Search

Monday, March 19, 2018

মেনেই নিচ্ছি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু?

আসিফ নজরুল


গত কয়েক দিনে বড় ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে আমাদের জন্য। এর মধ্যে নেপালে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা সবাইকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করেছে। খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিলম্ব কিংবা জাফর ইকবালের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অনেকের নজর কেড়েছে। ৭ মার্চের জনসভাগামী কিছু মিছিল থেকে প্রকাশ্য রাজপথে নারী নির্যাতনের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনাও ঘটেছে।

এত কিছুর ভিড়ে অনেকের মনে থাকার কথা নয় গত কয়েক দিনে পুলিশি নির্যাতনের ঘটনাকে। এ সময়ে অন্তত তিনটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে। 

প্রথম ঘটনায় প্রেসক্লাবে পিস্তল হাতে ত্রাস ছড়িয়ে সাদাপোশাকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

দ্বিতীয় ঘটনায় সমাবেশ থেকে ছিনিয়ে চ্যাংদোলা করে একজন তরুণকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। 

সর্বশেষ ঘটনাটি সবচেয়ে মর্মান্তিক। এতে রিমান্ডে নেওয়ার পর কারা হেফাজতে একজন যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সারা ফেসবুক তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্নের ছবিতে ছেয়ে গেলেও ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার নাকি এমন কোনো লক্ষণ খুঁজে পাননি!

এই তিনটি ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা হলেন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। তিনটি ঘটনারই সূচনা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে। তিনটি ঘটনাই বাংলাদেশের সংবিধান, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং দেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন।

নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার ভিড়ে এই ধারাবাহিক পুলিশি বর্বরতা অনেকের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ বিষয়গুলো নজরে রাখা বা এর প্রতিকার করা কারও কারও আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। তাঁরা যখন তা করেন না, তখন তা আতঙ্কজনক হয়ে দাঁড়ায়। আলী রীয়াজের ১৪ মার্চের লেখায় তা সঠিকভাবে ফুটে উঠেছে। আমি মনে করি এ নিয়ে সমাজে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে মানবাধিকার ধারণার প্রাথমিক পাঠ আবারও স্মরণ করার।

২. মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে (ধর্ম, বংশ, জন্মস্থান, রাজনৈতিক পরিচয়-নির্বিশেষে) এই অধিকার প্রত্যেক মানুষের। যেমন বৈষম্যহীনতা একটি মানবাধিকার। গোপালগঞ্জে বা ফেনীর মানুষ বলে তাই কারও আমলভেদে বৈষম্যের শিকার হওয়ার বা বাড়তি সুযোগ পাওয়ার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতি করলে আমলভেদে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বিশেষ ছাত্রসংগঠনের কর্মী এই অভিযোগে পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার যেসব সংবাদ আমরা পত্রিকায় দেখি, তাও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

আমাদের সংবিধানে মানবাধিকার সীমিত করা হয়েছে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। যেমন পুলিশ বা সেনাবাহিনীর মিছিল করার অধিকার নেই। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানবাধিকার প্রযোজ্য নয় বলা হয়েছে সংবিধানে।

তবে কিছু অধিকার, যেমন নির্যাতন, অবমাননাকর ও লাঞ্ছনাকর দণ্ড বা ব্যবহার থেকে মুক্ত থাকার অধিকার, প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত। জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারের মতো নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। শুধু এ বিষয়টি নিয়ে নির্যাতনবিরোধী যে কনভেনশনটি রয়েছে, তার পক্ষরাষ্ট্র বাংলাদেশও।

নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক ও সাংবিধানিক বিধানের পাশাপাশি ২০১৩ সালে প্রণীত একটি আইন বাংলাদেশে রয়েছে। এই আইনে হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশ না নিলে সরাসরি আদালতে মামলা করার, হেফাজতের দায়িত্বে থাকা দোষী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের, অভিযোগকারী ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধানের ও তাঁর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইনে কোনো সমস্যা নেই আমাদের। কিন্তু তারপরও দেশে অব্যাহতভাবে নির্যাতন বা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ঘটছে মূলত এসবের বাস্তবায়ন নেই বলে।

৩. মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য দেশে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন সংসদ, উচ্চ আদালত ও মানবাধিকার কমিশন। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, মানবাধিকার বিষয়ে নজরদারির জন্য এরা বিদেশ থেকে উচ্চ অঙ্কের আর্থিক সহযোগিতাও পেয়ে থাকে। মানবাধিকার নজরদারির জন্য গণমাধ্যমও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

এর মধ্যে বর্তমান সংসদ ও সংসদীয় কমিটিগুলো অকার্যকর থাকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। ২০১৪ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সদস্যদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে না, এটি অভাবনীয় নয়। কিন্তু এ বিষয়ে বাদবাকি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।

মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকার জন্য বাংলাদেশে জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি মানবাধিকার কমিশন রয়েছে। এই কমিশনের মৌলিকতম দায়িত্ব হচ্ছে যে কারও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হলে সে বিষয়ে তদন্ত করা, অন্তত তার উদ্বেগ ও আপত্তি প্রকাশ করা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দল (যেমন বিএনপি, সিপিবি) ও সংগঠনগুলোর (যেমন তেল-গ্যাসসংক্রান্ত জাতীয় কমিটিসহ) সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশি আক্রমণের বহু ঘটনা ঘটলেও আমরা মানবাধিকার কমিশনকে এ বিষয়ে কিছু বলতে দেখি না। হেফাজতে ছাত্রদল নেতা জাকিরের মৃত্যুর সাম্প্রতিক ঘটনাসহ এ ধরনের বহু ঘটনায় কমিশনকে সোচ্চার হতে দেখি না। অতীতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু ঘটনায় কমিশনকে সরকারের ভূমিকার প্রতি সমর্থন প্রদান পর্যন্ত করতে দেখা গেছে।

মানবাধিকার রক্ষার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের অবকাশ রয়েছে উচ্চ আদালতের। নিকট অতীতে উচ্চ আদালত গ্রেপ্তার ও রিমান্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তমূলক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর এসব নির্দেশ লঙ্ঘিত হওয়ার সংবাদ ফলাও করে পত্রিকায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে সরকারের যেকোনো বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে আমরা উচ্চ আদালতকে তা করতে দেখি না।

নিম্ন আদালতের হাত-পা আরও বাঁধা। চার বছর আগে নিম্ন আদালতের একজন বিচারক ২০১৩ সালের আইন অনুসারে র‍্যাবের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা (নির্যাতন ও হত্যাসংক্রান্ত) গ্রহণ করেছিলেন। এরপর প্রথমে তাঁর মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, পরে তাঁকে অন্য জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের স্বাধীনতা ও মর্যাদার ওপর এই জাজ্বল্যমান হস্তক্ষেপের ঘটনায় প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি গণমাধ্যম ছাড়া অন্য কেউ।

বাকি থাকে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলো এরা লিপিবদ্ধ করে জানিয়ে দেওয়ার কাজটি করে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে নিরন্তর সোচ্চার থাকার দায়িত্ব অনেক ক্ষেত্রে পালন করে না। রাজনৈতিকভাবে যারা সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বা ছাত্রলীগের নির্যাতন হলে বহু মানবাধিকার সংগঠন তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমল, রাজনৈতিক বিশ্বাস, ধর্মীয় পরিচয়, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ভেদে তাদের উৎসাহের মাত্রা দৃষ্টিকটু রকমের হেরফের হয়। জাকিরের মৃত্যুর ঘটনাও তাদের অনেকে হয়তো এ কারণে এড়িয়ে গেছে। অথচ মানবাধিকারের মূল দর্শনের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এটি করার কথা নয়।

