Search

Sunday, June 24, 2018

জেলগেটে গ্রেফতার — স্বেচ্ছাচারের বহিঃপ্রকাশ

তৈমূর আলম খন্দকার

যখন পৃথিবীতে সভ্যতা প্রকাশ পায়নি, প্রকাশিত হয়নি মানুষের জন্মগত অধিকার এবং প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, তখন শাসকের বিরাগভাজন হওয়ার অর্থই ছিল নির্জন কারাবাস বা দীপান্তর, ফাঁসি বা শিরচ্ছেদ। ‘আইন’ যা-ই হোক না কেন, শাসক বা শাসকযন্ত্রের চক্ষুশূল হলেই ‘আইন’ প্রয়োগ হতো উল্টো পথে। তবে এখনো তা হচ্ছে। ঐতিহাসিকদের মতে, সে যুগ ছিল বর্বরতার যুগ। অর্থাৎ, রাজা যা মনে করতেন সেটাই আদেশ এবং আইন। 

এমনও দেখা গেছে, কোনো সাধারণ মানুষ বা উজির-নাজির তিনিই হোন, যে অপরাধের জন্য তাদের মৃত্যুদণ্ড হতো, রাজপরিবারের সদস্যের একই অপরাধের জন্য কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। এভাবেই একটি জনগোষ্ঠী ইতিহাসের পাতায় BLUE BLOOD নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এখন রাজপরিবার তারাই যারা ক্ষমতাসীন ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট। বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর গণমানুষ দাসপ্রথা থেকে আনুষ্ঠানিক মুক্তি লাভ করলেও দাসত্বের মুক্তি পায়নি।

দাসপ্রথা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে নানা বিদ্রোহ ও রক্ষক্ষয়ী ইতিহাস রয়েছে। আন্দোলনের ফলে ১৮৪৩ সালে Act Five আইনে দাস-দাসী আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করা হলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়নি বরং নিছক পরিবর্তন করেছে। মানুষ যখন মানুষকে ক্রয় করে তখন ক্রেতা হয় মালিক, যে মানুষটি যে বিক্রয় করা হয় সে হয় ক্রীতদাস। Slavery মধ্যযুগীয় বর্বরতার সময় দাসপ্রথা হিসেবে অনুমোদিত আইনানুগ সামাজিক প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

কিন্তু বর্তমানে সভ্যসমাজেও মানুষ ক্রয়-বিক্রয় হয়, কোথাও সে দেহ বিক্রি করে, কোথাও বিক্রি করে বুদ্ধি, কোথাও শ্রম বিক্রি করে এবং কোথাও বিবেক বিক্রি করে দেয়। যে নারী তার দেহ বিক্রি করে, সে অর্থের বিনিময়ে নিজের দেহকে কারো পুরুষের কাছে উজাড় করে দেয়। আর যে বিবেক বিক্রি করে, তার দেহে কোনো চিহ্ন থাকে না, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ, দেশ ও জাতি। এখন চলছে প্রমোশন, সুবিধামতো পোস্টিং কিংবা সুখ শান্তি ও অর্থের বিনিময়ে বিবেক বিক্রি করার যুগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিবেক বিক্রি হওয়ার প্রবণতায় ভিকটিম হচ্ছে দেশের নিরীহ শান্তিপ্রিয় অসহায় মানুষ।

কিন্তু যারা বিবেক বিক্রি করে তাদের সম্পর্কে সভ্যসমাজ কী ধারণা পোষণ করতে পারে? বুদ্ধি বিক্রি আর বিবেক বিক্রি করা এক নয়। যে ব্যক্তি সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে না পারে সে বিবেক বিক্রেতা। এদের কাছে জাতি আজ অসহায়। বিবেকবিক্রেতাদের প্রধান অস্ত্র লোভ বা প্রলোভনের কারণে বিবেককে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করা। মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করাই ওদের প্রধান কাজ। নানাবিধ অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে যাওয়া অথবা ঘুষ খাওয়ার অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য সুবিধামতো পোস্টিং ও প্রমোশনের লোভে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এখন মিথ্যাকে সত্যে এবং সত্যকে মিথ্যায় রূপান্তরিত করছে। তা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ থেকে এ দেশের আমলারা পেয়েছেন। বড় বড় আমলারা জেনেশুনে মিথ্যাকে সত্যে রূপান্তর করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন, এ জন্য যে, তাতে তাদের ওপরওয়ালারা খুশি থাকবেন। এতে কিন্তু নিগৃহীত হচ্ছে জনগণ। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণের পরও স্বার্থের জন্য অহরহ বিবেক বিক্রি করা হচ্ছে, এ অবস্থা এখন দৃশ্যমান।

পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা পুলিশকে পিটিয়েছে। তখন পুলিশ নির্বাক, কারণ যে পিটিয়েছে সে সরকারি দলের লোক, অর্থাৎ তার অভিভাবক সরকারি দলের কর্মকর্তা। অন্য দিকে, কোনো ঘটনাই ঘটেনি এমন কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অহরহ গ্রেফতার করা হচ্ছে। রিমান্ড দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়, তারপরও নিজ বিবেককে কবর দিয়ে দাঁড়িপাল্লা (ন্যায়বিচার) খচিত চেয়ারে বসে ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর করে পুলিশকে রিমান্ড বাণিজ্য (পত্রিকার ভাষায়) করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এমনকি কোর্ট এখন রাজনৈতিক মামলায় তেমন আচরণ করে। হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশে জেল থেকে বের হওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন তখন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের আদেশে এজাহারে নাম না থাকা মামলায় জেলগেট থেকে বারবার বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, এ যেন এক মগের মুল্লুক। এ নতুন ইভেন্ট যোগ হয়েছে, রিমান্ডে থাকার সময়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের নিকট থেকে চাহিদামতো টাকা আদায়। রিমান্ড ও ক্রসফায়ার বাণিজ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য (যারা টার্গেট) অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে এসেছেন, অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।

হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর জেলগেট থেকে গ্রেফতারের প্রবণতা আগেও ছিল, যা কদাচিৎ দেখা যেত। ১/১১-এর অবৈধ সরকারের সময় এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে, যা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আইন অপপ্রয়োগ করে কৌশলে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জেলগেটে গ্রেফতার করা স্বেচ্ছাচারিতার একটি বহিঃপ্রকাশ। 

রকার নির্দেশিত এ বর্বরতাকে রোধ করার জন্য, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেলগেট থেকে বারবার গ্রেফতার করায় জেলগেটে গ্রেফতারে নিষেধ করে নিন্মেবর্ণিত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এতে অ্যাপিলেট ডিভিশন বলেন যে, ‘We direct that the respondent Mahmudur Rahman should not be shown arrested in connection with any other case unless there is true complaisance of section 167 of the Code of Criminal Procedure. Even he should not be arrested at the Jail gate after he is released from the custody which is not permissible in law. [সূত্র: ৬৮ ডি.এল.আর (এ.ডি) (২০১৬)(৩৭৩)] 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এ বলা হয়েছে যে, ‘আপিল বিভাগকর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সব আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হবে।’ অর্থাৎ, সংবিধান মোতাবেক সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আইন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেশের সব আদালতের ওপর প্রযোজ্য। অ্যাপিলেট ডিভিশনের জেলগেটে গ্রেফতারসংক্রান্ত দিকনির্দেশনাকে অমান্য করে, জামিন হওয়ার পর পুলিশ জেলগেটে গ্রেফতার করছে ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতায়। পুলিশ তো বটেই, বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেকে সুপ্রিম কোর্টের দিকনির্দেশনা মানছেন না। কারণ, তাদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ এখন সরকার প্রধানের হাতে, সুপ্রিম কোর্টের হাতে নেই। 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখনো কার্যত অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ আইনে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণে থাকবে বিচার বিভাগ। বাস্তবতা এই যে, সংবিধানের ৪৮(গ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সব প্রশাসনিক কার্যক্রমই প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর লিখিত সুপারিশ ছাড়া রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনিক কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। 

‘বিবেকই’ মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মাঝে তফাতের প্রধান মাপকাঠি। পতিতা যখন দেহ বিক্রি করে, তখন কলঙ্কিত হয় সংশ্লিষ্ট নারী। অন্য দিকে, দায়িত্বশীলরা যখন ‘বিবেক’ বিক্রি করে তখন বিপর্যস্ত হয় গোটা জাতি, যার প্রধান শিকার সমাজের শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষ। তোষামোদিতে কে কার চেয়ে এগিয়ে, তা নির্ধারণের জন্য ‘বিবেক’ বিক্রির প্রতিযোগিতা চলছে। তা এখন মাহামারী থেকে স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে।

  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুন ২২,২০১৮

হায় হালদা! হায় সম্পদ!


আমাদের গর্ব করার মতো দুর্লভ প্রাকৃতিক সম্পদের একটি হালদা নদীকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার শেষমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। জোয়ার-ভাটার এই নদীতে মিষ্টি পানির মাছের ডিম ছাড়ার ঘটনা পৃথিবীর এক বিস্ময়। এই দুর্লভ সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে বসেছি, সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসের পেট চিরে একবারে সব কটি ডিম বের করে নেওয়ার খাসলত আমাদের সব রাজনীতি-অর্থনীতি, এমনকি সামাজিক আচরণের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। 

আমাদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর হঠকারিতায় হালদা এখন ক্লান্ত অবসন্ন। বাঁক সোজা করা, হালদার বুকে রাবার ড্যাম বসানো, নদীর পারে বাছবিচার না করে কলকারখানা বসানোর অনুমতি, হাঁস-মুরগির খামার গড়তে দেওয়া, পৌরসভার বর্জ্য ফেলা, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য বহন ইত্যাদি নানা মন খারাপ করা বিষয় নিয়ে হালদা সব সময় আলোচনায়, আন্দোলনে, সংসদে, চলচ্চিত্রে ছিল। অনেক দিন পর এ বছর একটা ভালো খবরে বেশ আহ্লাদিত হয়েছিলাম: হালদা নদীতে গত মে মাসে কার্প–জাতীয় মাছ গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছিল। নদী সুরক্ষায় চলতি বছরের শুরুতেই সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে নদীর দুই পারের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের খবর বড় বড় হরফে ছাপা হয়েছিল। 

তখন কিন্তু চট্টগ্রামে হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, শিল্প, আবাসিক এলাকা ও পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্জ্য ও রাসায়নিকে হালদা আশঙ্কাজনকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। তাঁর আশঙ্কা ছিল, মা মাছদের এই উজাড় করে দেওয়া উপহার কি আমরা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব? মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হলো।

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীতে বন্যা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কয়েক দিন ধরে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণীরা মরে ভেসে উঠছে। পাহাড়ি ঢল, ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা ঝটিকা বন্যা হালদায় নতুন কিছু নয়। এতে তো আগে কখনো মাছ মরেনি। এবার কেন মরছে? 

