Search

Tuesday, June 5, 2018

ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির বোঝাও এখন জনগনের ঘাড়ে

  • ব্যাংক দুর্নীতি বাঁচাতে আবারও করের টাকা
  • চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল
  • এবারও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ রাখা হচ্ছে
  • বিনিয়োগের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন



অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো যখনই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে, তখনই তা জনগণের করের টাকায় পূরণ করে আসছে সরকার। এসব ব্যাংকের জন্য আগামী বাজেটেও বরাদ্দ থাকছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য গত ছয় বছরেই সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে দেওয়ার জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যদিও তা এখনো ছাড় হয়নি। ছাড় হবে ৭ জুন বাজেট ঘোষণার পর। আর আগামী বাজেটেও ব্যাংকগুলোর জন্য প্রায় একই পরিমাণ অর্থ রাখা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, সেই পরিমাণ টাকাই সরকারকে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা হচ্ছে উল্লেখযোগ্য।

সচিবালয়ে গতকাল সোমবার এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য আগামী অর্থবছরেও বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।’ প্রশ্ন করা হলেও বরাদ্দের পরিমাণটি জানাতে চাননি তিনি। তবে আলোচিত-সমালোচিত ব্যাংক খাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে চলতি মাসেই তিনি একটি কমিশন গঠন করবেন।

ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির বোঝাও এখন সরকারকে বইতে হচ্ছে। যেমন অনিয়মে ডুবতে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনতে হয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতার মতো ব্যাংকগুলোকে। অথচ এসব ব্যাংক নিজেরাই রয়েছে মূলধন ঘাটতিতে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যেহেতু ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে এবং সরকার জানে যে আরও অনিয়ম-দুর্নীতি হবে, তাই আগাম সতর্কতা হিসেবে বাজেটেই টাকা রাখা হচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাতে এ রকম বার্তা রয়েছে যে মূলধন সংকট বা যেকোনো সংকটে পাশে আছে সরকার। এ কারণেই ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার উন্নতির পরিবর্তে উল্টো সরকারের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই ঋণ দেওয়ায় অনিয়ম হচ্ছে, খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না, ঋণ অবলোপন হচ্ছে এবং সরকারি কোষাগার থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর টাকা দিতে হচ্ছে। এ খাতের সুশাসনের জন্য সরকারের চেষ্টার ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিনিয়োগের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন 

অর্থ বিভাগের তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাজেটে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ বাবদ বরাদ্দ রাখা শুরু হয় ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে। সরকার প্রতিবছর এই খাতে বাজেট বরাদ্দের শিরোনাম দিয়ে থাকে ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’। যে টাকা ফেরত আসার নূন্যতম সম্ভাবনা নেই, তাকে বিনিয়োগ বলা যায় কি না সেই প্রশ্নও উঠছে এখন।

অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা অবশ্য এ রকম, ‘সরকার তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থের সরবরাহ করবে। এটা আসলে বিনিয়োগই। প্রশ্ন উঠতে পারে তা ভালো বিনিয়োগ না খারাপ বিনিয়োগ।’

বাজেট প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছয় বছরে কখনো মূলধন ঘাটতি বা কখনো মূলধন পুনর্গঠনের নামে ছয় ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। কাউকে টাকা দেওয়া হয়েছে তহবিল ও ঋণ সহায়তা, আবার কাউকে দেওয়া হয়েছে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির জন্য।

অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও তা ছাড় করা হয়নি। পরের অর্থের বছর ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও দেওয়া হয় ৫৪১ কোটি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৪২০ কোটি টাকা, কিন্তু ওই ব্যাংকগুলোকে দেয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

পরের বার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার নিজেই পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে, কিন্তু ওই টাকায়ও কুলোয়নি। ওই বছর ব্যাংকগুলোকে দিতে হয় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ থেকে চলতি অর্থবছরসহ প্রতিবারই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে টাকা বরাদ্দ রাখা উচিত নয়। যেহেতু পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছেই, ফলে দেশীয় বাস্তবতা বলে খারাপ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে টাকা রাখতেই হবে।’ অবশ্য তিনি খেলাপি ঋণ আদায়সহ শর্তপূরণ সাপেক্ষে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া এবং কঠোরভাবে তা নজরদারি করা উচিত বলে মনে করেন।

মূলধন ঘাটতি বাড়ছেই 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী সোনালী, জনতা, রূপালী, বেসিক, কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। অথচ তার আগের তিন মাস আগে অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরেই এই ঘাটতি ছিল ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। তিন মাসে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ১ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংকের কারণেই ছয় ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে।’

চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা দিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি অর্থ বিভাগে সুপারিশ করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, মূলধন ঘাটতি পূরণের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উপায় হচ্ছে নিট মুনাফা অর্জন করে তা বণ্টনের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার ছাড়া। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা পারছে না। বিভাগটির মতে, আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ঘাটতি কমানো। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সাফল্যই নেই ব্যাংকগুলোর।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর জন্য এবার মূলধন ঘাটতি পূরণের টাকা অর্থ বিভাগ এখনো ছাড় করেনি। বাজেটে যাতে আর বরাদ্দ রাখতে না হয়, এ ব্যাপারে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।’

গত প্রায় এক দশক ব্যাংক কেলেঙ্কারির দশক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ জন্য কারও কোনো শাস্তি হয়নি। বরং নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পূরণ করা হয়েছে ঋণ খেলাপিদের আবদার। শুধু ঋণখেলাপি নয়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিবারতন্ত্রের পথও সুগম করে দিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়, ব্যাংক মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশসন অব ব্যাংকসের (বিএবি) কথাতেই নীতি বদলে যাচ্ছে।

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক কমিশন গঠনের কথা বলছেন। তবে আগামী নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার জন্যই শেষ সময়ে এসে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক ব্যাংকাররা। 
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ৫,২০১৮ 

অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি

শুভ্র দেব 

সারা দেশে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। গ্রাম থেকে শহরের অলিগলি প্রায়শই হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। গুলি করে চুরি, ছিনতাই হচ্ছে অহরহ। পাড়া-মহল্লার ঝগড়া বিবাদের সূত্র করে ঘটছে গুলির ঘটনা। কিশোর গ্যাংদের হাতে মিলছে অস্ত্র। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে ব্যবহার করছে অস্ত্র। সন্ত্রাসী, আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাতে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি তো পুরনো বিষয়।

অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে যখন অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি থাকে তখন গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তখন তুচ্ছ কারণেই অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। 

সূত্র বলছে, নানা কারণে দেশে এখন অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেড়ে গেছে অপরাধ প্রবণতা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অস্ত্র ঢুকছে দেশে। আবার কখনো সীমান্তে কর্মরত বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় অস্ত্র। সীমান্ত পার হলেই এসব মারণাস্ত্র চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, চরমপন্থিদের হাতে। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা দিয়ে ঢুকছে অহরহ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। ছোটখাটো অপরাধী থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাসী-গডফাদাররা মজুত করছে অস্ত্রের ভাণ্ডার। আবার লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করছেন। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যেভাবে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে আগামীতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আরো জোরালো ভূমিকা না রাখে তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হবে। এছাড়া অস্ত্রের চালান দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে আরো বেশি নজরদারি বাড়াতে হবে। 

