Search

Sunday, July 8, 2018

নিরাপত্তাহীনতায় আন্দোলনকারীরা

  • প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা 
  • নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আন্দোলনকারীরা
  • সপ্তাহজুড়েই হামলা চলেছে



কোটা সংস্কার নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মুক্তি চেয়েছেন হামলা-মামলা-নির্যাতন থেকে। গতকাল শনিবার সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের একজন নেতা তাঁদের দাবি-দফা উত্থাপনের পাশাপাশি কতটা নিরাপত্তাহীনতায় তাঁরা ভুগছেন সেই বর্ণনা দেন।

গত শনিবার কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিল। ছাত্রলীগের হামলায় সেই সম্মেলনটি হতে পারেনি। পুরো সপ্তাহজুড়েই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর গতকালই প্রথম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করল।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাবা-মা ও স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র রাশেদের রাজমিস্ত্রি বাবা নবাই বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ফোনে রাশেদকে গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তাঁকে গালমন্দ করেছেন ‘কুলাঙ্গার’ ছেলে জন্ম দেওয়ার জন্য।

কর্মসূচি আহ্বানের এত দিন পর সংবাদ সম্মেলনের কারণ জানতে চাইলে, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র আতাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছি না। আমাদের নেতাদের প্রায় সবাই হয় কারাগারে, না হয় নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে। আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। এখনো গায়ে জ্বর। আমি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হলের আবাসিক ছাত্র। হলে ফিরতে পারছি না। জানি না সংবাদ সম্মেলন শেষে আমি যে জায়গা থেকে আজ এসেছি, সেখানে ফিরতে পারব কি না।’

আতাউল্লাহ জানান, গত ৩০ জুন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে ও পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে অনেককে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কারও কারও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বের করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওপরের নির্দেশে তাঁদের রাখা যাচ্ছে না। বেসরকারি একটি হাসপাতালও যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক ওরফে নুরুকে মাঝরাতে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে বের করে দিয়েছে। 

মাহফুজ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নারীদের ওপর হামলা হয়েছে। থানায় ২৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুচলেকা দিয়ে একজন ছাত্রী বেরিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগ নেতা কারাগারে, নয়তো নির্যাতন ও মামলার বিড়ম্বনা এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের ফেসবুক পেজটি পর্যন্ত হ্যাক হয়ে গেছে। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সরকারের উদ্দেশে আতাউল্লাহ বলেন, ‘আপনারা আমাদের ওপর যে নির্যাতন ও হামলা চালাচ্ছেন তা থেকে মুক্তি দিন।’ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ ও হামলায় আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার উদ্যোগ নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আতাউল্লাহর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল আন্দোলনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, অর্থায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। জবাবে তিনি বলেন, ‘১৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি। কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব। প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আন্দোলন চলবে।’ অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিকাশ ও রকেটের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে এই আন্দোলনের জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছিল। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের কেউ ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, কেউ সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠিয়েছেন।

আতাউল্লাহ বলেন, তাঁরা কখনো কোটা বাতিল হোক তা চাননি। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের কথা একবারও বলেননি। তাঁরা শুধু যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছেন। 

রাশেদের শর্তহীন মুক্তি ও নিরাপত্তা দাবি

গতকালকের সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খানের বাবা নবাই বিশ্বাস, মা সালেহা বেগম, স্ত্রী রাবেয়া আলো উপস্থিত ছিলেন। নবাই বিশ্বাস বলেন, রাশেদকে গ্রেপ্তারের আগের দিন ঝিনাইদহ ছাত্রলীগের সভাপতি রানা কয়েকজনকে তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে তাঁর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহের জন্য পাঠান। পরে তাঁকে ফোন করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। সাইফুর তাঁকে বলেন, ‘আপনি কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছেন, সে তো একটা কুলাঙ্গার। ছেলেকে এসব থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন, না হলে গুম করে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, এখন তাঁকে বলা হচ্ছে তিনি রাজাকার, জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ছয় মাস। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে কোনোমতে চলেন।

রাশেদের মা সালেহা বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে আমার মণি কিছুই বলেনি। সে শুধু চাকরির জন্য দাবি করেছিল।’ রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, রাশেদ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আন্দোলনে যাননি। সবার জন্য গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এখন এমন যে আর সবাই সুবিধা পেলেও রাশেদ পাবেন না। তাঁকে শর্তহীনভাবে দ্রুত মুক্তি ও নিরাপত্তা দেওয়া হোক। রিমান্ডে নেওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত তাঁরা রাশেদের কোনো খোঁজখবর পাননি বলে জানান তিনি।

এদিকে নবাই বিশ্বাসের এমন অভিযোগের পর সাইফুর রহমান সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন বাপ হয়ে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে? তার সঙ্গে কোনো দিন আমার কথাই হয়নি। হুমকি দেওয়া তো দূরে থাক।’ 

কারাগারে তারেক আদনান, মাহফুজ কোথায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র তারেক আদনান ২ জুলাই রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তারেকের বাবা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিউমার্কেট, শাহবাগ ও রমনা থানা ঘুরেও তিনি ছেলেকে পাননি। পরে জানতে পারেন ছেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তারেক আদনান এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছেলে যুক্ত ছিল এ কথা তিনি জানতেন। এর বাইরে তাঁর ছেলের অন্য কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ৯ জুলাই থেকে তারেকের পরীক্ষা শুরু। যেকোনো মূল্যে ছেলের মুক্তি চান শফিকুল ইসলাম।

