Search

Thursday, May 31, 2018

সৌরবিদ্যুৎও আমদানির উদ্দেশ্য কী?

মওদুদ রহমান


ভারত থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে তৈরি হতে থাকা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে কি না এবং সেই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে কি না, তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কোনো কিছুর ঘাটতি পূরণে আমদানিই একমাত্র সমাধান নয়, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমাধান তালিকায় এটি হচ্ছে সর্বশেষ এক উপায়। সংকটের সমাধান হিসেবে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে সহজ, বিপরীতে দূরদর্শী নীতির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। আমদানির ফরমাশ পেলেই চলে আসে ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’, বেড়ে যায় দাম। আর নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুললে গড়ে ওঠে গোটা ইন্ডাস্ট্রি, সেই সঙ্গে কমতে থাকে দাম।

মাত্র দেড় দশকেরও কম সময়ে সারা দেশে ৪৫ লাখেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেমের ব্যবহার শুরু করার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যখন এই সিস্টেমের দাম ছিল চড়া, ব্যাটারির মেয়াদ ছিল ক্ষণস্থায়ী, তখনো মানুষ রাতের বেলা মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনে সোলার হোম সিস্টেম কিনতে পয়সা খরচ করেছে। আর এখন যখন বাজারে দীর্ঘস্থায়ী লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে এসেছে, প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুতের দাম গত ৭ বছরে ৭২ শতাংশ কমে গেছে, ভারতে মাত্র সাড়ে তিন টাকা খরচে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তখন ঠিক কী কারণে বাংলাদেশে নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা না করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে হবে, সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন।

গত মাসে নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানিবিষয়ক সভায় অংশগ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ভারত থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন (ঢাকা ট্রিবিউন, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮)। কিন্তু এই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সস্তা বিকল্প উপায় খুঁজে দেখা হয়েছে কি না, কিংবা এটি বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদন আর বিতরণ ব্যবসার ক্ষতি করবে কি না বা আমদানি করা বিদ্যুতের বাড়তি দাম পরিশোধের কারণে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে কি না, সেসব প্রশ্ন এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত।

অবশ্য আমদানির এই হুজুগ হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি। এর পেছনে বিদ্যুৎ খাতের সর্বশেষ নীতিমালার (পিএসএমপি-২০১৬) জোরালো সমর্থন রয়েছে। এই নীতিমালায় কমতে থাকা সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের দাম ভবিষ্যতে আরও কমে যাওয়ার হিসাব উল্লেখ করা আছে। এরপরও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে কী কারণে মাত্র ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটার ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

দেশ-বিদেশের প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলোয় সৌর, বায়ু ও বর্জ্যবিদ্যুৎ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনার দিকগুলো উন্মোচিত হচ্ছে। সেহেতু দেশের ভেতরে উদ্যোগের পরিধি না বাড়িয়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের গুজরাট ও রাজস্থান থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির তোড়জোড়ে লাভের গুড় শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাতে জুটবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সর্বোচ্চ সূর্যালোকপ্রাপ্তির ক্রমতালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি। এত দিন পর্যন্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জমির পরিমাণকে বড় বাঁধা হিসেবে দেখে আসা হলেও বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় সোলার শেয়ারিং, মিনি গ্রিড, মাইক্রো গ্রিড এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় কৃষিজমি নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগই এখন আর নেই। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসারে প্রকৃতই কত জমি প্রয়োজন হবে, সে হিসাব করার পাশাপাশি রেলওয়ের কী পরিমাণ জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে, নদী ভরাট করে কী পরিমাণ জমিতে দালানকোঠা উঠেছে, রাষ্ট্রের কী পরিমাণ জমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির দলিলে উঠে গেছে, সে হিসাবও করা জরুরি। যেখানে বাংলাদেশের শুধু অকৃষি খাসজমি ব্যবহার করেই কমপক্ষে পাঁচ লাখ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, সেখানে কোনো যুক্তিতে ভারত থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, তা খুঁজে দেখা জরুরি।

ভারত ২০২২ সালের মধ্যেই ১ লাখ ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ স্থাপন করার নীতি ঘোষণা করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সস্তা বিদ্যুতের কারণে এরই মাঝে সেখানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হয়েছে (দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, ২৩ মে, ২০১৭)। চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও সর্বোচ্চটুকু উৎপাদন করতে পারছে না আর অপচয় কমাতে ২০২৭ সালের মধ্যেই ৫০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা (ফোর্বস, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৮)। এভাবে গড়ে উঠতে থাকা নিজস্ব এই বিশাল ইন্ডাস্ট্রির চুঁইয়ে পড়া বাড়তি উৎপাদন বিক্রি করতে কে না চাইবে! কিন্তু বাংলাদেশ যদি এই আমদানির বাজার থেকে নিজেকে উন্মুক্ত করে, তবে নিশ্চিতভাবেই কমতে থাকবে নিজস্ব গবেষণা, উদ্ভাবন আর সস্তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ।

এসব কারণেই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের উপায় হিসেবে সম্ভাবনার জায়গাগুলোর দিকে প্রথমে নজর দিতে হবে। আলাপ-আলোচনা আর গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে। সস্তা ও পরিবেশসম্মত উপায়ে বিদ্যুৎ পেতে চাইলে আমদানির টোটকা সমাধানে আখেরে কোনো লাভ হবে না।

  • মওদুদ রহমান: প্রকৌশলী, গবেষক। 
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 

‘কী কথা তাহার সাথে?’

