Search

Wednesday, March 21, 2018

ভুল সবই ভুল, যা জানি তা ভুল

শাহদীন মালিক


ভুলটা বোঝা গেল প্রথম আলোয় র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের সাক্ষাৎকারটা পড়ে (প্রথম আলো, ১৮ মার্চ)। ভুলটা আমাদের শ্রদ্ধেয় বেনজীর আহমেদের নয়। বিশিষ্ট ব্যক্তি, ভিআইপিদের নাম উচ্চারণ করা বা লেখার আগে, অর্থাৎ নামের আগে বিশেষণ ব্যবহার করা এখন অলিখিত নিয়ম। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে খবর আছে। নেতা-নেত্রীর নামের আগে যত বেশি বিশেষণ ব্যবহার করা যায়, ততই মঙ্গল। বিশেষণ ব্যবহারকারী ব্যক্তি তাঁর নিজস্ব মঙ্গলের আশায় বিশেষণগুলো দীর্ঘায়িত করেন।

দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। তখন লন্ডনে থাকতাম। কী যেন একটা রাজনৈতিক ব্যাপারে-ব্যাপারটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, আর সেটা এই কলমের জন্য মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়-একটা পত্রিকায় ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক সাংসদের (এমপি) চিঠি ছাপা হয়েছিল। জন মেজর তখন প্রধানমন্ত্রী। এমপি সাহেব চিঠিটা শুরু করেছিলেন ‘ডিয়ার জন’ সম্বোধনে। এই অধমের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। অতিমাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করছে শুধু ‘ডিয়ার জন’ বলে! দল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কেন যে বহিষ্কৃত হলেন না, তা আজও বুঝিনি। কার নামের আগে কয়টা বিশেষণ লাগাতে হয়, তার যথাযথ তালিম নেওয়ার জন্য তাঁর কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করা জরুরি।

তিন ভিনদেশে ছাত্র ছিলাম। বহু শিক্ষকের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে। অভদ্র হয়ে গিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে। তখন থেকে অধ্যাপকদের নাম ধরেই ডাকার বা সম্বোধন করার বদভ্যাস গড়ে ওঠে। কাউকে কোনো দিন ‘ছার’ (স্যার) বলিনি। শব্দটা এখনো সহজে মুখ দিয়ে বেরোতে চায় না। সতর্ক থাকা ভালো, পাছে না ‘মাইন্ড’ করে ফেলেন। তাই শ্রদ্ধেয় বেনজীর আহমেদ।

ভারতের সংবিধানে পইপই করে ‘টাইটেল’ ব্যবহার নিষেধ করে দিয়েছে। ব্যতিক্রম দুটো, যার সাদামাটা অর্থ হলো শিক্ষক আর সেনা কর্মকর্তারা টাইটেল ব্যবহার করতে পারবেন। অধ্যাপক ও মেজর জেনারেল চলে গা! যাহোক, আপাতত শ্রদ্ধেয়ই থাক।

২. শ্রদ্ধেয় বেনজীর আহমেদের সাক্ষাৎকার পড়ে উপলব্ধি হলো যে এক যুগ ধরে ক্রমান্বয়ে ভুল করে চলেছি। সাক্ষাৎকারের শিরোনাম ছিল ‘ “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড” একটা ভুল শব্দ’। তাই তো, এত দিন ধরে ভুল শব্দ ব্যবহার করে বিরাট ভুল করে চলেছি।

লিখছি আর ভাবছি, একজন সম্পাদক বছর দুয়েক আগে অকপটে একটা কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা খবর যাচাই-বাছাই না করে ছাপার কথা স্বীকার করে তাকে ভুল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর এক শ পুরো না হলেও এক শর কাছাকাছি মামলা খেয়েছিলেন!

অকপটে ভুল স্বীকার করার জন্য তো মামলা হওয়ার কথা নয়। সেটাই ভরসা। অবশ্য আরও ভরসা এটুকু যে বছরের পর বছর ধরে এই ভুল অগণিত ব্যক্তি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এমনকি গণমাধ্যমও করে আসছে। আমাদের চরম সৌভাগ্য যে শ্রদ্ধেয় বেনজীর আহমেদ আমাদের সবার ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন; এ দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় না। থ্যাংক ইউ!

অবশ্য তিনি প্রশ্নও রেখেছেন-বিচার-অন্তর্ভুক্ত হত্যাকাণ্ড কোনটি।

৩. ভুল বুঝে অনেক ভুল বা খারাপ কাজ করা হয়ে যেতে পারে। আগের বাক্যটা স্বীকারোক্তি নয়, মূল্যায়ন। ভিন্ন মূল্যায়নের জন্য মামলা খাওয়া (!) উচিত নয়। যাহোক, যা বলছিলাম, বছর আড়াই আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের বড় হলরুমে তিরিশের বেশি পরিবার সমবেত হয়েছিল। কারও ছেলে, কারও বাবা, স্বামী, ভাই নিখোঁজ। আমরা তাদের আহাজারি শুনেছিলাম প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। তাদের প্রায় সবাইকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই অফিস, ওই অফিসে ধরনা দিয়েছে।

ছেলে হারানো বৃদ্ধ মা, বাবা হারানো বালকের কথা শুনতে শুনতে আমাদের অনেকের চোখের জল বাধ মানছিল না।

পরদিন প্রায় সব পত্রিকাতেই স্বজনহারাদের আহাজারির বৃত্তান্ত ছাপা হয়েছিল।

এখন বুঝতে পারছি-সবই ভুল। তাঁরা হয় আর্থিক-ব্যবসায়িক কারণে সটকে পড়েছেন; পারিবারিক বা বৈধ-অবৈধ প্রেমজনিত কারণে গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব করেছেন। কেউই গুম হননি। মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে।

সাক্ষাৎকারে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে-বিচার বিভাগ কি আর স্বাধীন! ধারণা করছি, নারায়ণগঞ্জের সাত ব্যক্তি প্রথমে নিজেদের মেরেছেন। মরার পর নিজের পেট কেটেছেন। তারপর দড়ি দিয়ে পায়ে-পেটে পাথর আর ভারী বস্তু বেঁধে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। আর শেষে আমজনতা, মিডিয়া আর আইনজীবীদের চাপে পরাধীন বিচারক র‍্যাবের কর্মকর্তা আর তাঁদের সঙ্গী ব্যক্তিদের অকারণে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির আদেশ দিয়েছেন। কারণ, র‍্যাব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম কিছুই করে না। সবই আমাদের ভুল ধারণা।

