জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এক কর্মকর্তাকে মারধর করায় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বহিষ্কৃত রাজীব বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আইইআর-এর সেকশন অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানকে বেধড়ক পিটুনি দেন রাজীব। আহত ওই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগে রাজীবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিছুদিন পর অবশ্য তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অস্থায়ী দোকানপাটে চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে তাঁকে ফের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকেও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই দুটি বহিষ্কারাদেশ এখনো বহাল আছে। এর মধ্যে গতকাল তিনি আবার মারধরের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় তাঁকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের কর্মীরা বলেন, বহিষ্কৃত হওয়ার পরও সংগঠনের সব কর্মকাণ্ডে রাজীব সম্পৃক্ত থাকতেন। তাঁকে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে সামনের সারিতে দেখা যেত। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলামের পক্ষের কর্মী ছিলেন। তাই তাঁর বহিষ্কারাদেশ ছিল নামে মাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে ফুজি কালার ল্যাবের গলিতে একটি বিকাশের দোকানে কে আগে টাকা পাঠাবেন, তা নিয়ে মোস্তাফিজুর ও রাজীবের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে মোস্তাফিজুরকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন রাজীব ও তাঁর সহযোগীরা। এ সময় আশপাশের লোকজন মোস্তাফিজুরকে উদ্ধার করেন। পরে সহকর্মীদের সহায়তায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মোস্তাফিজুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিকাশের দোকানে লাইনে আগে ছিলাম। পেছন থেকে লাইন ভেঙে আগে টাকা পাঠাতে আসে রাজীব। তাকে বাধা দিলে সে আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে যায়। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে, আমি রাজীব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ান পিস। এ কথা বলার পরপরই রাজীব ও তার সঙ্গে থাকা ১০-১৫ জন আমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। সেখান থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে দুই দফা রাস্তায় ফেলে আমাকে মারধর করে।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজীব বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে তর্ক করায় আমার বন্ধুরা তাঁকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে তিনি আহত হন।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, বহিষ্কারের পরও রাজীব বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁকে তো আর তাড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ছাত্রলীগের বহিষ্কারাদেশ বহাল আছে।
জানতে চাইল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও এমন কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে রাজীব বিশ্বাস জড়িত থাকায় তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাই এবার তাঁকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
- Courtesy: Prothom Alo /Apr 17, 2018
No comments:
Post a Comment