মহিউদ্দিন আহমদ

সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। এতে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ভূমিধস জয় পেয়েছিলেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ঢাকায় মন্ত্রিসভা গঠিত হলো। তারপর তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। ৪ মে (১৯৫৪) কলকাতায় এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেন, বাংলা ভাগ হয়েছে, কিন্তু বাঙালির সংস্কৃতি আর বাঙালিত্বকে কোনো শক্তিই কোনো দিন ভাগ করতে পারবে না। দুই বাংলার বাঙালি চিরকাল বাঙালিই থাকবে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর সংবাদদাতা কালাহান শেরেবাংলার একটা সাক্ষাৎকার নেন এবং তাঁর প্রতিবেদনে শেরেবাংলার বক্তব্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ ইঙ্গিতের কথা বলা হয়। এই সাক্ষাৎকার ছাপা হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে

হইচই পড়ে যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ‘দেশদ্রোহী’ ফজলুল হককে বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন চালু করা হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য ফজলুল হক করাচি যান। সঙ্গে যান তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান, নান্না মিয়া, মোহন মিয়া ও আশরাফউদ্দিন চৌধুরী।

২৯ মে ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ও নান্না মিয়া করাচি থেকে ঢাকার পথে রওনা হন। পরদিন ঢাকায় পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁরা আর সরকারে নেই। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অস্থায়ী সংবিধানের ৯ (ক) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসন জারি করেছে। শেখ মুজিবসহ পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের ৩৫ জন সদস্য এবং হাজারের ওপর লোক গ্রেপ্তার হন। ফজলুল হককে নিজ বাড়িতে অন্তরীণ করা হয়। পুলিশ যুক্তফ্রন্টের ৫৬ নম্বর সিমসন রোডের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় (সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০, প্রথমা প্রকাশন)।

যে সময়ের কথা বলছি, তখন ভারত ছিল বৈরী দেশ। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে খোলামেলাভাবে সৌহার্দ্যের কথা বলা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের চোখে ভীষণ খারাপ কাজ। 

ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। পূর্ব বাংলা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। পাকিস্তান এখন বৈরী দেশ, ভারত আমাদের পরম মিত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারতে দুদিনের সফরে গিয়ে দুটি ভাষণ দিয়েছেন। তিনি দুই দেশের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা বারবার উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, এ বন্ধন এবং বন্ধুত্ব দিন দিন মজবুত হচ্ছে এবং কেউ এই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না। এই বন্ধনের প্রতীক হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁরা আমাদের সবার, সব বাঙালির সম্পদ।

৬৪ বছর আগে শেরেবাংলা যে কথা বলে ‘শাস্তি’ পেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় তা-ই ঘুরেফিরে এসেছে। তাঁর কথার মধ্যে একটি সুর ছিল স্পষ্ট-আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলছি এবং আরও যেসব সমস্যা আছে, তারও শান্তিপূর্ণভাবে সুরাহা হবে।

প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের আর্থিক অনুদানে তৈরি ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করতে। পরদিন তিনি আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট খেতাব পান। প্রথমটির সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জড়িত। সে ক্ষেত্রে এটাকে প্রধানমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক সফরও বলা যায়। দ্বিতীয়টি ছিল একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। তিনি বলেছেন, এটি তিনি সব বাঙালির জন্য উৎসর্গ করেছেন। এটি তাঁর বদান্যতা, আমরা সবাই খুশি।

বিদেশে আমাদের অনেক স্থাপনা তৈরি হয়। এসব উদ্বোধনের জন্য সরকারপ্রধানের যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গেলেন। এটি তাঁর রাষ্ট্রীয় সফরও ছিল না। তবে তিনি যাওয়ায় সফরটি গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং দিল্লি থেকে ছুটে এলেন শান্তিনিকেতনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করার জন্য। তাঁরা দুজন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও উপস্থিত ছিলেন। মোদি ছিলেন পদাধিকারবলে, আচার্য হিসেবে। শেখ হাসিনা ছিলেন বিশেষ সম্মানিত অতিথি। তাঁদের দুজনের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু একটি উদ্বোধনপর্বকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘হাই প্রোফাইল’ উপস্থিতিকে হালকা করে দেখা যায় না।

আমাদের দুই দেশের মধ্যে হাজারো সমস্যা, অনেক সমস্যা মিটে গেছে। অনেকগুলো এখনো ঝুলে আছে। সমস্যার সমাধানে ভারতের আন্তরিকতা নিয়ে বাংলাদেশে অনেক প্রশ্ন আছে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হলো স্থলসীমানা নিয়ে। আমাদের জাতীয় সংসদ ওই বছরেই চুক্তিটি অনুমোদন করে। ভারতের পার্লামেন্ট এটা অনুমোদন করতে সময় নিয়েছে চার দশকেরও বেশি। এর মধ্যে লাখো ছিটমহলবাসী অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিরোধ ছিল। আলোচনা করে সেটা মেটানো যায়নি। শেষমেশ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ফোরামে মামলা করে সীমানা নির্ধারণ করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার এবং ভারতের আচরণ ও ভূমিকা ছিল একই রকম।

আমাদের ৫৪টা নদীর প্রবাহ ও পানি ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা আছে। গঙ্গা নিয়ে টালবাহানা হয়েছে অনেক। দেব গৌড়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আগ্রহ ও সহানুভূতিশীল ভূমিকার কারণে ১৯৯৭ সালে গঙ্গার পানির ভাগাভাগি নিয়ে একটি মধ্যমেয়াদি চুক্তি করা সম্ভব হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, গঙ্গার পথ ধরে অন্য নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিস্তায় গিয়ে আমরা হোঁচট খেলাম। এখানে দিল্লির সঙ্গে কলকাতার বোঝাপড়ার সমস্যা আছে। সমাধান আমাদের হাতে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই চাইছেন, এর একটি সুরাহা হোক। কিন্তু হচ্ছে না।

তিস্তা নিয়ে এই সফরে যে কিছু হবে না, তা জানাই ছিল। হুটহাট করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কিংবা স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয় না। কিন্তু শুধু সৌজন্যের খাতিরে দুই প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে বসেছিলেন, এটি মনে হয় না। নিশ্চয়ই তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।

অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এমনকি কোনো সম্মেলনের করিডরে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলেও অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা যায়। চীন-মার্কিন সম্পর্কের বরফ গলা শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে চীনের একটি টেবিল টেনিস দলের সফরকে কেন্দ্র করে। যা পিংপং ডিপ্লোম্যাসি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, তাঁদের প্রধানমন্ত্রীদের মেয়াদেই তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। এখন তো বেলা পশ্চিমে হেলেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মেয়াদ বড়জোর আর সাত মাস। নরেন্দ্র মোদিকেও আগামী বছর নির্বাচনযুদ্ধে যেতে হবে। আমরা আশা করছি, তাঁদের মেয়াদেই হয়তো সমস্যার সুরাহা হবে, বর্তমান মেয়াদে না হলেও পরবর্তী মেয়াদে। পরবর্তী মেয়াদেও যে তাঁরা থাকছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট আস্থাশীল।

প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা খবর ছাপা হয়েছে—হাসিনা ‘প্রতিদান’ চান মোদির কাছে। তিনি কী চেয়েছেন বা আদৌ চেয়েছেন কি না, তা তিনিই জানেন। মোদির সঙ্গে তাঁর ৩০ মিনিটের ‘একান্ত বৈঠকে’ তাঁরা কী আলোচনা করেছেন, তাঁরা সেটি না জানালে আমরা কোনো দিনই জানতে পারব না। সফরের আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, মোদি চাইলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ইঙ্গিতটি স্পষ্ট।

