(বিএনপি কমিউনিকেশন) — অবৈধ সরকার কর্তৃক অর্থনীতির সাজানো তথ্য ও উপাত্তের বানানো মারপ্যাঁচে দেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে দেখানো হলেও লাগামহীনভাবে বাড়ছে আয়বৈষম্য। সারাদেশেই সামগ্রীকভাবে দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবের কারনে দারিদ্র্যের তীব্রতা ফিরে এসেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে উত্তরের জেলাগুলোতে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক নয়।দেশের সিংহভাগ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে।
দেশে সবচেয়ে গরিব মানুষ এখন কুড়িগ্রামে। এই জেলার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই গরিব। এরপরই অবস্থান দিনাজপুরের। এই জেলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে ৬৪ শতাংশ মানুষ।
দারিদ্র্য বেশি, এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগের। জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের একটি অংশে নতুন করে দারিদ্র্যের তীব্রতা ফিরে এসেছে। তালিকায় থাকা অন্য জেলাগুলো হলো বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও মাগুরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ।
দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ।
কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে। বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।
সরকার প্রচার করছে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় বেড়েছে। গরীবের সংখ্যা কমেছে। বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ সময়ে করা এক জরিপে বলা হয় দেশের দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালে ছিল মোট জাতীয় আয়ের ০.৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ০.২৩ শতাংশ। বিপরীত দিকে ধনী ৫ শতাংশের আয় ২০১০ সালে জাতীয় আয়ের ছিল ২৪.৬১ শতাংশ যা ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ২৭.৮৯ শতাংশে। একইভাবে ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে গরীব ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ১.০১ শতাংশ আর ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫.৩৪ শতাংশ থেকে ৩৮.১৬ শতাংশে। আরো উল্লেখ্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রকৃত আয় ২০১৬ সালে ২০১০ সালের তুলনায় হ্রাস পায় ৭.৫৮ শতাংশ।
বিবিএসের জাতীয় হিসেবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় ২০০৯-২০১০ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত বেড়েছে ৪২ শতাংশেরও বেশি এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আয়ের এই বৃদ্ধির সঙ্গে একই হারে বেড়েছে প্রকৃত মাথাপিছু ভোগ। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীতে এইচআইইএস ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী পারিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি ব্যক্তির প্রকৃত আয় কমেছে ২০১০ সালের তুলনায় ২ শতাংশ এবং ভোগের জন্য প্রত্যেকের প্রকৃত ব্যয় কমেছে ১ শতাংশ। অর্থাৎ ভাওতাবাজ সরকারের উন্নয়নের যাবতীয় চিত্রই একটা ভাওতাবাজী ও মিথ্যা পরিসংখ্যানের কারসাজি।
No comments:
Post a Comment