৪. শুধু ভুলটাই শোধরাতে পারছি, তা নয়। নতুন তথ্যও জেনেছি সাক্ষাৎকার থেকে। প্রথম আলো প্রশ্ন রেখেছিল-‘এভাবে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করে বিশ্বের কোথাও এ রকম বাহিনী আছে কি?’ জবাবে অতি শ্রদ্ধেয় বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘না, এ ধরনের বাহিনী অনন্য।’

দুনিয়ায় কেউ বুঝল না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাসদস্যদের সম্পৃক্ত রাখলে সুফল মেলে। বুঝল শুধু আমাদের সরকার আর র‍্যাব। আর র‍্যাব সৃষ্টির জন্য বর্তমানে ডান্ডাবেড়ি লাগানো যে ব্যক্তির ছবি প্রিজন ভ্যান থেকে নামার সময় মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় দেখা যায়, অর্থাৎ লুৎফুজ্জামান বাবরের নাম উল্লেখ না করলে নিঃসন্দেহে ইতিহাস বিকৃতির অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

যারা র‍্যাবকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে, র‍্যাবের সঙ্গে এনগেজমেন্টে যাওয়ার দুঃসাহস দেখায়, তারা তো মরতেই পারে এবং মরছেও। এটাই স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে সাক্ষাৎকারের মূল বক্তব্য ছিল এটাই। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সঠিক রাখার জন্য ‘লাইসেন্স টু কিল’ প্রয়োজন।

সবচেয়ে বড় ভুলটা এ জায়গায়। ইনিয়ে-বিনিয়ে এক দশক ধরে যে কথা বলে চলেছি এবং বলতেই থাকব তা হলো-সফল রাষ্ট্র। দুর্বল রাষ্ট্র আর ব্যর্থ রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য মূলত একটা ব্যাপারে। দুর্বল রাষ্ট্র নিজেকে সফল রাষ্ট্রে পরিণত করতে ক্রমান্বয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বেশি বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর বহিঃপ্রকাশ প্রধানত দুই ধরনের। প্রথমত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাজেট বাড়ে, প্রযুক্তি-অস্ত্রশস্ত্র বাড়ে আর সেই সঙ্গে কমে জবাবদিহি। আস্তে আস্তে ধরো, মারো থেকে ক্রমান্বয়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের বিস্তৃতি ঘটে। সেই সঙ্গে প্রতিবাদীদের সংখ্যা কমতে থাকে। দ্বিতীয় বহিঃপ্রকাশ ঘটে ব্যাংক-বিমা, কনস্ট্রাকশন মেরামত, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ইত্যাদি। ফল হিসেবে রাষ্ট্রব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ভঙ্গুর হতে থাকে।

আর যার জবাবদিহি নেই, তাকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করা অর্থহীন। এটা গণমাধ্যমের ভুল। প্রথম আলো এই ভুলটি করেছে।


  • প্রথম আলো/2০-3-18
  • ড. শাহদীন মালিক: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

এতটা চৌকস পেশাদার ভাড়াটে গোষ্ঠী কারা?

সম্পাদকীয়


যেকোনো বিবেচনাতেই হোক, শহীদপুত্র ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীর ফিরে আসা একটি স্বস্তির বিষয়। তাঁর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যাঁরাই ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ধন্যবাদার্হ্য। এ ধরনের অপহরণের পর কেউ কেউ ফিরে আসেন, কেউ কেউ ফেরেন না। কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে সাধারণ মিলটি রয়েছে তা হচ্ছে এই অপহরণকারী চক্র সম্পর্কে আমরা আর কিছুই জানতে পারি না। এই চক্রকে চিহ্নিত করা যে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তা তারা বিবেচনায় নেয় বলে মনে হয় না।

ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী অপহরণের ব্যাপারে ফিরে এসে নির্যাতনের যে বিবরণ দিয়েছেন, তাকে প্রাথমিকভাবে তদন্তযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই এটা খতিয়ে দেখা দরকার যে নগরীতে ব্যবসায়িক বা পারিবারিক কোনো বিরোধের পরিণতিতে এভাবে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অপহরণ অভিযান এত সফলভাবে পরিচালনা করা কী করে সম্ভব হলো?

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সে বিষয়ে আমাদের এলিট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তরফে কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। সজল চৌধুরীর বক্তব্যে র‍্যাবের প্রসঙ্গ এসেছে, সেই সূত্রে র‍্যাবের গণমাধ্যম মুখপাত্রকে আমরা কেবলই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেখলাম। জনগণের কাছে সত্য প্রকাশের কোনো তাগিদ আমরা দেখলাম না। কারণ, র‍্যাব বা ডিবি বলে কোনো কথা নয়, সজল চৌধুরীকে যেভাবে অপহরণ করে ফেরত দেওয়া হয়েছে, তাতে সমাজে বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা অজানা ভীতি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটতে পারে।

‘ডিবি’ পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া বা দরজার চাবির রিংয়ে দৃশ্যত র‍্যাব-১–এর লোগো ব্যবহার করার মতো বিষয়গুলো ছদ্মবেশী ভাড়াটে গোষ্ঠীগুলোর পরিকল্পিত কৌশলের অংশ হতেই পারে। কিন্তু যখন যেটা ঘটেছে বা প্রতীয়মান হয়েছে, সেসবের অবিকল বিবরণ দেওয়া ভুক্তভোগীর মৌলিক অধিকার এবং সেসবই সরকারি তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু এসবের সত্যতা সম্পর্কে তদন্তের আগে কোনো মন্তব্য করা পেশাদারত্বের পূর্বশর্তগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

যারাই সজল চৌধুরীকে তুলে নিক, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রের কোনো ইঙ্গিত এখনো মেলেনি। যেটা আপাতত পরিষ্কার সেটা হলো সজল চৌধুরী যেকোনোভাবেই হোক, ব্যক্তিগত স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। আরও আশঙ্কা হলো এ ধরনের প্রতিহিংসা মেটানোর জন্য নগরীতে বেসরকারি বাহিনী ভাড়া করা যায় এবং যারা এমনই সাফল্যের সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করতে পারে, যার সঙ্গে কোনো চৌকস বাহিনীর দক্ষতার সঙ্গে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে বিষয়টিকে এখন যেভাবে বাহ্যত মূল্যায়ন করা হচ্ছে বা সন্দেহ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার মিল নাও থাকতে পারে। ফলে এই ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য রহস্যভেদ ও কারা এই কাজটি করেছে তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার বিষয়টি খুবই জরুরি।