অপরাধ বিজ্ঞানী তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, অপরাধীরা সব সময়ই অস্ত্রের মজুত রাখে। শুধু তারা সময়-সুযোগ মতো জানান দেয়ার অপেক্ষায় থাকে। তাই অপরাধী যেই হোক না কেন মূল বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। দেখতে হবে তারা কতটুকু তৎপর। কারণ সিন্ডিকেটরাই দেশে অস্ত্রের চালান নিয়ে আসছে। আর এই সিন্ডিকেটদের সহযোগিতা করছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে তাদের আয়ত্তের বাইরে কি পরিমাণ অস্ত্র আছে। এসব উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতিকর অবস্থা তৈরি হবে। 

তিনি বলেন, প্রকাশ্য গুলাগুলির ঘটনাই ভীতির কারণ তৈরি করে দিচ্ছে। আর এসব আগ্নেয়াস্ত্র যদি অপরাধীর কাছে মজুদ থাকে তবে সমাজের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বেগ পেতে হবে। কারণ যতগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সামাল দিতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে জাতীয় নির্বাচনে অস্ত্রের মহড়া, গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এ ধরনের ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।

পুলিশের সাবেক আইজি নুর মোহাম্মদ মানবজমিনকে বলেন, গুলাগুলির ঘটনা দেশে সব সময়ই থাকে। রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তি দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে এসব হয়ে থাকে। তবে নির্বাচনী বছর আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা একটু বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করে তার ১০ শতাংশ আটক করা সম্ভব হয়। বাকি অস্ত্র কোনো না কোনোভাবে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন মালবাহী জাহাজের আড়ালে চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র চলে আসে। সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবির পক্ষে সব সময় নজর রাখা সম্ভব হয় না। 

গত ১০ই মে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডার জাগরণী ক্লাবের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন ৩০ বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাক বাবু ওরফে ডিশ বাবু। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক বাবুকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবু। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড্ডার বেরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান দুখুকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগ্নে ফারুক আহমেদের গ্রুপ প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় গুলিবদ্ধ হয়ে আরো ৫ জন আহত হয়েছিলেন।

২৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা প্রকাশ্য মহাখালিতে কলেরা হাসপাতালের পেছনে নাসির কাজী নামে ৪৫ বছর বয়সী এক ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

৩রা মে উপজেলা সদরে নিজ কার্যালয়ের সামনে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে। এ সময় তাকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালক রূপম চাকমাও গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরের দিন ৪ঠা মে সন্ত্রাসীরা ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে চারজনকে। ২৮শে মে সোমবার সকাল ৭টার দিকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী দলের হামলায় একটি বাড়িতে অবস্থানরত ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর অতর্কিতে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই স্মৃতি চাকমা (৫০), অতল চাকমা (৩০) ও সঞ্জীব চাকমা (৩০) নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সঞ্জীব চাকমা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য। এই ঘটনায় কানন চাকমা নামে আরো এক ইউপিডিএফকর্মী আহত হয়েছেন। 

২৯শে মে পুরান ঢাকার বংশালের সিদ্দিক বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর বকশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গুলি করে আহত করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। 

সূত্র বলছে, বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রতিটা জাতীয় নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্রের নানামুখী ব্যবহার থাকে। পেশিশক্তির প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার থেকে শুরু করে ভোট কেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র। অনেক সময় গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি বেশি হলে তখন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা দেশে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৩ হাজার ১৫০টি। মামলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮১টি। ২০১৬ সালে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০টি। মামলা করা হয়েছে ৬২২টি। ২০১৭ সালে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫টি। মামলা করা হয়েছে ২ হাজার ২০৮টি। ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার। মামলা করা হয়েছে ৬৯৩টি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে অস্ত্র মামলা হয়েছে ১৬০টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৯টি, মার্চ মাসে ১৮০টি ও এপ্রিল মাসে ১৯৪টি। এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপির) তথ্য অনুযায়ী তাদের নিয়মিত অভিযানে ২০১৭ সালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৫২ জনকে এবং বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে ২৬৫টি। 

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করে মামলা করা হয়েছে ২৩টি। ফেব্রুয়ারি মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ১৮টি, ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করে মামলা হয়েছে ২২টি। মার্চ মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ২১টি, গ্রেপ্তার ৭৭ জন ও মামলা হয়েছে ৩২টি। এপ্রিল মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ১৮টি। গ্রেপ্তার ৪২ জন ও মামলা করা হয়েছে ২১টি। মে মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১১টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪১ জনকে ও মামলা করা হয়েছে ২১টি। জুন মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে করা হয়েছে ১৪টি মামলা। জুলাই মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে করা হয়েছে ১৯টি মামলা। আগষ্ট মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৪০জনকে গ্রেপ্তার করে করা হয়েছে ২৪টি মামলা। 

সেপ্টেম্বর মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র। ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে করা হয়েছে ১০ মামলা। অক্টোবর মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ৩১টি মামলা করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ২১টি মামলা করা হয়েছে। 

একই বছরের ডিসেম্বরে উদ্ধার করা হয়েছে ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র। ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে ২৭টি মামলা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারী মাসে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১৫টি। ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ১৫টি মামলা করা হয়েছে। মার্চ মাসে ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে ১৯টি মামলা করা হয়েছে। এবং এপ্রিল মাসে ১০৯টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিএমপির উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, ২৬টি রিভলবার, ৯৭টি বিদেশি পিস্ত, ২৭টি দেশি পিস্তল, ১টি এসএমজি, ৪টি পাইপগান, ১৭টি শাটারগান, ৬টি দেশি রিভলবারসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু ঢাকার বিভিন্ন জজ আদালতে ৫ হাজার ৩৫৬টি অস্ত্র মামলা বিচারাধীন রয়েছে। রয়েছে ৫৫টি তদন্তাধীন মামলা। আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার (বিডিপিসি) বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় দেশে ৪ লাখের মতো অবৈধ অস্ত্র মজুত আছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস মানবজমিনকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে সারা দেশে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যর ভিত্তিতে পুলিশ এসব অস্ত্র উদ্ধার করে। এর বাইরে যদি কারো কাছে অবৈধ অস্ত্র থেকে থাকে তবে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। 

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/জুন ৫,২০১৮ 

Fresh bailout for state banks

Govt may inject Tk 2000cr in next FY to help them tackle capital deficit; Muhith promises bank reform commission amid series of scams


Rejaul Karim Byron

The government may again allocate Tk 2,000 crore to state-run banks in the upcoming budget to help them meet capital deficit, continuing its years-long “go easy” attitude towards the lenders despite their irresponsible lending practices.

In the current budget, around Tk 2,000 crore was allocated to these banks as part of a recapitalisation plan. However, the amount has not been disbursed yet.

The figure may remain unchanged in the upcoming budget, Finance Minister AMA Muhith said yesterday.

The minister also promised to set up a banking reform commission again to save the ailing banking sector though the government did not implement any of the major recommendations made by the previous commission formed nearly two decades ago.

