Search

Sunday, May 27, 2018

সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করার আহ্বান অ্যামনেস্টির

ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য কথা বলার জায়গা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বলা হয়েছে, এটা অর্জন করা যাবে তখনই, যখন দু’দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যম থাকবে। সাংবাদিকদের ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। হয়রানি করা যাবে না। তাদের ওপর হামলা করা যাবে না। এ ছাড়া সাংবাদিকদের নিষ্পেষণমূলক আইন ব্যবহার করে কণ্ঠরোধ করা যাবে না।

গতকাল শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে এমন আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি। বৈঠকে সুনির্দিষ্ট মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ আছে তাও তুলে ধরার জন্য উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানায় এ সংস্থাটি। অ্যামনেস্টির ভারত বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেল এমন আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার- তাদের তা সমুন্নত রাখা উচিত। সামনেই দু’দেশের জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে মানবাধিকারের প্রতি দু’দেশের সরকারের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির প্রতি অটল থাকতে আহ্বান জানানো হয়।

আকার প্যাটেল তার বিবৃতিতে বলেন, ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে একপেশে হয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলো ও ভারতে মানবাধিকার রক্ষার পক্ষের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অথবা ভয়াবহতার কাছাকাছি এমন হামলার তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে মোদি ও হাসিনাকে। বাংলাদেশে উপজাতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কর্মীদের ওপর হামলারও তদন্ত করতে হবে। এ সময় প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য নিজেদের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুসরণীয় বলে অভিনন্দিত করা হয়। কিন্তু ভারতে ৪০ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে যে গড়িমসি করছে তাতে হতাশা প্রকাশ করেন আকার প্যাটেল। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে ধরে তা অনুসরণ করা উচিত ভারত সরকারের। একই সঙ্গে নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা থেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান আকার প্যাটেল। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/ মে ২৭, ২০১৮ 

Participation of MPs in electioneering

Will create bumpier playing field


The Election Commission has approved 11 changes to its City Corporation Election Code of Conduct Rules 2016, one of which will permit parliament members to participate in electioneering in local elections. 

What is surprising is that not only have they been delisted from the list of people barred from campaigning in local elections, but also that the decision was taken hastily without discussing the issue with other political parties, to accommodate the demands of the Awami League. Coming as it does on the heels of Khulna City Corporation which has done nothing to enhance the credibility of the commission, this decision will further erode public confidence in the EC.  

It was for very good reason that the caveat to electioneering in local elections by certain categories of officials, including members of parliament, was imposed. One cannot deny the impact of their presence in their respective constituency. And for very obvious reasons the local administration is beholden to the local MP because of the political clout he carries. And contrary to what the EC contends, local facilities are provided to the lawmaker whenever he or she visits his or her area.

A very significant change was made to the local government election when it was shorn considerably of its nonpartisan character by allowing party-based election. And with the new provision its local character will vanish completely. These elections are meant to be local. It cannot be so with the direct interference and influence of the local lawmakers that the new EC rule will ensure. The decision we think is a rank bad idea which will do anything but provide a level playing field for all the other political parties, and make the elections anything but local.
  • Courtesy: The Daily Star/EDITORIAL /May 26, 2018

মানুষকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন হয় না

আবুল মোমেন

রণাঙ্গনের যুদ্ধের মাধ্যমে রাষ্ট্র বদল বা নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, কিন্তু সমাজ বদলের যুদ্ধের প্রকৃতি ভিন্ন। তার রণাঙ্গন যেমন সমাজ-বাস্তবতার উপরিকাঠামোয় ছড়ানো, তেমনি সমাজমানসের অন্দরজুড়েও বিস্তৃত। স্বভাবতই কাজটা কঠিন। ১৯৭১-এ আমরা নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের পত্তন করেছি, কিন্তু সমাজমানস রয়ে গেল পুরোনো আদলে। তবু এটি মুক্তির সংগ্রাম ছিল বলে এ সময় পাকিস্তানবিরোধী বক্তব্যের চেয়েও আধুনিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন বড় ছিল। এ আন্দোলনের মেরুদণ্ড ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এর মূল উপাদান উদার মানবতাবাদ, যা সহজাতভাবে অসাম্প্রদায়িক, সম্মিলনকামী। সঙ্গে ছিল গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের অঙ্গীকার। এগুলো রাজনৈতিক কার্যক্রম হলেও উভয়েরই সামাজিক ভূমিকা ও প্রভাব ব্যাপক।

সমাজের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ওপরই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ নির্ভরশীল। একই কথা খাটে সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশের তিনটি ঘোষিত আদর্শের মৌলিক নীতিরই অন্তর্নিহিত প্রণোদনা ধর্মনিরপেক্ষ, যা আমাদের চতুর্থ মূল নীতি ছিল। বাঙালির চিরায়ত ভাবাদর্শের মানবিক প্রণোদনার কারণেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক। আবার গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের সব জনগণ আইনের চোখে সমান, দায়িত্ব ও অধিকারে কোনো তারতম্য থাকার কথা নয়। তার সঙ্গে সমাজতন্ত্র যুক্ত হলে প্রত্যেক নাগরিকের বৈষয়িক প্রাপ্তির ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত হয়। এভাবে এরও অন্তর্নিহিত আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।

রাষ্ট্রের ও আমাদের রাজনীতির এই নতুন অর্জনগুলো কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি বা বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় ছিল না। একসময় গ্রামীণ জীবন যৌথ যাপনের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাদের জীবনসংগ্রাম এবং জীবনযাপন ও উদ্‌যাপন সবার সহযোগিতায় সার্থকতা পেত। তাই এ সমাজের নিম্নবর্গ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ছিল উদার ও মানবিক। কিন্তু ক্রমেই নগরজীবনের প্রাধান্য বাড়ল, সমাজের চেয়ে রাষ্ট্র প্রধান হয়ে উঠল, রাজনীতি সংস্কৃতির চেয়ে প্রভাবশালী ভূমিকা নিল।

গ্রামীণ সমাজে জমিদার ও উচ্চবর্ণের প্রাধান্য ছিল, বৈষম্য ও শোষণ ছিল, তার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে প্রজার বিদ্রোহও ঘটেছে। কিন্তু বৃহত্তর সমাজে অর্থাৎ নিচতলার সমাজে একধরনের সাম্যের আবহে উদার মানবতার চর্চা হয়েছে। কিন্তু নগর, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্রম-প্রাধান্যের ফলে যে রূপান্তর, তাতে নতুন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর উত্থান হলো, এ ব্যবস্থায় রাজনীতি ও বাণিজ্য জোটবদ্ধ হয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যে সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় সমাজমানসের বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমাজমানসের বিকাশের জন্য চাই অবাধ জ্ঞানচর্চা, উচ্চতর গবেষণা, সৃজনশীলতার মুক্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত সুযোগ। এর জন্য পুরোনো চিন্তা, বিশ্বাস, অভ্যাসের অচলায়তনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর, খারিজ করার, সংশোধনের, নতুন কথা বলার মতো পরিবেশ প্রয়োজন। অন্ধবিশ্বাস‌‌, অভ্যস্ত চিন্তা, গতানুগতিক আচারের পক্ষে শক্তিশালী ক্ষমতাবান গোষ্ঠী আছে। তাই সমাজ পরিবর্তনের কাজে যেমন চাই মেধার মৌলিক ব্যবহারের ক্ষমতা, তেমনি প্রয়োজন প্রচলিত অন্ধতার প্রাচীর ভাঙার সাহস।

