Search

Saturday, October 14, 2017

দাম চড়িলে ক্ষতি কী, ‌দুষ্টলোক দোষে শিষ্টরা রা কাড়ে না!

পর্যবেক্ষক


দেশ মাঝারি আয়ে পৌঁছাইয়া গিয়াছে। ইহা লইয়া বগল বাজানো হইয়াছে প্রচুর। বলা হইতেছে, দুশমনের মুখে ছাই দিয়া পদ্মা সেতু আকার নিতেছে চর্মচক্ষুর সামনে। সেজন্য কাহারও কাহারও চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরার মেটিরিয়া মেডিকার কাব্যকথাও শুনিতেছি ।সবই তো অাপাত সত্যি। তাইলে আসল ঘটনাখান কি?

কোঁচার এই বাহারি পত্তনের ভেতরে ছুঁচোর কেত্তন বোধ হয় কাহারও কর্ণরোগ থাকিলে পশিবে না। সবজি, চাল-ডাল-তেল, লইয়া বাঁচা মরার লড়াইয়ের এক জীবন্ত ছবি আঁকা হইয়াছে এক পত্রিকার রিপোর্টে। তবে উহার  আগে জানা দরকার দেশের হাল নাগাদ হালটি কি?দেশের মালপানি সম্পর্কিত সিনিয়র মন্ত্রী মহোদয় বলিয়াছেন, ডিসএগ্রিগেটসদের কী হইল বুঝি না।এগ্রিগেটসই আমার নয়নমণি। আয় বাড়িতেছে - একথা বিশ্বব্যাংকও তো স্বীকার করিয়াছে। অতএব।
 
ইহা আসিল কোথা হই‌তে? এই প্রশ্নটির মতো প্রশ্ন পাইয়াছিলাম আমাদের ছোটবেলার আদর্শ পাঠ্য হইতে ।নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? মহাদেবের জটা হইতে।’ কিন্ত আয় লইয়া নানান প্রশ্নে সাধারণের মাথায় সত্যি সত্যিই জটাজুট বাঁধিযা গিয়াছে। নদী আসিয়াছে হিমালয়ের স্বর্গ হইতে। ইহা নয় বোঝা গেল। কিন্ত আয় আসে কেথা হইতে বাংলাদেশে? আয় আসে বাংলাদেশের আধা-শিক্ষিত , মুর্খ কচি, ডাগর ও প্রায় বৃদ্ধ নারীর ৮০ লাখ হাতের ঘাম পায়ে ফেলা হইতে। আয় আ‌সে যাহারা বিদেশে কুকুর বনিয়াহার্ড কারেন্সি জোগাইতেছেন সরকারকে তাহাদের শ্রম হইতে। নাটকের সংলাপেও তাহাদের তিক্তমধুর ব্যঙ্গবচন নিশ্চয়ই আমরা অনেকেই শুনিয়াছি। কিন্তু দুর্বার উন্নয়নের আফিম মৌতাতে যাহারা বুঁদ হইয়া আছেন, তাহারা কিভাবে বু‌ঝিবেন - কী যাতনা বি‌ষে বুঝিবে কীসে আশি বিষে দংশেনি যারে।’ ঘৃণার কথা ইহাদের লইয়াই সরকারের বড়াই।

 


আরএমজি সেক্টরের জন্মই দিয়াছেন শহীদ জিয়া। শ্রীলঙ্কার পোশাক শিল্পে যখন লঙ্কাকাণ্ডে সোনার লঙ্কা নতুনা হনুমানে‌র লেজে ধরানো আগুনে পড়িয়া ছারখার হয়। সুযোগ ‌তৈরি হয় বাংলাদেশের‌। জিয়া ঐ সময় শিল্পকে সত্যিকার অর্থে  বেসরকারি খাতে ফলদায়কভাবে কাজে লাগান। ‌ত‌িনি বেসরকারি খাতের অর্থনীতি তথা মুক্ত অর্থনীত‌ির দরজা খুলিয়া দেন।‌‌ কিন্তু আমাদের ফার্স্টক্লাস পাওয়া জাঁদরেল পাকিস্তানী বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের মেধাবী মন্ত্রী মুজিববাদীমোহে যখন দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সরকার একটি বেসরকারি খাত প্রকল্পের জন্য চুক্তি সম্পাদন করে, তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করিয়া দি‌য়াছিলেন, "আমাদের রাষ্ট্রীয় কমান্ড অর্থনীতির কথা ভুলিবেন না। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতির অন্যতম স্তম্ভ সমাজতন্ত্র।" এখন কোথায় গিয়াছে সমাজতন্ত্র। অা‌র কোথায়ই বা গিয়াছে জোট নিরপেক্ষ নীতি। কাহারা মজমা জমাইতেছে ন্যাম ফ্ল্যাট আর কারগুলিতে?   কোন আকাশের ঠিকানায় রওনা হইয়াছে আমাদের রাষ্ট্রীয় শিল্প উদ্যোগগুলি? সাবেক সমাজতন্ত্রীরা ‌এমন কেমন গোগ্রাসে গিলিছেন পুঁজিবাদী রক্ত আর পুঁজ।

গার্মেন্টস শিল্পে মাদবরী লইয়া সরকার এই শিল্পের সমস্যার তুলনাহীন ধন্বন্তরী সমাধান দিয়েছেন। খুন হওয়া  আমিনুলের প্রসঙ্গ ফেলিয়া উল্টা বলিলেন, সরকার নির্ধারিত বেতন পছন্দ না হলে গাঁওগেরামে ফেরত যাও। আরও বিপ্লবী ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হইল । বলাহইল, শিল্প শ্রমিক নেতাদের পকেটে কিছু গুঁজিয়া দাও। ল্যাঠা চুকে যাউক! ঠিকই সরকার দূরদর্শী প্রমাণিত হইলেন। শিল্পবিরোধ মিটিয়া গেল। আর মিশুরা মাটিতে মিশিয়া গেলেন। এই যাদু আর কারই বা আছে?

এখন আমরা আসি পত্রিকায় প্রকাশিত পোশাক শিল্পে শ্রমজীবী এক নারীর কা‌হিনীতে । তিনি সংবাদদাতাকে জানাইলেন, ওভারটাইম মিলাইয়া তিনি মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁকে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণ-পোষণ করিতে হয়। চাল থেকে শুরু করে জরুরি নিত্যপণ্য কেনা আর  সাধ্যে কুলাই‌তে চাহিতেছে না। অাগে তিনি চাল কিনিতেন ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে, এই বছরেরই গোড়ায়। মাত্র কয়েকমাস পার না হইতে উহা কিনিতে  হইতেছে ৫০ টাকায় ।তাও মোটা চ‌াল। রূপকল্পে চা‌লের রূপকথার নটে গাছটি মুড়াইয়া‌ছে। সবজির দর চড়া। কেনা যাইত ২০/৩০ টাকায়। এখন উহা আকাশপানে ছুটিয়াছে। নাগাল পাওয়া যায় না।

চালের দামের অজুহাত হিসাবে দোহাই পাড়া হইতেছে বন্যা, ঢলের । তবে মজুতদার, মিলারদের প্রশ্নে সরকারি কর্মকর্তারা মেকুড় বনিয়াছেন। একদিকে মন্ত্রী নির্দেশ দিতেছেন রশীদকে পাকড়াও।শরতচন্দ্রের পিশে মশায়ের মতো, বন্দুক লাও, সড়কি লাও। লাও তো বটে অানিবে কে। অথচ রশীদ মাত্র কিছু আগেও তাঁহার সথে বৈঠকেই ছিল কিন্ত উড়ো বার্তায়  তার মিলের সব চাল উধাও হইয়া গেল। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু রাহা খরচ ছাড়া কিছুই মিলিল না। অার সেই ফাঁকে যে কোটি কোটি টাকার কারবার হইয়া গেল, দেশের মানুষের পকেট কাটা হইল তাহা কেহ জানিল না। একটি সুসমাচার মিলিল। এক ঘড়েল দাদাবাবু কহিলেন,  সরকারের চেয়ে কম মূল্যে চাল ভারত হইতেই তিনিই আনিয়া দিতে পারিতেন। শুধু তাদেরকে হুকুম করি‌‌ল‌েই পারিতেন। তাদের নাকি ওখানে চেনা মহল র‌হিয়াছে। যাহা হউক মন্ত্রী  আবার ব্যবসায়ীদের সহিত বৈঠক বসিলেন  আর ব্যবসায়ীরাই জয়ী হইলেন। তাহারা যে কমদামের প্রস্তাব দিলেন সেই লাভের টাকাটা পাইকারের হাত অর্থাৎ তাহা‌দের গাঁটেই জমা হইল। আর অম জনতা উৎকৃষ্ট আতপ ট্রাক হইতে নামিতে দেখিযা সভয়ে মুখ ফিরাইল। ইহার মন্ত্রী নাম দিলেন চালবাজি। আর খবরের কাগজে বলা হইল হানিফ সাহেব নাকি কাম বানাইয়া লইয়াছেন। মোটা চালের দাম দুটাকা কমিয়াছে। দারুণ কম বলিতেই হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিক রূপালি আক্তারের মতো বাঁধা আয়ের লা‌খো মানুষ আগুন লাগা নিত্যপণ্যের আগুনের মাঝে অস্তিত্ব রক্ষার সংগামে পুড়িতেই থাকিলেন ও থাকিবেন। কোনো দমকল বাহিনী ডাকে সাড়া দিবে না।

বাংলাদেশ  সাধারণ নাগরিক সমাজ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় মাসের যে জরুরি পণ্যগুলি এ বছরের জানুয়ারিতে ৬,২৫৫ টাকায় কেনা যাইত তাহা কিনিতে এখন লাগে ১১,০০০ টাকার বেশি। আর এই অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হইলে উহা হইবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। জ্বালানি তেলের দাম ইহাতে না বাড়ুক জিনিসপত্রের উৎপাদন ব্যয় বাড়িবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিবে, জীবনমান নামিবে। আর পুষ্টিকর পণ্য কেনার সাধ্য মানুষের থাকিবে না যদি পরিবারকে পুষ্টি জোগানকে জাতীয় ‌বিনিয়োগ ধরা হয়। ইহা না থাকিলে মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা কমে। অর্থনীতির দুষ্টচক্র  তেজি হয়। আজ দুর্বার গতির উন্নয়নের কথা বলা হইতেছে। কিন্তু কী মূল্যে। শ্বেত দরবেশের নেওয়া ঋণের টাকা  আদায় করিয়া লইলে, ঐ মানুষটি যেমন দেউলিয়া হইয়া দেউলে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকিবে না, দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা তদনূরূপ না হইয়া পারিবে না।

