রাতুল চৌধুরী
আমাদের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এমূহুর্তে ভারত সফরে আছেন। প্রথমে `সাতবোনের' মূল রাজ্য আসাম। ছিলেন গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেল ‘তাজ ভিভান্তে’তে। তিনি ভারতে তাঁর এই মঙ্গলযাত্রায় পরিদর্শন করেছেন যাদু, কল্পনা ও কিংবদন্তীর রহস্যে ঘেরা কামাক্ষ্যা দেবীর বহুল বিশ্রুত মন্দির । কিন্ত অসমের কিছু অসম উগ্রবাদী লোক সম্ভবত ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। তারা আমাদের পত্রপত্রিকার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তাঁকে অপমান করতে তাঁর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে। তারা তাঁকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে শ্লোগানও দেয়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আসামের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন হিন্দু যুব পরিষদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হোটেলের সামনে অতিথির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আর কুশপুত্তলিকা দাহ করে ‘আবদুল হামিদ গো ব্যাক’ ও ‘বাংলাদেশ হুঁশিয়ার’ বলে শ্লোগান দেয়।
তাদের অভিযোগ্, বাংলাদেশের মাটিতে ‘ভারতবিরোধী শক্তি’ চীন ও পাকিস্তানকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের আইএসআইকে দিয়ে আসামে বাংলাদেশের মুসলমান অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। আর এই তথাকথিত অভিযোগ নিয়ে আসাম যখন টালমাটাল আর বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন তখন আমাদের রাষ্ট্রপতির সফর একটা বোনাস কিনা তা সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।
এ হলো রাষ্ট্রপতির ভারত দর্শনের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা।
এবার আমরা ভারতের একজন কংগ্রেস দলীয় সাবেক রাষ্ট্রপতির কথায় যিনি কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরার পরম আস্থাভাজন ছিলেন, যুব কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা ইন্দিরা তনয় সঞ্জয় গান্ধীর বিশ্বস্ত সেবক ছিলেন, যিনি আবার বিজেপির পার্থসারথী হতেও সব্যসাচী, যিনি নড়াইল কন্যার পাণিগ্রহণ করায় আমাদের দেশের একজন বরেণ্য জামাই, যিনি বাংলাদেশী কিছু লোকের কাছে দয়ার অবতার, যাঁর আশির্বাদে বাংলাদেশের অনেকে বিনাভোটে এমপি পর্যন্ত হয়ে আমাদের সংসদকে সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মানে স্বীয় শ্বশুরালয় ঘুরে গেলেন। আমাদের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট দিযে ‘জামাইষষ্টির বোধ হয় যোগ্যতম সম্মান দিল।তিনি আপ্লুত হয়ে মূখ খুললেন। বললেন, ‘রথ দেখাও হলো কলা বেচাও হলো।’ চট্রগ্রামে দেবী মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ দর্শনে তিনি গিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। তবে মাস্টারদা’র কথা তিনি ভোলেননি বলেই আমরা জানি।তবেআমাদের রাষ্ট্রপতি কামাক্ষায় গিয়ে ভুলটা করেননি। কারণ তিনি সম্মানিত অতিথি! ভারতের স্বাধীন গণতন্ত্রচর্চয় আর যাই হোক তিনি তো আর বাদ সাধতে পারেন না। বাংলাদেশের সরজমিন হাল যা-ই হোক। তবে যদি বাংলাদেশে এ ব্যাপারটা হতো তাহলে কি হতো সেটা হনুমানের নয় বরং অনুমানের বিষয়। তবে সে অনুমান আপাতত থাক।
অবশ্যই বিদেশী মেহমানের প্রতি অভব্যতা নয়। আর প্রণববাবু এমনই অতিথি যিনি না দেশী, না বিদেশী।আমরা তাঁকে আমাদের কন্যা সম্প্রদান করেছি। আমরা সেটা বিশ্বাস করি আর সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কাকাবাবুকে নিজ হাতে রেঁধে খাইয়েছেন। কারণ কন্যা হিসেবে তার কিছু দেওয়ার তো ছিলই পিতৃতুল্য প্রণব বাবুকে কেননা যখন বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বরদের নির্মম তাণ্ডব চলছে রক্তের বন্যায় ভাসছে তখন প্রণববাবু পিতৃ কর্তব্যে হাসিনা-রেহানাকে নিয়ে হরিয়ানায় পিকনিক করিয়েছেন নিজে সপরিবারে সঙ্গে গিয়ে ( সূত্র : The Dramatic Decade: Indira Years, Pranab Mukhejee)। আমরা জানি নানা সময়ে বাংলাদেশের নাগরিকেরা তাকে নানা সময়ে নানা অবদার জানিয়েছে আর তিনি জামাই লজ্জায় সেসব রাখতেও বাধ্য হয়েছেন। আবদারতো আমরা জানাতেই পারি কেননা তিনি ভারতের বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়তে তিনিই আমাদের সোনালি যোগসূত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওদিকে, আমাদের পত্রপত্রিকায় দুষ্টলোকেরা অনেক কিছুই রটিয়েছে এই বলে যে তিনি বাংলাদেশে নানা ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে সেটা যদি রম্ভা বেচার কাহিনী হয়েই থাকে তাতে আমাদেরআগ্রহ নেই।
তবে আমাদের রাষ্ট্রপতি যে এ ধরনের কাজ করবেন না তা আদাজল খেয়েই বলা যায়। আমরা যেটা জানি ভারততীর্থ দর্শন করে অবশ্যই তিনি নতুন করে বিমুগ্ধ হবেন যেমন তিনি সিঙ্গাপুর সফর করে সেদেশ সম্পর্কে মুগদ্ধ হয়েছেন আর মনে মনে বলেছেন, আহা! এমন যদি হতো।
কিন্ত তা হবার নয়। রাষ্ট্রপতির এ স্বপ্নটা খোঁয়ারি থেকে যেতে বাধ্য। সিনিয়র সিটিজেনদের প্রতি সিংহপুরে কি আচরণ করা হয় তানিয়ে তিনি ভাববিহ্বল। কিন্তু তাঁর দেশের সপ্ততিপর নারীকে নিয়ে কী করা হচ্ছে? কেন পুরনো জনমানবহীন পড়ো বন্দিখানার জিন্দিগানি কেন একজন ভোগ করবেন বিনা দোষে? কেন বলা হবে এতিমের টাকা খাওয়ায গজব পড়েছে! বিচারক দূর্নীতির জন্য তাঁকে জেলে পাঠাননি সেটা তিনি করেছেন তথাকথিত ব্রিচ অব ট্রাস্ট-এর কারণ দেখিয়ে। একই সুবাদে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে যেমন কিছু ভারতীয়দের আচরণের জন্য তাকে ঠোঁট সেলাই করে থাকতেই হবে এখানেও তাঁকে মৌনী থাকতেই হবে। উপায় নেই গোলাম হোসেন। উপায় নেই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির নিজের জবানীর `ঝিন্দের ‘বন্দি'র।