Search

Wednesday, March 14, 2018

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রুজ্ঞান কেন

এমাজউদ্দীন আহমদ


দেশে নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি যে হচ্ছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত সংবাদে এর প্রতিফলন ঘটছে। ব্যাংক ঋণে কেলেঙ্কারি, সরকারি নানা প্রকল্পে অনিয়ম ইত্যাদি তো থেমে নেই। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার কারাবন্দি নিয়ে নানা মহলে সঙ্গতই উচ্চকণ্ঠে আলোচনা হচ্ছে। তবে এ কথা আমি মনে করি যে, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি পর্যালোচনা করলে বিএনপি চেয়ারপারসনের জয় হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রুজ্ঞান করে এমন নির্মমতা দেখানো হয় না। হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি রাষ্ট্র ও রাজনীতির চিত্র বিবর্ণ করে, নানামুখী সংকট সৃষ্টি করে। এই সংকট আমাদের জন্যও অমঙ্গল ডেকে আনে। এর ফলে প্রতিপক্ষের ক্ষতির পাশাপাশি গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির ক্ষতি হয় অপরিসীম এমন চিন্তা কিংবা কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র-সমাজ অথবা রাষ্ট্রের নাগরিক সমাজের জন্য বহুমুখী নেতিবাচকতার কারণ হয়েও দাঁড়ায়। সরকারের নীতিনির্ধারকরা গণতন্ত্রের উৎকর্ষ, বিকাশ কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে অনেক রকম ইতিবাচক কথা বলছেন বটে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান বাস্তবতা কি এর বিপরীত নয়? 

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রুজ্ঞান করা হবে কেন? যেখানে এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান, সেখানে কোন ধরনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে, তা খুব সহজেই অনুমেয়। এমনটি সুস্থ রাজনীতির পরিবেশ ক্রমেই জটিল করে তুলছে। আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের আকুতি সত্ত্বেও আমরা এসবের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা স্পর্শ করতে পারছি না। প্রতিহিংসার রাজনীতি তো কখনও গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনাপ্রসূত সুস্থ রাজনীতির অংশ হতে পারে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক কূটকৌশল কিংবা প্রতিহিংসার রূপও ততই প্রকট হচ্ছে। প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেমন করা সম্ভব নয়, তেমনি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়টিও থেকে যাবে অনিশ্চিত। এসব ব্যাপারে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা প্রীতিকর নয়। দলবিহীন, ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং গত জাতীয় নির্বাচনোত্তর যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা আমাদের জন্য মোটেও গৌরবের বিষয় নয়।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে দলের তরফে যেসব কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে সবই ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী অবস্থানের কারণে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক পন্থায় তাদের নেত্রীর কারামুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালন করতে পারবে না অথচ সরকারের তরফে অহরহ শোনানো হবে গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য বাণী, এমনটি কি স্পষ্টতই স্ববিরোধিতা নয়? বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অহরহ যে অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ তা কি গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য? পুলিশ যে মারমুখী কায়দায় বাধা দিয়ে তাদের সব কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দিচ্ছে তা তো কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের চিত্র হতে পারে না। এমতাবস্থায় সঙ্গতই প্রশ্ন দাঁড়ায়, সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে মিল কোথায়? এমন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকারের বেপরোয়া মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা হয়তো নিজ সিদ্ধান্তে কিংবা নিজেদের কষা ছকে এমন বৈরী আচরণ করছেন না। এ ক্ষেত্রে তারা সরকারের নির্দেশই পালন করছেন- এটি খুব সহজ-সরল বিশ্নেষণে প্রতীয়মান হয়। যদি সরকারের নির্দেশ এসব ক্ষেত্রে এমন না থাকে তাহলে সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কেন? যদি সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত তাহলে প্রতীয়মান হতো, সরকারের কথা ও কাজে মিল রয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতারা কোনোরকম হিংসাশ্রয়ী কর্মসূচি দেননি বা দিচ্ছেন না। তারা শান্তিপূর্ণ পন্থায় তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন; কিন্তু তাদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না। তারা হরতাল-অবরোধের পথে হাঁটেননি। পরিস্থিতি অরাজক হয়ে উঠুক এমনটি তারা যে কোনোভাবেই চান না এটি তো তাদের প্রদত্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়েই স্পষ্ট। বিএনপি জনসমর্থিত বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে অত্যন্ত সাদামাটা ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিস্ময় ও উদ্বেগের বিষয় হলো, এমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও দলটির নেতাকর্মীরা পালন করতে পারছেন না। এই কর্মসূচিগুলো পালন করতে গিয়ে তারা যে কেবল হামলা ও বাধার মুখেই পড়ছেন তাই নয়, নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা, রীতিনীতির অনুশীলন ছাড়া কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক সমাজের কথা অকল্পনীয় এই সত্য অস্বীকারের অবকাশ নেই। সরকারের অনেকেও এমন উচ্চারণ করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের এ রকম উচ্চারণ আর বাস্তব কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য খতিয়ে দেখতে গভীর দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে কি? বহু ক্ষেত্রেই স্পষ্টভাবে দেখা যায় স্ববিরোধিতা।

গণতন্ত্রের অপরিহার্য কিছু শর্ত আছে। পরমতসহিষুষ্ণতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, রুচি, সমঅধিকার ইত্যাদি এর মধ্যে অন্যতম। গণতান্ত্রিক সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইত্যাদির অভাব দেখা দিলে বহুমুখী সংকট দেখা দেয়। আমাদের দেশের রাজনীতি এই সংকটমুক্ত হতে পারছে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা-আন্তরিকতা-পরিচ্ছন্নতা যদি থাকে তাহলে বৈরিতা এড়িয়ে সৃজনশীল, জনকল্যাণমুখী রাজনীতির পথ প্রশস্ত করা দুরূহ কোনো বিষয় নয়। ক্ষমতাসীনদের তরফে জনকল্যাণ কিংবা সুস্থ রাজনীতি চর্চার অঙ্গীকার ব্যক্ত হলেও কার্যক্ষেত্রে এর প্রতিফলন কতটা লক্ষ্য করা যায়? বিগত কয়েক দশকে বিশ্বে গণতন্ত্রের পদ্ধতিগত অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আমরাও এর বাইরে নই। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত পরিবর্তনের যে কথা উচ্চারিত হয় এর কোনো কিছুই উল্লিখিত বিষয়গুলো ব্যতিরেকে নয়। মূল কথা হলো, সুন্দর মনোভাব নিয়ে ইতিবাচক রাজনীতির বিকাশে কাজ না করলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। সহমর্মিতা কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকেই দেশে রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে কিংবা হচ্ছে। এ দেশের মানুষ বরাবরই চেয়েছে সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজ। নামকাওয়াস্তে সংসদীয় গণতন্ত্র এ দেশের মানুষ চায়নি। সুস্থ রাজনীতির বিকাশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, তেমনি বর্জন করতে হবে প্রতিহিংসার রাজনীতি। 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের জন্য অধিকারের সমতল ভূমি করাটা সর্বাংশে জরুরি। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কালো পতাকা প্রদর্শনের কিংবা মানববন্ধনের মধ্যে অহিংস কর্মসূচিও পালন করতে যদি না পারেন তাহলে কী করে বলব যে, আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি? সরকারের কয়েকজন দায়িত্বশীল বিগত কয়েক সপ্তাহে নতুন প্রেক্ষাপটে ইতিমধ্যে বহুবার বলেছেন যে, 'সরকার কারও রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে না। সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দিচ্ছে না।' তাদের অনেকেই এ কথাও বলেছেন যে, 'সুষ্ঠু রাজনৈতিক আন্দোলন করলে বরং বিএনপিকে সহযোগিতা করা হবে।' এমন আশ্বাস-প্রতিশ্রুতির পরও কি প্রতিহিংসার চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে না? অসংযত ও অসহনশীল বক্তৃতা-বিবৃতি না দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে সরকারকে সজাগ-সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের বৃহৎ প্রয়োজনের নিরিখে। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কিংবা অজুহাত দাঁড় করানো নয় বরং কথা ও কাজে মিল রাখার ক্ষেত্রে পরিচয় দিতে হবে আন্তরিকতা-সদিচ্ছার।

