দ্য ডিপ্লোম্যাটকে সাক্ষাৎকারে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান —
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান —
আগামী ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই নির্বাচন বর্জন করেছে। দলটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নিবার্চন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এই নিয়ে গত এক বছর ধরে তারা দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে। বহু সভা-সমাবেশ হয়েছে এর বিরুদ্ধে।
দ্য ডিপ্লোম্যাটের সিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্যাখ্যা করেন, কেন তার দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে শুধু যে রাজনৈতিক দলগুলোই অংশগ্রহণ করবে না তা নয়, ভোটাররাও এতে অংশ নিতে পারবে না। এর সবই পূর্বনির্ধারিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ২০০৬-২০০৭ সালে ১৮ মাস জেলে ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন।
এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান কথা বলেছেন বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল, অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে। ডিপ্লোটম্যাটকে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগ অযথাই। অতীতে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগও বহুবার জোট গঠন করেছে।
তারেক রহমানের পুরো সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য ভাষান্তরিত করেছে বাংলা আউটলুকের অনুবাদ ডেস্ক।
প্রশ্ন : ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করার ব্যাপারে বিএনপি একেবারেই অনড় কেন?
তারেক রহমান : বিএনপি একাই নয়, আরো ৬২টি গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দল ৭ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের মুখের দিকে তাকিয়ে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে। একটি অর্থবহ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। যাতে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন। তাদের ভোট যথাযথভাবে গণনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগের নির্বাচনগুলো হয়েছে প্রহসনমূলক। কারচুপি আর অনিয়মের কলঙ্কিত ইতিহাস হিসেবে সেগুলো চিহ্নিত। সারা দুনিয়া সেসব জানে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনো বিরোধী দল ছাড়াই নির্বাচন করেছিল, এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল বলে দাবি করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা রাতের বেলা ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ আরেকটা জালিয়াতির নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই তাদের সাথে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর আলোচনা-সাপেক্ষে ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে গেছে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো মূলত আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক মিত্র, তাদের ওপর জনগণের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই। এদের মধ্যে জাতীয় পার্টি একমাত্র দল, যার কিছু জনভিত্তি রয়েছে। জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা এক বৈঠকে নির্বাচন বর্জন ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বিলুপ্ত করার পক্ষে তীব্র ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। পরে গোয়েন্দারা তাদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়াতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ডামি প্রার্থীদের জয়-পরাজয় মূখ্য বিষয় নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করে তিনি বিএনপিকে বিভক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। তথাকথিত কিংস পার্টি (বিরোধী দল থেকে টেনে নেওয়া লোক নিয়ে রাষ্ট্রীয় সমর্থনে গঠিত দল) গঠনে পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছেন তিনি। এর উদ্দেশ্য ছিল মিথ্যা অন্তর্ভুক্তির ধারণা তৈরি করা, যেন হাজার হাজার প্রার্থীর সাথে বিরোধী দলও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বলে মনে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগিতে গোলযোগ লেগে গেছে। জাকের পার্টি ২০০ টি আসন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যান্য ছোট দলগুলোর অনেক প্রার্থীও প্রত্যাহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আমরা যদি শেখ হাসিনার অধীনে উপ-নির্বাচনগুলো দেখি, যেগুলোর তেমন গুরুত্বও ছিল না, সেখানেও আওয়ামী লীগের কমীর্রা ভোটচুরির মচ্ছব বসিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সাহায্যে নির্বাচন কারচুপির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও অভ্যাস তারা অব্যাহত রেখেছে। তাদের আয়োজিত প্রতিটি নির্বাচনেই দেখা গেছে বিরোধী প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটার তালিকায় ভোটদাতার নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। জাল ভোট হয় ব্যাপক হারে। ব্যালট বাক্স ভরে যায় তাদের ভোটে। গত মাসেই নির্বাচনী জালিয়াতির এক সুউচ্চ শিখরে পৌঁছুতে দেখেছি আমরা, আওয়ামী লীগের এক পোলিং এজেন্ট ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। এটা স্পষ্ট যে যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে ততদিন অনিময়ম হবে। বহুল প্রত্যাশিত লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড ততদিন থাকবে অকল্পনীয় স্বপ্নে।