এ সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ ও বিত্তবৈভব অর্জনে বেপরোয়া প্রচেষ্টা ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণসমাজও এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের রাজনীতি এখন চিন্তা ও চেতনায় সম্পূর্ণ আপসকামী। উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনসহ সমগ্র শিক্ষাঙ্গন অত্যন্ত গতানুগতিক ধারায় ডিগ্রি ও সনদের যূপকাষ্ঠে মাথা পেতে রেখেছে। সাহসী ভাবুক, চমকে দেওয়ার মতো নতুন চিন্তকের দেখা নেই। যাঁরা টিমটিম করে জ্বলছেন তাঁরা সত্যিই নিঃসঙ্গ, সচেতনভাবে তাঁদের কাজ থেকে দূরে রাখা হয়। কেউ কেউ তাতেও নিবৃত্ত না হলে তাঁদের কাজে বাধার সৃষ্টি করা হয়, তাঁদের অকেজো করে রাখা হয়।

এ রকম সমাজে ব্যক্তির উত্থান, নাগরিক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। সব মানুষ তো নীতি-রুচি-অঙ্গীকার নিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকেন না, পরিবারের ভাবনায় কাতর সংসারীর কাছ থেকে তা প্রত্যাশাও করা যায় না। কিন্তু সব মানুষ সংসারের জালে আটকে পড়লে সে সমাজের সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়। আমাদের সমাজে বহুকাল ধরেই পরিবর্তনের চাবিকাঠির ভূমিকায় আছে ছাত্র-তরুণেরা। আশঙ্কার কথা হলো, পুঁজিবাদের পণ্যাসক্তি ও ভোগবাদিতার মোহও তো কম শক্তিশালী নয়। তা যদি শৈশব থেকেই প্রভাবিত করতে থাকে এবং ভাবনা-কল্পনা ও সৃজনশীলতার অবকাশ না রাখে, তাহলে তারুণ্যের সর্বনাশ ঠেকানো মুশকিল। তারুণ্যের অপচয় মানে সমাজের পচন। তার লক্ষণ সমাজদেহে যথেষ্টই প্রকাশ পাচ্ছে।

সড়ক মেরামতের কথা আমরা ভাবি, সেতু নির্মাণের দাবি তুলতে পারি, মেট্রোরেল বা বড় বড় স্থাপনার পরিকল্পনা করি। এসব কাজ সমাজ ও রাষ্ট্র একযোগেই করছে। কিন্তু জ্ঞানে, দক্ষতায়, মানসিকতায় উন্নত মানুষ তৈরির কথা কেউ ভাবি না। মূল্যবোধের সংকট, মানবিক চেতনার ভাটাও দেখতে পাই। এ নিয়ে আলোচনাও কম হয় না, কিন্তু ব্যাধির প্রতিকার ও অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যথাযথ কাজ করতে পারছি না। রাষ্ট্র ও রাজনীতির অ্যাজেন্ডায় মানুষের পরিচর্যা ও উন্নত মানুষ তথা উন্নত মানবসমাজ তৈরির মতো জরুরি বিষয় নিতান্ত গতানুগতিক ভাবনায় আটকে আছে। সেটা রাষ্ট্রের কর্তাদের ভূমিকায় এবং বাজেট বরাদ্দেও প্রকাশ পায়। একটি সমাজের আগাপাছতলা যদি বিষয়-আশয়ের চিন্তায় মগ্ন থাকে তাহলে সেটা কি আর মানুষের সমাজ থাকে? এমন সমাজে অজান্তেই কখন ঘুণপোকায় পরিণত হয় মানুষ। এমন বাস্তবতায় যখন দেখি কেউ আইনের শাসনের স্বপ্ন দেখেন, তখন বুঝি এরা রবীন্দ্রনাথের সেই তরুণ বালক, যারা উন্মাদ হয়ে ‘কী যন্ত্রণায় মরিছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে’।

এর জের টেনে কি বলব, আমাদের কণ্ঠ আজ রুদ্ধ, বাঁশি সংগীতহারা? আমাদের এ সমাজ কি অমাবস্যার আঁধারে কারাতুল্য হয়ে উঠেছে? আমাদের জগৎ কি দুঃস্বপনের তলে বিলুপ্তির পথে? রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করে বলতে হবে, এমন শোচনীয় বাস্তবতার কথা আমরা ভাবব না। কেননা, সমস্যাগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, বুঝতেও পারছি। এবং সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখার মতো দেখতে পাচ্ছি বিশাল এক তরুণসমাজ। তারুণ্যের ক্ষমতায় এখনো আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি; কেননা, নতুন প্রজন্মের মধ্যে চিন্তার কিছু স্বাবলম্বিতা, কিছু মৌলিকত্ব কিংবা সাহসের কিছু ভ্রূণ দেখতে পাচ্ছি। জানি, তাদের দমিয়ে, দাবিয়ে ও ভুলিয়ে রাখার অপশক্তির অভাব নেই, তবে প্রাণশক্তির সহজাত প্রবণতা যে জেগে ওঠার ও বিকাশের দিকে—সেটাই আশার কথা।

এর মধ্যেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, তরুণদের বিশাল উপস্থিতি থাকলেও তার একটি শক্তি হিসেবে জাগরণের লক্ষণ আপাতত নেই। তারুণ্যের মধ্যে চিন্তার জরা, কর্মের জড়তাও লক্ষ করার মতো। কীভাবে যেন আমাদের সমাজটা ভোগের ঊর্ধ্বে উদ্‌যাপনের পর্যায়ে যেতে পারছে না। 

এ সমাজ বাস্তব জীবনে নানা আধুনিক পণ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, কিন্তু এর পেছনে যে সৃজনশীলতা, যৌক্তিক চিন্তা, নিরলস বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, সংশয়, কৌতূহল, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, মূল্যায়ন ইত্যাদি কাজ করেছে, তাকে গ্রাহ্যই করছি না আমরা। এ যেন গায়েগতরে বড় হচ্ছে, স্বাস্থ্যের জৌলুশ বাড়ছে কিন্তু বুদ্ধি-কল্পনা-মনন-সৃজনে বামন হয়ে থাকার অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশসমূহের নানা অনাচারের কথা আমরা জানি। ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনের উদাহরণ এখনো জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু তারা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলোয় হস্তক্ষেপ করে না। তাদের স্বাধীন বিকাশ ও অবদান অব্যাহত আছে। তাতে রাষ্ট্রে নানা সংকট ও অবক্ষয় হলেও ব্যক্তি ও সমাজের মানবিক বিকাশ ও উত্তরণের অবকাশ ক্ষুণ্ন হয় না।

