Search

Thursday, April 12, 2018

উপাচার্যের বাসা ভাঙচুরের বিচার চায় আন্দোলনকারীরা



বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেছেন, ‘আমাদের ছাত্ররা (আন্দোলনকারী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর করেনি। সেখানে আমাদের শিক্ষকেরা ছিলেন। গণমাধ্যম ছিল। আমরা গণমাধ্যমের ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের বের করার দাবি জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা নিয়ে সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার একটি অংশের প্রতি হাসান আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্যের একটি অংশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘ভিসির বাড়ি যারা ভেঙেছে, লুটপাট করেছে, লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছে, ছাত্রদেরই তো বের করে দিতে হবে। যারা ভাঙচুরে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ছাত্র-শিক্ষকের সহযোগিতা চাই। এত বড় অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না। এখনো শিক্ষক যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের সম্মান করি। গুরুজনকে অপমান করে প্রকৃত শিক্ষা হয় না।’

  • Courtesy: Prothom Alo/Apr 12, 2018

Wednesday, April 11, 2018

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে সরকার — এএইচআরসি


কোটা সংরক্ষণ নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টিতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে (এনগেজড) বাংলাদেশ সরকার। এমন তথ্য পেয়েছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। 


বেশ কিছু শিক্ষার্থী এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনকে বলেছেন, রোববার রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বিক্ষোভ প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীদের সনাক্ত করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক ভবনে (ডরমেটরি) অবরুদ্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। এতে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরতদের ওপর নির্যাতন করছে।

ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার জন্য তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। বেশ কিছু ছাত্র ও ছাত্রী তাদের হাতে আহত হয়েছেন। এসব ছাত্রছাত্রীর বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। তবে তাদেরকে কোনো চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদকারীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এতে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এটা বলা অপ্রয়োজনীয় যে, ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা আরো পুলিশি হয়রানির মুখে রয়েছেন। 

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার শতকরা ৫৬ ভাগ আসন কোটা পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা চাকরি প্রত্যাশী তারা এর প্রতিবাদ করছেন। কোটা পদ্ধতিতে দেখা যায়, একজন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বা তাদের ছেলেমেয়ের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ আসন, জেলা পর্যায়ে শতকরা ১০ ভাগ, নারী কোটায় শতকরা ১০ ভাগ, জাতিগত সংখ্যালঘুরা শতকরা ৫ ভাগ ও শারীরিক বিকলাঙ্গদের জন্য শতকরা এক ভাগ আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কোটা সংরক্ষণের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করছেন সমালোচকরা। এই কোটা পদ্ধতি সংরক্ষণ করা হয় জনগণের আবেগকে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানকে ব্যবহার করে। মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করেন। ৮ই এপ্রিল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। রোববার দিনের শেষে ও সোমবারের প্রথম প্রহরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ দমনপীড়নমুলক অভিযানে ঢাকায় আহত হয়েছেন বহু ছাত্র ও ছাত্রী। 

তবে মাঠ পর্যায়ে যা পরিস্থিতি তাতে তাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে বলা সম্ভব নয়। খেয়ালখুশি মতো পুলিশ আটক করেছে প্রায় এক শিক্ষার্থীকে। ভবিষ্যতে আর কখনো এমন বিক্ষোভে অংশ নেবে না এমন শর্তে তাদের অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় এই বিক্ষোভ শুরু হয় ৭ই এপ্রিল। এটা এমন এক সময়ে ঘটেছে 

যখন ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ হাজার। এ বছর ২০ শে মার্চ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত তথ্যে এ কথা বলা হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা দাবি তুলছেন কোটা পদ্ধতি শতকরা ১০ ভাগ কমিয়ে আনতে। এই আন্দোলন এখন অন্যান্য সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন যখন এই বিবৃতি প্রকাশ করে। গত দু’দিনে দেশের বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে মাঠে নেমেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কঠোর শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দমনপীড়ন অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। এতে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অবশ্যই বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, সভা সমাবেশ করার স্বাধীন অধিকার অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না বাংলাদেশ সরকার। 
  • কার্টেসি - http://mzamin.com