আমাদের নির্বাচন হবে এ বছরের শেষে। আমাদের নির্বাচনে ভারতের একটা স্টেক বা ভূমিকা থাকে, এটা সবাই জানি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের প্রকাশ্য দৌড়ঝাঁপ আমরা দেখেছি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ বিদেশিরাই ঠিক করে দেন, এখানে কে জিতবে, কে হারবে।

হঠাৎ মনে পড়ে গেল জীবনানন্দ দাশের আকাশলীনা কবিতার একটি লাইন-কী কথা তাহার সাথে? একান্ত বৈঠকে কি তাঁরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন? গুঞ্জন আছে এ নিয়ে এবং ক্রমেই তা ডালপালা মেলছে।

  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 

এক কদম পিছু হটল নির্বাচন কমিশন

সিটি নির্বাচন বিধিমালা

সমালোচনার মুখে কিছুটা পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব সাংসদকে প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বিধিমালা সংশোধন অনুমোদন করার পাঁচ দিনের মাথায় ইসি বলছে, স্থানীয় সাংসদেরা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, তবে অন্য সাংসদেরা পারবেন।
মঙ্গলবার ইসির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা ইসির নতুন এই অবস্থানের কথা জানান। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া সিইসি ও আরেক কমিশনারের কথায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে আসে।

কমিশন কবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সিইসির বক্তব্যে পরিষ্কার হয়নি। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ইসির বৈঠকেও এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিইসির বক্তব্যের দুই ঘণ্টা পরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাননি। তাঁরা তখন পর্যন্ত জানেন, সব সাংসদ প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে গতকাল পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রস্তুত হয়নি। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের দাবির মুখে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা সংশোধনী অনুমোদন করেছিল ইসি। সেদিন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, সব সাংসদই প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ইসির এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনা তৈরি হয়। এর মধ্যে গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, পর্যায়ক্রমে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা হবে। তবে স্থানীয় সাংসদেরা (যে এলাকায় নির্বাচন হবে সে এলাকার সাংসদ) প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। বাকি সব সাংসদ অংশ নিতে পারবেন। তবে স্থানীয় সাংসদেরা তাঁর এলাকায় থাকতে পারবেন।

সমালোচনার মুখে ইসি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সিইসি বলেন, তাঁরা পুনর্বিবেচনা করবেন না। ১৩ জুনের আগে সংশোধনী চূড়ান্ত হলে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে সাংসদেরা প্রচারের সুযোগ পাবেন। না হলে নয়।

সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেন, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়। তাই দলীয় কর্মীদের অংশগ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সংবিধানের ৩৬-৩৭ অনুচ্ছেদে ‘ফ্রিডম অব মুভমেন্ট, ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রিডম অব অ্যাসেম্বলি’ দেওয়া আছে। একজন জনপ্রতিনিধি কোনো মিটিং বা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না, এটা ইসির কাছে সঠিক মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধাভোগী নন। তাঁদের দপ্তর নেই। নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার তাঁদের সুযোগ নেই বলে মনে করেন সিইসি।

তাহলে স্থানীয় সাংসদেরা কেন সাংবিধানিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও শেষ করতে পারেননি সিইসি। এ সময় তাঁর পাশে থাকা আরেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সাংসদের কিছু প্রভাব বিস্তার করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর হাতে কিছু ত্রাণ, অনুদান রয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেন। সে জন্য তাঁরা সুপারিশ করেছেন যে স্থানীয় সাংসদ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

কমিশনের এই সিদ্ধান্তে একজন কমিশনার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, একজন নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন, বাকি চারজন পক্ষে আছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সরকারের চাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ইসিকে বলেছিল। ইসি দেখেছে যে এটা করা যেতে পারে। অন্য কোনো দল যদি এই প্রস্তাব করত, তাহলেও ইসি এভাবেই চিন্তা করত।

কিন্তু খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপি পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। তা আমলে নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির বিষয় না। পুলিশ কমিশনার কোথায়, কে থাকবে, না থাকবে বিএনপি আপত্তি করতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে খুলনার পুলিশ কমিশনারকে নির্বাচনের আগে বদলি করা সমীচীন হবে না।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ মে ৩১,২০১৮ 


Two dozen China-funded projects: Progress belies expectations

Mir Mostafizur Rahaman


Due to the bureaucratic tangles, more than two dozen China-funded projects are not progressing at a satisfactory pace.
So far, the disbursement has been made against only two projects.

The projects include the construction of a tunnel under the Karanafuli River worth US$705.80 million and the development of ICT network (Phase -2) worth $156.56 million.

Officials blamed the procedural complications and the long process of negotiations for the delay in loan disbursement.

"We are trying our best to expedite the China-funded projects. These were signed during the visit of President Xi Jinping to Bangladesh," Chinese ambassador to Bangladesh Zhang Zuo told the FE recently.

"My main priority is to speed up the entire exercise for implementation of these projects," he said.

A senior official at the Economic Relations Division told the FE on Wednesday that both sides were sincere about implementing these projects quickly. But there were some procedural complexities.

For example, for loan approval, the division needs the greenlight from both the Chinese Commerce Ministry and the EXIM Bank.

Previously, the approval from only EXIM Bank was required. The loan disbursement process takes additional two or three months due to the new system.

Recently, a loan agreement was signed for the $3.1 billion Padma Bridge rail link project. Out of the remaining 24 projects, necessary preparations for signing loan agreements have been completed for six.

These include $ 1.6 billion power system network strengthening project, $1.3 billion power grid strengthening project, $1.9 billion Dhaka-Ashulia elevated expressway project, $ 231 million modernisation of telecom network project, $280 million China Economic Zone project and the $125 million project for establishing six TV stations.

The progress of 10 other projects is slow and many of them are at the negotiation stage.

Among them are $500 million single point mooring project, $467 million replacement of five million electro meter project, $ 256.41 million extension of underground mining project, $521 million pre-payment metering project, $200 million project for setting up inland container terminal at Dhirasram.

The other projects include $230 million for the replacement of overloaded transformer, $150 million water supply and solid waste management, and $ 500 million project for modernisation of rural and urban lives through ICT.

The remaining eight projects are at an advanced stage and the loan agreements for those will be signed soon, ERD officials said.