সত্যিই মানবসমাজ হিসেবে এগোতে হলে চিন্তাচর্চা ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রগুলোর স্বাধীন বিকাশের নিশ্চয়তা দিতে হবে। গোড়ায় অবশ্য শিক্ষাকে ঢেলে সাজিয়ে কিশোর-তরুণদের মৌলিক চিন্তাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসা, উদ্যম ও সৃজনশীলতা ধরে রাখার ও লালনের দিকে নজর দিতে হবে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 


সরকারের ইচ্ছাই পূরণ করছে ইসি

বিতর্কে নির্বাচন কমিশন

সরকারের ইচ্ছাপূরণেই কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ইসি সূত্র জানায়, সরকারি দল আওয়ামী লীগ গত এপ্রিলে ইসির বৈঠক করে তিনটি দাবি জানিয়েছিল। সেগুলো হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া, সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন না আনা এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কারের আগে তা আরও পর্যালোচনা করা। ইসির একজন কমিশনারের আপত্তির মুখে সিটি নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আরপিও সংস্কারকাজও আরও পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন না আনার দাবি পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে পূরণ করেছে ইসি।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল। ইসি ঢাকা থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে সমন্বয়কারী করে খুলনায় পাঠায়। বিএনপির দাবি ছিল, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ূন কবীর এবং গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করা। ইসি সেই দাবি আমলে নেয়নি।

আবার অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার, ‘না’ ভোটের বিধান আবার চালু, প্রবাসীদের ভোটার ও ভোটাধিকার দেওয়া, বিভিন্ন ধাপে সংসদ নির্বাচন করে এক দিনে ফলাফল ঘোষণা করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত, প্রস্তাব ও দাবি এসেছিল। এই বিষয়গুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল—এই অজুহাতে ইসি সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে।

এসব পদক্ষেপের কারণে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এই সংস্থা এখন সরকারের ইচ্ছাপূরণে বা সরকারের দেখানো পথে হাঁটছে—এমন আলোচনা সামনে এসেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ইসির বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, সরকারি দল বলল আর ইসি তা করল। ইসি কীভাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে, তা তাদের ঠিক করতে হবে।

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জবরদখল, প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ঘটনা ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সর্বশেষ খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির দুর্বলতা প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। গণগ্রেপ্তার এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে এক পক্ষকে মাঠছাড়া করা, পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা, বিভিন্ন কেন্দ্রে বুথ দখল করে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে নীরবতার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসিকে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি শুরু থেকে বলে এসেছে, এই কমিশন নিরপেক্ষ নয়। এখন তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপে প্রমাণিত হচ্ছে, সরকার যা যা চাইছে, ইসি তা-ই করছে। বিএনপির কোনো দাবির প্রতি তারা কর্ণপাত করছে না। ক্ষমতাসীনদের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে ইসি।

তবে সরকারের ইচ্ছাপূরণে ইসি কাজ করছে—এ কথা মানতে নারাজ ইসির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের ইচ্ছাপূরণে ইসি কাজ করছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসির অংশীজন। তারা যেকোনো বিষয়ে প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য মনে হলে ইসি বিবেচনা করে।

তড়িঘড়ি করে বিধি সংশোধন

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল গত ১২ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংসদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায়। এর দেড় মাসের মাথায় অংশীজনদের কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন। একজন নির্বাচন কমিশনার আপত্তি করলেও সেটা আমলে নেওয়া হয়নি।

সীমানা নিয়ে পিছু হটা

গত জুলাইয়ে ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনায় আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য নতুন করে আইন করার উদ্যোগও নিয়েছিল ইসি। তখন আওয়ামী লীগ সংলাপে অংশ নিয়ে জানিয়েছিল, তারা আগামী নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তনের বিপক্ষে। এরপর ইসির নতুন আইন করার উদ্যোগ থেমে যায়।

বিদ্যমান আইনে ৪০টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছিল ইসি। প্রভাবশালী মন্ত্রী-সাংসদের অনেকে এই পরিবর্তনের প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হন। শুনানি শেষে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫টি আসনে পরিবর্তন আনে ইসি। যেসব মন্ত্রী ও সাংসদ তাঁদের সংসদীয় এলাকার সীমানায় পরিবর্তন প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তাঁদের এলাকায় পরিবর্তন প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।

ঝুলে গেছে আইন সংস্কার

ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে আইন সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত এবং এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কারসংক্রান্ত কমিটি আরপিওতে ৩৫টি সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছিল। এগুলো নিয়ে গত ৯ ও ১২ এপ্রিল দুই দফা আলোচনা করে কমিশন। এরপর ১২ এপ্রিল বিকেলে আওয়ামী লীগ ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, আরপিও সংস্কারের খসড়া যেন আরও পর্যালোচনা করা হয়। এ দাবি জানানোর ঘণ্টা দুয়েক আগেই ইসি সিদ্ধান্ত নেয় আরও পর্যালোচনা করার। সুপারিশগুলো আবার কমিটিতে ফেরত পাঠানো হয়। আগামী নির্বাচনের আগে আইন সংস্কার হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছর নিজেদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, নারীনেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এতে আসা সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে—সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রস্তাব, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল প্রস্তাব এবং ইসির এখতিয়ারভুক্ত প্রস্তাব। এর মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার করা না-করা, ‘না’ ভোটের বিধান আবার চালু ও প্রবাসীদের ভোটার করার মতো আলোচিত সুপারিশগুলোকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় বলছে ইসি।

আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক (ম্যাজিস্ট্রেসি) ক্ষমতা দেওয়ার দাবি ছিল বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর। আওয়ামী লীগসহ তাদের সমমনা কয়েকটি দলের অবস্থান এর বিপক্ষে। বিএনপির দাবি পূরণ করতে হলে আরপিও সংশোধন করতে হবে। সরকার না চাইলে তা সম্ভব নয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণ বাদে একইভাবে অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও আইন সংশোধনের প্রশ্ন আছে। তবে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের যে প্রাথমিক খসড়া করেছে, তাতে সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সংজ্ঞাভুক্ত করার কোনো সুপারিশ নেই।

আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হোক। বিএনপি এর বিপক্ষে। আরপিও সংশোধনীর খসড়ায় ইভিএমে ভোট নেওয়ার সুযোগ রাখার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবেও ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ইসি তা আমলে নিচ্ছে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এ জন্য যা যা প্রয়োজন তা তাদের করতে হবে, সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো সরকারের হাতে, সেগুলো সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে। কিন্তু ইসির পুরো আচরণ এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা যে আচরণ করছে, তা হতাশাব্যঞ্জক।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 

MPs can join city polls campaigns

EC decides; to send the proposal to law ministry for vetting soon


In line with the ruling Awami League's recommendations, the Election Commission yesterday decided to allow lawmakers to participate in city corporation election campaigns.
“The Commission has approved changes to 11 clauses of the existing City Corporation (Election Code of Conduct) Rules 2016,” said EC Secretary Helaluddin Ahmed.

