Search

Saturday, April 21, 2018

গণতন্ত্রের দেশে স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে ওডিআই


(বিএনপি কমিউনিকেশন) —  জানুয়ারি ৫, ২০১৪, এর বিনাভোটে বনে যাওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি লন্ডন সফর করছেন। লন্ডনে তাঁর সফরসূচির মধ্যে ছিল সেখানকার ওভারসিজ ডি‌ভেলাপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ওডিআই-ODI)-এ নির্ধারিত এক আলোচনা ও সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ। এ উপলক্ষে মিডিয়ার অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখানেও  বাংলাদেশে‌র  ড্রাকোনিয়ান প্রেস সেন্সরশিপ আইন কার্যত বলবৎ করা হয়। আর সম্ভবত বাংলাদেশ সরকারকে তোয়াজ করতে ওডিআই-ও সেই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে বাধা দিয়েছে।

এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই ওডিআই নামক সংস্থা যা স্বাধীন নিরপেক্ষ হওয়ার দাবিদার তারা কেমন করে গণতন্ত্রের লালনভূমি ব্রিটেন তথা লন্ডনেও  বাংলাদেশের কুখ্যাত ও ড্রাকোনিয়ান তথ্য বিধিনিষেধ বলবতৎ করতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে পারে? নিশ্চয়ই ওডিআই’র এই কথা অজানা নয় যে জার্মান রিসার্চ সংস্থা 'বার্টলসম্যান স্টিফটুং' সম্প্রতি বাংলাদেশকে বিশ্বের নতুন পাঁচ 'স্বৈরতান্ত্রিক দেশের একটি বলে শনাক্ত করেছে। ব্রিটেনের সুবিখ্যাত গণযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান চ্যানেল ফোর-এর সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত  বিষয়ে শেখ হসিনাকে প্রশ্ন করার জন্য। কিন্তু ওডিআই প্রতিনিধি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিটিশ সাংবাদিকের অড প্রশ্ন করা থেকে হেফাজত করার দায়িত্ব পালন করেছেন যা তাদের, বিশেষ করে, তাদের মতো মর্যাদাসম্পন্ন সংস্থার কোন ‘বিশেষ স্বার্থে এটা করা হয়েছে, এই প্রশ্ন উঠতে পারে। 

এক্ষেত্রে ওডিআই হয়তো আগাম ‘অবলাইজ’ করে থাকতে পারে কিন্ত এ ঘটনা কেন? যেমন, বিশিষ্ট ব্লগার ও সাংবাদিক মি. ডেভিড বার্গম্যান (David Bergman) এ অনুষ্ঠানে থাকার জন্য সপ্তাহখানেক আগেই আবেদন করেছিলেন ওডিআই কর্তৃপক্ষের কাছে। এ অনুষ্ঠানে আয়োজক বেন ট্রিটন (Ben Tritton) তাঁকে স্বাগত জানিয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ওডিআই-তে আপনাকে স্বাগত  জানাতে পারলে আমরা আনন্দিত হব।’

কিন্তু তারপরই ঘটে স্বর্গ থেকে পতন।


সোমবার সকালে তাদের একটা ইমেইল পেয়ে আমি হতভম্ব হলাম। অনুষ্ঠানটির তখন মাত্র একদিন বাকি। বলা হলো আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারছি না এই অনুষ্ঠানে । সাবস্ক্রাইবার এতো বেশি যে আমরা সামলাতে পারছি না। দুঃখিত। এজন্য আমরা আপনাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে পারছি না।’

আয়োজকদের কাছে বার্গম্যান জানতে চান, "আচ্ছা, আপনারা কি দয়া করে বলতে পারবেন আমাদের কারা ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন বা পারবেন না? আমন্ত্রিতদের তালিকা যাচাই করতে বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছেন কি?" এ প্রশ্নে ওডিআই থেকেছে লা - জবাব।

