Search

Thursday, April 19, 2018

গ্রাহকের ৩৫ কোটি টাকা পকেটে পুরে বসে আছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ

মামুনুর রশীদ

এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়নি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে মামলার বাধা, আদালতের নিষেধাজ্ঞা। এই পরিস্থিতিতে  ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর ফ্ল্যাট প্রকল্পের আওতায় গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ৩৫ কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

গত বছর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও এলিফ্যান্ট রোডে পরিত্যক্ত ঘোষিত ১০টি প্লটে ২ দশমিক শূন্য ৭ একর জমির ওপর ২৫৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত এই প্লটগুলোর কোনোটিই গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দখলে আসেনি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নিজ অর্থায়নেই তাদের সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু প্রসপেক্টাস (প্রকল্প পরিচিতি) তৈরি কিংবা প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার আগে প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর ফ্ল্যাট প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ডিপিপি ও ফ্ল্যাটের নকশা অনুমোদনের আগেই প্রসপেক্টাস বিক্রি ও জামানত হিসেবে প্রায় ৮৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ নেওয়া হয়েছে। পরে ডিপিপি অনুমোদন না হওয়ার খবর পেয়ে কয়েকজন গ্রাহক জামানতের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি প্রকল্প তো এভাবেই বাস্তবায়ন হয়। ডিপিপি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাবে। এরপরই আমরা টেন্ডারে যাব। সবাইকে বরাদ্দপত্র দিয়ে দেওয়া হবে।’

আর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘জমি অধিগ্রহণের জন্য ডিসি অফিসে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও দ্রুত শুরু হবে।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ধানমন্ডির তিনটি ও মোহাম্মদপুরের একটি প্লট অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে ১০টি প্লটের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেক অনিশ্চয়তার কথা জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চারটি প্লট অধিগ্রহণে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বাইরে সবগুলো প্লটেই মালিকানা নিয়ে মামলা আছে। অথচ জমি অধিগ্রহণের জন্য গ্রাহকের জামানতের টাকাসহ মোট ৮১ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে ডিসি অফিসে।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৭ আগস্ট থেকে দেড় হাজার বর্গফুট, দুই হাজার বর্গফুট ও আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের তিন ক্যাটাগরিতে মোট ২০২টি ফ্ল্যাটের বিপরীতে সাধারণের কাছ থেকে আবেদনপত্র নেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা আর মোহাম্মদপুরে ৫ হাজার ২০০ টাকা। ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাটের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে ৬ লাখ ও মোহাম্মদপুর এলাকার ফ্ল্যাটের জন্য আয়তনভেদে ৪ লাখ ও ৩ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হয়। প্রতিটি ৩ হাজার টাকা করে প্রসপেক্টাস বিক্রি করা হয় প্রায় ১ হাজার ৩০০টি। নির্ধারিত সময় শেষে জামানতসহ আবেদন জমা পড়ে ৮৫০টি। সব মিলিয়ে এ বাবদ সংস্থাটির কাছে জমা পড়ে ৩৫ কোটি টাকার বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সব জটিলতা কাটিয়ে মন্ত্রণালয় যদি প্রকল্প অনুমোদনের সময় জমির দাম ও নির্মাণ ব্যয় নতুন করে নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে সেটা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরেক দফা ঝামেলায় পড়তে হবে।

পরিত্যক্ত ঘোষিত যে ১০টি প্লটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে, তার ৬টির অবস্থান ধানমন্ডিতে। ৩টি মোহাম্মদপুরে ও একটি এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত। প্লটগুলোর আয়তন আট কাঠা থেকে এক বিঘার মধ্যে। প্লটগুলোতে তৈরি ২৫৩টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২০২টি সরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি ৫১টি ফ্ল্যাট সরকারি আবাসন পরিদপ্তরকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।

  • Courtesy: prathom Alo/ Apr 18, 2018

No comments:

Post a Comment