তারেকের খোঁজ পাওয়া গেলেও মাহফুজ এখন কোথায় সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি সাত দিন পরও। রোববার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয় দিয়ে একই মোটরসাইকেলে রাশেদ ও মাহফুজকে মিরপুরের ভাষানটেক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাশেদ খানের স্ত্রী রাবেয়া আলো। তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন মাহফুজ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। সকাল থেকেই একজন লোক তাঁদের বাসার আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। এ কথা জানলে রাশেদ ভয় পেয়ে যান এবং কাছেই একটি বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে রাশেদ ও মাহফুজকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনেন কয়েকজন লোক। পরে একটি মোটরসাইকেলে করে দুজনকেই হাতকড়া দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পু‌লি‌শের উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান ব‌লেন, ডি‌বি রা‌শেদ খাঁন, ফাইজুর ও আতিক নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শাহবাগ থানা পু‌লিশ গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে নয়জনকে। মাহফুজ‌কে পু‌লিশ গ্রেপ্তার করে‌নি। 

ঢাকার বাইরে কর্মসূচি অব্যাহত

ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, হামলা এবং নারীদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। ‘সকল সাধারণ শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম’-এর ব্যানারে হওয়া এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রার্থীরা অংশ নেন। হামলার আশঙ্কায় তাঁরা ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাঁদের কর্মসূচি শেষ করেন।

এদিকে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন। ছাত্রলীগের হামলার দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেন।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় জুবায়ের হোসেন (২২) নামে এক যুবককে পুলিশ কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়া ও নাশকতার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সকালে রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজার কামাল টেলিকম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বিকেলে রায়পুর থানার উপপরিদর্শক মোতাহের হোসেন বাদী হয়ে থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ৮, ২০১৮ 

একদল অবিবেচকের কাহিনী

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

গত কয়েক দিনে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একদল অবিবেচকের অমানবিক কর্মকাণ্ড দেখলাম। তারা নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ওপর যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা নিয়ে হামলা চালাল, তার নজির শুধু তারাই। এর আগে গত এপ্রিলে এই ছাত্রদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছিল। শুধু তারাই নয়, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। খুব কাছে থেকে পুলিশের টিয়ার শেলে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিক। 

সে আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নয়টি কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্রুত পরীক্ষা নেয়া। এর সাথে রাজনীতি ছিল না। অন্য কারো সাথে তাদের বিরোধও ছিল না। এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, একজন শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে চাইবে, প্রবেশ করতে চাইবে কর্মজীবনে। কিন্তু ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাদের যেভাবে মারধর করল সেটা কল্পনার অতীত ছিল। কিন্তু আমরা কল্পনা করতে পারি বা না পারি, বাংলাদেশ এখন এমনি মগের মুল্লুক।

গত প্রায় তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীরা একটি নতুন আন্দোলন করছে। সে আন্দোলন হলো কোটা সংস্কার। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ চাকরি দেয়া হয় কোটার ভিত্তিতে। ফলে মেধাবীরা ক্রমেই চাকরি জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ছে। 


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল এই ৫৬ শতাংশ কমিয়ে এনে তাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হোক। সে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং সমাজের সচেতন লোক। কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। সরকার কোটা সংস্কারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জারিই রেখেছিল। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। শত নির্যাতন সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছে। সে আন্দোলন শুধু ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছিল না, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ছাত্রদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছিল। তাতে তারা মোটেও দমে যায়নি। কোটা সংস্কারের দাবি অব্যাহত থাকে। এরই একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন যে, কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। যদিও সেটা আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের দাবি ছিল না। তাদের দাবি ছিল সংস্কার। কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্ধতি বাতিল করাই ভালো।

কারণ কোটা থাকলে তা বাড়ানো বা কমানোর জন্য আবার আন্দোলন শুরু হবে। সুতরাং কোটা বাদ। এতে ছাত্রসমাজের মধ্যে একধরনের স্বস্তি নেমে এসেছিল; কিন্তু তাদের বক্তব্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আইন নয়। আইনের জন্য অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সঙ্কটের শুরু হয় সেখান থেকেই। প্রধানমন্ত্রী তো ঘোষণা দিলেন। 


কিন্তু নৌ-পরিবহনমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জোর গলায় চেঁচিয়ে বলতে থাকলেন- কোটা বাতিল করা চলবে না। প্রধানমন্ত্রীর কোনো ঘোষণার বিরুদ্ধে এর আগে আমরা কারো মুখে কোনো কথা শুনিনি। কিন্তু এবারই প্রথম সে ধরনের কথা শুনতে পেলাম। এ নিয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নিজেও আর কোনো বক্তব্য দেননি। পরে তিনি নিজের কথা ঘুরিয়ে বললেন যে, এর জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন, কিভাবে কি করা যায়। অথচ এ রকম তো কথা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি না থাকারই কথা ছিল। তাহলে প্রতিবন্ধী বা সমাজের সুযোগবঞ্চিতদের চাকরি-বাকরির কী হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু বিশেষ ব্যবস্থার অপশনটি রইল, তাহলে কথা তো সেখানে শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কথা রাখেননি। তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা তুললেন।

ইতোমধ্যে ছাত্রসমাজ আবার সমাবেশের ডাক দিলো। এর মধ্যে গত ৩০ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সে সম্মেলন শুরু হওয়ার প্রায় সাথে সাথে ছাত্রলীগের কয়েক শ’ কর্মী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর তাদের বেধড়ক মারধর করে। এমনকি পরে তারা খুঁজে খুঁজে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে বহু সংখ্যক ছাত্রের ওপর চড়াও হয়। এ রকম পৈশাচিক কাণ্ড ছাত্রলীগ নানা কারণে আগেও ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে সেসব হামলার বিস্তারিত সচিত্র বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। 

একজন আন্দোলনকারীর ওপর ১০-২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী কিল-ঘুসি লাথি দিয়ে আহত করেছে। আর আহত শিক্ষার্থীদের পরে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। তাকে আটক করার আগ মুহূর্তে এক ফেসবুক ভিডিও বার্তায় ভীত রাশেদ আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমাকে বাঁচান, আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধাওয়া দিয়েছে ডিবি পুলিশ। ভিডিওটি শেয়ার করুন।’ কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে আটক করে। কিন্তু যারা এই বর্বর হামলা চালাল, সেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

