সৈয়দ কবির হুসেন
পয়লা জুলাইয়ে ডেইলি স্টারের বাংলা সংস্করণে সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা ‘রক্তাক্ত কোটা সংস্কার, বন্ধকী বিবেক’ শিরোণামে দেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে অালোচনা করেছেন। তাঁর অালোচনা থেকে অতিকথার প্যান্ডোরার বাক্স থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে একটি বিষয় অতি পরিষ্কার অামাদের সমাজে বিবেক গ্যাংগ্রিণ বা পচনে অাক্রান্ত হয়েছে।
অামরা ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রশংসায় এক কালে পঞ্চমুখ হয়েছি। চাষাভুষোর সন্তানরা মানুষ হয়েছে বলে মনে হয়েছিল। কিন্ত হায়, কাকস্য পরিবেদনং একটি ন্যায্য দাবি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ অান্দোলনে নেতাদের চরম বর্বতার শিকার হতে হয়েছে। তারা বুঝতে পারছেন না, তাদের অাদৌ নিরাপত্তা অাছে কিনা? বর্বরতা চালিয়েছে অাইনশৃংখলা বাহিনী। ভিসির বাড়ি অাক্রান্ত হয়েছে মধ্যরাতে যার কোনো কারণই নেই, এর একমাত্রে কারণ ছিল ন্যায়ভিত্তিক অান্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। বর্বরতা চালিয়েছে ‘সোনার ছেলেরা’। অথচ এই অান্দোলনের গোড়ায় এই ছেলেদের হ্যাভ নটসরাও ছিল। ভিসি বলেছেন, কোটা নিয়ে অামার কি করার অাছে? অাসলে তার কিছুই করার ছিল না। কথাটা যথার্থ। কিন্ত অামরা দেখছি শিক্ষক বিবেক কীসের নেশায় কতোটা জঘণ্যভাবে পচে যেতে পারে।কেন যি সম্মানিত ভিসি বললেন তিনি এ অান্দেলনে কারও খালু নন। কিন্ত তার গুণধর পুত্র রত্ন সমর্থন জানিয়ে দিলেন কোটা অান্দোলনের বিরুদ্ধে। কেন?
এর জবাব দিয়েছেন গোলাম মোর্তোজা। তিনি বলেছেন যে সব পুত্রকন্যাদের ‘দামি গাড়ি অাছে, যারা ২০ হাজার ডলার মূল্যের ঘড়ি পরেন, গাড়ির নিছে নিরীহ মানুষ পিষে মারেন তাদের কাছে কাঠমিস্ত্রীর ছেলে নুরুলের ন্যায়ের কথা বলা নিৎসন্দেহে অপরাধ। এ অপরাধের এক সাম্প্রতিক নিদর্শন হলো এমপি নন্দনের কীর্তি। যদিও তাঁর মা বলছেন, ঘটনা তাঁর ছেলে ঘটায়নি। ঘটিয়েছে ‘সেই কেষ্টা’ গাড়ির ড্রাইভার।সংবাদপত্রে বড়ো হেডিং বলছে, ছেলে মেরেছে পথচারী এক ড্রাইভারকে। এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বলছেন, ‘অাপনারা জানেন, এক্সিডেন্ট অাইনে কি হয়? অাপনাদের যুগান্তর কী বোঝে?’ ব্যাপারটা হয়তো ঠিকই কেননা হাজার হোক তিনি তো একজন লেজিসলেটর, অাইনের বিধায়ক? তিনি ছাড়া অাসলেই অার কারও বোঝার নেই।
এখন অাসুন অামরা দেখি, মাননীয় এমপি নিয়ে কী তথ্য অামাদের হাতে অাছে। তিনি নিহত সেলিম বেপারির বিষয়ে সেলিমের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা বলে নিজে বা তার কোনও অাত্মীয় কেউ না এলেও তাঁর পক্ষের কিছু লোকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। সে টাকা বেপারির স্ত্রী চায়নার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে , বলা হয়েছে মাসে অারও ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