বিএনপি যেসব কর্মসূচি দিচ্ছে সেসব কর্মসূচি পালনে জনজীবনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা মোটেও নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়িত্বশীলদের উচিত, নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা বজায় রেখে অধিকার পালনের পথে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সবসময় অনুমতি কিংবা প্রশাসনের অনুমোদনই-বা নিতে হবে কেন? সদাসর্বদা অনুমতির বিষয়টি তো গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়টিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে। অবশ্যই প্রত্যাশিত যে, সরকারের দায়িত্বশীলরা বিরোধীপক্ষের নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের মতো জরুরি বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। অনুমতি রাজনীতি গণতান্ত্রিক অধিকার নয়, রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক অধিকারের সমতল ভূমি নিশ্চিত করা। হিংসা-প্রতিহিংসা বর্জন করে পরমতসহিষ্ণু হয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে রাজনীতির পথ মসৃণ করতে হবে। জনগণের জন্যই রাজনীতি। রাষ্ট্রের কল্যাণগত এর মধ্য দিয়েই নিশ্চিত করা হয়। নিশ্চয়ই দায়িত্বশীলরা এমন সত্য স্বীকার করবেন না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে সবার অংশগ্রহণমূলক হয়, এমন পরামর্শ যখন বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হচ্ছে, তখন সরকারের দিক থেকে কী প্রতিফলিত হচ্ছে? এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের নিরসন ভিন্ন সুস্থ রাজনীতির পথ মসৃণ করা দুরূহ। রাজনীতি ও নির্বাচনের জন্য সমতল ভূমি নিশ্চিত করা না গেলে এর ফল ইতিবাচক হবে কীভাবে?

  • সমকাল/১২-০৩-১৮ 
  • এমাজউদ্দীন আহমদ (সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী)

‘অামি মরবো, তুমি বেঁচে থাকবে - ঈশ্বরই জানেন কোনটা উন্নততর’



আবুল হাসান 



চৈনিক দার্শনিক চুয়ান জু একদিন স্বপ্নে দেখলেন তিনি প্রজাপতি হয়ে গেছেন। স্বপ্ন থেকে জেগে মুহুর্তের জন‍্য তিনি ভাবলেন, `আমি চুয়ান জু কি আসলেই প্রজাপতি?' `এখন স্বপ্ন দেখছি, নাকি আমি আসলেই মানুষ? কিন্তু এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম যে প্রজাপতি হয়ে গেছি?'--- ঐ মুহূর্তটিতে  তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এমন ক্ষণমুহূর্তের ভাবনাকে মহাত্মা সিগময়েড ফ্রয়েড আনকনশাস বা অজ্ঞানের ধারণা বলে অভিহিত করেন। চুয়ান জুর এমন একটি স্বপ্নের ধারণা নিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে জন্ম নেয়া সাড়া জাগানো সাহিত্যিক ফ্রানৎস কাফকা তাঁর রুপান্তর গল্পটি সাজিয়েছিলেন এমন ভাবে --- গ্রেগর সামসা নামক একজন সেলসম্যান স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি তেলাপোকা হয়ে গেছেন, কিন্তু বেচারা তখনো ভেবে চলেছেন অফিসে যাওয়ার ট্রেনটি যেন আবার মিস না হয়ে যায়!! চুয়ান জু, ফ্রয়েড বা কাফকাদের মত আমার মাথাতো এত তীক্ষ্ণ নয় তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাজিমউদ্দিন রোডের জেলখানায় আর আমি আমার বিছানায়, নাকি আমি জেলখানায় আর বেগম খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায়। যা দেখছি তার স্বপ্নে নেইতো আমি, এমন ভাবতে ভাবতে আমার দু'দিন কেটে গেছে। কেটে যাচ্ছে, রক্ত বেরুচ্ছে না। রক্ত বেরুচ্ছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না!! মহাকালের তুলনায় পৃথিবী, পৃথিবীর তুলনায় দেশ, দেশের তুলনায় দল আর দলের তুলনায় ব‍্যক্তিজীবন কতই না ক্ষুদ্র!!

কিন্তু ব‍্যক্তি তার কর্মগুনে মহাকালকেও অতিক্রম করতে পারে। চিহ্ন রেখে যেতে পারে মহাকালের বুকে। এমন চিহ্ন যা জাক দেরিদার মতই চিহ্ন মুছে ফেলতে চাইলেও চিহ্ন রয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়া কালের বুকে এমনই এক চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন। গ্রীসের নগর রাষ্ট্র এথেন্সে খৃষ্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে পৃথিবীর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ ভাববাদী দার্শনিক সক্রেটিসের বিচার যে ৫০০ জন বিচারক করেছিলেন তাদের ২৮০-২২০ ব‍্যবধানে তাঁকে দোষী সাব‍্যস্ত করে। কিন্তু তাঁর শাস্তি হবে হেমলক বিষ পানে মৃত‍্যুদণ্ড । এ সিদ্ধান্ত ছিল ৩৩০-১৭০ জন বিচারকের. অর্থাৎ যে মাত্রায় সংখ‍্যাগরিষষ্ঠ বিচারক তাঁকে দোষী সাব‍্যস্ত করেছিলো তার চেয়ে বেশী মাত্রায় তথা ৫০ জন বেশী বিচারক তাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দিয়েছিলো। যে ৫০ জন তাঁকে অপরাধীই মনে করে নাই, তারাই শাস্তি হিসেবে তাঁর মৃত‍্যুদণ্ডের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। এর কারণ সক্রেটিস আপস করেননি। তিনি তাঁর জীবনের বিনিময়ে আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। 

শেখ হাসিনার অন‍্যায় আবদারের কাছে মাথানত না করে বা অন‍্যায়ের সাথে অাপস করে ভোটের মাধ‍্যমেও বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনায় যেতে চান না। তিনি কারাগারকেই শ্রেয় মনে করেছেন। আইনবিজ্ঞান ও অপরাধ বিজ্ঞান যেমন জটিল ঠিক তেমনই সরল। কোন মানুষ অপরাধ না করলেও আপনি তাকে মেরে ফেলতে পারবেন, আবার তাকে মারার অপরাধে আপনার কোন প্রকার শাস্তিও হবে না। কোন ব‍্যক্তি যদি পাগল হয় আর সে যদি আপনাকে এমন ভাবে আক্রমণ করে যে, আপনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যান তাহলে রাইট টু প্রাইভেট ডিফেন্স এর অধিকারে আপনি আত্মরক্ষায় তার মৃত্যু অবধি ঘটাতে পারেন। মানসিক বিকারগ্রস্ততার কারণে লোকটি কোন অপরাধ করেনি আর নিজের জীবন রক্ষার্থ তাকে মেরে ফেললেও আপনার কোন শাস্তি হবে না। আবার এমনও আছে যে অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করলে শাস্তি হয় কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে আর শাস্তি হয় না। এ হলো আত্মহত্যার চেষ্টা করার মত অপরাধ। অপরাধী সাব‍্যস্ত হতে গেলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে  ঐ ব‍্যক্তির দুষ্ট মন থাকা অপরিহার্য। অর্থাৎ অপরাধ সংঘটনের মতলব তার থাকতে হবে। তাহলেই সে অপরাধী হিসেবে সাব‍্যস্ত হবে। কেবল অপরাধী সাব‍্যস্ত হলে পরে শাস্তির প্রশ্ন আসে। ইশারার আগেই হাজার হাজার কোটি টাকা পায়ে লুটিয়েপড়ে যে ব্যক্তির, সে ব‍্যক্তির দুই কোটি টাকা আত্মসাতের প্রশ্ন আসে কেমন করে? অপরাধের দুষ্টু মন পুরোপুরিই অবস্থা ও ঘটনার উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রের এত বড় বড় সুযোগ থাকতে নিজের টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন, এমন আষাঢ়ে গল্প হাসিনার তোতাদের মুখেই মানায়। 

