Search

Sunday, July 8, 2018

আটকে গেল শিক্ষা আইনের খসড়া

ফের আটকে গেল শিক্ষা আইনের খসড়া। খসড়াটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১২ ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এখন নতুন করে খসড়া তৈরি করতে ১০ই জুলাই মঙ্গলবার সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়ায় বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি ও বিদ্যমান কয়েকটি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা থাকায় ফেরত পাঠানো হয়। শিক্ষায় বিদ্যমান সব আইনগুলোকে একত্র  করে একটি আমব্রেলা আইন (এক ছাতার নিচে সব) করে খসড়া তৈরি করে পাঠাতে বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য, বৈপরীত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় আবারো এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফলে বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা আইন আলোর মুখ দেখছে না। মূলত খসড়া প্রণয়নে দূরদর্শিতার অভাব, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের ধারা বিবেচনায় না নেয়া, শিক্ষাবিদদের মতামত উপেক্ষা করা ও খসড়া প্রণয়নকারীদের গাফিলতির কারণেই ছয় বছরের বেশি সময়েও শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আইন হবে না এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রিপরিষদ থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তা সংযোজন-বিয়োজন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা আইন না থাকলেও সবকিছু তো একটা আইনের মধ্য দিয়েই চলছে। আইন করতে গিয়ে এসব বিষয় সামনে এসেছে। তাই সব আইনকে একত্র করে একটা আমব্রেলা আইন করা হবে। সেজন্য সব পক্ষকে ডাকা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইন, ১৯৯০ রয়েছে। নতুন করে আইন করতে হলে এ আইন রহিত বা এ আইনের মধ্যে ঢুকাতে হবে। কিন্তু খসড়া বাধ্যতামূলক প্রাথমিক আইনের কিছু ধারা শিক্ষা আইনে রাখা হয়েছে আবার কিছু বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। 

এছাড়াও নোট ও গাইড নিষিদ্ধকরণ এবং পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন থাকা সত্ত্বেও এগুলোর শাস্তির ধারাগুলো প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে রাখা হয়েছে। এসব ধারা শিক্ষা আইনে রাখতে হলে পুরনো দুটি আইন সংশোধন করতে হবে। এজন্য এ দুটি ধারা আদৌ শিক্ষা আইনে রাখার প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০’ এবং ‘পাবলিক পরীক্ষা সংশোধনী ১৯৯২’-এর চার নম্বর ধারায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এখন প্রশ্নফাঁসের শান্তি বাড়াতে হলে আগে আইন বাতিল করতে হবে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের নোট বা গাইড বই মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। 

১৯৮০ সালের নোট বই (নিষিদ্ধকরণ) আইনে এই বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়। 

এরপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের এই আদেশ বহাল রাখে। এখন নোট-গাইড নিষিদ্ধ করতে হলে আগের আইনের কী হবে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। এছাড়াও প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আইন, বিধি, প্রবিধান, রীতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন বা সংশোধনীর বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ (যদি থাকে), আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের উদ্দেশ্য ও এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি, কনভেনশন, সমঝোতা স্মারক, সিদ্ধান্ত, প্রটোকল খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

গত ২৬শে এপ্রিল শিক্ষা আইনের খসড়া পরীক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি বিভিন্ন ধারা-উপধারা পর্যালোচনা করেন। এতে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি দেখে সন্তুষ্ট না হয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণ দিয়ে তা ফেরত পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি আইনের খসড়ায় নানা রকম ত্রুটি, পরস্পরবিরোধী তথ্য এবং ভাষাগত সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা-উপধারা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন। 

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মু. ফজলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তা একত্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করে আবার তা পাঠানো হবে। 

তিনি বলেন, যেহেতু পর্যবেক্ষণ এসেছে এতে কিছু সময় লাগতে পারে। তবে আইন হবে এটা নিশ্চিত বলা যায়। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ আসার পর তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শিক্ষার সব দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী আইন/বিধি/প্রবিধানমালা বিদ্যমান আছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় প্রেরণপূর্বক কোনো মতামত থাকলে তা পাঠাতে হবে। এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণের পর সেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাও বলা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনের বিধান ও প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিধানসমূহের সামঞ্জস্য/অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইক্রমে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করবে। বিদ্যমান আইনের বিধান ও প্রস্তাবিত খসড়া আইনের বিধানসমূহের সামঞ্জস্য/ অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইক্রমে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় খসড়াটি পুনর্বিন্যাস করবে।

‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকেই ‘শিক্ষা আইন, ২০১১’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে শিক্ষা আইনের প্রথম খসড়া তৈরি করা হয়। পরে সংযোজন-বিয়োজন শেষে ২০১৩ সালের ৫ই আগস্ট জনমত যাচাইয়ের জন্য এই খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি ফেরত পাঠানো হয়। 

এক পর্যায়ে নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের আন্দোলন, কওমি মাদরাসার মালিকদের হুমকিসহ নানা বিতর্ক দেখা দিলে এই আইন প্রণয়নের কাজ থমকে থাকে। পরে আবারো এই খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হলে এতে নানা রকম অসঙ্গতি থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত বছর খসড়া আইন ফের মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়েও কয়েক দিনের মধ্যে তা তুলে নেয়া হয়। এরপর কর্মকর্তা পর্যায়ে কাজ শেষে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা হয়। 

  • Courtesy: Manabzamin/Jul 08, 2018

No comments:

Post a Comment