GOVT. DIDN’T HEED TO PREVIOUS COMMISSION

Financial analysts believe the situation would have been a lot different if the government had not ignored the recommendations, one of which called for an end to political interference in the banks.

In recent years, several state-run banks, including BASIC Bank, Sonali Bank and Janata Bank, have been hit by major financial irregularities that involve sanctioning loans of thousands of crore of taka in violation of the banking rules.

Instead of taking measures to prevent such practices, the government keeps allocating funds for the banks from the state coffers, ignoring strong criticism from many economists who are against helping the lenders with taxpayers' money.

From fiscal 2005-06 to 2016-17, the state-run banks received Tk 10,272 crore in capital support, Muhith told parliament in February.  

CAPITAL SHORTFALL

Despite injection of money year after year, capital shortfall at the banks stood around Tk 20,000 crore in December last year, up from Tk 13,819 crore a year ago.

Talking to reporters at the secretariat yesterday, Muhith said the bank reform commission would be announced this month.

“Terms of reference have been fixed.

Now, the members will have to be picked,” he said.

A top official of the Banking Division told this newspaper that they have already sent a proposal to the finance minister, outlining the number of members of the planned commission, their names and functions.

Muhith may finalise the formation of the commission soon after consultation with the prime minister, said the official, seeking anonymity.

Financial analysts have long been demanding that the government go for reforms to bring discipline in the banking sector.

In 1996, the then Awami League-led government formed a five-member banking reform committee, headed by Prof Wahiduddin Mahmud. It submitted its report in December 1999.

The committee made 188 recommendations for Bangladesh Bank, state-owned banks, and new private banks.

One of the recommendations was that the government would form a National Banking Advisory Council, which would be tasked with forming a panel for picking directors of state banks. But no such council has been formed yet.

BANK BOARD ON POL CONSIDERATION

Assuming power in 2009 for the second time, the AL-led government appointed the chairmen and directors of the banks on political considerations.

Later, financial scandals hit the banks and many of the plunderers still remain scot-free.

Take the instance of BASIC Bank, which was once a healthy public bank. In the four years between 2009 and 2013, Tk 4,500 crore was swindled out of it.

Abdul Hye Bacchu, who apparently has strong political connections, was the bank chairman at that time. Yet, he was not made accused in any of the 56 cases filed by the Anti-Corruption Commission over the loan scams.

It was such a blatant case of political power play that the High Court recently rebuked the ACC for foot-dragging and showing weaknesses in investigating the incident.

The court observed that the ACC applied “pick and choose” policy in this case as it was yet to arrest “any of the beneficiaries of the loan scams”.

In case of Janata Bank, some little-known companies, belonging to one individual, were given loans of Tk 5,500 crore. None of the board members or the chairman was held responsible for that though they sanctioned the loans.

On October 7, 2013, the ACC submitted a charge sheet against 25 people to a court for embezzling over Tk 2,600 crore from Sonali Bank. All these pointed to a lack of governance in the banking sector.

Another recommendation was not to pick more than one bank board member from the same family. It was for ensuring transparency in the institutions. This recommendation was not followed as well.

As per the conditions of a loan from the International Monetary Fund, the government amended the Bank Company Act. But the government later backtracked on it apparently giving in to pressure from bank owners.

As new banks were approved on political considerations, the financial condition of many private banks, including Farmers Bank, has deteriorated.

About implementation of the recommendations, Muhith said no commission report has ever been fully implemented. Such reports are implemented partly, he added.

  • Courtesy: The Daily Star /June 05, 2018

চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা নয়

হাসান ফেরদৌস

জন্মাবধি শুনে আসছি চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা। এই প্রবাদের সারকথা হলো, সুযোগ থাকলে চুরি করো, সমাজ এ নিয়ে টুঁ শব্দটিও করবে না। করেও না। চারদিকে তাকিয়ে দেখুন, মহা চোর হিসেবে পরিচিত লোকেরাই সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত। কেউ মন্ত্রী, কেউ এমপি, কেউ মস্ত ব্যবসায়ী। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা সে টাকা ফেরত দেন না, তাঁরাও তো চোর বৈ অন্য কিছু নন। আর এসব লোকই আমাদের সমাজে লাঠি ঘোরান।

সমস্যা হলো, এখন না হলেও একসময় এঁরা ঠিকই ধরা পড়েন। কেউ যদি জীবদ্দশায় আইনের ফসকা গেরো দিয়ে পিছলে যানও, ইতিহাস কিন্তু তাঁদের ক্ষমা করে না।

ফিলিপাইনের মার্কোসের কথা ভাবুন, অথবা কঙ্গোর মবুতু। জনতার রোষ এড়াতে দেশ থেকে পালিয়ে জীবন নিয়ে বেঁচেছেন বটে, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় এখন তাঁদের পরিচয় বিশ শতকের দুই প্রধান চোর হিসেবে। তাঁরা নেই বটে, কিন্তু তাঁদের ছেলেমেয়েরা চুরির টাকায় কেনা ঘরে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে তো?

আসলে চুরিবিদ্যা আদৌ কোনো মহাবিদ্যা নয়, এমনকি চুরি করে কেউ যদি ধরা না-ও পড়ে। যাঁরা ক্ষমতার কেদারায় বসেন, তাঁরা হয়তো এই সত্য টের পান না। কিন্তু ধর্মের কল একসময় ঠিকই বাতাসে নড়ে।

মালয়েশিয়ার নাজিব রাজাকের কথা ভাবুন। ক্ষমতা থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় টলে পড়বেন, এ কথা তিনি ভাবেননি, তাঁর দেশের মানুষেরাও নয়। প্রায় এক দশক ক্ষমতার কেন্দ্রে তিনি। রাজনৈতিক দল, পত্রপত্রিকা ও টিভি, নিরাপত্তা বাহিনী, এমনকি বিচারপতিরাও তাঁর পকেটে। ডাইনে-বাঁয়ে না তাকিয়ে চুরি করেছেন। তাঁর সময়ে সরকারি উন্নয়ন তহবিল থেকে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের মতো খোয়া গেছে, তার একটা বড় অংশ জমা পড়েছে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

বিলাস-ব্যসনের ব্যাপারে তাঁর স্ত্রীর খ্যাতি ইমেলদা মার্কোসকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি একবার ২২ ক্যারেটের এক গোলাপি হিরার আংটি কিনেছিলেন, যার দাম সাড়ে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। পুলিশ ইমেলদার ঘর থেকে হাজার হাজার জুতা উদ্ধার করেছিল। আর নাজিবের স্ত্রীর আলমারি থেকে পাওয়া গেছে হাজার হাজার ডিজাইনের হাতব্যাগ। কাঁচা টাকা ও গয়নাগাটিভরা ২৭৪ বাক্স পুলিশ উদ্ধার করেছে।

তাহলে কী লাভ হলো চুরিবিদ্যা শিখে? ধরা তো পড়েই গেলেন!

অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কথা ভাবুন। নেলসন ম্যান্ডেলার উত্তরসূরি, আর সেই লোক দেশের মানুষের কথা না ভেবে শুধু নিজের পকেট ভরতেই সময় কাটালেন। নিজের গ্রামে সরকারি খরচে এমন এক আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন, যার বাবদ বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ কোটি ডলার। দক্ষিণ আফ্রিকার পাবলিক প্রটেক্টর এই বাড়ি বানানোর সমালোচনা করে যে কড়া প্রতিবেদন তৈরি করেন, তাতে বলা হয় এই অর্থের বড় একটা অংশ জুমার পকেটে গেছে। সে তথ্য ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পত্রিকা প্রথম পাতায় এক কার্টুন ছেপেছিল। তাতে নিজ বাড়ির সুইমিংপুলে থোকা থোকা টাকার মাঝখানে মহানন্দে শুয়ে জুমা।

দুই মাস আগে নিজ দলের লোকেরাই তাঁকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছেন। তাহলে কী লাভ হলো এত টাকার জন্য খাই খাই করে?

আফ্রিকার আরেক নেতা রবার্ট মুগাবেরও একই দশা। ভাবুন, তিনি দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতা, সারা আফ্রিকা তাঁকে বীর হিসেবে সম্মান করে। অথচ দেখা গেল তিনি আসলে মস্ত চোর। দেশের রাজকোষকে তিনি নিজের ব্যক্তিগত বাজার খরচের পুঁটলি ভেবেছিলেন। তাঁর স্ত্রী গ্রেস, সে দেশের লোক পরিহাস করে যার নাম দিয়েছে ‘ডিসগ্রেস’, তিনি বিলাস বাহুল্যে ফ্রান্সের রানি মারি আন্তোনেতকেও হার মানাতেন।

একবার প্যারিসে বাজার-সদাই করতে গিয়ে এক দিনে তিনি খরচ করেছিলেন প্রায় এক লাখ ডলার। শোনা যায় সে যাত্রায় তিনি ৩০০ জোড়া জুতো কিনে ঘরে ফিরেছিলেন। এখন অবশ্য ঘর নয়, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে শ্রীঘর।

যে উদাহরণগুলো দিলাম তা শুধু চুরির নয়, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারেরও। একেই আমরা অন্য কথায় দুর্নীতি বলে থাকি। সভ্যতার আদিকাল থেকে শক্তিধর মানুষ তাঁদের ওপর ন্যস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। আড়াই হাজার বছর আগে কৌটিল্য বলে গেছেন মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে।

দুর্নীতির বেলায়ও তা-ই। রাজা যদি সচেতন না থাকেন, তাহলে সে রাজ্যের মন্ত্রী, কোটাল, চাই কি লেঠেল সর্দার পর্যন্ত সময়-সুযোগ বুঝে দু-দশ (কোটি) টাকা হাতিয়ে নেন। কেন নেন, তার এক ব্যাখ্যা কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে করেছেন। ‘রাজার কাজ পারিষদদের হাত থেকে চুরি ঠেকানো। তবে চুরি ঠেকানো সহজ নয়। জিবের ডগায় মধু রাখা হলে তা চেখে দেখা যেমন কঠিন, ঠিক সেই রকম সরকারি অর্থ হাতের নাগালে এলে তা না হাতিয়ে স্থির থাকা বড়ই কঠিন।’

কৌটিল্য, যার অন্য নাম চাণক্য, এই কথাগুলো বলেছিলেন রাজা চন্দ্রগুপ্তের উদ্দেশে। কৌটিল্য হয়তো আশা করেছিলেন রাজা রাজকোষ থেকে চুরি রোধের ব্যবস্থা নেবেন। তাঁর নিজের তো চুরির প্রয়োজন নেই, সারা রাজ্যটাই তো তাঁর, কৌটিল্যের চোখে সেটাই ছিল আশার কারণ। কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টে গেছে।

রাজা-রাজড়ারা এখন আর তেমন নেই, আর যাঁরা আছেন তাঁদের হাত-পা বাঁধার নানা ব্যবস্থা রয়েছে। সমস্যা হলো, এখন এমন অনেক ক্ষমতাবান রয়েছেন, যাঁরা রাজা না হয়েও রাজার মতো ব্যবহার করেন। মুগাবে বা জুমার ব্যবহার থেকে সে কথাই স্পষ্ট।

আরও একটা জিনিস স্পষ্ট। এসব ক্ষমতাবান লোক ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারেন, কারণ আমরা, অর্থাৎ দেশের মানুষ, মুখ বুজে তাঁদের সে সুযোগ দিই। কখনো কখনো আমরাই যুক্তি দেখাই চুরি তো নেতা করেন না, তাঁর পারিষদেরা করেন। এ কথাও বলি এখন যারা ক্ষমতায় তারা তো রয়েসয়ে চুরি করে। অন্যরা ক্ষমতায় এলে পুকুর গিলে খাবে।

অথচ জনগণের অর্থ নিয়ে নয়ছয় হলে-তা সে যেভাবেই হোক-ক্ষতিটা কিন্তু আমাদের। একটা উদাহরণ দিই। কয়েক বছর আগে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি বহুতল ভবন ধসে পড়লে ২৫ জন মানুষ নিহত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভবন নির্মাণেই গলদ ছিল।

সরকারি পরীক্ষকেরা সে কথা জানতেন, কিন্তু পিছ পকেটে উৎকোচ পেয়ে সে কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। এমন ঘটনা অবশ্য আমাদের দেশে হরহামেশাই ঘটছে। লোহার বদলে বাঁশ ঢুকিয়ে দিচ্ছি, ইন্সপেক্টররা সে খবর জানেন না, তা তো নয়। কিন্তু কৌটিল্য তো বলেই গেছেন, ঠোঁটের আগায় যদি মধু ঢেলে দেওয়া হয়, তাহলে ইন্সপেক্টর সাহেবের আর দোষ কী?

তাহলে কি এদের হাত থেকে আমাদের নিষ্কৃতি নেই? আছে, গোড়াতে যেসব নেতার কথা বলেছিলাম, তাঁদের পরিণতির কথা একবার ভাবুন। এঁরা প্রত্যেকে গণরোষের শিকার হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। কেউ দেশ থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন, কেউ ঢুকেছেন জেলখানায়। জনগণই এঁদের ক্ষমতায় বসায়, আবার ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর ক্ষমতাও জনগণেরই রয়েছে।

হাসান ফেরদৌস: যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি
  • কার্টেসিঃপ্রথম আলো/ জুন ৫,২০১৮ 

Anti-Narcotics Drive: EU calls for probe into all deaths

The European Union missions in Dhaka have called for a complete investigation into all the deaths related to the ongoing drive against narcotics.
“We expect the authorities to ensure that all incidents involving the deaths of alleged criminal suspects are investigated fully and in accordance with due processes,” the heads of local EU missions said in a statement yesterday.

European Union delegation issued the statement in agreement with the EU heads of mission in Bangladesh. The head of mission of Norway associates herself with the statement.

Drug abuse and illicit trafficking is a global problem, the statement said.

The high-level casualties and reports of the use of excessive force in the drive against narcotics, however, is reported to have resulted in over 120 deaths since May 4, it added.

“Bangladesh has committed to uphold the rule of law and ensure that all law enforcement actions are carried out in accordance with the law and in adherence to international standards and norms, including with appropriate safeguards over the use of force,” the statement read.