অতি রাগে মানুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা লোপ পায়। আমারও তাই হয়েছে, বেশী কিছু আর লিখতে পারছি না। শুধু মনে করিয়ে দেই বিচারক মোতাহের হোসেন মালয়েশিয়া পালিয়ে পিতৃপ্রদত্ত জীবনটি রক্ষা করেছেন আর সুরেন্দ্র বাবুকে হাসিনা ক‍্যান্সারের রুগী বানিয়ে প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলিত মুক্তবায়ু সেবন করতে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছেন। তাই আখতারুজ্জামানকে কেউ দোষারোপ করবেন না। নিজের সুরক্ষা দেয়ার নৈতিক অধিকার তাঁর নিশ্চয়ই রয়েছে। 

ফ্রানৎস কাফকার একটি গল্পের সারার্থ দিয়েই ইতি টানবো। এক ব‍্যক্তি সারা জীবন আইনের দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে ভিতরে ঢোকার জন‍্য, তারপর যখন সে মারা যাচ্ছে তখন তাকে বলা হলো এই দরজাটা কেবল তার জন‍্যই বানানো হয়েছিলো। শেয়ার বাজারের দেড় লক্ষ কোটি টাকা,বাংলাদেশ ব‍্যাংক রিজার্ভের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা, এক ব‍্যক্তির ঋণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ,হল মার্ক, ডেসটিনি সহ কোন কিছুই গত দশ বছরে আইনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো না। আর ডান হাতের টাকা বাম হাতে রাখা হলো কেনো,আবার যে টাকা আজ অব্দি সে স্থানেই রয়েছে,এ জন‍্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জেলে নিতে হবে। 

কাফকায়েস্থ হাসিনা তুমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিনতে ভুল করেছো। বেগম খালেদা জিয়ার এই কারাবরণ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তাঁকে সীমাহীন মহিমায় উচ্চতায় সমাসীন করেছে। নিজেকে অমর করে রাখার এমন সৌভাগ্য একেবারেই বিরল। তাঁর এই কারাবরণে দেশে যে অশ্রুবন্যা বইছে, তার স্রোতে হাসিনার ভারত মহাসাগরে বিলীণ হয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা।  পুরো জাতি আজ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। আর বিশাল যন্ত্রণা বিশাল শুদ্ধতা এনে দেয়। 

মৃত্যুর পূর্বে সক্রেটিস বলেছিল,-"I will die, You will live. What is better God knows". অর্থাৎ- ‘আমি মরে যাব, তোমরা বেঁচে থাকবে। কোনটি শ্রেয়তর তা ঈশ্বরই ভাল জানেন।’ সত্তরোর্ধ অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া জালিমের কারাগারে বিনাদোষে বন্দী। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের ভালটা আজও মানুষ স্মরণে রেখেছে। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ পৃথিবীর বুকে চিহ্ন হয়েই রইবে, যেমনটা অমর হয়ে রয়েছে সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড। হয়েছেন নিজে। বিচারকরা স্মরণের অাঁস্তাকুডে হারিয়ে গেছে।

‘হাঁ আর না’- ভূবনের এমপিরা

বিশ্বজিত রায় 

তেসরা মার্চ প্রথম আলো’য় একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে এমপিদের ভূমিকা হ্যাঁ ও না-তেই শেষ। আইন প্রণয়নে তাদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। যদি থেকেও থাকে তা কেবলই নিমিত্ত মাত্র।  প্রতিবেদকের কথায় ঘুরেফিরে  ২০১৭ সালে শেয়ালের কাছে পোষানি দেওয়া কু‌মিরের পাঁচ ছানার মতো মাত্র নয়জন নেটিশ দিয়ে বিলের ওপর আলোচনা করেন । এদের মধ্যে সরকারি দলের কোনও এমপি নেই। মনে হয় এরা সব একমেবাদ্বিতীয়ম দর্শনে বিভোর। আলোচনা করেছেন দুজন স্বতন্ত্র এমপি। বাকিরা ‘কথিত’বিরোধী দলের। আর সবাই হাঁ/না করে দায় সেরে‌ছেন। এই নয়জন বিগত এক বছরে ৪ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।

এমপিদের ‌বিলের আলোচনায় সক্রিয় অংশ না নেওয়ার কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষকরাও এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁরা বলছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  বিলর ওপর আলোচনার জন্য নোটিশ বা সংশোধনীর জন্য নোটিশ দিতে এমপিদের ‌জন্য কোন বাধা নেই। তবু তারা সেটাও করেননি।

বিলের ওপর সাধারণত আলোচনা হয় সংসদীয় কমিটিতে। কিন্ত সেখানেও কমিটির দশ জন সদস্যের সবাই অংশ নেন না। কথা বলে বিতর্ক তুলে বাধা দেয় মূলত বিরো‌ধী দল [সেটা তাদের যথার্থ কাজও] আর সাধারণত সরকারি দল বিশেষ করে আমাদের দেশে বসে বসে জাবর কাটে আর নয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ‘উন্নয়ন শুঁকে ‘আমিষের’ খোঁজে বেড়াতে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটান সরকারি দলের এমপি মহাদয়গণ। তাই যেসব বিল সংসদে উপস্থাপিত হয় তাতে বড়ো একটা অদলবদল হয় না।

জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের নিয়মিত পর্যালোচক ও গবেষক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের মুখপাত্র  ইফরতখারুজ্জজামান‌ের বক্তব্য হলো সংসদের কাঠামো এমনই হয়ে গেছে যেন আইন প্রণয়ণ অনেকটাই একদলীয় একচ্ছত্র বিষয়। এই অন্ধ গোলকধাঁধাঁ থেকে পরিত্রাণের পথে অন্তরায় হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর গণতন্ত্রর চর্চা বলেছে টিআইবি। তবু ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্যে একথা পরিষ্কার তিনি ‌আসলে যেখানটায় আঘাত করা দরকার সেখানেটায়ই হাত দিতে ভয় পেয়েছেন। বা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। অসির নিচে নাকটা ‌তিনি এগিয়ে দিতে পারেননি। সোজা সাপটা বলতে পারেননি দেশের গণতন্ত্র চর্চাটাই এখন ট্যাবু। 
তবে সে যাক।

আমরা এখন প্রায়োরিটি ‌নির্ণয় করতে গিয়ে গণতন্ত্রকে উন্নয়নের পিছে পিছিয়ে দিয়ে‌ছি।আমাদের দরকার আগে উন্নয়ন। কার উন্নয়ন। চিরবঞ্চিত মানুষের  জন্য  চোখের জন্য দেখনাই চিকনাই উন্নয়ন। উপরে কোঁচার উন্নয়ন আর (পেটের) ভেতরে ছুঁচোর কেত্তন।পরে সেজন্য ঝোপেঝাড়ে, পথে ঘাটে অঘাটে দেখছি মহতী বাণী : উন্নয়নের  মন্ত্র, ..... র গণতন্ত্র।