Talking about the situation, an official of the economic wing of the Chinese embassy said that they were taking all-out efforts to ensure the projects would be implemented as soon as possible.

"Yes, there are procedural complexities on both sides but we are working to resolve this," Li Gunagjun, the economic and commercial counsellor of the embassy, said.

  • Courtesy: The Financial Express/May 31, 2018

Drug purge on, so is killing

A record 14 killed in a single day; ASK decries shootout spree


A record 14 people were killed in so-called shootouts in a single day yesterday, taking the tally of those killed in such incidents to 122, amid the countrywide anti-narcotics drive which has been going on for the last 16 days.

The “gunfights” continue amid growing criticism and concern from rights bodies, opposition leaders and foreign diplomats over the “extrajudicial killings”.

The ongoing drive already became the bloodiest anti-crime drive with death tolls surpassing that of the 2002 Operation Clean Heart (57 deaths) or even the anti-militant drive after the 2016 Gulshan attack (80 deaths).

Yesterday, nine were killed in “gunfights” with police and Rab while five others between rival gangs. All of the deceased were listed drug dealers, according to law enforcers. The Daily Star could not independently verify their claims. 

Three of 14 were killed in Dhaka while one each in Cox's Bazar, Chittagong, Chuadanga, Comilla, Sirajganj and Narail. The other five were killed in so-called infightings in Magura and Jessore's Benapole, our correspondents reported quoting police and Rab officials.

During the drives, the officials claimed to have recovered a huge quantity of drugs.

Rights body Ain o Salish Kendra (ASK) yesterday again expressed concern over the “extrajudicial killings” and condemned the shootout spree. Citing media reports, it said 119 people have been killed in so-called gunfights and around 10,000 people have been apprehended during the ongoing clampdown.

“The deaths of such a huge number of people in such a short span of time are not acceptable,” the ASK said in a press release. As per the constitution and international human rights charters, every citizen is entitled to justice. Therefore, the offenders must be tried through the legal process but not by law enforcement agencies, the release added.

Earlier, different rights activists and political leaders criticised the deaths, saying “killing could never be a solution to ending crimes”. Recently, diplomats stationed in Dhaka also expressed concern over the “extrajudicial” killings.

During the nationwide drive, law enforcers have arrested around 11,000 people over their alleged involvement in drug peddling while mobile courts have jailed and fined at least 3,547 others.

They also claimed to have recovered over 25.41 lakh yaba tablets, 26.5kgs of heroin and over 23,000 bottles of phensedyl. 

  • Courtesy: The Daily Star/ May 31, 2018

President pardons top terror Joseph

The convicted killer leaves country


Tofayel Ahmed Joseph, one of the top criminals in the police list of the 1990s, has been “secretly” freed from jail after a presidential clemency that cut short his life sentence for murder.
Joseph, brother of a former director general of Border Guard Bangladesh, on Sunday left Dhaka Medical College Hospital, where he was “being treated”.

“The president pardoned him. We released him upon receiving the order,” Jahangir Kabir, senior jail superintendent of Dhaka Central Jail in Keraniganj, told The Daily Star yesterday.

While his whereabouts are not known, Home Minister Asaduzzaman Khan yesterday told reporters that Joseph was supposed to leave the country for medical treatment.

In December 2012, another infamous criminal Bikash Kumar Biswas got out of Kashimpur Jail-2 on bail and fled the country.

Law enforcers believe he runs organised crime rackets from abroad. The home minister yesterday seemed to know little about the matter.

“He applied mentioning that he was very ill. About one to one and a half years of his sentence remains. He filed a mercy petition. The honourable president must have granted the petition.

“The president permitted him to be treated abroad. I know this much,” he told reporters at his secretariat office.

Asked for comment, noted human rights activist Sultana Kamal said, “It falls under the purview of the president's powers. We can only hope that he took the decision upon much consideration.”

She also hoped that the presidential clemency would bring a positive change in Joseph and prevent him from causing harm to anyone in future.

A jail source said the process of his release apparently began on March 31 when he was shifted to a cabin on the 9th floor of the new building of the DMCH.

No prisoner without a major disease is kept there. Prisoners are usually kept at the Cabin Block on the second floor, the officer added. “It has been done to free him secretly and to dodge the law enforcement and intelligence agencies,” he said, seeking anonymity.

A Dhaka court on April 25, 2004, sentenced Joseph to death for killing Freedom Party leader Mostafizur Rahman Mostafa in 1996. Joseph's elder brothers Haris Ahmed and Anis Ahmed were also given life sentence for the murder. Haris and Anis remain absconding.

The verdict was upheld by the High Court.

On December 9, 2015, the Supreme Court commuted the death sentence of Joseph to life sentence.

Joseph was accused in 10 other cases of extortion, and possession of illegal firearms. A lawyer for Joseph in 2015 said his client served over 18 years in jail and he had been in the condemned cell of Dhaka central jail for over 10 years.

The lawyer also said a life sentence meant 30 years in prison as per the jail code and the period had been reduced considering the convict's good behaviour in prison.

Jail officials said the process of presidential clemency for Joseph started on June 7, 2016 when his mother Renuja Begum applied to the home ministry for commuting Joseph's sentence. Two weeks later, the appeal was sent to the law ministry for opinion.

Sources in the jail said Joseph was treated well inside the prison. He had stayed comfortably at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University (BSMMU) hospital for “back pain”. It was reported in newspapers that he spent his hospital days gossiping with friends.

Joseph was a Chhatra League leader of Mohammadpur. He entered politics under the guidance of his elder brother Haris Ahmed. He later joined the infamous Subrata Bain's gang known as Seven Star. He exerted his power in the city and became one of the top criminals of the country.

Soon after the general elections in 2001, the BNP-led government announced a list of 23 most wanted criminals and a reward ranging between Tk 50,000 – 100,000 for each of their arrest.

  • Courtesy: The Daily Star /May 31, 2018

BASIC Bank Scam Probe: HC raps ACC

Says long delay indicates connivance of commission officials with the accused


Ashutosh Sarkar


The High Court yesterday expressed utmost dissatisfaction and disappointment with the Anti-Corruption Commission for the long delay in completing investigations in the cases over BASIC Bank loan scams.

“It seems from your [ACC officials] indifference and long delay in completing probes that you have connivance with the accused. If they [the accused] remain in jail for a long period of time, they get a strong ground for getting bail.

“We have to grant the accused bail due to the long delay in completing probe,” said Justice M Enayetur Rahim, the presiding judge of the HC bench now dealing with a number of bail petitions in the loan scam cases.