সাইফুল ইসমাম নামে এক ব্য‌ক্তি রাজধানীতে একটি ‌প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন। তার সাকুল্য আয় মাসে ৪১ হাজার টাকা। ব্যয়খাতগুলি হইল বাড়িভাড়া ২০ হাজার,  বাচ্চাদের টিতউশন ফি ৭০০০। থাকিল কি। তিনি জানান, আগে প্রতিমাসেই তাঁর কিছু না কিছু টাকা বাঁচিত, এখন আদৌ কিছু থাকে না।

ক্যাব কর্তা গোলাম রহমান বলিতেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়াইতেছেন। কিন্তু সরকার তাহাদের ছুঁইতে পারিবেন না। খুবই প্রকাশ্য ব্যাপার।এখন জাতীয় সংসদও ব্যবসায়ীতে ভরিয়া গিয়াছে। তাহারা আইনপ্রণেতা হইবার কথা থাকিলেও উন্নয়নে  তাহাদের কী থাকিতে পারে উহা  লইয়াই কেবল ছোঁক ছোঁক করিতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন আর কনস্ট‌িটুয়েন্সি না থাকিলেও, বিনা ভোটে পাশ পাইলেও তাঁহারাই কিনা দাবি করিতেছেন বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ তাহাদের মতো সার্বভ‌ৗমদের হাতে থাকিতে হইবে। কিসের‌ সার্বভৌমত্ব তাঁহাদের। তাঁহারা জনগণের  সার্বভৌমত্বের এজেন্ট মাত্র।

সরকার চালের বাফার স্টক রক্ষার কাজটি অযথা বিল‌ম্বিত করার কারণে খাদ্য বিপর্যয় ঘটিয়া গিয়াছে যাহা স্বীকার করিয়াছেন খাদ্যবিভাগের একজন সম্ভবত এক সৎ, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। সরকার গাফিলতি করিতে পারেন, খাদ্য গুদাম সিসেম ফাঁক করিতে পারেন। পারেন চুরির টাকা পূরণ করিতে নিরাপরাধ জনগণের ঘাড়ে অ‌বৈধ করভার চাপাইতে  আর তারপর উন্নয়নের জয়গান গাহিতে। তাই উন্নয়ন বলিতে যদি দাম চড়াইবার উন্নয়নই হয় তাহা হইলে উহাতে জনগণের কাম কি। ক্যাব বলিয়াছে ইহার জন্য জনপ্রতিরোধ গড়িতে হইবে। ম্যাও ধরিবে ‌কে?  

Sunday, October 1, 2017

Myopia and mayhem running amok in Myanmar

By Fazal M. Kamal

Photo courtesy of Greg Constantine

The world has witnessed numerous “cleansing operations” but rarely has it seen the unabashed capitulation of someone who was honored with the highest accolade and had the support of a wide range of people across regions. Whether it’s a Faustian bargain that Suu Kyi has made with the armed forces or not, it does exhibit the distance some will traverse to retain a grip on power (though in this instance it appears that the robust power maybe more in the grip of the military).

On the other side, the Government of Bangladesh, apparently, was initially more inclined to be swayed by the advice of “security apparatus” (here and there, perhaps) to offer the Myanmar junta its active support to confront the perceived “security threat” but subsequently sensing the overt disposition of the people moved toward a more humanitarian approach; though its purported leaders persisted with outrageous and self-serving declarations without any inkling about the absence of sense or sensibilities they thus demonstrated.

Given this backdrop, indications are that leaders in both the adjacent countries have one factor in common: they’ve got caught in a cleft stick. Certainly a most agonizing situation. Be that as it may. While more than half a million people have been rendered homeless, Suu Kyi, for the moment, is in the worse situation as her quick temper when confronted by a “Muslim” has been known to flare up like a pollen allergy as was displayed when a “Muslim” journalist was sent to interview her some years back. Meanwhile, as the entire world is aware by now, a humungous tragic humanitarian crisis
has developed with hundreds of thousands of Rohingya-- -mostly women and children---fleeing the marauding Myanmarese hordes who have been murdering, maiming, burning and raping at will with a wink and a nod from the Yangon administration which of course includes the brass under whose aegis previous campaigns to “clean the Rakhine state” had occurred.

Tellingly the UNHCR head reported in Geneva, “I have just returned from Bangladesh, where I witnessed people fleeing unimaginable violence …  They had to flee very sudden and cruel violence, and they have fled with nothing. Their needs are enormous – food, health, shelter … They have absolutely nothing. I have hardly seen in my career people that have come with so little. They need everything.”

In addition, British Prime Minister Theresa May in her speech to the UN General Assembly announced that the UK would end all defense engagement and training of the Myanmar military until attacks against civilians in Rakhine state had stopped while in his speech to the Assembly, French President Emmanuel Macron characterized recent actions in Myanmar as ethnic cleansing. Also during the opening of the Assembly, US President Donald Trump called on the Council to take “strong and swift action” to end violence against the Rohingya. Earlier the UN’s rights chief had described the atrocities in Rakhine as “textbook ethnic cleansing.” These very evidently leave no sliver of doubt about what bloodthirsty events are taking place in that unfortunate part of the world.

In view of these brutal actions there has been a rising international crescendo for stripping Suu Kyi of the Nobel Peace prize, and definitely given her reluctance even to distance herself feebly from the homicidal activities, the demand is more rational than rash. Her behavior is actually an outright shame for all the other Nobel laureates and in the end she cannot evade the responsibility for the deaths and huge losses incurred by the Rohingya people.

In spite of the early dithering of the Bangladesh administration it, like a sloth, ultimately made the moves to provide a safe haven for the “most unfortunate” group of people on Earth. But questions continue to dog the government’s efforts as well as the blathering of ruling party honchos most of whom, firstly, want to curry favor with their leader, and secondly, regurgitate lexis without having any knowledge of the political, social and historical circumstances in Rakhine. While the carnage, the haggling and the geopolitical jousting continue, the fact to consider and agonize over is this: Like previous tunnel-visioned and myopic armed forces’ actions elsewhere in the world—including in Bangladesh in 1971—the exploits of the Myanmar military are ultimately clearly going to fail in
attaining their cherished but vicious goals. Instead, in all likelihood, especially because of the extant circumstances around the world, these acts meant to accomplish the annihilation of an entire people will lead to the radicalization of thousands.

And this consequence cannot augur well for the region, as well as its economic, social and political evolution. That will most certainly create a breeding ground for unwarranted developments and in the final analysis generate huge misfortunes for the peoples of the whole area. Historically it has been proven innumerable times that militaries, wittingly or otherwise, launch onslaughts whose impacts prove to be not only beyond their command but also inflict inhuman torment on innocent people.

This present Burmese adventure isn’t proving to be any different. Sadly.

Thursday, September 28, 2017

দেশীয় শিল্প ধ্বংসের দেশী-বিদেশী চক্রান্ত, তিন হাজারের বেশি শিল্পকারখানা বন্ধ

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা


গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাত্র ৩ মাসের মাথায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবকে শিল্প ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।তাদের মতে, দেশীয় শিল্পকারখানা ধ্বংস করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধের মাধ্যমে দেশকে বড় ধরনের বিপদের দিকে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত চলছে।বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে এখন সেই দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।

বাড়ানো হচ্ছে ঘন ঘন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম। তাদের মতে, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি ও ঘুষ-বাণিজ্য করে পছন্দের কোম্পানিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে।যাদের প্রকল্প ব্যয় বাস্তবতার চেয়ে বহুগুণ বেশি। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে ভুয়া হিসাব দেখিয়ে বানানো হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।যে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সাড়ে ৫ টাকা খরচ হলেও প্রকল্প ব্যয় বেশি দেখানোর ফলে তাদের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ৮ থেকে ১৫ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। সরকারও তাতে সায় দিচ্ছে।অথচ দেশের মধ্যে সবদিক থেকে সক্ষম কয়েকটি কোম্পানি এর চেয়ে কম দরে বিদ্যুৎ দিতে চাইলেও তারা সেসব প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছে না। আর এভাবে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে বাড়তি বোঝা চাপানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর।

৬ মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ফলে সবার আগে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের উৎপাদনমুখী বিভিন্ন শিল্পকারখানা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা হারাচ্ছে শত শত প্রতিষ্ঠান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চক্রান্তকারীরা চায় না দেশের মধ্যে বড় বড় সফল বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গড়ে উঠুক। তারা চায়, বাংলাদেশ যেন গ্যাস-বিদ্যুতে কোনো দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারে। পরনির্ভরশীল জিম্মি করে রাখতে চায়। চক্রটি বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে, কিন্তু কম দামে বিদ্যুৎ দিতে পারে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেবে না।

এদিকে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি যোগা্যোগ মাধ্যমকে বলেন, শিল্প গ্রাহকরা গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলেও অবৈধ লাইনে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব নেই। ক্যাপটিভ পাওয়ার স্টেশনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে ইতিমধ্যে তিন হাজারের বেশি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এবার বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়লে দেশীয় শিল্প আর থাকবে না। ৫ শতাংশ বাড়লেও কেউ কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, মাত্র ৩ মাস আগে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। তখন আমরা অনেক বিরোধিতা করেছি। সরকার শোনেনি। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জানা মতে অনেক দেশীয় উদ্যোক্তা আছেন, যারা অনেক কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চান।

কিন্তু সরকার তাদের দিচ্ছে না। অথচ যারা ১০ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে জমা দিয়েছেন তাদের এমন অসংখ্য প্রস্তাবও সরকার পাস করেছে। সরকার তাদের কাছ থেকেই বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। মূলত এ কারণেই বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, তার জানা মতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক দেশীয় উদ্যোক্তা ৬ টাকা দরে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকার ওইসব দেশীয় উদ্যোক্তদের সুযোগ না দিয়ে ৮টাকার বেশি দরে অনেক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে।

৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে ১০ হাজার কোটি দেখিয়ে কাজ নিয়েছে এমন নজিরও আছে এদেশে। মাঝখানে বিপুল পরিমাণ যে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় তার সবই দুর্নীতি। তার মতে, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার কারণে ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। তার জানা মতে, কার্যাদেশ নিয়েও এখনও অসংখ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসতে পারেনি।যে কয়টি উৎপাদনে এসেছে সেগুলোর অধিকাংশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে যে কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি এখনও ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তিনি মনে করেন, এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো মূলত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কিছু লোক সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ৩ মাস আগে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। তাই আবার দাম বাড়ালে বস্ত্র খাতের অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

তারা মনে করেন, এখনও সরকার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি তো আছেই। এ অবস্থায় আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে না বাংলাদেশ।

খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখনও আড়াই হাজারের বেশি শিল্প কারখানা গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় চালু হতে পারছে না। আবার ২০১৮ সালের আগে সব শিল্প কারখানাকে গ্যাস দিতে পারবেন না।

অপরদিকে গ্রামের মানুষের অভিযোগ, সেখানে এখনো গড়ে প্রতিদিন ৮/৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। কাজেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম আরও বলেন, নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পেছনে যে পাঁয়তারা চলছে তাতে যেসব ব্যয় যোগ হওয়ার কথা নয়, তা-ও যোগ করে ওই খরচ জনগণের ওপর চাপাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।মনে হচ্ছে যেনতেনভাবে দাম বাড়াতেই হবে- এটাই হচ্ছে বিদুৎ বিভাগের লক্ষ্য। তিনি বলেন, এটা তো জনকল্যাণমূলক সরকারের কাজ হতে পারে না। এ পরিস্থিতিতে কেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জনগণের কাছে আরও অপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে তা তার বোধগম্য নয়।

হতে পারে, এটা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কিন্তু সরকারের উচিত হবে, এসব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। কারণ সামনে নির্বাচন। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে নির্ঘাত নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক  সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, শিল্প-কারখানা সম্প্রসারণের মূল সহায়ক উপকরণ হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট প্রকট। বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেও সঞ্চালন লাইনে রয়েছে বিরাট সমস্যা।শিল্প-কারখানায় এর কোনোটিরই নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ মিলছে না। এ কারণে গত কয়েক বছরে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে না। কমে গেছে বিনিয়োগ।

কিছু শিল্প এরই মধ্যে উৎপাদনে আসার লক্ষ্যে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছে না। তাছাড়া গত কয়েক বছরে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে যেসব শিল্প উৎপাদনে আছে তাদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে ৭-১০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে শিল্পোদ্যোক্তাদের সক্ষমতা কমে গেছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিযোগী দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে এর প্রভাব সরাসরি উৎপাদনের ওপর পড়বে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন মালিকরা। কর্মসংস্থান হারাবে হাজার হাজার শ্রমিক।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

এতে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। বিশেষ করে উদ্যোক্তারা বর্তমানে যে পোশাকগুলো উৎপাদন করছেন, সেগুলোর রপ্তানি আদেশ আগেই ঠিক করা আছে এবং রপ্তানি আদেশের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী উৎপাদন চলছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাদের পক্ষে রপ্তানি মূল্যে পোশাক সরবরাহ দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে বাতিল হতে পারে অনেক রপ্তানি আদেশ। যার প্রভাব পড়বে রফতানি খাতে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. আবুল কাসেম খান বলেন, ‘ফের বিদ্যুতের দাম বাড়লে হলে উৎপাদনমুখী শিল্প বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, স্টিল রি-রোলিং, টেক্সটাইল খাতে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। এ নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. আলী খোকন বলেন, ‘দেশে শিল্পখাত এগিয়ে যাওয়ার দুটো উপাদানের একটি হচ্ছে ক্যাপটিভ পাওয়ার।অন্যটি নিজম্ব শ্রমবাজার। গ্যাস-বিদ্যুৎ সেখানে উৎপাদনের মূল সহায়ক ভূমিকা রাখে। কিন্ত এসব জ্বালানির অব্যাহত দামবৃদ্ধির কারণে শিল্প খাত আজ নাজুক অবস্থায় পড়েছে।তিনি নিজের কোম্পানির ব্যালেন্সশিট তুলে ধরে বলেন, গত বছর আমি ১৫ কোটি টাকা গ্যাস খাতে বাড়তি বিল দিয়েছি। ব্যাংক থেকে বাড়তি সুদে ঋণ নিয়েছি। ওই ঋণ পরিশোধের একটা বড় চাপ আছে।কিন্তু এই যে আমার বাড়তি খরচ হল- সেটা আমি কীভাবে সমন্বয় করব? একই অবস্থা অন্য উদ্যোক্তাদেরও।’
  • Source: Jugantor.com

হান্নান শাহ বদলে ‌দিলেন দৃশ্যপট, খুঁজে পেলেন লুকিয়ে রাখা শহীদ জিয়ার লাশ

অব: মেজর মিজানুর রহমান 



১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পঞ্চম বিএমএ লং কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হই এবং জানুয়ারি ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করি। একই বছর অক্টোবর মাসে ব্রি. জে. হান্নান শাহ বিএমএ-তে কম্যান্ড্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন। সেখানেই সর্বপ্রথম একজন স্মার্ট, দক্ষ ও খুব কড়া মেজাজের সেনাকর্মকর্তার দেখা পাই। বাস্তবে একজন কম্যান্ড্যান্ট (হান্নান শাহ) ও একজন জেন্টেলম্যান ক্যাডেট (আমি) এর অবস্থানগত পার্থক্য আকাশ-পাতাল। আমাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের সময় তিনি খুব কঠিন সামরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করেছিলেন। বক্তৃতার সময় প্রায়ই বলতেন ‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’। আমাদের প্রশিক্ষণের সময় প্রায়ই তিনি ফায়ারিং রেঞ্জে উপস্থিত থেকে আমাদের ফায়ারিং পর্যবেক্ষণ করতেন এবং উৎসাহ দিতেন। কারণ তিনি নিজেই একজন অত্যন্ত দক্ষ শুটার ছিলেন।

২. বিএমএ-তে ১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোরে আমরা যখন শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্য মাঠে একত্র হই, তখন আমাদের অবাক করে বলা হলো ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ক্যাডেট নিজ নিজ রুমে অবস্থান করবে’। সকাল আনুমানিক ১০টার সময় বিএমএর সব ক্যাডেটকে একত্র করে ঘটনা জানানো হলো 'Our President has been killed’ সংবাদটি আমাদের কাছে এসেছিল আচমকা বজ্রপাতের মতো। আমাদের বুঝতে বাকি রইল না, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চরম হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। পরে জানতে পারলাম, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের লাশ লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও যখন রাষ্ট্রপতির লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন হান্নান শাহ নিজ উদ্যোগে জিয়ার লাশ উদ্ধারের কাজে যুক্ত হন। চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তার লাশ কোন গুপ্তস্থানে রাখা হয়েছে তা কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। সে সময় হান্নান শাহ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে লাশ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। অনেক অনুসন্ধানের পর তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে ৩৭ কিলোমিটার (২২ মাইল) উত্তর-পূর্বে রাঙ্গুনিয়া এলাকায় বর্তমান চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে এক পাহাড়ের পাদদেশে মাটিচাপা অবস্থায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছিলেন। পরে তিনি সেই লাশ কফিনে ভরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। 

৩. ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে বাকশাল সরকারের পতনের পর বাকশালের অনুসারী কিছু লোক ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তারা সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে বেশ কিছু নাশকতামূলক ঘটনা ঘটায়। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান, তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে সময় হান্নান শাহর পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি সফল অ্যাম্বুশ (ফাঁদ) পাতা হয়। এতে অনেক সশস্ত্র ব্যক্তি নিহত এবং তাদের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ক্রমাগত সফল সামরিক অভিযানের ফলে ভারতের মদদপুষ্ট এই মহল মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়।

৪. বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রায় ২৬ বছর থাকার পর ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেছি। একই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর আমি বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করি। এর মাত্র চার মাস পরই আসে ‘১-১১’-এর ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের সরকার। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন বাসায় অন্তরীণ ছিলেন, তখন ১-১১-এর কুশীলবরা দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে সারা জীবনের জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করে। দেশের এমনই এক সঙ্কটময় মুহূর্তে আমার সাবেক সামরিক কমান্ডারকে গর্জে উঠতে দেখেছি। আমি কালবিলম্ব না করে স্যারের (হান্নান শাহ) সঙ্গে মহাখালী ডিওএইচসের বাসায় সাক্ষাৎ করি এবং আমার রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার সঙ্গে সর্বাবস্থায় থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করি। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক পথ চলা শুরু হয়, তার মৃত্যুর মাধ্যমে যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। 