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিরোধী নেতা-কমীর্দের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী শাসন ততই জোরদার হচ্ছে। দেশব্যাপী তাদের ওপর সমানে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এমন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে যেন কোনোভাবেই অন্তভুর্ক্তিমূলক নির্বাচন না হয়। জেলখানা উপচে পড়ছে আমাদের নেতাকমীতে, তবুও বানোয়াট মামলায় নির্বিচারে আটক চলছেই। সাথে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহিভূর্ত হত্যা, নৃশংস নির্যাতনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ তো আছেই। এটা স্পষ্ট যে শুধুমাত্র একটি অ-রাজনৈতিক, নিরপেক্ষ, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল একটি অন্তুভুর্ক্তিমূলক, বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হতে পারে, যাতে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার হতে পারে এবং একটি সরকার পূর্ণ জনসমর্থন পেতে পারে।
প্রশ্ন : বিএনপির রাজপথের আন্দোলনের গতি আর কতদিন? কয়েক সপ্তাহর মধ্যেই তো নতুন সরকার আসছে।
তারেক রহমান : ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২ হাজার ৬৮৭জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এই হত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারাই। এর সঙ্গে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে ৬৭৫ জনকে। বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলের ৫০ লাখ সদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত মামলা দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০-এরও বেশি। ২৮ অক্টোবর আমাদের মহাসমাবেশের পর ২২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগারে কয়েদির সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় আড়াই গুন বেশি। তবু গ্রেফতার চলছেই।
ক্ষমতাসীনদের হাতে বিএনপির নেতাকমীর্রা নজিরবিহীন দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। অসহ্য অত্যাচার আর অবিচার সহ্য করেছেন। দেশের গণতান্ত্রিক নীতি সমুন্নত রাখতে এটি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। জনগণের যে-অধিকার অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাদের অধিকার ন্যায্যভাবে আদায় করা। নির্বাচন যেমনই হোক, শেখ হাসিনা যতই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকুন, বিএনপির প্রতি দৃঢ় জনসমর্থনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এখন যদিও কিছু কৌশলগত সমন্বয় আসতে পারে, বড় আকারে দেখলে আমাদের আন্দোলনের গতিবেগ এখান থেকে কেবল সামনেই দিকেই যাবে, আরো ওপরের দিকেই উঠবে।
বিএনপির সর্বশেষ সমাবেশ ও শোভাযাত্রা হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। সে-সমাবেশে গণজোয়ারই আমাদের শক্তির প্রমাণ। রাষ্ট্রীয় সহিংসতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা সারা বাংলাদেশে বিশাল বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। আমাদের প্রতি এই বিপুল জনসমর্থন জাতির ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রশ্ন : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর তীব্র চাপ রয়েছে। বিএনপির কি মনে হয় এই চাপ কাজ করবে না?
তারেক রহমান : আপনার প্রশ্নের মধ্যেই এর উত্তর রয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য একটি প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান, এটা প্রমাণ করার জন্যই আমাদের আন্দোলন চলমান। এতে আমাদের নৈতিক ভিত্তি আরো শক্তিশালী হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন যে, রাতারাতি মুক্তি পাওয়ার শর্তেও বিএনপি নির্বাচনে যোগদানের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। তিনি বস্তুত দাবি করেছেন যে একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করেছেন। এতে এটাও স্পষ্ট হয় যে কীভাবে তারা নির্বাচনের ছক করেন। রাজনৈতিক গ্রেফতার এবং বিচারিক হয়রানি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রযন্ত্রকে রাজনীতিকরণ করেছেন। এর মধ্যে আছে বিচারবিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন বেসামরিক এবং সামরিক আমলাতন্ত্র। ক্ষমতাসীনদের প্রতি তারা অনুগত, অবৈধ নির্দেশ মানতেও তারা পিছপা হন না। ভিন্নমত দমন করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চালানোর জন্য শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যবহার করেন।
জন নীপিড়নের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন একেবারেই উদাসীন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ হিসেবে এটি ভুয়া সংস্থাগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। এটিও প্রমাণ করে যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হবে আসলে আপোষে। নিবার্চন কমিশন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা ব্যতীত সব রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করার জন্য, এটিও তো উদ্বেগজনক। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বস্তুত আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এই পদক্ষেপ শুধু অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকই নয়, এতে এও বোঝা যায় যে, নির্বাচন কমিশনের ওপর হাসিনার কী রকম প্রভাব রয়েছে।
প্রশ্ন : বিএনপির ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে হাসিনার সরকারকে খুব বেশি প্রভাবিত করেনি। এই অবস্থায় কীসের ভিত্তিতে হাসিনা-সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল করার জন্য বিএনপি আগামী নির্বাচন বর্জনের আশা করছে?