৪. মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো পালন না করলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকবে। নির্বাচনের বছরে এসে তা বাড়ার কারণও আছে। এমনিতেই গণমামলা আর যথেচ্ছ সংখ্যায় অজ্ঞাতনামা আসামি করার প্রচলন দেশে রয়েছে। এই সুযোগে বিরোধী পক্ষের যে কাউকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ সরকারের রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থাকে নির্যাতিত হওয়ার এমনকি মারা যাওয়ার আশঙ্কা। এর কোনো প্রতিকার না হলে দেশের বিপুলসংখ্যক নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার বলে কিছু থাকবে না। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন তখন আরও বিপর্যস্ত হবে। 

  • প্রথম আলো /১৯-৩-১৮
  • আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক


খেলাপি ঋণে শীর্ষে বাংলাদেশ



৯৬ লাখ ঋণখেলাপিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে চীন। পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় এয়ার টিকিট ক্রয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। কিনতে দেয়া হয়নি হাই-স্পিড ট্রেনের টিকিটও। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে এ কঠোর পদক্ষেপের ফলও পেয়েছে দেশটি। ২ শতাংশেরও নিচে রয়েছে চীনের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় গতি এনে ফল পেয়েছে শ্রীলংকা। এ ধরনের নানা কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশও।

যদিও উল্টোটা ঘটছে বাংলাদেশে। ঋণখেলাপি হয়েও শাস্তি না পাওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে দেশে। এমনকি আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণও করছেন ঋণখেলাপিদের অনেকে। এতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খেলাপি ঋণের হার। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের এটাই সর্বোচ্চ হার। খেলাপি ঋণের হারে বাংলাদেশের প্রায় সমপর্যায়ে আছে কেবল ভারত। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশটির ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার এক অংকে নামলেও চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকেই তা বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক বেশি রকম ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। নতুন বিতরণকৃত এসব ঋণের পাশাপাশি পুনঃতফসিলকৃত ঋণও মার্চ প্রান্তিক থেকে খেলাপি হতে শুরু করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি হওয়ার বিষয়টি তারাও অবগত বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটা না হলেই আমি খুশি হতাম। এর বেশি কিছু বলার নেই। তবে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন, এর আগে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার আরো বেশি ছিল। সেজন্য খেলাপি ঋণের বিদ্যমান হার অস্বাভাবিক নয়।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপগুলো নিয়েছে চীন। ৯৫ লাখ ৬০ হাজার ঋণখেলাপির ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার আমানত জব্দের পাশাপাশি ৬১ লাখ ঋণখেলাপিকে উড়োজাহাজের টিকিট কিনতে দেয়া হয়নি। হাই-স্পিড ট্রেনের টিকিট কিনতে পারেননি ২২ লাখ ঋণখেলাপি। ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের জন্য অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের সন্তানদের দামি স্কুলে ভর্তির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব কঠোর পদক্ষেপের ফলে চীনের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশে।

খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আরেক উন্নয়নশীল দেশ ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুসারে রেমিট্যান্স সেবার জন্য একটি পরিচালন কাঠামো গড়ে তোলার আগে সেখানকার ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে, তাদের খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে রেমিট্যান্স আন্তঃপ্রবাহ যে হারে বেড়েছে, তাতে কোনো ব্যাংকই এ ব্যবসা হাতছাড়া করতে চাইবে না। স্বাভাবিকভাবেই দেশটির ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনামের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ২ শতাংশের নিচে রেখেছে এশিয়ার দেশ ও ফিলিপাইনও। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে মালয়েশিয়ার খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ৬ ও ফিলিপাইনের ১ দশমিক ৯ শতাংশ। খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও শ্রীলংকা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের খেলাপি ঋণের হার ২ দশমিক ৯, ইন্দোনেশিয়ার ২ দশমিক ৯, কম্বোডিয়ার ২ দশমিক ৫ ও শ্রীলংকার ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সার্বভৌম ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশেও খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যেকোনো ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রদর্শন মানেই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা। এছাড়া উচ্চ আদালতে খেলাপি গ্রাহকদের জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করা দরকার। এটি সম্ভব হলে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হবেন। ফলে দেশ ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হারে বাংলাদেশের সমপর্যায়ে আছে ভারত। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশটির ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে খেলাপি এ হার কমিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। ‘ফিউজিটিভ ইকোনমিক অফেন্ডারস বিল’ নামে একটি আইন অনুমোদন করেছে দেশটির মন্ত্রিসভা। আইনটির আওতায় কোনো ঋণখেলাপি দেশ ত্যাগ করলে তার সম্পদ জব্দ করা যাবে। এছাড়া বিজয় মালিয়ার মতো ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির পাসপোর্টও প্রত্যাহার করেছে দেশটি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের খেলাপি ঋণের হারও কিছুটা বেশি। ২০১৭ সাল শেষে পাকিস্তানের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও ২০১১ সালে দেশটিতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৬ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে ঋণখেলাপি হয়েও শাস্তি না পাওয়ার সংস্কৃতির কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে খেলাপি ঋণের হার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে বছর শেষে তা কিছুটা কমেছে। মূলত বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমেই খেলাপি ঋণের হার এক অংকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

খেলাপি ঋণের হার কমাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের আলাদা করার পক্ষে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে টাকা উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কোনো গ্রাহকের ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে ব্যাংকগুলোর উচিত তাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা।

এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। এরপর ২০১০ ও ২০১১ সালে এ খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে লাগামহীন হয়ে পড়ে খেলাপি ঋণ। ২০১২ সাল শেষে ৪২ হাজার ৭২৬ কোটি, ২০১৪ সাল শেষে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি, ২০১৫ সাল শেষে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি ও ২০১৬ সাল শেষে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা দাঁড়ায় ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ। ২০১৭ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায় ঠেকেছে।

বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, চাহিদার বিপরীতে দেশে অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা খুবই কম। ফলে এ আদালতগুলোয় মামলা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। নিম্ন আদালত থেকে ব্যাংকের পক্ষে আদেশ এলেও উচ্চ আদালতে রিটের কারণে খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে। তবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে ব্যাংকারদের দায়ও কম নয়। যাচাই-বাছাই না করে অনেক সময় ব্যাংকাররা ঋণ দিয়েছেন। ফলে সেসব ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। ফলে কিছু ব্যাংক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য অনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। গুণগত মান নিশ্চিত না করে ঋণ বিতরণের কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। 

  • তথ্যসূত্রঃ bonikbarta.net/ মার্চ ১৯, ২০১৮ 


‘মাইনাস ওয়ান’ ‘মাইনাস টু’

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


এ রকম পরিস্থিতি আরেকবার হয়েছিল, ২০০৭ সালে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্ঘাতময় অবস্থায় সে সময় ক্ষমতা দখল করেছিল জে. মইনউদ্দিন আহমদ। তার শিখণ্ডি ছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ। তারা ক্ষমতা দখল করেই বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় করে দিতে চেয়েছিলেন এই দুই নেত্রীকে। তারা দুই নেত্রীকেই গৃহবন্দী করে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের না-হক মামলা দায়ের করে তাদের হেনস্থা করতে শুরু করেছিল। মামলা দিয়ে হেনস্থা করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তাদের লক্ষ্য ছিল, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা।

এতে প্রায় সাথে সাথে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারকে (যা ১-১১ সরকার বলে পরিচিত) এই বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন যে, এই সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। অর্থাৎ লগি-বৈঠার যে আন্দোলনে তার দলের লোকেরা একদিনেই পিটিয়ে হত্যা করেছিল ১১ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে, সে আন্দোলনের ফসল নাকি ছিল এক-এগারোর সরকার। 