গত বছর হাওরের হাঁস-মাছের মড়কের রহস্য আজও কাটেনি। হালদায় মড়কের কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য মঞ্জুরুল কিবরিয়া সরেজমিনে পরীক্ষায় গিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ টিম নদীর ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করে পানিদূষণের এক ভয়াবহ চিত্র পেয়েছেন। 

গত প্রায় দুই সপ্তাহের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে হালদা নদীতে উজান এলাকার কলকারখানা, পোলট্রি খামারসহ বিভিন্ন শিল্পের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর বর্জ্য প্রায় ২০টি খালের পথ বেয়ে হালদাতে পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হালদার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া একটি খালও আছে। হালদার কোথাও কোথাও পানির রং এমন বিবর্ণ হয়ে গেছে যে সেসব জায়গায় হালদাকে আর চেনা যায় না।

মঞ্জুরুল কিবরিয়ার সঙ্গে আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে হালদা নদীর পানিতে প্রতি এক লিটারে অক্সিজেনের পরিমাণ দুই মিলিগ্রামেরও নিচে নেমে গেছে। অথচ নদীর পানিতে মাছ বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে কমপক্ষে পাঁচ মিলিগ্রাম অক্সিজেন প্রয়োজন। 

তিনি হালদা নদীতে দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার ঘটনাকে এই নদীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে করেন। তিনি জানান, ভাটির চেয়ে উজানে দূষণের মাত্রা বেশি। তাঁর মতে, এবারের বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরের অক্সিজেন থেকে কুলগাঁও এলাকার আবাসিক বর্জ্য, ভাটি এলাকার পোলট্রি খামার, ট্যানারিসহ বিভিন্ন শিল্পের বর্জ্য ব্যাপকভাবে হালদায় মিশেছে।

তা ছাড়া হাটহাজারী সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা পেপার বোর্ড তৈরির কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যও হালদায় মিশেছে। এসব বর্জ্য হাটহাজারীর নিম্নাঞ্চলে গিয়ে জমা হয়ে হালদায় প্রাণঘাতী দূষণ ঘটিয়েছে। ফলে হালদার সঙ্গে যুক্ত খন্দকিয়া, কাটাকালি ও মাদারি খাল তিনটিতে বড় বড় মা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ মরে ভেসে উঠছে। হালদা নদীর মোহনা থেকে উজানে নদীর এক পাশে হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, অন্য পাশে রাউজান পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় মরা মাছ ভেসে উঠছে। 

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, গত মঙ্গল ও বুধবার হালদায় ছোট ছোট মাছ মারা পড়লেও গতকাল বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে প্রচুর বড় বড় মৃত মাছ। এর মধ্যে রুই–জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছও রয়েছে। রুই–জাতীয় মাছের মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছ পাওয়া গেছে।

বছর কয়েক আগে হাটহাজারীর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের (পিকিং পাওয়ার) দূষিত ফার্নেস অয়েল ও বজ্রবৃষ্টির পানির ঢলের সঙ্গে মিশিয়ে ছেড়ে দিলে হালদার আশপাশের ছড়া ও শাখা-প্রশাখা খাল দিয়ে হালদা নদীতে ঢুকে দূষিত করে হালদা নদীর মিষ্টি পানি; সে সময় হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম ছিল। এই দূষিত বর্জ্যের কারণে বহু ডিম সংগ্রহকারীর ডিম নষ্ট হয়। সে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পরিবেশ অধিদপ্তর পিকিং পাওয়ার কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা শোনা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সেতু ভেঙে খালে পড়া ট্রেনের বগি থেকে ফার্নেস অয়েল মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়ে।

আর দেরি না করে হালদাকে পরিবেশগতভাবে বিপদাপন্ন এলাকা বা ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণা করে এটা রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় হালদার অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপগুলোকেও আমাদের এগিয়ে নেওয়া উচিত।

গওহার নঈম ওয়ারা: ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ২৪,২০১৮ 

বান্দরবান ও ফেনীতে বিএনপির ৩ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বান্দরবান জেলা

বান্দরবানে জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য মাম্যাচিং ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজাসহ বিএনপির ৮০ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার বান্দরবান সদর থানায় পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বান্দরবান জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ এ মামলা করে।

মামলায় জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য মাম্যাচিং ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা, জেলা যুবদল নেতা সেলিম রেজা, উক্যচিং মারমা, মো. শাহাদাত, মো. ইউসুফ, মো. কাশেমসহ অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশের মতো বান্দরবানেও নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ব্যাপক লাঠিচার্জ করে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন এবং পাঁচ জনকে পুলিশ আটক করে।

এ ঘটনায় উল্টো পুলিশই মামলা করে দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। পুলিশের বাধা ও মামলা হামলার ভয়ে বিরোধী দল কোনো কর্মসূচিই সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং একটি অগণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না।

ফেনী জেলা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী শহরের রামপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করায় বিএনপি ও যুবদলের ২৪০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি-যুবদলের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা শহরের রামপুর এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ২৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে।

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/জুন ২৪,২০১৮ 

শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ

জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যয় প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের চেয়েও কম।


