Search

Tuesday, July 17, 2018

গণতন্ত্র তো নৈতিকতাও

এমাজউদ্দীন আহমদ

গত দুই মাসে দুটি সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমটি খুলনা সিটি নির্বাচন শেষ হয়েছিল ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে। খুলনা সিটি নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন মহলের দাবি ছিল, খুলনায় উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার। এ কথাও বলা হয়েছিল, খুলনার তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করার সর্বাত্মক প্রয়াস যেন তারা রাখে। 

এসব দাবি নির্বাচন কমিশন আমলে নিয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়নি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। তারা তাদের সেই পুরনো রেকর্ডই বাজিয়েছে। গাজীপুরে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও অনিয়মের অভিযোগ ছিল আরও বিস্তৃত। সামনে আরও তিনটি সিটিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা আশঙ্কা নিয়েই শুরু হয়েছে প্রচার কার্যক্রম। এই তিনটি সিটিতে কি বিগত দুই সিটির নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে- এমন প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এ কথা তো সত্য যে, জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দক্ষ-নির্মোহ কর্মকর্তারাই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেন। এর সঙ্গে উন্নয়নের বিষয়টিও জড়িত। প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা যদি চাপমুক্ত থাকতে না পারেন কিংবা তারা যদি নিজেদের জনগণের সেবক মনে না করে দল কিংবা কোনো মহলকে তুষ্ট করতেই মনোযোগী হন, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রে পড়তে বাধ্য। আমাদের প্রশাসনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রায় সব স্তরেই কমবেশি গলদ রয়েছে। এর জন্য ব্যবস্থা যেমন দায়ী, তেমনি ক্ষমতাসীনদের মানসিকতাও দায়ী। সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি কোনোই ইতিবাচক ফল দিচ্ছে না। কেন দিচ্ছে না, এর পেছনের কারণ কী তা দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। 

আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত মান নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণ নিষ্প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা মোতাবেক সুশাসন নিশ্চিতকরণের পথে অন্তরায় কী তা যেমন সচেতন মানুষ মাত্রই জানা, তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নানা দুর্বলতার কারণে প্রশ্নমুক্ত, অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোও অজানা নয়। খুলনার মতোই গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারেননি- এই অভিযোগ শুধু বিএনপির তরফেই উত্থাপিত হয়নি, গণমাধ্যমেও এই সংবাদ প্রকাশিত-প্রচারিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যালট পেপারে বলপূর্বক সিল মারার চিত্র চোখে পড়েছে গণমাধ্যমেরই কল্যাণে।

যে নির্বাচনে প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারেননি কিংবা থাকতে দেওয়া হয়নি সেই নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত হয়েছে তা কী করে বলা সম্ভব? এ হলো অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার একটি দিক। এ ছাড়াও তো আরও নেতিবাচক চিত্র আমাদের সামনে রয়েছে। যে কোনো নির্বাচনে সমতল ভূমি নিশ্চিত করার বিষয়টি সর্বাগ্রে জরুরি। ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাও সমভাবেই জরুরি। প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে উপস্থিত আছেন কিনা, তিনি তার দায়িত্ব ভীতি বা চাপমুক্তভাবে পালন করতে পারছেন কিনা- এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচনে অনিয়ম-অস্বচ্ছতার অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের জন্য তা শুভ হবে না। এর পরিণতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার প্রতিই থাকবে নির্মোহ, এটিই তো স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্রত্যাশা বারবার হোঁচট খাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন থাকার অবকাশ আছে কি? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব অন্তরায় বিদ্যমান সেসব নিরসনে নির্বাচন কমিশন কতটা আন্তরিক- এমন প্রশ্নের উত্তর প্রীতিকর নয়। সু

ষ্ঠু, অবাধ, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতকরণের পথ সুগম করতে পারে। দায়িত্বশীলদের সব ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ থাকতে হবে- এই দাবি নানা মহল থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে বারবার উঠছে। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীলরা এসব যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক হবেন।