শেখ হাসিনা শুধু এই সরকারকে স্বাগত জানাননি, তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, এক-এগারোর সরকার যা কিছু সিদ্ধান্ত নেবে, তার সব কিছুকেই ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বৈধতা দেবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কিছুতেই দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। তিনি বারবার বলছিলেন, বাংলাদেশের বাইরে তার কোনো ঠিকানা নেই। 

সুতরাং যা-ই কিছু ঘটুক না কেন, তিনি বাংলাদেশেই থাকবেন। এক-এগারোর সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সৌদি দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হলো, খালেদা জিয়াকে যদি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে সৌদি আরব পাঠানো হয়, তাহলে সৌদি সরকার তাকে ভিসা দেবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মনোভাব কী, এটা জানার জন্য সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করেন এবং নিশ্চিত হন যে, তিনি স্বেচ্ছায় সৌদি আরব চলে যেতে রাজি নন। তাই খালেদা জিয়াকে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার বিদেশে পাঠাতে পারেনি। 

এর ফলে এক-এগারোর সরকার যে ‘মাইনাস টু’ ফরমুলা নিয়েছিল, তা আর বাস্তবায়িত হতে পারে না। খালেদা জিয়া দেশেই থেকে যান এবং তিনি শেখ হাসিনাকেও জোর করে বিদেশে রেখে দেয়া, তাকে বাংলাদেশে আর ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। এতে সামরিক সরকার প্রাথমিকভাবেই হোঁচট খায়। তারপর বহু অপকীর্তিও কিন্তু খালেদা জিয়াকে টলাতে পারেনি। প্রকৃতিগত কারণে শেষ পর্যন্ত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারকে রণে ভঙ্গ দিতে হয়েছে। তারা একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা করে। 

ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে তারা যে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সে ছিল পাতানো খেলাই। এই নির্বাচন কমিশন কোনো নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে করা হয়নি। বরং করা হয়েছিল বল প্রয়োগের মাধ্যমে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার থেকে শুরু করে অপরাপর নির্বাচন কমিশনারকে রাষ্ট্রপতির চায়ের দাওয়াত দিয়ে হুমকি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠন করা হয় নতুন নির্বাচন কমিশন। অনেকের এমনও মত আছে যে, সে নির্বাচন কমিশন নাকি খুব দক্ষতার সাথে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল। এটি ডাহা মিথ্যা। 

সেই নির্বাচনে বহু ক্ষেত্রে ১০-১৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। কিভাবে এটা সম্ভব হলো, তার কোনো জবাব নির্বাচন কমিশন দিতে পারেনি। পথেঘাটে পাওয়া যাচ্ছিল ব্যালট পেপারের মুড়ি। সেগুলো যখন জনসমক্ষে আসতে শুরু করল, তখন শামসুল হুদা নতুন আইন করলেন যে, যার কাছে মুড়ি পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করা হবে। বহু ভোটকেন্দ্রের আশপাশে পেয়েছিল এরকম মুড়ি। এভাবে শামসুল হুদা কমিশন একটি নির্বাচন করে মইন-ফখরের নির্দেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন এখানেই থেমে থাকেনি। তারা প্রথমে সেনা শাসকদের নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছিল। বিএনপি ভাঙার জন্য তারা বেছে নিয়েছিল আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে। শামসুল হুদা ও মান্নান ভূঁইয়া ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ফলে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নেই এমন কাজও তারা করেছে। দল ভাঙার অপপ্রয়াসের জন্য বেগম খালেদা জিয়া যখন মান্নান ভূঁইয়াগংকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। তখন শামসুল হুদার সে কি ক্রোধ! যা সত্যি সত্যি হাস্যকর ছিল এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অত্যন্ত বেমানান। এদিকে আওয়ামী লীগকে ভাঙার জন্য সেখানে গঠন করা হয় সংস্কারপন্থী গ্রুপ। এই গ্রুপে ছিল রাজ্জাক, আমু, তোফায়েল ও সুরঞ্জিত। তারা আওয়ামী লীগে সংস্কার আনার জন্য বেশ কতকগুলো প্রস্তাব উত্থাপন করেন। একই রকম প্রস্তাব উত্থাপন করেন মান্নান ভূঁইয়ারাও। কিন্তু সেসবে কোনো ফল হয়নি। 

চূড়ান্তভাবে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলই টিকে থাকে। পরে সেখানে শেখ হাসিনা আবদুর রাজ্জাক ছাড়া প্রায় সবাইকে দলে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু জানিয়ে দেন যে, ফরগিভ করেছেন, ফরগেট করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মান্নান ভূঁইয়ার বহিষ্কারের সময় এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে বলে বসলেন, ১৫ বছর দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে রয়েছেন, এ রকম ব্যক্তিকে কোনো শোকজ নোটিশ না দিয়ে বহিষ্কার করা সম্পূর্ণ বেআইনি। 

যা হোক, মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের ‘মাইনাস টুু’ ফরমুলা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। বরং জনগণের অপরিসীম ঘৃণা নিয়ে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে। 

এবারের খেলা ভিন্ন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ একদলীয় বিনা ভোটের এক নির্বাচন করে। তাতে ৫ শতাংশ ভোটার অংশ নিয়েছিল কি না সন্দেহ। সে নির্বাচন এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল যে, অর্ধশত কেন্দ্রে একজন ভোটারও ভোট দেয়নি। এমন কি আওয়ামী লীগের যে ১৪ দলীয় জোট তাদের পোলিং এজেন্টরাও ভোট দেয়নি। সে ভোট বিএনপি বর্জন করেছিল। শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী জোটের বাইরে অন্য কেউই ২০১৪ সালের ভোটে অংশ নেয়নি। 
ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেনি। সুতরাং বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে এসেছে। আর নির্বাচিত হয়েই বিএনপির ওপর একেবারে খড়গহস্ত হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭৮ হাজার, আসামি ১৮ লাখ। বিএনপি নেতাদের এক একজনের মাথার ওপর শতাধিক মামলা ঝুলছে। অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে। এ ছাড়া শারীরিক নির্যাতনের শিকার বিএনপির হাজারে হাজারে নেতাকর্মী। বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম-খুন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ আবারো ‘মাইনাস ওয়ান’ ফরমুলায় এগিয়ে যাচ্ছে। এবারে এর পেছনে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন নেই। কিন্তু স্বৈরাচারী মানসিকতাই এর পেছনে কাজ করছে। 

এবার তারা রাজনীতি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ও তার পরিবারকে চিরদিনের মতো বিদায় করতে চায়। একসময় এটা কল্পনারও অতীত ছিল যে, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে এক ভুয়া মামলায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দীজীবন-যাপন করছেন। বলা হচ্ছে, কুয়েত সরকারের অনুদানে যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠিত হয়, তাতে আড়াই কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসেবে দেখা যায় যে ওই আসল টাকা সুদে-আসলে এখন ছয় কোটি টাকা হয়েছে। সুতরাং একে তো তছরুপ বলা যায় না। কোনো ভুল হয়ে থাকতে পারে, ভুল কোনো অপরাধ নয়। তার সহজে সংশোধনযোগ্য। কিন্তু সরকার সে দিকে না গিয়ে সেই ভুলটাকে বিবেচনায় নিয়ে খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। জনমানবহীন সেই কারাগারে তিনি একাই বন্দী, সেখানে আর কোনো মানুষ নেই। 

বেগম খালেদা জিয়া যেমন আদালতে বলেছেন, তেমনি তার আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। ন্যায়বিচার পেলে তিনি দ্রুতই বেরিয়ে আসবেন। এখানেও মানুষের মনে সংশয়ের দোলাচল থেকেই গেল। নিন্ম আদালনের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। হাইকোর্ট তার চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ ছুটে গিয়েছিলেন চেম্বার আদালতে। চেম্বার বিচারপতি ‘নো অর্ডার’ দিয়ে তা বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগের ফুলকোর্টে পাঠান। সেখানে আবার থমকে গেল খালেদা জিয়ার জামিন। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কোনো বক্তব্য না শুনেই আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন গত ১৪ মার্চ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। 

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বারবার বলছেন, তাদের বক্তব্য শোনা হোক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাদের জানিয়ে দেন তাদের বক্তব্য রোববারই শোনা হবে। 

আবার রোববার যাতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও খালেদা জিয়া কারামুক্ত হতে না পারেন তার আয়োজনও পাকাপাকি আছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লায় বাস পোড়ানোর মামলা করেছিল সরকার। সে মামলার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে গেছে এবং তাতে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছেন। ফলে এ মামলায় খালেদা জিয়াকে নতুন করে জামিন আবেদন করতে হবে। এরপর কোন মামলা আসে কে জানে! 

