Search

Sunday, June 24, 2018

সেই মানুষ গড়ার কারিগররাই রাস্তায়


জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ব্যস্ত রাস্তা। সড়ক উন্নয়নের কাজ চলায় যানবাহনের গতিও ধীর। এর মধ্যেই ব্যস্ত নগরবাসীর ছুটে চলা। তবে নগরবাসীর ছুটে চলার মাঝে সবার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকছে প্রেস ক্লাবের ঠিক বিপরিত দিকে। পলিথিন বিছিয়ে বসে আছেন একদল মানুষ। এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে তারা এখানে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

মূল সড়কেই পলিথিন পিছিয়ে শুয়ে-বসে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগররা। পাশেই রাখা আছে তাদের ব্যাগ-ব্যাগেজ, গামছা-লুঙ্গি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে গত ১৫ দিন ধরে তারা খেয়ে না খেয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এখানেই অবস্থান করছেন।



শিক্ষকদের দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কুড়িগ্রামের হাজিপাড়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আলী আকবর জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবাই বলে আমরা (শিক্ষকরা) নাকি মানুষ গড়ার কারিগর। আর সেই আমরাই আজ দাবি আদায়ে রাস্তায় পড়ে আছি। আমাদের দিকে দেখার কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এখানে অবস্থান করছি। বছরের পর বছর ধরে আমরা বেতন পাই না, পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ অভাবের জীবনেও এখানে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা তো বেশি নেই, এর মধ্যেই হোটেলে খেতে হয়। এক বেলা খাই, এক বেলা খাই না -এভাবেই রাস্তার পাশে অসহায় মানুষের মতো রাত কাটাচ্ছি আমরা। ২০০০ সালে থেকে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি কিন্তু এখনও বেতন পাই না। জীবিকার তাগিদে শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। আমাদের ছাত্ররাও আজ ভালো ভালো জায়গায় কাজ করছে। আর আমরা মানুষ গড়ার কারিগর রাস্তায় বসে আছি এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছি।’

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এসেছেন দিনাজপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে এসেছি, আমাদের তো এমনিতেই অভাব, এর মধ্যে আবার ১৫ দিন ধরে এখানে অবস্থান। থাকা খাওয়ার ঠিক নেই। হোটেলে খাওয়ারও পর্যাপ্ত টাকা নেই। এর মধ্যে অলিগলির হোটেলে গিয়ে ২০-৩০ টাকার মধ্যে খাচ্ছি। এক বেলা খাই অন্য বেলা না খেয়ে থাকি, আর রাস্তায় পলিথিনের উপরেই ঘুমাই। আমাদের দাবি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা এভাবেই থাকবে। মানুষ গড়ার কারিগররা এভাবেই রাস্তায় বসে আছে, যেন আমাদের কেউ দেখার নেই।’


স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে আজ ২৪ জুন, রোববার ১৫তম দিনেও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। মুষলধারে বৃষ্টি মধ্যে প্রতীকী অনশন পালন করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য ছাড়া ঈদুল ফিতরের নামজ এখানেই আদায় করেছেন।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, সরকারি হিসেব মতে সারাদেশে ৫ হাজার ২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি) কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির দাবি গত ৫ জুন অনশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন উপস্থিত হন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমপিওভুক্তির বাস্তবায়নের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি।

শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘আজকে ২৪ জুন, রোববারের মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আর তা না হলে আগামীকাল (সোমবার) সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন।’

  • কার্টসিঃ জাগোনিউজ২৪.কম/ জুন ২৪, ২০১৮ 

১০ ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ২৩,৩৬৩ কোটি টাকা



একেএম জমির উদ্দিন


রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংক মূলধন সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এর অর্থ হলো, এই ব্যাংকগুলোকে আবারও মূলধন সরবরাহের জন্য জনগণের করের টাকার ওপর নির্ভর করতে হবে সরকারকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংকসহ মোট ১০টি ব্যাংকে মূলধনের ঘাটতি ২৩,৩৬৩ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এই হিসাব গত মার্চ মাস পর্যন্ত। এর আগের প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চেয়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ৩,৮০০ কোটি টাকা বেশি।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও ফার্মার্স ব্যাংক।

এদের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭,৯৩০ কোটি টাকা। উল্লিখিত সময়ের তিন মাস আগে এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭,৭৭৭ কোটি টাকা। আর তিন মাসে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৫,৩৯৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬,৭৫৫ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকলেও তিন মাস আগে ব্যাংকটিতে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৭ কোটি টাকা। আর অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সংকটে থাকা ফার্মার্স ব্যাংকও প্রথম প্রান্তিকে প্রয়োজনীয় মূলধন নিয়ে সংকটে ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ৩১ মার্চ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ২১,২৮২ কোটি টাকা। এক প্রান্তিক আগে তাদের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭,৪৪২ কোটি টাকা।
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ১৪,৫০৫ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। সুশাসনের অভাবে ধুকতে থাকা এই প্রতিষ্ঠানগুলো এর পরও সংকট থেকে উঠে আসতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের কাছে এমনই একটা বর্তা যায়। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত দ্রুত সংকট উত্তরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বৈদেশিক বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।


