অ্যালেক্স গ্ল্যাডস্টাইন
অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) - এর সদস্যদের নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা সাধারণত খুব একটা ভালো যায় না। ইউটিউবে প্রকাশিত বিতর্কগুলো সেইচিত্রই তুলে ধরে। যেমন ধরুন, যখন হন্ডুরাসের পররাষ্টমন্ত্রী গত গ্রীষ্মে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধমতবাদীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের কথা তুললেন ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি ডেলসি রড্রিগুয়েজ ওএএস বৈঠকে বিস্ময়করভাবে অনেকগুলি পয়েন্ট জিতে নিলেন। তিনি জাতিসংঘের ২০১৬ সালের এইচডিআই বা মানব উন্নয়ন সূচক থেকে বরাত দিয়ে দেখালেন হন্ডুরাসে বিরুদ্ধবাদীদের ওপর ক্র্যাকডাউন হয়ে থাক বা না থাক, সে দেশের পরিস্থিতির তুলনায় বরং ভেনেজুয়েলা ৫৯ পয়েন্ট এগিয়ে আছে। রড্রিগুয়েজ বললেন, তাঁর দেশ এ ধরনের ভয়ানক উপাত্ত নিয়ে শোরগোল কিন্তু তোলে না। আর কি! তাঁর এই দাবি স্পানিশ ভাষাভাষী সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে চাউর হয়ে গেল। এর সুবাদে ভেনেজুয়েলার মাদুরো শাসকগোষ্ঠীর ভিত্তি আরো শক্ত হয়েছিল আর এর পেছনে ছিল জাতিসংঘের আস্থাযোগ্য উপাত্ত।
এই লেখকের মতো যারা মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে এ ধরনের কাহিনী হতাশাব্যঞ্জকভাবেই সুপরিচিত। জেফরি স্যাকস ও বিলগেটস দম্পতির উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে শুরু করে টনি ব্লেয়ারের স্বৈরবাদী জোট পাকানো (ইরাক প্রশ্নে) বা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় চীনতন্ত্রের পক্ষে টম ফ্রেডম্যানের ওকালতির মতো বিষয় গুলি, বিগত দুই দশক ধরে দেখা যায় বার বার রাজনৈতিক উদ্বেগকে পাশ কাটিয়েছে তথাকথিত উন্নয়ন উপাত্ত। স্বৈরশাসকদের পক্ষে ওকালতির ক্লাসিক অজুহাত হলো, অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন, স্বাধীন সংবাদপত্র, অবাধ প্রতিবাদ ইত্যাদির ঝামেলাজট এড়িয়ে স্বৈরশাসকেরা পুরনো নগরগুলো দ্রুত ধ্বংস করে দিয়ে তার ওপর তারা নতুন, চমৎকার সুযোগ-সুবিধাযুক্ত নগর গড়ে তুলেছেন, নদীতে বাঁধ দিয়েছেন, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন, লাখো মানুষকে দ্রারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছেন অনায়াসে। অতএব স্বৈরশাসকদের মতো মানুষের এমন বন্ধু আর কে আছে?
ঠিকই তো? এমনটি আর হয় না। আমার সাধের ময়না। তবে সমস্যা হলো স্বৈরাচারের গুণগান গাইতে হলে শ্বাসরুদ্ধ জনসমাজের মধ্য থেকে যাচাইযোগ্য উপাত্ত বের করে আনার। কাজটি কার্যত অসম্ভব। ইথিওপিয়া থেকে কাজাখস্তান যেদেশের বেলাতেই হোক না কেন তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত যতোই প্রমাণ করুক যে স্বৈরশাসকরা ভালো কাজ করছে আসলে তেমনটা মোটেও নয়। কেননা, ঐ সব উপাত্ত বা তথ্যের জনক, বলাবাহুল্য, সাধারণত ঐ সব স্বৈরশাসক নিজেরা।
হাতেগোনা কিছু সংগঠন তথ্য সংগ্রহের বিশ্বশিল্প পরিচালনা করে থাকে। এদের মধ্যে আছে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ ও ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। এদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বৃহদাকারের আর্থ-সামাজিক জরিপগুলি পরিচালনা করে থাকে। এসব সংগঠনের গবেষকরা যতোটা বেশি পারা যায় দেশকে তাদের জরিপের অন্তর্ভূক্ত করতে চান। তবে এসব দেশের বহু দেশ --- ৯৭টি দেশ যাদের ভূভাগে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষের বাস সেসব দেশ, হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, স্বৈর শাসিত আর এই স্বৈরশাসকেরা গতানুগতিকভাবে নিরপেক্ষ গবেষক বা অনুসন্ধানকারীদেরকে তাদের নিজেদের দেশের মাটিতে পা মাড়াতে দেন না। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উপাত্ত সংগ্রহকারীদেরকে দেশের লৌহমানবদের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করতে হয়।