অপহরণের শিকার সজল চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের তরফে যেহেতু র‍্যাব ও ডিবির নাম উচ্চারিত হয়েছে, তাই অপহরণকারী চক্রকে ধরে তাদের প্রমাণ করা উচিত যে প্রকৃত অপকর্ম কারা করেছে। তা ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে এ ধরনের অপহরণকারীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তা করতে না পারলে সেটা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। সজল চৌধুরীকে অপহরণকারীদের মতো বিপজ্জনক, চৌকস ও প্রশিক্ষিত গোষ্ঠী যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, তবে যে কেউ এদের শিকারে পরিণত হতে পারে।

  • প্রথম আলো/2০-3-18

আওয়ামী লীগের ঘাড়ে ‘কোন্দলের’ বোঝা

মিজানুর রহমান খান



র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) হাতে মানিকগঞ্জে ধরা পড়া ১০ জনের একটি সশস্ত্র অপহরণ চক্র সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও সামাজিক অবক্ষয় গভীরতর হওয়ার ইঙ্গিতবহ। আওয়ামী লীগ সমাজের অংশ, তাই সেখানেও বড় সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জঙ্গি দমলেও সমাজে চরমপন্থা ক্রমে বাড়ছে।

দলীয় কোন্দলের পেছনে আসলে কোনো মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব নেই কিন্তু তথাকথিত কোন্দলে গত এক দশকে দুই শর বেশি আওয়ামী লীগার বা তার সমর্থক খুন হয়েছেন। এর বিচার বিরল, তবে ফেনীর আদালত সম্প্রতি ৩৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন। নিহত ব্যক্তি উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলীয় সভাপতি ছিলেন। তাঁকে গুলি করে, পেট্রল ঢেলে গাড়িসুদ্ধ জীবন্ত হত্যা করল দলীয় সহযোদ্ধারাই। টাঙ্গাইলেও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যার আসামি সাংসদ আমানুর রহমান। এর বাইরে কোথাও দুষ্কৃতকারীরা দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখাচ্ছে।

১৯৯০ সালের পর প্রতি পাঁচ বছর পর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে কোনো দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দুর্বৃত্তায়নের ধারা স্থায়ী রূপ নেয়নি। মাঝখানে ছেদ পড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন টানা দুই মেয়াদের শেষ দিকে, তখন স্থানীয় পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের রাশ টেনে ধরা যে কঠিন হয়ে পড়েছে, মানিকগঞ্জের ঘটনাই তার প্রমাণ। একজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীকে রাতারাতি ও বেআইনিভাবে দলের উপজেলা সহসভাপতি করা কি প্রমাণ করে যে দলটি ভেতর থেকে ধসে পড়ছে? এই লোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘ভোট কিনে’ স্কুল কমিটির টানা দুই মেয়াদে সভাপতি হন। এমন ঘটনা বিরল নয়।

আগে সরকারি দল এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির মতো দুর্নীতি ও মাঝেমধ্যে ছোটখাটো সংঘাতে লিপ্ত হতো। সেই চিত্র ভয়ানকভাবে পাল্টেছে। নামে-বেনামে দলটির একটি অংশ নরহত্যার মতো মারাত্মক অপরাধে জড়িয়েছে। কিন্তু এই সত্য স্বীকার করতে তারা কুণ্ঠিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের চতুর্থ রিপোর্ট বলেছে, দুই মাসে (গত নভেম্বর-ডিসেম্বর) ২৪ ঘটনায় ২৬৭ ব্যক্তি আহত হন, যার মূলে দলীয় কোন্দল।

রিপোর্টে দলের নাম নেই; কিন্তু তা উল্লেখ করার দরকার হয় না। মারামারির ঘটনায় দল ব্যবস্থা নেয় না-এমন অভিযোগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর উক্তি ছিল, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। তারা সেটা করে। দলের লোক মারামারি করেছে, এটা পত্রপত্রিকা বলে। কিন্তু নিজেরা খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় না। তাহলে কীভাবে ব্যবস্থা নেব?’ দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ বলেছিলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে, কোন্দল নাই।’ তাঁরা উভয়ে ভ্রান্ত, কিন্তু তাঁদের সাফাই বক্তব্যের সমর্থকেরা যে দলে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতীয়মান হবেন, তাতে আর সন্দেহ কী?

২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে নিহত ১১৬ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকই ছিলেন ৭১ জন। ফেনীর ওই নৃশংস খুনের নেপথ্যের দুটি বড় কারণ, একজন ইউনিয়ন পরিষদে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পরেননি, আরেকজন ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাচন করতে পারেননি। প্রশ্ন হলো দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেই কি আধিপত্য বিস্তারের যে সর্বনাশা মোহ দলে যাদের পেয়ে বসেছে, তারা ভড়কে যাবে, নাকি দলকে রাজনৈতিক নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায়ও মনোযোগ দিতে হবে?

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মারামারি বা অপরাধ করে রাজনৈতিক দলে কারও পদ গেছে, এর নজির কম। পদ যায় রাজনৈতিক কারণে।’ অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পত্রিকান্তরে বলেছিলেন, ‘দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে তাঁদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হয় না বললেই চলে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেটা প্রকাশিত হচ্ছে, সেটা দেখে অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের ঢাকায় অবস্থান এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে তাঁদের প্রভাব না থাকায় কোন্দল কমছে না।’ 

লক্ষণীয় রূঢ় সত্য বোঝার মতো বিবেকবান ব্যক্তি নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগে আছেন, কিন্তু তাঁদের শর্ত অভিন্ন, নাম প্রকাশ করা যাবে না। আশা করব, এই বিবেকবানেরা বিবেচনায় নেবেন যে প্রধান বিরোধী দল খুব বেশি দুর্বল হলে তা ক্ষমতাসীন দলের বৈধ স্বার্থ রক্ষা করে কি না। ফলপ্রসূ ‘একদলীয়’ ব্যবস্থার শক্তি অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রায়ণ ও শৃঙ্খলা রক্ষা, বহুদলীয় ব্যবস্থা থেকে যা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।

নীতিহীন ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির রাশ না টানলে দেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে আরও হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ক্ষমা পেয়েছেন। এর মধ্যে যাঁরা মামুলি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন আর খুনখারাবি, চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করেছেন, তাঁরা একাকার হয়েছেন।

মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের ছদ্মবেশে নিম্নবিত্ত অবস্থান থেকে উঠে আসা পিতা-পুত্র যেভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং বিদ্যাপীঠের সম্পদ লুটের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেটা সম্ভবত সমাজে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

