Search

Wednesday, June 27, 2018

অর্থনীতি নিয়ে ‘নয়ছয়’ বন্ধ হোক

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

তিন শ বছরের কিছু আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ভবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার নির্ধারণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ (টার্গেটিং), সরকারের ব্যাংক এবং ব্যাংকসমূহের ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে অর্থনীতির ওঠানামা সামাল দিয়ে আসছে। সম্প্রতি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সুদের হার ‘নয় ও ছয়’ হবে ঘোষণা দেওয়ায় এবং সাম্প্রতিক কালে এই একই সংগঠনের আরও কিছু কার্যকলাপের ফলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ও অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ‘নয়ছয়’ একটি বাংলা বাগ্ধারা, যার অর্থ হলো অপচয়। কাকতালীয় হলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিএবির মুখ থেকে আসা এই ‘নয় ও ছয়’-এর ঘোষণাটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

আগে বাজার অর্থনীতিতে সরকারই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করত। নিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা, একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, জনস্বার্থ, বিশেষত ভোক্তা, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। পরে দেখা গেল যে সরকার এ কাজ সুচারুভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব, অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া, স্বার্থের সংঘাত এর অন্যতম কারণ। ফলে বিশ্বব্যাপী স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উদ্ভব ঘটে। যেমন ব্যাংকিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রভৃতি। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না বা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯৮২) অর্থনীতিবিদ জর্জ স্টিগলার প্রথম ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলে’র (রেগুলেটরি ক্যাপচার) ধারণাটি প্রবর্তন করেন। সাধারণভাবে এর অর্থ হলো নিয়ন্ত্রিত সংস্থাসমূহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল। আগেই বলেছি, জনস্বার্থ সুরক্ষার জন্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ গঠন করা হয়ে থাকে। কিন্তু জনস্বার্থের পরিবর্তে যখন এসব সংস্থা যাদের নিয়ন্ত্রণ করার করার কথা ছিল, তাদের স্বার্থে কাজ করে, বলা হয়ে থাকে, তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। যেমন ধরুন, আমাদের দেশে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রয়েছে। এটা গঠন করা হয়েছে মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু তা না করে বিএসইসি যদি কেবল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কতিপয় কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ করে, তাহলে বলা হবে যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে ব্যাংকমালিকেরা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, এমনকি সংসদকেও প্রভাবিত করে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে তাঁরা বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সমর্থ হন। এরপর তাঁরা ক্যাশ রিজার্ভ রেসিও (সিআরআর) ১ এবং রেপো রেট শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তাঁরা ব্যাংক কোম্পানির জন্য করপোরেট আয়করের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে নন-পাবলিকলি ও পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্য যথাক্রমে ৪০ ও ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করাতে সমর্থ হন। সর্বশেষ তাঁরা ঋণের ওপর ৯ শতাংশ ও জমার ওপর ৬ শতাংশ সুদ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিএবির ঘোষণা অনুসরণ করেছে।

অসুবিধা কোথায়? 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক খাতের করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট। ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ফলে করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সিআরওর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ, রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদান ও খেলাপি ঋণ উৎসাহিত হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক কোম্পানির জন্য আয়করের হার ৪৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ব্যাংকগুলোর মার্জারের এবং এই খাতে অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কারের সম্ভাবনা ব্যাহত হবে। আর সুদের হার কী হবে, তা বিএবি নয়, বাজারই নির্ধারণ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারে।

কেন এমন হলো? 

দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণ, পরিচালনা ও ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উল্টো বিএবি তার সাম্প্রতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে লেখার শুরুতে উল্লেখিত ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল’ সম্পন্ন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তিনটি কারণে। আমাদের দেশে বিভিন্ন নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হলেও এদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রায়ই এসব সংস্থায় অমেরুদণ্ডী ও জি হুজুর-টাইপের প্রধান নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে, যাঁরা নিরপেক্ষভাবে সংস্থা পরিচালনার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহলের হুকুম তামিলে ব্যস্ত থাকেন। সর্বোপরি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও সরকারপ্রধানের বিশ্বাসভাজনতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক কালে এ ক্ষেত্রে আমরা ঘাটতি লক্ষ করছি। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল, তারাই উল্টো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এখন তারা মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি সবকিছুই নির্ধারণ করছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দখল ও তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিণতি আমরা জানি। ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার মার্কেট বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ব্যর্থতা, যার ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার কারণেই রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক দখল, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে; ২০১১ সালে তাদের সৃষ্ট অতিরিক্ত তারল্যের কারণে শেয়ার মার্কেটে ধস এবং নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্যের কারণে খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতিতে নয়ছয় কেবল ব্যাংকিং খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ব্যবস্থাপনাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান এবং এগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের অন্য সব খাতের অর্জনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বিএবির ওপরে উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো জাতির জন্য অশনিসংকেত বয়ে এনেছে। সুদের হার কম হোক, সিঙ্গেল ডিজিট হোক, বিনিয়োগ বাড়ুক, এটা আমরা সবাই চাই। তবে তা নির্ধারণের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। এটা বিএবির কাজ নয়। তাই ব্যাংকমালিকদের তাঁদের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজকর্মের রাশ টেনে ধরতে হবে। ব্যাংকমালিকেরা নিশ্চয়ই ব্যাংকিং খাতসংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিতে পারেন, সরকারের কাছে তাঁদের দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু এ খাতের বিষয়ে তাঁরা একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং সরকারপ্রধানকে তা করতে হবে এখনই।
  • মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান: সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গাজীপুরে ভোটারের হাত থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল


গাজীপুরের পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে সবার সামনেই জালভোট দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ভোটারের কাছে থাকা তিনটি ব্যালট পেপারের মধ্যে শুধু মেয়র পদের ব্যালট নিয়ে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলছিলেন। ওই ব্যক্তি নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের হাত থেকে মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিয়ে কেন্দ্রের ভেতর এক বহিরাগত ব্যক্তি নিজ উদ্যোগেই নৌকা প্রতীকে সিল মারছিলেন।

‘আপনি কেন সিল মেরে দিচ্ছেন’—এমন প্রশ্নে বুথ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি।

এ ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ওই কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টরা নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাইকে গলায় ঝুলিয়ে রাখা কার্ড প্রদর্শন না করে শার্টের নিচে, পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রের কাছে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের বসে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে ধানের শীষের এজেন্টদের দেখা যায়নি।

আজ সকাল থেকে পুবাইলের বসুগাঁও এলাকায় পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা যায়, মোট আটটি বুথে পুরুষ (১-৪) ও নারী (৫-৮) ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। নারীদের জন্য চারটি ও পুরুষদের জন্য চারটি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ নম্বর বুথে বিএনপির কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। বাকি বুথগুলোয় দায়িত্ব পালন করা বিএনপির এজেন্টরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ১ নম্বর বুথে (পুরুষ) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট রয়েছেন। এর বাইরে ব্যালট বাক্সের সামনে সাদা টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ভোটারের হাতে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার তুলে দেওয়ামাত্র সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তি ব্যস্ততার সঙ্গে ভোটারের হাত থেকে শুধু মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিচ্ছেন এবং সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে দিচ্ছেন। বাকি দুটো ব্যালট পেপারে ভোটার নিজেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এই প্রতিবেদকের সামনেই ঘটনাটি ঘটছিল। এই প্রতিবেদক ওই ব্যক্তিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ‘আপনি কে? আপনি কেন ভোট দিচ্ছেন’—জিজ্ঞেস করা মাত্র কোনো জবাব না দিয়ে তিনি দ্রুত ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

এ নিয়ে ওই বুথে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার মানা করার পরও তিনি এ কাজ করছেন।’

সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে এরপরও কেন্দ্রে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।

ওই সময় পর্যন্ত ওই বুথে ১০৩টি ভোট পড়েছিল।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। তাঁকে এই ঘটনা জানানো হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাননি। কোনো বুথে বহিরাগত কেউ থাকতে পারবেন না। ওই সময় তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের বুথ থেকে বহিরাগত লোক থাকলে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

বুথের ভেতরে নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের ফোন ব্যবহারের অভিযোগ করা হলে তিনি সবার ফোন ফেরত নেওয়ারও নির্দেশ দেন।

বেলা ১১টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পরিদর্শন শেষে কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন প্রায় সব কটি বুথে ঢুকে পড়ে প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে থাকেন।

আটটি বুথের বেশির ভাগের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট না হয়েও নৌকার ব্যাজধারী বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এবার তাঁরা ভোটারের হাত থেকে নয়, সরাসরি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকেন। তবে তাঁরা শুধু মেয়র পদের সাদা রঙের ব্যালট পেপারই নিচ্ছিলেন। ভোটারের নাম জিজ্ঞেস করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরতে দেখা যায় তাঁদের। প্রতিটি বুথে এমন একাধিক ব্যক্তি এই সিল মারার কাজ করেছেন।