He was talking to reporters after an EC meeting at the Nirbachon Bhaban in the capital. Chief Election Commissioner KM Nurul Huda presided over the meeting, which made the decision.

A top BNP leader and an election expert decried the move, saying it would go in favour of the ruling party.

But the EC secretary said, “Members of parliament don't hold any office, don't use any government vehicle and government officials are not attached with them They also don't hold any office of profit So, the Commission recommended that MPs be excluded from the Very Important Person (VIP) definition. They can take part in city corporation election campaigns." 

However, lawmakers will not be able to use circuit houses or government rest houses during the campaign, as per the new amendment, he added.

The approved proposals will soon be sent to the law ministry for vetting, Helaluddin said.

Responding to a query, he said chances of implementing the amended code of conduct in the upcoming Gazipur City Corporation election was slim as the polls schedule has already been announced.

Responding to another question, he said as a registered political party, the AL too was a stakeholder of the Commission and that the decision was made after reviewing its proposals.

Contacted, Shujan Secretary Badiul Alam Majumdar said the concept of level-playing field will suffer a blow if MPs are allowed to take part in polls campaigns.

“MPs are very powerful in their areas and they allegedly have control over everything in their constituency. So their participation in the campaign will really tilt the election in favour of those they will campaign for,” he said.

BNP standing committee member Amir Khashru Mahmud Chowdhury said after closing political and democratic space, the government has closed the electoral space through the EC.

“Now there will be no election in the country as the election will be turned into a selection process. The present subservient Election Commission has sealed the path of holding a free, fair and impartial election through allowing MPs to carry out election campaigns,” he added.

An AL delegation, led by Prime Minister's Political Affairs Adviser HT Imam, made the proposal to the EC on April 13, after the Commission announced the polls schedule of Khulna and Gazipur city corporation elections.

The AL delegation argued that allowing MPs to join the polls campaign would ensure a level-playing field for all candidates.

Following the proposal, the EC held the meeting on April 19 and formed a committee to evaluate the suggestion.

Earlier in 2015, a similar move by the EC, then headed by Kazi Rakibuddin Ahmad, drew huge flak. At the time, the Commission was mulling over changing the election code to allow ministers and MPs to join local election campaigns.

  • The Daily Star/May 27,2018 

তিস্তায় নীরব হাসিনা, মোদি চুপ রোহিঙ্গায়

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য

  • তিস্তা ইস্যুতে ‘চুপ’ ছিলেন হাসিনা।
  • তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু অমীমাংসিত।
  • তিস্তা নিয়ে মোদি প্রতিশ্রুতি পূরণে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হাসিনা



বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে গত শুক্রবার এক মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতাই যেন প্রবল হয়ে বাজল। একদিকে শেখ হাসিনা তিস্তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি, অন্যদিকে মোদির মুখেও ছিল না রোহিঙ্গা ইস্যু।

গতকাল শনিবার ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু আজও অমীমাংসিত। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশকে পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে এই ইস্যুটি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তবে আমি সেসব বিষয় তুলে এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে ম্লান করতে চাই না।’ 

হাসিনা বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তারা যখন এল, তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত বলে মনে হলো আমাদের। এমনকি নিজের থালার ভাতসহ আমাদের সীমিত সম্পদ তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চাই। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দুই দেশকে অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে বলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দু-মুসলিম সাম্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুলের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন তিনি। তবে তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই বলেননি।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা, রোহিঙ্গা—কোনো ইস্যু নিয়েই কথা বলেননি। তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য শেখ হাসিনার। এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে ভারত।’

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সহায়তা কামনা
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়। তারা রোহিঙ্গাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ধারণার বিপক্ষে। তিনি রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আগ্রহী।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭, ২০১৮ 

পিরোজপুরে ‘বাড়ি দখল করতে’ যুবলীগ নেতার অবিশ্বাস্য কাণ্ড

  •  পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে থাকে গীতা রানীর পরিবার। 
  •  ওবায়দুল বাড়ি ও ক্লিনিক দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ। 




বাসাটিতে গ্যাস নেই। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় নয় মাস ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গীতা রানী মজুমদার ও তাঁর স্নাতকপড়ুয়া একমাত্র মেয়ে।

গীতা রানীর বাসার বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ কোনো কর্তৃপক্ষ বিচ্ছিন্ন করেনি। পরিবারটিকে বের করে দিয়ে বাড়িটি দখল করতে পিরোজপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক ওরফে পিন্টু এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের মাছিমপুর এলাকায় সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পঞ্চম তলায় থাকে গীতা রানীর পরিবার। তাঁর স্বামী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। এর অর্ধেক মালিকানা বিক্রি করা হয় যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকের কাছে। সেই সূত্রে তিনি বাড়িটির অর্ধেকের মালিক হন। কিন্তু তিনি ক্লিনিকের ব্যবসা করায়ত্ত করার পর এখন পুরো বাড়িটিও দখল করতে চান বলে বিজয় কৃষ্ণের পরিবারের অভিযোগ।

গীতা রানী জানান, গত বছরের আগস্টে তাঁদের বাসার পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আনতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। কারা এটা করছে—জানতে চাইলে গীতা রানী বলেন, বাড়ি ও ক্লিনিকটি পুরোপুরি দখল করে রেখেছেন ওবায়দুল হক। তিনিই পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। বাসায় আসা-যাওয়া করতে বাধা দিচ্ছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক পিরোজপুরে ওই বাসায় গেলে নিচতলা থেকে পিছু নেন তিন যুবক। পঞ্চম তলায় গীতা রানীর বাসার কলবেল চাপতেই তিনজনের মধ্যে রেজাউল পরিচয় দিয়ে একজন এই প্রতিবেদককে জেরা করা শুরু করেন। একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কিছুটা দমে যান। তবে এই প্রতিবেদক ওই বাসা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত বাসার সামনেই বসে ছিলেন তাঁরা।

গীতা রানীর বাসার একটি কক্ষে আলমারি, ওয়ার্ডরোবের তালা ভাঙা। ঘরে কেরোসিনের একটি চুলা। গীতা রানী বলেন, ‘প্রায় দিনই হোটেল থেকে খাবার কিনে আনিয়ে খেতে হয়। অন্য বাসায় গিয়ে গোসল করতে হয়। সব সময় আতঙ্কে থাকি। এভাবে কত দিন বেঁচে থাকতে পারব জানি না।’ বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ দায়িত্বশীল সবাই জানেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

২০১৬ সালের ২১ মার্চ গভীর রাতে ক্লিনিকটির মালিক চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার, তাঁর মা, স্ত্রী গীতা রানী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকে একদল দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে মারধর করে এবং দামি জিনিসপত্র লুট করে। চোখ ও হাত-পা বেঁধে তাঁদের ঝাটকাঠি এলাকার একটি বাড়িতে রেখে আসে। স্থানীয় লোকজন সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে শহরের পালপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাসায় পৌঁছে দেন। পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তায় পরিবারটিকে তাদের বাসায় তুলে দেন। এর পাঁচ দিন পর সাংসদের হস্তক্ষেপে মামলা নেয় পিরোজপুর সদর থানার পুলিশ। মামলায় ওবায়দুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।

