Search

Wednesday, June 27, 2018

সাংবাদিককে আটকে থানায় নেয়ার হুমকি

সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিককে আটক করে থানার নেয়ার হুমকি দিয়েছেন গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশিদ। এ ঘটনায় উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও বিব্রতবোধ করেন। দুপুরে গাজীপুর সদরের শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাতে চটে গিয়ে তিনি মানবজমিন-এর একজন প্রতিবেদককে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে বলেন পুলিশ সদস্যদের। পরে ঘটনাস্থলেই তাকে কিছু সময় আটকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি হারুন মানবজমিনকে বলেন, ওই সাংবাদিক ঝামেলা করার চেষ্টা করছিল।

  • Courtesy: Manabzamin/ June 27, 2018


নারীকেন্দ্রে পুরুষ ভোটার!

বাইরে দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ভোটারদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও লক্ষণীয়। কিছুক্ষণ পরপর এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে র‌্যাব-পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। কিছু কিছু কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পাশাপাশি। সকালের দিকে প্রায় সব কেন্দ্রে এ রকম দৃশ্যই দেখা গেছে।

দুই ঘণ্টার মতো এমন শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ চলে সেখানে। এ সময় বেশির ভাগ কেন্দ্রেই উপস্থিত ছিলেন সকল প্রার্থীর এজেন্ট। সবমিলিয়ে গাজীপুর সিটিতে সকাল থেকেই ছিল উৎসব ভাব। কিন্তু এমনটা ছিল না পুরোদিনের চিত্র। প্রতিটি কেন্দ্রের মুখে সকাল থেকেই অবস্থান নেয় নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। যাদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তারা হৈ-হুল্লোড় করছেন, ভোটারদের দাঁড় করিয়ে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নৌকা প্রতীকের ভোটার স্লিপ। নৌকার ব্যাজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন গলায়। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের এমন অবস্থানের কারণে ভয়ে কেন্দ্রে যেতে পারেনি এলাকায় বিএনপির চিহ্নিত কর্মী-সমর্থকরা।

কেন্দ্রের মুখে এমন সরব মহড়ার মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে  প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলেও সেসব দেখেও দেখেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি। বের করে দেয়া হয় ধানের শীষের এজেন্টকে। মিডিয়ার উপস্থিতিতে প্রশাসনের নীরব সহায়তায় প্রকাশ্যে সিল মারা হয় নৌকা প্রতীকে। ভোটে স্বচ্ছতা ও জালিয়াতির পরস্পরবিরোধী দুইরকম চিত্রই দেখা গেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, কেন্দ্রের মুখে আওয়ামী লীগের লোকজনের মহড়ার কারণে বিএনপির লোকজন কেন্দ্রে যেতে পারেনি। এতে ধানের শীষের ভোট কম পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দুপুরের পর একের পর এক কেন্দ্রে জালভোট দিয়ে পাল্টে দেয়া হচ্ছে ফলাফল। অন্যদিকে বিএনপির তরফে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুইজন করে বিকল্প এজেন্ট রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। সকাল ১০টার পর আশিভাগ কেন্দ্রেই বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই জালভোটের ব্যাপারে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের উত্তর শোনা গেছে একই- আমি কিছু জানি না, কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে টঙ্গী, গাছা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন, চান্দনা, জয়দেবপুর, সদর ও পুবাইলের অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে সরজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। 

দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। মাথার উপর পূর্ণ সূর্যের গণগনে রোদ। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার বড়বাড়ি এলাকার মির্জা ইবরাহিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলে স্থাপন করা হয় দুইটি মহিলা কেন্দ্র। কেন্দ্রের বাইরে সরকার সমর্থকদের মহড়া থাকলেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। স্কুল মাঠের উত্তরপ্রান্তের ভবনে ২৪৬ নং কেন্দ্র। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আধবোজা দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন। ঠিক পাশের কক্ষে উঁকি দিতেই দেখা গেল, ভেতরে পঞ্চাশোর্ধ একজন প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরছেন ব্যালটগুলো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, একেবারে স্বাভাবিকভাবে। পরিচয় জানালেন, তার নাম আবদুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম দুলালের পোলিং এজেন্ট। কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট হয়েও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট মারছেন কেনো? উত্তরে জানালেন, দুই প্রার্থী একই দলের। তাই জাহাঙ্গীর আলমের হয়েও কাজ করছেন। স্বীকার করলেন, কাজটি ভুল হয়েছে। 

সাংবাদিকদের দেখতে পেয়ে পাশের বুথে জালভোট দেয়ায় ব্যস্ত কয়েকজন যুবক দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। এ সময় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের এসআই আসিফ এসে ধমক দিয়ে বললেন, বুথে ঢুকেছেন কেন? নারী কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার কেন জানতে চাইলে তারা বললেন, প্রিজাইডিং অফিসার বলতে পারবেন, তার কাছে যান। অভিযোগ পেয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ এলেন ভোটকক্ষে। এ সময় বহুসংখ্যক বহিরাগত কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকরা আশ্রয় নিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে। একজন পোলিং এজেন্ট জানালেন, কাউন্সিলর প্রার্থী ইফতেখারুল আলম মনিরের সমর্থকরা আক্রমণ করেছে। পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বলা হলো, বাইরে নিরাপদ নয়, আপনারা এখানেই থাকুন। কয়েক মিনিট পর দেখা গেল অন্যরকম দৃশ্য। প্রতিটি বুথ থেকে বেরিয়ে এলো নৌকার ব্যাচ পরা অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবক। দুইটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটারদের বেরিয়ে যেতে উৎসাহিত করলো পুলিশ। 