রাজীব আহমেদ



শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এ দুটি খাতে বাংলাদেশের ব্যয় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনকি প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে সম্প্রতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকার অঙ্কে বেড়েছে বটে। তবে মোট বাজেটে এ দুটি খাতের হিস্যা কমেছে। ফলে জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আগের মতোই নিম্নস্তরে রয়ে গেছে।

এদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অনুপাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের একটি চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসকাপ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক জরিপে। ২০১৮ সালের প্রতিবেদনটি গত ৮ মে প্রকাশ করা হয়। এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এসকাপের প্রতিবেদনটিতে ৩৬টি দেশের শিক্ষা খাতের ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় করে, যা ওই দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের চেয়ে কম ব্যয় করে শুধু কম্বোডিয়া। পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারতে তা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এই খাতে নিউজিল্যান্ড ব্যয় করে জিডিপির প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ ব্যয় করত। সেটা সর্বশেষ বাজেটে কমে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে এসেছে। এর মানে হলো, দেশের জিডিপির আকার বেড়েছে। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। ফলে জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্যে ব্যয় কমেছে। প্রতিবেদনে ৪৮টি দেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মতো আর কোনো দেশই এত কম হারে ব্যয় করে না। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৯ শতাংশের বেশি ব্যয় করে।

সার্বিকভাবে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন যদি টেকসই করতে হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের অবস্থানে থাকার সময় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। তার সুফল এখন তারা পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মুখে বলছি, বাস্তবে করছি না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।’

নতুন বাজেটে শিক্ষা খাত

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয়ের একটি বিশ্লেষণ করেছে। তাদের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। এটি চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের বরাদ্দের চেয়ে কম। সংশোধিত বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে ২ দশমিক ০৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের সমান। তবে গত চার বাজেটের মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা খাতে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, নতুন বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয় ৫৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেছে সিপিডি।

দেশের শিশুরা এখন বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন আছে। এ দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি হচ্ছে না। ফলে বিদেশিরা বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে কাজ করছেন। এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে আর দেশে ফিরছেন না।

বাজেট ঘোষণার পরদিন সিপিডির বিশ্লেষণে সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে বলেন, শিক্ষায় এত কম বরাদ্দ দিয়ে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া, দক্ষ শ্রমশক্তি নিশ্চিত করার আশা বাতুলতা। 

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ

নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের হিস্যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কমেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে এই খাতের জন্য ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন বাজেটে মোট ব্যয়ের ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে স্বাস্থ্য খাত, যা সংশোধিত বাজেটে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে এই হার ১ দশমিক ০৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা ছিল। নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাত পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং কৃষির চেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য আছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পেরেছে। তবে সেটা সম্ভব হয়েছে সস্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। স্বাস্থ্য খাতে নতুন যেসব সমস্যা আসছে, তাতে বরাদ্দ ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। এ দেশের মানুষের বড় একটা অংশের চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটারও স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকারের সঙ্গে যোগ আছে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ২৪,২০১৮ 

10 banks face capital shortfall of Tk 23,363cr

AKM Zamir Uddin


Seven state-run banks have failed to meet the minimum capital requirement, meaning they need further taxpayer-funded recapitalisation.

The latest data from the Bangladesh Bank showed a total of 10 banks, including the seven state lenders, faced a capital shortfall of Tk 23,363 crore as of March, up by more than Tk 3,800 crore compared to a quarter ago.

The lenders are Bangladesh Krishi Bank, Sonali, BASIC, Rupali, Janata, Agrani, Rajshahi Krishi Unnayan Bank, Bangladesh Commerce Bank, ICB Islamic Bank and Farmers Bank.               

Among the banks, BKB has had the highest amount of capital shortfall at Tk 7,930 crore, up from Tk 7,777 crore three months ago. Sonali's capital shortfall rose to Tk 6,755 crore from Tk 5,397 crore.

Agrani Bank has plunged into the capital shortfall in the first quarter although it had surplus of Tk 157 crore only three months ago. Trouble-hit Farmers Bank failed to maintain the required capital in the first quarter as the private lender has recently faced huge corruption and irregularities.

The BB data showed that the capital shortfall in the state-owned banks stood at Tk 21,282 crore as of March 31, up from Tk 17,442 crore a quarter ago.

The government has recapitalised the state lenders by injecting Tk 14,505 crore since 2009, but they are yet to strengthen their capital base in absence of corporate governance.

A BB official told The Daily Star yesterday that the central bank should take immediate measures to address the problem as such a situation sends out a negative message to the international community and local businesspeople that the banking sector was weakening. He said the widening default loan was one of the major reasons for the shrinking capacity of the banks to maintain the required capital.

Foreign businesspeople usually look at the capital base and non-performing loans of the scheduled banks before making investment decisions, the official said.This type of capital shortfall will put foreign investors at bay, he said, urging the central bank to strengthen monitoring to rein in financial scams. 

  • Courtesy: The Daily Star /June 24, 2018

Low deposit rate will hurt small savers

The decision of banks to decrease interest rates to single digits may boost investment but the middle-income groups or small savers may be affected the most. With stock market in disarray, no social security system and rising healthcare cost, fixed deposits in banks have been the last resort for many of those depositors. Now, the lowered deposit rate, which is almost the same as the inflation rate, will discourage them to keep their money in banks and, in the process, dry up banks that are in dire need of money.