গীতা রানী জানান, মামলা করার পর তাঁদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। পুলিশও ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে নারাজি দিয়েছেন।

চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার তাঁর ক্লিনিকের অর্ধেক শেয়ার ওবায়দুল হকের কাছে বিক্রি করেন। এর পরপরই ২০১৫ সালের অক্টোবরে রহস্যজনকভাবে অপহৃত হন বিজয় কৃষ্ণ। আহত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। এরপর তিনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই ক্লিনিকসহ পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন ওবায়দুল হক। শুধু পঞ্চম তলায় বিজয় কৃষ্ণের পরিবার থাকে। গীতা রানী বলেন, এখন তাঁদের উচ্ছেদের জন্য অমানবিক পন্থা বেছে নিয়েছেন ওবায়দুল হক।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দুই কোটি টাকা দিয়ে এই ক্লিনিকের অর্ধেক মালিকানা কিনেছি। পরে আরও টাকা দিই পুরোটা কেনার জন্য।কিন্তু রেজিস্ট্রি করার আগেই চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।’ একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘সাংসদ পরিবারটিকে বাসায় তুলে দেওয়ার কারণে তাদের সরাতে পারছি না।’

সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমি তাঁদের বাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছি। এখন শুনছি পুরো বাড়িটি দখল করার চেষ্টা চলছে। এর বিচার হওয়া উচিত।’ সাংসদ আরও বলেন, ওবায়দুল হকের দাবি অনুযায়ী, বাড়িটি যদি তিনি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে কিনে থাকেন, তাহলে তাঁর আয়ের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। তাঁর আয়কর নথি যাচাই-বাছাই করে দুদকের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।

জানতে চাইলে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, ওই সম্পত্তি নিয়ে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে দুই পক্ষের একসঙ্গে থাকা কঠিন। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল হক যে দুই কোটি টাকা দিয়ে অর্ধেক মালিকানা কিনেছে, তার চেয়ে কিছু কম টাকা ফেরত দিলেও সে সরে আসবে।’ অথবা চিকিৎসক বিজয়ের পরিবার চাইলে বাকি অর্ধেক শেয়ারের জন্য আগের চেয়ে বেশি টাকা ওবায়দুল হকের কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারেন তিনি।

মেয়রের এ প্রস্তাব শুনে গীতা রানী বলেন, মেয়রের বক্তব্যেই তো প্রমাণ হয়, ওবায়দুল হক যে পুরো বাড়ি তাঁর বলে দাবি করছেন, তা মিথ্যা।

যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকরা তিন ভাই। বড় ভাই পুলিশ পরিদর্শক। ছোট ভাই অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন নেতা।

জানতে চাইলে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, ‘মালিকানার বিষয়ে আমার করণীয় কিছু নেই। কিন্তু তাঁদের ওপর অমানবিক আচরণ করলে সেটা দেখতে পারি।’ পরিবারের নিরাপত্তা ও প্রতিকার চেয়ে গীতা রানী প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। এমন কাজ যে-ই করুন, তিনি পার পাবেন না। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/মে ২৭,২০১৮ 

বদি ভাই ভয় নাই, জয় বাংলা বলে এগিয়ে চলো...

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের এমপি আবদুর রহমান বদি এখন মিডিয়ায় এক বিরাট সম্রাট। প্রতিদিনই মিডিয়া তাকে নিয়ে নানা ধরনের খবর প্রচার করছে। শুধু প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি এক বিরাট হিরো। 

হিরো অবশ্য তিনি নতুন নন। রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই টেকনাফ- উখিয়ায় তাকে সম্রাট হিসেবে চেনেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। আর এমপি হওয়ার পর তো কোনো কথাই নেই। বাংলাদেশে রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি আবদুর রহমান বদির নাম জানেন না। সে দিক থেকে তিনি ‘হিরো নম্বর ওয়ান’।

সম্প্রতি তার নাম মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার কারণ, সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান। এই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে প্রতিদিন। এই লেখা যেদিন প্রকাশিত হবে, তত দিনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শতাধিক হয়ে যেতে পারে। সরকার এই অভিযানকে বলছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। 

যখন থেকে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে, তখন থেকে একই কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। নতুন কোনো ক্রিয়েটিভ কাহিনী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার তৈরি করতে পারেনি। সে কাহিনী গৎবাঁধা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাকেই আটক করুক, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আটক ব্যক্তি একজন ‘কুখ্যাত’ ঘাতক কিংবা সন্ত্রাসী অথবা অস্ত্রবাজ। পুলিশ বা র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী ওই ব্যক্তিসংশ্লিষ্ট বাহিনীর কানে কানে জানায় যে, অমুক জায়গায় তার আরো অস্ত্র লুকানো আছে। তখন ওই বাহিনী ফোর্স নিয়ে সে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নির্ধারিত এলাকার দিকে রওনা হয়। কিন্তু ওই এলাকায় আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে সন্ত্রাসীর সহযোগীরা।

ওই সহযোগীরা এতই দক্ষ যে, তারা আগে থেকেই অত্যন্ত নির্ভুলভাবে জানতে পারে যে, ঠিক কোথায় র‌্যাব বা পুলিশ অভিযানে যাচ্ছে। এদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও অত্যন্ত শক্তিশালী। কখনো তারা ভুল করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাছাকাছি যেতেই তারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ ক্ষেত্রেও আটক ব্যক্তির সহযোগীরা চিতার চেয়েও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে মুহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আর নিহত হয় পুলিশের জিম্মায় থাকা কথিত সন্ত্রাসী। আজ পর্যন্ত ওই সন্ত্রাসীর সহযোগীদের কেউ ধরাও পড়েনি বা নিহত হয়নি। 

এসব অভিযানে গিয়ে এত বড় বন্দুকযুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নিহত হয়নি। কখনো কখনো বলা হয় যে, এই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে না। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, কথিত ওই সন্ত্রাসীকে র‌্যাব বা পুলিশ ঠাণ্ডামাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। সরকারের সাম্প্রতিক মাদকবিরোধী অভিযানেও হত্যা সম্পর্কে একই কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে। আর যথারীতি মানুষ তা অবিশ্বাসও করে যাচ্ছে।