মানিকগঞ্জের সেলিম মোল্লার কথিত দলীয় ‘টর্চার সেল’ (জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থে গড়া ডুপ্লেক্স) ইতিমধ্যে দেশের বহু স্থানে একটি অশুভ প্রবণতায় রূপ নিয়েছে। তাঁরা হয়তো দেখছেন, একই সঙ্গে বহু বাহিনী গুম বা ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ জন্য নাটকীয়ভাবে তুলে নেয়। বেসরকারি বাহিনী দায়টা তখন বিভ্রান্তিকরভাবে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারে। আইনের শাসন যত দুর্বল হবে, ততই প্রাইভেট বাহিনী বাড়বে। রাশ না টানলে দলের ছত্রচ্ছায়ায়, নামে-বেনামে পদ্ধতিগত প্রাইভেট বাহিনীর বিস্তার ঘটতে পারে। এলিট ফোর্স নয়, দলীয় শুদ্ধি অভিযানই এদের রুখতে পারে।

এ জন্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের জীবনযাপন ও ব্যয়ের অসংগতি যাচাইয়ে একটি বড় ধরনের সাংগঠনিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার। বড় উন্নয়নে বড় দুর্নীতি হওয়ার ধারণা আমরা প্রত্যাখ্যান করি। কারণ, এটা স্বীকৃত ও পরীক্ষিত যে দুর্নীতির গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসানো সমাজে উন্নয়ন টেকসই বা সুষম হয় না। দুর্নীতি দলে কোন্দল ও খুনখারাবি বাড়াচ্ছে।

গত বছর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে’ একটা বন্দুকযুদ্ধ হলো, তাতে সমকাল-এর সাংবাদিক প্রাণ দিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি সাংবাদিকের স্ত্রীকে একটি চাকরি দিয়েছেন। এর একদিকে স্থানীয় সেই সাংসদ (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) হাসিবুর রহমান, ১৯৯৬ সালে বিএনপি ত্যাগ করে নৌকায় চেপে উপমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে ৪২০ ধারায় অভিযুক্ত হওয়ার তথ্য তাঁর গত নির্বাচনী হলফনামায় ছিল না। তাঁর অনুসারী দলের পৌর কমিটির সভাপতির সঙ্গে বর্তমান মেয়রের গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের বন্দুক লড়াই থেকে ওই খুন। সেই হত্যা মামলায় মেয়র দলের পদ থেকে বরখাস্ত ও কারাবন্দী অথচ অন্যজন পৌর কমিটির সভাপতি পদে বহাল।

টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা খুনের আসামি আওয়ামী সাংসদ বন্দী, কিন্তু তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হননি। দল বলেছে, আদালতে ফয়সালার পর সিদ্ধান্ত। তাহলে শাহজাদপুরের আওয়ামী মেয়র কী দোষ করেছেন? ফেনীতে খুনের পরপরই কমিটি হয়, তাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাদ পড়েন, দল এখনো কাউকে বহিষ্কার করেনি। দলের কমিটিতে অন্তত খুন ও গুমের মতো ঘটনায় অভিযুক্ত এবং দণ্ডিত ব্যক্তিদের থাকতে হলে কী নিয়ম, কী নৈতিকতা, তার একটা ফয়সালা দরকার।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার বার্তা না দিতে পারলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নীরবে অশ্রুপাত করবেন। ‘চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার ক্ষমতা কেবল আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ খুনখারাবি প্রতিরোধে দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের উদ্যোগ জরুরি।

  • প্রথম আলো/2০-3-18/ সম্পাদক

Tuesday, March 20, 2018

টাকা নিয়ে উধাও জিএমজি অস্তিত্ব সংকটে ইউনাইটেড

  • শেয়ারবাজারে বিমান কোম্পানি
  • সাধারণ বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকের ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা আটকে আছে 
  • সম্পদ বিক্রি করে টাকা আদায়ের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের


মনির হোসেন



চরম দুরবস্থায় পড়েছে শেয়ারবাজারে আসা দুই বিমান কোম্পানি। এর মধ্যে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৩শ’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন জিএমজি এয়ারলাইন্স।

এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। প্রতিষ্ঠানটি এখন নামেই টিকে আছে। ১০ টাকার শেয়ার ৪ টাকায় নেমে এলেও বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনছে না। আর এই দুই কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ব্যাংকের ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা আটকে আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি ঠেকাতে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে টাকা আদায় করতে হবে। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোম্পানির অবস্থা ভালো নয়। আইনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ আইনে অধিগ্রহণের সুযোগ থাকলে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিএসইসিকে বিনিয়োগকারীদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তার মতে, বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে কোম্পানি আইনে তার দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হলে বিনিয়োগকারীরা আদালতে যেতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে জিএমজি। এতে ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ার ৪০ টাকা প্রিমিয়ামসহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় বাজার থেকে ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১৬৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ প্রতিষ্ঠানটি আইপিওর (প্রাথমিক শেয়ার) মাধ্যমে প্রিমিয়ামসহ আরও ৩০০ কোটি টাকা সংগ্রহের আবেদন করে।

কিন্তু কোম্পানির আর্থিক রিপোর্টে জালিয়াতি ধরা পড়ায় ২০১২ সালে আইপিও আবেদনটি বাতিল করে বিএসইসি। নিয়ম অনুসারে আইপিও আবেদন বাতিল করার পর প্লেসমেন্টের টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা আটকে রেখেছে জিএমজি।

কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জিএমজি এয়ারলাইন্স। পরের বছর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৭ বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানি ছিল। এ সময়ে মোট লোকসানের পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা।

২০০৬ এবং ২০০৭ সালে ১ কোটি টাকা মুনাফা দেখায়। কিন্তু ২০১০ সালে অলৌকিকভাবে বেড়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা। ওই বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা দেখায়। তিন বছর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজারে কারসাজি নিয়ে গঠিত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ সালের স্থিতিপত্রে হঠাৎ করে ৩৩ কোটি টাকার পুনর্মূল্যায়ন উদ্বৃত্ত দেখানো হয়।

এর ব্যাখ্যায় জিএমজি বলেছে, তাদের দুটি বিমানের সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে বিমান দুটি বেশ পুরনো। স্বাভাবিক নিয়মে পুরনো বিমানের সম্পদের দাম আরও কমার কথা। কিন্তু আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতো দাম বাড়িয়ে দেখিয়েছে জিএমজি। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে জিএমজির ২৩০ কোটি খেলাপি ঋণ রয়েছে। এই টাকা আদায়ে ২০১৬ সালে সালমান এফ রহমানের বাড়ির নিলাম ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় শেষ পর্যন্ত তা আটকে যায়।

