গোলাম মোর্তুজা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাপ্তাহিত পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তুজা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, চারুকলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। রাজু ভাস্কর্য- টিএসসি এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে? শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য তেমনই। তিনি একজন শিক্ষক, সত্য- অসত্য বলে মন্তব্য করতে চাই না। তাদের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলেন, তারা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার মতো দাগ কেটে এলাকা নির্ধারণ করে ঘুমিয়ে থাকলেন। অতঃপর জেগে উঠে বললেন ‘বাড়ি কেন ভাঙল’? যেন এর আগে- পরে কিছু ঘটেনি। শিক্ষকরা ভাবছেন দেশের সব মানুষ তাদের মতো করে, তাদের চোখ দিয়েই সব কিছু দেখছেন। এত যৌক্তিক দাবি, এত স্থুল কূটচালে বিভ্রান্ত করা যাবে না। নিজেদের হাস্যকর হিসেবে পরিচিত বা উপস্থাপন করা যাবে। নিজেদেরকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে শিক্ষকরা ইতিমধ্যে অনেক কিছু করে ফেলেছেন। ধারণা করছি সমস্ত লজ্জা- নৈতিকতাকে বহু দূরে সরিয়ে রেখে, তারা তা অব্যাহতই রাখবেন।
ছাত্রলীগ নেতা- ক্যাডার যারা এখনও ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে আতঙ্ক তৈরি করছেন, ‘আমরাও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আছি’– অচিরেই একথা বলতে বাধ্য হবেন। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের সময় যেভাবে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর যদি আক্রমণ- নিপীড়ন অব্যাহত রাখার নীতিতেই থাকেন, প্রতিরোধের মুখে পতন অনিবার্য। শিক্ষা নেওয়ার জন্যে সুফিয়া কামাল হল দৃষ্টান্ত হতে পারে।
রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের জন্যে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচিতে কিছু উল্লেখ নেই। শুধু আহতের সু-চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। রাবার বুলেট, টিয়ারসেল, জলকামান এবং লাঠিপেটা করে কয়েক’শ ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতবিক্ষত করা হলো, শিক্ষক সমিতি বা শিক্ষকদের কেউ তাদের রক্ষায় এগিয়ে এলেন না। ভিসি ঘুমাচ্ছিলেন। প্রক্টোর একবার টিএসসিতে এসে ছাত্রীদের হলে ফেরার জন্যে ধমক দিয়ে গিয়েছিলেন। আহত-রক্তাক্ত হয়ে যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যালে গেছেন, কোনও শিক্ষক তাদের খোঁজ নেননি, দেখতে যাননি। আহত রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল থেকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন যখন সব কিছু পাশ কাটিয়ে ‘ভিসির বাড়ি’ হয়ে উঠেছে প্রধান বিষয়, তখন বোঝা যায় গভীর পরিকল্পনা থেকেই হয়ত ভিসির বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
শিক্ষকসহ সবারই মনে রাখা দরকার, ভিসির বাড়ি যত সম্মান শ্রদ্ধার হোক, যত ঐতিহ্যবাহী হোক- তার মূল্য বা গুরুত্ব একজন মানুষ বা একজন শিক্ষার্থীর রক্তের চেয়ে বেশি নয়। রক্ত চাপা দিয়ে, আসবাবপত্রের জন্যে কান্না বড় বেশি বেমানান। ভিসির স্ত্রী-পরিজনের সেই রাতের আতঙ্কটা অনুধাবন করতে পারছি। শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক তার চেয়েও কতটা ভয়াবহ ছিল, তাও অনুধাবন করতে হবে শিক্ষকদের।
বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ- বিচার শাস্তি হতে হবে। তবে বাড়ি ভাঙচুর ইস্যু দিয়ে ন্যায্য দাবি- শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো বর্বর নিপীড়কদের আড়াল করা যাবে না।
- Courtesy: আমাদের সময়.কম/Apr 11, 2018
No comments:
Post a Comment