কোটায় মার খাওয়া এক হতভাগ্য প্রজন্ম


জিয়া হাসান


৯ এপ্রিল রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপরে দফায় দফায় পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সম্মিলিত আক্রমণে গুলি চালানো থেকে শুরু করে যে ভয়াবহ তাণ্ডব ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রীরাও জানাচ্ছেন, গভীর রাতে তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে গুলিবিদ্ধ এবং আহত রক্তাক্ত ছাত্রছাত্রীদের ছবি দেখা যাচ্ছে। স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন তাণ্ডব অভাবনীয়।


কয়েক মাস ধরেই সুনির্দিষ্ট পাঁচটি দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

  • ১. কোটাব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা (বর্তমান ৫৬% কোটা থেকে )।
  • ২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া (যদিও সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে এই দাবিটি ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে) 
  • ৩. সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা। (মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২, যেখানে বাকি সকলের জন্য বয়সসীমা ৩০) 
  • ৪। কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। (২৭, ২৮ ও ২৯তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও উপজাতি কোটায় শূন্য থাকা ১ হাজার ৪৮৯টি কর্মকর্তার পদে নিয়োগের লক্ষ্যেই বিশেষভাবে ৩২তম বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হয়) 
  • ৫. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। (বর্তমানে একজন কোটাধারী বিসিএস, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সব সরকারি নিয়োগে বারবার কোটা ব্যবহার করার সুযোগ পান)



বাস্তবতা হচ্ছে, কোটাব্যবস্থা চালু করা হয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন কোটা নিজেই বঞ্চনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিবিএসের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মাত্র ২৬ লাখ বেকার। কিন্তু এ তথ্য ইতিমধ্যেই বিতর্কিত এবং লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীতে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার।

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি বঞ্চনার বিরুদ্ধে। আজ যদি শিক্ষার্থীরা পাস করেই কাজের সুযোগ পেতেন, তাহলে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি উঠত না। কিন্তু একদিকে উন্নয়নের ঝংকারে কান বন্ধ হয়ে যায়, আরেক দিকে লাখ লাখ তরুণের কাজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কাজ করে নিজের এবং নিজের পরিবারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের নিশ্চয়তাটি আনার আন্দোলন ছাড়া এই তরুণদের আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনপ্রশাসনে নিয়োগে প্রতিবন্ধী, উপজাতি বা বিভিন্ন বঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য কোটার প্রয়োজন কেউ অস্বীকার করে না। স্বাধীনতার দুই দশক পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটাব্যবস্থার রাখারও সংগত কারণ ছিল, কিন্তু স্বাধীনতার যখন ৫০ বছর ছুঁই ছুঁই করছে, তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়, বর্তমান সরকার একটা গোষ্ঠীকে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বাকিদের সুযোগ সীমিত করতে চাইছে।

বর্তমানে শাসকগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই কোটার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে দাবি করেছে, এমনকি কোটাবিরোধীদের রাজাকারের উত্তরসূরি বলেও গালমন্দ করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাধীনতার পরপরই অসচ্ছল ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটাব্যবস্থার অবশ্যই যৌক্তিকতা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতির জন্য ৩০ শতাংশ কোটার মাধ্যমে শুধু অনুগত গোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার কী দোষ করল?

বলা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কোটাব্যবস্থা তার প্রতিদান। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, মুক্তিযুদ্ধে সব চেয়ে বড় ত্যাগ করেছেন ৩০ লাখ শহীদের পরিবার। এই ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সংসদে প্রদান করা লিখিত বক্তব্য অনুসারে তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মাত্র ৫ হাজার ৯৯১ জন।

৩০ লাখ শহীদের কোনো তালিকা করা হয়নি, সেহেতু এই ৫ হাজার ৯৯১ জন শহীদ বা আহত মুক্তিযোদ্ধা বাদে বাকি ৩০ লাখ শহীদ পরিবার কোটায় আসার সুযোগ পায়নি। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান কোটাব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তাঁদের নানা-দাদাদের আত্মত্যাগের জন্য, কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের পরিবারের কোনো দায় রাষ্ট্র নেয়নি।