সরকারের লক্ষ্য খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা। কারণ সরকার জানে তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সরকারের পরাজয় হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। অতি সামান্য আসনে সরকার দলের সদস্যরা জয়ী হয়ে আসতে পারে। 

এখন সারা দেশে বিএনপি পুলিশের শত উসকানির মুখেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটছে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সারা পৃথিবী বলছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে। সরকার বলছে, কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে তার সরকারের কী করার আছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা কোনো পদক্ষেপ নেবে না। ফলে পরিস্থিতি এখন ঘোলাটে। যেসব মামলায় খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়েছে, এক-এগারো সরকারের আমলে সে সময় একই ধরনের মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেসব মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এটি এক যাত্রায় দুই ফল, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার আশা করছে, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারলে বিএনপিতে ভাঙনের সৃষ্টি হবে। এবং সেই ভাঙনে বিএনপির একটি অংশ জাতীয় পার্টির সাথে মিশে যাবে। জাতীয় পার্টির এরশাদও একই কথা বলেছেন। 

শেখ হাসিনার এই নীলনকশার সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল সচেতন রয়েছে। দেশের মানুষ এখন একদলীয় শাসনে অতিষ্ঠ। তারা বিএনপির পতাকা ছেড়ে চলে যাবে বলে মনে হয় না। সরকার ব্যাংকগুলো লুট করছে। শেয়ারবাজারে কারসাজিতে লাখ লাখ মানুষ ফতুর করেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, সরকারদলীয় চাঁইরা দুর্নীতিতে ডুবে গেছে, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র চরম দলীয়করণের শিকার। 

ফলে বাংলাদেশে এখন অব্যবস্থাপনা চরমে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখে দিয়েছিলেন, দেশে ফ্রি মার্কেট ইকোনমি চালু করেছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশ চরম দরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে এসেছিল। আন্তর্জাতিক বন্ধু ও অংশীদাররা বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র চায় না। কারণ উপমহাদেশে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল অধিকতর গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসরমান। খালেদা জিয়ার জামিন পেতে কম সময় লাগুক বা বেশি সময় লাগুক, সেটি হয়তো বিবেচ্য বিষয় না। বিবেচ্য বিষয় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন কি না। বিএনপি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে না। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। বিশ্বস্ত সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে জানিয়েছে, ‘শেখ হাসিনা সরকার যদি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে রাজি না হয়, তাহলে ভারত যেন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সহায়তা থেকে বিরত থাকে।’ 

আবার অনেকেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সরকার যদি অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা নিয়ে এগিয়েই যেতে থাকে, তবে তা ফের ‘মাইসাস টু’-তে পর্যবসিত হতে পারে।

  • নয়াদিগন্ত / ১৮-৩-১৮

ভোক্তার নাভিশ্বাস


- সিনান পাশা


বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৫,  বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন হলো । রাস্তায় এর বাহারী পোস্টার। বাজারে ওটা ‌উধাও, ওটা নিখোঁজ। চড়া দাম। ভোক্তাদের ভোগ নয়, দুর্ভোগের অন্ত নেই। পাবলিক পারসেপশনকে থোড়াই তোয়াক্কা না করার যুগে বলতেই হবে, আরে! কেন ভোক্তারা ৬০/৭০টাকার চাল তো ভালোই খাচ্ছেন।এটা হলো উন্নয়নের দুর্বার গতির একটা পরিমাপ। দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ প্রায়। তবে ভোক্তারা আশঙ্কা করছেন, ওটা ক্রিকেট ও পেয়াঁজের মতো অচিরেই সেঞ্চুরি করবে। চালের বাজার? ও কথা আর বলার নয়।

বাহারি দাবি করেছিলেন আমাদের কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রীরা। বাংলাদেশ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ তো বটেই।ফাইন চালও রপ্তানি করছে। ভতু‌র্কি ও সার দেওয়া হচ্ছে প্রচুর। আর চালকলের মালিক তারা তো আহলাদে আটখানা। ভারতের চালের বাজারই তো বাংলাদেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। জানিয়ে দিয়েছেন অামাদের চাল ব্যবসায়ীরা। বলছে চাল কিনবেন অামাদের বলুন! খাদ্যমন্ত্রী , বাণিজ্য মন্ত্রী - চালব্যবসায়ীদের সাথে একাধিকবার বৈঠকে বসার কথা শুনেছি। তাতে কোনো ফল হয়নি। বরং চাল-পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। খাদ্যমন্ত্রী মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে ‘চমৎকার’  আতপ চাল এনেছিলেন যা খেতে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অভ্যস্থ নয়। সিদ্ধ চালের একটা সমস্যা হলো সে চাল ন্যায্যমূল্যে সরকার দিলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই বেচাল বাঁকাপথে চাল পলিশিং মি‌লে চলে যায়। মাঝখান থেকে যা‌দের যা কামানোর তারা কমিয়ে নিয়েছে। ভোক্তার কোনো উপকার হয়নি।

পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবার বিরুদ্ধে ‌ঘোষিত যুদ্ধে সরকার হার মেনেছেন। তারা বলেছেন এই ফাঁসাফাঁসি শেষ করার নয়। এমনকি পরীক্ষার হলে বই খুলে পরীক্ষা দেবার অত্যাভিনব পদ্ধতির কথাও ভাবছেন তারা। ডিজিটাল ব্যাপারটাই এ্খন শিক্ষাঙ্গনের কাল। যে ভাত রাঁধে সেই আগুন এখন শিক্ষাঙ্গন পোড়াচ্ছে। এখানেও সেই তিন অবস্থা হবে না তো!

