Search

Saturday, April 28, 2018

যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে রাস্তায় মেয়েটি একাই



ভরদুপুরে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যানবাহন আসা-যাওয়া করছে। সেই দুই রাস্তার মধ্যে তপ্তদুপুরে আইল্যান্ডে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রী। সাদা প্ল্যাকার্ডে কালো অক্ষরে লেখা “এই অসুস্থ সমাজটাকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমাদের সবার। এগিয়ে আসুন যেন নিরাপদ থাকে প্রত্যেকটি ঘরের নারী। দিন শেষে যেন কোনো মেয়েকে হতে না হয় ‘ধর্ষিতা’। বন্ধ হোক গণপরিবহনে ‘যৌন হয়রানি’।’’

ওই প্ল্যাকার্ডের নিচে লেখা হেল্প লাইন ৯৯৯। 

যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে শুক্রবারে দুপুরে তপ্তরোদে রাজধানীর শ্যামলীতে সড়কের আইল্যান্ডের ওপরের লেখা সংবলিত একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিটি কলেজের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা। রাস্তা পারাপারের সময় অনেকই দেখছেন প্ল্যাকার্ড হাতে তার এই মৌন প্রতিবাদ।

শুধু কানিজ ফাতেমাই নন, গণপরিবহনে নারীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠছেন নারীরা। তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। আবার কেউ কেউ একা দাঁড়িয়েছেন রাস্তায়।

কানিজ ফাতেমা জানান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই রাস্তায় তিনি। তিনি বলেন, আজই প্রথম প্রতিবাদ করছি এমন নয়। যখনই সুযোগ হয় তখনই রাস্তায়, বাসে পোস্টার নিয়ে দাঁড়াই। যাতে মানুষ এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আজকে মালিবাগ থেকে সাভার যাচ্ছি, পথে আসাদগেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন শ্যামলীতে দাঁড়ালাম। বাসের ভেতরেও কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকই বিষয়টা দেখে প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ নিজে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকে বিদ্রুপের চোখে দেখেছেন। কেউবা প্রশ্ন করেছেন, আমি যৌন নিপীড়নের কী বুঝি।

কেন এভাবে একা দাঁড়ানো প্রশ্নে কানিজ ফাতেমা বলেন, গণপরিবহনে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা কোনো সুস্থসমাজে হতে পারে না। গণপরিবহনে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তাসহ স্বাধীনভাবে চলাচল নিশ্চিতকরণের দাবি সবার হওয়া উচিত। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবাইকে আহ্বান জানাতে আমার এ উদ্যোগ।

জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল শনিবার তুরাগ পরিবহনে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত উত্তরা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ওই ছাত্রী উত্তর বাড্ডা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। তখন বাসে যাত্রী ছিল সাত-আটজন।

নাটকীয়ভাবে বাস কর্মচারীরা বাস সামনে যাবে বলে যাত্রীদের নামাতে থাকে এবং নতুন কোনো যাত্রী উঠানো বন্ধ রাখে। এ সময় ওই ছাত্রীর সন্দেহ হলে তিনি বাস থেকে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কন্ডাক্টর ছাত্রীর হাত ধরে টানতে শুরু করে। কন্ডাক্টর ও হেলপারের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় লাফিয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। এরপর তিনি অন্য একটি বাসে চড়ে ইউনিভার্সিটিতে চলে আসেন। পরদিন ঘটনার শিকার ছাত্রীর সহপাঠীরা ওই বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টরের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করেন।

  • কার্টেসি — নয়াদিগন্ত/এপ্রিল ২৭, ২০১৮। 


No comments:

Post a Comment