তারেক রহমান : যেহেতু গণতন্ত্র ও মানবাধিকার গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ-সেতু তৈরি করে, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সহাবস্থান তৈরি করা। বাংলাদেশের সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগীরা, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে তাদের নৈতিক সমর্থনের জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণ তাদের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন। যেমন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য এগুলো ছিল সাধারণ আহবান। এর সবই গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এলে দলের জন্য বিএনপির কর্মপরিকল্পনা কী? নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে ভোটাররা দলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে না?
তারেক রহমান : একেবারেই না। কারণ ভোটাররা এর মধ্যেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণেরই আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থবহ নির্বাচনের জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা একইরকম। বস্তুত আমি বিশ্বাস করি, ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একেবারেই ধ্বংস গেছে। একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার অনেক নজিরও আছে। গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে নোবেল বিজয়ী, সাংবাদিক থেকে সুশীল সমাজ, ছাত্র থেকে পেশাজীবী- সমাজের সবাই মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা-বঞ্চিত। বিএনপির দাবির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা মিলে গেছে। সবাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। আমাদের দল জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই জনসমর্থনের ভিত্তিতেই আমরা রাষ্ট্রের ৩১-দফা কাঠামোগত সংস্কার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নীতি প্রণয়ন করেছি।
আসন্ন নির্বাচনে শুধু যে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিতে পারবে না তা নয়, ভোটাররাও এতে অংশ নিতে পারবেন না। আমি বুঝতে পারি এটা কতটা বঞ্চনার। জনগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। হাসিনার অধীনে গত দুটি নির্বাচনে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ভোটার ভোট দিতে পারেননি। যাদের মধ্যে আছেন ৩০ মিলিয়ন তরুণ ভোটার, যারা ২০০৯ সালের পর ভোটার হয়েছেন। এই অধিকার-বঞ্চিত ব্যক্তিরা ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছেন। বিএনপির দাবিও এই একই। লিঙ্গ, ধর্ম, জাতি বা রাজনীতি নির্বিশেষে সব বাংলাদেশীর স্বাধীনতা, সমতা এবং সমৃদ্ধির ক্ষমতায়নের সর্বোচ্চ লক্ষ্যের জন্য বিএনপি ও জনগণ একে অপরের পরিপূরক।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই নির্বাচন বর্জন করছে। দলের অনেক নেতা কারাগারে বা পলাতক। এ বিষয়টি কি বিএনপির নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তে কোনো ভূমিকা রেখেছে?
