অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ
বাংলাদেশের সংবিধানে ১২৬ অনুচ্ছেদে লিখিত আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।’ সংবিধানের চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগের প্রথম পরিচ্ছেদ হল রাষ্ট্রপতি, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা, তৃতীয় পরিচ্ছেদে স্থানীয় শাসন, চতুর্থ পরিচ্ছেদে প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ, পঞ্চম পরিচ্ছেদে এটর্নি জেনারেল যা সংবিধানের ৪৮-৬৪ অনুচ্ছেদে বিধৃত আছে।
নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। অনুরূপভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা প্রদান সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। বিশেষ করে সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যেরূপ কর্মচারী প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি বরাবর অনুরোধ করলে তিনি তাঁর ব্যবস্থা করবেন। এবং নির্বাচনকালীন সময়ে উক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকবেন।
সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে, সেনাবাহিনী নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের আছে কি না? সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “শৃঙ্খলা বাহিনীর অর্থ (ক) স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী। (খ) পুলিশ বাহিনী। (গ) আইনের দ্বারা এই সংজ্ঞার অর্থের অন্তর্গত বলে ঘোষিত যে কোন শৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি।” কিন্তু আর, পি, ও-এর ২ অনুচ্ছেদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ান, র্যাব, আনসার, ব্যাটালিয়ান আনসার, বর্ডার গার্ড, কোস্টাল গার্ডকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখ নেই। তাহলে নির্বাচন কমিশন কীভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারেন?
শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুসারে যেমান নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষ করে শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসন ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাইলে নির্বাহী বিভাগ সহায়তা প্রদান করে থাকে সেক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি সেনাবাহিনী মোতায়েন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত দিক সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন তার অভিপ্রায় নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে গোচরীভূত করবেন এবং রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জ্ঞাপন করবেন। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেবেন এটিই বিধেয়।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন।
পরিচিতি : সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ও খসড়া সংবিধান প্রণেতা/মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
- Courtesy: আমাদের সময়.কম /Apr 11, 2018
No comments:
Post a Comment