জনমনে এই শঙ্কা সঙ্গতই এখন প্রকট যে, আসন্ন তিন সিটির নির্বাচনেও খুলনা-গাজীপুর মডেল বাস্তবায়ন করা হতে পারে। যদি এমন নির্বাচনই হয় তাহলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়বে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশাটা মাঠে মারা যেতে পারে। অনিশ্চিত সংকটের মুখোমুখি হতে পারে দেশ। মানুষ চায় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। সত্যিকারভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন করতে যেসব পূর্বশর্ত প্রয়োজন এর অনেক কিছুরই ঘাটতি ছিল খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। 

খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগে বিতর্ক ছিল এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচনের পর তা আরও পুষ্ট হয়। এ অবস্থায় হতে যাচ্ছে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী সিটি নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এটি সত্য; কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইতে হবে। সরকার যদি সুষ্ঠু কিংবা প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন না চায় এবং এ জন্য যথাযথ সহযোগিতা না করে, তাহলে কোনোভাবেই প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সরকার হলো এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সহযোগী শক্তি এবং কমিশনকে যথাযথ সহযোগিতা দান করা সরকারের কর্তব্য। নানাভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়। এভাবে চললে সংকট বাড়বে। বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি নির্বাচনে যদি খুলনা-গাজীপুরের ঘটনাবলিরই পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য তা শুভ হবে না।

এ কলামেই কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম আমাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে। দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের সভা-সমাবেশ করাসহ অন্যান্য অধিকারের পথ যেন ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রক্তস্নাত বাংলাদেশের সংবিধানে সবার সমান অধিকারের কথা লেখা আছে। কিন্তু বাস্তবে কি এর প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়? সমাজ ও রাষ্ট্রে নাগরিকরা ভয়মুক্ত থেকে অধিকার ভোগ করবেন, এটিই তো স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা যেন আর বিনষ্ট না হয়, সেটিই আমাদের দাবি। 

র্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে গণতন্ত্রের উপাদান কতটা আছে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্নও দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা এখানে নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। আর এ কারণেই জবাবদিহি-দায়বদ্ধতার পাটও ক্রমেই চুকে যাচ্ছে। সাংবিধানিক সংকট আর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা মানুষের অধিকারের সমতল ভূমি নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধক নন। পরমতসহিষুষ্ণতা, সমান অধিকার নিশ্চিত করা, ভীতিমুক্ত পরিবেশে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া ইত্যাদি হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ। 

এসব বিষয় আমাদের নাগরিক ও রাজনৈতিক মহলে কতটা নিশ্চিত- এ প্রশ্নের উত্তরও প্রীতিকর নয়। তারপরও আমরা প্রত্যাশা করি, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বশীলরা আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন।

আসন্ন তিনটি সিটি নির্বাচন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য কি হবে? পারবেন কি ভোটদাতারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে? ভোট প্রার্থীরা কি পারবেন তাদের নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগ করতে? এসব প্রশ্নের সার্থক উত্তর দেওয়ার দায়দায়িত্ব যাদের, তারা যদি নিজ নিজ দায়িত্ব নির্মোহভাবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে ব্রতী হন, তাহলেই নেতিবাচকতার পথ সংকুচিত হতে পারে। গণতন্ত্র তো শুধু একটি শাসন ব্যবস্থা নয়, গণতন্ত্র এক ধরনের নৈতিকতা। এক ধরনের পরিশীলিত কর্মপ্রবাহ। আমাদের দায়িত্বশীলরা এসব বিষয় ভুলে না গেলেই মঙ্গল।

  • সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
  • কার্টসিঃ সমকাল/ জুলাই ১৭,২০১৮ 

'অথৈ জলে' সাগরের গ্যাস

হাসনাইন ইমতিয়াজ


দেশে গ্যাসের ঘাটতি নতুন কোনো বিষয় নয়। শিল্প, বাণিজ্য, আবাসিকসহ সব খাতেই এই জ্বালানির জন্য হাহাকার চলছে বছরের পর বছর। অবশেষে এই ঘাটতি মেটাতে চার গুণ বেশি দামে গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম নেই। স্থলভাগেও অনুসন্ধান কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। 