৩ জুলাই ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ যে পৈশাচিক বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা আন্দোলনকারীরা সমবেত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের একজনকে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা মাথা থেঁতলে দিয়েছে। হাতপায়ে কিল ঘুসি লাথি মেরেছে, যেন তাদের ধুলায় মিশিয়ে দিতে চায়। রক্তাক্ত ওই আন্দোলনকারীর অবস্থা করুণ। তার উঠে দাঁড়ানোর কোনো অবস্থা ছিল না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে আরো মারাত্মক ঘটনা। একজন ছাত্রকে ১০-১২ জন ছাত্রলীগ লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেছে। একজন ছাত্রলীগ সদস্য তার মাথা হাত পিঠে অবিরাম হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। তার পুরো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ শুধু ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে তা নয়, তারা ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালিয়ে নির্লজ্জ বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে এবং আশ্চর্যের ঘটনা এই যে, যারা এ রকম পৈশাচিক বর্বরতার ঘটনা ঘটাল, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ঢাকার শহীদ মিনারে সে দিন যখন আন্দোলনকারীদের ওইভাবে পিষে মারার চেষ্টা করছিল, তখন পুলিশ তাদের বাধা তো দেয়ইনি, বরং নীরবে সে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ এসেছে পরে। এসে আহত মৃত্যুপথযাত্রী ছাত্রটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের মামলা দেয়া হয়েছে।


এ দেশে এ ঘটনা নতুন নয়। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে আমরা আইয়ুব খানের ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশনের (এনএসএফ) কীর্তিকলাপ দেখেছি। তারাও ছাত্র সমাজের ওপর এভাবে চড়াও হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ যে নির্যাতন করল তাতে এনএসএফের নির্যাতন ম্লান হয়ে গেছে। এটা কাক্সিক্ষত ছিল না। তবে ছাত্রলীগের এই পৈশাচিকতার ঘটনা নতুন নয়। তারা বহু আগেই এনএসএফকে হার মানিয়ে দিয়েছে। এনএসএফ যত না পিষে মারতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি চেয়েছে ভয় দেখাতে। ছাত্রলীগ ভিন্ন মতাবলম্বীদের পিষে মেরে ফেলারই চেষ্টা করেছে। 

অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে তারা এনএসএফকেও হার মানিয়েছে। পেছনে সরকার আছে, পুলিশ বাহিনী আছে- সেই জোরে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে। কিন্তু এসব জোর শেষ পর্যন্ত থাকে না। আমরা এনএসএফের ষণ্ডাদের রাস্তাঘাটে মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানকালে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটা সময় আসবে যখন হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজেও কোনো ছাত্রলীগ পাওয়া যাবে না। এ রকম অবস্থা আমরা ১৯৭৫ সালেও একবার দেখেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের পতনের পর গাঁঠরি বোঁচকা নিয়ে ছাত্রলীগারদের হলগুলো থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাতে দেখেছি। তার আগের দিনও যারা ছাত্রলীগের প্রতাপশালী মাস্তান ছিল পরদিন আর তাদের হলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিহাসের সাক্ষ্য এমনই। সরকার বা ছাত্রলীগ ক্ষমতার দম্ভে এখন কেউই অনুমান করতে পারছে না যে, তাদের পরিণতি কী হতে পারে। ক্ষমতা অনন্তকালের নয়। একসময় ক্ষমতা চলে যায়। তখন গাঁঠরি বোঁচকা নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে হয়। তখন যদি এই সাধারণ ছাত্ররা তাদের ধাওয়া করে এবং তাদের পরিণতি যদি আজকের নির্যাতিত ছাত্রদের মতো হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না।


সামান্য একটু উদাহরণ দিচ্ছি। ২ তারিখেই আমরা দেখেছি, ছাত্রলীগের এই পৈশাচিকতা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে মানববন্ধন করেছে। সিলেটেও সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। রাজশাহীতেও বের করা হয়েছে মশাল মিছিল। আর তিন তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সুতরাং হলফ করেই বলা যায়, সামনে ছাত্রলীগের জন্য বড় দুর্দিন অপেক্ষা করছে।

এবার খানিকটা আত্মসমালোচনা করা যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কিংবা তারও আগে থেকেই এ দেশের সংবাদপত্রগুলো সব সময় নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পক্ষে দাঁড়িয়েছে নায্যতার, তার জন্য সংবাদপত্রগুলোর ওপর দলনপীড়ন কম হয়নি। কিন্তু সত্য প্রকাশের নীতিতে সংবাদপত্রের সম্পাদক-প্রকাশকেরা অবিচল ছিলেন। তখন টেলিভিশন ছিল না। এত সব স্যাটেলাইট চ্যানেলও ছিল না। এখন সংবাদপত্র আছে, বহুসংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল আছে। কিন্তু সরকারের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য কোনো মিডিয়াই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে, তারা যথাযথভাবে আন্দোলনকারীদের সপক্ষে দাঁড়িয়েছে। স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর বিপদ অনেক বেশি। তাদের ওপর হুমকির খড়গ সব সময় জারি রয়েছে। সরাসরি সম্প্রচার কিংবা সরকারের পছন্দ নয় এমন খবর প্রচারের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি আমি। যে দেয় সে নিতেও পারে’। এর চেয়ে স্পষ্ট হুমকি আর কিছুই হতে পারে না। ফলে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে তাদের ওপর নির্যাতনের খবর অতি সামান্যই প্রকাশ হয়েছে।

কেননা ইতোপূর্বে সরকার চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে ওঠেনি। ফলে এ যাত্রায় টিভি চ্যানেলগুলোতে আমরা ছাত্রলীগের বর্বরতার চিত্র দেখতে পাইনি। কিন্তু সত্য চাপা থাকে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে বর্বরতার ভিডিওচিত্র প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশ হয়েছে স্থিরচিত্রও। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ দেখেছে, নব্য স্বৈরাচারী কায়দায় সরকার বাংলাদেশে কী কাণ্ড করছে।

সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদপত্র ছাড়া বেশির ভাগ সংবাদপত্রই যেন এত বড় ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সংবাদপত্রের মালিকদের বেশির ভাগ সরকার সমর্থক। ফলে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকে, আর অনেকেই বিরত থাকে ভয়ে। তাই দেখা যায়, দু-চারটি সংবাদপত্র ছাত্রলীগের পৈশাচিক বর্বরতার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৯৭২-১৯৭৫ সালেও সংবাদপত্রের ওপর এমন দলনপীড়ন চলেছিল, কিন্তু তখন প্রতিবাদ ছিল। সাংবাদিকদের সংগঠন ডিইউজে-বিএফইউজে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। পত্রিকায় লিখেও তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দাবি করেছে। কিন্তু সরকার একের পর এক কালাকানুন জারি করে গেছে। আজ সবাই নিশ্চুপ। বিভক্ত সমাজের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ কোনো পদক্ষেপ নেই। কিন্তু আজ আমরা যে দাসত্ব মেনে নিচ্ছি রুখে না দাঁড়ালে আগামীতেও একই রকম দাসত্ব করে যেতে হবে।

জার্মান নৌবাহিনীর দুর্র্ধর্ষ সাবমেরিন অধিনায়ক ছিলেন নায়মোলার। পরে চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন এবং হিটলারের নাৎসিদের হাতে কারারুদ্ধ হন। জার্মান জাতি নিষ্ক্রিয় ছিল বলেই হিটলার তাদের স্তব্ধ করে দিতে এবং নাৎসি শাসন চালু করতে পেরেছিলেন। 

ব্যাপারটাকে নায়মোলার বর্ণনা করেছেন এভাবে :
‘প্রথমে ওরা এলো কমিউনিস্টদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি/কেননা আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না।/এরপর এরা সোস্যালিস্টদের ধরতে এসেছিল, আমি প্রতিবাদ করিনি/কারণ আমি সোস্যালিস্ট ছিলাম না।/এরপর এরা এলো ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি,/কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না।/এরপর এরা এলো ইহুদিদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি,/কারণ আমি ইহুদি ছিলাম না।/সবশেষ ওরা আমাকে ধরতে এলো/তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না।’ তেমন পরিস্থিতি কাম্যকারো কাছে কাম্য হতে পারে না।


  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ৮,২০১৮

নির্বাচন কমিশন এখন সরকারের দাস - মাহমুদুর রহমান

অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান বর্তমান সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না ব‌লে মন্তব্য ক‌রে‌ছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আর এজন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য নিজ নিজ এলাকায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন তিনি। 

মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশন তো এখন সরকারের দাস। খুলনায় যে নির্বাচন হয়েছে তার ফলাফল দেখেছেন। মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়ে চলে যায়! বোঝেন তাহলে কি রকম নির্বাচন হয়েছে? গাজীপুরে কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন।

শ‌নিবার, ৭ জুলাই, জাতীয় প্রেসক্লাবে “নতুন রাজনৈতিক দল, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিকাশে নির্বাচন কমিশন ও সরকারই প্রধান বাধা” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তি‌নি এসব কথা ব‌লেন।

মান্না বলেন, ‘সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কালো আইন ৯০ বি ধারা বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। বর্তমান অবৈধ সরকারের আইন আমরা মানি না।’ 

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের আইন নেই। ৯০ বি ধারা বাতিল হওয়া প্রয়োজন। আমি আপনাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’ ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী দ্বারা সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান সরকার কোনও রাজনৈতিক দল যাতে গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য যত ধরনের আইন করা দরকার তা করবে। নির্বাচনের পূর্বে ভোটারের অগ্রীম স্বাক্ষর প্রমাণ করে কোনও দল বা ব্যক্তি যাতে করে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারে। উক্ত স্বাক্ষর সংবিধান পরিপন্থি।’ 

বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধপূর্ব নির্বাচিত ও স্বাধীনতাযুদ্ধে মূল নেতৃত্বদানকারী দলটিই স্বাধীন রাষ্ট্রে সরকার গঠন করার পর প্রহসনমূলক নির্বাচনের পর একটি সংসদ এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিয়েছে। ৭৫’র পরবর্তীকালে কাগজে-কলমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা চালু হল বটে, কিন্তু সরকার বিরোধী দল ও মতকে সহজভাবে গ্রহণ করা হল না এবং প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থাও অব্যাহত থাকল।

বক্তারা আরও বলেন, রাজনীতির প্রতি বিতশ্রদ্ধ ১/১১’র সেনা সমর্থিত অরাজনৈতিক সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থান নিয়ে প্রথমদিকে জনগণের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল। কিন্তু তাদের মাথায় ক্ষমতায় স্থায়ী হওয়ার সাধ জেগে ওঠায় তারা দুই নেত্রীকে দেশান্তরী করার মাধ্যমে মাইনাস-টু ফর্মুলা কার্যকরের দূরভিসন্ধিমূলক প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করে। এতে দুই নেত্রীর প্রতি গড়ে উঠা গণঅসন্তোষ গণসহমর্মিতায় রূপ নেয়।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডাকসু’র সাবেক জি.এস ও বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মুস্তাক হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক,লেখক ও কলামিস্ট ড. ইসা মোহাম্মদ, সাবেক এম.পি, এড. তাসমিন রানা, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলনের সভাপতি খাজা মহিব উল্লাহ শান্তিপুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান এড. কাজী রেজাউল হোসেন, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ডা. গোলাম মোর্শেদ হাওলাদার ও রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান আবু হানিফ হৃদয় প্রমুখ।