পরের দিন বার্গম্যান  আবার মিঃ বেন ট্রিটনকে টেলিফোন করে জানতে চান কেন তাঁকে ডিজইনভাইট  করা হলো। মিনিট খানেক চুপ থেকে তিনি যা বললেন তার নিগলিতার্থ হলো তার পাঠানো সেই ইমেইলে কপচানো একই পুরনো বুলি! বার্গম্যান আবার জানতে চাইলেন  বাংলাদেশ সরকারকে ওডিআই আমন্ত্রিতদের তালিকা কাটছাট করার অনুমতি দিয়েছে কী না। তিনি আমতা আমতা করে সরাসরি হাঁ/না জবাব এড়িয়ে বললেন , বলছিলাম কি ,আমি এসব নিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না। ’ এ থেকে বুঝতে কোনোই অসুবিধা হয় না ওডিআই-এর ডক্টর্স ডাইলেমাটা (Doctor's Dilemma) কি? 

বার্গম্যান এই বিষয়ে লিখেছেন, ওরা যদি বাংলাদেশের সরকারি লোকদেরকে কাঁচি চালানোর অনুমতি নাই দিত তাহলে নিশ্চয় করেই বলা যায়, তারা আমাকে সরাসরি ‘না’ করতে পারতো না।


বাংলাদেশে মিডিয়া সেন্সরশিপের বাঁধন-কষণ বেড়েই চলেছে। সরকার নিজ দেশে কোনও কোনও স্বাধীন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের সরকারি সংবাদ সম্মেলনেই আসতে দেয় না। ডিজিএফআই  দুটি সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপণ না দেবার জন্য বিজ্ঞাপণদাতা কোম্পানিগুলিকে আদেশ দিয়েছে। ফলে এই খাতে আয় ঐ দুই সংবাদপত্রের জন্য তিনভাগের দুভাগই খতম। হাসিনা সংবাদপত্রের এক সম্পাদককে নিন্দা জানিয়েছেন ‘জাতি বিধ্বংসী’ সংবাদ কাহিনী ছাপানোর জন্য। সরকারি দল একই সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডজনকে ডজন মামলা ঠুকে দিয়েছেন, ডজনকে ডজন সাংবাদিক ও সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অস্পষ্ট ও বিতর্কিত আইসিটি আইনের আওতায়। সেন্সরশিপ সরকারি তো আছেই, আছে অনাহুত সেল্ফ সেন্সরশিপও। এই শেষোক্ত বিষয় সকলের জানা । এখানে ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। বিশেষ করে, শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম টিভিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বিশেষ ভাবে। কিন্তু এসবে জড়াবে কেন ওডিআই? কেন বাংলাদশ সরকারের লোককে অনুমতি দেবে কে অনুষ্ঠানে আসতে পারবে আর না পারবে সেটা ঠিক করার?

একথা না বললেই নয়, ওডিআই তাৎপর্যপূর্ণভাবে সবিশেষ যত্ন নিয়েছে, সব কিছু করেছে,  চ্যানেল ফোর যাতে শেখ হসিনাকে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রশ্নে কঠিন/অড প্রশ্ন না করতে পারে। এসব প্রশ্নই হয়ত তুলতে আসতে চেয়েছিলেন ডেভিড বার্গম্যান।  হয়তো গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির তুখোড় নেতা ইলিয়াস আলীর পুত্র আবরার ইলিয়াস, গুম হয়ে যাওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এর আত্নীয় রাসেল শাহরিয়ার, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনারত স্বজন হারা একজনের যাদের সাক্ষাতকার নিয়েছে চ্যানেল ফোর, তাঁদের কথা তুলে ধরতে, বিশ্বসমাজে।

চ্যানেল ফোর এর সাথে বাংলাদেশে স্বজনহারাদের কয়েকজন তুলে ধরেছেন তাঁদের স্বজনকে কেমন করে গুম করা হয়েছে, বিনা বিচারে বন্দি রাখা হয়েছে, কেমন করে হত্যা করা হয়েছে, কেমন করে তাদেরকে খতম করে দেওয়া হয়েছে।

অথচ সেকথার জবাব শেখ হাসিনার কাছ থেকে জানার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে  ওডিআই। কেন?

No comments:

Post a Comment