বঙ্গোপসাগরে ভারত ও মিয়ানমার তাদের অংশে ব্যাপক পরিমাণ গ্যাসের সন্ধান পেয়ে তা তোলা শুরু করেছে। বাংলাদেশ সাগরে এখনও জরিপকাজই করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অংশেও বিপুল পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে গভীর সাগরের গ্যাস এখনও 'অথৈ জলেই' থেকে যাচ্ছে।

জানা যায়, সাগরের তলদেশে মাটির নিচে কোথায় তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা জানার জন্য এক ধরনের জরিপকাজ করতে হয়। এ জরিপ-তথ্যের ওপর নির্ভর করে তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। গত চার বছরে এই জরিপকাজ শুরুই করতে পারেনি বাংলাদেশ। দুবার দরপত্র ডেকেও নির্বাচিত কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী একটি মহলের পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় দরপত্র কার্যক্রম আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই জরিপের তথ্য ছাড়া 

সমুদ্রের ব্লকগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে চাইছে না সরকার। কারণ, এর আগে কয়েক দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেও ভালো কোম্পানির কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। ওই জরিপের জন্য জাহাজ কেনা বা ভাড়া নেওয়ার বিষয়টিও দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের মালিক হয় বাংলাদেশ। এর পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বিশাল এই সমুদ্র এলাকার সম্পদ আহরণে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম তার এক প্রবন্ধে বলেছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ সাগরে এখনও জরিপই শুরু করতে পারেনি। বদরুল ইমাম এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর এখন সেই সংকটের মাশুল দিতে হচ্ছে। গত ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে একটি গ্যাসকূপও খনন করা হয়নি। নতুন গ্যাসের সন্ধান না পাওয়ায় এখন এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে, যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আমদানির পাশাপাশি দেশের ভেতরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিয়েছে। স্থলভাগে শতাধিক কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রমে অনেকটাই পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী সমকালকে আরও বলেন, 'জ্বালানি বিভাগ সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে এগোতে পারছে না। সাগরে জরিপকাজটি জ্বালানি বিভাগের কারণেই ঝুলে আছে।' এ অভিযোগের বিষয়ে সদ্য বিদায়ী জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সমকালকে বলেন, প্রতিটি প্রকল্প সরকারের বিধিবিধান মেনে বাস্তবায়ন করা হয়। সাগরের জরিপকাজটির (মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে) বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনার বাইরে তিনি বা তার বিভাগ কোনো কাজ করেনি। 

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান : বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি। আর গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে ১৯৯৬ সালে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি, যা দেশের একমাত্র সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়। মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হয়। এ ছাড়া কুতুবদিয়ার সাগরবক্ষে গ্যাসের সন্ধান মিললেও তা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য বিবেচিত হয়নি। 

যুক্তরাষ্ট্র্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানি কনোকোফিলিপস ২০০৮ সালের দরপত্র প্রক্রিয়ায় গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা নিয়েছিল। দুই বছর অনুসন্ধান কাজ করার পর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মতভেদের কারণে ২০১৪ সালে ব্লক দুটি ছেড়ে দেয় কনোকো। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ডাকা অন্য আরেক আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্র্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এই দরপ্রক্রিয়া একমাত্র প্রস্তাবদাতা হিসেবে এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছে।

এরপর জ্বালানি বিভাগ বিশেষ আইনে দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই বাকি ব্লকগুলো ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র চায় পেট্রোবাংলা। সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি, দক্ষিণ কোরিয়ার পোসকো দাইয়ু ও নরওয়ের স্টেট অয়েল আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে প্রস্তাব চাওয়া হলে ১২ নম্বর ব্লকের জন্য শুধু দাউয়ু প্রস্তাব দাখিল করে। দীর্ঘ আলোচনার পর গত ডিসেম্বরে ডিএস ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে উৎপাদন-অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) সই করে পেট্রোবাংলা। দাইয়ু এই ব্লকের পাশেই মিয়ানমারের একটি সমুদ্র ব্লকে গ্যাস তুলছে।

মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে : বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ভালো সাড়া না মেলায় সরকার পুরো সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ বা মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সার্ভের কাজ করার জন্য ২০১৫ মালে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র জমা পড়ে পাঁচটি। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্কামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়। এরপর পেট্রোবাংলা প্রস্তাব চূড়ান্ত করে চুক্তিপত্র অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে জ্বালানি বিভাগে ফাইল পাঠায়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া হঠাৎ বাতিল করে আবার দরপত্র আহ্বানের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয় জ্বালানি বিভাগ থেকে। 

অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। পরে আবারও পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে এবারও পাঁচটি প্রস্তাব জমা পড়ে। এবারও দরপ্রক্রিয়ায় টিজিএস-স্কামবার্জার কনসোর্টিয়াম প্রথম হয়। এরপর চুক্তির প্রস্তাবনা জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সেখানেও দরপত্র প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে আপত্তি জানানো হয়। পরে দরপত্র মূল্যায়নের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে বলেন, নয় মাস আগেই এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। 

জরিপ জাহাজ (সার্ভে ভেসেল) ক্রয় : মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে প্রকল্প নিয়ে এ জটিলতার কারণে নিজেরাই জরিপ পরিচালনার পরিকল্পনা করে জ্বালানি বিভাগ। এ জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রায় দুই বছরেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, সার্ভে জাহাজ ভাড়ার চেষ্টা চলছে। জ্বালানি বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ব্লু ইকোনমি সেল : সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তির পর বিশাল সমুদ্রসম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান, গবেষণা ও উত্তোলনে তদারকির জন্য গত বছরের ৫ জানুয়ারি ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়। এ সেলের জনবল নিয়োগ এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় কর্মকর্তাসহ বর্তমানে মোট জনবল ১০ জন। কয়েকটি বৈঠক ছাড়া এ শাখার তেমন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার কার্যালয় পেট্রোসেন্টারের নবম তলায় অবস্থিত সেলটির অফিসে সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, এখনও পুরোপুরি গোছানো হয়নি। কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন কর্মকর্তা নামফলকযুক্ত হলেও দু-একজন ছাড়া কারও দেখা মেলেনি। 

মিয়ানমার গ্যাস তুলছে : ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার দ্রুত গ্যাস ব্লকগুলোতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ২০১৬ সালে থালিন-১ নামক ব্লকে এ গ্যাসপ্রাপ্তির ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। থালিন-১-এ সাড়ে চার ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আছে। এখান থেকে গ্যাস তোলা শুরু হয়েছে। 


পিছিয়ে নেই ভারতও : বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় অংশের কৃষ্ণা-গোদাভারী বেসিন এলাকায় প্রায় ৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে আশা করছে ভারত। ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি, গুজরাট এস্টেট পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, বেসরকারি গ্রুপ রিলায়েন্স এই এলাকায় জোরালো অনুসন্ধান কাজ করেছে।

  • কার্টসিঃ সমকাল/ জুলাই ১৭,২০১৮ 

‘ঢাবিয়ান বলতে অসামান্য লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি’


—  রোকেয়া গাজী লিনা 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর সামনে হামলার শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী রোকেয়া গাজী লিনা জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক  ফেসবুকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছে দিয়েছেন।

নিচে তার স্ট্যাটাসটির পূর্ণপাঠ তুলে দেয়া হলো —  

শনিবার, জুলাই ১৪, ২০১৮  
বিকেল ৫টা ৩০ 


আমি আর আমার বন্ধু আসাদ রিকশার জন্য সূর্য সেন হলমূখী রোড থেকে সামনে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর বিল্ডিং গেট এর দিকে যাচ্ছি। ঠিক তখন সামনে থেকে আগত ১০/১২ জন ছেলে আমাদের পথ আটকায়। হকচকিয়ে গেলেও আমরা দাঁড়ালাম। প্রথমে একটা ছেলে ক্ষিপ্র ভংগিতে এসে জানতে চাইলো আমরা এই ক্যাম্পাসের কিনা। বললাম হ্যাঁ আমরা দুজনেই ক্যাম্পাসের।