The only alternative to the fixed deposit has been the government's saving instrument, Sanchaypatra, but it is largely exploited by the rich rather than the intended beneficiaries, the middle-income savers. Moreover, 10 percent tax has been levied on interest earned from fixed deposit and bonds. The government has also decided to reduce its borrowing through saving certificates. Therefore, many may soon be left with almost no alternative.

In terms of interest rate, there should be a balance so that investment is encouraged and the small savers are not hurt. The proposed deposit rate (six percent) and lending rate (nine percent) will leave banks with a spread of three percent. Such a spread is hardly profitable for banks due to the gigantic size of their non-performing loans. Moreover, a decreased lending rate will do little to incentivise investment if the malgovernance in the banking sector remains unresolved.

Therefore, unless the government addresses the issue of non-performing loans and poor lending practice in banks, investment will not be encouraged, a lower lending rate for desired investment boost will not be sustainable and the small savers will suffer badly. Cleaning up these anomalies in banks is where the key to solution lies.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial/ June 24, 2018

Anti-drug Drive: So-called gunfights kill two more

Total victims now 157

Two alleged drug traders were killed in separate “gunfights” in Tangail and Sirajganj yesterday while police recovered the bullet-hit body of another in Chuadanga.
This brings up the number of dead in the ongoing nationwide anti-narcotics drives to at least 157.

Police recovered the bullet hit body of drug trader Abdul Mannan, 45, son of late Ali Hossain at Kandapara in Tangail municipal area.

Police said they suspect Mannan may have been killed in a gunfight following a dispute between two groups of drug traders. However dceased's brothers Golam Rasul, Golam Maula and his son Nazmul Hasan Sumon said police picked up Mannan from his house at 2:00am on Friday. 

Sanjit Kumar Roy, superintendent of police (SP) in Tangail, at a press briefing said police discovered Mannan's body when they raided Charabari are at 7:00am after receiving information from locals. They also recovered a foreign pistol and Yaba pills from Mannan's body.

"Mannan is a top wanted drug peddler in the district and an accused in six cases, " he said. The Daily Star however could not verify any of claims made by the police official. When asked about the claims made by the deceased's family, the SP said he has no such information.

In Sirajganj, a suspected drug peddler Jahangir Hossain, 32, son of late Hatem Ali of Railway Colony Purbapara area, was killed in a 'gunfight' with drug dealers at Mahmudpur field area early yesterday, police said.

Acting on a tip-off, a police team raided the area around 3:00am, Mahmud Daud, officer-in-charge of Kotwali Police Station, said. The criminals opened fire on the police forcing them to retaliate.

Afterwards police recovered Jahangir's body and recovered four bullets, 105 Yaba pills and 25 bottles of Phensidyl from the scene. Jahangir is wanted in seven drug-related cases, police said.

Bullet-Hit Body of Drug Dealer Found in Chuadanga

Meanwhile police recovered the body of a drug peddler from Alamdanga upazila. The deceased was identified as Oltu Mia, 27, son of late Mohsin Ali of Gobindpur in the upazila.

Officer-in-charge of Alamdanga Police Station said locals informed the police about Oltu's body in Satkopat area in Alamdanga upazila around 10:30am.

Abu Zehad Md Fakhrul Alam Khan, the OC, said that Oltu was wanted drug dealer; he was also the son-in-law of an infamous dealer Mini Khatun who ran a drugs operation with 11 members of her family. She is now languishing in Chuadanga jail with two daughters and two sons-in-law on drug related cases. Other members of her family including her husband are absconding.

Oltu was running the drug sales after Mini Khatun's was arrest in February, the OC said.

  • Courtesy: The Daily Star /June 24, 2018

Allocating more fund for agriculture sector

The view that the country's agriculture sector is not receiving adequate attention of the policymakers can hardly be contested. The proof lies in the allocations that the government makes for various sectors in the national budgets annually. An FE report, quoting an influential member of the Planning Commission (PC), said on Saturday that the funds made available to the agriculture sector in the budgets during last nine years increased by only 7.6 per cent. Compared to that, the allocation for the transport sector went up by 18 per cent and the same for education and power sectors by 13 per cent each.

What is more troubling is that most part of the allocation, nearly 80 per cent, made available to the agriculture sector is spent on meeting recurring expenditures. The remaining amount is too insufficient to enhance the capacity of the sector to deliver more. Resources in greater volume are necessary to help boost research activities and field-level extension work. However, with paltry amount of funds earmarked for research activities, agricultural scientists have achieved remarkable successes, particularly in the development of a number of crop varieties that are resistant to diseases and adverse soil and weather conditions.

Meanwhile, the share of agriculture in the country's gross domestic product (GDP) has been declining unabatedly. Other sectors of the economy like services and manufacturing have assumed a greater role. With arable land shrinking at a rate of 1.0 per cent annually to make available space for accommodation and other physical infrastructures, agriculture naturally lost its traditional edge over other major areas of the economy. But, the truth remains it is still the mainstay of the economy, in terms of employment and food production.

One does not have to go to the distant past to comprehend the importance of the sector. The loss of only 1.0 million tonnes of rice due to two recurrent floods last year can be cited as an example. The spike in rice price following the shortfall in rice production made the policymakers quite nervous. Despite the import of a substantial volume of rice in recent months, the rice prices are yet to come down to the desired level.

In fair weather conditions, the country is now able to meet the food needs of a population that has more than doubled since independence. It has the potential to produce more cereals, rice and wheat, as well as other crops including cash ones. What the agriculture sector in particular and the growers in general need are necessary support and incentives. The economists have found that the current growth rate of the agriculture sector is not consistent with that of the economy as a whole. They feel that the sector's growth rate must be raised to, at least, 4.5 per cent annually.