পুলিশ অস্ত্র তাক করে আশেপাশের লোকজনকে সরিয়ে দিলো। তারপর বন্ধ করে দিলো কেন্দ্রের মূল গেট। বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন গেটে আঘাত করছিল। এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার কথা বলে সাংবাদিকদের প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এসময় চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে বললেন, ‘মেয়র সাহেব বলেছেন, এই কেন্দ্রটি নিয়ে নাও।’ কথাটি বলেই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পরক্ষণে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আসিফের ফোনে একটি রিং এলো। তিনি ফোনটি প্রিজাইডিং অফিসারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়। প্রিজাইডিং অফিসার ফোনটি ধরে ওপারের প্রশ্নের জবাবে বললেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৪০০। বেলা ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৯৪৪টি। ওপার থেকে যে নির্দেশনা আসে তা পুনরাবৃত্তি করে তিনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে ১২শ’ ভোটই হবে। পরক্ষণেই সেই তরুণ-যুবকরা ঢুকে পড়ে। ৪০ মিনিট পর সাংবাদিকদের অনেকটা জোর করেই বের করে দেয়া হয়। তারপর থেকে একঘণ্টা কেন্দ্রটির ভেতরে ভোটগ্রহণ হয়েছে গেট বন্ধ অবস্থায়। বাইরে বিএনপির এজেন্ট আসলাম আলী জানালেন, পুরো বিষয়টিই একটি নাটকের অঙ্ক। প্রথমে পাশের পুরুষ কেন্দ্রটি দখল করে ভোট কাটা হয়েছে। তারপর গণ্ডগোলের কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করে ভোটারদের ভাগিয়ে দিয়ে এ কেন্দ্রেও কেটে নেয়া হচ্ছে ভোট। 

বিকাল তখন সাড়ে তিনটা। গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তা। ভোটগ্রহণ তখনও শেষ হয়নি। চান্দনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে তখন মহাসড়ক আটকে নৌকার মিছিল করছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রে ঢুকতেই বামপাশে দেখা গেল লাইভের যন্ত্রপাতি সেট করে রেখেছে অন্তত ৫টি টেলিভিশন চ্যানেল। সেখানে নৌকার ব্যাজধারী লোকজন ও ভোটারদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন সাংবাদিকরা। নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মত্ত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের একটি মডেল নির্বাচন চলছে এ কেন্দ্রে। ভেতরে গেলে দেখা যায়, একটি বুথেও বিএনপির এজেন্টদের পাওয়া যায় না। কেন্দ্রের পুরুষ ৩-৪-৫ নম্বর বুথের সামনে কোনো ভোটার নেই। প্রতিটি বুথের দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন করে। সেদিকে এগিয়ে গেলে একজন যুবককে মোবাইলে বলতে শোনা যায়, ভাই- কাজ শেষ প্রায়। বিকাল সাড়ে তিনটায় বুথে উঁকি দিতেই দেখা যায় সামনে বাক্স রেখে অনবরত সিল মারছেন আর বাক্সে ভরছেন কয়েকজন তরুণ। 

তাদের গলায় তখন ঝুলছিল জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাজ। ভোট কক্ষের জানালা দিয়ে সিলমারার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ওই সময় সেখানে উপস্থিত এক দৈনিকের সাংবাদিক। সেটা দেখে কয়েকজন তরুণ এগিয়ে এসে মারমুখো ভঙ্গিতে ধারণকৃত ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন। এ বুথের উপর তলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবদুস সাত্তারের কক্ষ। তার কাছে যাওয়ার পথে দেখা গেল, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পাশের কক্ষেই ব্যালট নিয়ে সিল মারছেন দুজন তরুণ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার বললেন, তিনি কিছুই জানেন না। কেউ তার কাছে অভিযোগ করেনি। এর আগে দুপুর তখন দেড়টা। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার খন্দকার রজব আলী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্র। বাইরে নৌকার ব্যাজধারীদের ভিড়। কেন্দ্রে প্রবেশের পর জানা গেল, কিছুক্ষণ আগে এ কেন্দ্র থেকে এক বান্ডিল ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সাবিউল ইসলাম জানান, ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ আলম মামুন মণ্ডলের সমর্থকরা ১০০ পাতার একটি ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়। এ কারণে ৪৫ মিনিট ভোট বন্ধ ছিল।

সব ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। তাই ফলে প্রভাব পড়বে না। ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রের প্রতিটি বুথের সামনে তখন ভোটারদের লাইন। কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা গেল, লাইন এগোচ্ছে না। কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে উঁকি দিতেই দেখা গেল ভেতরে নৌকার ব্যাজপরা কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার বললেন, বুথের বাইরে যে লাইন দেখেছেন সেটা ভুয়া। দলের লোকজনকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে ভোট কাটা চলছে। দুপুর তখন আড়াইটা। জয়দেবপুর শহীদ স্মৃতি কলেজ কেন্দ্র। কেন্দ্রের মুখে যথারীতি মহড়া। ভেতরে একটি বুথে ঢুকতেই দেখা গেল এক ভোটার অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি অভিযোগ করলেন ব্যালটে আগে থেকেই ‘নৌকা’য় সিল দেয়া ছিল। এ সময় একজন এসে তাকে শাসিয়ে দেয়ার পর তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন। 

সকাল থেকে এমন পরিস্থিতি ছিল না গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। সকালের দিকে ভোটের উৎসব দেখা গেল সালনার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার দুটি কেন্দ্রে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদেরও কেন্দ্রে পাওয়া গেল। এজেন্ট নজরুল ইসলাম বললেন, দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রে আসতে পারবেন কিনা ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রে আসতে পেরেছেন। এখন ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন কিনা সে ভয়ে আছেন। ভোটাররা জানালেন, ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বিএনপির ক্যাম্পে বসে একই কথা বললেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সাখাওয়াত হোসেন। সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, টিঅ্যান্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাড়িয়ালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা যায়।