তারেক রহমান : কর্মী, সমর্থক এবং অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যার দিক থেকে যদি বিবেচনা করি তাহলে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। সাংগঠনিক শক্তিতে আমাদের মোকাবিলা করতে না পেরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে লেলিয়ে দিয়েছে আমাদের পেছনে। ক্ষমতার অপব্যহার করছে। নৃশংসতা চালাচ্ছে। তৃণমূল থেকে আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাকমীর্দের ফাঁদে ফেলেছে। বিএনপির জনবান্ধব শক্তিকে এবং নিজের জনবিচ্ছিন্ন দুর্বলতাকে ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা দুই বছর ধরে রায়ের মুখোমুখি। দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না, আওয়ামী লীগ এমন একটি আইনি বিধানকেও কাজে লাগিয়েছে বিএনপির নেতাদের প্রতিহত করতে। বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতামূলক অগ্নিসংযোগ করেছে এমনই কাল্পনিক ঘটনার সাথে জড়িয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের ঠিকমতো চিকিৎসাও হচ্ছে না। পুলিশ-হেফাজতেই তাদের অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা এবং পুলিশ একই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে আক্রমণ করে। তাদের গুলি করে মারার হুমিক দেখায়, নানা উপায়ে জব্দ করে, বাড়িতে বোমা মারে। যার ফলে আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী বাড়িছাড়া হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা আছে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে না পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনকে ধরে এনেছে, তাদের ওপর অত্যাচার করেছে।
প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সপক্ষে যুক্তি দেখান যে, ২০০৬-০৮ সময়কালে বিএনপিই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসম্মানিত করেছিল। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
তারেক রহমান : ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় প্রশাসন প্রবর্তন করে বিএনপি সরকার। বাংলাদেশের সংবধিানে এটি অন্তর্ভুক্ত করে। যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নামে পরিচিত। সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে জনগণের ম্যান্ডেট দ্বারা এটি সমর্থিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ এই বিধানটি বাতিল করে। এতে দেশের মানুষ হতবাক হয়, ক্ষুণ্ণ হয়। কোনো বৈধতা ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ এই পথ বেছে নেয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত “অ্যামিকাস কিউরি” তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রাখতে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনবিদ, সুশীল সমাজের সদস্য এবং জাতীয় দৈনিক সম্পাদকদের সাথে পরামর্শ করে একটি সংসদীয় কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছেন। সবার দাবি অগ্রাহ্য করে শেখ হাসিনা তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার জন্য সংসদীয় কমিটিকে নির্দেশ দেন।
প্রশ্ন : বিএনপিকে নিয়ে ভারতের চিন্তার একটি দিক হলো ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে বিএনপির ঐক্য। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পর্ক। বিএনপি শাসনামলে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো ছিল এবং ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে বিএনপি সরকারের তেমন চিন্তা ছিল না। আপনার মন্তব্য কী?
তারেক রহমান : একটি বড় দল হিসেবে বিএনপি সবার বিশ্বাসকে মর্যাদা দেয়। বিএনপি বিশ্বাস করে ধর্ম ব্যক্তির। কিন্তু রাষ্ট্র সবার জন্য। বাংলাদেশ সব ধর্মের দেশ। যার যার ধর্মের প্রতি এখানে সবার সমান অধিকার। আমাদের দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় না। তবে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধান ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, তাই এই তিনটি দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে।
ধরুন ভারতের চিন্তা শুধু জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বিশেষভাবে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৬৬ সাল থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলাম একসঙ্গেই কাজ করেছে। একযোগে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য দুটি দল একযোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৯৪-১৯৯৬ সালেও তারা একসাথে ছিল, এবং বিএনপির বিরুদ্ধে ছিল। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তারা একযোগে আন্দোলন চালিয়েছ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ যদি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে তাহলে সমস্যা নেই? বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর জোট হলেই সমস্যা?
অন্যদিকে, ভারতের উদ্বেগ যদি হয় ইসলাম নিয়ে, তাহলে উল্লেখ করতে হয় যে, একটি শরিয়াভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ একটি লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করছিল। হাসিনাই কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের আওয়ামী লীগের তাঁবুর নিচে টেনে নিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা, এ. কে. এম বাহাউদ্দিন পূজা নিয়ে কটূ মন্তব্য করেন এবং কীভাবে দূর্গা পূজা করতে হবে তা হিন্দুদের শেখাতে গিয়েছিলেন। অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি নিজের দাবি প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করেন। তার মন্তব্যের সমালোচনা করায় তার সমর্থকরা হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করতে যায়। হিন্দু নেতাদের সতর্কবার্তার পরেও তিনি আসন্ন ডামি নির্বাচনে আবারো মনোনয়ন পেয়েছেন।
আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল হলো সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থা মোকাবেলার জন্য একটি শক্ত সমর্থ যৌথ-প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া। বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর নয়, এ ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রশ্ন : ১৫ বছর ধরে আপনি বাংলাদেশ থেকে দূরে, আপনার দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রসহ একাধিক মামলায় দেশে জেল খেটেছেন। আপনাকে আসামী হিসেবে বিদেশী রাষ্ট্রের কাছেও প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আপনার বক্তৃতা এবং মন্তব্যও বাংলাদেশে প্রচার নিষিদ্ধ। এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এর বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি সমর্থকদের কী করে নেতৃত্ব দেবেন বলেন ভাবছেন?