বাহরাইনকে আমরা এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিতে পারি। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামকে বাহরাইন সংক্রান্ত প্রায় সব উপাত্তই নিতে হয় বাহরাইনের ‘বাহরাইন অথনৈতিক উন্নয়ন বোর্ড’ নামক সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত জরিপ থেকে। তারা জরিপ পরিচালনা করে তা থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি জেনিভায় ফোরামের সদর দপ্তরে পাঠায়। এর পর থেকে ডব্লিউইএফ-এর বিশ্লেষণ শুরু হয়। ড্যাটা মডেলিং-এর সময় অনেক পরিপ্রান্তিক তথ্য/উপাত্ত বাদ পড়ে বা বাদ দেওয়া হয়। তবে মুল উপাত্ত বা রাশিগুলি যা স্বৈরশাসকের তৈরি তা আগাগোড়া অপরিবর্তিত রয়ে যায়।
এ বিষয়ে ইউনেস্কো প্রতিনিধি বলছেন যে কিউবার বেলায় তাঁরা তাদের প্রতিবেদনে শাসকগোষ্ঠীর দেওয়া শিক্ষা বিষয়ক পরিসংখ্যান ব্যবহার করেন। এদিকে, উজবেকিস্তানের একজন কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের দেশে অন্তর্জাতিক উপাত্ত সংগ্রাহকদের সফর অত্যন্ত বেশিরকমে পূর্ব পরিকল্পিত আর সে কারণে সংশ্লিষ্ট দেশের শাসকগোষ্ঠী সহজেই জরিপের ফল নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
জরিপের ফল স্বৈরশাসকের পরিকল্পনামাফিক না হলে তাঁরা সরাসরি এমনকি ভোটগ্রহণও বন্ধ করে দিতে পারেন। বিশ্ব গ্যালাপ পোল-এর পরিচালক জন ক্লিফটনের সাথে কয়েক বছর আগে এই লেখক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তাঁর সাথে দেখা করেছিলেন। মিঃ ক্লিফটন এই সময়ের স্মৃতিচারণ কথা তিনি লেখককে বলেন। তাঁর কথা মতো তিনি একসময় এক কোম্পানির গবেষক হিসেবে একটি আফ্রিকীয় দেশে উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। সেটা করতে গিয়ে তাঁদের ধরা খেতে হয়। কেননা, তাঁরা যখন কাজ শেষ করে দেশে ফিরছিলেন তখন বিমানবন্দরের তাদের সাজসরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তবে আর যাই হোক কেউ তো আর চায় না যে জরিপের ব্যাপারে কারও দেশের জায়গাটা বিশ্ব মানচিত্রে খালি দেখানো হোক। ফলে ক্লিফটন যেটা বলতে চাইলেন তাহলো, জরিপকারী প্রতিষ্ঠানকে এক না এক ধরনের উপাত্ত তৈরি করতেই হয় সেটা খুব একটা চৌকশরকমে ভালো না হলেও। তাদের উপাত্ত তো দরকার। একটা তো হলেই হয়।
কাজেই উন্নয়ন প্রতিবেদনও তৈরি হয়। তৈরি হয় এমন সব সংখ্যা দিয়ে যার শেষ হয় সেগুলিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক মেকি বৈধতা দিয়ে। ফলে যা হবার তাই ঘটে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত প্রণয়নের বেলায়, বিশেষ করে, বিশ্ব ব্যাংকের বেলায় বিপর্যকর বিভ্রাট ঘটে। বিশ্বব্যাংকের ২০১২ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের উপাত্তগুলি মিডিয়া আউটলেটে দেওয়া হয় আর ধরে নেওয়া হয়ে এটা বিশ্ব পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য একটা বিশিষ্ট নির্দেশনা হয়ে উঠবে। এ থেকে নানা উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ মনে করতে থাকে এধরনের র্যাংকিং পাওয়া তাদের জন্য খুবই দরকার। আর সেজন্য