  • কার্টসিঃ ব্রে‌কিং‌নিউজ বিডি/ জুলাই ৮,২০১৮ 

নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ১২ ব্যাংক

বাড়ছে খেলাপি ঋণ


ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণ বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। গত মার্চ শেষে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বড় ধরনের নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে পড়েছে। এর মধ্যে ৮টি বেসরকারি খাতের ব্যাংক। সব মিলিয়ে পুরো ব্যাংক খাতে এখন সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতেই এ ঘাটতি ছিল প্রকট। এখন তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকও।

বেসরকারি খাতের যেসব ব্যাংকে সঞ্চিতির ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো হলো সোস্যাল ইসলামী, এবি, ন্যাশনাল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, আইএফআইসি, প্রিমিয়ার ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আগে থেকেই এ তালিকায় রয়েছে। আর সঞ্চিতির ঘাটতি থাকা অপর তিন ব্যাংক হলো রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, বেসিক, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চভিত্তিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি, বেসরকারি, বিদেশিসহ সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে, সেগুলোর গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে আলাদা হিসাবে জমা রাখতে হয়। কোনো ঋণ শেষ পর্যন্ত মন্দ ঋণে পরিণত হলে তাতে যেন ব্যাংক আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য এ নিরাপত্তা সঞ্চিতির বিধান রাখা হয়েছে। ঋণের মান অনুযায়ী খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ সঞ্চিতিরও বিধান রয়েছে। ব্যাংকগুলো সঞ্চিতি রাখতে না পারায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সুবিধা দিয়ে তিন বছরে তা সংরক্ষণের অনুমতি দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সূচকে। পরিচালকেরাই ব্যাংকগুলো খারাপ করেছেন। তাই ব্যাংকগুলোকে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

গত মার্চ শেষে সরকারি-বেসরকারি মোট ১২টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি সোনালী ব্যাংকের। মার্চ শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সর্ববৃহৎ এ ব্যাংকের সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। এরপরই বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৩০৭ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২৬৮ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৯ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি ১৫৫ কোটি টাকা। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম ও পাচারের কারণে ব্যাংকটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া বড় গ্রাহকদের ঋণও নিয়মিত ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংকটি। ফলে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতিও রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ২০০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটির সংকটাবস্থা কাটাতে মালিকানার পরিবর্তন হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। আর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের পর সংকটে পড়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটির সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের ঘাটতি ২৯ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১১৪ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৪০ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১১৯ কোটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৬৭ কোটি টাকা।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ায় চাহিদামতো সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা যায়নি। এ জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ সুযোগ নিয়েছি। পরের দুই বছর এসব সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা হবে।’

এদিকে সরকারের মেয়াদ যত ঘনিয়ে আসছে, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। কারণ, অনেক প্রভাবশালী ঋণ নিয়ে সময়মতো কিস্তি শোধ করছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দিনকে দিন শুধুই বাড়ছে। আর ঋণের টাকা ফেরত না আসায় ব্যাংকগুলো পড়েছে অর্থসংকটে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ সময়ে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। আর ২০১৭ সালের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের সঙ্গে ৪৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকার অবলোপন যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/জুলাই ৮,২০১৮ 

‘আজকে আমার ছেলে, কালকে আপনার ছেলে... এভাবেই দেশটা চলবে’


কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত নুরুল হকের বাবা ইদরিস হাওলাদার বলেছেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে তার ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটানো হয়েছে। ছেলের ওপর হামলা হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে আমার ছেলে, কালকে আপনার ছেলে, পরশু দিন তার ছেলে-- এভাবেই দেশটা চলবে। আমরা মরে যাবো তারাই বেঁচে থাকবে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে এভাবেই নিজের ছেলের কথা বলছিলেন নুরুলের বাবা ইদরিস হাওলাদার। এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

হামলাকারীদের বিচার ও গ্রেপ্তার ছাত্রনেতাদের মুক্তি দাবি করে সমাবেশে বক্তব্য দেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

পেশায় কৃষক ইদরিস বলেন, ছেলের ওপর হামলার খবর পেয়ে পটুয়াখালী থেকে তিনি ঢাকায় এসেছেন। জমি বিক্রি করে ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি করিয়েছেন। আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ডিবি পুলিশ নুরুকে তুলে নিয়ে যায়। এক ঘণ্টা পরে তারা তাকে ছেড়ে দেয়। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে পেটানো হয়েছে। তার সারা শরীরে এত ব্যথা যে নিজে উঠেও দাঁড়াতে পারছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এখন গাজীপুরে একটি হাসপাতালে নুরুলের চিকিৎসা চলছে বলে তিনি জানান। ছেলের চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন।

গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সকাল ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। 

এসময় সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হককে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ রয়েছে। পরে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান থেকেও তাকে মধ্যরাতে বের করে দেওয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
  • কার্টসিঃ The Daily Star/ jul 7,2018 

আটকে গেল শিক্ষা আইনের খসড়া

ফের আটকে গেল শিক্ষা আইনের খসড়া। খসড়াটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১২ ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এখন নতুন করে খসড়া তৈরি করতে ১০ই জুলাই মঙ্গলবার সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়ায় বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি ও বিদ্যমান কয়েকটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা থাকায় ফেরত পাঠানো হয়। শিক্ষায় বিদ্যমান সব আইনগুলোকে একত্র  করে একটি আমব্রেলা আইন (এক ছাতার নিচে সব) করে খসড়া তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য, বৈপরীত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় আবারো এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফলে বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা আইন আলোর মুখ দেখছে না। মূলত খসড়া প্রণয়নে দূরদর্শিতার অভাব, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের ধারা বিবেচনায় না নেয়া, শিক্ষাবিদদের মতামত উপেক্ষা করা ও খসড়া প্রণয়নকারীদের গাফিলতির কারণেই ছয় বছরের বেশি সময়েও শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আইন হবে না এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রিপরিষদ থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তা সংযোজন-বিয়োজন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা আইন না থাকলেও সবকিছু তো একটা আইনের মধ্য দিয়েই চলছে। আইন করতে গিয়ে এসব বিষয় সামনে এসেছে। তাই সব আইনকে একত্র করে একটা আমব্রেলা আইন করা হবে। সেজন্য সব পক্ষকে ডাকা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইন, ১৯৯০ রয়েছে। নতুন করে আইন করতে হলে এ আইন রহিত বা এ আইনের মধ্যে ঢুকাতে হবে। কিন্তু খসড়া বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইনের কিছু ধারা শিক্ষা আইনে রাখা হয়েছে আবার কিছু বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। 