এমনকি এই কোটাব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই আছেন সমর্থ ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই এই দেশে কোটিপতিও হয়েছেন, এঁদের কোনো ধরনের কোটার প্রয়োজন নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারাই প্রকৃতই প্রান্তিক জীবনযাপন করেন, তাঁদেরই শুধু কোটাব্যবস্থায় মধ্যে নয়, বিশেষ সুবিধা দিয়ে সুন্দর জীবনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে স্বামী এবং ছয় সন্তান হারানো মেহেরজান বিবি ফেনী রেলস্টেশনে ভিক্ষা করেন। মেহেরজান বিবিদের জন্য এই রাষ্ট্রের আরও অনেক বেশি করার প্রয়োজন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে কোটিপতি হওয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং মেহেরজান বিবির পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ এক হতে পারে না।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম নকল মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধাদের জমি, ফ্ল্যাট, অর্থ সাহায্য সব ধরনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রশাসনে চাকরির সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা দিয়ে কখনো মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে উঠতে পারবে না, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে মাত্র।

ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহের একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে, স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা নিচ্ছেন কেউ কেউ। ২০০৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭২ হাজার। এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মাত্র ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু বাকিদের নাম এখনো বাদ দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ বলেছেন, তালিকায় ঢোকানো সহজ, কিন্তু কেউ একবার তালিকাভুক্ত হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বাদ দেওয়া কঠিন।

জাতীয় সংসদে এই স্বীকারোক্তির পরেও দেখা যাচ্ছে, টাকা নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদুর রেজা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করে পুলিশে চাকরির সুযোগ করে দেন বলে অভিযুক্ত হন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ কাজ করে এসেছেন।

যে কোটা এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও সুযোগবঞ্চিত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করে না, যে কোটায় মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নেওয়া ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকেরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ পায়, যে কোটায় ৩০ লাখ শহীদের কোনো স্থান নেই, সেই কোটা বাংলাদেশে মেধাভিত্তিক, বৈষম্যহীন উন্মুক্ত সুযোগ দানকারী রাষ্ট্র তৈরির যে দীর্ঘ যাত্রা, তাকে পিছিয়ে দেয়। তার জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের দায় শোধের অজুহাতে সরকারের অনুগত একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করে কিছু কোটারি গ্রুপের হাতে সীমিত সুযোগ ধরে রাখবে মাত্র। আর তা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সবচেয়ে বড় বরখেলাপ।

এমনকি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরাও অনেকে এই দাবিগুলোর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে বখতিয়ার আহমেদ লিখেছেন:

‘আমার বাপ বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা।
তার ছয় সন্তানের কারও কোনো দিন কোটা লাগে নাই।
কেউ কখনো কোথাও কোটায় আবেদন করেনি।
কোটা তাদের সন্তানদেরও লাগবে না।
তোলেন এই কোঠারিতন্ত্র।
এক্ষুনি।’

তাই আমরা আশা রাখি, এ দেশের সংগ্রামী তরুণদের প্রাণের দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে স্বাধীনতার প্রতি, শহীদদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কোটাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমিত করে মেধাভিত্তিক প্রশাসন ও সাম্যভিত্তিক উন্মুক্ত সুযোগ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সরকার উদ্যোগী হবে এবং আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে। ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাঁদের ওপরে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা, গুলি ও নির্যাতনের বিচার করবে।