আসাদ কে তখন বলল কোন ইয়ার তুই,কোন হল এ থাকিস? আমি বললাম আমরা অর্থনীতি ৩য় বর্ষের। ইভেন আমি আমার হল আইডি কার্ড দেখিয়ে বললাম ভদ্রভাবে কথা বলো। কোনো তোয়াক্কা না করেই আবারো আসাদ কে বলল তুই কোন হল এর। আইডি কার্ড দেখা।

আসাদ পোলাইটলি জানতে চাইল তোমরা কোন ইয়ার, কোন হল, কেন চার্জ করছো এভাবে?

তারা নিরুত্তর এবং মারমুখী ছিল তখন।

আসাদ আইডি কার্ডটা দেখানোর পর আইডি কার্ডটা দিয়েই ছেলেটা বলল, "প্রথম বর্ষের ছেলে কি তোরে চার্জ করতে পারে না? ১ম বর্ষের পোলাপানের হাতে মাইর খাইতে খুব মজা লাগব", বলেই ঠাস করে আসাদ কে থাপ্পড় মারে। আমি যখন জানতে চাই কি করলে এটা তখন বাকিরাও চড়াও হয় এবং আমাকে সহ হ্যারাস করে ফেরাতে গেলে।

যখন আসাদকে এলোপাতাড়ি ভাবে মারতে থাকে আমি আমার এক পরিচিত বন্ধুকে বলি আসতে। আমাদের অপরিচিত কয়েকটা ছেলে আক্রমণ করছে।

প্রশ্ন থাকতে পারে প্রক্টোরিয়াল টিম কে কেনো কল দিলাম না। প্রথমত আমার কাছে নাম্বার ছিল না। আর তারা তখনই খুব জোরে হেঁটে সূর্য সেন হল এর গেট এর ভিতরে চলে যায়।

আর আমরা ঘটনার আকস্মিকতায় মেন্টালি শকড ছিলাম। আসাদ তাদের পেছন পেছন হল গেট এর ভিতর এ গিয়ে যখন জানতে চাইলো, "আমি এই ক্যাম্পাসের পরিচয় দেয়ার পর, আইডি কার্ড দেখানোর পর ও আমাদের গায়ে কেনো হাত তুললে তোমরা?

তখন তারা মোটেই অনুতপ্ত না হয়ে বলছে, "তুই হল এর ভিতরে আসলি কেন আবার?"

আসাদকে আবার মারতে আসে। তখন ওরা ১৫-২০জন। অনেক মানুষ-ই ছিল। মজা নিচ্ছিল না ঘটনার আকস্মিকতায় তারাও চুপ জানিনা! আমি তখন আসাদকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সময় ওরা গেস্ট রুম থেকে স্ট্যাম্প, কাঠ নিয়ে আসে মারতে। আসাদ এর মাথায়, মুখে, কঁঁাধে, পায়ে সমস্ত শরীরে আঘাত করা হয়েছে।

আমি বাধা দিতে যাওয়ায় আমার গায়েও লাঠির আঘাত, তাদের জোরাজুরি আসাদকে আলাদাভাবে নিয়ে মারার জন্য। আমার পায়ে জুতা দিয়ে পিষে দেয়ায় আমার নখ উঠে গেছে। ব্লিডিং হচ্ছিল।

তখন ও তারা থামে নাই। এফবিএস, সূর্য সেন ক্যাফেটেরিয়া এই তিন রাস্তার মোড়ে এসে আসাদ এর হল এর কিছু পরিচিত মানুষ জন আসতে দেখায় তারা চলে যায় কিন্তু ফিরে আবার মারমুখী হয়ে হুমকি দেয়।

আমরা দুজনেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। নিজের ক্যাম্পাসে এরকম #শারীরীক #মানসিক #হ্যারাসমেন্ট  #হামলার শিকার হব সেটা মেনে নেয়া অসম্ভব।

আজকে পরিচয়পত্র দেখানোর পর তাদের সিনিয়র জানার পরও হ্যারাস করল।

আমার যে জুনিয়র বোন বা ভাই মাত্রই ক্যাম্পাসে আসল তাদের নিরাপত্তা কি তাহলে? আমার ক্যাম্পাসে আমি অতর্কিত হামলার শিকার হব কেনো?