গমের আটার ব্যাপারে সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকেই শুধু নয়। নানা সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান থেকেও নানা অভিযোগ উঠেছে তবে সেসবের কোনো সহজ  প্রতিকার হয়েছে বলে জানা যায়নি। বরং জাহাজ ভরা চাল বা গমকে দেশের ভেতরেই পশুখাদ্য নাম দিয়ে মানুষের বাজারেই বিক্রি হবার নানা অভিযাগ শোনা গেছে।

পেঁয়াজের মতো যেসব পণ্য  আমদানি ও দেশের ভেতরের উৎপাদন মিলে উদ্বৃত্ত হলেও বাজারে দাম বাড়ার অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা গেছে। আর এসবই মধ্যস্বত্বের কারসাজি বলে প্রমাণিত। সরকার বাজার মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়নি। কেননা, ব্যবসায়ীরা রাজনীতির বিবেচনায় সব‌চেয়ে মূল্যবান বলে মনে হযে‌ছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অশুভ আঁতাতের কথা এখন ওপেন সিক্রেট।

গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ সরাসরি ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করছেন বলে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। তারা ভোক্তদের শত আপত্তি ও অভিযোগের মুখে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবেই বলে সাফ জা‌নিয়ে দিয়েছেন। এতে যারা এলএনজি বাজারজাত করছেন সেই উদ্যোক্তাদের লাভ হবে। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আছে সেসবের বেলায় ইন্ধনশক্তি কমিশন যে গণশুনানির ব্যবস্থা করেছেন কোনোটাতেএ ভোক্তাদের বক্তব্য বিবেচনা লাভ করেনি। তাঁরাও মনে হয় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় পাবলিক পারসেপশনকে অবহেলা করার ‘আইনি’ প্রবণতায় লিপ্ত হয়েছেন।

জ্বাল‌ানি তেলের ব্যাপারে এতোদিন আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুন্নত দেশগুলির অনকূলে থাকলেও এখন অার থাকছে না সেই অজুহাতে বাংলাদেশও জ্বালানি ‌তেলের দাম বাড়াবে এমন আভাস প্রবল। ভোজ্য তেলের দামও বাড়‌ছে।

বিশ্ব ভোক্তা দিবসের প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে আমরা জানছি আজকের দিবসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের  শ্লোগান হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ’।  এটা হয়ে থাকতে পারে তবে ভোক্তাসাধারণের গায়ে লাগেনি। তবে বাজারের আগুণে যে তাদের গায়ে জ্বর আসছে কি না ভোক্তারা তা বলতে পারবেন। তারাই ভুক্তভোগী।   

লাশের নামটা - ‘জাকির হোসেন মিলন’

#ZakirHossainMilon

দিপক চন্দ্র 



ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ আছে। পুলিশ তার হাত ও পায়ের বিশটা আঙুল থেকে নখ উপড়ে ফেলেছিলো। ছেলেটার একমাত্র অপরাধ , সে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য সমাবেশে গিয়েছিলো। এদেশের একজন বুদ্ধিজীবীরও গতরাতে খাদ্য গিলতে কিন্তু কোনই সমস্যা হয়নি। আমার পরিচিত একজন য়ুনিফর্মওলার গতকাল সকালে য়ুনিফর্ম পরতে কোনো গ্লানি হয়নি। গত মাসে তাদের বেতন হয়েছে ঠিকঠাক। বাংলাদেশের সব য়ুনিফর্ম গতরাতে হ্যাঙ্গারে ঘুমাতে গিয়েছে এই আশ্বাসে যে সকালবেলা তারা প্রচুর প্রচুর আব্রু ঢাকবে। বিলকুল সব ঠিক। গাছের পাতাটিও নড়বে না। নড়বে কি?

শুধূ যাদের দু-বছরের একটা ছোট্টো মেয়ে আছে, তারাই হয়তো শুধু কাজ করতে পারছে না আজকে।

আপনারা দয়া করে লাশটার নামটা মনে রাখবেন।

জাকির হোসেন মিলন

জাকির হোসেন মিলন

জাকির হোসেন মিলন

লাশটার সত্যিই একটা মেয়ে ছিলো। মেয়েটার নাম আয়েশা। আয়েশা তার বাবার কোলে চড়তে পছন্দ করতো!  কী আশ্চর্য! সে তার বাবার কাছে যেতে চাইছে শুধু গত চারদিন ধরে। অথচ, এক সপ্তাহ পর পুরা বাংলাদেশ ভুলে যাবে, শুধু আয়েশা তার বাবার কোলে মাথা গুঁজতে পারবে না। অাজকের একুশ শতকে শোকের আয়ু একটা জিতে যাওয়া টিটোয়েন্টির সমান। হবে কি এর বেশি। হবে কি কালের কপোল তলে এক ফেঁটা জল।

আয়েশার বাবাকে য়ুনিফর্ম পরা মানুষেরা পিটিয়ে মেরেছে। তারা সময় নিয়ে, রেখে ঢেকে, রয়ে সয়ে - পয়লা সবক দিতে বেঁধে নিয়ে পিটিয়েছে একটা পিতাকে। খুবই ছাপোষা সাধারণ পিতা - এদেরকে মেরে ফেললে কিছু হয় না কারো - শুধু আয়েশা ছাড়া। আমাদের পুলিশের হাত ডিফেন্সলেস মানুষকে চুপিসারে  পিটিয়ে মেরে ফেলায় খুবই চমৎকার!

আমার বাবা ৭০ এর দশকে সৈনিক ছিলেন এদেশে। তাদের বিরুদ্ধে আজকের দিনের যেকোনো য়ুনিফর্ম-পরিহিত কেউ অভিযোগ করবেন যে তারা প্রফেশনাল ছিলেন না। অাদৌ!

অভিযোগ সত্য। তারা আসলেই প্রফেশনাল ছিলেন না। আমি যখনই আমার বাপ-চাচাদের কথা কল্পনা করি, কেন যেন মনে হয়, তাদের কেউ না কেউ, আয়েশার বাবার হত্যাকাণ্ড আজ সকালে মেনে নিতেন না। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ আজ সকালে পুরোপুরি নন-প্রফেশনালই থাকতেন। তাদের মাঝে কেউ না কেউ তার দুই বছরের আয়েশার চোখে তাকিয়ে বাংলাদেশের সব বাবাকে দেখতে পেতেন।

অবশ্যই বাংলাদেশে ওরকম নন-প্রফেশনাল য়ুনিফর্ম আর নেই।

আজ রাতেও বাংলাদেশের সব য়ুনিফর্ম গত রাতের মতো ঘুমাতে যাবে এই ভেবে যে সকালবেলা তারা প্রচুর প্রচুর আব্রু ঢাকবে।

Dhaka air among the worst


Dhaka city again ranked as one of the most polluted in the world yesterday, according to the air quality index prepared by the US Environmental Protection Agency.

In the rating, the Bangladesh capital ranked fourth in a list of the most polluted cities in the world with an index value of 195.

Kathmandu was rated the most polluted with a value of 208.

According to the index, the air pollution level across the world varies from hour to hour and day to day.

In late February of this year, according to the same index, Dhaka ranked as the most polluted city in the world with a score of 339 and its air was classified as “very unhealthy.”

The index has six categories indicating growing levels of public health hazards.

An air quality value over 300 indicates hazardous air while below 50 is considered to be healthy air. "Unhealthy" AQI is 151 to 200. At its current level, “everyone may begin to experience some adverse health effects, and members of the sensitive groups may experience more serious effects”.

Statistics of Bangladesh's Department of Environment show that the air quality index had the highest score of 501 in Dhaka on March 11. It was 338 in Gazipur and 308 in Narayanganj on the same day.

Among all the cities of the country, the highest pollution in March was recorded in Narayanganj with a score of 538.

According to medical experts, dust concentration in the air usually increases five times during the dry season, and dust particles from construction sites worsen the situation. Inhaling dust can severely damage the respiratory system and cause various lung diseases as well as viral and bacterial infection.

In Dhaka, air pollution level significantly comes down during monsoon, according to the department's findings.

Air quality ranging from 0-50 is considered good, 51-100 is moderate, 101-150 caution, 151-200 unhealthy, 201-300 is very unhealthy and 301-500 is extremely unhealthy.

  • Courtesy: The Daily Star Mar 19, 2018

৯৭ জন খুঁজছে যাঁকে, তিনি আছেন মুন্সিগঞ্জে!