অর্ধশতক অাগে সচিত্র ভারত পত্রিকায় একটা নিবন্ধে কয় লাইনের একটা কবিতা দেখেছিলাম তার কয়েকটি ছত্র এখনও আমার মনে পড়ে রীতিমতো বিপ্লবী কবিতাই বটে ... ডাস্টবিন পাশে নরকঙ্কাল মাঝ দরিয়ায় ধরেছে হাল, ফিউডাল তুমি খেয়েছো গোল, ধনিকতন্ত্র তল্পি তোল।’ এখন বোধ হয় কবিতাটা একটু বদলে দিতে হবে ‘ গণতন্ত্র তুমি খেয়েছো গোল ধনিকতন্ত্র দিয়েছে  গোল!’ মাঝ দরিয়ার নাইয়া এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে মানুষকে সব পেয়েছির দেশের! দেশ চলেছে দুর্বার গতিতে অগ্রগতির পথে। বলগা-লাগাম ছাড়া উন্নয়নের জোয়ারে কি ফল যখন অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ার করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। যখন বলছেন তারস্বরে সরকার বাকশালী ফাঁদে ব্যবসায়ী-সরকার-আমলা ফাঁদে ‘মানুষ’কে বাদ দিয়ে কেননা ওরা তো অাজকের নব্য বাকশালী-আওয়ামী ‌কায়দায় ‘ফেসলেস’ মিউট‌েড মেজরিটি। অাসলে তো ভোকাল মাইনরিটি ওরাই তো সব! নেত্রীর এমন মোক্ষম বাণীতে সবাই এখন বিস্ময়বিমুগ্ধ। কেবল বিমোহিতদের বলতে বাকি,‘ আমাদের একমেবাদ্বিতীয়ম  উনিই তো আমাদের দেহিপল্লব মুদারম।

কি বলতে কি আসলে বলছিলাম সার্বভৌম জাতীয় সংসদ ও এমপিদের কথা। এরা সব বেকারার। বিল পাশ করছেন হাঁ/না দিয়ে। পোষা বিরোধী দল আছে, জোটের জট আছে। সংসদের ক‌য়েক হাজার কোটি টাকার সুরম্য প্রাসাদ আছে, কেবল সত্যিকার অর্থে নেই বিরোধী দল, নেই ছায়া সরকার । যদিও আছে বিকল্প ধরনের প্রেত সরকার যাদের ছায়াও পড়ে না মাটিতে। লজ্জা-শরমে অস্থির। কাজেই হাঁ/না ছাড়া উপায় কি?

তবে সংসদ বা জৌলুসের ভবন ছেড়ে আসি এর প্রাণভোমরা এমপিদের কথায় । কি করছেন তাঁরা দেশের বা জাতির জন্য? তার একটা খতিয়ান নেওয়া যাক। আজকের অসমান্য সংসদে আলোনাচয় ব্যয় হয় মিনিটে আশি হাজার টাকা। নবম সংসদে নষ্ট সময়ের লোকসান ছিল ১০৪ কোটি টাকা। এটাকে কি বলা হবে? টিআইবি এটাকে অপচয় বা দূর্নীতি বলেনি। আমরা একে কি বলবো জনগণের টাকার রাজসিক শ্রাদ্ধ? টিআইবি  পার্লামেন্টের ব্যয়ের হিসেবে কি কি ফ্যাক্টর হিসেবে নিয়েছে আমাদের জানা নেই। তবে একজন এমপি পান দামি গাড়ি, অফিস, কম্পিউটার, কর্মচারী, আবাস, গানম্যান নানা সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন কমিটিতে থাকার সম্মানী ও প্রভাব কি হিসেবে একজন লেজিসলেটর বা ব্যবস্থাপক হিসেবে। অথচ তাঁর এই বিষয়টিতে হাঁ না করলেই সারে। তার জন্য আরও আছে প্রজেক্ট। উন্নয়ন দেখা তাঁদের কর্ম নাহ‌লেও, তাঁরা তাদের নির্বাচনী ‌এলাকার মানুষের স্বার্থ দেখেন। এখানে একঢিলে দুই পাখি মারা সুযোগটি রয়েছে। কম লোভনীয় নয়। এহ বাহ্য। নগরে তাদের জন্য নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা করে দিলে ভালো হয়।

কিন্ত নেপথ্য কাহিনী কি। বেশিরভাগ এমপির পুত্রকন্যারা দেশে থাকে না। বিদেশের এ লেভেল, ও লেভে‌লে পড়েন। মহোদয়েরা বিদেশে বাড়ি গাড়ি গড়েন। দেশে ভরসা নেই। আর আইনের খসড়া তৈরি করেন সচিব মহোদয়েরা। সচিব মহোদয়েরা সহায়তা নেন উপনিবেশিক আমলের আইন ও গেজেট থেকে। কারণ আবার আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়েও তেমন রিসোর্স পার্সন নেই্। এমপি সাহেবদের বেশিরভাগই আর আগের মতো আইনজীবী বা বিশারদ নন। কেননা উঠতি যুবারা টুকটাক (বায়বীয়) ব্যবসায়ী বা হালের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। হেতুকভাবেই তাঁদেকে ব্যবসায়ের তদ্বিরে থাকতে হয়।

এখন এদের কর্মফল যদি সেই অতিকথার চারপেয়ে প্রাণীর ডিম্ব  হয় তাহলে যারা ভোটার ভুক্তভোগী মানুষ তাদের কি দশা হবে! তবে আমরা এ  পর্যায়ে আলোচনার পর্দা এই বলে টানতে পারি -বেচারারা তো ফেসলেস !কাকস্য পরিবেদনং।

হেফাজতে মৃত্যু কি এখন ‘স্বাভাবিক’?

আলী রীয়াজ



উচ্চ আদালতের দেওয়া ৩৯৬ পৃষ্ঠার একটি রায়ে অন্তর্ভুক্ত নির্দেশনা যখন এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই দফা লঙ্ঘিত হয় এবং একজন তরুণের প্রাণহানি ঘটে, অথচ এ নিয়ে আলোচনার কোনো লক্ষণ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয় না, তখন তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। শুধু তা-ই নয়, এর একটি ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে দেশে বিরাজমান একটি আইনের বরখেলাপের আশঙ্কাও সুস্পষ্ট। তারপরও না গণমাধ্যমের আলোচনায়, না মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখতে পাই; মানবাধিকার কমিশনের কাছে এ খবর পৌঁছেছে এমন লক্ষণ নেই। অথচ এই ঘটনাগুলো ঘটেছে তখন, যখন প্রায় প্রতিদিনই আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষদের কথা শোনা যায়; আইনের স্বাভাবিক গতির কথা না হয় না-ই বললাম।

২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ের পূর্ণ ভাষ্যের বিষয় ছিল ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল খারিজ। হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন তার ১৩ বছর আগে, প্রধান বিচারপতিসহ চারজনের বেঞ্চ হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রেখে কিছু বিষয়ে সংশোধনী যুক্ত করে রায় দিয়েছিলেন ২৪ মে। আদালতের যেসব নির্দেশনা ছিল, তার মধ্যে ১৬৪ ধারার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছিল যে সরকারের হেফাজতে থাকার সময় কারও ওপর নির্যাতন করা যাবে না। নবম সংসদের শেষ দিনগুলোতে পাস করা ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) বিল, ২০১৩’ -এও সুস্পষ্টভাবেই সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় কারও ওপর নির্যাতন চালানোকে অপরাধ বলে বর্ণনা করে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

অথচ গত ৬ মার্চ পুলিশ নিজেদের পরিচয় না দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারীকে আটক করে, যা সুস্পষ্টভাবেই ছিল ৫৪ ধারার বিষয়ে ওই রায়ে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার বরখেলাপ (মিজানুর রহমান খান, ‘আদালতের দিকনির্দেশনার লঙ্ঘন ঘটেছে’ প্রথম আলো, ১০ মার্চ ২০১৮)।

ওই দিন মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে ছাত্রদলের একজন নেতা জাকির হোসেনকে রমনা থানার পুলিশ আটক করে। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শনিবার রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার সকালে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগকে আমাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কেননা, ঘটনাপরম্পরা অবশ্যই এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে ইঙ্গিত দেয় না।

২০১৩ সালের আইনে হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা আমরা স্মরণ করতে পারি। ‘হেফাজতে মৃত্যু’র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তার হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু, অবৈধ আটকাদেশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গ্রেপ্তারের সময় কারও মৃত্যু, কোনো মামলায় সাক্ষী হোক বা না হোক জিজ্ঞাসাবাদের সময় মৃত্যু। আর ‘নির্যাতন’ বলতে বোঝানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। জাকির হোসেনের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে এ দুইয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে। এসব বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতা সে কারণেই আমাকে বিস্মিত করে।