The signatories of the statement are: ambassador and delegation of the European Union Rensje Teerink, Italian ambassador Mario Palma, German ambassador Thomas Heinrich Prinz, the Netherlands ambassador Leoni Cuelenaere, British high commissioner Alison Blake, Danish ambassador Mikael Hemniti Winther, Spanish ambassador D Álvaro de Salas Giménez de Azcárate, Swedish ambassador Charlotta Schlyter, French ambassador Marie-Annick Bourdin and Norwegian ambassador Sidsel Bleken.

  • Courtesy: The Daily Star/ June 05, 2013

পাহাড় কেটে রাস্তা বানাচ্ছে সিডিএ

  • কাটা হয়েছে ১০টি পাহাড়
  • আয়তনের হিসাবে ২৩ দশমিক



যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে চট্টগ্রামে অন্তত ১০টি পাহাড় কেটে ফেলেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় দুই বছর ধরে পাহাড় কাটছে সরকারি দপ্তরটি। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে নগরের শেরশাহ বাংলাবাজার পর্যন্ত এই পাহাড় কাটা চলছে।

পাহাড় কাটার দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তর নামমাত্র ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। এরপরও পাহাড় কাটা থেমে নেই। কেটে ফেলা পাহাড়গুলোর উচ্চতা ২৫ থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের হিসাবে ইতিমধ্যে ২০ দশমিক ৬ একর পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া নগরের অংশে প্রায় তিন একর পাহাড় কাটা হয়েছে।

নগরের শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন সংযোগ সড়কটি ফৌজদারহাট বাইপাস এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে মিশবে। সংক্ষেপে এটি লুপ সড়ক নামে পরিচিত। এর প্রস্থ হবে ১২০ ফুট। দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ (৫.৯৬০) কিলোমিটার। স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, উন্নয়নকে বাদ দেওয়া যাবে না। তবে পরিবেশের দিকটিও দেখতে হবে। এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে দিন দিন পাহাড়শূন্য হয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তবে এত বড় বড় পাহাড় কেটে যে সড়কটি করা হচ্ছে, সে সড়কটিই তো পাহাড়ধসে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ পাহাড়গুলো কাটা হয়েছে খাড়াভাবে।

প্রকল্পটির জন্য ২০১৬ সালের ১ আগস্ট সিডিএ পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে। কিন্তু ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই তারা প্রকল্পটির কাজ শুরু করে দেয়। সিডিএর আবেদনটি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে ঢাকায় মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কতটা পাহাড় কাটা হতে পারে, তা জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরে চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে পাহাড় কাটার সম্ভাব্য হিসাব দিয়ে ঢাকায় মহাপরিচালকের দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সিডিএর প্রকল্পটি এখনো পরিবেশগত ছাড়পত্র পায়নি। 

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মকবুল হোসেন বলেন, সিডিএ পাহাড় কাটছে এটা সত্য। সড়ক নির্মাণের জন্য এই পাহাড় কাটা চলছে। তারা পরিবেশগত ছাড়পত্র এখনো পায়নি। তবে সেটা শিগগিরই পেয়ে যাবে। ঢাকায় আন্তমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

সরেজমিন চিত্র

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ফৌজদারহাট বাইপাস এলাকা হয়ে প্রকল্পটির শুরু। ওই অংশে ঢুকতেই দেখা যায় একের পর এক পাহাড় কেটে মাঝখান দিয়ে বিশাল সড়ক তৈরির কাজ চলছে। পাহাড় কাটা হয়েছে একেবারে খাড়াভাবে। কাটা পাহাড়ের পাশে বড় বড় বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে পাহাড়ি ছড়ার পানি যাওয়ার জন্য কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। যত দূর যাওয়া যায়, সেখানে পাহাড় কাটার চিহ্ন দেখা যায়। রয়েছে খননযন্ত্রও।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. এরশাদ বলেন, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান পাহাড় কাটলে এতক্ষণে লঙ্কাকাণ্ড হয়ে যেত। সিডিএ কাটছে বলে কিছু বলছে না কেউ। তবে যেভাবে পাহাড় কেটে সড়ক করা হয়েছে, তাতে পাহাড়ধস হবে নিশ্চিত।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান এভাবে পাহাড় কাটে, তাহলে বেসরকারিরা উৎসাহিত হবে।’

২০ একর পাহাড় সাবাড়

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে গত ১ জানুয়ারি সিডিএকে নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, জঙ্গল সলিমপুর মৌজার বিএস ৩৫৭, ৩৫৮ ও ৩৫৯ দাগের প্রায় ২০ দশমিক ৬ একর পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এলাকাটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১০টি পাহাড় ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এক-একটি পাহাড় ২৫ ফুট থেকে দেড় শ ফুট উচ্চতার।

নামমাত্র জরিমানা

লুপ সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার পড়েছে চট্টগ্রাম নগরের শেরশাহ ও বাংলাবাজার এলাকায়। উত্তর পাহাড়তলী মৌজার প্রায় বিএস দাগ ৩০১, ২০০ ও ১৯৮ দাগের প্রায় দুই একর পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। এই অংশটি তদারক করে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চল। গত বছরের ৫ নভেম্বর মহানগর অঞ্চল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

তবে এই জরিমানা একেবারে নামমাত্র বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়, এক একর পর্যন্ত পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। এক একরের বেশি পাহাড় কাটা হলে প্রতি বর্গফুট এক হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, পাহাড় কাটার অনুমতি না নিয়ে তারা পাহাড় কাটছিল। তাই তাদের জরিমানা করা হয়। এরপর পাহাড় কাটার অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করেছিল।

জানতে চাইলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে পাহাড় কাটার অনুমতি সই হয়ে গেছে। হয়তো এখনো তা পরিবেশ অধিদপ্তরে এসে পৌঁছায়নি।

১৯৯৫ সালের চট্টগ্রাম নগর মহাপরিকল্পনায় এই সংযোগ সড়কটির উল্লেখ রয়েছে। এই সড়ক বাস্তবায়িত হলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও উত্তর চট্টগ্রামের যানবাহনগুলো শহরের বাইরে দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারবে।

  • Courtesy: Prothom Alo /June 05, 2018

গরিব মানুষ বাড়ছে — উন্নয়নের গল্প আসলে ফাঁকা আওয়াজ!!!



(বিএনপি কমিউনিকেশন) — অবৈধ সরকার কর্তৃক অর্থনীতির সাজানো তথ্য ও উপাত্তের বানানো মারপ্যাঁচে দেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে দেখানো হলেও লাগামহীনভাবে বাড়ছে আয়বৈষম্য। সারাদেশেই সামগ্রীকভাবে দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবের কারনে দারিদ্র্যের তীব্রতা ফিরে এসেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে উত্তরের জেলাগুলোতে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক নয়।দেশের সিংহভাগ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে। 

দেশে সবচেয়ে গরিব মানুষ এখন কুড়িগ্রামে। এই জেলার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই গরিব। এরপরই অবস্থান দিনাজপুরের। এই জেলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে ৬৪ শতাংশ মানুষ।

দারিদ্র্য বেশি, এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগের। জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের একটি অংশে নতুন করে দারিদ্র্যের তীব্রতা ফিরে এসেছে। তালিকায় থাকা অন্য জেলাগুলো হলো বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও মাগুরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। 

দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে। বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।