সকাল তখন সাড়ে আটটা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। স্কুল প্রাঙ্গণে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা তখনও হাতেগোনা। কেন্দ্রে প্রবেশ করে এক নম্বর পুরুষ বুথে ঢুকতেই বাধা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের একজন এজেন্ট পথরোধ করে বললেন, ভোট কক্ষের ভেতরে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান ভোটকেন্দ্রের বারান্দাতেই ছিলেন। সাংবাদিক প্রবেশে বাধা-নিষেধের কথা শুনেই এলেন। বললেন, সাংবাদিক প্রবেশে বারণ নেই। টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি কেন্দ্রের সবক’টি বুথেই ভোট চললো নির্বিঘ্নে। সময় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জরুন হাফেজিয়া মাদরাসা কেন্দ্র। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে।

তিনি একজন আনসারকে ভেতরে পাঠান। ১০ মিনিট পর অনুমতি আসে। ভেতরে যাওয়ার পর প্রিজাইডিং অফিসার প্রথমেই জানতে চান সাংবাদিকরা কে কোথায় কাজ করেন। এ সময় তার কক্ষে বসে খোশগল্প করছিলেন নামসর্বস্ব একটি পত্রিকার একজন সাংবাদিক ও কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। প্রিজাইডিং অফিসার বললেন, ভোট বেশ শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। তিনি কোনো বুথের দিকে যেতে অনুমতি দিলেন না। অন্যদিকে দুপুর তখন দুইটা। নাইজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হলেও নারী ও পুরুষ দুইটি কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয়েছে শান্তিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছে ধানের শীষের লোকজন দেখা না গেলেও উপস্থিত ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা। বিকাল ৩টা তখন। কোনাবাড়ি এমইএইচ আরিফ কলেজ কেন্দ্র। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। কেন্দ্রের ১ ও ২ নম্বর বুথ মিলিয়ে পৌনে আটশ’ ভোটের মধ্যে বিকাল তিনটা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে মাত্র সাড়ে তিনশ’ ভোট। 

  • Courtesy: Manabzamin/ June 27, 2018

আধ ঘণ্টাও কেন্দ্রে টিকতে পারেননি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে আধ ঘণ্টাও টিকতে পারেননি বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পোলিং এজেন্টরা। সকাল আটটায় শুরু হওয়া নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০ থেকে ২০ মিনিট করে বসতে পারলে পরে তাদের বের করে দেয়া হয়। গতকাল সারাদিন নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো ঘুরে এ চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে। 

কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করার অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। সকাল সাড়ে আটটার  দিকে নিজ এলাকা টঙ্গী কলেজ গেট সংলগ্ন বছির উদ্দিন উদয়ন একাডেমিতে ভোট দিতে এসে তিনি জানিয়েছেন ভোট শুরুর আগেই ১০টিরও বেশি কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এসময় তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হওয়ার কোনো নিদর্শন দেখছি না।

আমার পোলিং এজেন্টদের হয়রানি করা হয়েছে। ভোট শুরুর আগেই ১০ কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। 

এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নিয়ে দখলে নেয়া শুরু করে। একই সঙ্গে পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনও করা হয়। গাজীপুর কোনাবাড়ীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সরজমিন দেখা যায়, এই এলাকার একটি কেন্দ্রেও ভোটকক্ষে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। জরুন হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দেখা যায় নৌকা প্রতীকের ব্যাজ ধারণ করে ভোট কক্ষগুলোতে বসে আছেন এজেন্টরা। 

কিন্তু সেখানে ধানের শীষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার কাজী নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই কেন্দ্রে ধানের শীষের কেউ আবেদন করেননি। কারো তালিকা আমার কাছে নেই। ভয়ভীতি দেখিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, আমার কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। আর আমার কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে। কোনো পক্ষ এসে ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ নেই। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক কথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এ কেন্দ্রে ঘটেনি। তবে জরুন এলাকার এই হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দেখা যায় বেশ কিছু ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ ভেতরে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও। এ সময় কিছু লোক বাইরে থেকে এসে লাইন ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভোট দিচ্ছেন। কেন্দ্রটিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দাঁড়িয়ে থাকলেও নীরব ভূমিকাই পালন করেছেন। 

একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে ওই এলাকার আরেক কেন্দ্র টাঙ্গাইল প্রি ক্যাডেট স্কুলে। সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার সুকুমার চন্দ্র রায় জানান, সকাল থেকে ধানের শীষ প্রার্থীর একজন পোলিং এজেন্ট এসেছিলেন। তবে ১৫ মিনিট থাকার পর তিনি চলে গেছেন। তার নাম আমি জানি না। কেন জানেন না- এ প্রশ্নের জবাবে সুকুমার বলেন, আমার কাছে কেউ এসে রিপোর্ট করেনি। এসব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখা গেলেও কোনাবাড়ির আরেক কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সকাল থেকেই এখানে থমথমে পরিস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সরজমিন গিয়ে দেখা যায় ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা দখল করে নেয়। সকালেই বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় ভোটকেন্দ্র থেকে। 

আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুপুর ১১টার দিকে এ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মহিদুল আমিন জানান, কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তাই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতও হয়নি। হ্যাঁ পাঁচ মিনিট বৃষ্টির কারণে বন্ধ ছিল। পরে পুলিশের সহযোগিতায় আমরা সব ঠিক করে নিয়েছি। ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কোনাবাড়ির আরো কয়েকটি কেন্দ্রে। এর মধ্যে জেনুইন রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড  কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পোলিং এজেন্টদের কেউ উপস্থিত নেই।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট ও তাদের সমর্থকরা সরব। কেন্দ্রে সাংবাদিক আগমনের খবর শুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। এদের মধ্যে ভোটার নন একজনের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। কেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক আনসার সদস্য বলেন, জোর করে কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে যায়। কে বা কারা কোন দলের সেটা জানি না। কিছু বললে উল্টো ধমক দেয়। এ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট নেই কেন- জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার একেএম সালাহউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে ধানের শীষের কোনো পোলিং এজেন্ট আমার কাছে এসে রিপোর্ট করেনি। আবেদনও পাইনি। কেন্দ্রে না আসার কারণ তো আর আমি বলতে পারবো না।