হেফাজতে মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আদালতের নির্দেশনার সূচনা সেই ১৯৯৮ সালেই। এর সূচনা হয়েছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কারণেই। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট সন্দেহবশত কাউকে গ্রেপ্তার ও তদন্তের নামে রিমান্ডে এনে আসামিকে শারীরিক নির্যাতন করা থেকে নিবৃত্ত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না মর্মে সরকারের ওপর রুল জারি করেছিলেন। এই আইনগুলো নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পটভূমি ও ইতিহাস সম্প্রতি ৫৪ ধারার লঙ্ঘন নিয়ে মিজানুর রহমান খানের আলোচনায়ই আছে, আমি তার পুনরুক্তি করতে চাই না।

মনে রাখা দরকার যে আদালত ১৮৯৮ সালের তৈরি করা এই আইন ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের জন্যই বলেছিলেন; আর সংশোধনের আগ পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক আমলের এই আইন ভারতে বদলে গেছে ১৯৭২ সালে, কিন্তু বাংলাদেশে তা শুধু বহালই আছে তা নয়, এর ব্যবহার এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কতটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, সেটা প্রতিবছর হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ২৬০ জন হেফাজতে মারা গেছেন; ২০১৬ সালে এক বছরেই মারা গেছেন ৭৮ জন।

নিয়মিতভাবে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে আদালতে মামলা হয় একেবারে নগণ্য। তার দুটি কারণ আমরা সহজেই চিহ্নিত করতে পারি। এর একটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা। যাঁরা এ বিষয়ে খবর রাখেন, তাঁরা নিশ্চয় জানেন যে ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‍্যাবের হেফাজতে নিহত শাহনূর আলমকে কেন্দ্র করে কী ঘটেছিল।

নবীনগরের বগডহর গ্রামের বাসিন্দা শাহনূর আলমকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে র‍্যাব ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়কের বিরুদ্ধে থানায় মামলার দায়ের করার চেষ্টা করেন তাঁর ভাই মেহেদী হাসান ৷ থানা মামলা না নেওয়ায় ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু (নিবারণ) বিল, ২০১৩’ আইনের আওতায় মামলা করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাজমুন নাহার শুনানি শেষে র‍্যাবের ওই অফিসারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত ৷ এই নির্দেশ দেওয়ার পর ওই বিচারককেই ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর এই মামলার অগ্রগতি সহজেই অনুমেয়। এই অভিজ্ঞতা খুব উৎসাহব্যঞ্জক বলে ভুল করার কারণ নেই।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই আইন বিষয়ে পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১৫ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই আইনের ১৪টি ধারা ও উপধারা সংশোধনী চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যাতে আইনের ৭টি ধারা বিলুপ্ত করার সুপারিশ আছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ‘পুলিশ সপ্তাহে’ পুলিশের যেসব দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়েছে, তাতে এই আইনের ‘সংশোধনী’র কথাও আছে। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সাহস পান না।

কিন্তু আমার কাছে যে বিষয়টি বেদনাদায়ক বলে মনে হয় তা হচ্ছে, এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর একধরনের নীরবতা। যদিও এ নিয়ে তাদের চেষ্টায় সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল, এখন তাদের দ্বিধা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী? গত এক দশকে আমরা দেখেছি কী করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ‘স্বাভাবিক’ বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে, কী করে গুমের ঘটনাকে বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।

হেফাজতে হত্যার ক্ষেত্রেও এখন প্রায় সেই অবস্থাই তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসবের পেছনে কাজ করেছে এই ধারণা যে যাঁরা হেফাজতে মারা যাচ্ছেন, যাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন, যাঁরা গুম হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা আমার কেউ নন, কিংবা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসের সঙ্গে আমি একমত নই। কিন্তু বেঁচে থাকার অধিকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেবল এক দলের জন্য প্রযোজ্য, অন্যের জন্য নয়-এমন ব্যবস্থা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি।

  • প্রথম আলো/১৪-৩-১৮
  • আলী রীয়াজ: (যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর)

আওয়ামী নেতার অপহরণ চক্র

  • ১০ জনের অপহরণ দলে আছেন আ.লীগ-ছাত্রলীগ নেতা 
  • অপহরণের পর নির্যাতন করে টাকা আদায়



বাবা সেলিম মোল্লা (৫০) হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ছেলে রাজিবুল হাসান ওরফে রাজীব (২৭) একই উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা দুজনে মিলেই নেতৃত্ব দেন একটি অপহরণ চক্রের। চক্রের অন্য সদস্যরাও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রোববার রাতে এই দুজনসহ ১০ জন ধরা পড়েন র‍্যাবের হাতে। র‍্যাব বলছে, এই চক্রের লোকজন ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নির্যাতন করে স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। 

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে মো. জাফর ইকবাল (৪০) এবং মো. মিরাজ গাজী (৩৫) নামের দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁদের মুঠোফোন থেকে স্বজনদের কাছে টাকাও চাওয়া হয়। জাফরের বোন শুক্রবার রাতেই মানিকগঞ্জে গিয়ে নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। আরও টাকা পাঠানোর জন্য মিরাজের স্বজনদের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়, যার সূত্র ধরেই চক্রের সন্ধান পায় র‍্যাব। 

গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এই চক্রটির সম্পর্কে তথ্য দেয় র‍্যাব।

রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে র‍্যাব–২-এর ২৫ জন কর্মকর্তা হরিরামপুরের কালোয়া গ্রামে সেলিম মোল্লার আলিশান বাড়িতে ঝটিকা অভিযান চালান। বাড়ির বিভিন্ন তলা ও কক্ষ থেকে তাঁরা ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেন। তল্লাশি চালিয়ে ছয়টি পিস্তল, নয়টি ম্যাগাজিন, ৩৬টি গুলি, সাতটি চায়নিজ কুড়াল, চারটি চাপাতি এবং নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করেন। বাড়ির একটি কক্ষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় অপহৃত জাফর ও মিরাজকে।

গ্রেপ্তার অন্য আটজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন (৪৭) এবং যুবলীগের কর্মী মো. নিরব আহম্মেদ টিটু (২৯), মো. আবদুর রাজ্জাক (৩৫), মো. তারেক হোসেন (৩১), মো. আবুল বাশার বিশ্বাস (৩৩), মো. রুহুল আমিন (৩৫), মো. তারেক হোসেন পুলক (২৬) ও মো. তুহিন বিশ্বাস (৩০)।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, সেলিম মোল্লার তিনতলা বাসার পুরোটাতেই তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা থাকত। এর একটি কক্ষে অপহৃত ব্যক্তিদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো। আভিযানিক দল বলেছে, কক্ষটিকে ‘টর্চার করার মতো একটি প্লেস’ বলা চলে। 

প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি অপহরণ করে অত্যাচার করে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা আদায় করে আসছিল। সেলিম মোল্লা বেশ অর্থ–সম্পদের মালিক হয়েছেন এলাকাতেই। সে বিষয়গুলোও পরবর্তী সময়ে তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

উদ্ধার হওয়া মো. জাফর ইকবাল ও মো. মিরাজ গাজী প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সকালে ব্যবসায়িক কাজে তাঁরা দুজন ফার্মগেটে এসেছিলেন। বিজ্ঞান কলেজের সামনে তাঁরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় একটি মাইক্রোবাস এসে তাঁদের সামনে দাঁড়ায়। ধানমন্ডি কোন দিকে জানতে চায়। তাঁরা যখন তাদের দিক বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন দু-তিনজন নেমে তাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর আনুমানিক দু-তিন ঘণ্টা একটানা চলার পর একটি জায়গায় দাঁড়ায়। তাঁদের চোখ যখন খোলে, তখন একটি কক্ষের মধ্যে ছয়-সাতজন লোক তাঁদের সামনে। তারা বলে ‘টাকা দে’। তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ঘোর কাটার আগেই তাঁদের বেতের লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু করে। একপর্যায়ে কাপড় খুলে লুঙ্গি পরায়। হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে একটি পাটাতনের ওপর শোয়ায়। গলার কাছে কিছু একটা ধরে। ছটফট করতে থাকলে মুখের স্কচটেপ খোলে। টাকা দেওয়া হবে বলে জানালে মারধর থামে।