Country's farming community has proved time and again its resilience. Against all odds, growers have increased food production threefold. They have the potential to produce more food and other crops provided the ground is made favourable. What is necessary at the first instance is the allocation of more funds for the sector and their prudent use, particularly in research works. An imperfect marketing system has proved to be a great disincentive for the farming community. The policymakers have to find ways to correct the same so that farmers get their due.

  • Courtesy: The Financial Express/Editorial/ June 24, 2018

Bringing discipline in the banking sector

Shahiduzzaman Khan 

The classified loans of the state-owned commercial banks (SoCBs) continue to soar. It is so high that these are now failing to keep the required provisions against both classified and unclassified loans.

The overall shortfall in provisions against classified and unclassified loans in the country's banking system jumped by nearly 24 per cent or Tk 12.97 billion in the last calendar year, according to reports. Some banks ran short on the provisions following higher classified loans along with conditional rescheduling of outstanding credits.

According to the latest central bank data, the volume of default loans in the banking sector is now Tk 800 billion. Such default loans of Agrani, Rupali, Sonali, Janata, BASIC, Bangladesh Krishi, Rajshahi Krishi Unnayan and Bangladesh Development Bank stood at Tk 491.12 billion at the end of March this year, up 14.88 per cent from the previous quarter.

Of the eight SoCBs, Sonali had the highest amount of default loans at the end of March: Tk 143.05 billion. It was followed by Janata and Agrani: Tk 970.2 billion and Tk 567.6 nillion respectively. Rupali came in next with its default loans amounting to Tk 460.3 billion.

The state-run banks allegedly sanction a huge amount of the loans even after knowing that those loans would become classified. Many bank officials got involved in major irregularities while sanctioning those loans. This looks like embezzlement in broad daylight.

Incompetence of political appointees

Once the loans became default, the banks usually conceal it by means of rescheduling and restructuring. Analysts are of the opinion that the culture of loan indiscipline at the state owned banks is due to incompetence of some bank officials who were appointed and promoted to higher positions on political considerations.

Instead of taking measures to solve the default loan problems, the government keeps on allocating funds for the banks from the state coffer to make up for their capital shortfall, defying normal practice.

Some legal loopholes were identified as the major reasons why bank-loan defaulters go unscathed in most cases. Among 600 cases, the court issued order asking the banks concerned not to show the credit status of the borrowers though the central bank's Credit Information Bureau (CIB) had identified them as defaulters.

The defaulters take the advantage of stay orders from the court due to the weaknesses in the relevant laws. Courts even issue order asking the banks not to show the accused borrowers as 'defaulters'.

What is worrying is that some top defaulters could secure more loans, mostly from private banks. Even after so much discussion on default loans in various forums, not enough actions were taken to contain it. The companies are taken over or even liquidated in many countries of the world in case of such defaults.

Enforcement of laws required

Enactment of an effective law is a dire necessity so that the assets of the bank loan defaulters could be confiscated to make payments to the lenders. In Bangladesh, there is a culture of bailing out the borrowers in difficulty. But the default loans cannot be recovered as the defaulters resort to various tactics to dodge repayment to banks.

There are instances that only a particular company could manage loans from 13 banks at the same time. Allegations have it that some borrowers use the same collateral to obtain loans from several banks simultaneously. In such cases, a defaulting company's assets should be seized or it needs to be shut down. But unfortunately, this is not happening in Bangladesh.

Analysts say there are no loopholes in the existing laws that deal with the defaulters. The Artho Rin Adalot (Money loan court) and the Bank Company Act can effectively deal with default loans. In fact, the problem lies with their enforcement of the laws. An appeal for forming a dedicated bench in the court for quick disposal of such cases was never implemented.

Many banks maintain more provisions against their conditional rescheduling of loans. A large amount of non-performing loans (NPLs) were, however, rescheduled on some conditions set by the central bank to minimise risks. Such rescheduled credits were treated as unclassified ones, but the banks were asked to maintain provisions in accordance with previous status of the loans. A portion of rescheduled loans has already turned into classified ones again that also pushed up the volume of provisioning shortfall.

What the banks should do is to reduce their volume of default loans through boosting their recovery drives to improve their financial health. The banks normally keep requisite provisions against their unclassified and NPLs from their operating profits in a bid to mitigate financial risks.

NPL stagnated economic activities

However, the NPL issue is one of the major causes that has stagnated the economic activities by affecting investors' confidence over the banking arena. Recently, a series of scams has thrown the banking system in jeopardy.

In 2010, Bangladesh Shilpa Bank (BSB) and Bangladesh Shilpa Rin Sangstha (BSRS) were merged due to huge amount of NPL accrued to both of them. The operational activities of BSRS came to a halt, when its classified loans reached up to 85 to 90 per cent of its total portfolio.

Analysts say, the central bank should give a strict timeframe to the banks to recover the amount from the scammers. The defaulters should not be allowed to reschedule or restructure the loans if they fail to recover the amount within the period.

In order to get rid of the huge amount of NPL in the banking sector, some experts stressed the need for developing an inbuilt capacity in banks to expedite the loan recovery process. Some lawmakers proposed enactment of a new law by removing the weaknesses of the existing ones. They suggested formation of a committee of experts for drafting an appropriate law.