“We have given so many directives and made observations on this issue. But those have not been implemented properly,” the judge told the ACC lawyers.

“We have to cover our faces with black cloth in shame ... The commission could not submit charge sheet to the trial court in any of the 56 cases filed two and a half years back over the BASIC Bank loan scams.”

The HC bench of Justice Enayetur and Justice Shahidul Karim was hearing several petitions filed by Fazlus Sobhan, ex-deputy managing director of BASIC Bank, and its ex-deputy general manager Shipar Ahmed, seeking bail in loan scam cases.

The court fixed today for passing order on six bail petitions filed by Sobhan and one by Shipar.

BOARD IGNORED COMMITTEED312

Justice Enayetur said it is evident from case documents that the BASIC Bank's credit committee had given negative opinions to the bank's board of directors about granting loans to some applicants. But the board approved the loans ignoring the committee's recommendations.

The board should have sent back the loan applications. Instead, it approved the loans immediately after some loan seekers submitted applications, he said.

“It has been found that a single person has taken loans in the names of different institutions ... State money has been plundered this way. If the state agencies don't act on this, we have nothing to say,” said Justice Enayetur.

He also mentioned that the ACC chairman reportedly said the commission has been trying to trace the embezzled money.

ACC’S ‘PICK & CHOOSE’ POLICY

“If the commission is still trying to trace the [embezzled] money, the probe will not end till the doomsday,” Justice Enayetur said, adding that the commission is applying “pick and choose” policy in arresting people in the corruption cases.

The judge further said some high-profile graft suspects are seen in the television talk-shows and state programmes, but no action is taken against them.

Justice Shahidul said the commission's intention becomes clear from its delay in investigation in the corruption cases.

Eight IOs and their two team leaders appeared before the HC bench yesterday in line with its May 23 summons.

The bench heard the statement of Syed Iqbal Hossain, one of the two team leaders, about the delay in completing investigations.

Iqbal told the court that the IOs could not complete the probes as they were transferred at different times.

The investigations will be completed within a very short time, added the ACC official.

ACC lawyers Khurshid Alam Khan and Syed Mamun Mahbub told the HC that the commission has been working sincerely and neutrally to combat corruption.   

Barrister Rokanuddin Mahmud appeared for Sobhan, who has been accused in 48 cases.

The lawyer prayed to the court for Sobhan's bail, saying his client had advised the BASIC Bank board not to approve the loans.

On November 8 last year, the same HC bench severely rebuked the ACC for foot-dragging and showing weaknesses in investigating the cases over the BASIC Bank loan scams.

The commission lacks neutrality, transparency and competence in dealing with the cases, the bench had said.

ACC QUIZZED BACCHU

Meanwhile, the ACC yesterday quizzed former BASIC Bank chairman Sheikh Abdul Hye Bacchu over Tk 4,500-crore loan scams.

ACC Deputy Director Shamsul Alam grilled Bacchu for around three hours from 10:00am. Bacchu got out of the interrogation cell around 1:00pm and left without talking to reporters.

He was first quizzed on December 4 last year and was grilled for the fourth time on March 8.

According to a Bangladesh Bank enquiry, around Tk 4,500 crore was siphoned out of BASIC Bank between 2009 and 2013 when Bacchu chaired the board of the bank.

Kazi Faqurul Islam, the then managing director of the bank, was removed on May 25, 2014 over his alleged involvement in the financial scams.

Bacchu resigned as the chairman on July 5 that year amid growing allegations that he misappropriated funds by approving shady loans of several thousand crores of taka.

On July 14, 2014, the BB gave the ACC a report on the BASIC Bank scam, detailing how money was embezzled from that bank through fake companies and dubious accounts.

MUHITH ANGRY

Finance Minister AMA Muhith on several occasions expressed anger in parliament as he could not take steps against all involved in the scams in BASIC Bank and Sonali Bank.

On February 24, 2016, he told the House that 27 bank officials, 56 organisations and eight surveyor firms were involved in the BASIC Bank loan scams.

He also said external audit firms appointed by the BB and BASIC Bank detected involvement of Bacchu and the then board members in granting irregular loans.

The BB found that Bacchu illegally influenced all the activities of the bank, leaving it in a grave state.

On July 26 last year, the HC directed the ACC to probe the alleged involvement of Bacchu and board members of the bank in the scams.

  • Courtesy: The Daily Star /May 31, 2018

Wednesday, May 30, 2018

মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতদের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠককালে এ উদ্বেগের কথা জানান রাষ্ট্রদূত।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে। বিনাবিচারে একজন মানুষ মারার অর্থ হচ্ছে ওই পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যাওয়া।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরাও চাই। তবে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে আমরা মনে করি।

মাদকের জন্য অভিযুক্ত মূল অপরাধী এবং এর উৎস বন্ধ করার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, মাদকের উৎস বন্ধ না করে এ অভিযান পরিচালনা করলে তা সফল হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

  • Courtesy: Jugantar /May 30, 2018


‘ইয়াবা–সুন্দরী’র সাম্রাজ্য বনাম বন্দুকযুদ্ধের ছলনা

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব


গাঁজা ও ফেনসিডিলকে পেছনে ফেলে নেশার দুনিয়ায় ভয়াবহ উন্মাদনা এনেছে অনাগ্রা ও ইয়াবা। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত আট বছরে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে ৭৭ থেকে ১০০ গুণ। প্রথম দিকে মাদকসেবনের মূল ভূমিকায় সচ্ছল ঘরের শিক্ষার্থী, তরুণ, যুবা ও মধ্যবয়সীরা। ইয়াবার বাহক ও গ্রাহকদের মধ্যে একসময় সাড়া জাগিয়েছিল কথিত ‘ইয়াবা–সুন্দরীরা’।

২০০৭ সালের পর থেকে একের পর এক আকর্ষণীয় তরুণী এবং তাদের গডফাদার-মাদারসহ ধরা পড়তে থাকে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে। সে সময়ই সামাজিক মাধ্যমে ‘ইয়াবা-সুন্দরী’ কথাটা চালু হয়ে যায়। তাদের মাধ্যমে ইয়াবার মোবাইল ফোনভিত্তিক সুলভ বাজার বিস্তৃত হতে থাকে। ফোনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা, নারী ও শিশুদের মাদকের বিক্রেতা ও বাহক বানানোর কৌশলে ইয়াবার আগ্রাসন দেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ে আর কোনো মাদকের এমন ‘স্মার্ট’ আগ্রাসন আর হয়েছে কি না সন্দেহ।