অন্যদিকে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনাইটেড এয়ার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ৫৮৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং উদ্যোক্তাদের ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। কিন্তু বিএসইসির নিয়ম অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া এককভাবে প্রত্যেক পরিচালকের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গত ৬ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পুরনো উড়োজাহাজ ব্যবহারের কারণে জ্বালানি খরচ বেশি। বিলম্বিত কর আমলে নেয়ার পর থেকেই মুনাফা কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির। এর আগে শেয়ারবাজার থেকে রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করে উড়োজাহাজ কেনা হলেও প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং বেশি দামে উড়োজাহাজ কেনার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এরপর আর্থিক সংকট কাটাতে নতুন করে রাইট শেয়ার ছাড়তে চেয়েছিল তারা।

কিন্তু উদ্যোক্তাদের ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকায় অনুমতি দেয়নি বিএসইসি। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছেও ইউনাইটেড এয়ারের শত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার টাকায় ৪ টাকায়ও কেউ কিনছে না। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

  • যুগান্তর/২০-৩-১৮ 

দখলের হাতিয়ার এলজিইডি!

বরিশালে সরকারি টাকায় নদী ভরাট

আজিম হোসেন, বরিশাল


আড়িয়ালখাঁ নদের ৭০ শতাংশ জমি। ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। সেই জমি বাজার হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন করছে। নিচু জমি ভরাট করার পর সেখানে ভবন তৈরির কাজ চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ।

বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী বাজারে গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নদের ওপর তালতলী সেতু। সেতুর পাশে সড়ক। সড়ক ঘেঁষে এই জমি। সামনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড। পেছনে বালু ভরাট করা।

স্থানীয়রা জানায়, জমি ভরাট করা হয়েছে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু কেটে। এখন স্থায়ীভাবে দোকানঘর করার জন্য আরসিসি পিলার করা হচ্ছে। ১০টি পিলার এরই মধ্যে তোলা হয়েছে। পুরো জমিতে প্রায় ৩০টি দোকান করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর অর্থায়ন করবে ডানিডা (ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)। তবে সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করছে এলজিইডি। এ জন্য ভরাট জমির ওপর তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় তালতলী বাজার কমিটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, মাছ বাজারের নিয়ন্ত্রণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব। ওই মাছ বাজার সেতুর নিচের সড়কের ওপর চলছে। চলতি অর্থবছরে তিনি বাজার ইজারা দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। এর আগে মাছ বাজার কখনো ইজারা দেওয়া হয়নি। এখন স্থায়ীভাবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তিনি বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা করছেন। যেখানে তাঁর নামে পাঁচটি দোকান থাকবে।

এলজিইডি বরিশাল সদর উপজেলা প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান মাহাতাব পরিষদের পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়নের একটি প্রকল্প জমা দিয়েছেন। ওই প্রকল্পে মাছ বাজারের জন্য স্থাপনা নির্মাণের বিষয় ছিল। সেখানে বলা হয়েছে, জমি বাজারের। তবে এর পক্ষে কোনো কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়নি। এরপর প্রকল্প অনুমোদন হলে তাঁরা কাজ করার জন্য বরাদ্দ দেন। কিন্তু এখন তাঁরা জানতে পারছেন, জমি খাস।

সদর উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জরিপকারী মো. ফোরকান মিয়া জানান, চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর খতিয়ানের সব জমিই খাস। কিছু জমি গণপূর্ত বিভাগের। তবে যে জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, তা খাস। তিনি বলেন, ‘আমরা ওই জমি মেপে সীমানাপ্রাচীর দেব। তত দিন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

চরবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ জানান, তালতলী বাজারের অদূরে সেতুর নিচে সড়কের পাশে পুরাতন একটি মাছের বাজার রয়েছে। এই বাজার সড়কের পাশে হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হয়। তাই জনস্বার্থে নদীর পারে বালু ভরাট করে মাছ বাজার করার পরিকল্পনা নেন। এলজিইডির সহায়তা এবং ডানিডার অর্থায়নে বাজার উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। এ জন্য মাছ বাজারের স্টল নির্মাণে পাকা পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) এসে কাজে বাধা দেন। বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। জমির বিষয়টি ফয়সালা হওয়ার পর ফের কাজ শুরু করব।’

এসি ল্যান্ড আমিনুল ইসলাম জানান, তালতলী বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নদীর পাশের কিছু অংশ বালু দিয়ে ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছিল। ১২ মার্চ তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার মেশিন পান, যা দিয়ে বালু ভরাট করা হয়েছে। তাঁরা পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ করতে স্থানীয় বাজার কমিটি এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে নিষেধ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে, সেহেতু আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলি। তার পরও কাজ শুরুর চেষ্টা চললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • কালের কণ্ঠ / ২০-৩-১৮ 

কেউ দায়ী নয়!

পাঁচ বছরে বস্তিতে ১২০০ অগ্নিকাণ্ড 

সুজিত সাহা ও নিহাল হাসনাইন


বস্তিতে নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা হয় না। হতাহত হলেই কেবল মামলা হয়, তাও অপমৃত্যুর। এরও আবার তদন্ত হয় না। গত পাঁচ বছরে দেশের বস্তিগুলোয় ১ হাজার ২০০টির বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও একটিরও অভিযোগপত্র দাখিল করেনি পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই এসব অগ্নিকাণ্ডে  কাউকে দায়ীও করা যায়নি।

যদিও নগর অর্থনীতিতে উল্লেখ করার মতো অবদান রাখছে বস্তি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ বস্তি শুমারি অনুযায়ী, বস্তির বাসিন্দাদের ১৩ শতাংশের বেশি দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্পের কর্মী।

এসব বস্তিতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারার কারণ হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলছে পুলিশ। তাদের মতে, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশ যেসব ক্লু পায়, বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না। এছাড়া বস্তিগুলোয় সিসি ক্যামেরাও থাকে না, যা থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আগুন লাগানোর পর অপরাধের সব আলামতই নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে অপরাধী শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আগুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্তেও কিছুটা সময় লেগে যায়। তাছাড়া বস্তিতে কোনো সিসি ক্যামেরাও থাকে না, যাতে ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়।