তারা এই কাজে ভয়ানকভাবে প্রয়াসী হয়ে পড়ে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, ইউনেস্কো যে সব উপাত্ত বা পরিসংখ্যান তৈরি করে সেগুলি ব্যবহার করা হয় বিশ্বব্যাংকের World Development Report (World Bank) and the Human Development Index (UNDP) এ। ইউনেস্কোর নিজের কথায়, তাদের পরিসংখ্যানগুলি দিয়ে একটি দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে অগ্রগতির মাত্রা পরিমাপক হিসেবে কাজ করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের শিক্ষার অঙ্গউপাদান ‘যারা ভালো চায়’ ও যার প্রভাব বিনিয়োগকারীদের ওপর কী তার একটা নির্দেশিকা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। আর এসবই যাচাই করা হয় ইউনেস্কো উপাত্তের নিরিখে। এ ক্ষেত্রে উপাত্ত বা ডাটা সরাসরি প্রবাহিত হয় বহু স্বৈর শাসকগোষ্ঠী থেকে ইউনেস্কো থেকে, তারপর এসডিজি রিপোর্টে।
স্বৈরশাসক পর্যায়ে উপাত্ত তৈরি হলেই সেটা ঢুকে যায়, বিশ্বের সবচেয়ে আস্থাযোগ্য বলে পরিচিত সুচকগুলিতে। এরপর আরও স্বৈর কর্তৃপক্ষ এবং তাদের অজানা সমর্থকরাও এসব তথ্য/উপাত্ত তাদের প্রচারণায় ব্যবহার শুরু করে দেয় যা মানবাধিকার উন্নয়ন প্রয়াসের পরিপন্থি।
ইথিওপীয় প্রধানমন্ত্রী মেলিস জেনাবি ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। । ঐ সময়ে বিল গেটস তাঁর উন্নয়ন প্রয়াসে পাশ্চাত্যের প্রশংসাকীর্তনে নেতৃত্ব দেন এই বলে যে জেনাবি তাঁর দেশের লাখো মানুষকে দারিদ্র্যের শৃংখল মুক্ত করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণভাবেই অলক্ষ্যে অবহেলিত থেকে যায় জেনাবির দেশে কার্যত সামগ্রিক সেন্সরশিপ বা শত শত প্রতিবাদিকারী ও বিরুদ্ধবাদীকে হত্যার লোমহর্ষক ও নির্মম বাস্তবতা। এ বিষয়ে দ্য ইকনমিস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস -এর রিভিউ অব বুকস-এ বলেছে, ইথিওপিয়ার জেনাবি শাসকগোষ্ঠী উন্নয়ন উপাত্তে কারচুপি করেছে।
দূর ভেনেজুয়েলায় (এখন মৃত) হুগো শ্যাভেজ জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটা বিশ্বখ্যাতি গড়ে তুলেছিলেন। তিনি মহাগর্বে উপাত্ত দেখিয়ে তাঁর প্রশাসনের প্রশস্তি গাইতেন এই বলে যে শ্যাভজ প্রশাসন দেশে দারিদ্র্য ৫০% কমিয়েছে। ভেনেজুয়েলার শ্যাভেজ উত্তরাধিকারি শাসক মাদুরোর বিরুদ্ধবাদী ছাত্রদের ওপর স্টিমরোলার চালানো --- তাদের অত্যাচার আর গুম, অপহরনের যৌক্তিকতা দিতে তিনি উপাত্ত দিয়ে বলেছেন, তাঁর শাসকগোষ্ঠী আগাগোড়া জনগণের মাঝে বৈষম্য কমাচ্ছেন। দারিদ্র্য কমেছে বিপুলভাবে নাগরিকদের জীবনমান সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। তাঁর এসব উপাত্ত কোন উৎসের? এ উৎস হলো লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলির জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশনের যে কমিশন আবার ব্যবহার করেছে Millennium Development Goal -যা সরাসরি তার নিজের স্বৈর সরকারের পরিসংখ্যান কর্মকর্তাদের দেওয়া।
আজারবাজাইানে ইলহাম আলিয়েভ হলেন একনায়ক। তিনি বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছেন আজারবাইজানকে এক সমৃদ্ধ, বিকাশশীল, কার্যকর সরকার হিসেবে যে সরকার বিনিয়োগ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য তিনি অপব্যবহার করেছেন প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত উপাত্তের।