Don’t argue, do something

Many, however, differ with the lawmakers' proposal. They say the formation a dedicated bench in the High Court will better settle the loan-default cases. As another option, the banks may consider appointment of loan recovery agents.

What the government should do is to stop recapitalising the problem banks as it has not brought any improvement in their financial health. The banks should be forbidden from sanctioning fresh loans to habitual defaulters.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 23, 2018

মানবাধিকার কি কখনও মতাদর্শভিত্তিক হতে পারে?

 ড. মাহবুব উল্লাহ্

মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবে বহুল আলোচিত। মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়? এ প্রশ্নের জবাব হল- বাক-স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, আইনের চোখে সবাই সমান এবং নিষ্ঠুর ও অসম্মানজনক দণ্ড থেকে নাগরিকের স্বাধীনতা- এগুলোর সম্মিলিত চর্চাই হল মানবাধিকার।

একদিকে এসব মানবাধিকারের বিষয়গুলো যেমন রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের স্বরূপ নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং বাণিজ্যিক প্রথা ও নিয়ম-কানুনের গুরুত্বও মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কখনও কখনও দেখা যায়, নিরাপত্তা বিবেচনা মানবাধিকার বিবেচনাকে গৌণ করে ফেলছে।


যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে। ১৯৮০-এর দশক থেকে মানবাধিকারের বিষয়টি নাটকীয়ভাবে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।

বস্তুত সপ্তদশ শতাব্দী থেকেই মানবাধিকার নিয়ে চিন্তাভাবনার সূচনা। সেই সময় মনে করা হতো প্রতিটি রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব হল তার নাগরিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। English Bill of Rights-এর সূচনা হয় রাজা দ্বিতীয় জেমসের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাধ্যমে। তখন অভিযোগ করা হয়েছিল- রাজা দ্বিতীয় জেমস নাগরিকদের অধিকার হরণ করছেন। এর সমাধান হয় প্রিন্স অব অরেঞ্জ কর্তৃক এ দাবি মেনে নেয়ার মাধ্যমে।

১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণার দলিলে রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তখন বলা হয়েছিল একজন অত্যাচারী স্বাধীন জনগণের শাসক হওয়ার অযোগ্য। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের ডিক্লারেশন অব রাইটসে বলা হয়েছিল কারও অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না।

কিন্তু সেই অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল জাতি রাষ্ট্রের। জাতি রাষ্ট্রই হল সব সার্বভৌমত্বের উৎস। যে কালে এসব দলিল প্রণীত হয়েছিল, তখন ভাবা হয়নি যে বিশ্ব সম্প্রদায়ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের অধিকার ভোগ করতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে স্বীকৃত হতে শুরু করল যে, একটি দেশের ভেতরে সরকারের কার্যকলাপ কেমন চলছে এবং সেই সরকার তার নিজ নাগরিকদের প্রতি কেমন আচরণ করছে, এসব ব্যাপার ভিন্ন দেশগুলোও বিবেচনায় নিতে পারে। এ বিবেচনা জোরদার হতে পেরেছে নাজি জার্মানিতে বর্বর নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে।


১৯৪৫ সালের জাতিসংঘের চার্টারের ৫৫ ধারায় বলা হয়েছিল, The World Body shall promote universal respect for, and observance of human rights and fundamental freedom for all. একই চার্টারের ৫৬ ধারায় বলা হয়েছিল, জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র প্রতিজ্ঞা করছে যে, জাতিসংঘের সহযোগিতায় যৌথভাবে অথবা পৃথকভাবে ৫৫ ধারার বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের Universal Declaration of Human Rights-এ মানবাধিকার সংজ্ঞায়িত করা হয়। কোনো ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই এটি গৃহীত হয়েছিল। তবে সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্লকভুক্ত দেশগুলো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সৌদি আরব ভোটদানে বিরত থাকে।

পরবর্তী বছরগুলোয় বেশকিছু আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (১৯৫০); দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোভন্যান্ট অন হিউম্যান রাইটস (১৯৫০); দি ইন্টারন্যাশনাল কোভন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (১৯৬৬); দি আমেরিকান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (১৯৬৯); দ্য হেলসিংকি অ্যাকর্ডস (১৯৭৫) এবং দি আফ্রিকান চার্টার অন পিপলস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (১৯৮১)।

এরপর থেকে বা তার আগেও এসব চুক্তির সঙ্গে সরকারগুলো যেন সঙ্গতি রেখে দায়িত্ব পালন করে সেই লক্ষ্যে অনেক এনজিও গঠিত হয়। এর ফলে যেসব দেশে ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় সেসব দেশ আন্তর্জাতিক জনমত দ্বারা নিন্দিত হতে থাকে। এমনকি ১৯৮০-এর দশকের আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারগুলো কদাচিৎ এ ধরনের চাপের সম্মুখীন হতো।

বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে অধ্যাপক আহমদ শরীফ, বদরুদ্দীন উমর, এনায়েত উল্লাহ খান ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়েছিল। এরই পাশাপাশি সময়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য দুটি ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সাহসী রায় ঘোষণা করেছিলেন।

আমরা পৃথিবীর অনেক দেশেই নিষ্ঠুর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে পরিচিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিলির পিনোশে সরকার, ফিলিপাইনের মার্কোস সরকার, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গবাদী সরকারগুলো, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলফেনসন পূর্ববর্তী সরকারগুলো।