দোষীদের শাস্তি না হওয়ায় নিয়মিতই ঘটছে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে শুধু রাজধানীর বস্তিগুলোতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৭৮টি। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৭ জন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২৯টি। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। পরের বছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩-এ। ১২ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি এতে ক্ষতি হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। ২০১৫ সালে রাজধানীর বস্তিগুলোয় অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। ওই বছর ৪৭টি অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় তিনজন আর ক্ষয়ক্ষতি হয় ১ কোটি ১১ লাখ টাকার। পরের বছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ২৭টিতে। এতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি নিহত হয় একজন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে রাজধানীর বস্তিগুলোয় ৩২টি অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় একজন। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকায়।

এসব অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, বেশির ভাগ বস্তিতেই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। অবৈধ এসব সংযোগের সরঞ্জামও থাকে নিম্নমানের। তাই শর্ট সার্কিট থেকেই বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বস্তিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে চুলা ব্যবহারের কারণেও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে দুই পক্ষের শত্রুতা ও দখল-পুনর্দখলের বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

বিদ্যুতের লাইন নিয়ে কুর্মিটোলা ক্যাম্প (বিহারী বস্তি) ও রাজু বস্তির মধ্যে বিতণ্ডা হতো প্রায়ই। এর মধ্যেই ২০১৪ সালে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে প্রাণ হারায় ক্যাম্পের ১০ জন। ওই ঘটনায় মামলা হলে তিন বছরেও অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি।

গতকাল কালশীতে কথা হয় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের সঙ্গে। জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মাদ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার তিন বছরেও বিচার পেলাম না। আগুন কারা লাগালো তাও জানতে পারলাম না।

রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকার সীমারেখায় অবস্থান কড়াইল বস্তির। ওই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায় নিয়মিত। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ মার্চ গভীর রাতে বস্তিটিতে আগুন লাগে। কেরোসিনের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হলেও এর পেছনে কারা তা জানা যায়নি। একইভাবে অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে বস্তিটিতে সংঘটিত আগের অগ্নিকাণ্ডগুলোর মূল হোতারাও।

কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড নিয়ে কথা হয় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলীর সঙ্গে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডগুলো দুর্ঘটনাবশত। এ কারণেই কেউ কখনো মামলা করেনি। আর মামলা না হলে দায়ী কারা তা জানা সম্ভব হয় না।

১২ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে ইলিয়াস মোল্লা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় চার হাজারের বেশি ঘর। বস্তির উত্তর অংশে আগুনের সূত্রপাত হলেও দ্রুত তা দক্ষিণ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন প্রাণ নিয়ে বেরোতে পারলেও ভস্মীভূত হয়েছে তাদের সর্বস্ব। এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বস্তির বিভিন্ন দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে কোয়ালিশন ফর দি আরবান পুওর (সিইউপি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সুন্নত বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরাও ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু আগুনের ধরন দেখে মনে হয়নি, এটি নিছক দুর্ঘটনা। এ আগুনের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এর একটি হলো বস্তির জমি ফাঁকা করে তা পুনর্দখল।

বস্তির সংখ্যা ঢাকায় বেশি হলেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চট্টগ্রামে বেশি। ২০১৩-১৭ সালে এখানকার বস্তিগুলোয় আগুন লেগেছে মোট ৮৭২ বার। এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি না ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্দরনগরীর বিভিন্ন বস্তিতে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালে, ৫৬৮টি। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয় ২১ কোটি টাকার। নগরীর বস্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকাণ্ড হয় গত বছর, ১৫৩টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। ২০১৬ সালে ১২৬টি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বস্তিতে ২৫টি অগ্নিকাণ্ডে আর্থিক ক্ষতি হয় অর্ধকোটি টাকা। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের বস্তিগুলোয় ২০টি অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কাছে।

চট্টগ্রামের তুলাতলী বস্তিটিতেইে আগুন লেগেছে এ পর্যন্ত চারবার। সর্বশেষ ২০১৩ সালে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয় বস্তির ৬০টি ঘর। প্রতিবারই চুলার আগুন, সিগারেটের আগুন ও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে দায়ী করে তদন্ত শেষ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।

যদিও ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের এ ভাষ্যের সঙ্গে একমত নয় বস্তির বাসিন্দারা। ৩০ বছর ধরে তুলাতলী বস্তিতে বসবাস করে আসা হিরণ মিয়ার দাবি, আধিপত্য বিস্তার ও বসতঘরের নতুন মালিকানা পেতেই এসব আগুন। সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় বটে, তবে বদলে যায় মালিকানা। ২০১৩ সালের অগ্নিকাণ্ডও নিছক দুর্ঘটনা নয়, আধিপত্য বিস্তারের কৌশল।

চট্টগ্রামের সদরঘাট থানাধীন মাইল্লার বিল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। ৫৫০টি বসতঘরের ওই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে সাড়ে ৩০০ ঘর পুড়ে যায়। ওই ঘটনার পর ব্যক্তিমালিকানাধীন বস্তিতে একটি বৃহৎ গুদাম তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ইজারার মাধ্যমে পাওয়া জমিটির বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের। যদিও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। অগ্নিকান্ডের পর থানায় কোনো মামলা না হওয়ায় তদন্ত হয়নি। ফলে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেয়া যায়নি।

চট্টগ্রামের বন্দর, ডবলমুরিং, সদরঘাট, ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন বস্তি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল কিংবা ইজারা নেয়া জমিতে ঘর তুলে বস্তি তৈরি করে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় একসময় ১৫-২০টি বস্তি থাকলেও বর্তমানে সে সংখ্যা ৫-এ নেমে এসেছে। আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এলাকায় অফিস ভাড়ার চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন সময় অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয় এসব স্থানে।

নগরীর সিআরবি এলাকায় বস্তিবাসীর একটি সংগঠনের নেতা মো. শুক্কুর বণিক বার্তাকে বলেন, বস্তিতে আগুন লাগলে কয়েকদিন মিডিয়ায় আলোচনা হয়, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা আসেন। এরপর কয়েকদিন ফ্রি খাবার প্রদান করা হলেও নিজ উদ্যোগে আবারো ঘর নির্মাণ করে বাস্তুহারা মানুষ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হলেও মামলা দায়ের হয় কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।