  • নজু সর্দার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
  • নজুর ব্যবসা মিরপুরের চলন্তিকা ও ঝিলপাড় এলাকায়।
  • নজুকে ধরতে ৯৭ জনের একটি দল কাজ করছে।
  • কখনো গ্রেপ্তার হননি নজু।


নজু সর্দারসহ ঢাকার শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও পুলিশের ৯৭ জনের দল ঢাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। আর নজু মুন্সিগঞ্জের ‘জান্নাতুল ভিলা’য় বসে তাঁর ‘মাদক সাম্রাজ্যের’ খোঁজখবর রাখছেন। আজ পর্যন্ত কখনো নজু গ্রেপ্তার হননি, তিনি এসবে খুব একটা পাত্তা-টাত্তাও দেন না বলে কথিত আছে।

ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে যখন থেকে মাদকের কেনাবেচা শুরু, তখন থেকেই নজুর নাম বিক্রেতাদের তালিকার প্রথম পাঁচজনের মধ্যে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে হাতে রেখে তিনি মিরপুরের চলন্তিকা ও ঝিলপাড় এলাকায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে মাদক বিক্রি করে আসছেন। ঢাকার রূপনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে চলন্তিকা বস্তিতে নজুসহ মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ৮৩টি মামলা করেছে। গত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ স্থানীয় সাংসদকে নিয়ে নজুর ডেরায় অভিযানও চালায়।

প্রশ্ন উঠেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি সত্যিই নজু সর্দারকে ধরতে চায়? মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৭৮ জন, এপিবিএনের ৯ জন ও পুলিশের ১০ জনকে নিয়ে গত ১১ মার্চও অভিযান হয়েছে। নজুর খোঁজে চলন্তিকাতেও গেছেন বাহিনীর লোকজন। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নজু সর্দার ওরফে নজরুল কাজী ওরফে নজু কাজী মিরপুরের চলন্তিকায় এখন খুব একটা যান না। তিনি মুন্সিগঞ্জেই থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলে বড়জোর বরিশালে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। গেল সপ্তাহ থেকে তিনি মুন্সিগঞ্জেই থাকছেন। শহরের সবচেয়ে দামি জায়গা মানিকপুরে তাঁর ছয়তলা ভবন জান্নাতুল ভিলা। কখনো সেখানে, কখনো-বা মধ্য কেওরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। গ্রামের বাড়ির চারতলা ভবনের কাজ তিনি প্রায় শেষ করে এনেছেন, টাইলস বসানোর কাজ চলছে এখন। পুরোদমে চলছে আল নাহিয়ান বাইতুন নুর জামে মসজিদ তৈরির কাজ। জানা গেছে, শুধু মুন্সিগঞ্জেই কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি। বরিশালেও তাঁর বেশ কিছু সহায়সম্পত্তি আছে। পরিবারটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নজু এখন নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে আরেকটি ডেরা তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে মাদক বিক্রির কাজটা মিরপুরের চলন্তিকা বস্তির ২৫টি ঘর থেকেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। গোটা পরিবার এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে।

গত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের চলন্তিকায় স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ টানা অভিযান চালায়। ওই অভিযানের সময় একটি ঘর থেকে স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা নজু সর্দারের মা সুফিয়া বেগমকে বের করেন। দুটি রামদাসহ গ্রেপ্তার হন নজু সর্দারের ভাগনে রিয়াজ। অভিযোগ আছে, নজুর মা সুফিয়া খাতুন, দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও শাশুড়ি ফেলানি চলন্তিকায় মাদক কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁদের সহযোগিতা করেন নজুর বোন শান্তি ও লীলা। বিভিন্ন স্পটে কবে কে থাকবেন, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সামাল দেবে কে, সেসবও ঠিক করেন তাঁরা। ২০১৬ সালে র‍্যাব-৪ নজু সর্দারকে ধরতে ওই বস্তিতে যখন অভিযান চালায়, তখন এই নারীরাই বস্তির ভেতর বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করেন ও নজুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। জানা গেছে, তোফা ও বাবুল সর্দার কারওয়ান বাজারে গাঁজা বিক্রি দিয়ে মাদকের বেচাকেনায় যোগ দেন। মিরপুরে এই কাজে যুক্ত হন নজু সর্দার। তোফা কাজী মুন্সিগঞ্জের সিবাইপাড়া, শাঁখারিপট্টিতে একটি মাদকের আড্ডা চালান। সেখান থেকে মাস তিনেক আগে তোফা সর্দারের ছেলে পরানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বাবুল সর্দার এখনো মিরপুরে মাদকের কেনাবেচায় জড়িত। বাবুল সর্দারের ছেলে রাসেল কাজী, নজুর বোন রানীর তিন ছেলে রাজন, রিফাত ও রিয়াজ, নজুর মেয়ে-জামাই শান্ত সম্পদের হিসাব-নিকাশ রাখেন।

নজু সর্দারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বইন, সবই আপনার জানা। ছোট ভাইটার দিকে তাকায়া একটু রহম করেন।’ কেন ‘রহম’ চান জানতে চাইলে তিনি আবারও বলেন, সবারই সবকিছু জানা। মাদক বিক্রি কেন করেন এমন প্রশ্নে বলেন, তাঁর নামে অন্যরা এসব করে। তিনি নির্দোষ।

নজু সর্দারের উত্থান
গত সপ্তাহের শনিবার মধ্য কেওরে নজু সর্দারদের গ্রামের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। জানা গেল, নজু সর্দারের বাবা আবদুল আলী কাজী কৃষিকাজ করতেন। তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে নিয়ে তাঁর কায়ক্লেশে জীবন কাটছিল। দারিদ্র্য ঘোচাতে একপর্যায়ে বড় ছেলে তোফাজ্জল কাজী ওরফে তোফা কাজী ওরফে তোফা সর্দার ও মেজ ছেলে বাবুল কাজী ওরফে বাবুল সর্দার ঢাকায় চলে আসেন। তাঁরা রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। নজু সর্দার তেমন কিছু করতেন না। পরিবারটির শিক্ষাদীক্ষাও কম। আবদুল আলী কাজীর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদের ধারেকাছে থাকলে মানুষ হব না, আব্বা-আম্মা এই ভয় করত। তাই বসতভিটা ছেড়ে খেতের মধ্যে আব্বা জমি কিনেছিল। কোনো রকমে একটা ঘর তুলেই আমরা ভিটা ছেড়ে চলে আসি।’ ভয়টা কিসের জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিরপুরের চলন্তিকায় ওরা ‘কী কী’ করে বলে তাঁরা শুনেছেন।
মধ্য কেওরে বাড়ি তুললেও গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের তেমন একটা যোগাযোগ নেই। আলাউদ্দীন মিয়া নামে গ্রামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, বছরে একবার ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার নজু সর্দারের মা সুফিয়া বেগম গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান। তিনি কলার ভেলা সাজিয়ে ভেতরে খাবারদাবার, আগরবাতি, মোমবাতি জ্বেলে পানিতে ভাসান। গান-বাজনারও আয়োজন করেন। প্রতিবছরই এই আয়োজনের জাঁকজমক বাড়ছে। ওই সময় ছাড়াও কাজীবাড়ির লোকজনকে দল বেঁধে মাঝেমধ্যে মধ্য কেওরের বাড়িতে আসতে দেখা যায়। 

গ্রামের বাড়ির আত্মীয়স্বজনের পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। শহরের মানিকপুরের ছয়তলা ভবনের নিচতলায় একটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে। ভবনের আশপাশে কাউকে দেখা গেলেই পরিবারের লোকজন সতর্ক হয়ে যান। শনিবার ওই ভবনের ছবি তোলার সময় হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলে করে এসে হাজির হন নজু সর্দারের ভাই বাবুল সর্দারের ছেলে রাসেল কাজী। এসেই জেরা করতে শুরু করেন। পরে প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধির বাসায় গিয়েও হাজির হন তিনি।

মুন্সিগঞ্জে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুল হক জানান, মাদক বিক্রেতাদের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে তাঁরা তথ্য পান। নজু সর্দার সম্বন্ধে কিছু জানেন না। আর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন কেবল বললেন, পুলিশ কাজ করছে। নিয়মিত অভিযান ও গ্রেপ্তার চলছে।
তারপরেও নজু সর্দার কেন সবার চোখের আড়ালে রয়ে গেলেন, সেই প্রশ্নের জবাব আর পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছে মাদক বিক্রেতাদের তালিকা আছে এবং নিয়মিত এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এমন একজন মাদক বিক্রেতা এভাবে সহায়-সম্পত্তি করছেন, সেটা পুলিশ জানবে না—এটা একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে, যাঁরা মাদক নিয়ে কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে কর্তৃপক্ষ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। জিরো টলারেন্সের কথা শোনা যাচ্ছে, এর সঙ্গে মানুষ কিছু কাজও দেখতে চায়। নইলে পুলিশের ভাবমূর্তির যে প্রশ্ন, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  • প্রথমআলো/ ১৯-৩-১৮

স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে যুবলীগের কার্যালয়!


সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে কার্যালয় বানিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিও যুবলীগকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর তৈরি করেছে।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, যুবলীগের এই নেতাদের পৃষ্ঠপোষক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্সি কামরুজ্জামান। তিনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিও। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে যুবলীগের কার্যালয় উচ্ছেদ করতে পারি না। তারপরও তাদের একাধিকবার বলেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না। তাই কার্যালয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়েই মাঠের সীমানাপ্রাচীর দিয়েছি।’

মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নির্মাণসামগ্রী রেখে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মাঠ দখল করে রেখেছিল তমা গ্রুপ। তারা তাদের শ্রমিকদের জন্য মাঠের উত্তর পাশে একটি দোতলা ভবনও বানিয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে আড়াই বছর আগে মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে পানির পাম্প বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবৈধ কার্যালয় করেছে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি।

গত ২৬ অক্টোবর উড়ালসড়কটি উদ্বোধনের পর মাঠ থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়েছে তমা গ্রুপ। কিন্তু তাদের করা দোতলা ভবনটি নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যুবলীগের কার্যালয়টি অপসারণ করা হয়নি।

সিদ্ধেশ্বরী রোডের বাসিন্দা আহমেদ সবুর ও শওকত আলী বলেন, মাঠটিকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে মাঠটি একসময় অস্তিত্ব হারাবে। একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, প্রায় প্রতিরাতে ওই কার্যালয়ে আড্ডা বসে। আছে মাদক সেবনের অভিযোগও।

জানতে চাইলে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সেলিমুজ্জান রেজা বলেন, ওই কার্যালয়টি দলের নয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদ এটি তৈরি করেছেন। তিনি তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেখানে বসেন।

মাকসুদও স্বীকার করেছেন তিনি এটা ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে তাঁর দাবি, স্কুলের সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে এটা করা হয়েছে। এ জন্য স্কুলকে মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয়।

সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শেখ ফরিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষ কাউকে জমি ইজারা দিতে পারে না, দেয়ওনি। তিনি বলেন, মাঠটি সংস্কার ও দেখভালের দায়িত্ব বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামানের। তাই মাঠের ভেতর যুবলীগের কার্যালয় থাকবে কি না, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

  • Courtesy: Prothom Alo Mar 19, 2018

প্রায় ৩৫ শতাংশ বন্দী মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট: আইজি প্রিজন



কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, দেশের কারাগারে যত বন্দী আছে, তার ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কারা সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইজি প্রিজন। কারা সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সৈয়দ ইফতেখার জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে গড়ে ৭৫ হাজার বন্দী আছে।

আইজি প্রিজন বলেন, অভিনব কায়দায় কারাগারে মাদক ঢুকছে। কেউ গিলে মাদক আনছে। শুকনা মরিচের ভেতরে করে আনছে। কেউ আনছে পেঁয়াজের ভেতরে করে।

সৈয়দ ইফতেখার বলেন, ‘আমাদেরও অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। কারারক্ষীর সংখ্যাও কম।’

আইজি প্রিজন জানান, গত এক বছরে কমপক্ষে ২০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য দেয় না বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, কী ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে, সেটাও বিষয়।

  • Courtesy: Prothom Alo mar 19, 2018

Sunday, March 18, 2018

মানুষ ভালো আছে!

গোলাম মোর্তোজা


চারিদিকে ‘উন্নয়ন’র নানা গল্প! দৃশ্যমান প্রমাণ পদ্মা সেতু, দু’তিনটি চার লেনের রাস্তা, কয়েকটি ফ্লাইওভার। মানুষ ভালো আছে, আয় বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও কিনতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে না! বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার হয়েছে, বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে! বেশকিছু উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে।

ক্ষমতাসীনদের মুখ থেকে একথা প্রতিদিন কয়েকবার শোনা যায়। তারা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, বলেন রাজনৈতিক সমাবেশে। টেলিভিশনের টকশোতেও শোনা যায় প্রতিরাতে।

এই কথাগুলো যে পুরোপুরি অসত্য, তা তো নয়। আবার বাস্তবতা যদি এমন হয়, তাহলে দেশের মানুষের তো খুশি থাকার কথা। যদি বলি যে দেশের মানুষ খুশি বা ভালো নেই, তীব্র প্রতিবাদ হবে এ কথার। যুক্তি দেওয়া হবে পাল্টা যুক্তিও দেওয়া যাবে। সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। সাধারণ মানুষের কথা যদি একটু কান পেতে শোনা যায়, তবে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এর কারণ কী? মানুষ কী যত পায়, তত চায়? না কি ‘ভালো আছে’ বলতে যা বোঝানো হয়, তার ভেতরে ত্রুটি বা দুর্বলতা আছে? সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে দেখি।

১. আলোচনার শুরুতেই সরকারি পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের ‘খানা আয় ব্যয় জরিপ’র প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে বেড়েছে ৩২ হাজার ৪৪১ টাকা। আর সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় গড়ে কমেছে ১০৫৮ টাকা।

এই গরিব মানুষ মানে দিনমজুর শ্রেণি। ক্ষমতাসীনরা সর্বত্র বলেন, শ্রমের মজুরি বেড়েছে, ১৫০ টাকার মজুরি ৪০০ টাকা হয়েছে। মানুষ ভালো আছে, গরিব মানুষ বেশি ভালো আছে। তাই যদি হয় তাহলে সরকারি হিসাবে ৫ শতাংশ গরিব মানুষের আয় কমে গেল কেন? এই জরিপ তো বেসামরিক কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান করেনি। তার মানে মানুষের ভালো থাকার যে গল্প করা হচ্ছে, তা আসলে পুরোপুরি সত্যি নয়। গল্পের ভেতরে বড় রকমের সমস্যা আছে।

২. ঢাকা শহরের রাস্তায় নামেন। যে কোনো একজন মানুষের কাছে জানতে চান, কেমন আছেন? প্রায় ৯৯ ভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় বলবেন, ভালো নেই?