জাফর বলেন, অপহরণকারীরা তাঁর ফোন থেকে তাঁর বোনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। অপহরণকারীদের কথা অনুযায়ী তিনি চেকবই ও নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে মানিকগঞ্জে যান। অপহরণকারী সদস্যদের একজন তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করে চেক বই ও টাকা নিয়ে আসে। এরপর মিরাজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর মুক্তিপণ পাঠানোর জন্য সেলিম মোল্লার ছেলে রাজিবুল হাসানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়।

জাফর বলেন, শুক্রবার দুপুরে শুধু একবেলা তাঁদের খেতে দিয়েছিল অপহরণকারীরা। নির্যাতনের একপর্যায়ে হাত-পা বেঁধে দুজনকেই চালের আলাদা বস্তায় ঢুকিয়েছিল। বলেছিল নদীতে ফেলে দেবে।

র‍্যাব–২-এর আভিযানিক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ আলী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মিরাজের স্বজনেরা রাজিবুলের অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন। রাজিবুল যখন সেই টাকা তুলতে যান, তখনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতে তাঁদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। তাঁরা যখন অভিযান চালান, তখন সেখানে সবমিলে ১৫-২০ জন ছিল। তাদের মধ্য থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে তাঁরা গ্রেপ্তার করেন।

স্থানীয় লোকজন এবং দলীয় একাধিক নেতা-কর্মী জানান, সেলিম মোল্লার গ্রামের বাড়ি হরিরামপুর উপজেলার কামারঘোনা গ্রামে। প্রায় চার বছর আগে তিনি এই এলাকায় বাড়ি করেন। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করেন। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি বেশ অর্থ ও বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। তিনতলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ির দক্ষিণ পাশে দুই তলা আরেকটি ভবন নির্মাণ করেছেন। চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দিন তাঁকে রাজনীতিতে আনেন, পদবি দেন। এ ছাড়া তাঁর ছেলে রাজিবুল হাসানও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ।

সেলিম মোল্লা স্থানীয় ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরপর সভাপতিও। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য রফিকুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় আট বিঘা জমিতে মাটি ভরাট করে ৩০০ দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন সেলিম মোল্লা। এর থেকে উপার্জিত তিন কোটি টাকার বেশি সেলিম মোল্লা আত্মসাৎ করেন।

  • প্রথম আলো/ ১৪-৩-১৮  


SC stays Khaleda’s bail until Sunday


The Appellate Division on Wednesday stayed till Sunday the bail order granted to Bangladesh Nationalist Party chairperson Khaleda Zia in the Zia Orphanage Trust corruption case.

A bench of four judges, chaired by Chief Justice Syed Mahmud Hossain also asked the Anti-Corruption Commission to file regular petition by Sunday seeking stay on bail granted by the High Court on Monday.

Khaleda’s lawyer, however, said the court stayed the bail without hearing them.

Earlier on Tuesday, Appellate Division chamber judge Justice Hasan Foez Siddique sent the two petitions to the full bench of the division without passing any order.

Advocate Sufia Khatun filed a petition on behalf of the state while lawyer Khurshid Alam Khan lodged another one on behalf of the Anti-Corruption Commission. On Monday, the High Court granted the interim bail to Khaleda Zia.

On February 22 last, BNP Chairperson Khaleda Zia filed a petition with the High Court seeking bail in the Zia Orphanage Trust graft case. On the day, the HC asked the lower court to submit all the relevant documents within 15 days.

On February 25, Khaleda Zia failed to secure bail in the case as the High Court said it would pass an order on her bail petition upon receiving all the documents relating to the judgment from the lower court.

On February 8 last, the Dhaka Special Court-5 convicted the former Prime Minister and BNP chairperson and sentenced her to five years' imprisonment in the Zia Orphanage Trust graft case. She was then sent to old central jail at Nazimuddin Road in the city.

  • Courtesy: New Age/Mar 14, 2018

Tuesday, March 13, 2018

আমাদের রাষ্ট্রপতি বনাম ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি

রাতুল চৌধুরী 


আমাদের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এমূহুর্তে ভারত সফরে আছেন। প্রথমে `সাতবোনের' মূল রাজ্য আসাম। ছিলেন গুয়াহাটির পাঁচতারা হোটেল ‘তাজ ভিভান্তে’তে। তিনি ভারতে তাঁর এই মঙ্গলযাত্রায় পরিদর্শন করেছেন যাদু, কল্পনা ও কিংবদন্তীর রহস্যে ঘেরা কামাক্ষ্যা দেবীর বহুল বিশ্রুত মন্দির । কিন্ত অসমের কিছু অসম উগ্রবাদী লোক সম্ভবত ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। তারা আমাদের পত্রপত্রিকার প্রকাশিত খবর অনুযা‌য়ী তাঁকে অপমান করতে তাঁর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে। তারা তাঁকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে শ্লোগানও দেয়।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আসামের উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন হিন্দু যুব পরিষদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হোটেলের সামনে অতিথির বিরুদ্ধে ‌বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আর কুশপুত্তলিকা দাহ করে ‘আবদুল হামিদ গো ব্যাক’ ও ‘বাংলাদেশ হুঁশিয়ার’ বলে  শ্লোগান দেয়।
তাদের অভিযোগ্, বাংলাদেশের মাটিতে ‘ভারতবিরোধী শক্তি’ চীন ও পাকিস্তানকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের আইএসআইকে দিয়ে আসামে বাংলাদেশের মুসলমান অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। আর এই তথাকথিত অভিযোগ নিয়ে আসাম যখন টালমাটাল আর বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন  তখন আমাদের রাষ্ট্রপতির  সফর একটা বোনাস কিনা তা সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।   

এ হলো রাষ্ট্রপতির ভারত দর্শনের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা।

এবার আমরা ভারতের একজন কংগ্রেস দলীয় সাবেক রাষ্ট্রপতির কথায়  যিনি কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরার পরম আস্থাভাজন ছিলেন, যুব কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা ইন্দিরা তনয় সঞ্জয় গান্ধীর  বিশ্বস্ত সেবক ছিলেন, যিনি আবার বিজেপির পার্থসারথী হতেও সব্যসাচী, যিনি নড়াইল কন্যার পাণিগ্রহণ করায় আমাদের দেশের একজন বরেণ্য  জামাই, যিনি বাংলাদেশী কিছু লোকের কাছে দয়ার অবতার, যাঁর আশির্বাদে বাংলাদেশের অনেকে ‌বিনাভোটে এমপি পর্যন্ত হয়ে আমাদের সংসদকে সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মানে স্বীয় শ্বশুরালয় ঘুরে গেলেন। আমাদের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট দিযে ‘জামাইষষ্টির ‌ বোধ হয় যোগ্যতম  সম্মান দিল।তিনি আপ্লুত হয়ে মূখ খুললেন। বললেন, ‘রথ দেখাও হলো কলা বেচাও হলো।’  চট্রগ্রামে দেবী মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ দর্শনে তিনি গিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। তবে মাস্টারদা’র কথা তিনি ভোলেননি বলেই আমরা জানি।তবেআমাদের রাষ্ট্রপতি কামাক্ষায় গিয়ে ভুলটা করেননি। কারণ তিনি সম্মানিত অতিথি! ভারতের স্বাধীন গণতন্ত্রচর্চয় আর যাই হোক তিনি তো আর বাদ সাধতে পারেন না। বাংলাদেশের সরজমিন  হাল যা-ই হোক। তবে যদি বাংলাদেশে  এ ব্যাপারটা হতো  তাহলে কি হতো সেটা হনুমানের নয় বরং অনুমানের বিষয়। তবে সে অনুমান আপাতত থাক।