  • Courtesy: Manabzamin /June 27, 2018 

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪০%

বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন


দেশে রেকর্ড আমদানির দায় পরিশোধ নিয়ে ব্যাংকারদের উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাজারে ডলারের সংকট। চলতি বছরের শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী মার্কিন মুদ্রাটির বিনিময় হার। এদিকে আমানত নিয়েও হাহাকার চলছে ব্যাংকগুলোতে। আর্থিক খাতে এ পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রমে বাড়ছে সন্দেহজনক লেনদেন।

দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক লেনদেন ও তত্পরতা বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আর্থিক খাতে সন্দেহজনক ২ হাজার ৩৫৭টি লেনদেন ও তত্পরতার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমন লেনদেনের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৮৭। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

কর্মকর্তারা বলছেন, আগেও দেশে সন্দেহজনক লেনদেন হতো। নানা কারণে সংশ্লিষ্টরা বিএফআইইউকে সে তথ্য দিতেন না। কিন্তু বিএফআইইউর তত্পরতায় ব্যাংকারসহ খাতসংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় সংস্থাটির কাছে সন্দেহজনক লেনদেন ও কর্মকাণ্ডের তথ্য বেশি এসেছে।

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিতকরণ, নগদ লেনদেনে নজরদারিসহ মুদ্রা পাচার রোধে কাজ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঘুষ-দুর্নীতি, জঙ্গি বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মানব পাচার, চোরাচালান, মুদ্রা জাল, অর্থ পাচার ও সম্ভাব্য বেআইনি লেনদেন হলে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি বিএফআইইউতে রিপোর্ট করে। যাকে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর) বলা হয়। আবার ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি যেকোনো ধরনের নগদ লেনদেন হলে তার তথ্যও বিএফআইইউতে পাঠাতে হয়। তবে সন্দেহজনক লেনদেন বা কর্মকাণ্ড মানেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, এমনটা নয়।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন কোনো অপরাধ নয়। লেনদেনে অপরাধের উপাদান পাওয়া গেলে তবেই সেটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিএফআইইউর কাছে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বেশি জমা পড়া প্রতিষ্ঠানটির সফলতারই নির্দেশক। আগে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা দিতে ভয় পেত। কিন্তু আমাদের তত্পরতা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কারণে সংশ্লিষ্টদের মন থেকে ভয় দূর হয়েছে।

তিনি বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন আগেও ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোর সচেতনতার কারণে বিএফআইইউর সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেড়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যগুলো দিয়ে আমরা একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছি। এ তথ্যভাণ্ডার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানেও কাজে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে কারো বিষয়ে অনুসন্ধান করার দরকার হলে, আমরা মানসম্মত প্রতিবেদন তৈরি করতে পারব। এছাড়া সন্দেহজনক লেনদেনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আমরা খতিয়ে দেখছি। অনুসন্ধানে অপরাধের উপাদান পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা পড়েছিল ৪১৬টি। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এমন লেনদেনের সংখ্যা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬২১টি, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১ হাজার ৯৪ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৮৭টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা পড়ে বিএফআইইউতে। বিদায়ী অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ও তত্পরতা ৩৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৫৭টিতে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে ১৯৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য জমা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের অক্টোবর, নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিদায়ী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ৩২৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউতে জমা পড়ে। ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), অর্থ প্রেরক (মানি রেমিটার) এবং পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ জমা পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। বিএফআইইউর কাছে জমা পড়া সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ৭০ দশমিক ৫৬ শতাংশই ছিল ব্যাংকের। এছাড়া অর্থ প্রেরকের কাছ থেকে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) কাছ থেকে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য এসেছে।

সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে ১৮টি ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের। এছাড়া আড়াই কোটি থেকে ৫ কোটি টাকার ২৯টি, ৫ থেকে ১০ কোটি টাকার ২৩টি ও ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার ৯৪টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বিএফআইইউর কাছে আসে। সন্দেহজনক অন্য লেনদেনগুলো ছিল ৫০ লাখ টাকার কম মূল্যমানের। সন্দেহজনক লেনদেনের ৫৫ শতাংশই ছিল ঢাকায়।

শুধু সন্দেহজনক লেনদেন নয়, বিএফআইইউর কাছে আর্থিক অপরাধের অভিযোগের সংখ্যাও বিদায়ী অর্থবছরে ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোট ৩০১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৯টি অভিযোগ করে বাংলাদেশ পুলিশ। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে ৭১টি, গণমাধ্যমের কাছ থেকে ১৪টি, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১১টি এবং শুল্ক বিভাগসহ অন্যদের কাছ থেকে ৯৬টি আর্থিক অপরাধের অভিযোগ পেয়েছে বিএফআইইউ।

প্রতিষ্ঠানটি থেকে গত অর্থবছর রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে দুর্নীতি, প্রতারণা, অপহরণ, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১২১টি অপরাধের তথ্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৯টি অভিযোগ ছিল দুর্নীতি ও জালিয়াতি সম্পর্কিত। এছাড়া প্রতারণা সম্পর্কিত ২৫টি, অপহরণ-সংক্রান্ত ১০টি, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ে ১০টি অপরাধের তথ্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া হয়েছে। বিএফআইইউ থেকে সবচেয়ে বেশি ৭২টি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। ৩৮টি অভিযোগ সিআইডি, ৯টি অভিযোগ কাউন্টার টেরোরিজমে পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

  • Courtesy: BanikBarta /June 27, 2018

False govt promises only prolong teachers’ problems

THERE is a saying that teachers are the future of nation. Primary school teachers play an important role in raising future citizens. In Bangladesh, however, the role of school teachers is not valued. Teachers of government-recognised educational institutions but not enlisted for the monthly payment scheme have intermittently taken to the streets for proper pay since 2013. Among the aggrieved teachers, as New Age on reported Tuesday, there are ones teaching students without any pay for even 20 years. In December 2017, several hundred teachers began a sit-in in Dhaka and went on hunger strike which drew national attention and many lent voice to their cause, criticised the government for not attending to their demand in time. Amid widespread criticism, the prime minister on January 5 assured them of their inclusion into the system. 

