শামসুল আলম
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য কিছু অংশ রিজার্ভ রেখে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় দেশের অবশিষ্ট বৃহত্তর জনসমাজের সাথে সমান অগ্রগর করার জন্য। এটি সাময়িক মেয়াদি ব্যবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর বেসামরিক চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৬% কোটা আছে, বাকী ৪৪% নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। ৫৬% ভাগ কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা সন্তান বা নাতিপুতির জন্য ৩০%, জেলা কোটা ১০%, মহিলা কোটা ১০%, উপজাতি কোটা ৫%, প্রতিবন্ধি কোটা ১%। এছাড়া নন-ক্যাডার ও নিম্নপদস্থ পদে আরও বিভিন্ন ধরণের কোটা আছে। তবে সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগে কোনো কোটার অস্তিত্ব নেই ।
কেমন করে কোটা এলো
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগদানের জন্য সরকার একটি অস্থায়ী নিয়োগ বিধিমালা করে। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭২ মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাপন বিভাগের সচিব এম এম জামান স্বাক্ষরিত ইস্ট/আরআই/আর-৭৩/৭২-১০৯(৫০০) নম্বর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল জেলার নাগরিকদের নিয়োগলাভের সুযোগদানের নিমিত্তে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে মেধা কোটা হবে ২০%, বাকী ৮০% জেলার মধ্যে বন্টন করা হবে। এর মধ্যে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, মুক্তিযুদ্ধে নিগৃহীত মহিলাদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
১৯৭৬ সালের ৮ এপ্রিল পরিপত্র নং ইডি/আরআই/আর-৫৬/৭৫/৫২ মূলে মেধা কোটা ২০% থেকে ৪০% করা হয়। মহিলা কোটা ১০% করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি এতে।
২৮-৭-১৯৮৫ ইং তারিখে এমইআর/আর-১/এস-১৩/৮৪-১৪৯(২৫০) স্মারকমূলে ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদের মেধাভিত্তিক কোটা বর্তমানে প্রচলিত ৪০% হইতে ৪৫% উন্নীত করা হয়। জেলা ভিত্তিক ৫৫% কোটার মধ্য হইতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০%, মহিলাদের ১০%, এবং উপ-জাতীদের ৫% পদ রাখা হয়।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেখা যায়, আবেদনকারীদের বয়স শিথিল করেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আর লোক পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ১৯৯৭ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে বিধান করা হয়- মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা সন্তানদের দিয়ে পূরণ করা হবে (সম(বিধি-১)এস-৮/৯৫(অংশ-২-৫৬(৫০০) তারিখ: ১৭/০৩/১৯৯৭)। পরে বিএনপি সরকারের সময় বিধানটির ব্যাখ্যা করে বলা হয়- ‘কোনো কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই শূণ্য পদ মেধাকোটা দিয়ে পূরণ করা যাইবে’ (সম(বিধি-১)এস-১৪/৯৯-২৮৪, তারিখ ০৪/০৯/২০০২)। এরপরে যখন সন্তানদেরও চাকরি বাকী নাই, এবার মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০% কোটা পূরণ করতে বর্তমান আওয়ামলীগ সরকার এই কোটা নাতি পুতি পর্যন্ত প্রসারিত করে।
সংবিধান কি বলে?
