সৈয়দ কবির হুসেন
জাতীয় নির্বাচনও দেশের সাম্প্রতিককালে নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচনের মতো স্থগিত হতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুলসহ অনেক দেশভাবুক একই কথা বলেছেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আকস্মিকভাবে হাইকোর্ট স্থগিত করে দেওয়ায় ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনায় সরকারের সেই নির্বাচন প্রভাবিত করার নানা কূটকোশল বেড়ে যাওয়ায় বাস্তবতার বিচার করে সরকারের লেজুড়-কর্তৃপক্ষ এরকম সিদ্ধান্ত আরও নিতে পারেন --- এ ধারণা অস্বাভাবিক নয়। আর এটা জাতীয় নির্বাচন অবধি তো গড়াতেই পারে।
গাজীপুরে মহাজোট প্রার্থীর ইতিহাস যারা জানেন তাদেরকে বলে দিতে হবে না যে আওয়ামী লীগ এ আসনের জন্য যোগ্যতর প্রার্থী পায়নি। পাওয়া যায়নি কোনো ইম্যাকুলেট মাস্টারকে। পাওয়া গেছে ভূয়া ডিজিটাল কাকতাড়ূয়া। ফলে যে প্রহসন থেকে প্রত্যাশিত ছিল তাই ঘটেছে। যে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব রিটটি করেছেন তার তৎপরতা হঠাৎ করেই। মাত্র ছয়টি মৌজার জন্য। কেউ জানে না, আর খোদ ইসি তো বলেছে, খোদায় মালুম কেস কখন করা হলো, আর কখন হলো রায়? হলোটা কী । সময়ই দেওয়া হলো না! যেসব মৌজা নিয়ে সমস্যা সেখানে নির্বাচন স্থগিত রেখেই তো কর্পোরেশন নির্বাচন বহাল রাখা যেতো অনায়াসে সব পক্ষে এতো অপচয় আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এ ধরনের অপচয়ের দৃষ্টান্ত কায়েম করেছে সরকার।
সরকার দেশকে উন্নয়নের চেহারার আরশিবাজিতে শশব্যস্ত। তাহলে যারা রক্তপানি করে নানা হুজ্জত সামলে সরকারের কোনো সহায়তা না পেয়েও টাকা দেয় দেশকে, যে অশিক্ষিতা নারীকূল ঘাম ঝরিয়ে প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবার ও দলের ‘মহাশিক্ষিত’ অনুসারীদের হাতে মচ্ছবের টাকা তুলে দেয় নীরবে, যাদেরকে খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেন পাঁচ হাজার টাকার মাসিক বেতনে যদি না চলে গ্রামে ফিরে যাও আর ইউনিয়ন কর্মকর্তাকে গায়েব করার অপরাধ ঢাকতে বলে দেওয়া হয় ‘ওদের পকেটে কিছু গুঁজে দিন’ বলে, তাহলে এখন বোঝার সময় এসেছে যে সেদিন হয়েছে বাসী। প্রধান বিচারপতি সিনহার ব্যাংক একাউন্টে চারকোটি টাকা লেনদেনের খবর পেয়েছে দুদুক। দেখা গেছে সেই টাকা আসলে মহাপবিত্র ‘ফারমার্স ব্যাংকের’ আমানতীদের টাকা - রাষ্ট্রীয় টাকা যা আসলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে এভাবে।
বড়ো প্রসাদোপম বাড়িগাড়ি, মেট্রোরেল, সোনার বরণী পদ্মা সেতু দিয়ে আর হয়তো বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো যাবে না। ১০টাকার চালের কথা দিয়ে যারা ফল না দেখিয়ে বলে যে দেখুন লোকতো ৭০ টাকার চাল বেশ খাচ্ছে! কিন্তু যে ক্রন্দনের শব্দ হাসিনার কানে পৌঁছায় না, উন্নয়নের ঢাক গুড়গুড়ে তাঁর কান ঝালাাপালা, যিনি সভা করতে জীবনের ভয় পান আর বলেন দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত তাদেরকে চেনার সোনারুর অভাব ক্রমেই কমে আসছে।
বলা হযেছিল ১২ টাকার চালের ভাত , খালেদা জিয়ার মাথায় হাত। এখন? কেবল উন্নয়ন মন্ত্রই যে্নতেন সার? দেশের লোক কান দিচ্ছে না। জারিজুরি ধরা পড়ে যাচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কোটা, সেটা নিয়ে আর কেন কথা? সেটাতো নেই। সেটা বঙ্গের এককালের রাজধানী কোটালীপাড়ায় চলে গেল কিনা মানুষকে খোঁজ করতে হবে। ভবি ভুলবার নয়। লাখো তরুণ প্রাণ বলছে, রাজনীতি চুলোয় যাক, তারা রাজনীতি করছে না তবে কোটা দাফনের প্রজ্ঞাপন না দিলে আবার তারা পথে নামবে।
সেই উর্দিওলা মইন ইউ আর ‘বাবুর্চি’ ফখরুদ্দিন যা বলতে বলতে হাঁপানি বাধিয়ে ফেলেছিল যদিও এক উদ্দিনকে ধরেছে অ্যানসারবিহীন ক্যান্সারে - বলেছিল অপশক্তি, আর চারদিকে দেখছি, অপশক্তি! এই ভুত দেখতে শুরু করেছে আলীগ রাঘব বোয়ালেরাও। ভুত এখন আছর গেড়েছে রাঙ্গামাটির পাহাড়ে।
পদ্মা সেতু সময়মতো হবে না, কার্ডিনাল সিন-এর জন্য, মেট্রোরেল খুঁড়িয়ে হাঁটছে। বেগম জিয়াকে জিঞ্জিরার মতো হানাবাড়িতে বন্দি রেখে যিনি এতোটা তোষামদে মত্ত, মনে করেছেন, এইবার পেয়েছি খোদকারিতো করতেই পারি। রোগবালাইযে যদি বৈরি রাম মরে তো আর তাঁকে পায়কে। সেজন্য তার ফাইলটা নিজে সযত্নে আগলে রেখেছেন পাছে কেউ কাঁচিয়ে ফেলে কেসটা! সংবদাটা হলো আজও বেগম জিয়ার জামিন হয়নি।
কতকিছু করা হলো, জনগনের রক্তের টাকায় কেনাকাটার শেষ নেই। ধরুণ পদ, মেডেল, পদক , ডিগ্রি, মাদার অব হিউম্যানেটি, নোবেল, বাহারি সার্টিফিকেট --- এতেও কাজ হচ্ছে না। পথে ঘাটে প্রতিটি মানুষ তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ এর বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। গ্রীক অতিকথার রাজা মিডাস তার দু’কানই (যেগুলো গাধার কান হয়ে গিয়েছিল) গলাবন্ধ জড়িয়ে প্রজাদের চোখের আড়ালে রেখেছিলেন। ভালই ছিলেন তিনি যদ্দিন পেরেছিলেন। তারপর তিনি নিজেই একদিন ফাঁস করে দিলেন সত্যটি। নিশ্চয়ই কাহিনীর শেষটুকু বলার কোন প্রয়োজনই নেই। অবৈধ শাসকেরা এই কাজটি করবেন আর নটে গাছটিও মুড়োবে তখন। আজ অথবা কাল --- যেকোনো দিন।
No comments:
Post a Comment