সরকার প্রচার করছে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় বেড়েছে। গরীবের সংখ্যা কমেছে। বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ সময়ে করা এক জরিপে বলা হয় দেশের দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালে ছিল মোট জাতীয় আয়ের ০.৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ০.২৩ শতাংশ। বিপরীত দিকে ধনী ৫ শতাংশের আয় ২০১০ সালে জাতীয় আয়ের ছিল ২৪.৬১ শতাংশ যা ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ২৭.৮৯ শতাংশে। একইভাবে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে গরীব ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ১.০১ শতাংশ আর ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫.৩৪ শতাংশ থেকে ৩৮.১৬ শতাংশে। আরো উল্লেখ্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত আয় ২০১৬ সালে ২০১০ সালের তুলনায় হ্রাস  পায় ৭.৫৮ শতাংশ। 

বিবিএসের জাতীয় হিসেবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আয়ের এই বৃদ্ধির সঙ্গে একই হারে বেড়েছে প্রকৃত মাথাপিছু ভোগ। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীতে এইচআইইএস ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী পারিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তির প্রকৃত আয় কমেছে ২০১০ সালের তুলনায় ২ শতাংশ এবং ভোগের জন্য প্রত্যেকের প্রকৃত ব্যয় কমেছে ১ শতাংশ। অর্থাৎ ভাওতাবাজ সরকারের উন্নয়নের যাবতীয় চিত্রই একটা ভাওতাবাজী ও মিথ্যা পরিসংখ্যানের কারসাজি। 

মাদকবিরোধী অভিযান — মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন



মাদকবিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে প্রত্যেকের মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশনের প্রতিনিধিরা এক যুক্ত বিবৃতিতে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছে।

ইউ’র হেড অব মিশন মিসেস ব্লেকেন প্রেরিত ওই বিবৃতিতে মাদকের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচারের ঘটনাকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযানে সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে ৪ মে পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ এটাও নিশ্চিত করেছে যে, সব ধরনের আইন প্রয়োগের কাজটি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক মান ও নীতি অনুসৃত হয়েছে এবং এতে শক্তির ব্যবহারে যথাযথ আইনি নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে। তাই আমরা আশা করি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন অপরাধীদের মৃত্যুর ঘটনার সব ঘটনা পূর্ণ তদন্ত করবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন, ইইউ প্রতিনিধিদলের রাষ্ট্রদূত রেসজি তিরিঙ্ক, ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস হেনরিখ প্রিনজ, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত লিওনি চুয়েলেন্যায়েরে, ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকাইল হেমনিতি উইনথার, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ডি আলভারো দো সালাস জিমেনেজ দো আঝারাতে, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত চারলোতা স্কিলিটার এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস ম্যারি-অ্যানিক বুরিডিন।


ঈদকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনদের টার্গেট ৩শ’কোটি টাকার চাঁদা!




ফুটপাত থেকে প্রতি এক  হাজার চাঁদার টাকা থেকে ২শ’ টাকা। পুলিশ নেয় ৫শ’, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পান ৩শ’ টাকা। প্রতিরাতে থানার ক্যাশিয়ার এসে ভাগের টাকা নিয়ে যায়। আর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

ঈদকে সামনে রেখে দখল হয়ে গেছে রাজধানীর ফুটপাত ও রাস্তা। পুলিশ ও ঢাকার দুই সিটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ফুটপাতের চাঁদাবাজরা। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এবার ৩শ’ কোটি টাকা চাঁদাবাজির টার্গেট নিয়ে রাজধানীজুড়ে সক্রিয় কমপক্ষে ৭০টি গ্রুপ। সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজচক্রের হয়ে মাঠে তৎপর ৫ শতাধিক লাইনম্যান। এরা ক্ষমতাসীনদের মদদে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে হকার বসিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে। এ চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই মাঠপর্যায়ের কতিপয় পুলিশ-আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও। 

রমজানের শুরুতেই দখল হয়ে গেছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা। চাঁদাবাজচক্র বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত, সরকারি খাস জমি ও মালিকানা জমিতে নতুন নতুন দোকান বসিয়ে মোটা অংকের চাঁদা তুলছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ফুটপাত দখলকারী গ্রুপ আছে কমপক্ষে ৭০টি। সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীরাই এই গ্রুপের সদস্য। এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৫ শতাধিক লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ। এরাই ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে হকারদের কাছে ভাড়া দিয়ে থাকে। ভাড়ার আড়ালে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতার নামে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। ফুটপাতের হকাররা জানান, রমজান শুরু থেকেই সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। কয়েকটি এলাকায় সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদাবাজরা এলাকা ভেদে ২শ’ থেকে ৩শ’ দোকানের একটি অংশকে নাম দিয়েছে ‘ফুট’। চক্রাকারে ফুটের হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদার টাকা নিচ্ছে চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত লাইনম্যানরা। তাদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছেন প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মনোনীত সর্দার। লাইনম্যানের উত্তোলিত টাকার সিংহভাগই যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মাস্তান বাহিনীর পকেটে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটেও যাচ্ছে লাইনম্যান ও সর্দারের উত্তোলিত টাকার একটি অংশ। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার কয়েকজন হকার জানান, লাইনম্যানদের দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা পরিশোধ করে দোকান চালাতে হয়। চাঁদার রেট কম হলেই উচ্ছেদসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। ভেঙে দেয়া হয় দোকানপাট।

জানা গেছে, শুধু ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে এমন গডফাদার রয়েছে ৭০ জন। এর মধ্যে গুলিস্তানে ৪, মতিঝিলে ৩, সদরঘাটে ৩, নিউ মার্কেটে ৫, ফার্মগেটে ৩, মিরপুর-১ নম্বরে ২, মিরপুর-১০ নম্বরে ২, উত্তরায় ২, বাড্ডায় ২, কুড়িলে ২, কামরাঙ্গীরচরে ১৯, লালবাগ বেড়িবাঁধে ৭, বংশাল-কোতোয়ালীতে ৬ জন রয়েছে। অন্যরা রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এই ৭০জন গডফাদারের অধীনে ৭০টি চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত ৫ শতাধিক লাইনম্যান সারা বছরই ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে থাকে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা নিউ মার্কেটের ৩ নং গেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটের দোতলায় রয়েছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বণিক সমিতির অফিস। এর সামনেই মার্কেটের আলোবাতাস প্রবেশে গ্রিলঘেরা খোলা জায়গা। কিন্তু সমিতির কতিপয় অসাধু নেতা মার্কেটের সবক’টি প্রবেশপথ, খোলা জায়গা ও সিঁড়িকোঠাসহ খালি জায়গায় দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছে। দেড়শতাধিক দোকান থেকে অফেরতযোগ্য এককালীন ঘোষণায় দোকানপ্রতি নগদ ২ লাখ টাকা আদায়সহ প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নিয়মিত ভাড়া তুলছে সমিতির দুই নেতা। মার্কেটের বিভিন্ন স্পটে গাড়িপার্কিং থেকেও ডিএসসিসি’র বিধি উপেক্ষা করে ওই দুই নেতা নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ও নিউ মার্কেট অংশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কিছু ক্যাডার ফুটপাথসহ মার্কেটের ফাঁকা জায়গায় দোকান বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা তোলে। হকাররা জানান, ঈদকে সামনে রেখে ছাত্রনামধারী এসব ক্যাডাররা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গুলিস্তান হকার্স, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, খিলগাঁও তালতলা, মিরপুর শাহ আলী, ১ নম্বর, গুলশান-১ ও ২, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার, মুক্তবাংলা, উত্তরা ও পুরান ঢাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীরাও একই রকম তথ্য জানান। 