Sadly, the assurance did not translate into action as the proposed national budget did not allocate additional budget for enlisting new schools for the monthly payment scheme. It is in this context the teachers concerned under the banner of Non-MPO Educational Institution Teachers and Employees’ Federation started fast-unto-death on Monday. Instead of immediately approaching the peaceful protesters for dialogues, the government shockingly ordered police to harass and attack them, even detain federation organisers.

The monthly payment system for recognised non-government educational institution was introduced in 1981, under which the government has been contributing full basic pay to teachers since 2006. The last inclusion of 1,645 institutions into the scheme took place in 2010. About 75,000 to 80,000 teachers are now employed in the government-recognised 5,242 schools all over Bangladesh who are not under the scheme. The situation reveals absolute apathy of all the authorities concerned. 

Not only has the government avoided heeding the teachers’ cause, it has used brute police force to tackle peaceful protesters on the streets. In mid-June when teachers gathered in front of the National Press Club, the police charged at them with truncheons and injured many teachers. Since then, at least 40 aggrieved teachers have fallen ill spending their day and night under the open sky. It is time that the government initiated a commission to review the performance of the schools in question and work out a mechanism to ensure the payment of teachers for the services they have already provided. False promises from the state managers will only keep the problem alive. 

The government must know that it cannot declare itself a middle-income country leaving school teachers from rural areas starved. The incumbents must immediately take steps to arrange an MPO enlistment drive and review school’s eligibility for financial assistance. While it is important to urgently attend to the demand of the teachers, it must also develop a mechanism through which schools will be evaluated regularly for fresh enlistment.

  • Courtesy: New Age/ Editorial /June 27, 2018

Sorry state of public hospitals

Healthcare stunted

According to a report in this daily published yesterday, patients have to receive treatment in an unhygienic environment at the Narayanganj 300-bed Hospital, the largest public hospital in the district. Beds in the hospital are in a horrible state, infested with bed bugs and cockroaches with soiled bedsheets. Moreover, many of the beds are strutted up with the help of bricks. And although there should be 300 beds in the hospital, currently only 271 beds exist.

The report is fairly representative of the general condition of many public hospitals across the country. Anyone who has ever visited a public hospital in the country might have seen and experienced the same problems. We wonder why the conditions of our healthcare facilities are so deplorable when a big portion of our health budget is allocated for infrastructure development and purchase of modern equipment. And while lack of cleanliness and absence of proper beds are problems that could be easily solved by the authorities, who will solve other major problems, such as, nonattendance of doctors and lack of diagnostic facilities that most of the public hospitals in the country are facing?

We urge the Narayanganj hospital authorities to ensure a clean environment for the patients and replace the existing broken beds immediately. According to a hospital official, the government has decided to upgrade this hospital to a medical college hospital soon. We think, before planning big, it should solve the existing problems of the hospital. There should be a monitoring mechanism in place to oversee that our public hospitals are run efficiently without which quality treatment to the people, who have no other alternative but to seek treatment in these facilities, can't be provided.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial /June 27, 2018

অর্থনীতি নিয়ে ‘নয়ছয়’ বন্ধ হোক

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

তিন শ বছরের কিছু আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ভবের পর থেকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার নির্ধারণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ (টার্গেটিং), সরকারের ব্যাংক এবং ব্যাংকসমূহের ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে অর্থনীতির ওঠানামা সামাল দিয়ে আসছে। সম্প্রতি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সুদের হার ‘নয় ও ছয়’ হবে ঘোষণা দেওয়ায় এবং সাম্প্রতিক কালে এই একই সংগঠনের আরও কিছু কার্যকলাপের ফলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ও অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ‘নয়ছয়’ একটি বাংলা বাগ্ধারা, যার অর্থ হলো অপচয়। কাকতালীয় হলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিএবির মুখ থেকে আসা এই ‘নয় ও ছয়’-এর ঘোষণাটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

আগে বাজার অর্থনীতিতে সরকারই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করত। নিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা, একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, জনস্বার্থ, বিশেষত ভোক্তা, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। পরে দেখা গেল যে সরকার এ কাজ সুচারুভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব, অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া, স্বার্থের সংঘাত এর অন্যতম কারণ। ফলে বিশ্বব্যাপী স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উদ্ভব ঘটে। যেমন ব্যাংকিং খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রভৃতি। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না বা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯৮২) অর্থনীতিবিদ জর্জ স্টিগলার প্রথম ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলে’র (রেগুলেটরি ক্যাপচার) ধারণাটি প্রবর্তন করেন। সাধারণভাবে এর অর্থ হলো নিয়ন্ত্রিত সংস্থাসমূহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল। আগেই বলেছি, জনস্বার্থ সুরক্ষার জন্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ গঠন করা হয়ে থাকে। কিন্তু জনস্বার্থের পরিবর্তে যখন এসব সংস্থা যাদের নিয়ন্ত্রণ করার করার কথা ছিল, তাদের স্বার্থে কাজ করে, বলা হয়ে থাকে, তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। যেমন ধরুন, আমাদের দেশে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রয়েছে। এটা গঠন করা হয়েছে মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু তা না করে বিএসইসি যদি কেবল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কতিপয় কোম্পানি বা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ করে, তাহলে বলা হবে যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখলের ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা

উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে ব্যাংকমালিকেরা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, এমনকি সংসদকেও প্রভাবিত করে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে তাঁরা বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে সমর্থ হন। এরপর তাঁরা ক্যাশ রিজার্ভ রেসিও (সিআরআর) ১ এবং রেপো রেট শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তাঁরা ব্যাংক কোম্পানির জন্য করপোরেট আয়করের হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে নন-পাবলিকলি ও পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্য যথাক্রমে ৪০ ও ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করাতে সমর্থ হন। সর্বশেষ তাঁরা ঋণের ওপর ৯ শতাংশ ও জমার ওপর ৬ শতাংশ সুদ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিএবির ঘোষণা অনুসরণ করেছে।

অসুবিধা কোথায়? 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক খাতের করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট। ব্যাংক কোম্পানি আইনের এক সংশোধনীর মাধ্যমে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২ থেকে ৪ এবং পরিচালনা পর্ষদে সদস্যদের মেয়াদ ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ফলে করপোরেট ব্যবস্থাপনার সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সিআরওর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ, রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে হ্রাস ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি ব্যাংকে জমা করা অর্থের সীমা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদান ও খেলাপি ঋণ উৎসাহিত হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক কোম্পানির জন্য আয়করের হার ৪৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ব্যাংকগুলোর মার্জারের এবং এই খাতে অতিপ্রয়োজনীয় সংস্কারের সম্ভাবনা ব্যাহত হবে। আর সুদের হার কী হবে, তা বিএবি নয়, বাজারই নির্ধারণ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতির মাধ্যমে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারে।

কেন এমন হলো? 

দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণ, পরিচালনা ও ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উল্টো বিএবি তার সাম্প্রতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে লেখার শুরুতে উল্লেখিত ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল’ সম্পন্ন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে তিনটি কারণে। আমাদের দেশে বিভিন্ন নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হলেও এদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রায়ই এসব সংস্থায় অমেরুদণ্ডী ও জি হুজুর-টাইপের প্রধান নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে, যাঁরা নিরপেক্ষভাবে সংস্থা পরিচালনার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহলের হুকুম তামিলে ব্যস্ত থাকেন। সর্বোপরি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা ও সরকারপ্রধানের বিশ্বাসভাজনতা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক কালে এ ক্ষেত্রে আমরা ঘাটতি লক্ষ করছি। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল, তারাই উল্টো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এখন তারা মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতি সবকিছুই নির্ধারণ করছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দখল ও তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিণতি আমরা জানি। ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার মার্কেট বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা দখল বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ব্যর্থতা, যার ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতার কারণেই রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক দখল, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে; ২০১১ সালে তাদের সৃষ্ট অতিরিক্ত তারল্যের কারণে শেয়ার মার্কেটে ধস এবং নিয়ন্ত্রণে শৈথিল্যের কারণে খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতিতে নয়ছয় কেবল ব্যাংকিং খাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ব্যবস্থাপনাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান এবং এগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের অন্য সব খাতের অর্জনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বিএবির ওপরে উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো জাতির জন্য অশনিসংকেত বয়ে এনেছে। সুদের হার কম হোক, সিঙ্গেল ডিজিট হোক, বিনিয়োগ বাড়ুক, এটা আমরা সবাই চাই। তবে তা নির্ধারণের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। এটা বিএবির কাজ নয়। তাই ব্যাংকমালিকদের তাঁদের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজকর্মের রাশ টেনে ধরতে হবে। ব্যাংকমালিকেরা নিশ্চয়ই ব্যাংকিং খাতসংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিতে পারেন, সরকারের কাছে তাঁদের দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু এ খাতের বিষয়ে তাঁরা একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্ররোচিত করতে পারেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য তাদের বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং সরকারপ্রধানকে তা করতে হবে এখনই।
  • মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান: সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গাজীপুরে ভোটারের হাত থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল


গাজীপুরের পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে সবার সামনেই জালভোট দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ভোটারের কাছে থাকা তিনটি ব্যালট পেপারের মধ্যে শুধু মেয়র পদের ব্যালট নিয়ে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলছিলেন। ওই ব্যক্তি নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের হাত থেকে মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিয়ে কেন্দ্রের ভেতর এক বহিরাগত ব্যক্তি নিজ উদ্যোগেই নৌকা প্রতীকে সিল মারছিলেন।

‘আপনি কেন সিল মেরে দিচ্ছেন’—এমন প্রশ্নে বুথ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যান ওই ব্যক্তি।

এ ঘটনায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ওই কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টরা নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের কাছ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাইকে গলায় ঝুলিয়ে রাখা কার্ড প্রদর্শন না করে শার্টের নিচে, পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভোটকেন্দ্রের কাছে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের বসে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে ধানের শীষের এজেন্টদের দেখা যায়নি।

আজ সকাল থেকে পুবাইলের বসুগাঁও এলাকায় পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা যায়, মোট আটটি বুথে পুরুষ (১-৪) ও নারী (৫-৮) ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। নারীদের জন্য চারটি ও পুরুষদের জন্য চারটি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ নম্বর বুথে বিএনপির কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। বাকি বুথগুলোয় দায়িত্ব পালন করা বিএনপির এজেন্টরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ১ নম্বর বুথে (পুরুষ) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট রয়েছেন। এর বাইরে ব্যালট বাক্সের সামনে সাদা টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ভোটারের হাতে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য তিনটি ব্যালট পেপার তুলে দেওয়ামাত্র সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তি ব্যস্ততার সঙ্গে ভোটারের হাত থেকে শুধু মেয়র পদের ব্যালট পেপার টেনে নিচ্ছেন এবং সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে দিচ্ছেন। বাকি দুটো ব্যালট পেপারে ভোটার নিজেই ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এই প্রতিবেদকের সামনেই ঘটনাটি ঘটছিল। এই প্রতিবেদক ওই ব্যক্তিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ‘আপনি কে? আপনি কেন ভোট দিচ্ছেন’—জিজ্ঞেস করা মাত্র কোনো জবাব না দিয়ে তিনি দ্রুত ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

এ নিয়ে ওই বুথে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার মানা করার পরও তিনি এ কাজ করছেন।’

সাদা টি-শার্ট পরা ব্যক্তিকে এরপরও কেন্দ্রে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়।