এই অভিযানেই এসেছে এমপি বদির নাম। দীর্ঘকাল ধরে বদি নিজ এলাকায় তো বটেই গোটা দেশেই মাদকসম্রাট হিসেবে সুনাম নিয়ে আছেন। তার ওপর তার বিরুদ্ধে আছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আদম পাচারেরও অভিযোগ। সেভাবে তাকে আদমসম্রাটও বলা হয়। এই মাদকবিরোধী অভিযানের আগে সরকারের পাঁচটি সংস্থা মিলে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় শীর্ষ মাদকসম্রাট হিসেবে আছে এমপি বদির নাম। মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় মাদক কারবারি হিসেবে এক নম্বরে আছে এমপি বদির নাম। কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে কিছুতেই রাজি নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার বরং বদির পক্ষ নিয়ে কথা বলতে কসুর করছে না। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বদির পিঠ চাপড়ে দিয়ে আগে বলেছিলেন যে, উখিয়া টেকনাফে এমপি বদির বিকল্প নেই। আর এখন মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তিনি বলছেন, একজন এমপিকে তো আর চট করে ধরা যায় না। কেন ধরা যায় না? সাধারণ মানুষ যারা বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন হচ্ছেন, তাদের পরিবারের তো ভিন্ন ভাষ্য আছে। তারা বলছেন, পুলিশ টাকা চেয়েছিল, দিতে পারেনি বলে বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন করা হয়েছে। এখানে তো ন্যায়বিচার হলো না।

এটা সবাই জানেন যে, ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদকের মূল উৎস টেকনাফ। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। টেকনাফের অনেক স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত থাকায় বারবার এমপি বদির নাম উঠে এসেছে। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ কর্মী ও আত্মীয়স্বজনের নামও জড়িত ইয়াবার কারবারে। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। 

গত ২২ মে সচিবালয়ে এমপি বদির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। আমরা সেই অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। বদিসহ অন্য মাদকব্যবসায়ীদের বিষয়ে আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিন। বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তথ্য-প্রমাণ নাই।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে ১৪১ জনের তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় গডফাদার হিসেবে বদি ও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় পৃষ্ঠার একটি প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছু হয় না। দেশের ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’ তালিকায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি বলা হয়েছে। এতে বদির সঙ্গে তার পাঁচ ভাইয়ের নামও উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে সরকারের প্রায় সব সংস্থার তালিকায় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ছাড়াও তার পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে। তার ভাইয়েরা ছাড়াও তালিকায় আছে তার পিএস মং মং সেন ও ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপুসহ বেশ কয়েক জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম।

এক সহযোগী জানিয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাসংক্রান্ত গোপনীয় প্রতিবেদনের ভূমিকা অংশে বলা হয়েছে, সরকারদলীয় এমপি হওয়ার সুবাদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী-সহযোগী নিয়ে তিনি ইচ্ছামাফিক ইয়াবা কারবারিসহ অন্য উৎস হতে অবৈধ আয়ে জড়িত আছেন। শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবার করার সাহস রাখে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জেলার অন্য শীর্ষ মাদক কারবারি বা টেকনাফের যেকোনো চাঁদাবাজ এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সক্ষম নয়। বিশেষত, মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হওয়া ইয়াবা কারবার বন্ধ করার জন্য তার ইচ্ছাশক্তি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ এক বছর আগে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে ইয়াবা কারবারির সংখ্যা বলা হয় ২০০ জন। 

দুই বছর আগে এই তালিকায় মাদক কারবারির সংখ্যা ছিল ৫৫৪ জন। দু’টি তালিকাতেই কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে আবদুর রহমান বদি, তার আপন ও সৎ চার ভাই রয়েছেন। এর বাইরে বদির বেয়াই আক্তার কামাল ও শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলী, মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল ও ভাগ্নে নিপুও ইয়াবা কারবারে জড়িত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বদির ঘনিষ্ঠজন ও ডান হাত জাফর আহমেদ ও তার চার ছেলের নাম রয়েছে শীর্ষ কারবারি হিসেবে। অর্থাৎ বদির বৃত্তের বাইরে নেই কারবারিদের কেউ। আবার টেকনাফের রাজনীতি, অর্থনীতি সব চলছে ইয়াবাকে কেন্দ্র করে। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নেই, যারা ইয়াবা কারবারের মাঝে জড়িত নন।

আর একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে- ভারতের সীমান্তবর্তী একটি জেলার পুলিশ সুপার তাদের জানিয়েছেন, ‘পুলিশের একটি অংশ ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। তাদের সামাল দেয়া বড় কঠিন। কারণ, তাদের বেশির ভাগই মাদক কারবারিদের সঙ্গে মিশে গেছে। মাদক কারবারিদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একটা অংশ মিশে গেছে। তারা প্রকাশ্যে কিংবা পর্দার অন্তরালে থেকে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সঙ্গে তারা মাদক কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছেন। তাই মাদক নির্মূলের পাশাপাশি জড়িত পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তবে আপাতত আবদুর রহমান বদির কোনো ভয় আছে বলে মনে হয় না। কারণ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আছেন বদির পাশে। তারা বলছেন, বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কোনো প্রমাণ নেই। যেন, যে ৬০ জনের বেশি মানুষকে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে মাদক কারবারের প্রমাণ রয়েছে! তাদের বিরুদ্ধেও কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে কেন এই হত্যাযজ্ঞ? এই বিচারবহির্ভূত হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে আমরা স্লোগান দিতে পারি- ‘বদি ভাই ভয় নাই, রাষ্ট্র আছে তোমার সাথে’, ‘বদি ভাই এগিয়ে চলো, সরকার আছে তোমার সাথে’, ‘বদি ভাই চিরজীবী হোক’।
  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ মে ২৭,২০১৮ 

নিষ্ঠুরতা কি সহনীয় হয়ে উঠছে?

বিচারবহির্ভূত হত্যা


কামাল আহমেদ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাভাষীদের চলতি আলোচনার কারণে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি বললেও সম্ভবত কম বলা হবে। আলোচনায় যেসব বিষয় এসেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কোনো একটি অনুষ্ঠানে তাঁর খোলামেলা আলোচনার ছবি, সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানের কিছু ছবি, ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি এবং তাঁর ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট; যাতে লেখা আছে, ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে।’ জন-আলোচনায় সাংসদ বদির এই প্রাধান্য পাওয়ার কারণ সর্বনাশা ইয়াবার কারবারে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ।

সরকারঘোষিত ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা ১২ দিনে ৮১ ছাড়িয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের সম্পর্কে যতটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তৈরি তালিকায় মাদক কারবারি হিসেবে নাম নথিভুক্ত ছিল। পুলিশ ছাড়া আর যারা তালিকা করে, তাদের মধ্যে আছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, পুলিশের অভিজাত অংশে—র‍্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আরও কোনো কোনো সংস্থার তালিকায়ও তাঁদের নাম থাকার সম্ভাবনা আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে সাংসদ বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও প্রমাণ নেই। প্রমাণ পেলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। আইনসম্মত ও যৌক্তিক এই মন্তব্যের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। বছর কয়েক আগে সাংসদের ছয় ভাইয়ের নাম সরকারের তৈরি তালিকায় ছিল। ছোট ভাইয়ের ইয়াবার চালান ধরা পড়ার পর পাঁচ বছরেও যেহেতু তদন্ত শেষ হয়নি, সেহেতু তাঁরা সবাই নিরপরাধ বিবেচিত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। শুক্রবার তাঁর যে বেয়াইয়ের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তাঁর মৃত্যুও কাম্য ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, তা আদালতের বিচার্য বিষয় ছিল। সাংসদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে যুক্তি দিলেন, তাঁর বেয়াইয়ের ক্ষেত্রেও সেই যুক্তি প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। শুধু সাংসদ বদি কেন, এর আগে আরও কয়েকজন সাংসদ এবং ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ এসেছে। যেহেতু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায় না, সেহেতু ধরে নেওয়া যায়, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রমাণের জন্য অপেক্ষার পালা চলছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের কপাল খারাপ যে তাঁদের ক্ষেত্রে একই নীতি অনুসৃত হয়নি।