১৯৭২ সালের অস্থায়ী নিয়োগ নীতিমালায় যখন কোটা চালু করা হয়, তখন দেশে কোনো সংবিধান ছিল না। এরপর বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২। এই সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয় ‘১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে; ২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেইক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’ ২৮ অনুচ্ছেদে নারী, শিশু, বা অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে বাধা না থাকার কথা বলা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২৮ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য বিশেষ বিধান করতে অনাপত্তির কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় অনগ্রসর জেলা কোটা, মহিলা, উপজাতিদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। জেলা কোটা সম্পর্কে ১৯৯২ সালের ৩ মে সংস্থাপন সচিব হাসিনুর রহমান সাক্ষরিত সম/বিধি-১/এস-১৫/৯২-১০২(১৫০) নম্বর পরিপত্রে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর জেলার নাগরিকগণকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের বিষয়ে সমতাভিত্তিক সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী তাহাদের অনুকূলে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্যেই ৫-৯-৭২ ইং তারিখের স্মারকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কোটাভিত্তিক পদ সংরক্ষণের নীতিমালা জারি করা হয়। ইহা অনস্বীকার্য যে জেলাকোটা বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি কোন্ ক্যাটাগরিতে আসে? এটা কি অনগ্রসর শ্রেণী? এসংক্রান্ত কোনো সরকারী আদেশ বা বিধি অদ্যবধি জারী নেই। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কোটা বা সুবিধা দেয়ার কথা ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও বলা হয়নি। কিন্তু গত ৪৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে- তার কোনো ব্যাখ্যা সরকার দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি অনগ্রসর শ্রেণী কি না- তা যাচাই করতে একটি পরিসংখ্যান দেখা যাক- মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ১ লাখ ৬০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০% কোটা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ০.০১% নাগরিকদের জন্য অনন্তকাল অবধি ৩০% কোটা! তাহলে এরা কি অনগ্রসর শ্রেণীতে পড়ে? সংবিধান বা কোনো আইন বা বিধিতে কি ৩০ ভাগ কোটা সমর্থন করে? বরং এটি ২৯ অনুচ্ছেদের সকল নাগরিকদের সমান সুযোগ লাভের অধিকার খর্ব করে। ফলে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিকও বটে। সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তান ও নাতিপুতিরা কোনো অনগ্রসর শ্রেনীর সংজ্ঞায় পড়ে না। অার কোটা কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও হতে পারে না। যোগ্য নাগরিকদের সাংবধিানিক সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা কতদূর ন্যায়সঙ্গত? এটি স্পষ্বটত অবিচার। এটি সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংবিধানে কোনো কোটা বা আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও প্রায়োগিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনটি সুবিধা বহাল ছিল:
১. তাদের জন্য ৩০% পদ রিজার্ভ রাখা;
২. ঢোকার সময় তাদের বয়স ২/৩ বছর বেশি পর্যন্ত সুযোগ দেয়া;
৩. চাকরির অবসরও ২ বছর পরে হওয়া।
মূলত এটি করা হয়েছিল যুদ্ধের কারণে লেখাপড়ার ক্ষতি এবং চাকরিতে ঢুকতে না পারার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে। কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়- একটা কিছু শুরু হলে আর কেউ থামানোর সাহস করে না। দীর্ঘকাল ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে একটি অসাংবিধানিক নিবর্তন চাপিয়ে দেওয়া হলো, কেবল টার্মটা স্পর্শকাতর ছিল বিধায় কেউ এটি বন্ধ করার চেষ্টাও করেনি। কিভাবে, কোনযুক্তিতে ট্যাবু টিকে থাকে। এটি মূলত মতলবী রাজনীতিকদের কাজ।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার সাথে চলে আসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে নানা জাল জালিয়াতি, ভুয়া মুজিবনগর সনদ, মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মানোদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ থাকার নানা কেলেঙ্কারির কথা, এমনকি সরকারের ৬ জন সচিব জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সুবিধা নিয়েছেন, তা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া নিয়োগের সময় এতদিন ধরে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি ছিল পরীক্ষা শেষে চুড়ান্ত নিয়োগের সময়; অর্থাৎ প্রিলিমিনারী, লিখিত, এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে যখন চাকরির জন্য বিবেচনা করা হবে, তখন কোটা ভাগ হতো। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ৩৪তম বিসিএস থেকে প্রিলিমিনারী পরীক্ষার আগেই কোটা ভাগ করে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০০ পদের বিপরীতে ১ লাখ প্রার্থী থাকে, তবে আগের সিস্টেমে সব পরীক্ষা শেষ করে মেধা তালিকা তৈরী করে তারপরে কোটা ভাগ হতো। কিন্তু এখন আর সেটা করা হয়না, পরীক্ষা শুরুর আগেই ভাগ করা হয় পদ। বিশেষ কোটায় শূণ্য পদ কতটা আর প্রার্থী কতটা, তারপরে তাদের জন্য পদপূরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। নিয়োগ শেষে দেখা গেছে, মেধা তালিকার ২২০তম ব্যক্তি চাকরি পায়নি কোটাভূক্ত নয় বলে, অথচ কোটার সুবিধা নিয়ে ৫৬৩২তম ব্যক্তিও পুলিশ ক্যাডারে এএসপির চাকরি পেয়ে বসে আছেন! এভাবে একটি মেধাহীন সমাজব্যবস্থা তৈরির নানা ব্যবস্থা চলমান। যার বিরুদ্ধে কোন চ্যালেঞ্জ অাসেনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর অার এর অনৈতিক সুবিধা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকেন বলে।
সংবিধান প্রণয়নের আগে ১৯৭২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর প্রণীত ইনন্টারিম রিক্রুটমেন্ট পলিসিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়। এটি অস্থায়ী বা স্বল্পকালীন একটি ব্যবস্থা। ১৯৭৩ সালে পিএসসির মাধ্যমে ৩৫০টি পদে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগের পর এই অস্থায়ী ব্যবস্থাটি বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশন (রশিদ কমিশন) সরকারি নিয়োগে প্রচলিত কোটাসমূহ ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। অথচ ১৯৯৭ সালেই এই কোটাব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং পরে এটি বংশপরম্পরা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। কেবল তাই নয়, ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস অনুষ্ঠিত করে কয়েক হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যার মানে দাড়ায়, মুক্তিযোদ্ধা গেলো, তাদের সন্তানরাও গেলো, এবারে আসছে নাতি পুতি কোটা! এইরূপ অভিজাত বংশের জন্য পরম্পরায় কিয়ামত পর্যন্ত ৩০% কোটার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি সংবিধান বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমর্থন করে?
কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে সুধীজন অভিমত
১৯৯১ সনের পাবলিক সার্ভিস কমিশেনের বার্ষিক প্রতিবেদনে কোটা পদ্ধতি পূনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই এটি ৩০% থেকে কমিয়ে ৫% করার সুপারিশ করে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক কেবিনেট সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডঃ আকবর আলি খান ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় ৫৫% কোটাকে অমানবিক উল্লেখ করে স্পষ্টভাবে বলেন, কোটার সুযোগ মেধার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত নয়। এতে করে জনমনে এই ধারণা হতে পারে যে, কম মেধাবীরা প্রশাসনে নিয়োগ পাচ্ছে, এবং প্রশাসনের মান নীচের দিকে নামছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতি সরলীকরন করা প্রয়োজন।
পিএসসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এস এম ফায়েজ বলেন, ‘সরকারী চাকুরীতে মেধাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা, মেধাবীরাই একসময় দেশের নেতৃত্ব দেবে। মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে আসলে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে। যেভাবেই হোক না কেন, মেধার কোন বিকল্প নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এদেশে এক ধরনের গোষ্ঠী আছে যারা চায় যে সরকারী নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে কোটা থাকুক। আমি মনে করি না যে সব ধরনের কোটা এখন দরকার আছে। কিছু কোটা থাকবে, কিন্তু সেসব কোটার সময় উল্লেখ করা যেতে পারে, যে তা কত বছর বহাল থাকবে।
প্রফেসর মুজাফফর আহমদের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং জেলা কোটা রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এগুলো বাতিল করা দরকার। অন্তত ৭৫% মেধাভিত্তিক করে, বাকী অংশ লিঙ্গ, জাতিগত, ধর্মীয় কোটায় বিভক্ত করা যেতে পারে।
এতে করে দেখা যায় যে, প্রায় সকল শিক্ষাবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা এই প্রসারিত কোটার বিরোধী। তারা কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ বা সংস্কার চান।
লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল মুলত পশ্চিম পাকিস্তানীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে। একটি সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্খা সৃষ্টিই ছিলো স্বাধীনতার মূল মন্ত্র। সেখানে কোনো একটি বিশেষ গ্রুপকে বার বার (যারা মোট জনসংখ্যার ০.০১% শতাংশ) বংশানুক্রমে দেশের এক তৃতীয়াংশ সুযোগ সুবিধা অনন্তকাল যাবৎ দেয়া হবে, আর বাদবাকী ৯৯.৯৯% মানুষের জন্য ৭০ ভাগ- এটা কি স্বাধীনতার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায়?
কোটা সংস্কার আন্দোলনে 'মেধাবীরা মুক্তি পাক' বুকে পিঠে লিখে অংশগ্রহণকারী। |
বর্তমানে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের জন্য দেশজুড়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিনাভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক বাদানুবাদ হচ্ছে। অনেকেই সন্দেহ করছেন, এটি করা সম্ভব হবে না। সংসদে আইন পাশ করতে হবে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বর্তমানে চলমান কোটার বিষয়ে কোনো আইন বা বিধি নাই। কেবল প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে চলছে গত ৪৭ বছর। এমনকি কোটা নামক বস্তুর কোনো অস্তিত্ব সংবিধানে নাই। সংবিধানে কেবল বলা হয়েছে “নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন” করা যাইবে। করা ম্যান্ডেটরি নয়। রাষ্ট্র বা সরকার চাইলে কোটা, বিধান, সুবিধা, বা শিথিলতা দিতে প্রয়োজণীয় আইন করতে পারে। কিন্তু অদ্যাবধি এরূপ কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। তাই সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নির্বাহী আদেশ দিয়েই বর্তমান কোটা সংস্কার বা বাতিল করতে পারবে।
- লেখক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
No comments:
Post a Comment