  • কার্টসি —    thedailystar.net/ রোববার, জুন ২৪, ২০১৮। 

ভোটাধিকার উদ্ধারে আরও তেজদীপ্ত বন্দি খালেদা জিয়া


ফারুক হোসাইন




স্যাঁতসেঁতে আলো-বাতাসহীন ঘরে বসবাসের কারণে কারবন্দি খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবু মনোবল হারাননি একটুও। রাজনৈতিক দৃঢ়তা, কঠোর মনোবল এখনও অটুট তার। কারাগারে বসেও সব সময় তিনি দেশ, দেশের জনগণ, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ভাবছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এখনও নীতির প্রশ্নে হিমালয়ের মতোই অটল। এখনও আগের মতোই তেজদীপ্ত। গণমানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে বজ্রকঠিন। তাকে পুরনো কারাগারের  নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে। তার উপর চলছে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। তবু তিনি আপসহীন। কারাগারে পরিবারের সদস্য, দলের শীর্ষ নেতা, আইনজীবী যারাই তার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন তাদেরকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং ১৬ কোটি মানুষের অধিকার নিয়েই বেশিরভাগ কথা বলছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত ২০ জুনও পৃথকভাবে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন তার পরিবারের ৫ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এড. আহমেদ আজম খান। তারা জানান, অসুস্থতার মধ্যেও এমন দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমী মানুষ খুব বিরল। প্রবল আত্মবিশ্বাসী তিনি। তাকে কারাগারে প্রেরণ,অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করার পরও দমাতে পারেনি এতুটুকু। বরং কারাগার থেকেই তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নেতৃত্ব দিতে চান। এজন্য গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে যে আন্দোলন চলছে তা বেগবান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে উনি বাইরে থাকুন আর ভেতরে থাকুন উনিই নেতৃত্ব দেবেন। খালেদা জিয়াকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার কারাগারে পাঠিয়েছে তার কোনকিছুতেই সফল হতে পারেনি বলে মনে করে তাঁর সংগঠন। দলে ভাঙন, খালেদা জিয়ার মনোবল ভেঙে দেয়া, নেতাকর্মীদের হতাশ করতে না পেরে এখন বিএনপি চেয়ারপারসনকে নানা প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার স্বজন ও দলটির একাধিক নেতা। তবে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোন কিছুতেই খালেদা জিয়া আপস করবেন না —   এ  বিশ্বাস অাছে দলটির নেতাকর্মীদের।

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে দেখা ক‌রা তাঁর পরিবারের এ সদস্য বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আগের মতোই তেজদীপ্ত, আপসহীন। তাকে দেখেছি বজ্রের মতো কঠিন। নির্জন কক্ষে তাঁর উপর চলছে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। তারপরও তিনি কোথাও মাথা নত করেননি। তিনি অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন। নির্যাতনে তাঁর ছোট ছেলে মৃত্যু বরণ করেছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় বড় ছেলে তারেক রহমান পঙ্গু হয়েছেন। নয় বছর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কখনও তিনি অন্যায়ের কাছে আপস করেননি। এবারও তিনি কোন হুমকি-ধমকের কাছে মাথা নত করবেন বলে মনে হয় না। এভাবে দীর্ঘকাল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কোন নেতানেত্রীর ত্যাগের নজির নেই। দেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রের প্রতি তার এই ত্যাগ ও ভালবাসা বিরল উদাহরণ। যখন দেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র সঙ্কটে পড়েছেন তখনই তিনি এগিয়ে এসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও সকল বাধা, অত্যাচার-নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন বেগবান করা নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়েছেন কারাগারে দেখা করে আসা বিএনপির এক নেতা।

খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর এড. আহমেদ আজম খান একটি জাতীয় দৈনিককে জানান, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে যে আন্দোলন চলছে তা বেগবান করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ওনি বাইরে থাকুন আর ভেতরে থাকুন উনি নেতৃত্ব দেবেন। একইসঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করে আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটির নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন।

নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে চলমান ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে’ বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে সেখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও সরকারের কী ভূমিকা থাকে, তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে বলেছেন।

নিবার্চন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেছেন ওনাকে জেলে রেখে যে পাতানো নির্বাচন সরকার করতে চান সেটা কোনো প্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারি যে ধরণের নির্বাচন হয়েছে ওই নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দেয়নি। ওনাকে জেলে রেখে একটা অর্থহীন নির্বাচন দেশের মানুষ দেখতে চান না।

  •  কার্টসি —  dailyinqilab.com/ রোববার, জুন ২৪, ২০১৮। 

জেলে অসুস্থ খালেদা জিয়া হাসপাতালে ইয়াবা সম্রাট

আলফাজ আনাম



বাংলাদেশের রাজনীতিতে মানবিকতা ও সহমর্মিতার অবস্থান আর সম্ভবত থাকছে না। ভিন্ন মতের রাজনীতি নির্মূলের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তার বিষবাষ্প প্রজন্মের পর প্রজন্মকে হয়তো বহন করতে হবে।