আমরা সূর্য সেন হল এর প্রভোস্ট স্যার এর সাথে কথা বলেছি। স্যার আমাদেরকে আগামিকাল লিখিত দিতে বলেছেন। এবং প্রক্টোরিয়াল টিম ও আমাদের ন্যায্যবিচার এর আশ্বাস দিয়েছেন এই পর্যন্ত। আমরা লিখিত দিব।

আসাদ এর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। আমার পায়ে ড্রেসিং করতে হয়েছে। মাথা আর ঘাড় এ প্রচণ্ড  ব্যথা।

অনেকের অনেক প্রশ্ন মনে জাগছে বা বিষয়টার সাথে অন্য কোনো কিছু যুক্ত কিনা জানতে চাইছে। #i_am_clearing_on_this_point
আমাদের যারা চিনেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারবেন আমাদের এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের অসম্মান করা হয়েছে. We have enough respectable and clean image on our university campus to our  senior and junior classmates. So, it was just unexpected attack from some morally destroyed boys.

নিজ মুখে নিজ ক্যাম্পাসের ভয়াল বিভীষিকাময় ঘটনার কথা বর্ণনা করতে যেয়ে আজ আমি ঢাবিয়ান বলতেই এক অসামান্য লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি।

I AM IN TRAUMA. BUT I HOPE FOR JUSTICE BY LEGAL APPROACH. ONLY THEN I WILL TAKE BREATHE IN PEACE. IT'S NOW A QUESTION OF DHAKA UNIVERSITY'S SELF RESPECT. NO ONE CAN DENY THAT.

#justice #no_harrasement_in_campus  #never_again

সম্পাদিত। 


ঘুরে দাঁড়াতে হবে, কিন্তু কীভাবে?

গোলাম মোর্তোজা












রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ি এলাকায় ছাত্র-শিক্ষকদের মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 


আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী চট্টগ্রাম ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। গণিত অলিম্পিয়াডে দেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণ পদক অর্জন করেছেন। গণিত অলিম্পিয়াড সম্পর্কে আমরা যে খুব বেশি কিছু জানি, তা নয়। ১১৬টি দেশের ৬১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই স্বর্ণ পদক অর্জন। এটা যে কত বড় অর্জন, কতটা সম্মানের অর্জন, আমরা তা হয়তো ধারণা করতে পারছি না। ধারণা করার চেষ্টাও নেই। বাংলাদেশ দল স্বর্ণ ছাড়াও তিনজন ব্রোঞ্জ এবং দুইজন অনারেবল মেনশন পেয়েছেন।

এই দলটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান পেতে পারতেন। সাধারণ মানুষের মনেও যে বড় কোনো অনুভূতি জন্ম নিয়েছে, তাও হয়ত নয়।

খ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী সিনিয়র দুজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছে। একজন ছাত্রীর পায়ের নখ উপড়ে দিয়েছে। জাওয়াদদের সাফল্য, না উপড়ে ফেলা পায়ের নখ- কোন সংবাদটি মানুষকে আকর্ষণ করছে বেশি?

আহত ছাত্রী রাতে প্রক্টরকে ফোন করে যখন ঘটনা জানাচ্ছিলেন, তখন প্রক্টর পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, তুমি রাতে ওখানে কেন গেছ?