৮ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই জানালেন. নাম মো. আশরাফুল আলম। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। বাসা পুবাইলে। বললেন, ‘নৌকার জন্য এটুকু কাজ করতে হয়।’

ওই বুথেই ধানের শীষ প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে এক ব্যক্তিকে জালভোট দিতে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে গল্প করতে দেখা গেছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, নাম সাকিব হোসেন। এই কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট মোবারক মোল্লার কাছ থেকে ধানের শীষের এই কার্ডটি পেয়েছেন বলে জানালেন।

৬ নম্বর বুথে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে ব্যালট পেপারে সিল মারছিলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নাম মো. রাসেল। পুবাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। এবার ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আতাউল্লাহকে ওই সময় বুথ থেকে বুথে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। তিনি বহিরাগত ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি এক বুথ থেকে বের করে অন্য বুথে যাওয়া মাত্র বহিরাগত ব্যক্তিরা ফের ঢুকে জালভোট দেওয়া শুরু করেন।

ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকার এজেন্ট

পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের উল্টো দিকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে করাত ও ঠেলাগাড়ি মার্কা আর মেয়র পদে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের আলাদা ক্যাম্প রয়েছে সেখানে। সেসব ক্যাম্প থেকে ভোটারদের হাতে যাঁর যাঁর প্রতীকের ছাপ দেওয়া ভোটার নম্বরের চিরকুট দেওয়া হচ্ছিল। ধানের শীষের প্রতীকের ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যানার ও পোস্টার থাকলেও তাঁর কোনো এজেন্ট নেই। ধানের শীষের এজেন্টদের বদলে সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ছবিসহ নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী চারজন ভোটার চিরকুট বিতরণ করছেন। তাঁদের একজনের কাছে বিএনপির ক্যাম্পে বসে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘বিএনপির কোনো এজেন্ট এখানে বসেননি। ফাঁকা পেয়ে আমরা বসেছি।’

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি কমাতে আগ্রহ কম

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি ও অপচয় কমানো এবং গ্রাহক প্রতারণা বন্ধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। বারবার লক্ষ্য ও সময়সীমা পরিবর্তন করেও প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের বিষয়টি কোনোভাবেই গতিশীল করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ করা সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রত্যেক গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনা প্রায় চার বছর আগের। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং প্রায় ৪০ লাখ গ্যাস গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা রয়েছে। সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখে উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে ১৩ লাখের কম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের কিছু বেশি। সে হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি জুন পর্যন্ত প্রায় নয় মাসে প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ। এ অবস্থায় আগামী আড়াই বছরে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে মিটারের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব।

আবাসিক খাতের একজন গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহারের হিসাব দেখিয়ে বিল নেওয়া হয়, গ্রাহকের ব্যবহার তার চেয়ে অনেক কম। ফলে গ্রাহক প্রতিনিয়ত ঠকছেন। যেসব এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই চুলা ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক দুই মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকার গ্যাস ব্যবহার করেন। অথচ মিটার ছাড়া গ্রাহককে দুই মাসে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।

গ্যাসের বর্তমান গ্রাহক (আবাসিক, শিল্প ও অন্যান্য) প্রায় ৪০ লাখ। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছে মাত্র ১০ হাজার গ্রাহক। আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক-নির্বিশেষে গ্যাস, বিদ্যুৎ উভয় ক্ষেত্রেই প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা অনেক। এতে গ্রাহক রিচার্জ কার্ড ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজন ও ইচ্ছেমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের আগেই বিল পাবে, যা এখন পায় প্রায় দুই মাস পর। বিল নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ও হয়রানিরও অবসান হবে।

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম সমন্বয় করছে মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি সহায়তা সংস্থা পাওয়ার সেল। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম একটু পিছিয়ে পড়েছে ঠিকই। শিগগিরই এই কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি যতটুকু, তার সবই হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় কয়েক হাজার মিটার দেওয়া হয়। এরপর বিষয়টি থেমে যায়। অথচ সরকারের পরিকল্পনায় আবাসিক গ্রাহকের জন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা ছাড়াও ‘গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য’ সিএনজি ও শিল্প খাতে ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টার) মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মিটার স্থাপন করা হয়নি। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা গ্যাসের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণগত বিশাল পার্থক্য থেকে যাচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকলে সিএনজি স্টেশন ব্যবহৃত ‘ভলিউমেট্রিক’ মিটারে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারিত হয় না। কম গ্যাস ব্যবহার করেও তাঁরা বিল বেশি দেন। আর গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর হিসাবে তা ‘সিস্টেম গেইন’ (পদ্ধতিগত লাভ) হয়।

এ সম্পর্কে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস বিতরণের এই ব্যবস্থায় কোম্পানির লোকসান নেই। কেননা, তারা গ্যাস কম দিয়েও বিল ঠিকই পাচ্ছে। কিন্তু সিএনজি স্টেশন এবং শিল্পমালিকেরা বছরের পর বছর ধরে কেন এটা মেনে নিচ্ছেন, সেটি এক রহস্য। হয়তো বিলের বিষয়ে বিতরণ কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের কোনো বোঝাপড়া থাকতে পারে। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ, এই ব্যবস্থায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস চুরি ও অপচয় হচ্ছে।

এদিকে যেসব বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন, তাঁরা এক নতুন হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। এই হয়রানি প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জ করা নিয়ে। কারণ, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের কিছু শাখা ছাড়া প্রি-পেইড মিটারের কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ নেই। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, রাজধানীতে রিচার্জ করার জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, মিটারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকে রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 27, 2018

বাইরে সুনসান ভেতরে গড়বড়

গাজীপুরে ভোটচিত্র

সোহরাব হাসান

সকাল ৮টা ২ মিনিট। টঙ্গী বাজারের কাছে মন্নু টেক্সটাইল মিল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখি, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ভোটারদের লম্বা লাইন। বেশির ভাগ লোকের বুকে নৌকার ব্যাজ। দু-একজনের কাছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকও আছে। কিন্তু কাউকে ধানের শীষের ব্যাজ নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে দেখলাম না। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হলো। এত বড় লাইনেও একজন বিএনপি সমর্থক নেই! এরপর ব্যাজ পরেননি এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, নৌকার প্রতীক নিয়ে যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবাই নৌকার লোক নন। অনেকে নৌকা কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে এসেছেন। তাঁর এ কথার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম আরেকটি কেন্দ্রে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী দাবি করলেন, অন্য প্রতীক নিয়ে ধানের শীষে কাজ করার জন্য তিনি একজনকে বের করে দিয়েছেন।

টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে ‘ভোট উৎসব’ দেখেছি, চেহারা মোটামুটি অভিন্ন। কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রতীক নিয়ে সবাই ঘোরাফেরা করছেন। ভেতরে সুনসান। কোনো হল্লাচিল্লা নেই। ভোটাররা ভোটও দিচ্ছেন। একজন তরুণ ভোটার বের হতে হতে বললেন, ‘দুইটা সিল মাইরা আইলাম।’ একজনের দুটো সিল মারা কিংবা এলাকার ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও ভোট দেওয়া বন্ধ করতে পারেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, তাঁরাই ছিলেন অনুপস্থিত।


রাস্তার পূর্ব পারে টঙ্গী শ্রম কল্যাণকেন্দ্রে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল ছয়টি বুথের মধ্যে দুটিতে বিএনপির এজেন্ট আছেন। এজেন্টের কার্ড নিয়েছিলেন চারজন। দুজন কার্ডই নেননি। পাশের রওশন এরশাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন বয়স্ক ভোটারকে জিজ্ঞেস করি, কোনো গোলযোগ হয়েছে কি না। তিনি বললেন, গোলযোগ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান? বললাম, মারামারি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি। তিনি বললেন, সেসব হয়নি। তবে আসল গোলযোগ হয়েছে। ভোটটা অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি।

রেনেসাঁ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখলাম টেলিফোনে আলাপ করছেন। অপর প্রান্তে কে ছিলেন জানি না। এ প্রান্ত থেকে তিনি বলছেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মতো ভোট হচ্ছে।’ আরেকবার বললেন, আধা স্বচ্ছ। তাঁর কথায় রহস্য আছে মনে হলো। এই কেন্দ্রেই নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয়, যিনি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি জানতে চান, আপনারা কী দেখলেন। বললাম, অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। তাঁর জবাব, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী এজেন্ট না দিলে তো প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কিছু করার নেই। কিন্তু কী কারণে প্রার্থী এজেন্ট দেননি বা দিতে পারেননি, সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব ইসিরই।


টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলেছেন, ভালো ভোট হয়েছে। কিন্তু কেন ধানের শীষের এজেন্টরা নেই, সেই প্রশ্নের সদুত্তর তাঁরা দিতে পারেননি। বলেছেন, ছিলেন তো। হয়তো কোথাও গেছেন। একটু পরেই ফিরে আসবেন। কিন্তু বিকেল চারটা পর্যন্ত কেউ ফিরে আসেননি।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এক শ কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। গাজীপুরে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫ টি। আমরা সরেজমিনে যা দেখেছি, তাতে বিএনপি এক শ কেন্দ্রেও ঠিকমতো এজেন্ট দিতে পারেনি। তাহলে বিএনপি কি আগেভাগেই মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল?

বেলা আড়াইটায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডলের অফিসে তাঁর সঙ্গে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তিনি বেশ আস্থার সঙ্গে বললেন, ‘ভালো ভোট হয়েছে। দু-একটা কেন্দ্রে কিছুটা গোলযোগ হয়েছে। সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন এবং ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে আলাপ চলাকালেই সকালে ঘুরে আসা টঙ্গীর একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা টেলিফোন করে এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘আপনাদের কেউ কাছাকাছি থাকলে এখানে পাঠান। বেশ চাপে আছি।’ ততক্ষণে ব্যালটপেপারে জবরদস্তি সিল মারার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার খবর অনলাইন সংবাদপত্র ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে।

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

For foreigners, Dhaka more expensive than Frankfurt, Boston


Dhaka, the capital city of Bangladesh, is more expensive than Frankfurt of Germany, Brussels of Belgium and Boston of the United States, according to web sites reports.

Mercer's 24th annual Cost of Living Survey, released on Tuesday, ranked Dhaka at 66th costly city for foreigners among 209 cities of the different countries of the world.

In fact, Dhaka is the second most expensive city in South Asia after Mumbai (55th) of India for the expats.

Mercer's survey reveals that Hong Kong has passed Luanda to take the top spot as the world's most expensive city for expatriates.

Tokyo and Zurich are in second and third positions, respectively, with Singapore in fourth, up one place from last year.

This means that four out of five of the world's most expensive cities for expatriates are now in Asia.

Other cities appearing in the top 10 of Mercer's costliest cities for expatriates are Seoul (5), Luanda (6), Shanghai (7), N'Djamena (8), Beijing (9), and Bern (10).

The world's least expensive cities for expatriates are Tashkent (209), Tunis (208), and Bishkek (207).

Mercer's widely recognized survey is one of the world's most comprehensive, and is designed to help multinational companies and governments determine compensation strategies for their expatriate employees.

New York City is used as the base city for all comparisons, and currency movements are measured against the US dollar.

The survey includes over 375 cities throughout the world; this year's ranking includes 209 cities across five continents and measures the comparative cost of more than 200 items in each location, including housing, transportation, food, clothing, household goods, and entertainment.

Mumbai (55) is India's most expensive city, followed by New Delhi (103) and Chennai (144). Kolkata (182) and Bengaluru (170) are the least expensive Indian cities ranked.

Elsewhere in Asia, Bangkok (52) jumped fifteen places from last year.

Kuala Lumpur (145) also rose in the ranking, up twenty places, while Hanoi (137) plummeted thirty-seven places.

Bishkek (207) and Tashkent (209) remain the region's least expensive cities for expatriates.

Australian cities have fallen in the ranking this year. Brisbane (84) and Perth (61) dropped thirteen and eleven spots, respectively, while Sydney (29), Australia's most expensive ranked city for expatriates, experienced a relatively moderate drop of five places.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 27, 2018

RHD takes ‘unviable’ road project at inflated cost

The Roads and Highways Department (RHD) has taken up a road upgradation project at a bloated cost despite its 'unviability', official said on Monday.
Project insiders said the RHD itself has shown that there will be very poor return from the project.

Besides, the cost proposed for the project is much higher than that of the similar ongoing projects in the same region of the country.

The project in question is the upgradation of Mostafapur-Madaripur-Shariatpur-Ibrahimpur-Harina-Chandpur (Vatialpara) regional road to a national highway at a cost of Tk 9.29 billon.

All the three major indicators -- Net Present Value (NPV), Benefit-Cost Ratio (BCR) and Internal Rate of Return (IRR) -- have shown either negative or "zero" return from the costly road project.

They said the RHD has sought more funds for land acquisition than that for the main road construction work under the project.

The RHD has proposed 46.53 per cent cost for land acquisition, while it will require nearly 30 per cent for main road upgradation work, insiders said.

Besides, it has also sought nearly 13 per cent of the total project cost for purchasing two axle-load weighing machine for the 35-km road.

According to the RHD proposal, it has sought Tk 4.32 billion or 46.53 per cent of the total project cost for land acquisition only.

It has sought Tk 1.16 billion or 12.50 per cent of the total cost for purchasing two axle-load weighing machines.

Besides, the RHD in its project proposal said it would require Tk 27.17 million to build one km road.

It is spending Tk 21.45 million for constructing one km of paved road under Faridpur (Maizkandi)-Boalmari-Gopalganj (Bhatiapara) road upgradation project.

Again, under the ongoing 'Road Development, Barishal Zone Project', the RHD has kept aside only Tk 4.52 million fund on an average for constructing one km of paved road.

Besides, the RHD has proposed inflated cost for construction of bridges, culverts and also for earth work.

A PC official said they are scrutinising the project seriously, as RHD has proposed an exorbitant cost compared to other road projects.

"Many important and priority projects of the government are facing fund shortage. So, we will not approve those projects, which are of less priority and viability," said a senior PC official.

  • Courtesy: The Financial Express/ June 27, 2018

Tuesday, June 26, 2018

Gas crisis in Chattogram

If crisis of natural gas has been endemic in Chattogram, it has become worse of late. One explanation offered by officials at the Karnaphuli Gas Distribution Company Limited is that pigging work being carried out to remove accumulated carbon and other by-products in the pipeline has temporarily caused the pressure of gas to abruptly fall. Once the task gets completed the pressure of gas will become normal and the crisis will be over. Flushing the unwanted residues from a 175-kilometre-long pipeline cannot be completed overnight. This much is understood. What is however not clear if it is a routine work carried out in order to avert clogging of the supply line by unwanted by-products. In fact, shortage of gas has had a serious consequence on industrial belts in and around Chattogram.

A myth was created by the official circle that the country was virtually floating on natural gas - the reserve of which would last for eternity. How this unwise misrepresentation of gas reserve affected industrial initiatives is a story of frustration and anguish. Investors were enthusiastic about the prospect of using gas as fuel for their factories and industries and they started setting up productive units in an increasing number. But suddenly they were given the disappointing news that the natural gas reserve was much too limited to serve them. Many factories in Chattogram could not go into operation simply because they did not receive gas connection after long wait. They did not have provision for use of other types of fuel or the alternative types would render their venture unprofitable. Housing in the port city also suffered because domestic gas connection was suspended when an objective estimate of gas reserve was at hand.

As a precious resource this country was fortunate enough to strike underground, natural gas suffered the ultimate misuse imaginable. Apart from the Tengratila and Magurchhara gas blowouts, the undying flames in common consumers' kitchens have depleted the fuel in no small measures. Metered use of gas could sustain the supply of gas for domestic use for many more years. Time will arrive soon when residents of cities enjoying this near endless supply will find it totally empty. Both the authorities concerned and consumers are to blame because neither of them gave a good account of themselves so far as rational use of gas is concerned. New gas reserves are yet to be found. Unless offshore reserves in the Bay of Bengal are stricken and made use of, the country's reliance on imported fossil fuel will increase.

Now the government has become wiser. It has already gone for import of liquefied natural gas (LNG). But even here the cart was put before the horse instead of the other way round. The ship carrying LNG has arrived for weeks but it cannot be delivered because the infrastructure for its delivery could not be readied. The fault with the transmission line has delayed the process. This is undesirable. Whose fault is this? People in charge should be taken to task for not making a proper plan and its execution. Had this been accomplished well in time, the impact of disruption of the piped gas would not be so severe on Chattogram.

  • Courtesy: The Financial Express/Editorial/ June 26, 2018 

চাঁদের অপর পিঠের চেহারা

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, অন্যদিকে দেশজ ও জাতীয় সঞ্চয়ের হার কমেছে। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের বাজেটের অন্তত একটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণবিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা শুধু বাস্তবায়িত হয়নি, ছাড়িয়েও গেছে। অর্থাৎ ঋণ বাড়ছে, কিন্তু সঞ্চয় বাড়ছে না। সঞ্চয় না বাড়লে বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে? নতুন কর্মসংস্থান কীভাবে তৈরি হবে? সঞ্চয়পত্র তো মানুষই কিনছে। কিন্তু দেশজ সঞ্চয় ও জাতীয় সঞ্চয় কমছে। অর্থাৎ কিছু মানুষের সঞ্চয় বেড়ে যাচ্ছে; অধিকাংশের সঞ্চয় কমছে বা করতেই পারছেন না, অথবা ঋণ করে চলতে হচ্ছে। এই মুষ্টিমেয় মানুষ রাষ্ট্রকে ঋণের জালে বাঁধতে পারছে। অন্যদিকে দিন দিন বৈষম্যও বাড়াচ্ছে। 

সঞ্চয় হার কমার সঙ্গে পুঁজি পাচারের বিষয়টিরও যোগসাজশ রয়েছে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি বলছে, বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে এবং ক্রমাগত এর পরিমাণ বাড়ছে। অবৈধভাবে ব্যাপক হারে পুঁজি পাচার হওয়ায় বাণিজ্য-ঘাটতি বাড়ছে। ফলে জাতীয় সঞ্চয় কমছে ও বিনিয়োগ স্থবির থাকছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বড় সংকটের কারণ। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের ঘাটতি আছে; আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আস্থার অভাব। বিগত কয়েক বছর যাবৎ মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও তা দিয়ে কতটা কর্মসংস্থান হবে?

সঞ্চয়ের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক নিবিড়। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। বেকার সমস্যার সবচেয়ে বড় শিকার ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবকেরা। কথিত উন্নয়নের জোয়ার থেকে ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষিত যুবক বঞ্চিত। একটা প্রজন্মকে হারাতে যাচ্ছি। চাকরি না থাকলে আয় কোথা থেকে আসবে, সঞ্চয়ও বাড়বে না। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫-৬৫ বছরের কর্মক্ষম জনশক্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই পরিমাণ কর্মক্ষম জনশক্তি যেকোনো দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এক বিরাট সম্পদ। ‘জনমিতিক লভ্যাংশ’ থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছি। সঞ্চয়ও হারাচ্ছি।

আর যারা কোনোমতে কাজ পাচ্ছে, তারা অধিকাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। না আছে উপযুক্ত মজুরি, না আছে অধিকার। অতএব সঞ্চয়ের সুযোগ নেই। অগ্রযাত্রা নিয়ে কথা বলা হলেও অগ্রযাত্রার মৌল সূচক ‘শোভন কর্মসংস্থান’ নিয়ে কথা নেই। একদিকে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, অন্যদিকে মজুরি কমছে। সঞ্চয় আসবে কোথা থেকে?

আয় না বাড়লে কীভাবে সঞ্চয় বাড়বে? অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হলেও তা মানুষের জীবনযাত্রার আয় ও মান বাড়াচ্ছে না। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না বরং প্রকৃত বিচারে মানুষের আয় কমছে। ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণে, আয় ২০১০ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে ২ শতাংশ কম দেখাচ্ছে। অবধারিতভাবেই কমেছে প্রকৃত ব্যয় করার ক্ষমতা। সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ থাকছে না বরং রাষ্ট্রের যেমন ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, একই কায়দায় মাথাপিছু ব্যক্তিগত ঋণ বেড়ে চলেছে। আর বাড়বেই না কেন-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, গ্যাস, বিদ্যুৎ লাগামহীন গতিতে দাম বাড়ছে। নিশ্বাস নেওয়াই দুরূহ হয়ে উঠছে! সরকারি জরিপ বলছে, ২০১০ সালে যেখানে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২৩১৮ কিলোগ্রাম ছিল, ২০১৬ সালে তা কমে ২২১০ কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। টাকার অঙ্কে পরিবারপ্রতি প্রকৃত খরচ করার ক্ষমতা বা ভোগ্য ব্যয় কমেছে ১১ শতাংশ। আর তাই দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য কমার সেই হারও কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপমতে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত কষ্টকর জীবন, কিংবা তাদের একটি অংশ দরিদ্র হওয়ার মতো ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

বৈষম্য ও সঞ্চয় হ্রাসের মধ্যে এক নিবিড়তম চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ধনী-গরিব বৈষম্য বাড়ছে। বাজেটের দলিল জানাচ্ছে, মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী সঞ্চয়পত্র কিনেই চলেছে। পরিকল্পনা কমিশনের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার লিখছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাঝামাঝি সময়ে পুঁজি থেকে প্রাপ্তি আর শ্রম থেকে প্রাপ্তির (মজুরি) মধ্যে অনেক বেশি ফারাক। এ পার্থক্য বেড়েই চলছে। অধিকাংশ মানুষই শ্রম বিক্রি করে আয় করে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষের শ্রম থেকে আয়ের হার কমায় সঞ্চয়ও কমছে। সঞ্চয় না থাকা বা কম থাকায় আয়বৈষম্যের দুষ্টচক্র চলমান হবে এবং ক্রমাগত বৈষম্য বাড়তেই থাকবে। লুট থেকেও সম্পদ বৈষম্য বাড়ছে।

সরকারি মহলের কেউ কেউ বলে থাকেন, উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে বৈষম্য হতে পারে। এ তত্ত্ব অনেক আগেই অসার প্রমাণিত হয়েছে। সঞ্চয় কমছে, বিনিয়োগ স্থবির, আয় ও কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি চলছে, কৃষি খাত ধুঁকছে, শিল্প খাত এক পণ্যনির্ভর ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে, পুঁজিবাজার নিম্নগামী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম লভ্যাংশ ঘোষণা করছে, অবকাঠামো খাতে উচ্চায়িত মূল্য-এখানে এসব বক্তব্য অসার। নির্মমও বটে।

আয় বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে। আয় বাড়বে প্রকৃত খাত তথা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত থেকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত খাতগুলো ঝুঁকির সম্মুখীন। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং বহুমুখী করতে না পারায় রপ্তানি খাতে আয়ের ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয়। বরাদ্দ বাড়লেও অবকাঠামোগত দুর্বলতা উৎপাদন খাত সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কৃষি খাতে অগ্রগতি থমকে দাঁড়িয়েছে। শিল্প ও সেবা খাত দক্ষ জনশক্তি ঘাটতিতে ভুগছে। ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে বৈধ ও অবৈধভাবে এ দেশে নিয়োগ পাচ্ছে। অর্থাৎ সঞ্চয় বিদেশে চলে যাচ্ছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে যদি জনমুখীন সর্বজনব্যাপী টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারায় টেনে আনতে হয়, তাহলে আদিম পুঁজি সঞ্চয়ের পন্থা যেমন দুর্নীতি, অপকর্ম, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন প্রভৃতি অবলম্বনের পরিবর্তে উৎপাদন খাতকে গতিশীল করার সৃজনশীল কৌশল অনুসরণ জরুরি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বর্তমানে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকারের অভাব, আইনের শাসন ও জবাবদিহির প্রতি অবজ্ঞা, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের দ্বারা অর্থনীতিকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার মারাত্মক প্রবণতা দৃশ্যমান।

রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রচণ্ডভাবে সর্বজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। রাষ্ট্র জনতার প্রতিষ্ঠান। দিন দিন প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গোষ্ঠীতন্ত্রের কবলে চলে যাচ্ছে, রাষ্ট্রের সঙ্গে অধিকাংশ জনতার ‘সামাজিক চুক্তি’ ঢিলে হয়ে পড়ছে। জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার কোনো বিকল্প নেই। এই মৌলিকে ফিরে যাওয়াই (back to basic) প্রধানতম কাজ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

  • ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 25, 2018

llegal sand-lifting must be stopped

Investigate involvement of the politically powerful

Completely disregarding the threat of erosion of Guchchhogram at Dahagram's Barabari village in Patgram upazila, sand is being illegally lifted using a shallow machine from a pond, according to a report published by this newspaper on Monday. The locals, according to the report, are not unaware of the threat that this poses, nor are they oblivious to the fact that this is completely illegal. But as we have seen countless times in similar cases, the involvement of a politically powerful person, in this case the UP Chairmen, has meant that residents of Guchchhogram are powerless.

The owner of the shallow machine, when asked, has made it clear that he was being paid by the UP chairman for lifting sand, and the UP Chairman himself has said that the sand was being lifted for earth filling for building another Guchchhogram. And while he claims that the existing Guchchhogram will not be harmed, we cannot in any way agree with him. On what basis is this being claimed—has any study been carried out? In any case, the question of legality still remains, and the residents are right to fear that in the coming rainy season, the Guchchhogram might be devoured.

In the past, we have seen the damage that illegal sand lifting can cause—from ruining rivers to damaging embankments. And in most cases, the involvement of the influential (politicians) has meant that they continued unabated. The UNO, according to our report, was unaware of the matter, and had promised to take action to stop sand lifting. Despite our scepticism about that promise, we hope that he will act fast. At the same time, we need national initiatives to tackle these cases of ubiquitous corruption on the part of the politically powerful that has become the norm.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial/ June 26, 2018

Monday, June 25, 2018

৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের

পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকালে শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অধিভুক্ত কলেজগুলোর শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- সেশনজট শূন্যে নামিয়ে আনা, সময় মতো পরীক্ষা নেয়া ও তার ফল প্রকাশ করা, এক বিষয়ে যারা ফেল করেছে তাদের বিবেচনায় আনা, সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো এবং অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্তি হওয়ার পর নানা সমস্যা, সংকটে জর্জরিত। এই সঙ্কট কাটছে না। আমাদের ঠিকমতো পরীক্ষা নেয়া হয় না। পরীক্ষা হলেও ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হয়। ফলে ঢাবির অধিভুক্ত হয়েও মূল লক্ষ্য (সেশনজট মুক্তি) অর্জন হচ্ছে না।

মানবন্ধনে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক বিজিত শিকদার বলেন, যথাসময়ে আমাদের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ার ফলে আমাদের সেশনজটে পড়তে হচ্ছে। এ সময় মাস্টার্স পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তিনি।

  • Courtesy: Naya Diganta /June 25, 2018