রাজনীতিবিদদের জন্য জেল নতুন কোনো বিষয় নয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক নেতা জেলে গেছেন। মাসের পর মাস জেলে থেকেছেন। এমনকি ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ওয়ান-ইলেভেনের অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও নেতারা জেলে গেছেন। কিন্তু জেলখানায় তারা চিকিৎসাসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কিংবা অসম্মানের সাথে রাখা হয়েছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এখন এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়ে উঠছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবার ঈদ করেছেন জেলখানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে যখন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন, তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের দিন কাটছে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রতি ঈদে তিনিও বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ আর কূটনীতিকদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এবার সেই সুযোগ তিনি পাননি। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ঈদের দিনটি ছিল আনন্দের নয়, বিষাদময়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কিন্তু অনুমতি পাননি। তবে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়েছে। 

বিএনপির কয়েকজন নেতাকে যদি দলের চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করার অনুমতি দেয়া হতো, তাহলে নিশ্চয়ই সরকারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। এর আগে বিএনপি নেতারা তার সাথে দেখা করেছেন। এবার দেখা করলে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে উঠত তা নয়, বরং এতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও কমত। প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্র সুরক্ষিত, কিন্তু তার প্রধান প্রতিপক্ষ দলের নেত্রী যখন কারাগারে এবং তার সাথে ঈদের দিনে দলের নেতাকর্মীদের দেখা করার সুযোগটুকু পর্যন্ত না দেয়ার অভিযোগ ওঠে; তখন গণতন্ত্রের সুরক্ষার দাবি বেশ বেসুরো শোনা যায় নাকি?

বেগম খালেদা জিয়া এবারই প্রথম জেলখানায় ঈদ করছেন, এমন নয়। এর আগেও তিনি জেলখানায় ঈদ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় তিনি দু’টি ঈদ জেলে কাটিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তখন জেলে ঈদ করেছেন। ৭২ বছর বয়সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নয়। এবার রমজানের সময় তিনি এক দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা দেখে এসে বলেছেন, তিনি মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী আর অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, তার সুগার ফল করেছিল বলে তিনি কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। সুগার ফল করুক বা মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হোক, এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, বরং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।

সরকার চায় তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। খালেদা জিয়া এ দুই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছেন না। বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার হাঁটুতে কিছু ধাতব বস্তু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। খুবই স্পর্শকাতর এসব বন্তু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতিসম্পন্ন পরীক্ষাগার দরকার, তা ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে। এ ছাড়া, এই হাসপাতালে তিনি আগেও চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানকার চিকিৎসকদের ওপর তার আস্থা আছে।

শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, রোগীর সাথে চিকিৎসকের আস্থার সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি তার আস্থা আছে, এমন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। সে সময় ডা: সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং ডা: প্রাণগোপাল দত্ত তার চিকিৎসার জন্য একাধিকবার দেখা করেছেন তার সাথে; ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বেগম জিয়া এ ধরনের চিকিৎসাসুবিধা চাইছেন। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দরকার। সুচিকিৎসার জন্য তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হতে চান। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তিনি কেন সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছেন না, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। অনেকটা এমন যে, সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রাজি না হওয়া রহস্যজনক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চিকিৎসার জন্য সিএমএইচ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কেন সিএমএইচে যেতে চান না, তা তার নিজস্ব ব্যাপার। চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়।

বেসরকারি হাসপাতালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রী চিকিৎসাসুবিধার অনুমতি না পেলেও দেশের অনেক বড় অপরাধী ও শীর্ষ মাদক কারবারিরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি খবর দেখে নিই। ‘কোমর ব্যথা’ নিয়ে ভর্তি হয়ে টানা ১৮ মাস হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আরাম-আয়েশে কাটাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিন হুদা। অথচ কারা কর্তৃপক্ষের কাগজপত্রে এ রোগীর ‘বুকে ব্যথা’র কথা বলা হয়েছে। চিকিৎসাব্যয়ের বাইরে হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনের জন্য আমিন হুদা ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিল দিয়েছেন। তিনি মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িচালককে নিয়ে ভ্রমণে বের হন। বারডেম হাসপাতালে কারাবন্দীদের রাখার নিয়ম নেই; কিন্তু মাসের পর মাস সেখানে থাকছেন সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি। শাস্তি হওয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েকবার ‘হাজিরা’ দিতে দু-এক ঘণ্টার জন্য কারাগারে গেছেন তিনি। এবার টানা ১৮ মাস ধরে হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালের ৬, ৮, ৯ ও ১৫ তলার বিভিন্ন কক্ষে ঘুরেফিরে থাকছেন তিনি। ( প্রথম আলো, ৭ মে ২০১৭)।

সারা দেশে এখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারীও আছে। এর মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে টেকনাফে একরামুল হক নামে ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা নিহত হওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। কিন্তু ইয়াবার গডফাদার হাসপাতালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকছেন। শুধু মাদক কারবারি নয়, ব্যাংক থেকে টাকা লুটের সাথে জড়িত আসামিরাও বারডেমের মতো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে মাসের পর মাস অবস্থান করছেন।