অবশ্যই বিদেশী মেহমানের প্রতি অভব্যতা নয়। আর প্রণববাবু এমনই অতিথি যিনি না ‌ দেশী, না বিদেশী।আমরা তাঁকে আমাদের কন্যা সম্প্রদান করেছি।  আমরা সেটা বিশ্বাস করি আর সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী কাকাবাবুকে নিজ হাতে রেঁধে খাইয়েছেন। কারণ কন্যা হিসেবে তার কিছু দেওয়ার  তো ছিলই পিতৃতুল্য প্রণব বাবুকে কেননা যখন বাংলাদেশে পাকিস্তানী বর্বরদের নির্মম তাণ্ডব চলছে রক্তের বন্যায় ভাসছে তখন প্রণববাবু  পিতৃ কর্তব্যে হাসিনা-রেহানাকে নিয়ে হরিয়ানায় পিকনিক করিয়েছেন  নিজে সপরিবারে  সঙ্গে গিয়ে ( সূত্র  : The  Dramatic Decade: Indira Years, Pranab Mukhejee)। আমরা জা‌নি নানা সময়ে বাংলাদেশের নাগরিকেরা তাকে নানা সময়ে নানা অবদার জানিয়েছে আর তিনি জামাই লজ্জায় সেসব রাখতেও বাধ্য হয়েছেন। আবদারতো আমরা জানাতেই পারি কেননা তিনি ভারতের বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়তে তিনিই আমাদের সোনালি যোগসূত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওদিকে,  আমাদের পত্রপত্রিকায় দুষ্টলোকেরা অনেক কিছুই রটিয়েছে এই বলে যে তিনি বাংলাদেশে নানা ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে সেটা যদি রম্ভা বেচার কাহিনী  হয়েই থাকে তাতে আমাদেরআগ্রহ নেই। 

তবে আমাদের রাষ্ট্রপতি যে এ ধরনের কাজ করবেন না তা আদাজল খেয়েই বলা যায়। আমরা যেটা জানি ভারততীর্থ  দর্শন করে অবশ্যই তিনি নতুন করে বিমুগ্ধ হবেন যেমন তিনি সিঙ্গাপুর সফর করে সেদেশ সম্পর্কে মুগদ্ধ হয়েছেন আর মনে মনে বলেছেন, আহা! এমন যদি হতো।

কিন্ত তা হবার নয়।  রাষ্ট্রপতির এ স্বপ্নটা খোঁয়ারি থেকে যেতে বাধ্য। সিনিয়র সিটিজেনদের প্রতি সিংহপুরে কি আচরণ করা হয় তানিয়ে তিনি ভাববিহ্বল। কিন্তু তাঁর দেশের সপ্ততিপর নারীকে নিয়ে কী করা হচ্ছে? কেন পুরনো জনমানব‌হীন পড়ো বন্দিখানার জিন্দিগানি কেন একজন ভোগ করবেন বিনা দোষে?  কেন বলা হবে এতিমের টাকা খাওয়ায গজব পড়েছে! বিচারক দূর্নীতির জন্য তাঁ‌কে জেলে পাঠাননি সেটা  তিনি  করেছেন তথাকথিত ব্রিচ অব ট্রাস্ট-এর কারণ দেখিয়ে।  একই সুবাদে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে  যেমন কিছু ভার‌তীয়দের আচরণের জন্য তাকে ঠোঁট সেলাই করে থাকতেই হবে এখ‌ানেও তাঁকে মৌনী থাকতেই হবে। উপায় নেই গোলাম হোসেন। উপায় নেই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির নি‌জের জবানীর `ঝিন্দের ‘বন্দি'র।   

Why the endless bailouts of state-owned banks?


The government has just announced a fresh bailout package to the tune of Tk 20 billion (approximately USD 250 million) so that they may meet some of their capital shortfalls. The state-owned banks (SoBs) that are getting their troubled coffers replenished are Sonali Bank, Janata Bank, Rupali Bank, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank, and Grameen Bank.

The bailout package is 10 percent of the total capital shortfall of these banks, which is a pittance to the bailout amount demanded by these banks which was to the tune of Tk 203.98 billion! While the package is a mere fraction of what was demanded, the fact remains that the bailout is being given without initiating any meaningful reforms in these graft-ridden banks.

When we look at recent media reports about one-third of the SoBs being held hostage to 20 defaulted borrowers, and without any concrete steps to take them to task for loan recovery, we begin to comprehend how bad the situation is in these SoBs. Indeed, going by historical data, the government has been bailing out many, if not most, of these banks over the last four years with billions of taka which could have been spent on more productive sectors of the economy. The idea of “recapitalisation” took on a whole different meaning since the beginning of the government's first tenure.

Before the latest bailout, Tk 14,505 crore had been handed out as “bailout” money for these ailing institutions since 2009. As pointed out recently by Dr Ahsan H Mansur, executive director of independent think-tank Policy Research Institute, banks have been asking for money again and again because the money has gone down the drain, or to put it in another fashion, in the pockets of corrupt and politically connected people.

Although the government appears to have attempted to rein in what has fast developed into a bottomless basket case scenario, the Tk 20 billion allocation is being spent to meet Basel-III requirements. It is astonishing to find indignation coming from bank officials of troubled banks that they are not getting what they have been demanding. The national exchequer is not a lottery fund for hopeless financial institutions. If we look at government data, we find that the government has injected Tk 106.22 billion into the coffers of SoBs and other financial institutions, including privately owned IFIC bank over a five-year period (2012-2017).

Why are we allowing the continuation of a failed system of bank governance in these institutions? Who are we serving by throwing away public money? Despite multi-billion taka scams that have rocked the financial base of this country over the last so many years, the government has failed to check corrupt practices in SoBs. It has failed to jail bankers implicated in corrupt practices. No, we have done none of that. What we have done instead is offer more of the same; more money to be plundered with impunity. Not just any public fund but taxpayers' hard-earned money!

Indeed, from what has been published in this paper, taxpayers' money—thousands of crores of it—has been diverted from development expenditure to pay for these handouts to SoBs. Since its tax money paying for the rich-and-infamous to loot our banks, it makes perfect sense for the government to keep squeezing us of our earnings through innovative ways, either through revamped VAT or excise duty policies on bank deposits.

There have been attempts by some to make a comparison with the India experience of recapitalising its banks to the tune of USD 14 billion under the Indrodhanush Recapitalisation Scheme as an excuse for our bailout. The circumstances that led to Indian banks running into bad loans had everything to do with huge exposure to financing mega infrastructure projects that got delayed by years of bureaucratic red tape. Our situation is vastly different. Our SoBs have not been making sensible investments into projects. No, we have been throwing precious billions away to finance dubious projects of dubious business entities.

Hence, the attempt to compare our case with that of India is flawed to begin with. Since we are on the subject, readers may be interested to learn that the Indrodhanush scheme did not come free to the banks; it entailed a series of reforms that the Indian banks had to initiate in their respective institutions. These included the improvement of due diligence and making provisions for specialised monitoring for loans above Rs 2.5 billion that allowed for bad loans to accrue.

What exactly have we done in this regard? We have practically no accountability, no liability and no transparency in SoBs. Our skepticism about the “recapitalisation” scheme launched by the government to bail out banks stems from these failures by our policymakers, to do what needs to be done, to make these sick banks healthy again. As things stand now, there will be no end to these bailouts. We will be throwing away public money every fiscal so that it may be siphoned off by new groups of defaulters. Fraudulent lending to dubious borrowers has become the name of the game. All that is required is the right political linkages because SoBs have politically appointed board members who wield considerable influence over loan sanctioning.