এ ছাড়াও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ নজির আছে। হাল আমলে জিম্বাবুয়ের মুগাবে সরকারও কম যায়নি। ইরানে শাহ-এর আমলে তার সাভাখ বাহিনীর অত্যাচারও বহুল আলোচিত। ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক এবং বোদ্ধা ব্যক্তিরা অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। যে আমেরিকা মানবাধিকার নিয়ে এত গর্ব করে সেই আমেরিকায়ও যুগের পর যুগ ধরে কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার ভয়াবহভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।


মানবাধিকারের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট কার্টারের সময় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় একটি অত্যাচারী সামরিক সরকার ১৯৭৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সত্তরের দশকে গুয়াতেমালায় সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের নামে চরম অত্যাচার ও ত্রাস দেখা যায় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে কার্টার প্রশাসন মানবাধিকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করে।

কিন্তু একই সময়ে মানবাধিকারের অবনতি সত্ত্বেও কার্টার প্রশাসন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দ্যাঁতাতের নীতি অব্যাহত রাখে। কার্টার প্রশাসন কেন এতটা মানবাধিকারের ধ্বজাধারী হয়ে উঠল সেটাও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের পর মার্কিন প্রশাসন উপলব্ধি করে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোনো দেশের ওপর দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব নয়।

এ জন্য কার্টারের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন মানবাধিকারের নামে নিজেদের মানবদরদি হিসেবে উপস্থাপন করে বিশ্ব রাজনীতির ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু বুশের শাসনামলে নয়/এগারোর টুইন টাওয়ার হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও স্ব-মূর্তিতে হাজির হয়। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও মিসরে যা ঘটেছে তা কোনোক্রমেই মানবাধিকারের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রদ্ধাবোধের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না।

মানবাধিকার একটি বিশ্বজনীন অঙ্গীকার হওয়া সত্ত্বেও আইডিওলজির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। তাই এখনও মনে হয় মানবাধিকার সার্বিকভাবে একটি বিশ্বজনীন মানবিক আদর্শরূপে দাঁড়াতে পারেনি। এ ছাড়া মানবাধিকারবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও রয়েছে বড় রকমের পার্থক্য।

বলা হয়ে থাকে, মানবাধিকারের প্রাচ্যদেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি পাশ্চাত্যের মতো নয়। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট সারবত্তা থাকলেও কিছু মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার ব্যাপারে মতাদর্শ নির্বিশেষে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্র নিপীড়নের হাতিয়ার।

যখন যে শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা থাকে সেই শ্রেণী বৈরী শ্রেণীর প্রতি নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাইবে এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। মানবাধিকারের প্রকৃত স্বীকৃতি তখনই অর্জিত হবে যখন পৃথিবী থেকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। এমন সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না। আমাদের পরবর্তী কয়েক পুরুষ পর এমন একটি অবস্থার উদ্ভব হতে পারে।

আবার এরকম অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে এ গ্রহ থেকে মানবকুলই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সুতরাং মতাদর্শ নির্বিশেষে সবাই যদি মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়, তাহলে একদিকে যেমন সমাজ ও শাসনকে মানবিক করে তুলতে হবে, অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার পক্ষেও কার্যকরভাবে দাঁড়াতে হবে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিগ্যান প্রশাসনের সময় কার্টার প্রশাসনের মানবাধিকার নীতিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই প্রশাসন হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত কমিয়ে ফেলে। ১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে মানবাধিকারের সমার্থক হিসেবে উপস্থাপন করেন। এ গণতন্ত্রের অর্থ হল বেশি বা কম স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

এ সময় যেসব দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছিল এবং এ ধরনের নির্বাচন হতে দেয়নি তারা আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে শুধু এ কারণে যে, সেসব দেশে গুম এবং চরম শারীরিক নির্যাতন করা হয় না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বার্থে মানবাধিকারের সংজ্ঞায় পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ থেকে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, কাউন্সিলভুক্ত দেশগুলো ভণ্ড এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরোধী। ঘোষণাটি এসেছে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালির কাছ থেকে। ঘোষণাটি দেয়ার সময় তার পাশে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পাম্পও।

ঘোষণার সময় দু’জনই জোর দিয়ে বলেছেন মানবাধিকার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় এগিয়ে থাকবে। ইসরাইল প্যালেস্টাইন, বিশেষ করে গাজা এলাকায়, যেভাবে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এমন একটি দেশের পক্ষে নগ্ন অবস্থান গ্রহণ কতটুকু মার্কিন নীতি-নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটায় তা একটি বিশাল প্রশ্ন। কার্যত দেখা যাচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ প্রাধান্য অর্জন করছে এবং মানবাধিকারের প্রশ্ন অত্যন্ত গৌণ হয়ে যাচ্ছে।

এ কারণেই মনে হয় বাংলাদেশের পরিচিত মানবাধিকারের প্রবক্তারা কিছুটা হলেও নিশ্চুপ হয়ে পড়েছেন। আবারও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, মানুষের চেয়ে আইডিওলজি ও সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থ শক্তিমান রাষ্ট্রগুলোর কাছে অনেক বড়। যদি আইডিওলজি ও মানবতার মধ্যে সম্মিলন ঘটানো যায়, তাহলেই হয়তো ভালো কিছু আশা করা যায়। জানি না এমন প্রত্যাশা কীভাবে কখন বাস্তবায়িত হবে।

  • ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
  • কার্টসি — যুগান্তর/রোববার, জুন ২৪, ২০১৮।