এর চেয়ে আর অমানবিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী হতে পারে, একজন মাদক কারবারি যে সুবিধা পায়, একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেত্রীকে সেই সুবিধা দিতেও সরকার রাজি হচ্ছে না। মনে হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকার এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে আছে কিংবা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না। বেগম জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক জেদাজেদির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেহেতু বিএনপি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইছে, সেখানে ভর্তি করানো হলে সরকারের পরাজয় হবে- এমন ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে ক্ষমতাসীন মহলে। কিন্তু একজন অসুস্থ ও বয়স্ক রাজনৈতিক নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে টানাটানি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যে জনমনে সহানুভূতি সৃষ্টি করছে, তা অনুধাবন করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া, খালেদা জিয়া যে অসুস্থ তা সব চিকিৎসক বলেছেন। কিন্তু চিকিৎসার চেয়ে রাজনীতি যেন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের কৌশল হলো, বিএনপির চেয়ে খালেদা জিয়ার ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করা। বিএনপি নেতারা আশা করেছিলেন, বেগম জিয়া গ্রেফতার হলেও দ্রুত জামিন পাবেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছিলেন, তাকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, এমন মামলায় অন্য আসামিরা দ্রুত জামিন পেয়েছেন। এমনকি, খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু ১৯ ফেব্রুয়ারি নয়া দিগন্তের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আপিল করলে হয়তো তিনি জামিন পাবেন। একজন নারী ও বয়স্ক মানুষ, একই সাথে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জামিন পেতে পারেন বলে আমার ধারণা।’ না, আবদুল মতিন খসরুর এ ধারণা বাস্তবে রূপ পায়নি। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে একটি অন্য মামলায় তিনি জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো একের পর এক সচল হয়েছে। তার জামিন কার্যকর হওয়ার আগেই উচ্চ আদালতে হয়তো তার মামলার রায় চলে আসবে।

বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে বা তাকে চিকিৎসাসুবিধা থেকে বঞ্চিত করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এক ধরনের রাজনৈতিক বিজয়ের আনন্দ পাচ্ছেন। ‘স্যাডিস্টিক পলিটিক্যাল প্যাথলজি’ বলে একটা কথা আছে। এর অর্থ, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে হয়তো কেউ কেউ বিকৃত জয়ের আনন্দ পাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের এমন অন্যায় অবস্থান সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম একটি দৈনিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন।’ ক্ষমতাসীন দলের মনোভাব যদি সত্যিই এ রকম হয়, তাহলে তার চিকিৎসা নিয়ে কেন এমন টানাহেঁচড়া চলছে? নাকি আবদুল মতিন খসরুর মতো মোহাম্মদ নাসিমের এ বক্তব্য শুধুই আশাবাদ, বাস্তবে যার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ইতোমধ্যে অনেক চাপ ও দায় নিয়ে ফেলেছে। এখন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক কৌশল বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। কারণ, সময়ের নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে নয়।

  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুন ১৯,২০১৮

জেলগেটে গ্রেফতার — স্বেচ্ছাচারের বহিঃপ্রকাশ

তৈমূর আলম খন্দকার

যখন পৃথিবীতে সভ্যতা প্রকাশ পায়নি, প্রকাশিত হয়নি মানুষের জন্মগত অধিকার এবং প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, তখন শাসকের বিরাগভাজন হওয়ার অর্থই ছিল নির্জন কারাবাস বা দীপান্তর, ফাঁসি বা শিরচ্ছেদ। ‘আইন’ যা-ই হোক না কেন, শাসক বা শাসকযন্ত্রের চক্ষুশূল হলেই ‘আইন’ প্রয়োগ হতো উল্টো পথে। তবে এখনো তা হচ্ছে। ঐতিহাসিকদের মতে, সে যুগ ছিল বর্বরতার যুগ। অর্থাৎ, রাজা যা মনে করতেন সেটাই আদেশ এবং আইন। 

এমনও দেখা গেছে, কোনো সাধারণ মানুষ বা উজির-নাজির তিনিই হোন, যে অপরাধের জন্য তাদের মৃত্যুদণ্ড হতো, রাজপরিবারের সদস্যের একই অপরাধের জন্য কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। এভাবেই একটি জনগোষ্ঠী ইতিহাসের পাতায় BLUE BLOOD নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এখন রাজপরিবার তারাই যারা ক্ষমতাসীন ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট। বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর গণমানুষ দাসপ্রথা থেকে আনুষ্ঠানিক মুক্তি লাভ করলেও দাসত্বের মুক্তি পায়নি।

দাসপ্রথা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে নানা বিদ্রোহ ও রক্ষক্ষয়ী ইতিহাস রয়েছে। আন্দোলনের ফলে ১৮৪৩ সালে Act Five আইনে দাস-দাসী আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করা হলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়নি বরং নিছক পরিবর্তন করেছে। মানুষ যখন মানুষকে ক্রয় করে তখন ক্রেতা হয় মালিক, যে মানুষটি যে বিক্রয় করা হয় সে হয় ক্রীতদাস। Slavery মধ্যযুগীয় বর্বরতার সময় দাসপ্রথা হিসেবে অনুমোদিত আইনানুগ সামাজিক প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