এছাড়াও নোট ও গাইড নিষিদ্ধকরণ এবং পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন থাকা সত্ত্বেও এগুলোর শাস্তির ধারাগুলো প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে রাখা হয়েছে। এসব ধারা শিক্ষা আইনে রাখতে হলে পুরনো দুটি আইন সংশোধন করতে হবে। এজন্য এ দুটি ধারা আদৌ শিক্ষা আইনে রাখার প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০’ এবং ‘পাবলিক পরীক্ষা সংশোধনী ১৯৯২’-এর চার নম্বর ধারায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এখন প্রশ্নফাঁসের শান্তি বাড়াতে হলে আগে আইন বাতিল করতে হবে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বা গাইড বই মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। 

১৯৮০ সালের নোট বই (নিষিদ্ধকরণ) আইনে এই বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়। 

এরপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের এই আদেশ বহাল রাখে। এখন নোট-গাইড নিষিদ্ধ করতে হলে আগের আইনের কী হবে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। এছাড়াও প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আইন, বিধি, প্রবিধান, রীতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন বা সংশোধনীর বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ (যদি থাকে), আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের উদ্দেশ্য ও এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি, কনভেনশন, সমঝোতা স্মারক, সিদ্ধান্ত, প্রটোকল খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

গত ২৬শে এপ্রিল শিক্ষা আইনের খসড়া পরীক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি বিভিন্ন ধারা-উপধারা পর্যালোচনা করেন। এতে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি দেখে সন্তুষ্ট না হয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ফেরত পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আইনের খসড়ায় নানা রকম ত্রুটি, পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং ভাষাগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন। 

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মু. ফজলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তা একত্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করে আবার তা পাঠানো হবে। 

তিনি বলেন, যেহেতু পর্যবেক্ষণ এসেছে এতে কিছু সময় লাগতে পারে। তবে আইন হবে এটা নিশ্চিত বলা যায়। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ আসার পর তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শিক্ষার সব দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী আইন/বিধি/প্রবিধানমালা বিদ্যমান আছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় প্রেরণপূর্বক কোনো মতামত থাকলে তা পাঠাতে হবে। এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণের পর সেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাও বলা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনের বিধান ও প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিধানসমূহের সামঞ্জস্য/অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইক্রমে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করবে। বিদ্যমান আইনের বিধান ও প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিধানসমূহের সামঞ্জস্য/ অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইক্রমে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করবে।

‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকেই ‘শিক্ষা আইন, ২০১১’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে শিক্ষা আইনের প্রথম খসড়া তৈরি করা হয়। পরে সংযোজন-বিয়োজন শেষে ২০১৩ সালের ৫ই আগস্ট জনমত যাচাইয়ের জন্য এই খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি ফেরত পাঠানো হয়। 

এক পর্যায়ে নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, কওমি মাদরাসার মালিকদের হুমকিসহ নানা বিতর্ক দেখা দিলে এই আইন প্রণয়নের কাজ থমকে থাকে। পরে আবারো এই খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হলে এতে নানা রকম অসঙ্গতি থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত বছর খসড়া আইন ফের মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়েও কয়েক দিনের মধ্যে তা তুলে নেয়া হয়। এরপর কর্মকর্তা পর্যায়ে কাজ শেষে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা হয়। 

  • Courtesy: Manabzamin/Jul 08, 2018

Dhaka city exists with no effective sewerage system

80pc city area remains out of coverage


Almost 80 per cent area of Dhaka city is still beyond the coverage of a sewerage system, thus exposing the residents concerned to an unhealthy environment.
Officials said residents in most part of Dhaka city install septic tanks and soak wells to manage sewage or release the same directly in surface drains.

They said Dhaka Water Supply and Sewerage Authority (DWASA) has a sewerage system that can carry less than 3.0 per cent of the domestic sludge.

Even the on-site sanitation system does not function properly for lack of strong monitoring, they mentioned.

According to the experts, most people discharge untreated waste water to nearby water bodies or surface drains. Such discharge ultimately ends up in rivers around the city.

Dhaka’s lifeline polluted

The result is obvious: Dhaka's lifeline -- Buriganga, Turag, Sitalakkhya and Balu -- and wetlands around it have become heavily polluted.

The government also identified untreated sewage as one of the nine major reasons for river pollution.

It accounted for around seven per cent of the pollution.

Urban planners warned that the government might fall short of achieving sustainable development goals (SDGs) unless it prioritises the issues.

Quality sanitation is one of the 16 SDG goals.

Belated though, the DWASA has chalked up a master plan involving an investment worth $2.0 billion to bring the entire city under a sewerage network and treatment plants.

A senior DWASA official said the city's sewerage network coverage is now reduced to 20 per cent from that of 30 per cent two decades ago due to the rapid expansion of the city.

He said the only sewage treatment plant located at Pagla can treat one-third of its capacity.

"Effluent does not reach the plant in sufficient quantity as it oozes out through several leaks in the decades-old pipeline," the official said.

DWASA managing director Taqsem A Khan said they have undertaken two master plans for water supply and sewage works to become the best public-sector utility provider in Asia.

"We've already been declared as the best utility provider in South Asia in terms of water supply. Now, we are focussing on sewerage system," he told the FE.

WASA chief admits plans are ambitious

As planned, the DWASA will bring the whole of Dhaka city under a full network with sewage treatment plants by 2030, he said.