বলতেই পারেন এটা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ মানুষ অধিকাংশ ‘ভালো নেই’ বলতে অভ্যস্ত। কিন্তু ‘ভালো থেকে’ও ভালো নেই বলবে, এতটা সরলিকরণ নয় বিষয়টি।

৪৭ বছরের বাংলাদেশে রাজধানীর মানুষের জন্যেও গণপরিবহন নেই। মানুষ কীভাবে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে, কোনো সরকার তা ভাবল না। একদিকে সাধারণ মানুষের পরিবহন নেই, অন্যদিকে যানজট এমন একটা অবস্থায় পৌঁছালো যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় সব মানুষকে।

একথার সঙ্গে সঙ্গেই বলা হবে, যানজট একদিনে তৈরি হয়নি। সমাধানও একদিনে হবে না। কাজ চলছে, সমাধান হবে।

৩. কাজ বলতে, নগর ঢাকায় ফ্লাইওভার তৈরি হলেই, যানজট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফ্লাইওভার বেশ কয়েকটি তৈরি হলো। ঢাকা শহরের যানজট সমস্যার সমাধান হলো না।

ফ্লাইওভারের ফলে এক জায়গার যানজট আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হলো।

তারপর বলা হলো, মেট্রোরেল তৈরি হলেই যানজট, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেট্রোরেল তৈরি হচ্ছে। নিশ্চয় মেট্রোরেলের কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। যানজট সমস্যার কী সমাধান হবে? মেট্রোরেল চালু হলে, উত্তরা থেকে খুব সহজে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত চলে আসা যাবে। কিন্তু যানজট সমস্যার সমাধান হবে না। নিচে দিয়ে গাড়ি-রিকশা-বাসের যানজট থাকবেই। মেট্রোরেল সারা শহরে বিস্তৃত করার সুযোগ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। 

আর ফ্লাইওভার নির্মাণের সঙ্গে মানুষের ভালো থাকার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

ফ্লাইওভার দেখে আনন্দিত হন যাদের গাড়ি আছে তারা। ঢাকা শহরে এমন মানুষের সংখ্যা ৯ শতাংশের বেশি নয়।

৪. গ্রামের কৃষকের কাছে গিয়ে জানতে চান, কেমন আছেন?
উত্তর পাবেন, ভালো নেই। না, এত সরাসরি তিনি উত্তর দেবেন না। আলুচাষি বলবেন, উৎপাদন তো খুব ভালো হয়েছে। দাম তো পেলাম না। লোকসান দিতে হলো। টমেটো চাষি বলবেন, গতবার তো ভালোই দাম পেয়েছিলাম। এবার তো পুরাই লোকসান। ব্যাংকের ঋণ শোধ করব কীভাবে? ধান চাষি কৃষক হাহাকার করছেন, খরচের সমান দাম না পেয়ে। ভালো আছেন মূলত দেশের কিছু অঞ্চলের সবজি ও ফল চাষিরা। কিন্তু এটা তো সমগ্র বাংলাদেশের খুব কমসংখ্যক চাষি। বৃহত্তর অংশই তো ভালো নেই।

গ্রামের দিনমজুরদের মজুরি বেড়েছে, তাও সত্য। শুভঙ্করের ফাঁকি হলো, গ্রামে সারাবছর কাজ থাকে না। বছরের তিন চার মাস কাজ ছাড়া থাকতে হয়। ফসলের মৌসুমে কাজের লোক পাওয়া যায় না। মৌসুম শেষে লোক থাকে, কাজ থাকে না।
গ্রামে কাজ না পেয়ে, শহরে বা ঢাকায় আসার প্রবণতা শুধু বাড়ছেই, কমছে না। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে যিনি রিকশা চালান, তার আয় বেড়েছে- ব্যয় বেড়েছে তার চেয়েও বেশি।

৫. গ্রামের যে কৃষক অনেক কষ্ট করে সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছেন। চাকরির জন্যে তাকে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। জমি বিক্রি করে তিনি ঘুষ দেন।

ইয়াবাসহ মাদক গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে। দেখার বা ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। যারা দেখবেন বা ব্যবস্থা নেবেন তারাই মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। সাধারণ মানুষের ভালো না থাকার এটা খুব বড় একটা কারণ। যারা ইয়াবার হাজার হাজার কোটি টাকার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ‘মাদকবিরোধী সপ্তাহ’ পালন করার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখেন সাধারণ মানুষ।

৬. তাহলে কেউ কি ভালো নেই? না, কেউ কেউ ভালো আছেন। যারা ফ্লাইওভার তৈরি করছেন, তারা ভালো আছেন। ৩০০ কোটি টাকার বাজেটে কাজ শুরু করে, তা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় শেষ করছেন। যারা ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণের কাজ পেয়েছেন, তারা ভালো আছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে সবচেয়ে নিম্ন মানের রাস্তা নির্মাণ করছেন। রাজধানীর ভালো ফুটপাত, ভালো রোড ডিভাইডার ভেঙে নতুন করে গড়ার কাজ যারা পেয়েছেন, তারা ভালো আছেন।

আর ভালো আছেন ব্যাংক থেকে যারা লোন নিয়েছেন এবং যারা দিয়েছেন। শেখ আবদুল হাই বাচ্চুরা ভালো আছেন, তারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যাংক থেকে জনগণের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা যারা নিয়েছেন, তারা ভালো আছেন। একজন তানভীর জেলে থাকলেও, সুবিধাভোগী সবাই নিরাপদেই আছেন। একদা গাড়ি চোর ইউনুছ বাদল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভালো আছেন। ১০০ কোটি টাকা মসজিদ নির্মাণের জন্যে দিয়ে পরকালেও ভালো থাকা নিশ্চিত করছেন। 

তারা ভালো আছেন যারা প্রতি বছর নিয়ম করে লক্ষাধিক কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন। যারা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা বা মালয়েশিয়া চলে যাওয়া নিশ্চিত করে রেখেছেন।
তারা ভালো আছেন যারা তৃতীয় বিশ্বের টাকায়, প্রথম বিশ্বে থেকে প্রথম শ্রেণির জীবনযাপন করেন।

৭. কাগজের হিসাবে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হয়েছে। এখন উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষের ঋণ ৪৬ হাজার টাকা। বিদেশ থেকে আনা ঋণে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। ‘উন্নয়ন’র জন্যে অবকাঠামো নির্মাণ খুব জরুরি। এসব অবকাঠামো যদি একটা বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সঠিক ব্যয়ে নির্মিত হতো, নিশ্চয় তা ভালো ব্যাপার হতো। প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৫ বা ১০ গুণ বেশি ব্যয়ে নির্মিত এসব অবকাঠামো শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে কতটা ভূমিকা রাখবে, বড় প্রশ্ন সেটা নিয়ে। মনে রাখতে হবে, অবকাঠামো নিজে উন্নয়ন নয়, উন্নয়নের সহায়ক। নির্মিত হচ্ছে ঋণের টাকায়। সে ঋণ সুদসহ শোধ করতে হবে। এখন যে ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তা শোধ করা শুরু হবে ১০ বা ১৫ বছর পর থেকে। অবকাঠামো যদি পরিকল্পিত না হয়, কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না। কিন্তু ঋণ শোধ করতে হবে। সমস্যাটা তৈরি হবে তখন। এখন প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ, জনগণের নামে ঋণের অর্থ আছে, হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। একই ফর্মুলায় বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ কাগজে ‘উন্নয়নশীল’ দেশ হলেও, তা ধরে রাখার জন্যে, টেকসই করার জন্যে যে পরিকল্পনা তার খুব বড় রকমের অনুপস্থিতি দৃশ্যমান। 

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। যা ছিল তাও ধ্বংসের পথে। শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও, টেকসই পথে এগোয়নি বিদ্যুৎ খাত। চুরির উৎসব চলছে। কৃষক ঠিকমতো ঋণ পায় না, ক্ষমতার কাছের ঋণখেলাপি ধনীর তালিকায় নাম লেখায়। কৃষকের ঋণ মাফ হয় না, এসব খেলাপিদের হাজার হাজার কোটি টাকা মাফ করে দেয়া হয়। ফলে মানুষের ভালো থাকার গল্পের পাশাপাশি, খুব বড় রকমের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।


  •  SHAPTAHIK/Editor : Golam Mortoza