সাধারণত বস্তির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয় না বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) মো. জাহাঙ্গীর আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, হতাহতের ঘটনা ঘটলে কেউ বাদী না হলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের পর সার্কেল অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে। কেউ নাশকতা বা অন্য কোনো অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ তদন্তের ব্যবস্থা নেয়। তবে এখন পর্যন্ত বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরের বস্তিগুলোয় গত পাঁচ বছরে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ১৪৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা রংপুরের বিভিন্ন বস্তিতে, ৬৭টি। এরপর সর্বোচ্চসংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীতে ৪১টি, সিলেটে ২৩টি, খুলনায় ১৩টি ও বরিশালে তিনটি।

বিবিএসের সর্বশেষ বস্তিশুমারি ২০১৪ অনুযায়ী, সারা দেশে বস্তি রয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৫টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় বস্তির সংখ্যা ৯ হাজার ১১৩। সিটি করপোরেশন এলাকার বস্তিগুলোর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে রয়েছে ৩ হাজার ৩৯৪টি। চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ২ হাজার ২১৬।

এসব বস্তিবাসীর অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে নগর অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। এসব বস্তির বাসিন্দাদের ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ রিলগা/ভ্যান চালনা ও ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ ছোট ব্যবসা পরিচালনা করেন। ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ গৃহপরিচারিকা, ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দিনমজুর ও ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন।

  • বণিকবার্তা / ২০-৩-১৮ 

১৪০ কেজি গাঁজাসহ আওয়ামী লীগ ৩ নেতা গ্রেফতার


ময়মনসিংহে ১৪০ কেজি গাঁজাসহ আওয়ামী লীগের তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে গাঁজাগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় গাঁজা সরবরাহে ব্যবহৃত একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। 

রবিবার দুপুরে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জেলা পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এই খবর নিশ্চিত করেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. বাবুল মিয়া, সুরুজ আলী ও কাওসার আলী। বাবুল মিয়া মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। গ্রেফতার হওয়া অপর দুজন তার কর্মী। অভিযানে বাবুলের বাড়ি থেকে ৬০ কেজি ও তার দুই সহযোগীর কাছ থেকে আরো ৮০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার করা গাঁজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা।  

বাবুল মিয়াকে ‘মাদক সম্রাট’ উল্লেখ করে এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, বাবুল ও তার সহযোগীরা ভারত থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে গাঁজা আনে। খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান তার দল নিয়ে শনিবার রাতে মুক্তাগাছার মাঝিরা গ্রামে বাবুলের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় ৬০ কেজি গাঁজাসহ বাবুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

একই সময়ে মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহাম্মেদ মোল্লা বাবুলের সহযোগী সুরুজ ও কাউসারের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় ৮০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয় । গ্রেফতার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ও এ নেওয়াজী, বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী, গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান ও মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহমেদ মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

  • দিনকাল/ ২০-৩-১৮ 

রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যস্ত পুলিশ , বেপরোয়া অপরাধীচক্র

সাবেক আইজিপি নুরুল আনোয়ার


জনগণের জান-মাল রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করছে সরকার। আইনশৃংখলায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে রাজধানীসহ দেশ জুড়ে ছিনতাইকারী ও মাদক চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণও হারাচ্ছে বহু মানুষ। রাজনৈতিক কর্মীদের দমন-নিপীড়নের সুযোগে দেশ জুড়ে বেপরোয়া পুরুষ-নারী ছিনতাইকারী চক্র। 

সাবেক আইজিপি নুরুল আনোয়ার দিনকালকে বলেন, প্রায়দিন পত্রিকার পাতা খুললে ছিনতাইয়ের খবর দেখতে পাই। অনেকে মারা যাচ্ছে, কেউ গুরুতর আহত হচ্ছে, লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। পুলিশের মূল কাজ হলো যখনই অপরাধ সংঘটিত হবে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া। অপরাধ দমন ও আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব এড়িয়ে পুলিশ দায় এড়াতে পারে না। ছিনতাইকারীর হাতে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

প্রধান দায়িত্ব আইনশৃংখলা রক্ষা বাদ দিয়ে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে যদি পুলিশ অন্যান্য অপরাধকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে সেটা দায়িত্বের প্রতি অবহেলার শামিল। সূত্র থেকে জানা যায়, বিগত তিন মাসের ব্যবধানে টানাপার্টির কবলে পড়ে শুধু রাজধানীতেই প্রাণ হারিয়েছেন নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন। 

গত ২৬ জানুয়ারি রাজধানীতে টানাপার্টির প্রাইভেটকারের চাকায় মাথা থেঁতলে ঘটনাস্থলেই মারা যান একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আয়া হেলেনা বেগম। টানাপার্টির কবলে পড়ে যখন হেলেনা নিহত হলেন, প্রায় একই সময় মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৩৬) নামে খুলনার এক ব্যবসায়ী ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন সায়েদাবাদ এলাকায়। স্বামীবাগ রেললাইনে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। গত বছর নভেম্বরে মতিঝিলে হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার সময় রিকশা থেকে পড়ে আহত হন এফবিসিসিআইয়ের এক নারী কর্মকর্তা। আর ডিসেম্বরে দয়াগঞ্জে এক ছিনতাইকারী টান দিয়ে রিকশা আরোহী এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার সময় তার কোল থেকে পড়ে পাঁচ মাসের ছেলের মৃত্যু হয়। ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের সময় রিকশা থেকে পড়ে আহত হন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ফরহাদ আলম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। ৮ অক্টোবর টিকাটুলিতে ছিনতাইয়ের শিকার এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু তালহা।

সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের অভিনব পন্থা হিসেবেই মাঠে নেমেছে নারী ছিনতাইকারী চক্র। নানাভাবে পুরুষদের প্রলুব্ধ করে তারা লুটে নেয় সর্বস্ব। এমনকি নারীদের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ কায়দায় ছিনতাই করে থাকে। গত ৩ অক্টোবর গুলিস্তান থেকে নারী ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা স্বীকার করেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানেই তারা ছিনতাই করে থাকে। নারী হিসেবে বিশেষ কৌশলে ছিনতাই করা যায় বলে জানায় তারা। 