‘ইয়ো ইয়ো’ থেকে এলেবেলে ‘বস্তির ছেলে’

প্রথম দিকে উচ্চবিত্ত ঘরের বখে যাওয়া ‘ইয়ো ইয়ো’ ছেলেমেয়ে এবং মডেলকন্যা ‘ইয়াবা–সুন্দরী’ভিত্তিক বিপণন দিয়ে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে এসব সুলভ হয়ে ওঠে। শহুরে নিম্নমধ্যবিত্ত, পরিবহনশ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মী ও বস্তির ছেলেদের গণ্ডি পেরিয়ে এখন গ্রামের সন্তানদের নাগালেও পৌঁছে গেছে ইয়াবা, সঙ্গে কিছু সহযোগী মাদকও। মাদক নেওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ইভ টিজিং, এমনকি ধর্ষণও। মাদকের বিষে পড়ে গ্রামীণ এলাকা ও শহুরে বস্তিতে ছেলেদের পড়ালেখার গণ্ডি থমকে আছে, কমছে না স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার। যুবসমাজকে ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবা ব্যবসার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গাড়ির হেলপার, দিনমজুর, পান দোকানি, শিশু শ্রমিক, কিছু রোহিঙ্গা, এমনকি ছোটখাটো ব্যবসায়ী, সাংবাদিকও এখন কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। কোটিপতি হচ্ছেন পুলিশ এবং নারকটিক্স বিভাগের কিছু কিছু লোক। 

ছেলেমেয়েরা জানে না তারা পড়ালেখা শেষ করে কী করবে? কী আছে তাদের ভবিষ্যতে? যুবসমাজের সামনে মানবসম্পদ পরিচর্যা ও কর্মসংস্থান তৈরির কোনো স্বচ্ছ লক্ষ্য ও প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি ক্ষমতাসীন সরকার। দখল-লুট, সন্ত্রাস, চাঁদা ও বেপরোয়া অর্থ লোপাট এবং পাশবিক দুর্বৃত্তপনা ও হিংস্রতা দেখে দেখেই বড় হচ্ছে একের পর আরেক প্রজন্ম। জীবিকা অর্জনের প্রায় সব কটি মেধাভিত্তিক ও শ্রমনির্ভর সরল পথও ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় কঠিন করে তোলা হয়েছে। অথবা সেসব উপায় একেবারেই রুদ্ধ করে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বন্দোবস্ত করা আছে।

হতাশাজনক দীর্ঘ বেকারত্ব, উদ্যোক্তা হওয়ার কঠিন পথ পাড়ি দিয়েও ব্যর্থ হওয়ার গ্লানি, গতানুগতিক ব্যবসা কিংবা শেয়ারবাজারে লোকসান করার উপর্যুপরি হতাশা, মানহীন কর্মপরিবেশের ভয়ংকর চাপ ও উৎকণ্ঠা মাদকের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। ম্রিয়মাণ অর্থনীতিতে মধ্য ও নিম্নবিত্তের চাকরি পাওয়ার, চাকরি পেলেও সেখানে ওপরে উঠে আসার আশা কম। বরং সাধারণ মধ্যবিত্ত ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে নিম্নবিত্ত হচ্ছে। যারাই–বা উন্নতি করছে, তাদেরও দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। অবসরহীন পরিশ্রম, একঘেঁয়ে জীবন, শুকিয়ে আসা পারিবারিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ রাসায়নিক সুখে মুক্তি খুঁজবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।

অপরাধপ্রবণ সমাজে কুসঙ্গের হাতছানি তো আছেই। সঙ্গে আছে কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ শ্রমঘণ্টা, মানহীন কাজের পরিবেশ, দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব, ব্যবসার কঠিন প্রতিযোগিতা ও স্বল্প লাভের পেরেশানি। আছে দিনযাপনের ক্লান্তি ও কষ্ট, কম উপার্জনের হতাশা, পারিবারিক টানাপোড়েন, বিশ্বাসহীন সামাজিক বন্ধন। এমন বহুবিধ কারণে মাদকের বিস্তার সর্বগ্রাসী হয়ে উপস্থিত হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার প্রশাসন ও সমাজের বেশির ভাগ লোকের একসঙ্গে জেগে ওঠা দরকার।

প্রতিবেশীদের মাদক সাম্রাজ্য বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ দরকার


দেশের তারুণ্যনির্ভর উৎপাদনমুখিতা যে কয়েকটি ভয়ংকর কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তার মধ্যে মাদক অন্যতম। তরুণ জনসংখ্যাধিক্যের (ডেমোগ্রাফিক ডেভেডিন্ট) বাংলাদেশের কর্মক্ষমতা মাদকে অপচয় হওয়া এক জাতীয় ক্ষতি। আর এ ক্ষতির কারণ ও সুবিধাভোগী হলো, ১. প্রতিবেশী দেশগুলোর মাদক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কৌশলী গোষ্ঠী, ২. আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়া চক্র এবং (৩) দেশীয় মাদক ব্যবসায়ী-তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকদের ছড়ানো নেটওয়ার্ক। এই তিনে মিলে মাদক ব্যবসার পোক্ত কাঠামো তৈরি করে ফেলেছে। মিয়ানমার ও ভারতীয় মাদকসাম্রাজ্য প্রথমে বাংলাদেশের যুবসমাজকে টার্গেট করে সফল হওয়ার পর প্রসারিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য কিছু দেশেও। সেখানেও ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশে তার প্রতিবেশী দুটি দেশ মিয়ানমার ও ভারতের বর্ডার ফোর্স দ্বারা সরাসরি মাদকসন্ত্রাসের শিকার। বাংলাদেশের তরুণ ও যুববাজারকে নিশানা করে দুটি দেশই সীমান্তের ঠিক পাশে ফেনসিডিল ও ইয়াবার কারখানা চালু রেখেছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক মদদে এই ব্যবসাকে বাংলাদেশে পুশ করছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু ব্যবসায়ীদের প্রায়ই ভারতীয় বর্ডার গার্ড হত্যা করে, কিন্তু এই একই বাহিনী ফেনসিডিলের বেলায় হাত গুটিয়েই শুধু রাখে না; অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি এজেন্টদের টাকা দিয়ে কয়েক যুগ ধরে তারা বাংলাদেশে ফেনসিডিল ব্যবসা পুশ করছে। আর মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড ফোর্স বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত। আফগানিস্তানে তালেবানরা যেমন পপি চাষ করত, মিয়ানমার তেমনি করে ইয়াবার কারবার। বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনা দরকার, শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিও জরুরি।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিবেচনায় দুর্বল বা অসচেতন দেশ যদি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পিছিয়ে থাকে তবে শক্তিশালী প্রতিবেশীরা এভাবে তাদের বুদ্ধিহীন ও মেধাহীন করার সুযোগ নেয়। বাংলাদেশ সম্ভবত এরই শিকার হচ্ছে। এই অপতৎপরতার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মনোযোগ চাই। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও সরকারের ভেতর এ উপলব্ধি জন্মাতে হবে সবার আগে। অন্যথায় কেউই সাহায্যে এগিয়ে আসবে না।