অন্যদিকে, কামরাঙ্গীরচর রসুলপুর ব্রিজ মার্কেটের দু’টি ব্যক্তিমালিকানা জমিতে অনুমোদন ছাড়াই জবর দখল করে ঈদ বাণিজ্য মেলার নামে প্রায় ৬০টি দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়দানকারী মাউচ্ছা দেলু, জাবেদুল ইসলাম জাবেদ ওরফে সমিতি জাবেদ, মফিজ, খোকন, কামাল, অহিদুল, বাবু, হানিফ, সিদ্দিক, বাদশা, মঞ্জু, ফিরোজ, সুমন, মাসুদ, মামুন, মুসা, শাকিল, মনির ও সিরাজ তালুকদার। ইতোমধ্যেই দোকান প্রতি ৫ লাখ টাকা করে আদায় করেছে মৌসুমী এসব চাঁদাবাজচক্র। লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধে মঙ্গলবার হলিডে মার্কেটের অন্তত ২ হাজার ফুট দোকান থেকে দোকানপ্রতি গড়ে আড়াইশ’ টাকা করে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়দানকারী হাফেজ সুমন, জাকির, শাহীন ওরফে অটোশাহীন, বারেক, সেলিম, বিপ্লব ও মোখলেস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কয়েকজন হকার জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের জিসান, মিরপুরের শাহাদাত ও লিটু, কারওয়ান বাজারের আশিক, কল্যাণপুরের বিকাশ-প্রকাশ, বাড্ডার মেহেদী, মগবাজারের রনি, আদাবরের নবী, মোহাম্মদপুরের কালা মনির, শাহ আলীর গাজী সুমন, পল্লবীর মোক্তার, কাফরুলের শাহীন সিকদার, যাত্রাবাড়ীতে ইটালি নাসির, জুরাইনের কচির নাম ব্যবহার করছে চাঁদাবাজ চক্র। বাড্ডা এলাকায় ডালিম, রবিন, ভাগ্নে ফারুক, আরিফ, মান্নান, রমজান, দুলাল, মানিক, শিপলু, রায়হান, রুবেল, রিয়াদ, রামপুরায় কালা পলাশ ও মুরাদ, গুলশান-বনানীতে টিপু, মহাখালীতে অপু, মিলন ও জামাই মুকুল, সাততলা বস্তিতে মনির ও লম্বু সেলিম, খিলগাঁওয়ে খালেদ ও মানিক, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদে জাহাঙ্গীর, হাজারীবাগে বুলু, লিংকন, তপু, জনি, রফিক, বিল্লু ও মুন্না, কলাবাগানে নাজিম বাবু ও ইমন, মোহাম্মদপুরে গালকাটা মোশারফ, লম্বা মোশারফ, চিকা জসিম, আহম্মদ, সাজ্জাদ, মোহন, পাভেল, লোটন, চায়নিজ তানভীর, রবিন, আদিত, মীম, খলিল ও হাজী আক্কাস এবং শাহ আলীতে বল্টু রাসেল, মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরে কালাচান ও কিলার বুলবুল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে।

জানা গেছে, ফুটপাত-রাস্তায় অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগে গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ থানায় ৭২ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করেন ডিএসসিসি সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামছুল আলম। মতিঝিল থানার মামলায় গত বছরের ১০ জুলাই দু’জনকে অব্যাহতি দিয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ৪ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলেও তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছে। ওই মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম মোল্লা ফুটপাতে এখনো বহাল তবিয়তে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পাশের মার্কেটে চাঁদা আদায় করছে তার সহযোগী শিবলু ও শাহজাহান মৃধা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররম জিপিও লিংক রোডে হলিডে মার্কেটে খোকন মজুমদার, আবুল হাসেম, মজিবর, পোটল, নসু, হারুন অর রশীদ ও তার সহযোগীরা, উত্তরগেট এলাকায় দুম্বা রহিম, সাজু চাঁদা তুলছে। শাপলা চত্বরে আরিফ চৌধুরী, পল্টনে দুলাল মিয়া ও তার সহযোগী, গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্স ও রাস্তায় আমিন মিয়া, সাহিদ ও লম্বা হারুন, জুতাপট্টিতে সালেক, গোলাপশাহ মাজারের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে ঘাউড়া বাবুল ও শাহীন টাকা তুলছে।

ওসমানী উদ্যানের পূর্ব ও উত্তর অংশে লম্বা শাজাহান, গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটের পশ্চিমে কাদের ও উত্তরে হান্নান, পূর্বে সালাম, আক্তার ও জাহাঙ্গীর, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় লাইনম্যান সর্দার বাবুল, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের উত্তর পাশের রাস্তায় জজ মিয়া, পূর্ব পাশের রাস্তায় সেলিম মিয়া, মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মো. আলী, আবদুল গফুর ও বাবুল ভুঁইয়া, শাহবাগে ফজর আলী, আকাশ, কালাম ও নুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ীতে সোনামিয়া, তোরাব আলী, মান্নানের নেতৃত্বে চাঁদা তোলা হচ্ছে। জুরাইন-পোস্তগোলায় বিক্রমপুর প্লাজা থেকে সেতু মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলছে আলমগীর শরীফ ও মোশারফ হোসেন। এদের চাঁদার টাকার বড় অংশ যাচ্ছে স্থানীয় এমপির এক ঘনিষ্ঠজনের পকেটে। মিরপুরে-১-এ ছোট জুয়েল, আলী, বাদশা ও মিজান, মিরপর-১১ এ আবদুল ওয়াদুদ, শফিক ও হানিফ, গুলশানে হাকিম আলী, কুড়িলে আবদুর রহীম ও নুরুল আমিন, এয়ারপোর্টে আকতার, মনির, ইব্রাহিম, জামাল ও বাবুল, উত্তরায় টিপু, নাসির ও হামিদ চাঁদার টাকা তোলে। 

গুলিস্তানের এক লাইনম্যান জানান, ফুটপাত থেকে এক হাজার টাকা তুললে তাকে দেয়া হয় ২শ’ টাকা। পুলিশ নেয় ৫শ’, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পান ৩শ’ টাকা। প্রতিরাতে থানার ক্যাশিয়ার এসে ভাগের টাকা নিয়ে যায়। আর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এম এ কাশেম জানান, রাজধানীতে ১ লাখ ১০ হাজারের মতো হকার রয়েছে। ফুটপাতের দোকানের পজেশন ও পরিধি বুঝে প্রতিদিন দোকান প্রতি ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। রমজান শুরুর পর কয়েকদিনের মধ্যেই ধাপে ধাপে এ চাঁদার পরিমান দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০ রমজানের পর থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত চাঁদাবাজির এমন অরাজকতা চলবে। চাহিদার টাকা বুঝে পেয়ে চাঁদাবাজরা নানা কৌশলে প্রতিদিনই তাদের মনমতো মৌসুমী হকারও বসাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধে বিপত্তি। এভাবে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রগুলো কেবল রমজান মাসজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাতিয়ে নিবে কমপক্ষে ৩শ’ কোটি টাকা।  