  • জিয়া হাসান: লেখক ও উন্নয়নকর্মী।


এমন বিক্ষোভ বাংলাদেশ বহুদিন দেখেনি


সাজেদুল হক ও শুভ্র দেব 


বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছে এখানে। বহু ইতিহাস। বেশিরভাগই গৌরবের। কলঙ্ক যে একেবারে নেই তা নয়। জ্ঞানে-গরিমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো দুনিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উপরের দিকে ছিল না। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এমন নজির আর কোথাও নেই।
বুধবার।
বেলা ১১টা। 
শাহবাগ। 
পৌঁছে দেখা গেল অল্প কিছু পুলিশ। পুলিশের দমন-পীড়নের অল্প কিছু বাহনও দেখা গেল। শাহবাগ থানা পেরুতেই দেখা মেলে বিরল এক দৃশ্যের। একটি মিছিল। শুরুতেই কেবল ছাত্রী। ধারণা করেছিলাম মিছিলটি বোধ হয় শুধু নারী শিক্ষার্থীদেরই। বেশ কিছুক্ষণ পর বিভ্রম ভাঙে। যখন মিছিলের ছেলে শিক্ষার্থীদের অংশটিও চোখে পড়ে। মিছিল চলছে আর চলছে। এর যেন কোনো শেষ নেই। হাজার হাজার শিক্ষার্থী। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ক্যাম্পাস। কোটা-সংস্কার, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধেও তারা নানা স্লোগান দেন। ক্যাম্পাসের ভেতরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা গেল এ আন্দোলনের প্রতি একাত্ম ঘোষণা করতে। এরই মধ্যে অনেক আন্দোলনকারী জড়ো হতে থাকেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। ঘণ্টা দেড়েক পর ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি যখন রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয় তখন পুরো এলাকা পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। 

এই দৃশ্য শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজু ভাস্কর্যের নয়। পুরো বাংলাদেশই যোগ দিয়েছে এ নজিরবিহীন বিক্ষোভে। দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকায় চলছে বিক্ষোভ। কোটা সংস্কারের ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত চলবে এ আন্দোলন। 

না, এটা কোন সেলিব্রেটি শো নয়। এখানে কোন লাল-নীল-হলুদ নায়ক-নায়িকা যোগ দেননি। রাজনীতিবিদরা এখানে আসতে প্রতিযোগিতা করেননি। টিভি মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচার নেই। শুরুতে টিয়ারশেল আর বুলেট মোকাবিলা করতে হয়েছে। রক্ত ঝরেছে অনেক। নারী শিক্ষার্থীদেরও রক্ত ঝরানো হয়েছে। কোনো ভবন থেকে এদের জন্য কোনো খাদ্য আসেনি।

তারপরও তরুণরা অপ্রতিরোধ্য। তারুণ্যের এ স্রোত রোখার সাধ্য কারো নেই। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য। 


ভিসির বাড়ি শিক্ষার্থীর রক্তের চেয়ে বেশি নয়

গোলাম মোর্তুজা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাপ্তাহিত পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, চারুকলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। রাজু ভাস্কর্য- টিএসসি এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে? শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য তেমনই। তিনি একজন শিক্ষক, সত্য- অসত্য বলে মন্তব্য করতে চাই না। তাদের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলেন, তারা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার মতো দাগ কেটে এলাকা নির্ধারণ করে ঘুমিয়ে থাকলেন। অতঃপর জেগে উঠে বললেন ‘বাড়ি কেন ভাঙল’? যেন এর আগে- পরে কিছু ঘটেনি। শিক্ষকরা ভাবছেন দেশের সব মানুষ তাদের মতো করে, তাদের চোখ দিয়েই সব কিছু দেখছেন। এত যৌক্তিক দাবি, এত স্থুল কূটচালে বিভ্রান্ত করা যাবে না। নিজেদের হাস্যকর হিসেবে পরিচিত বা উপস্থাপন করা যাবে। নিজেদেরকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে শিক্ষকরা ইতিমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছেন। ধারণা করছি সমস্ত লজ্জা- নৈতিকতাকে বহু দূরে সরিয়ে রেখে, তারা তা অব্যাহতই রাখবেন।

ছাত্রলীগ নেতা- ক্যাডার যারা এখনও ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে আতঙ্ক তৈরি করছেন, ‘আমরাও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আছি’– অচিরেই একথা বলতে বাধ্য হবেন। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের সময় যেভাবে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর যদি আক্রমণ- নিপীড়ন অব্যাহত রাখার নীতিতেই থাকেন, প্রতিরোধের মুখে পতন অনিবার্য। শিক্ষা নেওয়ার জন্যে সুফিয়া কামাল হল দৃষ্টান্ত হতে পারে।

রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের জন্যে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচিতে কিছু উল্লেখ নেই। শুধু আহতের সু-চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। রাবার বুলেট, টিয়ারসেল, জলকামান এবং লাঠিপেটা করে কয়েক’শ ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতবিক্ষত করা হলো, শিক্ষক সমিতি বা শিক্ষকদের কেউ তাদের রক্ষায় এগিয়ে এলেন না। ভিসি ঘুমাচ্ছিলেন। প্রক্টোর একবার টিএসসিতে এসে ছাত্রীদের হলে ফেরার জন্যে ধমক দিয়ে গিয়েছিলেন। আহত-রক্তাক্ত হয়ে যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যালে গেছেন, কোনও শিক্ষক তাদের খোঁজ নেননি, দেখতে যাননি। আহত রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল থেকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন যখন সব কিছু পাশ কাটিয়ে ‘ভিসির বাড়ি’ হয়ে উঠেছে প্রধান বিষয়, তখন বোঝা যায় গভীর পরিকল্পনা থেকেই হয়ত ভিসির বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

শিক্ষকসহ সবারই মনে রাখা দরকার, ভিসির বাড়ি যত সম্মান শ্রদ্ধার হোক, যত ঐতিহ্যবাহী হোক- তার মূল্য বা গুরুত্ব একজন মানুষ বা একজন শিক্ষার্থীর রক্তের চেয়ে বেশি নয়। রক্ত চাপা দিয়ে, আসবাবপত্রের জন্যে কান্না বড় বেশি বেমানান। ভিসির স্ত্রী-পরিজনের সেই রাতের আতঙ্কটা অনুধাবন করতে পারছি। শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক তার চেয়েও কতটা ভয়াবহ ছিল, তাও অনুধাবন করতে হবে শিক্ষকদের।

বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ- বিচার শাস্তি হতে হবে। তবে বাড়ি ভাঙচুর ইস্যু দিয়ে ন্যায্য দাবি- শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো বর্বর নিপীড়কদের আড়াল করা যাবে না।

  •  Courtesy: আমাদের সময়.কম/Apr 11, 2018

উত্তাল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মহাসড়ক অবরোধে আন্দোলনকারীরা


চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলন শুরু করেছেন। বুধবার সকাল ১০টার আগে থেকেই তারা ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, শাহজালাল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করা শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেড় কিলোমিটার জুড়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন এবং রবিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ জানজট।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় বুধবারের কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। এ অনুযায়ী বুধবার সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে আবারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সড়ক অবরোধ করা হবে।

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তা অবরোধ করেছে। ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থীরা ঢাকা পান্থ পথ সকাল ১০টা থেকে অবরোধ করে রেখেছে। এতে ওই এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

আন্দোলন করা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী তৌকির আহমেদ বলেন, আমরা সকাল ১০টা থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছি। পুলিশ আমাদের চারপাশে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আমরা তাতে ভয় পাই না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।

অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছে, মঙ্গলবারের মতো বুধবারও সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত সড়কে নেমে আন্দোলন করবেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

  • Courtesy: Banikbarta / Apr 11, 2018

বেগম জিয়ার পক্ষে লড়বেন ৩০০ আইনজীবী



জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা বাড়ানোর জন্য জারি করা রুলের উপর শুনানি করতে খালেদা জিয়ার পক্ষে লড়তে ওকালত নামায় স্বাক্ষর করেছেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের স্বাক্ষরের পর তা গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

তিনি বলেন, সিনিয়র আইনজীবীসহ অসংখ্যা আইনজীবী রয়েছেন বেগম খালদা জিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য। তাদের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আইনজীবীদের তালিকা সম্বলিত ওকালতনামা আমি নিজে জমা দিয়েছি। এখন রুলের শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অংশ নেবেন ওকালত নামায় স্বাক্ষরকারী আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির জন্য হাইকোর্ট ইতোপূর্বে যে রুল জারি করেছিলেন তা আইনগতভাবে মোকাবেলা করার জন্য আইনজীবীরা প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ওকালত নামা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে মামলায় লড়বেন অন্য আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক আইনমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদআহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মাদ আলী, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুর রেজাক খান, সাবেক মন্ত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির, সাবেক মন্ত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধরী।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈয়মুর আলম খন্দকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও দলের যুগ্ম-মহাসিচব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বারের সাবেক সম্পাদক ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আকতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান, মির্জা আল মাহমুদ জাকির হোসেন ভুঁঞাসহ প্রায় তিন শতাধিক আইনজীবী।