Mr Khan said, "Though it might sound ambitious, but we want to complete the project by 2025 under a crash programme. We have taken it as a challenge."

As part of the plan, he said they will revive the Pagla plant as a state-of-the-art unit.

Four other plants will also be installed in Dasherkandi, Uttara, Mirpur and Rayerbazar.

The greater Dhaka will get six more plants in phases, the DWAHA chief cited.

"We're implementing these five sewage plants with networking. We're upgrading the backdated Pagla plants with the backing from the World Bank (WB)," he said.

Mr Khan said a Chinese company with the funds of EXIM Bank of China is working on Dasherkandi plant.

The DWASA has already finished the design of Uttara plant where the WB promised to finance.

A preliminary design and drawing of the Mirpur plant has been done, the chief of the utility agency said.

Mr Khan said the Asian Development Bank already invited tender for a feasibility study on Rayerbazar plant.

Untreated human excreta have emerged as one of the major threats to water management in Dhaka city.

"If we want to overcome this problem, we need such treatment plants." the DWASA chief added.

Unrealistic statement

Prof Dr Md Mujibur Rahman of Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET) said eleven sewage treatment plants will be made as per the 2013 master plan.

"It's 2018 now… How much we have progressed? Executing the plan by 2025 seems unrealistic as we're still doing groundwork for Dasherkandi plant that was planned in 2006," he said.

The DWASA is making plants, but simultaneously it should develop the sewerage network, said Mr Rahman who teaches environmental engineering at BUET.

"We haven't seen network expansion or rehabilitation work yet. What good these plants would do if we do not have pipeline to take the sewage to those," he queried.

He said the city's sanitation system needs a holistic change.

"If you want on-site sanitation, it should be done through faecal sludge management. It's a sustainable practice," he added.

Architect Mubasshar Hussein said there are two kinds of sanitation practices-one is off-site meaning sewerage networking and the other is on-site system.

But nobody maintains on-site sanitation properly as soak well where effluent comes from a septic tank does not work for its rapid reduction of soil infiltration capacity, he said.

Giving example of Hatirjheel Lake, the city planner said it was built to retain rainwater for a certain period.

But unfortunately, it has turned into a lake of sewage due to untreated sewage seepage from storm drains.

Dhaka generates some 2,000 million litres of waste water per day.
  • Courtesy: The Financial Express/ Jul 08, 2018

Khaleda’s legal consultant Lord Carlile unlikely to get entry into India

BNP chairperson’s legal consultant Lord Alex Carlile is unlikely to get entry into India as the country ‘does not want to see any harm’ in its ongoing friendly relations with Bangladesh.

Indian high commission in Dhaka made a strong recommendation to New Delhi seeking non-entry of Lord Carlile who reportedly also sided with war criminals in the past, a diplomatic source in New Delhi said. He was supposed to visit New Delhi this week and deliver speech through a press conference at Foreign Correspondents Club on July 13.

Diplomatic sources said Lord Carlile wants to criticise Bangladesh’s court verdicts and might make statement against the Bangladesh government using India’s land.

Bangladesh has been maintaining a policy of not allowing anybody to use its land by anybody against India.

Being informed about Lord Carlile’s plan, the government officials had a meeting with officials of Indian high commission in Dhaka and conveyed its observations, said a diplomatic source.

Both sides agreed that if Lord Carlile makes statement against Bangladesh government from New Delhi, it might create a problem in Dhaka-Delhi relations.

Lord Carlile, a member of the House of Lords of the British Parliament, is a barrister and one of the leading legal experts in the UK.

He was appointed by the UK wing of the party to advise Khaleda’s legal team on 36 cases against Khaleda, BNP secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir announced on March 20.

The announcement came less than two months after Khaleda was sentenced to five years in jail in the Zia Orphanage Trust graft case.


  • Courtesy: New Age/ jul 7,2018

Saturday, July 7, 2018

মেরুদণ্ডের হাড়ও ভেঙে গেছে তরিকুলের


ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারেকের মেরুদণ্ডের হাড়ও ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

তরিকুলের তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক ডা. সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘তরিকুলের ডান পা মারাত্মকভাবে ভেঙেছে। ওর পিঠের এক্স-রে করিয়েছি আমরা। কোমরের ঠিক উপরে মেরুদণ্ডের হাড় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভেঙে গেছে বলা যায়।

তিনি বলেন, ভারী কিছুর আঘাতে এমনটি হয়েছে। অপারেশন করার প্রয়োজন হবে কিনা সেটা রিপোর্ট হাতে এলে জানা যাবে। তবে দীর্ঘসময় তাকে চিকিৎসা নিতে হবে।’

তরিকুল জানান, কোমরের ঠিক উপরের জায়গায় প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছেন তিনি। ক্রমে তা বাড়ছে। একটু নড়াচড়া করলেই মনে হচ্ছে কেউ ভারী বস্তু দিয়ে সেখানে আঘাত করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাতুড়ির আঘাতে মেরুদণ্ডের হাড়টি ভেঙেছে বলে ধারণা তরিকুল ও তার সহপাঠীদের।

এদিকে গত ২ জুলাই হামলার পর পাঁচদিন চিকিৎসাধীন থেকেও তরিকুলের শারিরীক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। শরীরজুড়ে প্রচন্ড ব্যাথা। বাম পায়ে বড় কোনো আঘাত না থাকলেও ডান পা নড়াচড়া করলে পুরো শরীর ব্যাথা করছে। হাসপাতালের বেডে উঠে বসতেও পারছেন না তরিকুল। বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় রয়েল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শনিবার সকালে তরিকুলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘ভাই, খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি কোনো দিনও কারও গায়ে হাত তুলিনি। কাউকে আঘাত দিয়ে কথাও বলিনি। তাহলে আমাকে কেন আজ এত কষ্ট সইতে হচ্ছে?’