ওই সময় পর্যন্ত ওই বুথে ১০৩টি ভোট পড়েছিল।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। তাঁকে এই ঘটনা জানানো হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম পাননি। কোনো বুথে বহিরাগত কেউ থাকতে পারবেন না। ওই সময় তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের বুথ থেকে বহিরাগত লোক থাকলে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

বুথের ভেতরে নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের ফোন ব্যবহারের অভিযোগ করা হলে তিনি সবার ফোন ফেরত নেওয়ারও নির্দেশ দেন।

বেলা ১১টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পরিদর্শন শেষে কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন প্রায় সব কটি বুথে ঢুকে পড়ে প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে থাকেন।

আটটি বুথের বেশির ভাগের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট না হয়েও নৌকার ব্যাজধারী বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এবার তাঁরা ভোটারের হাত থেকে নয়, সরাসরি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকেন। তবে তাঁরা শুধু মেয়র পদের সাদা রঙের ব্যালট পেপারই নিচ্ছিলেন। ভোটারের নাম জিজ্ঞেস করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরতে দেখা যায় তাঁদের। প্রতিটি বুথে এমন একাধিক ব্যক্তি এই সিল মারার কাজ করেছেন।

৮ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই জানালেন. নাম মো. আশরাফুল আলম। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। বাসা পুবাইলে। বললেন, ‘নৌকার জন্য এটুকু কাজ করতে হয়।’

ওই বুথেই ধানের শীষ প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে এক ব্যক্তিকে জালভোট দিতে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে গল্প করতে দেখা গেছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, নাম সাকিব হোসেন। এই কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট মোবারক মোল্লার কাছ থেকে ধানের শীষের এই কার্ডটি পেয়েছেন বলে জানালেন।

৬ নম্বর বুথে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পরা একজন নৌকা প্রতীকে ব্যালট পেপারে সিল মারছিলেন। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নাম মো. রাসেল। পুবাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। এবার ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আতাউল্লাহকে ওই সময় বুথ থেকে বুথে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। তিনি বহিরাগত ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি এক বুথ থেকে বের করে অন্য বুথে যাওয়া মাত্র বহিরাগত ব্যক্তিরা ফের ঢুকে জালভোট দেওয়া শুরু করেন।

ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পেও নৌকার এজেন্ট

পুবাইল আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের উল্টো দিকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প রয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে করাত ও ঠেলাগাড়ি মার্কা আর মেয়র পদে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের আলাদা ক্যাম্প রয়েছে সেখানে। সেসব ক্যাম্প থেকে ভোটারদের হাতে যাঁর যাঁর প্রতীকের ছাপ দেওয়া ভোটার নম্বরের চিরকুট দেওয়া হচ্ছিল। ধানের শীষের প্রতীকের ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যানার ও পোস্টার থাকলেও তাঁর কোনো এজেন্ট নেই। ধানের শীষের এজেন্টদের বদলে সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ছবিসহ নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী চারজন ভোটার চিরকুট বিতরণ করছেন। তাঁদের একজনের কাছে বিএনপির ক্যাম্পে বসে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘বিএনপির কোনো এজেন্ট এখানে বসেননি। ফাঁকা পেয়ে আমরা বসেছি।’

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি কমাতে আগ্রহ কম

গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি ও অপচয় কমানো এবং গ্রাহক প্রতারণা বন্ধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। বারবার লক্ষ্য ও সময়সীমা পরিবর্তন করেও প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের বিষয়টি কোনোভাবেই গতিশীল করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ করা সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রত্যেক গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার সরকারি পরিকল্পনা প্রায় চার বছর আগের। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং প্রায় ৪০ লাখ গ্যাস গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা রয়েছে। সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখে উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে ১৩ লাখের কম।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের কিছু বেশি। সে হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি জুন পর্যন্ত প্রায় নয় মাসে প্রি-পেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৮ লাখ। এ অবস্থায় আগামী আড়াই বছরে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে মিটারের আওতায় আনা প্রায় অসম্ভব।

আবাসিক খাতের একজন গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহারের হিসাব দেখিয়ে বিল নেওয়া হয়, গ্রাহকের ব্যবহার তার চেয়ে অনেক কম। ফলে গ্রাহক প্রতিনিয়ত ঠকছেন। যেসব এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই চুলা ব্যবহারকারী একজন গ্রাহক দুই মাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকার গ্যাস ব্যবহার করেন। অথচ মিটার ছাড়া গ্রাহককে দুই মাসে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।

গ্যাসের বর্তমান গ্রাহক (আবাসিক, শিল্প ও অন্যান্য) প্রায় ৪০ লাখ। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছে মাত্র ১০ হাজার গ্রাহক। আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক-নির্বিশেষে গ্যাস, বিদ্যুৎ উভয় ক্ষেত্রেই প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা অনেক। এতে গ্রাহক রিচার্জ কার্ড ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজন ও ইচ্ছেমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোও গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের আগেই বিল পাবে, যা এখন পায় প্রায় দুই মাস পর। বিল নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ ও হয়রানিরও অবসান হবে।

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম সমন্বয় করছে মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি সহায়তা সংস্থা পাওয়ার সেল। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম একটু পিছিয়ে পড়েছে ঠিকই। শিগগিরই এই কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি যতটুকু, তার সবই হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় কয়েক হাজার মিটার দেওয়া হয়। এরপর বিষয়টি থেমে যায়। অথচ সরকারের পরিকল্পনায় আবাসিক গ্রাহকের জন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা ছাড়াও ‘গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য’ সিএনজি ও শিল্প খাতে ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টার) মিটার স্থাপন বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মিটার স্থাপন করা হয়নি। ফলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা গ্যাসের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণগত বিশাল পার্থক্য থেকে যাচ্ছে। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকলে সিএনজি স্টেশন ব্যবহৃত ‘ভলিউমেট্রিক’ মিটারে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারিত হয় না। কম গ্যাস ব্যবহার করেও তাঁরা বিল বেশি দেন। আর গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর হিসাবে তা ‘সিস্টেম গেইন’ (পদ্ধতিগত লাভ) হয়।

এ সম্পর্কে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস বিতরণের এই ব্যবস্থায় কোম্পানির লোকসান নেই। কেননা, তারা গ্যাস কম দিয়েও বিল ঠিকই পাচ্ছে। কিন্তু সিএনজি স্টেশন এবং শিল্পমালিকেরা বছরের পর বছর ধরে কেন এটা মেনে নিচ্ছেন, সেটি এক রহস্য। হয়তো বিলের বিষয়ে বিতরণ কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের কোনো বোঝাপড়া থাকতে পারে। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ, এই ব্যবস্থায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস চুরি ও অপচয় হচ্ছে।

এদিকে যেসব বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন, তাঁরা এক নতুন হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। এই হয়রানি প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জ করা নিয়ে। কারণ, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের কিছু শাখা ছাড়া প্রি-পেইড মিটারের কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ নেই। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, রাজধানীতে রিচার্জ করার জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, মিটারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকে রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • Courtesy: Prothom Alo /June 27, 2018

বাইরে সুনসান ভেতরে গড়বড়

গাজীপুরে ভোটচিত্র

সোহরাব হাসান

সকাল ৮টা ২ মিনিট। টঙ্গী বাজারের কাছে মন্নু টেক্সটাইল মিল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখি, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ভোটারদের লম্বা লাইন। বেশির ভাগ লোকের বুকে নৌকার ব্যাজ। দু-একজনের কাছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকও আছে। কিন্তু কাউকে ধানের শীষের ব্যাজ নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে দেখলাম না। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হলো। এত বড় লাইনেও একজন বিএনপি সমর্থক নেই! এরপর ব্যাজ পরেননি এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, নৌকার প্রতীক নিয়ে যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবাই নৌকার লোক নন। অনেকে নৌকা কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে এসেছেন। তাঁর এ কথার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম আরেকটি কেন্দ্রে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী দাবি করলেন, অন্য প্রতীক নিয়ে ধানের শীষে কাজ করার জন্য তিনি একজনকে বের করে দিয়েছেন।

টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে ‘ভোট উৎসব’ দেখেছি, চেহারা মোটামুটি অভিন্ন। কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রতীক নিয়ে সবাই ঘোরাফেরা করছেন। ভেতরে সুনসান। কোনো হল্লাচিল্লা নেই। ভোটাররা ভোটও দিচ্ছেন। একজন তরুণ ভোটার বের হতে হতে বললেন, ‘দুইটা সিল মাইরা আইলাম।’ একজনের দুটো সিল মারা কিংবা এলাকার ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও ভোট দেওয়া বন্ধ করতে পারেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, তাঁরাই ছিলেন অনুপস্থিত।


রাস্তার পূর্ব পারে টঙ্গী শ্রম কল্যাণকেন্দ্রে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল ছয়টি বুথের মধ্যে দুটিতে বিএনপির এজেন্ট আছেন। এজেন্টের কার্ড নিয়েছিলেন চারজন। দুজন কার্ডই নেননি। পাশের রওশন এরশাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজন বয়স্ক ভোটারকে জিজ্ঞেস করি, কোনো গোলযোগ হয়েছে কি না। তিনি বললেন, গোলযোগ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান? বললাম, মারামারি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি। তিনি বললেন, সেসব হয়নি। তবে আসল গোলযোগ হয়েছে। ভোটটা অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি।

রেনেসাঁ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখলাম টেলিফোনে আলাপ করছেন। অপর প্রান্তে কে ছিলেন জানি না। এ প্রান্ত থেকে তিনি বলছেন, ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মতো ভোট হচ্ছে।’ আরেকবার বললেন, আধা স্বচ্ছ। তাঁর কথায় রহস্য আছে মনে হলো। এই কেন্দ্রেই নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয়, যিনি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনি জানতে চান, আপনারা কী দেখলেন। বললাম, অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। তাঁর জবাব, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী এজেন্ট না দিলে তো প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কিছু করার নেই। কিন্তু কী কারণে প্রার্থী এজেন্ট দেননি বা দিতে পারেননি, সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব ইসিরই।


টঙ্গী ও গাজীপুরে যেসব কেন্দ্রে গিয়েছি, একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বলেছেন, ভালো ভোট হয়েছে। কিন্তু কেন ধানের শীষের এজেন্টরা নেই, সেই প্রশ্নের সদুত্তর তাঁরা দিতে পারেননি। বলেছেন, ছিলেন তো। হয়তো কোথাও গেছেন। একটু পরেই ফিরে আসবেন। কিন্তু বিকেল চারটা পর্যন্ত কেউ ফিরে আসেননি।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এক শ কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। গাজীপুরে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫ টি। আমরা সরেজমিনে যা দেখেছি, তাতে বিএনপি এক শ কেন্দ্রেও ঠিকমতো এজেন্ট দিতে পারেনি। তাহলে বিএনপি কি আগেভাগেই মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল?

বেলা আড়াইটায় রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডলের অফিসে তাঁর সঙ্গে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তিনি বেশ আস্থার সঙ্গে বললেন, ‘ভালো ভোট হয়েছে। দু-একটা কেন্দ্রে কিছুটা গোলযোগ হয়েছে। সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন এবং ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে আলাপ চলাকালেই সকালে ঘুরে আসা টঙ্গীর একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা টেলিফোন করে এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘আপনাদের কেউ কাছাকাছি থাকলে এখানে পাঠান। বেশ চাপে আছি।’ ততক্ষণে ব্যালটপেপারে জবরদস্তি সিল মারার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার খবর অনলাইন সংবাদপত্র ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে।

  • Courtesy: Prothom Alo/ June 27, 2018