৫. ১-১১ সরকার দেশনেত্রীকে জোর করে বিদেশে পাঠানোর আয়োজন করেছিল। সে সময় হান্নান শাহ দেশনেত্রীর বাসায় যেয়ে কোনো অবস্থাতেই বিদেশে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তাকে। দেশনেত্রী গৃহবন্দী অবস্থায় থাকায় মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে কোনো বার্তা বা বক্তব্য দিতে পারছিলেন না। হান্নান শাহ তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেয়ার জন্য তার অনুমতি চান। বেগম জিয়া সাথে সাথে হান্নান শাহকে অনুমতি প্রদান করেন। এর পর থেকেই হান্নান শাহ দেশনেত্রীর পক্ষ থেকে নিয়মিত মিডিয়ায় বক্তব্য দেয়া শুরু করেন এবং তদানীন্তন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সে সময় তিনি মোবাইল ফোনের সাহায্যে দেশনেত্রীর বক্তব্য প্রচার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। হান্নান শাহর বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন চক্র দেশনেত্রীকে দেশান্তরিত করতে পারেনি। এর পরেই অবৈধ সরকার নেত্রীকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। সে সময় বিএনপি চরম সঙ্কটে পতিত হয়। হান্নান শাহ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তা সত্যি অনুকরণীয়। দলের সেই সঙ্কটময় মুহূর্তে তার সঙ্গে একত্রে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, যা আমার স্মৃতিতে আজীবন অমলিন থাকবে। সে সময় গুটিকয়েক কুচক্রী তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও হান্নান শাহর মাঝে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করেছিল। বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ও আশির দশকের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা টাঙ্গাইলের খন্দকার বাবুল চৌধুরী খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে একান্তে আলাপ করি। এর পর আমরা হান্নান শাহর বাসায় যেয়ে স্যারকে আমার গাড়িতে তুলে সরাসরি সংসদ এলাকায় ন্যাম ভবনে খন্দকার দেলোয়ারের বাসায় নিয়ে যাই। সেখানে আমাদের চারজনের উপস্থিতিতে খন্দকার দেলোয়ার ও হান্নান শাহ দীর্ঘ সময় আলাপ-আলোচনা করেন। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত খন্দকার দেলোয়ার ও হান্নান শাহ যেকোনো প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও ঐক্যবদ্ধভাবে ১-১১ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন এবং জীবন দিয়ে হলেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। এর পরের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। হান্নান শাহর বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই ১-১১’র অবৈধ সরকার তাদের দেশ-ধ্বংসকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে কুচক্রী মহল পরাজিত হয়েছিল। আর গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হান্নান শাহ।

৬. ২০০৯ ও ২০১৬ সালে বিএনপির পঞ্চম ও ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সময় হান্নান শাহকে শৃঙ্খলা ও সেবা উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়। স্যার ওই উপকমিটির সদস্যসচিব হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেন। এই দুটি কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য হান্নান শাহ যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তা সত্যি অনুকরণীয়। তার নিখুঁত পরিকল্পনা, সদা জাগ্রত দৃষ্টি ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে উভয় কাউন্সিল সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে হান্নান শাহকে সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ওই সময় সেলের সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সরকারের প্রতিনিয়ত হুমকি এবং প্রশাসনের চরম বৈরিতার মাঝেও কী করে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে প্রকাশ্যে ও গোপনে কাজ করে সফলতা অর্জন করতে হয়, তা খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।

৭. হান্নান শাহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-বরিশাল রোডমার্চ এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত অসংখ্য বিক্ষোভ সমাবেশ ও মহাসমাবেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এমন সুচারুরূপে করেছেন যে প্রত্যেকটি কর্মসূচি নিরাপদে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হান্নান শাহর সব চেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যেতে পারতেন এবং খোলাখুলি সব বিষয় আলোচনা করতেন। বর্তমান সরকারের একদলীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর আমি গ্রামের বাড়ি সাভারের ডেন্ডাবর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করার সময় দলীয় নেতাকর্মীসহ গ্রেফতার এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হই। আমাকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে (৪ নং জেল) অন্তরীণ রাখা হয়। এর কিছু দিন পর হান্নান শাহ গ্রেফতার হয়ে আমাদের জেলে আসেন। সে সময় আমাদের জেলে বন্দী ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, নাসিরউদ্দীন পিন্টু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, অব: মেজর হানিফ, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ অনেক নেতাকর্মী।

৮. তখন হান্নান শাহ প্রতিদিন আমাদের খোঁজখবর নিতেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল উঁচু রাখার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকতেন। জেলখানার কঠোর ও বৈরী পরিবেশের মাঝেও আমাদের জন্য প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রুমে পাঠিয়ে দিতেন। ডিসেম্বর মাসে যখন দেশব্যাপী সরকারবিরোধী প্রচণ্ড আন্দোলন চলমান, তখন এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে প্রায়ই খোলামেলা আলোচনা করতেন। এই আন্দোলনের মাঝে হঠাৎ যখন ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো, হান্নান শাহ তখন বলেছিলেনÑআন্দোলনরত নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে এলে তাদের আবার সংগঠিত করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং আন্দোলনের তীব্রতা কমে যাবে।

৯. হান্নান শাহ সব সময় রাষ্ট্রের স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতেন। বর্তমান সরকার যখন দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতকে করিডোর বা ট্রানজিট প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তিনি প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং ইলিয়াছ আলী-চৌধুরী আলমসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুনের বিরুদ্ধে তিনি অসংখ্যবার বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দৃঢ় ও স্থির সঙ্কল্পবদ্ধ ছিলেন। ফলে তিনি বর্তমান সরকারের চরম রোষানলে পতিত হন। ৭৪ বছরের বেশি বয়সী এই প্রবীণ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে জীবনের অনেকটা সময় আদালত অঙ্গনেই নিঃশেষ করেছেন। আমি যখন ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখ বিকেলে স্যারের বাসায় দেখা করি তখন জানালেন যে, তিনি খুবই অসুস্থ বোধ করছেন; কিন্তু পরের দিন সিএমএম কোর্টে মামলা থাকায় অসুস্থতা সত্ত্বেও হাজিরা দিতে যাবেন।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে হান্নান শাহ অসুস্থ শরীরে যখন ঢাকা সিএমএম কোর্টের উদ্দেশে যাত্রা করেন তখন ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেটের কাছে তিনি Massive heart attack-এ আক্রান্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা সিএমএইচে নেয়া হলে হান্নান শাহকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে ১৩ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। দেশের লাখ লাখ ভক্ত, গুণগ্রাহী ও শুভাকাক্সক্ষীকে অশ্র“সিক্ত করে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রত্যুষে সিঙ্গাপুরের Raffle Hospital-এ ব্রি. জে. আ স ম হান্নান শাহ অব: শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।
তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ,
তাই তব জীবনের রথ,
পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার,
চিহ্ন তব পড়ে আছে
তুমি হেথা নাই।

  • লেখক : সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিএনপি।

ছহি বড়ো মেয়রনামা, হোল্ডিং ট্যাক্স পর্ব


পর্যবেক্ষক

গত কয়েকদিন আগে ধামরাইতে মেয়রের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল বাহির হইয়াছিল। মাননীয় মেয়র ধরা খাওয়ার ভয়ে তাঁহার নগর কার্যাল‌য়ে আসেন নাই। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, তিনি তাঁহার নির্বাচনী এলাকায় সে অত্যাচারমূলকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করেন উহার কারণেই নাগরিকরা হাতে ঝাড়ু লইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। নগরপিতা‌কে এভাবে অসম্মানের জন্য তাহাদের কোনো জেলফাঁস হইয়াছিল কি না তাহা জানা যায় নাই। তবে ঘটনাটি সংবাপত্রের পাতায় ফাঁস  হইয়াছে। নাগরিকদের অভিযোগ, যে ট্যাক্স নতুন করিয়া ধার্য করা হইয়াছে তাহার মাত্রা একদা বাংলায় বর্গীদের অত্যাচারের সীমা ছাড়াইয়া যায়। যাহার হোল্ডিংছিল ১০টাকার উহা ১০০টাকা ধার্য করা হইয়াছে, যাহার কর ছিল ১০০ টাকা ছিল উহা ১০০০ টাকায় প্রমোশন লাভ করিয়াছে।

এই যে নব্য ভাস্কর পণ্ডিতের গোষ্ঠী ভুমিষ্ঠ হইয়াছে বাংলাদেশের মাটিতে। তা‌হাদের পদে আসিবার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচন করারও দরকার হয়‌ নাই। তবে ইহা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে তাহাদেরকে মোটা টাকা যথাস্থানে পৌছাইতে হইয়াছে। তাঁহারাই বা কী করিবেন নে? অগত্যা, নিরাপরাধ জনগণের ঘাড়ে এভাবে সওয়ার হইতেই হইতেছে। জনগণ যাইবে কোথায়?

আমরা জানি ক্লাসিক অর্থনীতির নিয়মে বলা হইয়াছে নো ট্যাক্সেশান উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশান। নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব ছাড়া ট্যাক্স ধার্য করা যাইবে না। তবে ক্যারিশমার দেশে ইহার কোনো বালাই আছে বলিযা মনে হয় না। অতএব গত্যন্তর না দেখিয়া ঝাড়ু মিছিল। আবেদন -নিবেদনে কাজ হয় না। আমরা এ মুহূর্তে দেখিতেছি গণশুনানি চলিতেছে  বিইআরসিতে বিদ্যুতের মূল্য ১৫%বৃদ্ধির প্রশ্নে। গ্রাহক সাধারণ যতোই চিল্লাইতে থাকুক তাহাতে কিছু আসে যায়  না। যতো যুক্তিই থাক না কেন জনসাধারণের টাকা খোর আমলারা যেহেতু প্রস্তাব দিয়াছে তাহাদের চামড়া বাঁচাইবার জন্য সেহেতু সরকারের চাবকানির প্রিয় বালক (whipping boy) আর কেই বা হইতে পারে।