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তরিকুল বলেন, ‘শরীরে খুব ব্যথা। মেডিসিন নিচ্ছি নিয়মিত। প্লাস্টার খোলা হয়েছে, আমার ডান হাটুর নীচে থেকে একদিকে হেলে গেছে। মনে হচ্ছে আমি কোনোদিনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। মেরুদণ্ডের হাড়েও খুব ব্যথা। বসতে পারছি না। কোমরের ঠিক উপরের দিকে ব্যাথা। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করছি।’

হাসপাতালে তরিকুলের সঙ্গে থাকা তার ছোট বোন ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার বাবা কৃষক। মাঠে জমি-জমাও নেই আমাদের। তিন ভাই-বোন সবাই পড়াশোনা করি। বাবা-মা কষ্ট করে আমাদের পড়াচ্ছিলেন। মাসে তরিকুল ভাইয়ের জন্য হয়তো তিন/সাড়ে তিন হাজার টাকা পাঠাতেন। অথচ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য এখন প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা প্রয়োজন হচ্ছে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব?

হাসপাতালে তরিকুলের সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার পর তরিকুলকে রয়েল হাসপাতালে আনা হয়। এখানে অনেকগুলো পরীক্ষা করানো হয়েছে। সবগুলোর রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষতিতগ্রস্ত হয়েছে, এজন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হবে তার। 

  • কার্টসিঃ যুগান্তর/ জুলাই ৭,২০১৮ 

নুরুর পিতার কান্না


কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবক ও উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মুক্তি চেয়েছেন তারা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার ৬ জুলাই আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়েছে।

প্রতিবাদ সমাজে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ইনামুল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলন। এই আন্দোলনে কারা হামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সরকারের এত এত গোয়েন্দা সংস্থা, এ ঘটনার ছবি, ভিডিও ফুটেজ আছে। সরকারের উচিৎ এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এগুলো চোখে দেখছেন না।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। আজ কোদাল দিয়ে কোপানো হচ্ছে, লাঠি দিয়ে মারা হচ্ছে, হাতুড়ি পেটা করা হচ্ছে। যারাই প্রতিবাদ করতে যাচ্ছেন, যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন করছেন তারাই পেটোয়া বাহিনীর রোষানলে পড়ছেন ‘

প্রতিবাদ সমাবেশে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুর বাবা।

নুরুর পিতা ইদ্রিস হাওলাদার আটক হওয়া ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের মা। দেশের নাগরিকরা আপনার সন্তানের মতো। সন্তানরা আপনার কাছে আবদার করতেই পারে। আপনি দেবেন কী দেবেন না, সেটা আপনার বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু আপনি নির্যাতন করতে পারেন না। আহত ছেলে-মেয়েদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হোক এবং গ্রেপ্তার ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিন। এই সমাবেশে ইদ্রিস হাওলাদার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

তিনি বলেন, ‘কষ্টে আমি কথা বলতে পারছি না। আমার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। সারাদেশের মানুষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স করা একজন মানুষ। তার জ্ঞান আছে, যা আমার নাও থাকতে পারে। তাই সে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে কোটা সংস্কার আন্দোলন করে। আমার ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি গ্রামে কৃষি কাজ করি। তার চিকিৎসায় আমি টাকা দিয়েছি। নুরুকে মারধরের পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।


তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ছেলের লেখাপড়া করাচ্ছি জমিজমা বিক্রি করে। হামলায় আমার ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। এখন জমিজমা বিক্রি করে তার চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছি।’

প্রতিবাদ সমাবেশে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ, বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের ভাষায় সরকার উন্নয়ন করছে। জনগণের জন্য যদি উন্নয়ন হয় তাহলে সরকারের এত ভয় কেন? কেন তাদের পেটোয়া বাহিনীর দরকার হচ্ছে? কেন আন্দোলনকারীদের ওপর এমন হামলা চালানো হলো?’

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির অসঙ্গতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা প্রকৃতভাবে সুবিধাবঞ্চিত সেই অসহায় নারী, সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা এর সুফল পায় না। সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও তাদের লোকজন এই কোটার সুযোগ নিচ্ছে। কোটা যত থাকবে, নিয়োগ বাণিজ্যে তত লাভ। এই কারণে তারা এই কোটার সংস্কার চায় না।’

সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হলো না। এটি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না, এটি ছিল তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এ কারণে পরবর্তীতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে।’

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ কামাল।

তিনি বলেন, ‘এই সরকার রাষ্ট্রবিদ্রোহী সরকার। রাষ্ট্রবিদ্রোহ কেবল নাগরিক করে না, সরকারও করে সেটি আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।’

দেশের রাজা যদি ঠিকমতো দেশ শাসন না করেন তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আন্দোলনকারীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রশাসনের মতো অর্থব ও তেলবাজ প্রশাসন আমি দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা আর কোনো শিক্ষক দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।’

আহমেদ কামাল আরও বলেন, ‘৭৫ এ বাকশাল ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যেন বাকশালে যোগ দেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু শিক্ষক বাকশালে যোগ দেননি। আজকেও দেখি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ শিক্ষক দাঁড়িয়েছেন। এখনও আলো নিভে যায়নি, একদিন আলো দপ করে ঠিকই জ্বলে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ফলে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু তারপরও দেখলাম প্রশাসন আন্দোলনকারীদের তথ্য নিয়েছে, নাম-ঠিকানা নিয়েছে তাদের পরিবারকে হয়রানি করেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। অগ্নিকন্যা বললেন এরা সব রাজাকারের বাচ্চা। প্রথম দিকেই এদের রাজাকার, জামায়াত, দেশদ্রোহী বানানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এই ছাত্র সমাজ সকলের ইন্টাররেস্ট দেখছে। সে কারণে কাজ হয়নি। সকলের জন্য সমান সুযোগ দেওয়া এটা একটি ডেমোক্রেটিক ডিমান্ড।’

  • কার্টসিঃ সারাবাংলা / জুলাই ৭,২০১৮