বাইরে দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি ভোটারদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও লক্ষণীয়। কিছুক্ষণ পরপর এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে র্যাব-পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। কিছু কিছু কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পাশাপাশি। সকালের দিকে প্রায় সব কেন্দ্রে এ রকম দৃশ্যই দেখা গেছে।
দুই ঘণ্টার মতো এমন শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ চলে সেখানে। এ সময় বেশির ভাগ কেন্দ্রেই উপস্থিত ছিলেন সকল প্রার্থীর এজেন্ট। সবমিলিয়ে গাজীপুর সিটিতে সকাল থেকেই ছিল উৎসব ভাব। কিন্তু এমনটা ছিল না পুরোদিনের চিত্র। প্রতিটি কেন্দ্রের মুখে সকাল থেকেই অবস্থান নেয় নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। যাদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তারা হৈ-হুল্লোড় করছেন, ভোটারদের দাঁড় করিয়ে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নৌকা প্রতীকের ভোটার স্লিপ। নৌকার ব্যাজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন গলায়। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের এমন অবস্থানের কারণে ভয়ে কেন্দ্রে যেতে পারেনি এলাকায় বিএনপির চিহ্নিত কর্মী-সমর্থকরা।
কেন্দ্রের মুখে এমন সরব মহড়ার মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলেও সেসব দেখেও দেখেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি। বের করে দেয়া হয় ধানের শীষের এজেন্টকে। মিডিয়ার উপস্থিতিতে প্রশাসনের নীরব সহায়তায় প্রকাশ্যে সিল মারা হয় নৌকা প্রতীকে। ভোটে স্বচ্ছতা ও জালিয়াতির পরস্পরবিরোধী দুইরকম চিত্রই দেখা গেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, কেন্দ্রের মুখে আওয়ামী লীগের লোকজনের মহড়ার কারণে বিএনপির লোকজন কেন্দ্রে যেতে পারেনি। এতে ধানের শীষের ভোট কম পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দুপুরের পর একের পর এক কেন্দ্রে জালভোট দিয়ে পাল্টে দেয়া হচ্ছে ফলাফল। অন্যদিকে বিএনপির তরফে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুইজন করে বিকল্প এজেন্ট রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবতা দেখা গেছে ভিন্ন। সকাল ১০টার পর আশিভাগ কেন্দ্রেই বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই জালভোটের ব্যাপারে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের উত্তর শোনা গেছে একই- আমি কিছু জানি না, কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে টঙ্গী, গাছা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন, চান্দনা, জয়দেবপুর, সদর ও পুবাইলের অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে সরজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। মাথার উপর পূর্ণ সূর্যের গণগনে রোদ। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার বড়বাড়ি এলাকার মির্জা ইবরাহিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলে স্থাপন করা হয় দুইটি মহিলা কেন্দ্র। কেন্দ্রের বাইরে সরকার সমর্থকদের মহড়া থাকলেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। স্কুল মাঠের উত্তরপ্রান্তের ভবনে ২৪৬ নং কেন্দ্র। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আধবোজা দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন। ঠিক পাশের কক্ষে উঁকি দিতেই দেখা গেল, ভেতরে পঞ্চাশোর্ধ একজন প্রকাশ্যেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ভরছেন ব্যালটগুলো। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, একেবারে স্বাভাবিকভাবে। পরিচয় জানালেন, তার নাম আবদুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম দুলালের পোলিং এজেন্ট। কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট হয়েও মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট মারছেন কেনো? উত্তরে জানালেন, দুই প্রার্থী একই দলের। তাই জাহাঙ্গীর আলমের হয়েও কাজ করছেন। স্বীকার করলেন, কাজটি ভুল হয়েছে।
