Search

Wednesday, May 9, 2018

ব্যাংকঋণের ৫৭.৫% বড় গ্রাহকদের কাছে

বিআইবিএমের গবেষণা

অল্প কিছু বড় গ্রাহকের কাছে জিম্মি হয়ে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এসব গ্রাহকের ভালো-মন্দের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশের অনেক ব্যাংকের ভাগ্যও। ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উৎপাদনমুখী এসএমই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এলেও ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো এখনো বড় গ্রাহকদের পেছনেই ছুটছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশই বড় ঋণ।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় বিআইবিএমের এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬৫, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪৭ ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭৩ শতাংশ ঋণ ‘বড় ঋণ’ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালেও ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ ছিল বড় ঋণ।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী এবং এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালাটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের কর্মকর্তা ও রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী অফিসের নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের দুই মহাব্যবস্থাপক নুরুন নাহার ও এএফএম শাহীনুল ইসলাম।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন— বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পণ্ডিত, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা রহমান, বিআইবিএমের প্রভাষক সাদমিনা আমির ও জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানের ইন্টারনেট পার্টনার ছিল ‘আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড’।

কর্মশালা উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকঋণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই সজাগ রয়েছে। এর পরও খেলাপি ঋণসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমাতে বেশ কয়েকটি পদেক্ষপ নিয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী বলেন, ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগসীমা ও বড় ঋণের বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের গুণগত মানোন্নয়নের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, নৈতিকতাসম্পন্ন লোকের অভাব নেই। কিন্তু তারা যথার্থ মূল্যায়িত হয় না। বরং যারা নৈতিকতার সঙ্গে সমঝোতা করে, তারাই পেশাগত দিক থেকে এগিয়ে গেছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য সুখকর নয়।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, গ্রামের মানুষ ঋণ কম পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় ঋণ দিচ্ছে। আবার একইভাবে নির্দিষ্ট লোককে ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকের ঋণ খেলাপি রেখে বিভিন্ন দেশে অনেকে বিজনেস ক্লাসে ঘুরে বেড়ায়। গ্রাহকদের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কোনো ঋণ খেলাপি হবে না।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কিছু ধূর্ত লোক একই সম্পত্তি বারবার দেখিয়ে ঋণ নেয়। এ নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিআইবির মতো পর্যায়ে যায়নি। বিষয়টিতে এখন নজর দেয়ার সময় এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকদের ছয় মাসের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখতে হবে। খেলাপি ঋণ মনিটরিংয়ে ডাটা ব্যাংক করতে হবে। গৃহঋণের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা আইনজীবীরা জমিসংক্রান্ত অনেক তথ্য দেন, যা সঠিক নয়। অবশ্যই সরেজমিন পরিদর্শন করে ঋণ দিতে হবে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ব্যাংক জনগণের অর্থ অন্যদের ঋণ দেয়। এ কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা কারখানা গড়ছে, নাকি দামি পাজেরো জিপ কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা নজরদারি করতে হবে ব্যাংককে।

এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, সব ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে না। এজন্য ব্যাংকঋণের বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি বিআইবিএমের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ঋণ আদায়ে আরো শক্তিশালী আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

  • Courtesy: BanikBarta /May 09, 2018

No comments:

Post a Comment