খবর আসিয়াছে (গুজব) কথিত স্থানীয় সরকারগুলির এ ধরণের স্ট্রিপমাইন অপারেশনে গোটা দেশবাসী তটস্থ। ঢাকা নগর কর্পোরেশন আনুষ্ঠানিক/অনানুষ্ঠানিকভাবে এত্তেলা পাঠাইয়াছে এবং বলাবাহল্য সর্প হইয়া কাটিয়া ওঝা হইয়া ব্যবস্থাপত্রও দিয়াছে। উহার মর্মবাণী এভাবে বয়ান করা যায়: মাননীয় সেবার গ্রাহক নগরবাসী, কর নতুন করিয়া ধার্য করা হইল। তবে দেশে যেহেতু আইনের (ক) শাসন রহিয়াছে সেহেতু একটি এস্কেপ রুট (নীলনকশা) আপনাদের উপকারা‌র্থ দেওয়া হইল। আপনারা নির্ধারিত ফরমে আপত্তি দিন। (যদিও এহ বাহ্য)। আর সেইসাথে গরিব কর্পোরেশন কর্তাদের জন্য কিছু সামান্য পারিতোষিক পরিশোধ করুন। এ কাজটি আগাম পরিশোধই সব দিক বিবেচনায় সুবিধাজনক । বলাবাহুল্য এই বন্দোবস্তের পৃষৗ্ঠপোষকতায় তো অনেকেই আগাইয়া অসিয়াছে তো অাপনিই বা  কেন এই নেকি হইতে বঞ্চিত থাকিবেন। ইহা করিয়া   তো আপনাদের অনেকেই উপকার পাইয়াছেন যাহার ন্যূনতম হাদিয়া মূল্য হইবে মাথা প্রতি তিন হাজার টাকা মাত্র। আর চূপে চূপে একথাও জানাইয়া রাখি আপনাদের খেদমতে পেীছাইতে করপো‌রেশন কর্তাদের বিপূল কাঠখড়ি পোড়াইতে হইয়াছে। কাজেই আপনাদের সানুগ্রহ বিবেচনা হইতে আমরা নিশ্চয়ই বঞ্চিত হইব না। অাল্লাহ মেহেরবান। আপনারাই আমাদের নগদ নারায়ণ। যাহা হউক, এ ক্ষেত্রে আমাদের এখতিয়ার মাত্র ১৫%।  বাস্তবতার কথা আপনাদের  মরমে পশিতে আমরা কোনো কসূর করি নাই। তাই নিশ্চয়ই এই ঈমানে আমাদের রহিয়াছে বলিয়া অাপনারা জানিবেন। আমরা এই অধমেরা আছি আমাদের দিকে একটু কৃপা দৃষ্টিতে তাকাইবেন। তদুপরি আমাদের উপরে আছেন ম্যাজিস্ট্রেট বাহাদুরেরা। তাঁহারা যেহেতু ধর্মাবতার। নিজের কথা কী করিয়া বলিবেন! অতএব সে মিশনের দায়িত্ব নি‌জ‌েদের মনে করিয়া নিজেদের ঘা‌ড়‌ে তুলিয়া লইয়াছি। তাঁহাদের এখতিয়ার মাত্র ২৫%। সাকুল্যে ৪০% শতাংশ। তবে হয়তো শুনিয়া সুখী হইবেন যে আপনাদের সুবিধার কথাটি সর্বাগ্রে রাখিযা আমরা আপনাদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করিতে সক্ষম হইয়াছি। এর আগে উল্লেখ করিয়াছি আমাদের জন্য মাত্র  তিন হাজার ও ম্যা‌জিস্ট্রেট আধা ধর্মাবতারদের সম্মানার্থ মাত্র পাঁচ হাজার - মোট আট হাজার মাত্র। অামরাই উদ্যোগী হইয়া ধার্য করিয়াছি। নীতিবান সরকার সবকিছুই ডিজিটাল করিয়া পেপারলেস অফিস বানাইবার কাজ হাতে লইয়াছেন। আমরা সে দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত। সেজন্য যখন আপনারা হাতের ময়লা (নগদ নারায়ণ) আমাদের হাতে তুলিয়া দিবেন অামরা  আপানদের দীন খাদেম হিসাবে বলিতে পারি ইহার জন্য কোনো কাগজপত্রে ঝামেলা থাকিবেনা । গোটাবিষয়টি হইবে সিউরলি পেপারলেস ও দূষণমুক্ত। ধরুন এভাবে যদি মাল্টিস্টোরিড ভবন হইতে লাখখানেক টাকা করিয়া ঠেকা দিয়া আসিযা যায কর্তাদের হতদারিদ্র‍্য পুরা না হউক অন্তত; আংশিক মোচন হইবে বা খায়েশ তো মিটিবে।অতএব শুভস্য শীঘ্রং। বিলম্বে কী হারাইয়াছেন বুঝিয়া লাভ কি!

কড়ি দিবেন, তেল মাখিবেন! আমরা কি আপনার পর। আমরা দিরারাত্র আপনাদের মঙ্গল কামনায় মায় আমাদের আন্ডাবাচ্চাসহ কঠোর বকতপস্যায় রহিয়াছি উদ্বাহু (একঠাং-এ!)হইয়া।  আমরা জানি সবুরে মেওয়া ফলে। তবে সাবধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যেন ইহার আভাসমাত্র না পায়।  নমুনা দেখুন উহারা কী করিয়াছে।  মাত্র কিছুদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢালাও দূর্নীতির যে রিপোর্ট সরকারের কাছে তুলিয়া ধরিয়াছেন সুলতানা কামাল, উহার কুফল কি হইয়াছে? জানেন, আসল ফেরেশতারা নিরাপদ ফিরদাউসে বাস করিতেছেন আর ওদ‌িকে নির্দোষ প্রকৌশলীরা হাতকড়া এড়াইবার জন্য এখানে ওখানে গর্তে ঢুকিতে বাধ্য হইয়াছেন। খুবই গোপন সংবাদ।আপনাদের ভালাইয়ের জন্য। গোপনীয়তা হেফাজত করিবেন। ঘুণাক্ষরেও যেন ফাঁস করিবেন না। উপর আস্থা রাখুন। জয় ---!  

Monday, September 25, 2017

Rohingya crisis: this is what genocide looks like

Alicia de la Cour Venning
- Research Associate, International State Crime Initiative, Queen Mary University of London

 

The world is witnessing a state-orchestrated humanitarian catastrophe on the Myanmar-Bangladesh border. The latest UN figures show a staggering 370,000 [since then the number has risen to nearly half a million] Rohingya have fled into Bangladesh since August 25. An unknown number have perished. Around 26,000 non-Muslims have also been displaced.

This is just the latest crisis to confront the Rohingya in recent years. In October 2016, over 80,000 Rohingya fled violence which the UN said very likely amounted to crimes against humanity. In 2015, thousands were stranded on boats on the Andaman sea, described as “floating coffins”. Their lives inside Myanmar were so desperate that they gambled with dangerous human trafficking networks. Many drowned, died of starvation, or ended up in death camps on the Thai-Malaysian border.

The Rohingya have long endured a bare and tenuous life. The World Food Programme has documented high levels of extreme food insecurity: an estimated 80,500 Rohingya children under five require treatment for acute malnutrition. Since October 2016, critical life-saving humanitarian activities have been severely restricted.

The Myanmar state has historically adopted strategies of “othering” the Rohingya, dehumanising them as “illegal Bengalis”. The Rohingya have been isolated from society, forced into squalid open-air prisons, confined to villages, and denied livelihood opportunities. They have been harassed though disenfranchisement and violent intimidation. They suffer from destitution, malnutrition, starvation, and severe physical and mental illness as a result of restrictions on movement, education, marriage, childbirth, and the ever-present threat of violence and extortion.

This is what genocide looks like, just prior to the mass killing phase.

The dark descent


Modern genocide is a form of social engineering, and often a long-term process. It begins not with mass murder, but with the dehumanisation, isolation, and systematic weakening of a target group. Conceptualising genocide in this way enables us to identify the genocidal process while in motion, and to intervene before it’s too late.

The destruction of members of a target group depends upon either the complicity or participation of the local population. An exclusionary ideology, designed to elicit support for the systematic removal of the “other”, is therefore central to the genocidal process. Exclusionary ideologies enable perpetrators to cope with the destruction of the stigmatised community, providing a psychological justification for their removal. By creating internal enemies, the natural human aversion towards murder is eroded.

Propaganda, agitation, and incitement deeply indoctrinate future perpetrators, paving the way for mass murder. In the early stages of the Rwandan genocide, radio propaganda encouraged fear and hatred of the Tutsis, labelling them as “cockroaches”, “snakes” and “devils who ate the vital organs of Hutus”. In an eerie echo, Myanmar’s state media has insinuated Muslims are like “detestable human fleas”; prominent nationalist monk Wirathu has said: “Muslims are like the African carp … They breed quickly and they are very violent and they eat their own kind.”
Buddhist nationalist monk Wirathu. EPA/Lynn Bo Bo

As well as making it easier for neighbours, business partners and even friends to kill one another, labelling the target group an “enemy of the state” also reinforces popular support for the military and a nationalistic agenda. On September 1, Myanmar’s defence commander-in-chief, Min Aung Hlaing, declared that “entire government institutions and people must defend the country with strong patriotism”, going on to describe the “Bengali problem” as a longstanding “unfinished job, despite the efforts of the previous governments to solve it”. “We openly declare that absolutely, our country has no Rohingya race,” he said.

This demonising rhetoric not only makes eliminating the Rohingya psychologically acceptable, but frames it as a matter of protecting national interests: land, race, and religion. Adopting a narrative of Rohingya “terrorism” relieves the state of responsibility for the long-running structural grievances among the Rakhine community which animate local hostility against the Rohingya, and also ensures the military retains popular support for its indiscriminate violence against the entire Rohingya population. One Rakhine politician in 2016 claimedthat “all Bengali villages are like military strongholds”.

Warnings that decades of discrimination and oppression against the Rohingya could lead to armed resistance in the region have become a reality. The pervasive persecution of the Rohingya is directly linked to the origins of the Arakan Rohingya Solidarity Army – but instead of tracking down and prosecuting those responsible for recent attacks, the military has instead launched a campaign of collective violence against the Rohingya, systematically razing entire villages to the ground and killing civilians.
Harrassed and terrorised

Genocide scholars document a range of strategies of physical and psychological destruction which take place prior to mass killings. Physical destruction involves overcrowding, malnutrition, epidemics, lack of health care, torture, and sporadic killings; psychological destruction involves humiliation, abuse, harassment or killing of family members, and attempts to undermine solidarity through collective punishment.

These forms of harassment and terror tactics are often deployed to force members of the out-group to leave, rather than killing them outright. One year before Bosnia’s Srebrenica massacre, a Republika Srpska Army report referenced a “crucial task” to be executed: “the expulsion of Muslims from the Srebrenica enclave”. “The enemy’s life has to be made unbearable and their temporary stay in the enclave impossible so that they leave en masse as soon as possible, realising that they cannot survive there,” it read.
And yet conceptual difficulties with the legal definition of genocide, together with historical precedent, apparently mean that we need to wait for mass killings and a court ruling before we can call this form of structural violence what it is: genocide. Aung San Suu Kyi and the Kofi Annan Commission act as shields for brutal “clearance operations”. Western diplomats, unwilling to take a firm stance, hide behind a broken international system, arguing that it’s the UN’s responsibility to take action – knowing full well that any such action would be vetoed by China and Russia.