কিন্তু বর্তমানে সভ্যসমাজেও মানুষ ক্রয়-বিক্রয় হয়, কোথাও সে দেহ বিক্রি করে, কোথাও বিক্রি করে বুদ্ধি, কোথাও শ্রম বিক্রি করে এবং কোথাও বিবেক বিক্রি করে দেয়। যে নারী তার দেহ বিক্রি করে, সে অর্থের বিনিময়ে নিজের দেহকে কারো পুরুষের কাছে উজাড় করে দেয়। আর যে বিবেক বিক্রি করে, তার দেহে কোনো চিহ্ন থাকে না, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ, দেশ ও জাতি। এখন চলছে প্রমোশন, সুবিধামতো পোস্টিং কিংবা সুখ শান্তি ও অর্থের বিনিময়ে বিবেক বিক্রি করার যুগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিবেক বিক্রি হওয়ার প্রবণতায় ভিকটিম হচ্ছে দেশের নিরীহ শান্তিপ্রিয় অসহায় মানুষ।

কিন্তু যারা বিবেক বিক্রি করে তাদের সম্পর্কে সভ্যসমাজ কী ধারণা পোষণ করতে পারে? বুদ্ধি বিক্রি আর বিবেক বিক্রি করা এক নয়। যে ব্যক্তি সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে না পারে সে বিবেক বিক্রেতা। এদের কাছে জাতি আজ অসহায়। বিবেকবিক্রেতাদের প্রধান অস্ত্র লোভ বা প্রলোভনের কারণে বিবেককে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করা। মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করাই ওদের প্রধান কাজ। নানাবিধ অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে যাওয়া অথবা ঘুষ খাওয়ার অবৈধ সুবিধা পাওয়ার জন্য সুবিধামতো পোস্টিং ও প্রমোশনের লোভে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এখন মিথ্যাকে সত্যে এবং সত্যকে মিথ্যায় রূপান্তরিত করছে। তা উত্তরাধিকার সূত্রে ব্রিটিশ থেকে এ দেশের আমলারা পেয়েছেন। বড় বড় আমলারা জেনেশুনে মিথ্যাকে সত্যে রূপান্তর করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন, এ জন্য যে, তাতে তাদের ওপরওয়ালারা খুশি থাকবেন। এতে কিন্তু নিগৃহীত হচ্ছে জনগণ। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণের পরও স্বার্থের জন্য অহরহ বিবেক বিক্রি করা হচ্ছে, এ অবস্থা এখন দৃশ্যমান।

পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা পুলিশকে পিটিয়েছে। তখন পুলিশ নির্বাক, কারণ যে পিটিয়েছে সে সরকারি দলের লোক, অর্থাৎ তার অভিভাবক সরকারি দলের কর্মকর্তা। অন্য দিকে, কোনো ঘটনাই ঘটেনি এমন কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অহরহ গ্রেফতার করা হচ্ছে। রিমান্ড দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়, তারপরও নিজ বিবেককে কবর দিয়ে দাঁড়িপাল্লা (ন্যায়বিচার) খচিত চেয়ারে বসে ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর করে পুলিশকে রিমান্ড বাণিজ্য (পত্রিকার ভাষায়) করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এমনকি কোর্ট এখন রাজনৈতিক মামলায় তেমন আচরণ করে। হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশে জেল থেকে বের হওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন তখন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের আদেশে এজাহারে নাম না থাকা মামলায় জেলগেট থেকে বারবার বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, এ যেন এক মগের মুল্লুক। এ নতুন ইভেন্ট যোগ হয়েছে, রিমান্ডে থাকার সময়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের নিকট থেকে চাহিদামতো টাকা আদায়। রিমান্ড ও ক্রসফায়ার বাণিজ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য (যারা টার্গেট) অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে এসেছেন, অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।

হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর জেলগেট থেকে গ্রেফতারের প্রবণতা আগেও ছিল, যা কদাচিৎ দেখা যেত। ১/১১-এর অবৈধ সরকারের সময় এর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে, যা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আইন অপপ্রয়োগ করে কৌশলে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জেলগেটে গ্রেফতার করা স্বেচ্ছাচারিতার একটি বহিঃপ্রকাশ। 

রকার নির্দেশিত এ বর্বরতাকে রোধ করার জন্য, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেলগেট থেকে বারবার গ্রেফতার করায় জেলগেটে গ্রেফতারে নিষেধ করে নিন্মেবর্ণিত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এতে অ্যাপিলেট ডিভিশন বলেন যে, ‘We direct that the respondent Mahmudur Rahman should not be shown arrested in connection with any other case unless there is true complaisance of section 167 of the Code of Criminal Procedure. Even he should not be arrested at the Jail gate after he is released from the custody which is not permissible in law. [সূত্র: ৬৮ ডি.এল.আর (এ.ডি) (২০১৬)(৩৭৩)] 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এ বলা হয়েছে যে, ‘আপিল বিভাগকর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সব আদালতের জন্য অবশ্যপালনীয় হবে।’ অর্থাৎ, সংবিধান মোতাবেক সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আইন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দেশের সব আদালতের ওপর প্রযোজ্য। অ্যাপিলেট ডিভিশনের জেলগেটে গ্রেফতারসংক্রান্ত দিকনির্দেশনাকে অমান্য করে, জামিন হওয়ার পর পুলিশ জেলগেটে গ্রেফতার করছে ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতায়। পুলিশ তো বটেই, বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেকে সুপ্রিম কোর্টের দিকনির্দেশনা মানছেন না। কারণ, তাদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ এখন সরকার প্রধানের হাতে, সুপ্রিম কোর্টের হাতে নেই। 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখনো কার্যত অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ আইনে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণে থাকবে বিচার বিভাগ। বাস্তবতা এই যে, সংবিধানের ৪৮(গ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সব প্রশাসনিক কার্যক্রমই প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর লিখিত সুপারিশ ছাড়া রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনিক কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। 