সাংবাদিকদের দেখতে পেয়ে পাশের বুথে জালভোট দেয়ায় ব্যস্ত কয়েকজন যুবক দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। এ সময় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের এসআই আসিফ এসে ধমক দিয়ে বললেন, বুথে ঢুকেছেন কেন? নারী কেন্দ্রে পুরুষ ভোটার কেন জানতে চাইলে তারা বললেন, প্রিজাইডিং অফিসার বলতে পারবেন, তার কাছে যান। অভিযোগ পেয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ এলেন ভোটকক্ষে। এ সময় বহুসংখ্যক বহিরাগত কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করেন। নির্বাচনী কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকরা আশ্রয় নিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে। একজন পোলিং এজেন্ট জানালেন, কাউন্সিলর প্রার্থী ইফতেখারুল আলম মনিরের সমর্থকরা আক্রমণ করেছে। পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বলা হলো, বাইরে নিরাপদ নয়, আপনারা এখানেই থাকুন। কয়েক মিনিট পর দেখা গেল অন্যরকম দৃশ্য। প্রতিটি বুথ থেকে বেরিয়ে এলো নৌকার ব্যাচ পরা অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবক। দুইটি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটারদের বেরিয়ে যেতে উৎসাহিত করলো পুলিশ।
পুলিশ অস্ত্র তাক করে আশেপাশের লোকজনকে সরিয়ে দিলো। তারপর বন্ধ করে দিলো কেন্দ্রের মূল গেট। বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন গেটে আঘাত করছিল। এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার কথা বলে সাংবাদিকদের প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এসময় চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে বললেন, ‘মেয়র সাহেব বলেছেন, এই কেন্দ্রটি নিয়ে নাও।’ কথাটি বলেই ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পরক্ষণে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আসিফের ফোনে একটি রিং এলো। তিনি ফোনটি প্রিজাইডিং অফিসারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়। প্রিজাইডিং অফিসার ফোনটি ধরে ওপারের প্রশ্নের জবাবে বললেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৪০০। বেলা ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৯৪৪টি। ওপার থেকে যে নির্দেশনা আসে তা পুনরাবৃত্তি করে তিনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে ১২শ’ ভোটই হবে। পরক্ষণেই সেই তরুণ-যুবকরা ঢুকে পড়ে। ৪০ মিনিট পর সাংবাদিকদের অনেকটা জোর করেই বের করে দেয়া হয়। তারপর থেকে একঘণ্টা কেন্দ্রটির ভেতরে ভোটগ্রহণ হয়েছে গেট বন্ধ অবস্থায়। বাইরে বিএনপির এজেন্ট আসলাম আলী জানালেন, পুরো বিষয়টিই একটি নাটকের অঙ্ক। প্রথমে পাশের পুরুষ কেন্দ্রটি দখল করে ভোট কাটা হয়েছে। তারপর গণ্ডগোলের কৃত্রিম উত্তেজনা তৈরি করে ভোটারদের ভাগিয়ে দিয়ে এ কেন্দ্রেও কেটে নেয়া হচ্ছে ভোট।
বিকাল তখন সাড়ে তিনটা। গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তা। ভোটগ্রহণ তখনও শেষ হয়নি। চান্দনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে তখন মহাসড়ক আটকে নৌকার মিছিল করছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কেন্দ্রে ঢুকতেই বামপাশে দেখা গেল লাইভের যন্ত্রপাতি সেট করে রেখেছে অন্তত ৫টি টেলিভিশন চ্যানেল। সেখানে নৌকার ব্যাজধারী লোকজন ও ভোটারদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন সাংবাদিকরা। নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মত্ত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের একটি মডেল নির্বাচন চলছে এ কেন্দ্রে। ভেতরে গেলে দেখা যায়, একটি বুথেও বিএনপির এজেন্টদের পাওয়া যায় না। কেন্দ্রের পুরুষ ৩-৪-৫ নম্বর বুথের সামনে কোনো ভোটার নেই। প্রতিটি বুথের দরোজায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন করে। সেদিকে এগিয়ে গেলে একজন যুবককে মোবাইলে বলতে শোনা যায়, ভাই- কাজ শেষ প্রায়। বিকাল সাড়ে তিনটায় বুথে উঁকি দিতেই দেখা যায় সামনে বাক্স রেখে অনবরত সিল মারছেন আর বাক্সে ভরছেন কয়েকজন তরুণ।
তাদের গলায় তখন ঝুলছিল জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাজ। ভোট কক্ষের জানালা দিয়ে সিলমারার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ওই সময় সেখানে উপস্থিত এক দৈনিকের সাংবাদিক। সেটা দেখে কয়েকজন তরুণ এগিয়ে এসে মারমুখো ভঙ্গিতে ধারণকৃত ভিডিও মুছে ফেলতে বলেন। এ বুথের উপর তলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবদুস সাত্তারের কক্ষ। তার কাছে যাওয়ার পথে দেখা গেল, প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পাশের কক্ষেই ব্যালট নিয়ে সিল মারছেন দুজন তরুণ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সাত্তার বললেন, তিনি কিছুই জানেন না। কেউ তার কাছে অভিযোগ করেনি। এর আগে দুপুর তখন দেড়টা। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাছার খন্দকার রজব আলী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্র। বাইরে নৌকার ব্যাজধারীদের ভিড়। কেন্দ্রে প্রবেশের পর জানা গেল, কিছুক্ষণ আগে এ কেন্দ্র থেকে এক বান্ডিল ব্যালট ছিনতাই হয়েছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সাবিউল ইসলাম জানান, ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ আলম মামুন মণ্ডলের সমর্থকরা ১০০ পাতার একটি ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়। এ কারণে ৪৫ মিনিট ভোট বন্ধ ছিল।