খালেদা জিয়ার দণ্ড থেকে খালাস পাওয়ার জন্য করা আপিল আবেদনের শুনানিতে ৫৩ জন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে প্রধান করে করা আইনজীবী প্যানেলের ৫৩ সদস্যই ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছিলেন।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

  • Courtesy: আমাদের সময়.কম/ Apr 11, 2018

পুলিশ বাহিনীর সাথে ছাত্রলীগ - জাফর ইকবাল


শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, যখন সরকার কোন কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সরকারের পুলিশ বাহিনীর সাথে ছাত্রলীগও এসে পড়ে। ছাত্রলীগ যারা করে তারাওতো ছাত্র, তারা পড়াশোনা করবে। তারা যেন কোন ভুল না করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যেন কোন সংঘাত সৃষ্টি না হয়।

বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে সাংবাদিকদের সারাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, তরুণ প্রজন্মের উপর আমার আস্থা রয়েছে। ৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমি আশা করব তারা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি আরো বলেন, ৫৬ শতাংশ কোটা যে হিসেবে অনেক বেশি। একসময় হয়ত এটার প্রয়োজন ছিল, তবে তা এখন একটা সঙ্গত সংখ্যায় নামিয়ে আনা দরকার। কোটা সংস্কারের কথা বলে প্রচ্ছন্ন ভাবে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বলছে। এসময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যেন কোনভাবেই অশ্রদ্ধা না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখার আহবান জানান।
  • Courtesy: আমাদের সময়.কম / Apr 11, 2018

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়নে বিতর্কের অবকাশ নেই

অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ


বাংলাদেশের সংবিধানে ১২৬ অনুচ্ছেদে লিখিত আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।’ সংবিধানের চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগের প্রথম পরিচ্ছেদ হল রাষ্ট্রপতি, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা, তৃতীয় পরিচ্ছেদে স্থানীয় শাসন, চতুর্থ পরিচ্ছেদে প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ, পঞ্চম পরিচ্ছেদে এটর্নি জেনারেল যা সংবিধানের ৪৮-৬৪ অনুচ্ছেদে বিধৃত আছে।

নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। অনুরূপভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা প্রদান সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। বিশেষ করে সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যেরূপ কর্মচারী প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি বরাবর অনুরোধ করলে তিনি তাঁর ব্যবস্থা করবেন। এবং নির্বাচনকালীন সময়ে উক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকবেন।

সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে, সেনাবাহিনী নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের আছে কি না? সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “শৃঙ্খলা বাহিনীর অর্থ (ক) স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী। (খ) পুলিশ বাহিনী। (গ) আইনের দ্বারা এই সংজ্ঞার অর্থের অন্তর্গত বলে ঘোষিত যে কোন শৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি।” কিন্তু আর, পি, ও-এর ২ অনুচ্ছেদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ান, র‌্যাব, আনসার, ব্যাটালিয়ান আনসার, বর্ডার গার্ড, কোস্টাল গার্ডকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখ নেই। তাহলে নির্বাচন কমিশন কীভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারেন?

শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুসারে যেমান নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষ করে শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাইলে নির্বাহী বিভাগ সহায়তা প্রদান করে থাকে সেক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি সেনাবাহিনী মোতায়েন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত দিক সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন তার অভিপ্রায় নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে গোচরীভূত করবেন এবং রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জ্ঞাপন করবেন। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবেন এটিই বিধেয়।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন।


পরিচিতি : সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ও খসড়া সংবিধান প্রণেতা/মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
  • Courtesy: আমাদের সময়.কম /Apr 11, 2018



আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সমর্থন


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

বুধবার সকালে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবির প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। শিক্ষক সমিতি মনে করে, এই কোটা সংস্কার এখন যুগের চাহিদা। সে অনুযায়ী কোটা সংস্কার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে ঘোষণা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়াও আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনরূপ পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্যও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

  • Courtesy: Banikbarta/ April 11, 2018