তারেক রহমান : শেখ হাসিনার সাথে আকস্মিক সম্পর্ক অবনতির পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোরপূর্বক বিচার বিভাগ থেকে অপসারণ করা হয়, এতেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগেগর স্বাধীনতা বোঝা যায়। বাইরের সিদ্ধান্ত কীভাবে আদালতের রায়কে প্রভাবিত করে তাও স্পষ্ট করে। আরেকটি ঘটনার কথা বলি, হাসিনার চাপ সত্ত্বেও বানোয়াট মামলা থেকে আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলন বিচারক মো. মোতাহার হোসেন। অবিশ্বাস্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে পালিয়ে বিদেশে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এতেই বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা স্পষ্ট। চাকরি বাঁচানোর জন্য বিচারকদেরও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়।
বিচারিক অবিচারের প্ররোচনাকারী একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন আবদুল কাহহার আকন্দ, যিনি শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে বেশ কযে়কটি সাজানো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে দাযি়ত্ব পালন করেছিলেন। আপনি যে মামলাটি হাইলাইট করেছেন তাতে তিনি আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট দোষী সাব্যস্ত করেছেন, ঘটনার সাত বছর পরে অভিযোগপত্রে আমার নাম যুক্ত করেছেন এবং জাল প্রমাণ তৈরি করেছেন যার কোনও উপাদান নেই। অবসর গ্রহণের পর তিনি আসন্ন ডামি নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই সম্পৃক্ততা, পা চাটলে পুরষ্কার পাবে, ভাবলেই আমার গা জ্বলে।
হাসিনা সরকার শুধু আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসায়নি, আমার স্ত্রীরও বিরুদ্ধেও কাল্পনিক অভিযোগ এনে মামলা সাজিয়েছে। অথচ রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আমাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছেন। আমার মা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন। ওই বাড়িটি ছিল তিন দশকেরও অধিক সময়ের আমাদের পারিবারিক বসতি। তার বয়স হয়েছে। স্বাস্থ্যও খারাপ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। পারিবারিক সান্নিধ্য প্রয়োজন। তিনি এই সব কিছু থেকে বঞ্চিত। আমি এবং আমার পরিবার গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা থেকে আমরা অনুপ্রেরণা পাই।
পরবাসে থাকলেও আমি গভীরভাবে বাংলাদেশের সত্তা ও মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত। সারাক্ষণই আমি সারা দেশের মানুষের সঙ্গে ফোনে ও অনলাইন মিটিংয়ে থাকি। প্রতিদিনই আমি দেখি আমাদের নেতাকমীর্রা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আরো নিভীর্ক ও দৃঢ়-সংল্পপের অধিকারী হয়ে উঠছেন। পরদিনই তারা পথসভা বা জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে পিছপা হন না। এই সাহস ও উদ্দীপনা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। জনগণের আপসহীন অবস্থানের প্রশংসা করি। ব্যবসায়ীদের, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে আমার দিক থেকেও সর্বাত্মক চেষ্টা চলতে থাকে। শত দুর্ভোগ আর প্রতিকূলতার মুখেও এই বিশ্বাস থেকেই আমাদের আবেগ কাজ করে যে, আবারও আমরা একটি মুক্ত-স্বাধীন দেশে বাস করবো।
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য্য,
ভারতের আলট্রা লেফট এবং হিন্দু রাইট বিষয়ক দুটি নন-ফিকশন বইয়ের লেখক। ভারতের রাজনীতি, পরিবেশ, মানবাধিকার এবং সংস্কৃতি নিয়ে লেখালেখি করেন।
No comments:
Post a Comment