সব ব্যালট বাতিল করা হয়েছে। তাই ফলে প্রভাব পড়বে না। ব্যালট বই ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রের প্রতিটি বুথের সামনে তখন ভোটারদের লাইন। কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা গেল, লাইন এগোচ্ছে না। কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে উঁকি দিতেই দেখা গেল ভেতরে নৌকার ব্যাজপরা কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার বললেন, বুথের বাইরে যে লাইন দেখেছেন সেটা ভুয়া। দলের লোকজনকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভেতরে ভোট কাটা চলছে। দুপুর তখন আড়াইটা। জয়দেবপুর শহীদ স্মৃতি কলেজ কেন্দ্র। কেন্দ্রের মুখে যথারীতি মহড়া। ভেতরে একটি বুথে ঢুকতেই দেখা গেল এক ভোটার অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি অভিযোগ করলেন ব্যালটে আগে থেকেই ‘নৌকা’য় সিল দেয়া ছিল। এ সময় একজন এসে তাকে শাসিয়ে দেয়ার পর তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন।
সকাল থেকে এমন পরিস্থিতি ছিল না গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। সকালের দিকে ভোটের উৎসব দেখা গেল সালনার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার দুটি কেন্দ্রে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদেরও কেন্দ্রে পাওয়া গেল। এজেন্ট নজরুল ইসলাম বললেন, দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রে আসতে পারবেন কিনা ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রে আসতে পেরেছেন। এখন ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন কিনা সে ভয়ে আছেন। ভোটাররা জানালেন, ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বিএনপির ক্যাম্পে বসে একই কথা বললেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা সাখাওয়াত হোসেন। সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, টিঅ্যান্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাড়িয়ালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা যায়।
সকাল তখন সাড়ে আটটা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। স্কুল প্রাঙ্গণে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা তখনও হাতেগোনা। কেন্দ্রে প্রবেশ করে এক নম্বর পুরুষ বুথে ঢুকতেই বাধা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের একজন এজেন্ট পথরোধ করে বললেন, ভোট কক্ষের ভেতরে সাংবাদিক প্রবেশ নিষেধ। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান ভোটকেন্দ্রের বারান্দাতেই ছিলেন। সাংবাদিক প্রবেশে বাধা-নিষেধের কথা শুনেই এলেন। বললেন, সাংবাদিক প্রবেশে বারণ নেই। টেকনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি কেন্দ্রের সবক’টি বুথেই ভোট চললো নির্বিঘ্নে। সময় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জরুন হাফেজিয়া মাদরাসা কেন্দ্র। কেন্দ্রে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে।
তিনি একজন আনসারকে ভেতরে পাঠান। ১০ মিনিট পর অনুমতি আসে। ভেতরে যাওয়ার পর প্রিজাইডিং অফিসার প্রথমেই জানতে চান সাংবাদিকরা কে কোথায় কাজ করেন। এ সময় তার কক্ষে বসে খোশগল্প করছিলেন নামসর্বস্ব একটি পত্রিকার একজন সাংবাদিক ও কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। প্রিজাইডিং অফিসার বললেন, ভোট বেশ শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। তিনি কোনো বুথের দিকে যেতে অনুমতি দিলেন না। অন্যদিকে দুপুর তখন দুইটা। নাইজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হলেও নারী ও পুরুষ দুইটি কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয়েছে শান্তিপূর্ণ। ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছে ধানের শীষের লোকজন দেখা না গেলেও উপস্থিত ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা। বিকাল ৩টা তখন। কোনাবাড়ি এমইএইচ আরিফ কলেজ কেন্দ্র। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। কেন্দ্রের ১ ও ২ নম্বর বুথ মিলিয়ে পৌনে আটশ’ ভোটের মধ্যে বিকাল তিনটা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে মাত্র সাড়ে তিনশ’ ভোট।
- Courtesy: Manabzamin/ June 27, 2018