মাদকের মতো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে মৃত্যু অথবা অপরাধীকে নির্মূল করাই যখন একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তখন যাঁদের প্রাণ গেছে, তাঁদের আসল পরিচয়টাও একটু দেখা দরকার। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পালিয়ে ছিলেন—এমন কারও কথা শোনা যায়নি। তবে গ্রেপ্তার হয়ে আদালত থেকে জামিনে ছিলেন, এমন অনেকের কথাই শোনা গেছে। পুলিশের দুর্নীতিগ্রস্তদের চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন, এমন কয়েকজনের কথাও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অন্তত একজন রাজনৈতিক বিরোধীদলীয় কর্মীর মৃত্যুর কথাও জানা গেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হচ্ছে, পরিচয় ভুল হওয়ায় নিহত হওয়ার ঘটনা। অর্থাৎ সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই শুধু অভিযোগ ওঠার কারণেই এঁদেরকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ (টিআইবি) শাখার ২০১৩ সালের একটি জরিপ বলছে যে দেশটিতে জনসেবা খাতে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হচ্ছে পুলিশ। গত পাঁচ বছরে পুলিশের ভাবমূর্তির যে খুব একটা উন্নতি ঘটেছে, সে কথা বলার মতো কোনো দৃষ্টান্ত তারা তৈরি করতে পেরেছে এমন নয়। মাদকবিরোধী যুদ্ধ চলার সময়েই ইত্তেফাক একজন পুলিশ সুপারের ভাষ্য উল্লেখ করে বলছে, সীমান্তবর্তী একটি জেলায় পুলিশ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায় (আমাদেরও অনেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিশে গেছে, ইত্তেফাক, ২৫ মে, ২০১৮)। সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলার অবস্থা এর চেয়ে উন্নত কিছু হবে, এমনটি মনে করা কঠিন। ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে, পুলিশ টাকা আদায়ের জন্য আটক করে মাদকের অভিযোগ দিয়ে শুধু হয়রানি করছে তা-ই নয়, গাজীপুরে টাকা নেওয়ার পরও কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে মেরে ফেলা হয়েছে (টাকাও নিয়েছে, ক্রসফায়ারেও দিয়েছে; বাংলা ট্রিবিউন, ২২ মে, ২০১৮)। চট্টগ্রামে র‍্যাবের সোর্স পরিচয় ভুল করায় নিহত হয়েছেন একজন এবং পরে সেই সোর্সও ক্রসফায়ারে মারা পড়েছেন (‘ভুল তথ্যে’ র‍্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাবিব নিহত, দাবি পরিবারের; বিডিনিউজ ২৪.কম, ২১ মে, ২০১৮)।

সন্দেহের বশে এবং বিনা বিচারে হত্যার এই ধারা ধীরে ধীরে সমাজে সহনীয় হয়ে উঠছে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার সময়েও এ রকম বিনা বিচারে নাশকতার সন্দেহে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে নিয়ে যাওয়ার পরিণতিতে অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের একটি বড় অংশই এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই প্রকাশ করে এসেছে। কিন্তু দু-একটা সংবাদপত্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব কল্পকাহিনির গোমর ফাঁস হতে শুরু করে এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কৌশলে পরিবর্তন আসে। শুরু হয় পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়ার কৌশল অনুসরণ। এরপর ২০১৬তে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা পরিচালনার পর জঙ্গি নির্মূলে আবারও ‘বন্দুকযুদ্ধ’ একটি সমাধান হিসেবে ফিরে আসে। জঙ্গিবাদের নৃশংসতার বিপরীতে বন্দুকযুদ্ধের বিরুদ্ধে অনেকেই নীরবতার নীতি গ্রহণ করেন।

জঙ্গিবাদীদের কাছে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক ছিল, তাদের কৌশল ছিল আত্মঘাতী লড়াইয়ের। মাদক কারবারিদের কাছেও অস্ত্রশস্ত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে মাদক কারবারিদের বাজার দখল বা নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় ধরনের কোনো লড়াই বা অস্ত্র প্রদর্শনের নজির তেমন একটা নজরে পড়ে না। আসলে মাঠপর্যায়ে যাঁরা এগুলো লেনদেন করেন, তাঁরা খুব বড় মাপের কেউ নন। এই ব্যবসায় যাঁরা বড় খেলোয়াড়, তাঁরা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা যথেষ্ট পরিমাণে পেয়ে থাকেন। পুলিশের গৎবাঁধা বন্দুকযুদ্ধের কাহিনির উপর্যুপরি পুনরাবৃত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা তাই এখন শূন্যের কোঠায়। এসব মৃত্যুর খবরে অবশ্য সরকারের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। কেননা, এসব বন্দুকযুদ্ধ—দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য খুবই কার্যকর। আতঙ্কের কারণে মাঠপর্যায়ের খুচরা কারবারিরা আপাতত হয়তো আত্মগোপন করবেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সমাজের মাদকমুক্তিতে তা খুব একটা কাজে আসবে না। ফিলিপাইন বা মেক্সিকোর অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে।

মাদকের সমস্যা এক দিনের নয়, অতএব সমাধানও তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে—এমন ভাবনার সুযোগ নেই। এর উৎপাদনকেন্দ্র বাংলাদেশে নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতে। আগে আসত ভারত থেকে ফেনসিডিল এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে সাগরপথে হেরোইন। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারের ইয়াবা। এসব সরবরাহের পথ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখায় ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিলে চুনোপুঁটিদের ক্রসফায়ারকেই মোক্ষম দাওয়াই ভাবা হতো না। তবে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে আলাদা কথা। নির্বাচনের আগে সেই আশঙ্কাকে নাকচও করা যায় না।

‘মাদক সমস্যা মোকাবিলার উদ্দেশ্য মহৎ, কৌশল বেআইনি’ শিরোনামে গত সপ্তাহে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত আমার নিবন্ধে শতাধিক পাঠকের মন্তব্যে দেখা যায়, বন্দুকযুদ্ধের কৌশলকে সমর্থন ও বিরোধিতার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি নয়। সমর্থনকারীদের অনেকের মন্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে যে এই নিষ্ঠুরতা অনেকের কাছেই সহনীয় হয়ে উঠেছে। ‘আপনি আইন ধুয়ে পানি খান’ মন্তব্যে বোঝা যায়, এই সমস্যা জনগোষ্ঠীকে কতটা ভোগাচ্ছে। কিন্তু একইভাবে রাজনৈতিক সন্ত্রাস আমাদের ভুগিয়েছে, ধর্মীয় উগ্রবাদ ভুগিয়েছে, ভোগাচ্ছে যত্রতত্র ধর্ষণের ঘটনা, শিশু নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অপহরণ; বেপরোয়া চালকদের মানুষ চাপা দেওয়ার প্রতিযোগিতার মতো নানা অপরাধ। ইতিমধ্যে ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে। ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, মানুষ চাপা দেওয়ার মতো ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পারলে গণপিটুনিতে মেরে ফেলার দৃষ্টান্তও আমাদের রয়েছে। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে মানুষের ধৈর্যচ্যুতির কারণ হচ্ছে, পুলিশের দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে তদন্ত ঝুলে যাওয়া, মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে না পারা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রেও কি তাহলে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ই সমাধান?