The Myanmar government knows it can count on China in particular, which is keen to maintain its business interests and limit Western influence over a neighbour. On September 6, Myanmar’s national security adviser, Thaung Tun, told journalists “we are negotiating with some friendly countries not to take it to the security council. China is our friend and we have a similar friendly relationship with Russia, so it will not be possible for that issue to go forward”.

All the while, Rohingya villages continue to burn, many of their inhabitants murdered. More than half the Rohingya population of northern Rakhine has been forcibly displaced. Those who manage to escape the terror continue to stream across the border into Bangladesh – desperate, starving, injured, and traumatised. [The Conversation]

Wednesday, September 20, 2017

মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে

সৈয়দ আবদাল আহমদ  

প্রবীণ এক মা এইভাবেই খাল পার হচ্ছেন।

উখিয়ার বালুখালীর একটি চিকিৎসাশিবির। একজন রোহিঙ্গা মা তার তিন-চার বছরের বড় ছেলের লাশ কোনোভাবে দাফন করেই ছুটে এসেছেন চিকিৎসাকেন্দ্রে কোলের ছোট ছেলেটিকে বাঁচাতে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শিশুটির জ্বর ও কাশি। এই মুহূর্তে তাকে বাঁচানোই তরুণী মায়ের প্রধান কর্তব্য। তাই বড় ছেলের করুণ মৃত্যুতে শোক করাও তিনি সম্ভবত ভুলে গেছেন। তার চোখে-মুখে অজানা শঙ্কা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

পালংখালীর একটি ত্রাণসামগ্রী বিতরণকেন্দ্র। অঝোর ধারার বৃষ্টির মধ্যে এক কিশোরী মা পরনের শাড়ির আঁচলে জড়িয়ে কোনোভাবে এক হাতে কোলের শিশুকে ধরে রেখেছেন; অন্য হাতে ত্রাণের খাবারের প্যাকেট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। একই জায়গায় আরেক মা একবার বুক চাপড়াচ্ছেন, আরেকবার বৃষ্টিভেজা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আহাজারি করছেন হারানো স্বজনের জন্য। পাশের লোকজন জানান, রাখাইনে ওই নারীর স্বামী ও ছেলেমেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখা স্বজনের নৃশংস খুনের দৃশ্য তিনি ভুলতে পারছেন না। প্রতিবেশীরা প্রাণ বাঁচাতে তাকেও তাদের সাথে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী এলাকাগুলোতে এখন এ ধরনের শত শত কাহিনী।
শোকাহত সন্তান ও স্বামি হারা এক নারী বৃষ্টিতে এইভাবে রাস্তায় পড়ে আছে।

টেকনাফ উখিয়া হাইওয়ে এবং আশপাশ এলাকায় বেশির ভাগ নারী ও শিশু-কিশোরকে দেখা গেল, কোনো সংগঠন ত্রাণ নিয়ে এলেই সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়তে। কেউ দৌড়াচ্ছেন, কেউ উদভ্রান্তের মতো ছুটছেন। একমুঠো খাবারের জন্য কী প্রাণান্ত চেষ্টা, নিজ চোখে না দেখলে উপলব্ধি করার উপায় নেই। এ এলাকা এখন যেন রোহিঙ্গা জনপদে রূপ নিয়েছে। রোববার আমরা যখন পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী এবং কুতুপালং এলাকায় পৌঁছি, তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির পানি আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কান্না যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল। পলিথিনশিট দিয়ে কিছু ঝুপড়ি তৈরি হয়েছে। এগুলোকে কোনোভাবে আশ্রয়শিবির বলা যায় না। লাখো শরণার্থীকে দেখেছি, বৃষ্টিতে ভিজে হাহাকার করছেন। কী করুণ মর্মান্তিক দৃশ্য!

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে জানিয়েছিলেন, শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৩২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। কিন্তু আমরা পালংখালী ও বালুখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে সরকারি মেডিক্যাল টিম কাজ করতে দেখিনি। রেডক্রিসেন্ট, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল এবং ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) চিকিৎসা ক্যাম্পে অসুস্থ নারী ও শিশুদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। ডা: মোস্তাক রহিম স্বপন ও অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, তারা স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করতে গিয়ে গত এক সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় লক্ষ করেছেন, ৭০ শতাংশ রোহিঙ্গা শিশুই অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এরপরই রয়েছেন নারী শরণার্থীরা। প্রতিদিন তাদের ক্যাম্পে পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগই শিশু ও নারী। নারীদের মধ্যে আবার অন্তঃসত্ত্বাও রয়েছেন অনেক। গণস্বাস্থ্যের কর্মীরাও একই কথা জানান। ডায়রিয়া, আমাশয়, সর্দি-জ্বর-কাশি, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শরণার্থীরা।

আমরা লক্ষ করলাম - মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন এবং জেলা-উপজেলা থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে মানুষ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ওইসব এলাকায় যাচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে পারছে না। ট্রাক বা লরি থেকে ত্রাণের প্যাকেট নিক্ষেপ করে দিতে গিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং হুড়োহুড়িতে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় থাকা শরণার্থীরা কিছু ত্রাণসামগ্রী পেলেও ভেতরে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছতে পারছে না। এভাবে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। ত্রাণ পরিচালনাকারী সংগঠনগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাতে যেভাবে গাইড করা প্রয়োজন সে প্রচেষ্টা নেই। প্রশাসনের লোকজন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও খুবই কম। এলাকাগুলোতে শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানির নেই ব্যবস্থা। শরণার্থীরা খোলা আকাশের নিচে, ঝোপঝাড়, পাহাড় ও জঙ্গলে প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে- এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ত্রাণকার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ব্যবস্থাপনার অভাবকেই সবচেয়ে বড় সঙ্কট বলে মনে হয়েছে। এই মুহূর্তে শরণার্থীদের জন্য অগ্রাধিকার কী, সেই বিষয়টির প্রতিও নজর দেয়া হচ্ছে না। সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, কুতুপালং ও বালুখালী এলাকায় দুই হাজার একর জায়গায় পরিকল্পিত আশ্রয়শিবির স্থাপন করা হবে। এই পরিকল্পিত আশ্রয়শিবির দ্রুত গড়ে তোলা এবং ত্রাণকার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখনই সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে সর্বাগ্রে ঘটনাস্থলে দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ কাজে সেনাবাহিনীর দক্ষতা পরীক্ষিত। তারা কাজ শুরু করলে স্বল্পতম সময়ে পুরো ত্রাণকার্যক্রম শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসতে পারে।

মিয়ানমারের রাখাইনে ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চলছে তার ফলে প্রাণ বাঁচাতে টেকনাফ-উখিয়ায় নতুন করে প্রায় পাঁচ লাখ শরণার্থী ঢুকে পড়েছে। জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত রোববার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লেইংয়ের নতুন করে হুঙ্কার জাতিসঙ্ঘের এ আশঙ্কাকে আরো জোরালো করে তুলেছে। ২৫ আগস্টের পর স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এখনো প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার করে শরণার্থী আসছে। একইভাবে ইউনিসেফ থেকে আশঙ্কা করা হয়েছে- দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব শিশু শরণার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন বিপর্যস্ত। তাই বসে থাকার সময় নেই। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিপর্যয় দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোধ করতে না পারলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে বাধ্য।

মনে রাখতে হবে, ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের জন্য ত্রাণ, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর অভাব মুখ্য ছিল না। ওই সময়ও প্রচুর ত্রাণসামগ্রী এসেছিল। দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য প্রধানত দায়ী ছিল ব্যবস্থাপনার অভাব। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন পরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে এর সত্যতা তুলে ধরেন। এবারো লক্ষ করা গেছে সঙ্কট ব্যবস্থাপনার বড় ধরনের ঘাটতির। দক্ষ ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে তাই নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা এবং পরিকল্পিত আশ্রয়শিবির দ্রুত গড়ে তুলতে হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে এখনই শত শত নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণ বাঁচাতে তাদের দেশ ও ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছে। দেশছাড়া এসব অসহায় মানুষকে বাঁচাতে এবং মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে।
  • লেখক: সাংবাদিক।

Friday, September 8, 2017

গণতন্ত্রের নিরন্তর সংগ্রামে বিএনপি

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

 

আধুনিক প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একটি অনিবার্য বিষয়। ‘রাজনৈতিক দল ছাড়া আধুনিক গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না’ (Schattschneider : 1942:1)। লর্ড ব্রাইস যুক্তি দেখান, ‘রাজনৈতিক দল ছাড়া আধুনিক গণতন্ত্র বাস্তবায়নের কোনো উপায় আজো আবিষ্কৃত হয়নি’ (Bryce 1921:119)। এ রকম একটি অনিবার্যতার ধারাবাহিকতায় জনগণের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়াসে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গঠিত হয়। ১৯৭৫-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ইতঃপূর্বেকার রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি জনগণের লালিত ক্ষোভের কারণে নির্বাচন তথা গণতন্ত্রায়নের কোনো তাগিদ ছিল না।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্রায়নের পদক্ষেপ নেন। কাঙ্ক্ষিত সাংবিধানিক পরিবর্তন, গণভোট অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক দল গঠন, অধিকতর ঐক্যপ্রয়াসী ফ্রন্ট গঠন, অবশেষে জনগণকে একক রাজনৈতিক সত্তায় সংগঠিত করেন। রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত বাংলাদেশ জাতীয় ঐক্য অর্জন করে।

সামরিক রাজনীতির গতানুগতিক ধারা অগ্রাহ্য করে জিয়াউর রহমান হৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রবক্তারা ‘এক নেতা, এক দল, এক দেশ - বাকশাল’ কায়েম করেছিল। জিয়াউর রহমানের ধাপে ধাপে সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ন ছিল সমসাময়িক ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। সাধারণত সামরিক শাসকেরা বছরের পর বছর স্বৈরতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে তাদের শাসনকে চিরস্থায়ী করে। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্রায়ন ছিল নিপাতনে সিদ্ধ একটি ঘটনা। একজন ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মন্তব্য করেন : ‘He withdrew martial law, civilianized the government, set in motion, a Parliament, allowed open political activities and became a civilian himself' (Baladas Ghoshal : 1982:159)। উদার গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সসম্মানে স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান স্বীকার করেন, ‘The BNP has long been committed to democracy though the party was founded by a military ruler' (Rounaq Jahan : 2015:78)। জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতা পোষণ করতেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন।