‘বিবেকই’ মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মাঝে তফাতের প্রধান মাপকাঠি। পতিতা যখন দেহ বিক্রি করে, তখন কলঙ্কিত হয় সংশ্লিষ্ট নারী। অন্য দিকে, দায়িত্বশীলরা যখন ‘বিবেক’ বিক্রি করে তখন বিপর্যস্ত হয় গোটা জাতি, যার প্রধান শিকার সমাজের শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষ। তোষামোদিতে কে কার চেয়ে এগিয়ে, তা নির্ধারণের জন্য ‘বিবেক’ বিক্রির প্রতিযোগিতা চলছে। তা এখন মাহামারী থেকে স্বেচ্ছাচারে পরিণত হয়েছে।

  • কার্টেসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুন ২২,২০১৮

হায় হালদা! হায় সম্পদ!


আমাদের গর্ব করার মতো দুর্লভ প্রাকৃতিক সম্পদের একটি হালদা নদীকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার শেষমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। জোয়ার-ভাটার এই নদীতে মিষ্টি পানির মাছের ডিম ছাড়ার ঘটনা পৃথিবীর এক বিস্ময়। এই দুর্লভ সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে বসেছি, সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসের পেট চিরে একবারে সব কটি ডিম বের করে নেওয়ার খাসলত আমাদের সব রাজনীতি-অর্থনীতি, এমনকি সামাজিক আচরণের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। 

আমাদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর হঠকারিতায় হালদা এখন ক্লান্ত অবসন্ন। বাঁক সোজা করা, হালদার বুকে রাবার ড্যাম বসানো, নদীর পারে বাছবিচার না করে কলকারখানা বসানোর অনুমতি, হাঁস-মুরগির খামার গড়তে দেওয়া, পৌরসভার বর্জ্য ফেলা, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য বহন ইত্যাদি নানা মন খারাপ করা বিষয় নিয়ে হালদা সব সময় আলোচনায়, আন্দোলনে, সংসদে, চলচ্চিত্রে ছিল। অনেক দিন পর এ বছর একটা ভালো খবরে বেশ আহ্লাদিত হয়েছিলাম: হালদা নদীতে গত মে মাসে কার্প–জাতীয় মাছ গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছিল। নদী সুরক্ষায় চলতি বছরের শুরুতেই সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে নদীর দুই পারের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের খবর বড় বড় হরফে ছাপা হয়েছিল। 

তখন কিন্তু চট্টগ্রামে হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, শিল্প, আবাসিক এলাকা ও পাহাড় থেকে নেমে আসা বর্জ্য ও রাসায়নিকে হালদা আশঙ্কাজনকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। তাঁর আশঙ্কা ছিল, মা মাছদের এই উজাড় করে দেওয়া উপহার কি আমরা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব? মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হলো।

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীতে বন্যা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কয়েক দিন ধরে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণীরা মরে ভেসে উঠছে। পাহাড়ি ঢল, ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা ঝটিকা বন্যা হালদায় নতুন কিছু নয়। এতে তো আগে কখনো মাছ মরেনি। এবার কেন মরছে? 

গত বছর হাওরের হাঁস-মাছের মড়কের রহস্য আজও কাটেনি। হালদায় মড়কের কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য মঞ্জুরুল কিবরিয়া সরেজমিনে পরীক্ষায় গিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ টিম নদীর ১০টি পয়েন্টে পানির নমুনা পরীক্ষা করে পানিদূষণের এক ভয়াবহ চিত্র পেয়েছেন। 

গত প্রায় দুই সপ্তাহের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে হালদা নদীতে উজান এলাকার কলকারখানা, পোলট্রি খামারসহ বিভিন্ন শিল্পের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর বর্জ্য প্রায় ২০টি খালের পথ বেয়ে হালদাতে পড়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হালদার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া একটি খালও আছে। হালদার কোথাও কোথাও পানির রং এমন বিবর্ণ হয়ে গেছে যে সেসব জায়গায় হালদাকে আর চেনা যায় না।

মঞ্জুরুল কিবরিয়ার সঙ্গে আজ সকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে হালদা নদীর পানিতে প্রতি এক লিটারে অক্সিজেনের পরিমাণ দুই মিলিগ্রামেরও নিচে নেমে গেছে। অথচ নদীর পানিতে মাছ বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে কমপক্ষে পাঁচ মিলিগ্রাম অক্সিজেন প্রয়োজন। 

তিনি হালদা নদীতে দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার ঘটনাকে এই নদীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে করেন। তিনি জানান, ভাটির চেয়ে উজানে দূষণের মাত্রা বেশি। তাঁর মতে, এবারের বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরের অক্সিজেন থেকে কুলগাঁও এলাকার আবাসিক বর্জ্য, ভাটি এলাকার পোলট্রি খামার, ট্যানারিসহ বিভিন্ন শিল্পের বর্জ্য ব্যাপকভাবে হালদায় মিশেছে।