  • The Daily star/13-3-18

সব দলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হোক সভা–সমাবেশের অধিকার


সম্পাদকীয়


কয়েক দিন ধরে বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে সভা করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়েও তা মিলছে না।

আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির তরফে যে আবেদন করা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অনুমতি মেলেনি। এই সরকারের আমলে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা বিএনপির জন্য এটাই প্রথম নয়। বরং সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়াই যেন তাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধানপ্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু আমরা লক্ষ করছি উল্টো প্রবণতা।

সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলসহ বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের এই অধিকার প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো দল বা সংগঠন সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের ওপর নির্দয়ভাবে বলপ্রয়োগ করে। এমনকি নারীরাও লাঞ্ছনাপূর্ণ নির্যাতনের শিকার হন। শনিবার কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের মিছিলেও পুলিশকে একই ভূমিকায় দেখা গেছে।

সম্প্রতি বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা ও পণ্ড করা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করে না।

কিন্তু আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তায় সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন না করলেও তাদের কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হয় এবং তা ব্যাপক জনদুর্ভোগের কারণ ঘটায়। গত সাতই মার্চের কর্মসূচি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। সেদিন সভাগামী মিছিল থেকে তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকেও এ ব্যাপারে পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো অথবা সরকারের সমর্থক অন্য কোনো দলের সভা–সমাবেশে পুলিশ সাধারণত বাধা দেয় না। তাদের সব বাধা শুধু সরকারবিরোধী দল ও সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে। সরকারবিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রেই শুধু জনশৃঙ্খলার যুক্তি তুলে ধরা হয়। পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার একদিকে রাস্তায় বিরোধী পক্ষকে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না, আবার অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতিও দিচ্ছে না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে, ওয়ার্কার্স পার্টি জনসভা করছে। বিএনপি কেন সেই সুযোগ পাবে না?

এটা ঠিক যে দল বা সংগঠনই সভা-সমাবেশ করুক না কেন, তাতে জনগণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা দরকার। কোথাও রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা হলে তার প্রভাবে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ সব সড়কের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য।

সমাবেশ ও জনসভার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। কর্মদিবসে জনসভা না করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করার বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকেও একমত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে যানজটে নাকাল নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

  • Prothom Alo/Mar 12, 2018

Monday, March 12, 2018

১০ শতাংশের হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত হচ্ছে

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ



দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ। আয় বণ্টন ব্যবস্থার এ কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং (লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। সংস্থাটি বলছে, আয়ের এত বড় অংশ কীভাবে মাত্র ১০ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত হলো, তা বুঝতে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে অবাধে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়া, পুঁজিবাজার কারসাজি, কর ফাঁকি, সরকারি কেনাকাটা ও ব্যয়ে দুর্নীতি— সর্বোপরি ভূমি দখলের ঘটনাগুলোই যথেষ্ট।

এ প্রক্রিয়ায় গুটিকয় মানুষের হাতে আয় বণ্টন কেন্দ্রীভূত হওয়ার অর্থ হলো, জাতীয় আয়ে বাকিদের অংশ কমছে। ইউএনডিপি বলছে, আয়ের কেন্দ্রীভবন এত দ্রুত ঘটছে যে, সম্পদশালী পরিবারগুলো আরো বেশি ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে আরো বেশি নাজুক হচ্ছে সবচেয়ে দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ উপাত্তের ভিত্তিতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনডিপি। এতে আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্য, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্যের অংশটিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

কোনো দেশে আয়বৈষম্য কতটা, তা পরিমাপের নির্দেশক জিনি সহগ। শূন্য থেকে ১— এ পরিসীমার মধ্যে এটি হিসাব করা হয়। জিনি সহগের মান যত কম হয়, আয়বৈষম্য তত কম বলে ধরে নেয়া হয়। আর সহগের মান উচ্চ হলে তা আয় বা সম্পদ বণ্টনে অধিকতর অসমতা নির্দেশ করে। জিনি সহগের মান শূন্য হলে তা দ্বারা চরম সমতা (অর্থাৎ সবার আয় সমান) বোঝায়। সহগটির মান যদি বাড়তে বাড়তে দশমিক ৫ বা তার বেশি হয়, তার অর্থ হলো— দেশে আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি বলছে, ২০১০ সালে দেশে জিনি সহগের মান ছিল দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৮৩-এ। একই সময়সীমায় গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান দশমিক ৪৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৫-এ। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ মান ২০১০ সালে ছিল দশমিক ৪৫। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫-এ।

আয়বৈষম্যের এ চিত্র থেকে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউএনডিপি। প্রথমত. দেশে আয়বৈষম্য ছয় বছরে অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত. এ সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক অংশটি আরো দরিদ্র হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত. সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যেই আয় আরো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। চতুর্থত. দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি।

উন্নয়নের একটা পর্যায়ে সমাজে আয়বৈষম্য বাড়তে পারে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম। তবে এর লাগাম টানতে দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. শামসুল আলম বলেন, ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সত্ত্বেও কেন আয়বৈষম্য বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদারের পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে।

দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী আরো নাজুক হচ্ছে মূলত জাতীয় আয়ে তাদের অংশীদারিত্ব কমার কারণে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে ইউএনডিপি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ২০১০ সালেও জাতীয় আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ খানার অংশীদারিত্ব ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশে। এর বিপরীতে সবচেয়ে সম্পদশালী ৫ শতাংশ খানার আয় অংশীদারিত্ব ২৪ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯ শতাংশে। আয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ১০ শতাংশের আয়ের অংশীদারিত্ব ছয় বছরে ৩৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বলেন, কোনো অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগোয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা আয়বৈষম্য তৈরি হতে পারে। তবে সেটি কতটুকু সহনীয় তা দেখার বিষয়। ব্যাপক অনিয়ম ও ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের মতো যেসব ঘটনা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, সেগুলো অর্থনীতিতে ভালো কোনো সংকেত দিচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াও বৈষম্য দূরীকরণের আরো কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে, সেটি ভেবে দেখতে হবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি বৈষম্যও কমানো যাবে না।

আয়বৈষম্যের চিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে ভোগ ব্যয়েও। ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগে ভাগ করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মোট জাতীয় ভোগ ব্যয়ে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশে; ২০১০ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশের ভোগ ব্যয়ে অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশে।

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে এ সময় শহরাঞ্চলে বৈষম্যের মাত্রা সামান্য বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে অনেকখানি। ভোগ ব্যয় সূচকে দেশের গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান ২০১০ সালের দশমিক ৩ থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে দশমিক ৯। আর শহরাঞ্চলে তা দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে দশমিক ৩৪-এ দাঁড়িয়েছে।

ইউএনডিপির ন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাডভাইজর শামসুর রহমান বলেন, সরকারের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউএনডিপি। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

ইউএনডিপি বলছে, ক্রমবর্ধবান এ বৈষম্য থেকে উত্তরণে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছে তারা। এজন্য রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সুপারিশে ইউএনডিপি বলেছে, একটি প্রগতিশীল ও বিস্তৃত প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বিবেচনায় বলা যায়, এক্ষেত্রে ভ্যাট হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ সমাধান। এছাড়া নীতিমালা ও আইনের প্রয়োগ এবং মানবসম্পদ ও দরিদ্রদের আয়বর্ধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সম্পদ ও আয়ের বহুমুখী বণ্টন এক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাময় সমাধান হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সম্ভাব্য আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এতে দরিদ্রদের জন্য উন্নততর ও বেশি আয়ের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাবে। একটি শিক্ষিত ও সামর্থ্যবান শ্রমশক্তি একদিক থেকে যেমন আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবে, তেমনি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কার্যকর আর্থিক নীতিমালা প্রয়োগের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমেও আয়বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে মনে করছে ইউএনডিপি। সংস্থাটির মতে, এজন্য আইনের শাসন

ও যথাযথ নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিকশিত হতে ও কাজ করতে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, রাজউক, পৌরসভা ও ভূমি প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বদলে নিয়মনীতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেশে আয় বণ্টন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো যাবে।

  • Courtesy: Dainik Banikbarta Mar 12, 2018