আজকের চলমান সঙ্কট থেকে জিয়াউর রহমানের গণতান্ত্রিক মানসিকতার একটি উদাহরণ দেয়া যায়। চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। সে সময়ের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই একক ক্ষমতার মালিক। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা বিচারপতিদের হাতেই অর্পণ করেন। গঠিত হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। দীর্ঘ সময় ধরে (১৯৭৮-২০১৪) তা বিচারপতিদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। ২০১৪ সালে সেই ক্ষমতা ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করার প্রত্যয়ে সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। বিএনপি সব সময়ই অভিশংসনের দায় বিচারপতিদের হাতে থাকাকেই নিরাপদ মনে করেছে। এতেই দলগতভাবে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিএনপির গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, নেতা নির্বাচন বিধান, অধিকতর গণতান্ত্রিক।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ, অনুকরণ ও অনুশীলনে বিএনপির চেয়ে অন্য যেকোনো দলের একক কৃতিত্ব নেই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যতবারই গণতন্ত্র বিনাশে পদক্ষেপ নিয়েছে, ততবারই বিএনপি তা পুনরুদ্ধার করেছে। সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি এবং এর নেত্রীর আপসহীন ভূমিকা। বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরশাদের শাসনামলে যে দুটো সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার কোনোটিতেই বিএনপি অংশ নেয়নি। রওনক জাহান তার সাম্প্রতিক গবেষণায় বেগম খালেদা জিয়াকে কৃতিত্ব দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘She succeeded in transforming the BNP from a state-sponsored sarkari party to an opposition party...’। আন্দোলন শেষে ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিএনপি রাষ্ট্রপতির শাসনপদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় ব্যবস্থা মেনে নেয়। এটি ছিল বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা। সবাই জানে বিএনপি জিয়াউর রহমান অনুসৃত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পক্ষে ছিল। তাদের ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচনী ইশতেহারে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার কথা বলা হলেও জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি সংসদীয় পদ্ধতি বেছে নেয়। শুধু তাই নয়, যখন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসে তখন বিএনপি বিনাদ্বিধায় সংসদীয় পদ্ধতি মেনে নেয়। জনগণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙক্ষার প্রতিধ্বনি করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মেনে নেয়।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির ওপর অন্যায় অত্যাচার এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেন। গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বেগম খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে নির্বাচিত স্বৈরাচার শ্রেয়।’

পরবর্তীকালে বেগম খালেদা জিয়ার এই মন্তব্যের বিপরীত ঘটনা ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবশেষে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তারা অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনে সামরিক সরকারকে অতিক্রম করে। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মুখোমুখি হয়, তখন বিএনপি ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে জাতীয় স্বার্থে চলমান সরকারকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়। অথচ ১৯৮২ সালে সেনানায়ক এরশাদ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, আওয়ামী লীগ প্রকারান্তরে এরশাদকে স্বাগত জানায়। বিএনপি সব সময় বলে আসছে, তারা পেছনের দরজার রাজনীতি তথা সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতা দখল অনুমোদন করে না।

২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন একটি অনিয়মতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও অপ্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনের আয়োজন করে তখন বিএনপি নীতিগতভাবে এর বিরোধিতা করে। এখন জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নপর্যায়ে পৌঁছেছে। ইতঃপূর্বে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটি ছিল বিএনপির একটি সৎ ও সাহসী নীতিগত অবস্থান। বিএনপিকে প্রতারিত করার জন্য টেলিফোন সংলাপ ও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা সেই ফাঁদে পা দেয়নি। কারণ, বিএনপি ছল-বল-কলে বিশ্বাস করে না। তাদের দৃঢ়বিশ্বাস অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থায়। ক্ষমতা অন্যায়ভাবে নেয়ার জন্য বিএনপি কখনোই ষড়যন্ত্র ও সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি।

অথচ বিএনপিকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না - এটা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ষড়যন্ত্র অথবা রক্তপাত- যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলে অনঢ় ছিল। গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের নীলনকশা প্রতিহত করার জন্য বিএনপি আন্দোলনের সূচনা করে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট জালিয়াতি বৈধতা পেত। অনেকেই আজকাল আওয়ামী প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে বিএনপি ভুল করেছিল বলে মনে করেন। নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। জনমত বিভ্রান্ত করার জন্য ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে-বিদেশে এ ধারণা দেয় যে, ওই নির্বাচনটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে করা হয়েছে। পরে তারা ডিজিটাল ডিগবাজি দেয়। ক্ষমতা দ্বিতীয়বারের জন্য সংহত করতে শক্তি প্রয়োগ করে।


পরে ২০১৫ সালে নির্বাচন জালিয়াতির প্রথম বর্ষের প্রাক্কালে বিএনপি যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা করে তাকে ক্ষমতাসীনদের প্রচারযন্ত্র সহিংস ও সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস পায়। এ ক্ষেত্রে তারা দেশী-বিদেশী শক্তির মদদ পায়। বিশ্বব্যাপী উত্থিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আওয়ামী লীগ নিজ স্বার্থে এবং বিরোধী নির্মূলে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। ফলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিএনপি কখনোই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপরীতে কিছু চিন্তা করেনি। গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির আস্থার প্রমাণ হিসেবে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে তাদের অংশ নেয়ার কথা বলা যায়।

বর্তমান সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে ব্যাপৃত। বিএনপি ও বিশ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনকল্যাণে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। সরকারি দলের গুম, খুন, জখম, হামলা, মামলা অতিক্রম করে বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী সরকারি দলের নিপীড়নের শিকার হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে পাঠিয়ে বা সাজা দিয়ে সরকার নির্বিঘ্নে একটি সাধারণ নির্বাচন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নেই। অতি সম্প্রতি বিচার বিভাগ বনাম শাসন বিভাগ যে অভাবনীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে।’

বেগম জিয়া আরো বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিএনপির বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এ কারণেই বিএনপি এখন দেশবাসীর কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অকুণ্ঠ রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় বিএনপি আগামী দিনগুলোতে বলিষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাধারণ জনগণও ওই একই আশাবাদ পোষণ করে।
  • লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।
[নয়া দিগন্ত]

Thursday, September 7, 2017

ভারতেও ঠাঁই নেই রোহিঙ্গাদের

অনিল চট্টোপাধ্যায় 

নতুন দিল্লি/dw.com



ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাঁদের স্বভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে মোদী সরকার যেভাবে চেষ্টা শুরু করেছে, তা রদ করার করার জন্য রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সলিমুল্লা এবং মোহাম্মদ শাকির সুপ্রিম কোর্টে জরুরি আর্জি জানালে আদালত তা বিবেচনার জন্য গ্রহণ করেন৷ তাঁদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সওয়াল করেন যে, সরকার তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠাতে পারেন না৷ তা করলে সেটা হবে ভারতের নাগরিক বা অন্য দেশের নাগরিক, অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের জীবনের এবং বেঁচে থাকার অধিকারের সাংবিধানিক গ্যারান্টির পরিপন্থি৷ কারণ, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠালে মিয়ানমার সরকারের হাতে তাঁদের প্রাণ সংশয়ে থাকবে৷

পাশাপাশি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও এই ফেরত পাঠানোর ইস্যুতে সরকারকে অনুরূপ নোটিস দিয়েছে৷ বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন এবং সাংবিধানিক দায়দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে সরকারের উচিত তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা৷ ভারতের কাছে এটা মানবাধিকার রক্ষার এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ মিয়ামারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা চরম অত্যাচারের বলি৷ দলে দলে পালিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে৷ সেখানেও তাঁদের দরজা বন্ধ করা হয়েছে৷ বংলাদেশ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা তাঁবুতে জীবন কাটাচ্ছে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে, প্রতিকূল পরিবেশে রোগ-জ্বালা সহ্য করে৷

শুনানিকালে সরকার পক্ষে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷ তিনি সরকারের তরফে কোনো আশ্বাস দেননি৷ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রোহিঙ্গাদের পিটিশনের একটি কপি প্রথমে সরকারকে দিতে বলেন৷ কাজেই এই মূহুর্তে আদালত কোনো রায় দিতে অপারগ৷ পরবর্তী শুনানি ১১ই সেপ্টেম্বর৷

মিয়ামারের রোহিঙ্গারা এমনই একটি হতভাগ্য সম্প্রদায় যাদের নিজবাসে বা পরবাসে কোথাও ঠাঁই হচ্ছে না৷ একটা ভেসে বেড়ানো মুসলিম গোষ্ঠী৷ এই প্রসঙ্গে ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির প্রেসিডেন্ট ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বললেন,  ভারত প্রথম মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশগুলির অন্যতম৷

কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে যেভাবে দেখছেন, তা সত্যিই উদ্বেগজনক, কারণ, সরকার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে দেখছে৷ উচিত ছিল জাতিসংঘের রিফিউজি কনভেনশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা৷ রোহিঙ্গা শরনার্থীরা যদি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদের কারণ হয়, তাহলে আগেও তো ভারত শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে৷ যেমন, দলাই লামা৷ তিব্বতি শরনার্থীরা ব্যাপক সংখ্যায় ভারতে আশ্রয় নিয়েছে৷ সেটা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার কারণ না হয়ে থাকলে চালচুলোহীন এক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিলে তা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হবে?

