সুজিত সাহা
বহুপ্রত্যাশিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) দেশে আসছে আজ। আনুষঙ্গিক কাজ শেষে আগামী মাসের শেষ দিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। যদিও এলএনজি আসার পরও সক্ষমতা অনুযায়ী তা ব্যবহার করতে পারবে না চট্টগ্রামের গ্যাসভিত্তিক সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতায় গ্যাস প্রাপ্যতার পরও বসিয়ে রাখতে হবে বিদ্যুৎকেন্দ্র।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) সূত্র জানায়, গ্যাস সংকটের পরও চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাস প্রাপ্তিতে প্রাধান্য পেয়ে আসছিল এতদিন। তাই এলএনজি আমদানির পর বেসরকারি সাতটি কেন্দ্রে নতুন করে বাড়তি গ্যাসের প্রয়োজন হবে না। তবে রেশনিংয়ের মাধ্যমে এতদিন সরকারি কেন্দ্রগুলোকে গ্যাস দেয়া হলেও এখন চাহিদার শতভাগ গ্যাস দিতে পারবে কেজিডিসিএল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ন্যাশনাল লোড ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্যাস থাকলেও উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। মাল্টিপল বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরিসাপেক্ষে সারা দেশে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ তৈরি হলে গ্যাসনির্ভর কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে।
জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের বিতরণ বিভাগের ম্যানেজার মো. হাসান সোহরাব বলেন, বিপিডিবি দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস পাচ্ছে না। তবে এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ায় গ্যাসের অভাব থাকবে না। বিপিডিবি চাইলে যত খুশি গ্যাস নিতে পারবে। কিন্তু পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় ও জাতীয় গ্রিডের চাহিদার ওপর নির্ভর করে সব কেন্দ্র একসঙ্গে চালু রাখা যাবে না। ফলে চাহিদার চেয়ে কম গ্যাস কিনবে বিপিডিবি। একসময় চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৫-৫০ কোটি ঘনফুট বলা হলেও এলএনজি আমদানির পর প্রকৃত চাহিদা কত, তা বোঝা যাবে।
চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ১৮ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। চাহিদার শতভাগ গ্যাস সরবরাহ দিলেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিতরণের একাধিক সঞ্চালন লাইন নেই। চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ মূলত চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি জেলায় সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয় বলে দাবি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তাদের।
জানতে চাইলে বিপিডিবির (চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই ডুয়াল ফুয়েল। ফলে বর্তমানে গ্যাস না পেলেও জ্বালানি তেলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে কেজিডিসিএল গ্যাস সরবরাহ দেবে। ফলে আমরা রেশনিংয়ের মাধ্যমে যথাসম্ভব নতুন প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এরপর সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা আরো বিস্তৃত হলে সক্ষমতার শতভাগ গ্যাস ব্যবহার সম্ভব হবে।
বিপিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, শুরুতে ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়াসাপেক্ষে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চালু রাখা হবে। এ কেন্দ্রে ৩ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে ৩ কোটি ৭ লাখ ও চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে (২১০ মেগাওয়াট) ৪ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি ইউনিট (২১০ মেগাওয়াট) ও শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি কার্যত বন্ধ রাখা হবে। গ্যাসনির্ভর কেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও চুক্তির বাধ্যবাধকতায় বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হবে। এমনকি উৎপাদন ব্যয় বেশি হলেও জ্বালানি তেলনির্ভর দোহাজারী ও হাটহাজারী কেন্দ্র চালানো হবে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
বিপিডিবি সূত্রমতে, কাপ্তাই ২৩০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ছাড়াই প্রতিদিন ১৫০-১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে দোহাজারী-হাটহাজারী (ফার্নেস অয়েল-২০০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হচ্ছে ৯৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। ফলে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে নির্ধারিত পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে সরকারি কেন্দ্রে দৈনিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে উৎপাদন করা হচ্ছে। রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিটে ১৯০ মেগাওয়াট উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও কমিয়ে রাখা হচ্ছে কেন্দ্রটির উৎপাদন।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২০ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুট। সরকারি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদাই ১৮ কোটি ৩০ লাখ ঘনফুট।
- Courtesy: Bonikbarta/ Apr 24, 2018
No comments:
Post a Comment