তা ছাড়া হাটহাজারী সড়কের পাশেই গড়ে ওঠা পেপার বোর্ড তৈরির কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যও হালদায় মিশেছে। এসব বর্জ্য হাটহাজারীর নিম্নাঞ্চলে গিয়ে জমা হয়ে হালদায় প্রাণঘাতী দূষণ ঘটিয়েছে। ফলে হালদার সঙ্গে যুক্ত খন্দকিয়া, কাটাকালি ও মাদারি খাল তিনটিতে বড় বড় মা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ মরে ভেসে উঠছে। হালদা নদীর মোহনা থেকে উজানে নদীর এক পাশে হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, অন্য পাশে রাউজান পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় মরা মাছ ভেসে উঠছে। 

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, গত মঙ্গল ও বুধবার হালদায় ছোট ছোট মাছ মারা পড়লেও গতকাল বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে প্রচুর বড় বড় মৃত মাছ। এর মধ্যে রুই–জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছও রয়েছে। রুই–জাতীয় মাছের মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃগেল মাছ পাওয়া গেছে।

বছর কয়েক আগে হাটহাজারীর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের (পিকিং পাওয়ার) দূষিত ফার্নেস অয়েল ও বজ্রবৃষ্টির পানির ঢলের সঙ্গে মিশিয়ে ছেড়ে দিলে হালদার আশপাশের ছড়া ও শাখা-প্রশাখা খাল দিয়ে হালদা নদীতে ঢুকে দূষিত করে হালদা নদীর মিষ্টি পানি; সে সময় হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম ছিল। এই দূষিত বর্জ্যের কারণে বহু ডিম সংগ্রহকারীর ডিম নষ্ট হয়। সে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পরিবেশ অধিদপ্তর পিকিং পাওয়ার কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা শোনা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সেতু ভেঙে খালে পড়া ট্রেনের বগি থেকে ফার্নেস অয়েল মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়ে।

আর দেরি না করে হালদাকে পরিবেশগতভাবে বিপদাপন্ন এলাকা বা ইকোলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়া (ইসিএ) ঘোষণা করে এটা রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় হালদার অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপগুলোকেও আমাদের এগিয়ে নেওয়া উচিত।

গওহার নঈম ওয়ারা: ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ২৪,২০১৮ 

বান্দরবান ও ফেনীতে বিএনপির ৩ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বান্দরবান জেলা

বান্দরবানে জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য মাম্যাচিং ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজাসহ বিএনপির ৮০ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে পুলিশ। শুক্রবার বান্দরবান সদর থানায় পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বান্দরবান জেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ এ মামলা করে।

মামলায় জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য মাম্যাচিং ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা, জেলা যুবদল নেতা সেলিম রেজা, উক্যচিং মারমা, মো. শাহাদাত, মো. ইউসুফ, মো. কাশেমসহ অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশের মতো বান্দরবানেও নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ব্যাপক লাঠিচার্জ করে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন এবং পাঁচ জনকে পুলিশ আটক করে।

এ ঘটনায় উল্টো পুলিশই মামলা করে দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। পুলিশের বাধা ও মামলা হামলার ভয়ে বিরোধী দল কোনো কর্মসূচিই সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং একটি অগণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না।

ফেনী জেলা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী শহরের রামপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করায় বিএনপি ও যুবদলের ২৪০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি-যুবদলের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা শহরের রামপুর এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ২৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে।

  • কার্টেসিঃ মানবজমিন/জুন ২৪,২০১৮ 

শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ

জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যয় প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের চেয়েও কম।


রাজীব আহমেদ



শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে এ দুটি খাতে বাংলাদেশের ব্যয় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনকি প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে সম্প্রতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ টাকার অঙ্কে বেড়েছে বটে। তবে মোট বাজেটে এ দুটি খাতের হিস্যা কমেছে। ফলে জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আগের মতোই নিম্নস্তরে রয়ে গেছে।

এদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অনুপাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের একটি চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসকাপ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক জরিপে। ২০১৮ সালের প্রতিবেদনটি গত ৮ মে প্রকাশ করা হয়। এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এসকাপের প্রতিবেদনটিতে ৩৬টি দেশের শিক্ষা খাতের ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ব্যয় করে, যা ওই দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের চেয়ে কম ব্যয় করে শুধু কম্বোডিয়া। পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ভারতে তা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এই খাতে নিউজিল্যান্ড ব্যয় করে জিডিপির প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ ব্যয় করত। সেটা সর্বশেষ বাজেটে কমে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে এসেছে। এর মানে হলো, দেশের জিডিপির আকার বেড়েছে। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। ফলে জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্যে ব্যয় কমেছে। প্রতিবেদনে ৪৮টি দেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মতো আর কোনো দেশই এত কম হারে ব্যয় করে না। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৯ শতাংশের বেশি ব্যয় করে।

সার্বিকভাবে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন যদি টেকসই করতে হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের অবস্থানে থাকার সময় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে। তার সুফল এখন তারা পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মুখে বলছি, বাস্তবে করছি না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।’

নতুন বাজেটে শিক্ষা খাত

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয়ের একটি বিশ্লেষণ করেছে। তাদের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। এটি চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের বরাদ্দের চেয়ে কম। সংশোধিত বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির অনুপাতে ২ দশমিক ০৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের সমান। তবে গত চার বাজেটের মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন। সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা খাতে জিডিপির অনুপাতে বরাদ্দ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, নতুন বাজেটে শিক্ষা খাতে ব্যয় ৫৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেছে সিপিডি।

দেশের শিশুরা এখন বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন আছে। এ দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি হচ্ছে না। ফলে বিদেশিরা বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে কাজ করছেন। এ ছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে আর দেশে ফিরছেন না।

বাজেট ঘোষণার পরদিন সিপিডির বিশ্লেষণে সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে বলেন, শিক্ষায় এত কম বরাদ্দ দিয়ে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া, দক্ষ শ্রমশক্তি নিশ্চিত করার আশা বাতুলতা। 

স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ

নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের হিস্যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কমেছে। সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে এই খাতের জন্য ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন বাজেটে মোট ব্যয়ের ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে স্বাস্থ্য খাত, যা সংশোধিত বাজেটে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি অর্থবছরে এই হার ১ দশমিক ০৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা ছিল। নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাত পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং কৃষির চেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য আছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পেরেছে। তবে সেটা সম্ভব হয়েছে সস্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। স্বাস্থ্য খাতে নতুন যেসব সমস্যা আসছে, তাতে বরাদ্দ ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। এ দেশের মানুষের বড় একটা অংশের চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটারও স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকারের সঙ্গে যোগ আছে।
  • কার্টেসিঃ প্রথম আলো/ জুন ২৪,২০১৮ 

10 banks face capital shortfall of Tk 23,363cr

AKM Zamir Uddin


Seven state-run banks have failed to meet the minimum capital requirement, meaning they need further taxpayer-funded recapitalisation.

The latest data from the Bangladesh Bank showed a total of 10 banks, including the seven state lenders, faced a capital shortfall of Tk 23,363 crore as of March, up by more than Tk 3,800 crore compared to a quarter ago.

The lenders are Bangladesh Krishi Bank, Sonali, BASIC, Rupali, Janata, Agrani, Rajshahi Krishi Unnayan Bank, Bangladesh Commerce Bank, ICB Islamic Bank and Farmers Bank.               

Among the banks, BKB has had the highest amount of capital shortfall at Tk 7,930 crore, up from Tk 7,777 crore three months ago. Sonali's capital shortfall rose to Tk 6,755 crore from Tk 5,397 crore.

Agrani Bank has plunged into the capital shortfall in the first quarter although it had surplus of Tk 157 crore only three months ago. Trouble-hit Farmers Bank failed to maintain the required capital in the first quarter as the private lender has recently faced huge corruption and irregularities.

The BB data showed that the capital shortfall in the state-owned banks stood at Tk 21,282 crore as of March 31, up from Tk 17,442 crore a quarter ago.

The government has recapitalised the state lenders by injecting Tk 14,505 crore since 2009, but they are yet to strengthen their capital base in absence of corporate governance.

A BB official told The Daily Star yesterday that the central bank should take immediate measures to address the problem as such a situation sends out a negative message to the international community and local businesspeople that the banking sector was weakening. He said the widening default loan was one of the major reasons for the shrinking capacity of the banks to maintain the required capital.

Foreign businesspeople usually look at the capital base and non-performing loans of the scheduled banks before making investment decisions, the official said.This type of capital shortfall will put foreign investors at bay, he said, urging the central bank to strengthen monitoring to rein in financial scams. 

  • Courtesy: The Daily Star /June 24, 2018

Low deposit rate will hurt small savers

The decision of banks to decrease interest rates to single digits may boost investment but the middle-income groups or small savers may be affected the most. With stock market in disarray, no social security system and rising healthcare cost, fixed deposits in banks have been the last resort for many of those depositors. Now, the lowered deposit rate, which is almost the same as the inflation rate, will discourage them to keep their money in banks and, in the process, dry up banks that are in dire need of money.

The only alternative to the fixed deposit has been the government's saving instrument, Sanchaypatra, but it is largely exploited by the rich rather than the intended beneficiaries, the middle-income savers. Moreover, 10 percent tax has been levied on interest earned from fixed deposit and bonds. The government has also decided to reduce its borrowing through saving certificates. Therefore, many may soon be left with almost no alternative.

In terms of interest rate, there should be a balance so that investment is encouraged and the small savers are not hurt. The proposed deposit rate (six percent) and lending rate (nine percent) will leave banks with a spread of three percent. Such a spread is hardly profitable for banks due to the gigantic size of their non-performing loans. Moreover, a decreased lending rate will do little to incentivise investment if the malgovernance in the banking sector remains unresolved.

Therefore, unless the government addresses the issue of non-performing loans and poor lending practice in banks, investment will not be encouraged, a lower lending rate for desired investment boost will not be sustainable and the small savers will suffer badly. Cleaning up these anomalies in banks is where the key to solution lies.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial/ June 24, 2018