গণতান্ত্রিক সুরক্ষা সমিতির সভাপতির মতে, রিফিউজি কনভেনশনে সই করা একটি দেশ হিসেবে ভারতের উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিচয়পত্র এবং রিফিউজি কার্ড দেওয়া৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে সহমত তৈরি করতে পারলে জাতিসংঘ আর্থিক সাহায্যও পাওয়া যেতে পারে৷ ভারত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাড়িয়ে দিলে ঘাটে ঘাটে মার খেতে খেতে তাঁরা একদিন মরিয়া হয়ে নিজের হাতেই অস্ত্র তুলে নেবে বাঁচার জন্য৷ ...মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মী নোবেল পুরস্কার বিজেতা অং সান সু চি প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বললেন, তাঁর বর্তমান নীরব দর্শকের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে তিনিও বুঝি সামরিক জান্তার শরিক৷ তাঁর পারিবারিক পরিচয়টাই তাঁর কাছে এখন বড়৷

ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অভিবাসীর মধ্যে একটা বড় অংশ রয়েছে দিল্লিতে এবং আরেকটা অংশ রয়েছে জম্মুতে আর কিছু পশ্চিমবঙ্গে৷ পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জেলবন্দি৷ বাচ্চারা রয়েছে হোমে৷ তবে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার রোহিঙ্গাদের মাঝে শরণার্থী সংক্রান্ত জাতিসংঘের দেওয়া পরিচয়পত্র বিতরণ করতে চলেছে৷ ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১৬ হাজার ৫০০ জনের নাম জাতিসংঘের শরণার্থী তালিকাভুক্ত৷ বছর দুয়েক ধরে থাকতে থাকতে নিজেদের বস্তিতে তাঁরা নিজেরদের মতো জীবিকার সংস্থান করে নিয়েছে৷ ছোটখাটো দোকান দিয়েছে, শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে, বাচ্চারা পড়াশুনার সুযোগও পাচ্ছে৷ হিন্দিও শিখে নিচ্ছে৷ এই সুযোগ তাঁরা হারাতে চায় না৷ ফেরত পাঠাবার কথা শুনতেই তাঁদের মনে আবার সেই উদ্বেগ, আতঙ্ক৷  এবছর ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ঈদ উত্সবেও ছিল মনমরা৷

Saturday, September 2, 2017

সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণে শোক‌লিপি

 আফতাব হোসেইন



মধ্যযুগের শেষভাগে এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রভা উজ্বলতর হযে ওঠার মুখে ধর্মসমন্বয়ের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে নানক, মহাবীর ও কবিরের নাম উল্লেখযোগ্য। কবিরের বাস ছিল কাশী বা বেনারসের সনাতন ধর্মের মর্মস্থলে। তিনি ‘মুসলিম ও ‘হিন্দু ঐক্যের অমর বাণী’  শোনালেন হিন্দুস্তানবাসীকে। মূলত তাঁর মর্মবাণীই প্রচার করে গেছেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তিনি মহাত্মা। তিনি ছিলেন রামভক্ত। তাঁর এই রামরাজ্যভক্তির বিষয়ে  কবিরের বিখ্যত দোঁহাটির পুনরুল্লেখ খুবই প্রাসঙ্গিক । কবিরের উক্তি ‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিত পাবন সীতারাম, ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম সবকো সুমতি দে ভগওয়ান’। তিনি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রীতির বীজ বুনতে চেয়েছিলেন। কিন্ত সত্যিকারের কোনো সমা‌ধান না পাওয়া গেলেও একধরনের সমাধান হয়েছিল কিংবদন্তী অনুযায়ী 'ফুলে'। কবিরের দেহরক্ষার পর স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় যখন কলহে ব্যস্ত তখন তাদেরই একজন একপর্যায়ে কবিরের চাদরে ঢাকা মরদেহ বিবেকবান কেউ চাদর তুলে দেখার চেষ্টা করলো। দেরি হয়ে গেছে!  মরদেহের এতোক্ষণে কী হাল! না, সেখানে কবিরের কোনো দেহ নেই। অবাক কাণ্ড। ওখানে জড়ো হয়ে আছে কিছু ফুলের স্তুপ। কবির এস‌েছিলেন ধর্মীয় সম্প্রীতি জন্য । সম্ভবত যাদের মানসিকতা ছিল ‘রথ ভাবে আমি দেব, পথভাবে আমি, মূর্তিভাবে আমি দেব’ তাদের জন্য হেসেছিলেন সবার অন্তর্যামী। কবির ফুলেল সম্প্রীতির পথরেখা দেখিয়ে চলে গেলেন অনন্তের উদ্দেশে। পাশাপাশি রয়ে গেলো পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির। তাতে আ‌জও হাত দিতে পারেনি কোনো হীন মানস। গান্ধীর রামরাজ্য দর্শনের সাথে কবীরের দর্শনের অদ্ভুত মিল ছিল। আর সে কারণেই তাকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। প্রাণবায়ূ বেরিয়ে যাবার আগে তার মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল, ‘হা! রাম! হ্যাঁ!' তারা যাঁকে হত্যা করেছে নিয়তির নিশ্ঠুর পরিহাস তারাই আজ রামমন্দির বানাচ্ছে । আর আদতে সেই শক্তিই প্রয়াত গান্ধীকে ভগবতীর মৃতবৎস হিসেবে, একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীর ভাষায় তার চামড়া-ছাল ছাড়িয়ে‌ নিয়ে তাতে বিচালি পুরে ডামি বানিয়ে মাতা গাভ‌িকে সামনে রেখে তার সাথে প্রতারণা করে  তার দুধ দোহন করে নেওয়ার মতো কৃত্রিম সম্মান দেখাতে তাঁকে দেওয়ালে টানিয়ে দিয়েছে। তিন‌ি হযেছেন জাতির পিতা। অমাদের দেশেও এধরনের দেবতা বানানোর ধুন্ধুমার প্রয়াস চলেছে তখনই চলে গেলেন ধ্রুব সত্যের কথক সঞ্জীব চৌধুরী‌।

উপমহাদেশের রাজন‌ীতির ইতিহাসে সর্বত্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ি‌য়ে আছে। এ এক চরম নিঠুর বাস্তবতা। ফজলুক হক ছিলেন, হিন্দু মহাসভার সদস্য বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রভুল্ল চন্দ্র রায়ের কথায়, ‘ফজলুল হক তাঁর কেশ থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বাঙালি ও মুসলমান।’ এহেন মৌলভী ফজলুল হককেও নদীয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বলতে হয়েছে ‘আমি রামদা-রহিমদা কাউকেই ভয় পা‌ই না।’ বলা দরকার নির্বাচনী প্রচারের  ময়দানে যাবার আগে ফজলুল হকের বিরোধীরা রামদা দিয়ে নারকেল গাছের ডাল কেটে তাঁর ওপর ফেলেছিল।  সে যাই হোক রাম-র‌হিম সমস্যার ফয়সালা আজ অবধি ভা‌রত ও বাংলাদেশের কথিত লোকায়ত ও সারস্বত  সমাজ করতে পারেনি। তবে গুরু রাম-রহিম সিং এতোদিন যা প্রচার করে পাঁচকোটি ভক্ত জুটিয়েছেন তার পরিণাম দেখে ভাবতে পারা যায় না উপমহাদেশ‌ের জনসাধারণ এই ভয়ানক নামাবলির ভেতর থেকে সহজে কেনোদিন বেরিয়ে আসতে পারবে।

বেরিয়ে এসেছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। আজ তাঁর প্রয়াণ‌ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায় লেখা এই শোকলিপি লিখতে গিয়ে এই পটভুমি এসে গেল এর  একটা প্রেক্ষিত দিতে অগত্যা।  হঠাৎ সঞ্জীব চৌধুরীর জীবন দীপ নেভার খবরে আমি হতচকিত, কিংকর্তব্যবিমুঢ়, স্তব্ধ।  ভাষা প্রাণ পেতে চায় না। মনে হয়েছিল রচনা করি এলিজি শোকগীতি, ওড না হয় অগত্য তাঁর সমাধিলিপি - এপিটাফ। ‌না হলো না, লিখ‌‌ি তার শোকলিপি।

কে কি জানেন আমি জানি না ‌সে সম্পর্কে। তবে মাঝেমাঝেই তার কথার বলি‌ষ্ঠ বিদ্যুতের ঝলকানিতে আমরা অবশ্যই চমৎকৃত হয়ে‌‌ছ‌ি। আধমরা আধাজাগর বিবেককে  ঘা মেরে বাঁচাতে তাঁর নম্র , দীপ্র অথচ ধ্রুব সত্যের রুদ্র উচচ্চারণ মৃত্প্রায় বিবেকে প্রাণ ফিরেছে নতুন করে! তিনি একজন অমুসলিম। অথচ তিনি দেশের গোটা মানুষের মনের কথাকে  ভাষা দেবার ‘বিশ্বকর্মার’ সামর্থ অর্জন করেছিলেন। তিনি নিজেকে তাঁর সম্প্রদায়ের সঙ্কীর্ণতায় আবদ্ধ রাখতে দেননি। তিনি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বৃহত্তর সমাজে সাব‌লীল অবলীলায়। সেজন্যই তিনি আজ আমাদের সকলের।

এ দেশে যারা ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যবসা করেন  টুপি দাড়ি পরে হজ্জ থেকে ফিরে খুরমার তোহফা দিয়ে ঠুনকো ইসলামী কায়দায় রাজনীতি‌র ভোট ভিক্ষা করেন, যারা সারাটা দিনমান প্রয়াত হবার কথা বলেন আর রাজনৈতিক প্রয়োজন দেখা দিলেই তাদের ইসলামী জোশের জোয়ার বয়। শাহাদাৎ ,শহীদানের শোকে বিরিয়ানি খান কাঙালিদের নামে তিনি তাঁদের কেউ নন বলেই তাঁকে প্রায় অলক্ষ্যেই চলে যেতে হলো। আরেকজন প্রখ্যাত সাংবাদিক কিছুকাল আগে মৃত বিবেকের উদ্দেশে শোকপ্রস্তাব এনেছিলেন। বিবেক অমর হলেও সমাজের বিবেকহীনতায় ত্যক্তবিরক্ত আরেক  সহযোগীর এ ভাবনা অবশ্যই তাৎপর্য়ের দাবিদার। দেহধারী সঞ্জীব দেহ মৃত্তিকায় হয়তো মিলিয়ে যাচ্ছে। তবে স্পর্ধিত বিবেক তিনি রেখে গেছেন অামাদের জন্য উত্তরাধিকার হিসেবে। সঞ্জীব চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন সকল বিবেকবান হৃদয়ের কন্দরে কন্দরে।


  •         আফতাব হোসেইন, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক।