Search

Thursday, May 10, 2018

ডিক্টেটরদের ‘ডিভেলাপমেন্ট ডাটা’ প্রীতি


অ্যালেক্স গ্ল্যাডস্টাইন



অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) - এর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা সাধারণত খুব একটা ভালো যায় না। ইউটিউবে প্রকাশিত বিতর্কগুলো সেইচিত্রই তুলে ধরে। যেমন ধরুন, যখন হন্ডুরাসের পররাষ্টমন্ত্রী গত গ্রীষ্মে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধমতবাদীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের কথা তুললেন ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি ডেলসি রড্রিগুয়েজ  ওএএস বৈঠকে বিস্ময়করভাবে অনেকগুলি পয়েন্ট জিতে নিলেন। তিনি জাতিসংঘের ২০১৬ সালের এইচডিআই বা মানব উন্নয়ন সূচক থেকে বরাত দিয়ে দেখালেন হন্ডুরাসে বিরুদ্ধবাদীদের ওপর ক্র্যাকডাউন হয়ে থাক বা না থাক, সে দেশের পরিস্থিতির তুলনায় বরং ভেনেজুয়েলা ৫৯ পয়েন্ট এগিয়ে আছে। রড্রিগুয়েজ বললেন, তাঁর দেশ এ ধরনের ভয়ানক উপাত্ত নিয়ে শোরগোল কিন্তু তোলে না। আর কি! তাঁর এই দাবি  স্পানিশ ভাষাভাষী সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে চাউর হয়ে গেল। এর সুবাদে ভেনেজুয়েলার মাদুরো শাসকগোষ্ঠীর ভিত্তি আরো শক্ত হয়েছিল আর এর পেছনে ছিল জাতিসংঘের আস্থাযোগ্য উপাত্ত।

এই লেখকের মতো যারা মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে এ ধরনের কাহিনী  হতাশাব্যঞ্জকভাবেই সুপরিচিত। জেফরি স্যাকস ও বিলগেটস দম্পতির উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে শুরু করে টনি ব্লেয়ারের স্বৈরবাদী জোট পাকানো (ইরাক প্রশ্নে) বা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় চীনতন্ত্রের পক্ষে টম ফ্রেডম্যানের ওকালতির মতো বিষয় গুলি, বিগত দুই দশক ধরে দেখা যায় বার বার রাজনৈতিক উদ্বেগকে পাশ কাটিয়েছে তথাকথিত উন্নয়ন উপাত্ত। স্বৈরশাসকদের পক্ষে ওকালতির ক্লাসিক অজুহাত হলো, অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন, স্বাধীন সংবাদপত্র,  অবাধ প্রতিবাদ ইত্যাদির ঝামেলাজট এড়িয়ে স্বৈরশাসকেরা পুরনো নগরগুলো  দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে তার ওপর তারা নতুন, চমৎকার সুযোগ-সুবিধাযুক্ত নগর  গড়ে তুলেছেন, নদীতে বাঁধ দিয়েছেন, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, লাখো মানুষকে দ্রারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছেন অনায়াসে। অতএব স্বৈরশাসকদের মতো মানুষের এমন বন্ধু আর কে আছে?

ঠিকই তো? এমনটি আর হয় না। আমার সাধের ময়না। তবে সমস্যা হলো স্বৈরাচারের গুণগান গাইতে হলে শ্বাসরুদ্ধ জনসমাজের মধ্য থেকে যাচাইযোগ্য উপাত্ত বের করে আনার। কাজটি কার্যত অসম্ভব। ইথিওপিয়া থেকে কাজাখস্তান যেদেশের বেলাতেই হোক না কেন তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত যতোই প্রমাণ করুক যে স্বৈরশাসকরা ভালো কাজ করছে আসলে তেমনটা মোটেও নয়। কেননা, ঐ সব উপাত্ত বা তথ্যের জনক, বলাবাহুল্য, সাধারণত ঐ সব স্বৈরশাসক নিজেরা।

হাতেগোনা কিছু সংগঠন  তথ্য সংগ্রহের বিশ্বশিল্প পরিচালনা করে থাকে। এদের মধ্যে আছে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। এদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বৃহদাকারের আর্থ-সামাজিক জরিপগুলি পরিচালনা করে থাকে। এসব সংগঠনের গবেষকরা যতোটা বেশি পারা যায় দেশকে তাদের জরিপের অন্তর্ভূক্ত করতে চান। তবে এসব দেশের বহু দেশ --- ৯৭টি দেশ যাদের ভূভাগে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষের বাস সেসব দেশ, হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, স্বৈর শাসিত আর এই স্বৈরশাসকেরা গতানুগতিকভাবে নিরপেক্ষ গবেষক বা অনুসন্ধানকারীদেরকে তাদের নিজেদের দেশের মাটিতে পা মাড়াতে দেন না। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উপাত্ত সংগ্রহকারীদেরকে দেশের লৌহমানবদের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করতে হয়।

বাহরাইনকে আমরা এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিতে পারি। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামকে বাহরাইন সংক্রান্ত প্রায় সব উপাত্তই নিতে হয় বাহরাইনের ‘বাহরাইন অথনৈতিক উন্নয়ন বোর্ড’ নামক  সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত জরিপ থেকে।  তারা জরিপ পরিচালনা করে তা থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি জেনিভায় ফোরামের সদর দপ্তরে পাঠায়। এর পর থেকে ডব্লিউইএফ-এর বিশ্লেষণ শুরু হয়। ড্যাটা মডেলিং-এর সময় অনেক পরিপ্রান্তিক তথ্য/উপাত্ত বাদ পড়ে বা বাদ দেওয়া হয়। তবে মুল উপাত্ত বা রাশিগুলি যা স্বৈরশাসকের তৈরি তা আগাগোড়া অপরিবর্তিত রয়ে যায়।

এ বিষয়ে ইউনেস্কো প্রতিনিধি বলছেন যে কিউবার বেলায় তাঁরা তাদের প্রতিবেদনে শাসকগোষ্ঠীর দেওয়া শিক্ষা বিষয়ক পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। এদিকে, উজবেকিস্তানের একজন কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের দেশে অন্তর্জাতিক উপাত্ত সংগ্রাহকদের সফর  অত্যন্ত বেশিরকমে পূর্ব পরিকল্পিত আর সে কারণে সংশ্লিষ্ট দেশের শাসকগোষ্ঠী সহজেই জরিপের ফল নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। 

জরিপের ফল স্বৈরশাসকের পরিকল্পনামাফিক না হলে তাঁরা সরাসরি এমনকি ভোটগ্রহণও বন্ধ করে দিতে পারেন। বিশ্ব গ্যালাপ পোল-এর পরিচালক জন ক্লিফটনের সাথে কয়েক বছর আগে এই লেখক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার‌ নেওয়ার জন্য তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন। মিঃ ক্লিফটন এই সময়ের স্মৃতিচারণ কথা তিনি লেখককে বলেন। তাঁর কথা মতো তিনি একসময় এক কোম্পানির গবেষক হিসেবে একটি আফ্রিকীয় দেশে উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। সেটা করতে গিয়ে তাঁদের ধরা খেতে হয়। কেননা, তাঁরা যখন কাজ শেষ করে দেশে ফিরছিলেন তখন বিমানবন্দরের তাদের সাজসরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়।

তবে আর যাই হোক কেউ তো আর চায় না যে জরিপের ব্যাপারে কারও দেশের জায়গাটা বিশ্ব মানচিত্রে খালি দেখানো হোক। ফলে ক্লিফটন যেটা বলতে চাইলেন তাহলো, জরিপকারী প্রতিষ্ঠানকে এক না এক ধরনের উপাত্ত তৈরি করতেই হয় সেটা খুব একটা চৌকশরকমে ভালো না হলেও। তাদের উপাত্ত তো দরকার। একটা তো হলেই হয়।

কাজেই উন্নয়ন প্রতিবেদনও তৈরি হয়। তৈরি হয় এমন সব সংখ্যা দিয়ে যার শেষ হয় সেগুলিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক মেকি বৈধতা দিয়ে। ফলে যা হবার তাই ঘটে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত প্রণয়নে‌র বেলায়, বিশেষ করে, বিশ্ব ব্যাংকের বেলায় বিপর্যকর বিভ্রাট ঘটে। বিশ্বব্যাংকের ২০১২ সালের এক সমীক্ষায়  বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের উপাত্তগুলি মিডিয়া আউটলেটে দেওয়া হয় আর ধরে নেওয়া হয়ে এটা বিশ্ব পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য একটা বিশিষ্ট নির্দেশনা হয়ে উঠবে। এ থেকে নানা উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ মনে করতে থাকে এধরনের র‌্যাংকিং পাওয়া তাদের জন্য খুবই দরকার। আর সেজন্য তারা এই কাজে ভয়ানকভাবে প্রয়াসী হয়ে পড়ে।


দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, ইউনেস্কো যে সব উপাত্ত বা পরিসংখ্যান তৈরি করে সেগুলি ব্যবহার করা হয়  বিশ্বব্যাংকের World Development Report (World Bank) and the Human Development Index (UNDP) এ। ইউনেস্কোর নিজের কথায়, তাদের পরিসংখ্যানগুলি দিয়ে একটি দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে অগ্রগতির মাত্রা পরিমাপক হিসেবে কাজ করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের শিক্ষার অঙ্গউপাদান ‘যারা ভালো চায়’ ও যার প্রভাব বিনিয়োগকারীদের ওপর কী তার একটা নির্দেশিকা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আর এসবই যাচাই করা হয় ইউনেস্কো উপাত্তের নিরিখে। এ ক্ষেত্রে উপাত্ত বা ডাটা সরাসরি প্রবাহিত হয় বহু স্বৈর শাসকগোষ্ঠী থেকে ইউনেস্কো থেকে, তারপর এসডিজি রিপোর্টে। 

স্বৈরশাসক পর্যায়ে উপাত্ত তৈরি হলেই সেটা ঢুকে যায়, বিশ্বের সবচেয়ে আস্থাযোগ্য বলে পরিচিত সুচকগুলিতে। এরপর আরও স্বৈর কর্তৃপক্ষ এবং তাদের অজানা সমর্থকরাও এসব তথ্য/উপাত্ত তাদের প্রচারণায় ব্যবহার শুরু করে দেয় যা মানবাধিকার উন্নয়ন প্রয়াসের পরিপন্থি।

ইথিওপীয় প্রধানমন্ত্রী মেলিস জেনাবি ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। । ঐ সময়ে বিল গেটস তাঁর  উন্নয়ন প্রয়াসে পাশ্চাত্যের প্রশংসাকীর্তনে নেতৃত্ব দেন এই বলে যে জেনাবি তাঁর দেশের লাখো মানুষকে দারিদ্র্যের শৃংখল মুক্ত করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণভাবেই অলক্ষ্যে অবহেলিত  থেকে যায় জেনাবির দেশে কার্যত সামগ্রিক সেন্সরশিপ বা শত শত প্রতিবাদিকারী ও বিরুদ্ধবাদীকে হত্যার লোমহর্ষক ও নির্মম বাস্তবতা।  এ বিষয়ে দ্য ইকনমিস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস -এর রিভিউ অব বুকস-এ বলেছে, ইথিওপিয়ার জেনাবি শাসকগোষ্ঠী উন্নয়ন উপাত্তে কারচুপি করেছে।

দূর ভেনেজুয়েলায় (এখন মৃত) হুগো শ্যাভেজ জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটা বিশ্বখ্যাতি গড়ে তুলেছিলেন।  তিনি মহাগর্বে উপাত্ত দেখিয়ে তাঁর প্রশাসনের প্রশস্তি গাইতেন এই বলে যে শ্যাভজ প্রশাসন দেশে দারিদ্র্য ৫০% কমিয়েছে। ভেনেজুয়েলার শ্যাভেজ উত্তরাধিকারি  শাসক মাদুরোর বিরুদ্ধবাদী ছাত্রদের ওপর স্টিমরোলার চালানো --- তাদের অত্যাচার আর গুম, অপহরনের যৌক্তিকতা দিতে তিনি উপাত্ত দিয়ে বলেছেন, তাঁর শাসকগোষ্ঠী আগাগোড়া জনগণের মাঝে বৈষম্য কমাচ্ছেন। দারিদ্র্য কমেছে বিপুলভাবে নাগরিকদের জীবনমান সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। তাঁর এসব উপাত্ত কোন উৎসের?  এ উৎস হলো লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলির জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশনের যে কমিশন আবার ব্যবহার করেছে Millennium Development Goal -যা সরাসরি তার নিজের স্বৈর সরকারের পরিসংখ্যান কর্মকর্তাদের দেওয়া।

আজারবাজাইানে ইলহাম আলিয়েভ হলেন একনায়ক। তিনি বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছেন আজারবাইজানকে  এক সমৃদ্ধ, বিকাশশীল, কার্যকর সরকার হিসেবে যে সরকার বিনিয়োগ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য তিনি অপব্যবহার করেছেন প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত  উপাত্তের। 

The World Economic Forum -  আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো আজেরিদের এই স্বৈরশাসক গোষ্ঠীকে তাদের আর্থিক সাফল্য নিয়ে আলোচনার জন্য এই ফেরামকে ব্যবহার করতে দেয়। আজেরি শাসকরা এ প্ল্যাটফরমকে অপব্যবহার করে নিজেদের দেশে বিরুদ্ধবাধীর ওপর জেলজুলুম থেকে শুরু করে কোটি কোটি ডলার তছরূফকে চূনকামে ঠেকে সাফসুতরো করতে।

আরেক আসামী রুয়ান্ডার ডিক্টেটর কাগামে। তাঁর মানবাধিকার লংঘনের বিষয় এখন প্রবাদতুল্য। কি না করেছেন তিনি। হত্যা করেছেন তাঁর সমালোচক সাংবাদিকদের, কঙ্গোর জঙ্গলে বিরোধীদের খুন  করাতে ডেথ স্কোয়াড ভাড়া করেছেন, আন্তজার্তিক পর্যায়ে কুখ্যাত খুনিদের ব্যবহার করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। তবে এতো কিছুর পরেও বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে জেফরি স্যাকস-এর মতো ব্যক্তিরা তাঁর রুদ্ধশ্বাস প্রশংসা করেছেন তাঁরা তার অর্থনৈতিক সাফল্য ও নের্তৃত্বের। এহেন কাগামে মাত্র কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৯% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার এই রাজনৈতিক উপাত্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাঁর উন্নয়নের উপাত্তের মূল্য মাত্র কাগজি হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

স্বৈরশাসকদের বিষয়ে এই যে বিশ্বজনীন সন্দেহ কেন প্রকট হচ্ছে না সেটা এক হেঁয়ালি যদিও এ সমস্যা বহুকালের। ১৯৮৭-তে দু’জন সোভিয়েট অর্থনীতিবিদ ‘লুকায়াভয়া সিফরাত’ বা ‘ধূর্ত সংখ্যা’ নামে একটি নিবন্ধ লেখেন। ঐ নিবন্ধে দেখানো হয় ১৯২৮ থেকে ১৯৮৫-র মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের জিডিপির গতি বাস্তবে ছিল, রাস্ট্র কর্তৃক দেখানো জিডিপি থেকে দশগুণ ধীর। এভাবে দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সোভিয়েট শাসকগোষ্ঠীর  কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান প্রশাসন। দুই অর্থনীতিবিদ প্রমাণ করেন যে ‘সরকারি’ অর্থনৈতিক উপাত্ত মানুষের দুর্গতিকে লুকানোর জন্য উপাত্ত বানানো হয়েছে। 

২০১৪ সালে বাকনেল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা একটি সময় ধরে পৃথিবীর অঞ্চল বিশেষে রাতের বেলায় কৃত্রিম আলো দেখে ঐ অঞ্চলে অর্থনৈতিক তৎপরতার বা জিডিপি’র একটা তুলনা করেছিলেন। এই তুলনার উদ্দেশ্য ছিল ডিক্টেটররা গণতান্ত্রিক সরকারের তুলনায় তাদের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছেন কি না। তবে গবেষকরা যে বিশ্লেষণই করুন না কেন, লোকে কেমন করে উন্নয়ন উপাত্তকে কৌশলে ব্যবহার করে তাতে কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটছে না। এ ভাবে দেখা যায়, ডিক্টেটরদের তৈরি উপাত্ত চ্যালেঞ্জের বাইরে থেকেই যাচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ, যদি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ আসেই তাহলে বহু অর্থনীতিবিদ, অর্থায়ক, কূটনীতিক ও দারা যারা তাদের কাজের জন্য এরকম উপাত্ত নির্ভর তারা ভাতে মারা যাবেন।

আর এজন্যই দরকার, মুখোশ খুলে ফেলার। দরকার উপাত্তগুলি কোন উৎস থেকে এসেছে আদতে সে বিষয়ে কঠোর অনুসন্ধান হওয়া দরকার। সেটা না করা হলে ডিক্টেটরদের নিষ্ঠর বাস্তবতা থেকেই যাবে অচলায়তন হয়ে। আর ডিক্টেটররা বলতে পারবেন, আন্তর্জাতিক প্রশস্তি সার্টিফিকেট থাকলে তাদের আর পায় কে? 

বিশ্ব নেতাদের উচিত  উন্নয়ন উপাত্তর প্রতি তাঁদের আরাধনার বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা এবং মানাবাধিকারকে সব ইস্যুর ওপরে রাখা।

   — অ্যালেক্স গ্ল্যাডস্টাইন, চীফ স্ট্রাটিজি অফিসার, হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্ট্রাটিজি অব দ্য অসলো ফ্রিডম ফোরাম।   

সখাত সলিলে ডুবছে আওয়ামী লীগ

সৈয়দ কবির হুসেন




জাতীয় নির্বাচনও  দেশের সাম্প্রতিককালে নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচনের মতো স্থগিত হতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী বিশ্লেষক ড.  আসিফ নজরুলসহ অনেক দেশভাবুক একই কথা বলেছেন।  

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আকস্মিকভাবে হাইকোর্ট স্থগিত করে দেওয়ায় ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনায় সরকারের সেই নির্বাচন প্রভাবিত করার নানা কূটকোশল বেড়ে যাওয়ায় বাস্তবতার বিচার করে সরকারের  লেজুড়-কর্তৃপক্ষ এরকম সিদ্ধান্ত আরও নিতে পারেন --- এ ধারণা অস্বাভাবিক নয়। আর এটা জাতীয় নির্বাচন অবধি তো গড়াতেই পারে।

গাজীপুরে মহাজোট প্রার্থীর ইতিহাস যারা জানেন তাদেরকে  বলে দিতে হবে না যে আওয়ামী লীগ এ আসনের জন্য যোগ্যতর প্রার্থী পায়নি। পাওয়া যায়নি কোনো ইম্যাকুলেট মাস্টারকে। পাওয়া গেছে ভূয়া ডিজিটাল কাকতাড়ূয়া।  ফলে যে প্রহসন থেকে প্রত্যাশিত ছিল তাই ঘটেছে। যে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব রিটটি করেছেন তার তৎপরতা হঠাৎ করেই। মাত্র ছয়টি মৌজার জন্য। কেউ জানে না, আর খোদ ইসি তো বলেছে, খোদায় মালুম কেস কখন করা হলো, আর  কখন হলো রায়?  হলোটা কী । সময়ই দেওয়া হলো না! যেসব মৌজা নিয়ে সমস্যা সেখানে  নির্বাচন স্থগিত রেখেই তো কর্পোরেশন নির্বাচন বহাল রাখা যেতো অনায়াসে সব পক্ষে এতো অপচয় আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এ ধরনের অপচয়ের দৃষ্টান্ত কায়েম করেছে সরকার। 

সরকার দেশকে উন্নয়নের চেহারার আরশিবাজিতে  শশব্যস্ত। তাহলে যারা রক্তপানি করে নানা হুজ্জত সামলে সরকারের কোনো সহায়তা না পেয়েও  টাকা দেয় দেশকে, যে অশিক্ষিতা নারীকূল ঘাম ঝরিয়ে প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার ও দলের ‘মহাশিক্ষিত’ অনুসারীদের  হাতে মচ্ছবের টাকা তুলে দেয় নীরবে, যাদেরকে খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেন পাঁচ হাজার টাকার মাসিক বেতনে যদি না চলে গ্রামে ফিরে যাও আর ইউনিয়ন কর্মকর্তাকে গায়েব করার অপরাধ ঢাকতে বলে দেওয়া হয় ‘ওদের পকেটে কিছু গুঁজে দিন’ বলে, তাহলে এখন বোঝার সময় এসেছে যে সেদিন হয়েছে বাসী। প্রধান বিচারপতি সিনহার ব্যাংক একাউন্টে চারকোটি টাকা লেনদেনের খবর পেয়েছে দুদুক। দেখা গেছে  সেই টাকা আসলে মহাপবিত্র ‘ফারমার্স ব্যাংকের’ আমানতীদের টাকা - রাষ্ট্রীয় টাকা যা আসলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে  এভাবে।

বড়ো প্রসাদোপম বাড়িগাড়ি, মেট্রোরেল, সোনার বরণী পদ্মা সেতু দিয়ে আর হয়তো বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো যাবে না। ১০টাকার চালের কথা দিয়ে যারা  ফল না দেখিয়ে বলে যে দেখুন লোকতো ৭০ টাকার চাল বেশ খাচ্ছে! কিন্তু যে ক্রন্দনের শব্দ হাসিনার কানে পৌঁছায় না, উন্নয়নের ঢাক গুড়গুড়ে তাঁর কান ঝালাাপালা, যিনি সভা  করতে জীবনের ভয় পান আর বলেন দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত তাদেরকে চেনার সোনারুর অভাব ক্রমেই কমে আসছে।

বলা হযেছিল ১২ টাকার চালের ভাত , খালেদা জিয়ার মাথায় হাত। এখন? কেবল উন্নয়ন মন্ত্রই যে্নতেন সার? দেশের লোক কান দিচ্ছে না। জারিজুরি ধরা পড়ে যাচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কোটা,  সেটা নিয়ে আর কেন কথা? সেটাতো নেই। সেটা বঙ্গের এককালের রাজধানী কোটালীপাড়ায় চলে গেল কিনা মানুষকে খোঁজ করতে হবে। ভবি ভুলবার নয়। লাখো তরুণ প্রাণ বলছে, রাজনীতি চুলোয় যাক, তারা রাজনীতি করছে না তবে  কোটা দাফনের প্রজ্ঞাপন না দিলে আবার তারা পথে নামবে।

সেই উর্দিওলা মইন ইউ আর ‘বাবুর্চি’ ফখরুদ্দিন যা বলতে বলতে হাঁপানি বাধিয়ে ফেলেছিল যদিও এক উদ্দিনকে ধরেছে অ্যানসারবিহীন ক্যান্সারে -  বলেছিল অপশক্তি, আর চারদিকে দেখছি, অপশক্তি! এই ভুত দেখতে শুরু করেছে আলীগ রাঘব বোয়ালেরাও। ভুত এখন আছর গেড়েছে রাঙ্গামাটির পাহাড়ে। 

পদ্মা সেতু সময়মতো হবে না, কার্ডিনাল সিন-এর জন্য, মেট্রোরেল খুঁড়িয়ে হাঁটছে। বেগম জিয়াকে জিঞ্জিরার মতো হানাবাড়িতে বন্দি রেখে যিনি এতোটা তোষামদে মত্ত, মনে করেছেন, এইবার পেয়েছি খোদকারিতো করতেই পারি। রোগবালাইযে যদি বৈরি রাম মরে তো আর তাঁকে পায়কে। সেজন্য তার ফাইলটা নিজে সযত্নে আগলে রেখেছেন পাছে কেউ কাঁচিয়ে ফেলে কেসটা! সংবদাটা হলো আজও বেগম জিয়ার জামিন হয়নি।  

কতকিছু করা হলো, জনগনের রক্তের টাকায় কেনাকাটার শেষ নেই। ধরুণ পদ, মেডেল, পদক , ডিগ্রি, মাদার অব হিউম্যানেটি, নোবেল, বাহারি সার্টিফিকেট --- এতেও কাজ হচ্ছে না। পথে ঘাটে প্রতিটি মানুষ তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ এর বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।  গ্রীক অতিকথার রাজা মিডাস তার দু’কানই (যেগুলো গাধার কান হয়ে গিয়েছিল) গলাবন্ধ জড়িয়ে প্রজাদের চোখের আড়ালে রেখেছিলেন। ভালই ছিলেন তিনি যদ্দিন পেরেছিলেন। তারপর তিনি নিজেই একদিন ফাঁস করে দিলেন সত্যটি। নিশ্চয়ই  কাহিনীর শেষটুকু বলার কোন প্রয়োজনই নেই। অবৈধ শাসকেরা এই কাজটি করবেন আর নটে গাছটিও মুড়োবে তখন। আজ অথবা কাল --- যেকোনো দিন।  

Wednesday, May 9, 2018

আসামির কাছ থেকে ২০-২৫ কোটি টাকা ঘুষ চেয়েছে তুরিন আফরোজ!

  

মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি 


একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক এর কাছ থেকে ২০-২৫ কোটি টাকা ঘুষ চেয়ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ। 


এ ঘটনার জেরে ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন প্রসিকিউশন।
বাংলা দৈনিক আমাদের সময় (dainikamadershomoy.com) বুধবার, মে ৯, ২০১৮ প্রকাশিত রিপোর্টে এই তথ্য জানা যায়। 

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় — 

গত ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনকালে জানান। প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাদের সাক্ষাৎ হবে। এ সময় ড. তুরিন আফরোজ জানান, সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তারা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন। পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা। এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তাকে গ্রেপ্তারের আদেশের অনুলিপি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
একাত্তরের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে ওয়াহিদুল হকের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রাপ্তির পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা।

ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন

শামছুল ইসলাম


একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথেই সিইসির নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে- সচিব পদে দায়িত্ব পালন না করার, জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকার। তার কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে। 
এই পরিস্থিতিতে নিজের নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে সাফাই গান তিনি। আশ্বাস দেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করণীয়, সাংবিধানিকভাবে ও আইনকানুনের ভিত্তিতে সব কিছুই করবে তার কমিশন। কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার ঘোষণা দেন তিনি।

কিন্তু দায়িত্ব পালনের মাত্র দেড় বছর পার হতে না হতেই একের পর এক নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পরও কার্যকর কোনো ভূমিকা না নেয়া, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না করা, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কারণে সীমানা পুনর্নির্ধারণ থেকে পিছু হটা এবং বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি সত্ত্বেও ভোটে সেনা মোতায়েন না করা, ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যর্থতা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাসহ বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা কার স্বার্থে কাজ করছে; তারা জনস্বার্থে কাজ করছে কি না এ নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ আছে। ঢাকা সিটির নির্বাচন নিয়ে নাটক হলো। আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ হলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে। এগুলো তো জনস্বার্থের পরিপন্থী। এর মাধ্যমে ভোটারদের ভোটাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। জনগণ দারুণভাবে সংক্ষুব্ধ। এ ছাড়াও সীমানা পুনর্নির্ধারণ, সিটি করপোরেশনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ এবং নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই না করে ইসি প্রমাণ করেছে তারা জনস্বার্থে কাজ করছে না। তারা বিশেষ পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করছেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশের পর নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে আমি শিথিলতা লক্ষ করেছি। এর আগেও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একই ঘটনা ঘটেছিল। গাজীপুর তারই কার্বন কপি।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট স্থগিত করলেও তার ওপর তো অ্যাপিলেট ডিভিশন আছেন; চেম্বার জজ আছেন। সেখানে যেতে পারে ইসি। কিন্তু ইসি তা করছে না। তারা বলছে, রায়ের লিখিত কপি না এলে কিছু করবে না। কিন্তু লিখিত কপি না এলেও আপনারা (ইসি) রায়ের কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের সব কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও কোনো অগ্রগতি দেখছি না। এতে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি ইসি। গত বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশের কথা থাকলেও তা করেছে ৩০ এপ্রিল। ৩৮টি আসনের সীমানা পরিবর্তন এনে ৩০০ আসনের খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরে শুনানি শেষে ২৫টির পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সংসদীয় সীমানা বিশ্লেষণ করে দেখে গেছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা খসড়া তালিকাতে থাকলেও পরে তাতে পরিবর্তন আনা হয়নি। এ কারেণে বিএনপি ইসির নতুন সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।

গত ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচটি আইন ও ৯টি বিধিমালার সংস্কার চূড়ান্তের কথা থাকলেও এগুলোর কোনোটি এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়াও নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংলাপ শেষ করতে পারলেও সময়মতো এর সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি। গত ডিসেম্বরের মধ্যে সংলাপের সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও তা শেষ করতে এপ্রিল পার হয়ে যায়।

এ দিকে নির্বাচনে গণমাধ্যম কর্মীদের দায়িত্ব পালনের পরিধি নির্ধারণ করে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় সোস্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি ও অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এ লক্ষ্যে গতকাল নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও সোস্যাল মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে তারা।

গণমাধ্যম কর্মীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে জানান, ভোটকে সামনে রেখে আকস্মিকভাবে নীতিমালা প্রণয়নের তৎপরতায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
  • Courtesy: NayaDiganta/May 09, 2018


স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন জরুরি

এম এ বাকী খলীলী


বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাংক খাত নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কারণও সংগত। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, নতুন কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় আয়ের থেকে বেশি, দুটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ব্যাপক পরিবর্তন, আরও নতুন তিন ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার খবর, কিছু ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা এবং সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও পুঁজির ঘাটতি।

কয়েক দশক ধরে সরকারি ব্যাংক খাতে যে ঋণখেলাপি সংস্কৃতি চালু আছে, তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তার বাইরে আছে কেলেঙ্কারি। কয়েক বছর আগে থেকে বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংকের কেলেঙ্কারির পর ফের খবরের শিরোনাম হয়েছে জনতা ব্যাংক। সোনালী, জনতা ও অগ্রণীকে তাহলে ‘লিমিটেড কোম্পানি’ করে কী লাভ হলো? চার ব্যাংকের যে ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা, সেগুলোর মোট পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। আবার ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার বেশি। যদিও বহুলাংশে পুনঃ অর্থায়নের কারণে প্রতিবছর ঋণস্থিতি কম দেখানো হচ্ছে।

কিন্তু কী কারণে এই ঋণখেলাপির সংস্কৃতি? কেন সরকারি খাতে ব্যাংকগুলো দক্ষ হয় না? সরকার কেন ব্যাংক নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়? রাজনৈতিক অর্থনীতির দৃষ্টিতে এর সাধারণ কতগুলো কারণ আছে।

প্রথম কারণ, অর্থনৈতিক লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার অগ্রাধিকার খাতে ঋণ দেয় এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণ নেয়। অন্য কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে থাকা লোকদের চাকরি অথবা আর্থিক সুবিধা (যেমন ঋণ দেওয়া, ঋণের পুনঃ অর্থায়ন করা, পর্ষদের মাধ্যমে সুদ এবং ঋণ মওকুফ) দেওয়া। এতে ব্যাংকের দক্ষতা মার খায়। আমাদের সংস্কৃতি ও আচরণ অনুসারে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরকারের বা সরকারি রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন না।

দ্বিতীয়ত, বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর মালিকানার কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। সরকারি ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যরা সরকারেরই নিয়োগ করা লোক। নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেয় রাজনৈতিক বলয়ের লোকদের। সরকারি ব্যাংকগুলোতে গত কয়েক দশকে যাঁরা পর্ষদ সদস্য ছিলেন, তাঁদের অনেকেই অনভিজ্ঞ। চেয়ারম্যানদের অনেকেও আবার ব্যাংক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ছিলেন না। পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সমস্যাজড়িত বিশাল ঋণ দেওয়া হয়েছে ক্রমাগত। এত বড় বড় ঘটনা ঘটল অথচ পর্ষদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাকে ধরা হয়। পর্ষদের প্রধান ভূমিকা তাহলে কী? সরকারি ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যরা মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন। পর্ষদের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা এবং সুশাসনের জন্য ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার জন্য স্বাধীন পরিচালকদের বড় ভূমিকা আছে, যা পুরোপুরি অনুপস্থিত। এখানেই হলো সরকারি ব্যাংকের মালিকানার কাঠামোগত বড় দুর্বলতা।

তৃতীয়ত, ব্যাংকের প্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিতে দরকার ব্যাংকারদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারা। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো। ব্যবস্থাপনার উপরিকাঠামোতে পরিবেশ ভালো না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে তা দুর্নীতি ও অদক্ষতার জন্ম দেয়।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়। কয়টা নতুন ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। যে কটি ব্যাংক লাইসেন্স পেয়েছে, তাদের উদ্যোক্তাদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি সংসদে ব্যাংক আইন সংশোধিত হয়েছে। সে অনুযায়ী একই পরিবার থেকে সর্বোচ্চ চারজন পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন। এখন ব্যাংক চালানো আরও কঠিন করা হলো। প্রত্যেক স্পনসর-শেয়ারহোল্ডার মনে করেন, তাঁরাই ব্যাংকের মালিক। এখন তা আরও প্রতিষ্ঠিত হলো।

ব্যাংকের সিদ্ধান্তে সুশাসন এবং জবাবদিহির জন্য কতকগুলো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।

প্রথমত, সুশাসনের নীতি অনুসারে সরকারি ব্যাংকে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ করা। অর্থ মন্ত্রণালয় যাঁদের দেয় তা হলো তাদের প্রতিনিধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেবে, যাঁদের অর্থনীতি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে এবং যাঁদের সঙ্গে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকবে না।

দ্বিতীয়ত, সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য, যেকোনো পর্যায় থেকে যেকোনো মৌখিক সুপারিশ আসুক না কেন, তা লিখিত হতে হবে, না হলে কর্মকর্তা দায়বদ্ধ হবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই নির্দেশনা আসতে হবে।

তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্ত হতে হবে। ব্যাংক খাতে কিছুদিন ধরে যা ঘটেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেও সে জন্য দায়ী। এত শাখা নিরীক্ষা করতে যান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা, তাতে আসলে কী ধরা পড়ে? ঋণখেলাপিদের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত তাঁদের। বর্তমান অবস্থাকে জরুরি অবস্থা ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পুরো ব্যবস্থাপনা কাঠামো, নীতিমালা ও ব্যাংক কোম্পানি আইন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। বর্তমান কাঠামো ও চর্চার মধ্যে যে সমস্যা আছে, তা মানতে হবে।

চতুর্থত, নিয়ম হওয়া উচিত, কোনো ঋণী তাঁদের আগের ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত নতুন ঋণ পাবেন না। একটার পর একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে শুধু ঋণের দ্বারা, আর একসময় ব্যাংককে এর বড় দায় নিতে হবে। এই চর্চা বন্ধ হওয়া উচিত।

পঞ্চমত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে আর্থিক বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেওয়া। সরকারি ব্যাংকের ব্যাপারেও একই ভূমিকা থাকা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয় নিশ্চিতভাবে বোঝে যে ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো বড় দায়ী।

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে স্থিতিশীল ব্যাংক ব্যবস্থা খুবই জরুরি। আর তাই বর্তমান অবস্থা থেকে ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে দরকার একটি স্বাধীন এবং শক্তিশালী ব্যাংক কমিশন গঠন করা। একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, ফিন্যান্সিয়াল অর্থনীতিবিদ, আর্থিক বিশ্লেষক, ব্যাংক খাত-সম্পর্কীয় বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং আর্থিক খাত-সম্পর্কীয়ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এই কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এখনই সময়। ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনে এবং সর্বোপরি জনগণের আস্থা অর্জনেও এই কমিশন গঠন ভালো প্রভাব ফেলবে। কিছু ব্যাংকের একত্রীকরণ হয়তো প্রয়োজন পড়বে, সেটি এই কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে করলে জনগণের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
  • এম এ বাকী খলীলী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
  • Courtesy: Prothom Alo /May 09, 2018

‘বন্দুকযুদ্ধ’ কি চলতেই থাকবে?

আইনানুগ পন্থার বিকল্প নেই

গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর-পিপুলবাড়িয়া সড়কের পিপুলবাড়িয়া মাঠে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আলতাব হোসেন (৩৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ-সমর্থিত সূত্রেই খবর পাওয়া গেছে। খবরটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি সম্ভবত এই কারণে যে বন্দুকযুদ্ধে লোকজনের প্রাণ হারানো এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রোববার বিকেলেই ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় আসলাম নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এভাবে বছরের পর বছর বন্দুকযুদ্ধে কিংবা নিরাপত্তা হেফাজতে মানুষের মৃত্যু ঘটে চলেছে, কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

একটা সময় ছিল, যখন বন্দুকযুদ্ধে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে জনসাধারণ জানার চেষ্টা করত, সেই ব্যক্তির চরিত্র কেমন ছিল; তিনি সন্ত্রাসী, ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ী ইত্যাদি ছিলেন কি না; বা অন্য কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না। তারা যদি জানতে পারত যে নিহত ব্যক্তিটি অপরাধী ছিলেন, তাহলে তাঁর বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর ঘটনাকে অন্যায় বলে মনে করা হতো না। ওই ব্যক্তি যদি দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ও কুখ্যাত অপরাধী হতেন, তাহলে জনমনে একধরনের স্বস্তিই দেখা দিত। সমাজে বন্দুকযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠত কেবল তখনই, যখন বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তিটি হতেন নিরীহ, নিরপরাধ, ভালো মানুষ।

বন্দুকযুদ্ধ সম্পর্কে সমাজের এই সাধারণ মনোভাব সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বন্দুকযুদ্ধ অনুমোদনকারী নীতিনির্ধারক কর্তৃপক্ষ অবগত ছিল বলেই মনে হয়। কারণ, প্রতিটি বন্দুকযুদ্ধ হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচার ও প্রমাণ করার চেষ্টা করত যে নিহত ব্যক্তিটি অপরাধী বা মন্দ লোক ছিলেন। বিষয়টা এমন যেন, অপরাধী হলেই বিনা বিচারে তাঁকে হত্যা করা জায়েজ হয়ে যায়।

এই মানসিকতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছে। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধ ইত্যাদি নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের দ্বারা মানুষ হত্যার ঘটনা এমন নিয়মিতভাবে ঘটে চলেছে, যেন এটাকে অপরাধ দমনের একটা স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কখনো এসব হত্যাকাণ্ডকে বিচার ছাড়াই হত্যার ঘটনা বলে স্বীকার করে না এবং কাগজে-কলমে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে প্রাণহানির বিবরণ দেওয়া হয়, তবু সেসব বিবরণ এখন সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেগুলো প্রায় একই রকমের গৎবাঁধা বিবরণ।

বন্দুকযুদ্ধে এখন অনেক নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা-কর্মীও এভাবে নিহত হয়েছেন বলে তাঁদের আত্মীয়স্বজন অভিযোগ করেন। গুম বা নিখোঁজ, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, আইনানুগ পন্থার বাইরে এসব ঘটনার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে অস্বীকারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বিকার ভাবেরও প্রকাশ ঘটে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের একাংশের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ভিন্নতর ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিয়ে থাকতে পারে, যার একটা বড় প্রমাণ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বন্দুকযুদ্ধ ও নিরাপত্তা হেফাজতে ৪৬ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (২৮ জন) মানুষ নিহত হয়েছে পুলিশ বাহিনীর (ডিবিসহ) সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে। পুলিশই আমাদের প্রধান আইন প্রয়োগকারী বাহিনী, তাদের কাছে প্রত্যাশা আইনানুগ পন্থা বা ডিউ প্রসেস। আইনবহির্ভূতভাবে অপরাধ দমনের এই প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন।

  • Courtesy: Prothom Alo /সম্পাদকীয় /May 09, 2018


প্রজ্ঞাপণ জারি না হলে রোববার থেকে আন্দোলন

কোটা বাতিল করে কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপণ জারি না হলে রোববার থেকে আবার আন্দোলন


কোটা বাতিল করে কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপণ জারি না হলে রোববার থেকে আবার আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে, আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণ জারিতে সরকার নাটক শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আজ সকাল ১১ টায় মানববন্ধন কর্মসূচির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপণ’, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, বৃথা যেতে দেব না’—স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। পরে একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিলন চত্বর ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন আন্দোলনকারীরা। এরপর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন। কলাভবনের মূল ফটক ছাড়িয়ে ভিসি চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ হয় মানববন্ধন। দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মানববন্ধন চলে।

পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি জানায়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এক যোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

কর্মসূচি শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘অহিংস ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আমরা চাই, সরকার যেন দ্রুত কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণ জারি করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত কোটা বাতিলের কোনো প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়নি।’

রাজারাশেদ খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন সরকারের ওপর আস্থা রেখেছি। সরকারকে সময় দিয়েছি। কিন্তু ২৮ দিন পার হওয়ার পরও প্রজ্ঞাপণ জারি হয়নি। এখন সরকার আমাদের সঙ্গে নাটক শুরু করেছে। প্রজ্ঞাপণ জারি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যদি কালকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে প্রজ্ঞাপণ জারি না হয়, তাহলে রোববার থেকে সারা দেশে ছাত্ররা পথে নেমে আন্দোলন করবে। ছাত্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে।’

  •  Courtesy: Prothom Alo /May 09, 2018

‘ভাঙচুর’ হওয়া গাড়ি টঙ্গী থানায় অক্ষত, আসামি ১০৩!

  • মামলার এজাহারে একটি ভাঙচুর হওয়া লেগুনা জব্দের তথ্য।
  • তবে গাড়িটি অক্ষত পড়ে আছে থানায়।
  • পুলিশ বলছে, লেগুনা ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
  • মালিক ও চালক বলছেন, কিছুই হয়নি।
  • ১০৩ আসামির ৪৮ জন বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য।

যে লেগুনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ গাজীপুর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়েছে, সেটি অক্ষত অবস্থায় পড়ে রয়েছে টঙ্গী থানার প্রাঙ্গণে। আর মামলার আসামিদের অধিকাংশই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নিকটাত্মীয় ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি।

বিএনপি বলছে, তাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশ এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বেছে বেছে নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত নেতাদের আসামি করেছে, যাতে পরে নির্বাচন হলেও ফাঁকা মাঠের সুবিধা নিতে পারে সরকারি দল।

রোববার আদালতের নির্দেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ হাসান সরকারের বাড়ির আশপাশে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১৩ জনকে আটক করে। ছয় ঘণ্টা পর নোমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১২ জনসহ ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করে পরদিন ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করে পুলিশ। এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি আছে আরও এক শ থেকে দেড় শ জন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ৪৮ জনই বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ইচ্ছা করেই পুলিশ এ ধরনের মামলা করে থাকে। আসামিদের হয়রানি করা হবে, টাকা আদায় করা হবে। পরে নির্বাচন হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পালিয়ে থাকতে হবে। এই মামলায় যে ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়, সেটাও হাসান সরকারের বাড়ি থেকে কয়েক শ গজ দূরে ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টার হেভেন রেস্তোরাঁর সামনে। ঘটনার সময় বলা হয়, রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা, আর মামলা দায়ের হয় সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে একটি লেগুনা গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৬০৮০), কাচের টুকরা ও ১০টি ইটের টুকরা। মামলায় বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও এক শ থেকে দেড় শ নেতা-কর্মী পুলিশ দেখে পালিয়ে যান। তাঁরা একটি লেগুনা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন।

কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িটি অক্ষত অবস্থায় থানায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তাতে ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগেরও কোনো আলামত দেখা যায়নি। লেগুনার ভেতরে বসে ছিলেন গাড়িটির মালিক গাজীপুরের কামারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আলামিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৬ মে (রোববার) বেলা পৌনে তিনটায় লেগুনাটি রিক্যুইজিশন করে পুলিশ। সাড়ে চারটার দিকে টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকা থেকে তিন-চারজনকে আটক করে ওই গাড়িতে তোলা হয়। থানার দিকে যাওয়ার পথে গাড়ি নষ্ট হওয়ায় পুলিশ অন্য গাড়ি নিয়ে চলে যায়। গাড়িটি ঠিক করে ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে থানার সামনে থেকে আবার আটক করে গাড়িটি থানার ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথম আলোর কাছে একই বিবরণ দিয়েছেন গাড়িটির চালক রকিবও। গাড়িটিতে আগুন দেওয়া বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেন তাঁরা দুজন।

মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম, বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাজহারুল আলম, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ইজাদুর রহমান। আসামি করা হয়েছে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের চার চাচাতো ভাই সালাহ উদ্দিন সরকার, পাপ্পু সরকার, নকিব উদ্দিন সরকার ও অপু সরকারকেও। সালাহ উদ্দিন সরকার টঙ্গী অঞ্চলের বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক। হাসান সরকারের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে মামুন সরকার, ফুফাতো ভাই টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক বশির ও মামাতো ভাই নবীনও আসামি।

এ ছাড়া ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে কোনাবাড়ী ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস সরকার, ১৯ থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে কাউনতিয়া ইউনিটের দায়িত্বে থাকা নাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যান, ১৩ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সুরুজ, ২৩ থেকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে গাছা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা হাজি সামাদ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের একাধিক কাউন্সিলর, বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

হাসান উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হওয়ার খবর পেয়ে ওই দিন তাঁর বাড়ি ও কলেজগেট এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। কিন্তু কোনো ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘আমাকে কর্মী-সমর্থকশূন্য করে খালি মাঠে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে গণগ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’

এই মামলার বিষয়ে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কাউকে হয়রানির জন্য নয়, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা করা হয়েছে। থানা থেকে লেগুনাটি ছাড়িয়ে নিতে তার মালিক মিথ্যা কথা বলছেন।

মামলার এজাহারে তথ্যের গরমিল আছে। সালাহ উদ্দিন সরকার ও তাঁর ভাতিজা মামুন সরকারকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের দুজনের পিতার নাম একই লেখা হয়েছে। আসামির তালিকায় আছেন কাশিমপুর এলাকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার। আসামির তালিকায় আছেন ‘মিসেস শওকত’ নামে একজন। যদিও শওকত হোসেনের স্ত্রী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুসল্লি, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হান্নান মিয়া, কাউন্সিলর সবদের হাসান ও সফি উদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের মুফতি নাসির উদ্দিন, মুফতি মাসুদ, কোনাবাড়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ইদ্রিস আলীসহ টঙ্গী ও গাজীপুরের কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আছেন আসামির তালিকায়।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরকার বিএনপির জনসমর্থন দেখে হতভম্ব ও ভীত হয়ে পড়েছে।

সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর হতাশ ভোটার ও প্রার্থীরা। আর হতাশার পাশাপাশি আতঙ্ক যোগ হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। আটক হওয়ার ভয়ে আছেন অনেকে। গাজীপুরের ভোটারদের মধ্যেও মামলাটি এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে বহু বছর ধরেই বিশেষ ক্ষমতা আইনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ হচ্ছে। বিভিন্ন সময় হাইকোর্টের রায়েও এটি প্রতিফলিত হয়েছে। রাজনীতির মাঠে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ নিঃসন্দেহে আইনটির নগ্নতা প্রদর্শন ও অপব্যবহার।’ তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এ ধরনের মামলাকে নির্বাচনে পরাজয় ঠেকানোর কৌশল হিসেবে দেখতে পারে জনগণ।

  • ProthomAlo/09 may 2018

BB eases rules allowing 4 SCBs to inject Tk 660cr to Farmers Bank

Bangladesh Bank on Tuesday waived three provisions of the bank company act for allowing four state-run commercial banks (SCBs) to inject Tk 660 crore as equity into the scam-hit Farmers Bank and go into the bank’s board.

BB took the move under the government initiative to revive the Farmers Bank that has been suffering from intense liquidity crisis followed by distrust of its customers because of loan scams.

Under the move, Sonali, Janata, Agrani and Rupali would purchase shares worth Tk 165 crore each of Farmers Bank totaling Tk 660 crore, while the Investment Corporation of Bangladesh would purchase Tk 55 crore shares of the entity.

A BB order issued by its governor Fazle Kabir said that Sonali, Janata, Agrani and Rupali banks were exempted from complying section 14 (a) and 26 (a) under section 121 of Bank Company Act, 1991 allowing the bank to invest into the Farmers Bank.

BB also waived 23(1) (a) of the act allowing managing directors/directors of the four state run banks be appointed as the director of Farmers Bank. BB officials said that as an NBFI, ICB could directly invest in the Farmers Bank and hold director post of any bank. 

Following by huge irregularities by the owners of the bank, Farmers has gone through reshuffle in last few months with the ouster of its former chairman Muhiuddin Khan Alamgir, an Awami League lawmaker, and ex-chairman of its executive committee Mahabubul Haque Chisty. Two director of the bank also resigned after the BB asked them to quit over their alleged involvement in loan scams.

Deposit in the bank stands at around Tk 4,449 crore against Tk 5,151 crore loans, reflecting sorrow state of the entity with almost no cash in the bank’s coffer.

A number of depositors have filed complaints with the central bank after the sinking bank failed to repay them Tk 852 crore of deposits. Due to cash crunch, Farmers Bank has been failing to keep mandatory provisioning.

Finance minister AMA Muhith, however, for a number of occasions have stated that he would take initiative so that the bank keeps running. But his move to inject money from the state-run bank has been criticised by banking experts who recommended for merging the troubled bank with other banks.

  • Courtesy: NewAge / May 08, 2018

ব্যাংকঋণের ৫৭.৫% বড় গ্রাহকদের কাছে

বিআইবিএমের গবেষণা

অল্প কিছু বড় গ্রাহকের কাছে জিম্মি হয়ে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এসব গ্রাহকের ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশের অনেক ব্যাংকের ভাগ্যও। ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উৎপাদনমুখী এসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এলেও ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো এখনো বড় গ্রাহকদের পেছনেই ছুটছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশই বড় ঋণ।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় বিআইবিএমের এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬৫, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪৭ ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭৩ শতাংশ ঋণ ‘বড় ঋণ’ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালেও ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ ছিল বড় ঋণ।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালাটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের কর্মকর্তা ও রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের দুই মহাব্যবস্থাপক নুরুন নাহার ও এএফএম শাহীনুল ইসলাম।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন— বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পণ্ডিত, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা রহমান, বিআইবিএমের প্রভাষক সাদমিনা আমির ও জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানের ইন্টারনেট পার্টনার ছিল ‘আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড’।

কর্মশালা উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকঋণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই সজাগ রয়েছে। এর পরও খেলাপি ঋণসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমাতে বেশ কয়েকটি পদেক্ষপ নিয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী বলেন, ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগসীমা ও বড় ঋণের বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, নৈতিকতাসম্পন্ন লোকের অভাব নেই। কিন্তু তারা যথার্থ মূল্যায়িত হয় না। বরং যারা নৈতিকতার সঙ্গে সমঝোতা করে, তারাই পেশাগত দিক থেকে এগিয়ে গেছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য সুখকর নয়।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, গ্রামের মানুষ ঋণ কম পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় ঋণ দিচ্ছে। আবার একইভাবে নির্দিষ্ট লোককে ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি রেখে বিভিন্ন দেশে অনেকে বিজনেস ক্লাসে ঘুরে বেড়ায়। গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কোনো ঋণ খেলাপি হবে না।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কিছু ধূর্ত লোক একই সম্পত্তি বারবার দেখিয়ে ঋণ নেয়। এ নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিআইবির মতো পর্যায়ে যায়নি। বিষয়টিতে এখন নজর দেয়ার সময় এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকদের ছয় মাসের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখতে হবে। খেলাপি ঋণ মনিটরিংয়ে ডাটা ব্যাংক করতে হবে। গৃহঋণের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা আইনজীবীরা জমিসংক্রান্ত অনেক তথ্য দেন, যা সঠিক নয়। অবশ্যই সরেজমিন পরিদর্শন করে ঋণ দিতে হবে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ব্যাংক জনগণের অর্থ অন্যদের ঋণ দেয়। এ কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা কারখানা গড়ছে, নাকি দামি পাজেরো জিপ কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা নজরদারি করতে হবে ব্যাংককে।

এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, সব ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে না। এজন্য ব্যাংকঋণের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ঋণ আদায়ে আরো শক্তিশালী আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

  • Courtesy: BanikBarta /May 09, 2018