The World Economic Forum - আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো আজেরিদের এই স্বৈরশাসক গোষ্ঠীকে তাদের আর্থিক সাফল্য নিয়ে আলোচনার জন্য এই ফেরামকে ব্যবহার করতে দেয়। আজেরি শাসকরা এ প্ল্যাটফরমকে অপব্যবহার করে নিজেদের দেশে বিরুদ্ধবাধীর ওপর জেলজুলুম থেকে শুরু করে কোটি কোটি ডলার তছরূফকে চূনকামে ঠেকে সাফসুতরো করতে।
আরেক আসামী রুয়ান্ডার ডিক্টেটর কাগামে। তাঁর মানবাধিকার লংঘনের বিষয় এখন প্রবাদতুল্য। কি না করেছেন তিনি। হত্যা করেছেন তাঁর সমালোচক সাংবাদিকদের, কঙ্গোর জঙ্গলে বিরোধীদের খুন করাতে ডেথ স্কোয়াড ভাড়া করেছেন, আন্তজার্তিক পর্যায়ে কুখ্যাত খুনিদের ব্যবহার করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। তবে এতো কিছুর পরেও বিল ক্লিনটন থেকে শুরু করে জেফরি স্যাকস-এর মতো ব্যক্তিরা তাঁর রুদ্ধশ্বাস প্রশংসা করেছেন তাঁরা তার অর্থনৈতিক সাফল্য ও নের্তৃত্বের। এহেন কাগামে মাত্র কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৯% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার এই রাজনৈতিক উপাত্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাঁর উন্নয়নের উপাত্তের মূল্য মাত্র কাগজি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বৈরশাসকদের বিষয়ে এই যে বিশ্বজনীন সন্দেহ কেন প্রকট হচ্ছে না সেটা এক হেঁয়ালি যদিও এ সমস্যা বহুকালের। ১৯৮৭-তে দু’জন সোভিয়েট অর্থনীতিবিদ ‘লুকায়াভয়া সিফরাত’ বা ‘ধূর্ত সংখ্যা’ নামে একটি নিবন্ধ লেখেন। ঐ নিবন্ধে দেখানো হয় ১৯২৮ থেকে ১৯৮৫-র মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের জিডিপির গতি বাস্তবে ছিল, রাস্ট্র কর্তৃক দেখানো জিডিপি থেকে দশগুণ ধীর। এভাবে দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সোভিয়েট শাসকগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান প্রশাসন। দুই অর্থনীতিবিদ প্রমাণ করেন যে ‘সরকারি’ অর্থনৈতিক উপাত্ত মানুষের দুর্গতিকে লুকানোর জন্য উপাত্ত বানানো হয়েছে।
২০১৪ সালে বাকনেল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা একটি সময় ধরে পৃথিবীর অঞ্চল বিশেষে রাতের বেলায় কৃত্রিম আলো দেখে ঐ অঞ্চলে অর্থনৈতিক তৎপরতার বা জিডিপি’র একটা তুলনা করেছিলেন। এই তুলনার উদ্দেশ্য ছিল ডিক্টেটররা গণতান্ত্রিক সরকারের তুলনায় তাদের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছেন কি না। তবে গবেষকরা যে বিশ্লেষণই করুন না কেন, লোকে কেমন করে উন্নয়ন উপাত্তকে কৌশলে ব্যবহার করে তাতে কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটছে না। এ ভাবে দেখা যায়, ডিক্টেটরদের তৈরি উপাত্ত চ্যালেঞ্জের বাইরে থেকেই যাচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ, যদি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ আসেই তাহলে বহু অর্থনীতিবিদ, অর্থায়ক, কূটনীতিক ও দারা যারা তাদের কাজের জন্য এরকম উপাত্ত নির্ভর তারা ভাতে মারা যাবেন।
আর এজন্যই দরকার, মুখোশ খুলে ফেলার। দরকার উপাত্তগুলি কোন উৎস থেকে এসেছে আদতে সে বিষয়ে কঠোর অনুসন্ধান হওয়া দরকার। সেটা না করা হলে ডিক্টেটরদের নিষ্ঠর বাস্তবতা থেকেই যাবে অচলায়তন হয়ে। আর ডিক্টেটররা বলতে পারবেন, আন্তর্জাতিক প্রশস্তি সার্টিফিকেট থাকলে তাদের আর পায় কে?
বিশ্ব নেতাদের উচিত উন্নয়ন উপাত্তর প্রতি তাঁদের আরাধনার বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা এবং মানাবাধিকারকে সব ইস্যুর ওপরে রাখা।
— অ্যালেক্স গ্ল্যাডস্টাইন, চীফ স্ট্রাটিজি অফিসার, হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্ট্রাটিজি অব দ্য অসলো ফ্রিডম ফোরাম।