  • তথ্যসূত্র — ইনকিলাব/জুন ৪, ২০১৮। লিঙ্ক — https://bit.ly/2JtKT0o 


Monday, June 4, 2018

বিনিয়োগের টাকা নেই


ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮০। অনেকে মনে করেন, দেশের অর্থনীতির চাহিদার তুলনায় সংখ্যাটি বেশি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের ঋণচাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাঁদের মতে, বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্প সুদে ঋণ দরকার। এর জন্য কার্যকর কোনো উৎস দেশে নেই।

এমনিতে দেশের শিল্প খাতে অর্থায়নের মূল উৎস ব্যাংক খাত একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত। খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ কোটি টাকা ছুঁই-ছুঁই। আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকা হিসাবের খাতা থেকে বাদ বা অবলোপন করা হয়েছে। এতে একদিকে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো চড়া সুদ আদায় করছে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক লাইসেন্স প্রদান, ঋণ আদায় করতে না পারা এবং একের পর এক জোর করে মালিকানা পরিবর্তনে পুরো ব্যাংক খাতই সংকটে পড়ে আছে। এর মধ্যেই ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহের চেয়ে ঋণ বিতরণ হয়ে গেছে বেশি।

অর্থায়নের আরেক উৎস পুঁজিবাজার চলে গুজব ও কারসাজির ওপর ভিত্তি করে। বন্ধ ও মুনাফা না দেওয়া কোম্পানির নিম্নমানের শেয়ারের দরই বেশি বাড়ে। আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর শেয়ারধারীরা আস্থা রাখতে পারেন না। কিছুদিন পরপরই শেয়ারবাজারের সূচক পড়তে থাকে এবং হস্তক্ষেপ করে সাময়িকভাবে পতন ঠেকাতে হয়।

এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে শিল্পে বাড়তি অর্থায়ন নিশ্চিত করতে দুটি বিকল্প চান। এ জন্য আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে পদক্ষেপ চেয়েছেন। একটি হলো বেসরকারি খাতের জন্য বাজারে বন্ড ছেড়ে প্রকল্পের জন্য সরাসরি ঋণ নেওয়ার সুযোগ সহজ ও আকর্ষণীয় করা। অন্যটি সরকারের লাইসেন্স পাওয়া প্রকল্পগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে পরপর তিন বছর কোম্পানি মুনাফায় থাকার যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা শিথিল করা।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৯-২০ অর্থবছর নাগাদ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিনিয়োগের হার ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বর্তমানে এ হার ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যদিও বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন একটা বাড়েনি, বেড়েছে সরকারি বিনিয়োগ। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাতে ২৩ শতাংশের ঘরে রয়ে গেছে। চলতি বাজারমূল্যে দেশের জিডিপির আকার এখন ২২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর অনুপাতে বিনিয়োগ ১ শতাংশ বাড়াতে হলে বাড়তি ২২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা দরকার। পাশাপাশি নতুন নতুন বড় প্রকল্প আসছে, যেগুলোয় দীর্ঘমেয়াদি বড় অঙ্কের ঋণের চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

অবশ্য শুধু অর্থায়ন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একমাত্র সমস্যা নয়। ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশে সার্বিক অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম। গত বছরও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক ধাপ পিছিয়েছে। ব্যবসা শুরু করা, নির্মাণকাজের অনুমতি, জমির নিবন্ধন, গ্যাস-বিদ্যুৎসংযোগ, কর দেওয়া ও চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তলানির দিকে। বিনিয়োগের জন্য দেশে জমির সমস্যা সমাধানে সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। সেগুলো বিনিয়োগ উপযোগী হতে সময় লাগবে। গ্যাস সমস্যা সমাধানের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বিদ্যুতের দামও অনেক বেড়েছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

নতুন করে তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তা-সংকট। বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছোট প্রতিষ্ঠান বা নতুনদের জন্য বিনিয়োগ করা কঠিন। চলতি বছর নির্বাচন হবে, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়ে গেছে। সাধারণত অনিশ্চয়তা থাকলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত হারে হয় না।

ব্যাংকে টাকার টান

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোয় যে পরিমাণ আমানত আসছে, তার দ্বিগুণ ঋণ হিসাবে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৯৬ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। একই সময় আমানত বেড়েছে ৪৭ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ ঋণের বড় অংশই গেছে বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারদের কাছে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ ততটা বাড়েনি।

ভবিষ্যতে বড় বড় প্রকল্পে বেসরকারি খাতে বাড়তি ঋণচাহিদা তৈরি হবে। ব্যাংকগুলো কি সেই অর্থায়নে প্রস্তুত? জানতে চাইলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছরের জন্য প্রকল্প অর্থায়ন করে থাকে। কেউ কেউ ১০ বছরের জন্যও দেয়। তবে দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো বড় কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ ব্যাংকের নেই।

বড় প্রকল্পে ঋণের সক্ষমতা নেই


দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তার পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। ফলে অনেক ব্যাংকই একজন গ্রাহককে ৭০০-৮০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে না। অন্যদিকে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ঋণ পেতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতেই ৫-৬ বছর চলে যায়। মুনাফা আসে আরও পর থেকে। অথচ বাণিজ্যিক ব্যাংক দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড বা পরিশোধের বিরতি দিয়ে তৃতীয় বছর থেকেই টাকা ফেরত চায়। তবে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে পারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেখানে সুদের হার অনেক বেশি। এখন তা ১৫-১৮ শতাংশ।

চাপ তৈরি করছে বিদেশি ঋণ

দেশের উদ্যোক্তাদের কাছে এখন আকর্ষণীয় হলো বিদেশি ঋণ। কারণ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশি কোম্পানিকে যে সুদহারে ঋণ দেয়, তা দেশীয় উৎসের চেয়ে অনেক কম। গত পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতে মোট বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ এসেছে ৭৭৬ কোটি ডলারের। আর ২০১৭ সালেই বিদেশি ঋণ এসেছে ১৪৯ কোটি ডলার।

সাম্প্রতিককালে দেশে আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি সে তুলনায় কম। এর মধ্যে আবার বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এ জন্য বিদেশি ঋণ নিরুৎসাহিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পায়নের প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগ ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমেই হয়। কিন্তু ভবিষ্যতে এটি একটি বড় বাধা হিসেবে তৈরি হবে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আর কত দিন—এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, শিল্পায়িত দেশগুলোয় পুঁজিবাজার অনেক গভীর। উদ্যোক্তারা সেখান থেকেই মূলধন সংগ্রহ করে। আবার বেসরকারি খাত বন্ড থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। সেখানে বন্ড কেনাবেচা হয়। ফলে বিনিয়োগ করলে টাকা আটকে যায় না। বাংলাদেশে বন্ডবাজার গড়ে ওঠেনি। সঞ্চয়পত্রের মতো ঝুঁকিহীন উচ্চ সুদের বিনিয়োগব্যবস্থা থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পে বিনিয়োগের আর্থিক বাজার গড়ে উঠবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 04, 2018