আটককৃত নারী ছিনতাইকারীরা জানিয়েছে, বিভিন্ন শপিং মল, নিরিবিলি সড়ক, বিয়ে অনুষ্ঠান, পার্টিই তাদের ছিনতাইয়ে মূল কেন্দ্রস্থল। এছাড়া ফোনে প্রেমের ফাঁদ পেতে নির্জন ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয় এই চক্রের সদস্যরা। ভিড়ের মধ্যে শপিং মলগুলোতে নারী ক্রেতাদের সঙ্গে তারা মিশে যায়। সুযোগ বুঝে ভ্যানিটি ব্যাগ, মালপত্র হাতিয়ে নেয়। গণপরিবহনগুলোতেও এই চক্র সক্রিয় বলে স্বীকার করে তারা। কিন্তু ছিনতাইয়ের শিকার অনেক ব্যক্তি ঝামেলা এড়াতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে চান না। শান্তিনগর মোড় থেকে ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেট, মালিবাগের এসবি অফিসের সামনে থেকে কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের আগে পীরজঙ্গি মাজার, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে  টেকনিক্যাল মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গুলশান শ্যুটিং ক্লাব, মহাখালী কাঁচাবাজার, পান্থপথ মোড় থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট থেকে সোবহানবাগ, সংসদ ভবন এলাকা, আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলার পাড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে জনপথ মোড় হয়ে ধলপুর সিটি, মেরুল বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজ, মৌচাক থেকে মগবাজার মোড়, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া ও বাবুবাজার স্পটে নারী ছিনতাইকারীরা সক্রিয়। ব্যাপক হারে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশের নথিপত্রে মাত্র ১২টি ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা উল্লেখ আছে। 

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিকার না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে যাচ্ছে না। সম্প্রতি কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তরুণ মডেল আরমান হোসেন। শুটিং শেষ করে উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে রামপুরার বাসায় ফেরার পথে তিন ছিনতাইকারী পিস্তল ঠেকিয়ে আইফোন ও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। সম্প্রতি ওই এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৪০ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ১০ ডিসেম্বর রাতে ওয়ারিতে শাহীদা নামের এক নারীর পায়ে গুলি করে টাকাসহ হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছিনতাইকারী বা টানাপার্টি চক্রে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ বখাটে গ্রুপ জড়িত। গত ৮ নভেম্বর এমন একটি ছিনতাইকারী গ্রুপ রায়েরবাজারের তরুণ সাব্বির হোসেনকে হত্যা করে।  ডিএমপির অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত দুই মাসে ডিএমপিতে মাত্র ১২টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সেগুলোই তারা বিবেচনায় নিয়েছেন। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা দিনকালকে বলেন, এরই মধ্যে ১৪১ এলাকা বা স্পটকে শনাক্ত করা গেছে। এসব এলাকায় কারা ছিনতাই করছে তা খোঁজ নিচ্ছে ডিবি। হালনাগাদ করা হচ্ছে ছিনতাইকারীদের তালিকা। শিগগিরই বিশেষ অভিযান শুরু হবে।

  • ইসমাইল বাবু, দিনকাল /20-3-18

Another mysterious abduction case

High time govt took cognisance


Yesterday we reported that a businessman who was picked up from his residence in Dhaka by people identifying as law enforcers was freed after eight days of captivity. He was beaten up by the abductors and forced into a microbus and then, on Sunday, dropped off by them in Comilla. This is not the first case of its kind where people identifying as law enforcers have entered houses and abducted individuals, who were then bizarrely freed after a period. Within the past year, there has been a plethora of cases which follow this pattern.

The victim said that in confinement, he was pressured to lift a case he had filed against his business partner and was asked for ransom. But strangely, this demand was not communicated to the family members, and he was released without the demand being met. If these abductions are to intimidate or for some other reason remains a mystery. In most cases, after being freed, people have been wary to describe the details of their period of confinement.

Law enforcement has consistently denied any involvement. If that is the case, then the matter is more worrying since people are carrying out crimes in their name with impunity. This is eroding the faith of the public in law enforcers. The government must take cognisance and act decisively to determine who is behind these abductions. Law enforcement too, if they are to effectively carry out their responsibilities, must deal seriously with these allegations. We are yet to see any significant action from the law enforcers to pursue and curb these crimes and determine who is actually behind the abductions.

  • The Daily star/20-3-18

Justice elusive

2 years into Tonu murder, no visible progress in probe


Even two years after the murder of college student Tonu, justice seems elusive for her family.

Investigators have failed to identify any suspects, let alone arrest any.

All they say is “investigation is on”. 

“The pace of the probe keeps disappointing us. For the last two years, CID officials have been telling us that they are looking into the case. Actually, they are dilly-dallying over bringing the culprits to book,” Tonu's mother Anwara Begum told The Daily Star recently. 

 “We doubt that we would ever get justice,” she said, adding that her husband, Yaar Hossain, has become sick thinking about their daughter.


Talking to this correspondent, Yaar said, “What will I say? ... It seems the matter is deliberately being covered-up.” 

Khairul Anam Raihan, spokesperson for Comilla Gonojagoron Mancha, a platform that staged several protest programmes demanding the arrest of Tonu's killers, said, “The CID seems hazy about the investigation. But we won't stop [our movement] until Tonu's murderers are arrested. We are planning for another gathering this month.” 

Sohagi Jahan Tonu, a student of Comilla Victoria College and also a theatre activist, was found murdered inside the Comilla Cantonment on this day in 2016.

The incident led to an outrage across the country. Numerous rallies and other protest programmes were organised, demanding the punishment of the killers.

Two autopsies at the Comilla Medical College could not determine the cause of her death though Yaar, who first spotted the body in a bush, saw the back of his daughter's head smashed and injury marks on her nose.

The police inquest report too did not cite any sign of injury. The report said that most of her two-foot hair was cut. Her mouth and eyes were shut.

There was a minor cut and blood spot on the upper part of her left ear. Minor portion of skin on the left of the face and above the right knee had bruises.

Tonu's kameez was torn, the report says without specifying the area.

Victim's family members had seen a ray of hope of getting justice after officials from the CID, which is investigating the case, through DNA tests in May that year found that Tonu was raped before being murdered.

The officials on May 16 that year said the tests of the specimens collected from Tonu's clothes had found spermatozoa of three males.

They claimed to have interrogated more than 100 people, including some army men, but to no avail.

The CID officials also claimed to have collected DNA samples from some people, but those did not match with the three DNA samples found on Tonu's clothes.

Contacted, Assistant Superintendent of CID (Comilla-Noakhali Division) Jalal Uddin, also the investigation officer of the case, said, “The probe is underway. We are still working.

“We need to question some people but they are currently abroad,” he said, adding that he hoped those, on their return, might be quizzed in two months.

“The DNA samples of the spermatozoa found on Tonu's clothes haven't matched with anyone's,” Jalal told our correspondent in Comilla on Saturday. 

Abdul Kahar Akand, additional deputy inspector general of CID, claimed that they were probing the case with due diligence.

  • The Daily Star/20-3-18