গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, মন্ত্রী মহোদয় যদি জেগে থেকে ঘুমের ভান করেন, তারা না জানার মধ্যেই সব কাহিনী জানেন। সিস্টেম না বদলালে মানুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দুঃখ দুর্দশা দূর হবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেবার মান বাড়াতে জেলা উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা দেওয়ার সময় বাড়াতে হবে।
অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা নিতে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে নানা দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের। নানা ধরনের সংকট আর ভোগান্তির আরেক নাম সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ। যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসকদের সহকারী আর আয়াদের দৌরাত্ন্যে পদে পদে টাকা গুণতে হয় ভুক্তভোগী রোগীদের। চিকিৎসকের দেখা পেতেও অসুস্থ রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিশেষজ্ঞদের মতে সিস্টেম না বদলালে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর হবে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত রোগীর চাপে তারা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক চিকিৎসা কর্মীদের মধ্যেই সেবা দেয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে।
হাড়ভাঙা রোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের বহির্বিভাগের প্রতিদিনের চিত্র হলো সেখানে বিনামূল্যে সব সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও টাকা ছাড়া কোন কিছুই মেলে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
দূর্ঘটনায় হাত-পা ভেঙে বহু কষ্টে ক্র্যাচে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আছে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী। নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি থেকে নামার পরই রোগীদের হাসপাতালের ট্রলি বা হুইল চেয়ার পাওয়ার কথা।
ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করাতে আসা এক নারী বলেন, ‘বাইরে থেকে আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসেছি। ট্রলি চেয়েছিলাম কিন্তু তারা বলেছে, ট্রলি নেই।
এক রোগীর স্বজন জানান, সিরিয়ালের দাঁড়াতে গেলে টাকা, এক্স-রে করতে গেলে টাকা, যেখানে যাই সেখানেই শুধু টাকা।
শুধু এই হাসপাতাল নয়, রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগের অবস্থা একই। সব জায়গাতেই চিকিৎসকের সহকারী কিংবা আয়াদের দৌরাত্ম্য।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকটের কারণে সাধ্যের চেয়ে বেশী দিয়েও সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বলেছেন, আমরা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। আমাদের অবকাঠামো, ডাক্তার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, নার্স-এসব যদি পর্যাপ্ত দেওয়া হয় তাহলে হয়তো আমরা পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারবো।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেছেন, একজন ডাক্তারকে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩’শ থেকে ৪’শ রোগী দেখতে হয়। এক মিনিট করে কি একটা রোগী দেখা সম্ভব? অতএব চিকিৎসকের অনেক পদ সৃষ্টি করতে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, অর্ধেকের বেশি রোগী এই হাসপাতালে আসাই উচিৎ ছিলো না। এগুলি উপজেলায় বা জেলায় চিকিৎসা হতে পারে। আউটডোরে ডাক্তারকে সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কষ্ট করে বসে থাকতে হবে। সিস্টেম না বদলালে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর হবে না। মন্ত্রী মহোদয় যদি জেগে থেকে ঘুমের ভান করেন তাহলে তো হবে না। তারা না জানার মধ্যেই সব কাহিনী জানেন।
দেশে এ মুহূর্তে ১৬ কোটি মানুষের জন্য মোট সরকারি হাসপাতাল আছে মাত্র ১২৪টি। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪২৫ ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ৪৮৬০টি।
- Courtesy: আমাদের সময়.কম /Apr 17, 2018
No comments:
Post a Comment