার তেমনি সেই স্পার্ককে অক্সিজেন জোগানের জন্যে বাতাস দরকার । সেই বাতাসটি সরবরাহ করবে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি । 

তারেক রহমান’র ৫৫তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা। 


  • লেখক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 

 


No comments:

Post a Comment