ধরি মাছ না ছুঁই পানি। দেশে কি অাইন বলবৎ তিনি যথার্থই জানেন। জানেন বলেই তাঁর কেউ রফা অালোচনায় অাসেননি। তাঁর স্ত্রী বলেছেন, তাঁর ছেলে শাবাব চৌধুরী ঐ গাড়ি নিজে চালাচ্ছিলেন না। ড্রাইভার চালাচ্ছিল। যদি ড্রাইভার চালিয়ে থাকে তাহলে সে একজন ড্রাইভার সে অার যাই হোক গড়ির প্রায় নিচে চলে যাওয়া এক পথচারীকে গাড়ি ব্যাকগিয়ারে নিয়ে অাবার সামনে এসে তাঁর প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে ফ্লাইওভারে বেপারির শরীরটাকে এমন নিষ্ঠুরাতায় চূর্ণ করে মাথার ঘিলু বের করে দিয়ে মারতে পারেন না। অার সেটা স্পষ্টত ডেলিভারেট হোমিসাইড। সম্ভবত সেটা একজন ক্ষমতায় মদমত্ত মাতালের কাণ্ড। যুক্তিহিসেবে যদি ধরেও নেওয়া যায়, শাবাবকে নিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে গাড়ি চালিয়ে ন্যাম ভবনে পৌছে দিয়েছে গাড়ির ড্রাইভার প্রভুতনয়কে তাহলে শাবাব থানায় ঘটনা রিপোর্ট না করে উল্টে কেমন করে তার গাড়ি ধাওয়া করা যু্বকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন? কাফরুল থানায় এজাহার নিয়েছে পুলিশ এমপি মহোদয়ের অাইনের কথা মেন রেখে। অাইন কেবল ধনীদের জন্য। অার সে কারণেই কোটা অান্দোলনের নেতা নির্যাতিত গরিব সন্তানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাটি পর্যন্ত নিতে না দিয়ে সেখান থেকে পুলিশ মধ্যরাতে বের করে দিয়েছে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে। ক্রন্দরনরত নুরুল জানিয়েছে সাংবাদিকদেরকে। এ হলো কোটা অান্দোলনের সর্বশেষ পরিণতি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই কিন্ত ক্ষমতার রোষে পড়লে চিকিৎসাও কেউ পেতে পারবে না। এই হলো দেশের ব্যবহারিক অাইন। আর এই অাইন প্রণয়নের জন্য জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী এমপিরা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে কত কোটি নিয়ে কতো পাই দিয়েছেন তার হিসেব দালিলিকভাবে প্রমানিত হয়েছে।
গোলাম মোর্তোজা বলেছেন কোটা অান্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধূর ছবি বুকে ধারণ করে ন্যায়্যতা প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি ধারণ করার পরও রাজাকার বা জামায়াত বদরের বাচ্চা হওয়া যে যায় সে কথা প্রমাণিত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের বাকচাতুর্যে। সত্যিই তো রেড ফ্লাাগ ফর রেড ফ্ল্যাগ বলে তো কথা অাছে। কিন্তু নিরেট সত্যি হলো তেমন প্রমাণ পওয়া যাযনি বরং অান্দোলনকারীদের কিছুকে চাকরি দিলেই তো অাগুণে পানি পড়ার কথা। নমরুদ যদি নিজে নাকে ঢোকা মশার বিরুদ্ধে লড়তে চায় সে স্বাধীনতা তার অাছে। ড. অাকবর অালি খান একবার উপায় না দেখে বলেছিলেন , অামি একজন মুক্তিযোদ্ধা। অামি কাউকে ভয় করি না। অামরাও চাই ভয়কে জয় করতে হবে। শিক্ষক সমাজ অাসলে ভয়ে কুঁকড়ে অাছেন। জানেন তাঁরা যথার্থ বলছেন না। চিত্তের দ্বিধা কাটাতেই হবে। হতে হবে —