আমাদের উচ্চ আদালত অনেক বিষয়েই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিকারে উদ্যোগী হয়েছেন এবং তাঁদের সাফল্যও আছে। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে যেসব বেআইনি হত্যাকাণ্ডের মতো নিষ্ঠুরতার চর্চা চলছে, তা বন্ধে তাঁরা কেন উদ্যোগী হচ্ছেন না, তার কোনো উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে আমরা উদ্বিগ্ন হচ্ছি এই ভেবে যে বিনা বিচারে সন্দেহভাজনকে সাজা দেওয়ার প্রথা আদালতের ভাবমূর্তির জন্য মোটেও শুভ নয়।এসব বন্দুকযুদ্ধ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা বড় অংশকেও যে নিষ্ঠুরতায় অভ্যস্ত করে তুলছে, সেটাও একটা দুর্ভাবনার বিষয়।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ২৭,২০১৮


Anarchy rules transport sector

Cheating continues in the name of seating service

Tuhin Shubhra Adhikary

With the government failing to regulate the so-called “seating service” bus operators in the capital, the buses continue to charge extra every day.

Around 96 percent buses and minibuses offering “seating services” are taking extra fares, a survey of a passengers' platform revealed yesterday.

Bangladesh Jatri Kalyan Samity, the platform, said in the name of “seating services,” 96 percent buses and minibuses lock their doors between 7:00am and 11:00am and 2:00pm and 11:00pm, causing trouble for passengers who want to get on the buses between their starting point and journey end.

Those buses take extra fare as they do not follow the government's fare chart, the platform alleged, saying, “For this reason, transportation cost for the lower-income group is becoming unbearable.”

Unregulated charging of fares is common throughout the year but during Ramadan many regular buses turn themselves into “seating services” putting passengers in trouble, Mozammel Haque Chowdhury, secretary general of the samity, observed.

“Cashing in on the higher demand for buses before Iftar time, they [bus operators] overcharge the passengers,” he told The Daily Star referring to the survey yesterday.

The transport owners on April 15 last year stopped operating “seating service” buses in the capital amid widespread allegations that they were charging extra fares.

Following that move, Bangladesh Road Transport Authority (BRTA) in association with Dhaka Road Transport Owners' Association's (DRTOA) vigilance teams conducted mobile courts to stop such practices.

But the move backfired as a good number of buses were withdrawn from the road for five consecutive days, causing immense sufferings to the passengers.

Against the backdrop, BRTA suspended their drive for 15 days and later for three months. It has been more than a year now since they stopped the drive.

SURVEY RESULTS

From the second to seventh Ramadan, five teams of Jatri Kalyan Samity conducted the survey on 310 buses and 557 passengers in different spots.

As part of the study, they also surveyed 214 CNG-run auto-rickshaws, 185 auto-rickshaw passengers, and 56 taxi passengers.

Around 82 percent of the surveyed passengers expressed deep discontent over the services of the public transport sector during Ramadan.

Ninety-two percent passengers said they face sufferings every day, while 98 percent said they are victims of overcharging, the survey shows.

Sixty-two percent passengers said they are forced to get on and down from moving buses, while 28 percent have to stand on the bus even after paying for “seating service”.

Ninety-three percent passengers do not know where to file a complaint, while 88 percent said they do not bother to file a complaint as they believe they would not get any remedy.

They survey shows 94 percent CNG-run auto-rickshaws run on a contract basis and 98 percent of those who follow the meter claim extra fares or tips. They usually demand Tk 10, but during Ramadan they want Tk 30 to 35.

Asked about the allegations, Mahbubur Rahman, organising secretary of DRTOA, refuted the allegations of overcharging.

“In many cases, we take less than the government-fixed fares,” he told this correspondent yesterday.

On the standing passengers in “seating service” buses, he claimed some passengers take help from traffic police to board the bus during peak hours.

COMMITTEE FORMED, BUT NO REMEDY

In April last year, BRTA formed an eight-member committee to make recommendations for quality passenger services in the public transport sector in Dhaka.

Led by Mahbub-E-Rabbani, director (road safety) of BRTA, the committee on October 15 gave seven recommendations over “seating service” and 26 recommendations for public transport sector, insiders said.

The BRTA on February 14 held a meeting with the stakeholders including leaders of transport owners and workers and decided that all recommendations submitted by the committee would not be implemented right now.

The BRTA on April 17 sent several recommendations to Dhaka Metro Regional Transport Committee (MRTC), which gives route permit for the metropolis, and the authorities concerned to implement those.

A copy of the recommendations was sent to the commissioner of Dhaka Metropolitan Police, who is also the chairman of MRTC, the chief executive officers of both city corporations, and the associations of transport owners and workers.

A deputy director of BRTA (Dhaka Division), who is also the member secretary of MRTC, was asked to include those recommendations as an agenda of next MRTC meeting.

“We have sent the recommendations and it is now the responsibility and MRTC and other authorities concerned to implement those,” Mahbub-E-Rabbani, also the spokesperson of BRTA, said on May 21.

Contacted on April 26, Masud Alam said they had received the proposal sent by BRTA.

“Now we will talk with the Dhaka Metropolitan Police commissioner who is the chief of the committee and set the next course of action. We will take a decision in this regard soon,” Masud added.

Contacted again yesterday, Masud said, “We will go for implementation of the recommendations after holding a meeting with the stakeholders.”

Asked about a possible date of the meeting, he said, “We will hold the meeting soon.”

Mozammel alleged that the government takes some initiative following public pressure but it actually does not want to take action against the “seating service” bus operators. For this reason, no action was taken even after formation of a committee more than a year ago.

BRTA RECOMMENDATIONS

According to BRTA proposals, bus operators will have to take separate route permit for running seating service buses.

The operators will not be able to use all its buses for seating service as they will have to earmark a bigger portion of their vehicles for non-seating services.

The MRTC will decide how many buses of a company can offer seating services, the proposal says.

Seating service offering buses will have a different colour determined by the MRTC. These buses will be comparatively new and comfortable and will not be allowed to take any standing passengers.

There will be a different fare rate for the seating service buses. Every “seating service” routes will be divided into slabs and the fares will be fixed on the basis of those slabs.

The city corporations will have to build city stopovers in Mirpur and Anandabazar areas, set up counters for seating service buses, install CCTV cameras on different important points and bus bays on appropriate spots, the recommendations read.

  • Courtesy: The Daily Star/ May 27, 2018