অন্যদিকে, মাদক ব্যবসা সরকারি দলগুলোর সন্ত্রাসী, ছাত্র ও যুব শাখাকে লালনপালন করার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তিমূল। বলা যায়, উন্নয়ন বাজেট লুট, চাঁদাবাজি ও মাদক—এই তিনের ওপর ক্ষমতাসীনদের ছাত্র-যুবসহ লাঠিয়াল সন্ত্রাসী শাখাগুলো আর্থিকভাবে দাঁড়িয়ে উঠেছে। দিকদিশাহীন যুবসমাজকেই তারা টার্গেট করে তাদের অবৈধ আর্থিক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে সমাজের সর্বস্তরে। আমাদের আদর্শহীন দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদেরা ভাগাড়ের পচা মাংস খাওয়ার মতোই মাদক থেকে আসা নোংরা টাকার দিকে লোভী শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

‘বন্দুকযুদ্ধের’ ছলনার দিক


এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব। দরকার সমাজের ব্যাপক মানুষের একসঙ্গে প্রতিবাদে নামা। অথচ আমরা দেখছি কী? 

বছরের পর বছর ধরে পারিবারিকভাবে মাদকসাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা বদি পরিবারের (এ রকম আরও বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে) লোকদের সাংসদ কিংবা সিআইপি হিসেবে মর্যাদা দিয়ে রেখে তৃণমূল পর্যায়ের কিছু ব্যবসায়ী হত্যা করা মাদকবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে প্রতারণার দিক।

‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হচ্ছে রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। ক্রসফায়ারে বাংলাদেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কিংবা দমন—কোনোটিই হয়নি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর হাতে একচেটিয়া ক্ষমতা দিয়ে তাদের জবাবদিহির বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের হাতে জমা হয়েছে একচেটিয়া ‘সন্ত্রাসের’ ক্ষমতা। ক্রমাগত ক্রসফায়ার জানান দিচ্ছে যে বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থা সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং দমনে কোনোই প্রভাব রাখে না। একদিকে অতি দীর্ঘ কালক্ষেপণের বিচারপ্রক্রিয়া সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখে না, দমন তো দূরের কথা, অন্যদিকে বাংলাদেশের আদালত অপরাধ সংঘটনের গোড়ার কারণ বিশ্লেষণ করে সরকারকে তাদের পর্যবেক্ষণ ও রুলিং দিতে পারছে কি? রাজনৈতিক নিয়োগ ও চাপের কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই অক্ষমও বটে। ফলে মাদক মাদকের জায়গাতেই থেকে বিস্তৃত হচ্ছে, পাচারকারীরা ঘুষ ও তদবির করে পার পেয়ে যাচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। এখন সরকার রাজনৈতিকভাবে না চাইলে মাদকের বিস্তার রোধ অসম্ভব। তাই মাদক রোধে ‘শীর্ষ থেকে নিচ’ অ্যাপ্রোচ নিতে হবে, যেকোনো ‘নিচ থেকে ওপরে’ উদ্যোগ এখানে ব্যর্থ এবং লোক দেখানো।

সবশেষে আমাদের সীমান্ত এলাকার নাগরিকের বেকারত্ব কমাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির টেকসই পথ বের করতে হবে অর্থাৎ এসব এলাকার বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে। সীমান্তে ব্যাপকসংখ্যক নাগরিককে বেকার রেখে, ব্যাপকসংখ্যক উদ্বাস্তু রেখে মাদকসহ যেকোনো পণ্য পাচার সমস্যার টেকসই সমাধানে আসা বেশ দুষ্কর বটে!

শুভ বোধ জাগ্রত হোক দিকে দিকে। তারুণ্য রক্ষা পাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।

  • Courtesy: Prothom Alo/ May 30, 2018

বেসিক থেকে ফারমার্স কেলেঙ্কারির নেপথ্যে পরিচালকরা

হাছান আদনান 

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) ওপর চাপ ছিল বড় অংকের ঋণ বিতরণের। ব্যাংকিং নীতিবহির্ভূত হওয়ায় পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ওই ঋণ বিতরণে রাজি হননি তিনি। পরিচালকদের পক্ষ থেকে আবার চাপ এলে চাকরিই ছেড়ে দেন ওই এমডি।
ব্যাংকিং নীতিবহির্ভূত এ চর্চা চলছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই। ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের অনৈতিক এ চর্চা বিপর্যয় ডেকে এনেছে বেসিক ব্যাংকে। নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকের বিপর্যয় সৃষ্টির মূলেও পরিচালকদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসিক থেকে ফারমার্স ব্যাংক— প্রায় সব কেলেঙ্কারির নেপথ্যেই কোনো না কোনোভাবে রয়েছেন পরিচালকরা।

যদিও পরিচালনা পর্ষদ নীতি প্রণয়ন করবে আর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নীতির প্রয়োগ ঘটাবে, এটিই ব্যাংক ব্যবস্থার মূলমন্ত্র। কিন্তু কয়েক বছর ধরে উল্টো ধারায় চলছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। নীতি প্রণয়নের বদলে দেশের অনেক ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ বিতরণে জড়িয়েছেন। নিয়োগ-পদোন্নতি থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রায় সব কাজেই হস্তক্ষেপ করছেন চেয়ারম্যানরা।

ব্যাংক পরিচালনায় পর্ষদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের মাশুল দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত লুটপাটের শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। একসময়ের আদর্শ ব্যাংকটিকে ধসিয়ে দেয়ার নেপথ্যে ছিল শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন তত্কালীন পরিচালনা পর্ষদ। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, জনতা ব্যাংকের এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট কেলেঙ্কারির সঙ্গেও পরোক্ষভাবে যুক্ত পরিচালকরা। পুরো ব্যাংকিং খাতকে নাড়িয়ে দেয়া ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির সূত্রপাতও হয়েছে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের হাতেই। একই কারণে বিপদে পড়েছিল নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্ষদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এমডিদের ক্ষমতা ক্রমেই কমছে। অনেক ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, আদায়, সুদ মওকুফ, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন পরিচালকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা অনেক বেশি। একই পরিবার থেকে এখন এক ব্যাংকে চারজন পরিচালক থাকার সুযোগ পেয়েছেন। পর্ষদের অন্য সদস্যদেরও আত্মীয়-স্বজন দ্বারা সাজানো হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ একেকটি পরিবারের হাতে চলে গেছে। এতে ব্যাংকের সব কাজেই পরিচালকদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে বাধ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ও বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভিন্নভাবে চাপে রাখছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন মোটেও কার্যকরভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ব্যাংকিং খাতে কেলেঙ্কারির ঘটনা দিন দিন বাড়বে।

পরিচালকদের ভূমিকা কী হবে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। আইনের ১৫খ (১) ধারায় পর্ষদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা এবং তা পরিপালনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ দায়বদ্ধ থাকবে।

আইনের এ ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগের ২০১৩ সালে জারি করা ১১ নম্বর প্রজ্ঞাপনে। ওই প্রজ্ঞাপনের ৪.১ (খ)তে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের আওতায় ঋণ ও বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন, মঞ্জুরি ও বিতরণ, ঋণ আদায়, পুনঃতফসিলীকরণ ও অবলোপনের নীতি, কৌশল, বিধি ব্যবস্থা ইত্যাদি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে প্রণীত হবে। পর্ষদ ঋণ ও বিনিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টন করবে এবং অনুরূপ বণ্টনের ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব প্রধান নির্বাহী ও তার অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপর ঋণ মঞ্জুরির ক্ষমতা অর্পণ বাঞ্ছনীয় হবে। একই বিধানে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ করবেন না।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব নীতিমালা উপেক্ষিত হয়েছিল বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রে। ব্যাংক দুটির বেশির ভাগ ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়েছে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের তদবিরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ নিয়ে কথা হয় দেশের বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডির সঙ্গে। তাদের প্রায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন ঋণ দেয়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদের তদবিরের কথা। কিন্তু কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকেই বড় ঋণের ক্ষেত্রে পরিচালকরা তদবির করছেন। এমডিদের চাপ দিচ্ছেন জামানতের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ার জন্য। চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালকদের চাপে বিতরণ করা ঋণই পরবর্তীতে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় খেলাপি হওয়া এ ঋণ আদায় করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ব্যাংকগুলোয় খোঁজখবর নিয়েও। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকের এমডিদের এখন সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষমতা রয়েছে। অল্প কয়েকটি ব্যাংকের এমডির ক্ষমতা আছে ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের। কিছু ব্যাংকের এমডি নিজ ক্ষমতায় ১ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারেন না। সে হিসেবে এমডির ক্ষমতার বাইরে থাকা সব ঋণ প্রস্তাবই বিভিন্ন কমিটিতে যাচাই-বাছাই শেষে পরিচালনা পর্ষদে উঠছে। পর্ষদের অনুমোদনের পরই সে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, পরিচালকদের চাপেই অনেক সময় ঋণের প্রস্তাব পর্ষদে উঠছে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চাইলেই সে প্রস্তাব আটকাতে পারছে না।

তবে ঋণ বিতরণের সব ক্ষমতা ও দায়ভারই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বলে জানান বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বলেন, ব্যাংকারই যাচাই-বাছাই করে পরিচালনা পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কাগজপত্র ঠিক থাকার পর পর্ষদ ঋণ অনুমোদন করে। পরিচালকদের গ্রাহকের অবস্থান জানার সুযোগ হয় না। যদি কোনো ঋণ প্রস্তাবে ত্রুটি থাকে, তার দায়ভার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। ব্যাংকের এমডিদের দায়িত্ব হবে চেয়ারম্যান বা অন্য পরিচালকদের তদবির না শোনা। স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে কাজ করা।

ব্যাংক পরিচালকদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ৪.১(ঘ) তে বলা হয়েছে, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, প্রণোদনাসহ মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি এবং চাকরিবিধি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক প্রণীত ও অনুমোদিত হবে। কিন্তু অনুমোদিত চাকরিবিধির আওতায় নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রমে পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পরিচালকরা কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালাও দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ আছে। বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কর্তৃক ‘চিরকুট’ দেয়ার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও উঠে এসেছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের আশীর্বাদেই হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ৪.৩-এ বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ কর্তৃক গঠিত কোনো কমিটির চেয়ারম্যান কিংবা কোনো পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে কোনো নীতিনির্ধারণী অথবা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার রাখেন না বিধায় তিনি ব্যাংকের প্রশাসনিক বা পরিচালনাগত তথা দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপ করবেন না।

একই বিধানে বলা হয়েছে, পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যাংকের ব্যবসায়িক স্বার্থে চেয়ারম্যানের অনুকূলে একটি অফিস কক্ষ, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন পিয়ন, অফিসে একটি টেলিফোন, দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য একটি মোবাইল ফোন ও একটি গাড়ি দেয়া যেতে পারে।

দেশের অধিকাংশ ব্যাংকেই নীতিমালার এ বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ আছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের অভ্যন্তরে বিলাসবহুল কক্ষে বসে কোনো কোনো চেয়ারম্যান নিজ ব্যবসার কর্মকাণ্ড পরিচালনা কিংবা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করছেন।

ব্যাংকিং খাতের বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গে পর্ষদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে একমত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে পর্ষদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ত্রুটিই বেশি ছিল। তবে ওরিয়েন্টাল থেকে শুরু করে হাল আমলের ফারমার্স কেলেঙ্কারির জন্য পরিচালনা পর্ষদই দায়ী।

ড. জায়েদ বখত বলেন, আশার কথা হচ্ছে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট স্বাধীন। আমরা ব্যাংকের নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করছি। কোনো বড় ঋণ পুনঃতফসিল কিংবা অনুমোদনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কোনো পরিচালক যুক্ত থাকতে পারেন। সামষ্টিকভাবে অসৎ পরিচালনা পর্ষদ এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নেই। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ অনেক বেশি ক্ষমতার চর্চা করছে। এ ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

  • কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ মে ৩০,২০১৮