শাহবাগের রাস্তায় হলুদ রঙের বোর্ডে লাল অক্ষরে লেখা ‘সাবধানে চলুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘সাবধান’ হতে হবে। ‘বহিরাগত’ মুক্ত করার অংশ হয়ত এই ‘সাবধানতা’। সেই সাবধানতা বিষয়ক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই হয়ত পায়ের নখ উপড়ে দেওয়া হচ্ছে।

গ. পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ার ট্রেনিং নিচ্ছেন, এমন সংবাদ- ছবি প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। ছাত্র সংগঠনের সেই ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ছাত্রমৈত্রী নেতা রিমুকে কুপিয়ে হত্যা করা শিবির ক্যাডার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন। সেই সংবাদ অনুসন্ধান করে গণমাধ্যম প্রকাশ করেছিল। এখন অনুসন্ধান করতে হয় না, এমনিতেই জানা যায়। দৈনিক যুগান্তর প্রকাশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের টেলিফোন সংলাপ।

দুইজন শিক্ষক একজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্যে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। নিয়োগ দিতে না পেরে আবার সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন। টেলিফোন সংলাপ প্রকাশ হয়েছে একটি নিয়োগের। ৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। উপাচার্য বলেছেন, অভিযোগ আকারে আসলে ব্যবস্থা নেবেন। দুর্নীতি বা অনিয়মের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবেন। জোর দিয়ে বলেছেন, অনিয়ম দুর্নীতি তিনি দূর করে ছাড়বেনই!

ঘ. বিশ্বকাপ ফুটবল যেসব দেশ খেলে আমরা তাদের অনেকের চেয়ে বেশি দেখি। দেখা তো খারাপ কিছু নয়। কিন্তু দেখে কি কিছু শিখি? খেলার কথা বাদ দেই। দেখা বা দর্শক প্রসঙ্গে আসি। এশিয়ার দেশ হিসেবে জাপানের খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। আমরা তো বটেই, সারা পৃথিবী মুগ্ধ হয়েছে জাপানি দর্শকদের দেখে। খেলার পরে গ্যালারি পরিষ্কার করে জাপানি দর্শকরা শুধু এবারই নয়, আগেও দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। প্যারিসে ফ্রান্সের সঙ্গে খেলায় পরাজিত হয়ে গ্যালারি পরিষ্কার করে মাঠ ছেড়েছিলেন জাপানি দর্শকরা। চোখ বড় করে বিস্মিত হয়ে তা দেখেছিলেন ফরাসিরা।

বিশ্বকাপে জাপানি খেলোয়াড়রা পরাজয়ের পরও ড্রেসিং রুম চকচকে-ঝকঝকে পরিষ্কার করে বিদায় নিয়েছেন। সারা পৃথিবী অবাক হয়ে তা দেখেছে। জাপান কিন্তু এটা হঠাৎ করে করেনি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তারা জীবনের অংশ করে নিয়েছেন।

জাপানের দেখাদেখি সেনেগালের দর্শকরাও গ্যালারি পরিষ্কার করেছেন।

আমরা জাপানের মতো ফুটবল হয়ত খেলতে পারব না। কিন্তু জাতি হিসেবে, জাপানিদের দেখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে কি একটু অনুপ্রাণিত হতে পারি না! ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার ব্যাপারটা তো অন্তত শিখতে পারি। ভালো বা ইতিবাচক কিছু কী আমাদের আকর্ষণ করে না, অনুপ্রাণিত করে না?

ঙ. রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে দেওয়াল নির্মাণের সচিত্র সংবাদ গতকালের ডেইলি স্টারেও প্রকাশিত হয়েছে। ভবন, সেতু, সড়কে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঐতিহ্য ইতিমধ্যে আমরা তৈরি করেছি। রেল লাইনে স্টিলের পাতের পরিবর্তে বাঁশের অভিনব ব্যবহারও দেখেছেন বাংলাদেশের মানুষ। এই লেখা যখন লিখছি তখন জানলাম কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণাধীন মূল গেট ভেঙে পড়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ল। মূল ভবনগুলোর আস্তর খুলে পড়ার ছবি-সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। কেন নতুন নির্মাণের এমন অবস্থা? অনেক ঘটনার মধ্যে একটি বলছি। আস্তর দেওয়ার কাজ করছিলেন স্থানীয় এক নেতার ছোট ভাই। এই ঠিকাদার সিমেন্টের সঙ্গে বালু না মিশিয়ে আশপাশের জমি থেকে বালু মাটি কেটে এনে সিমেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে আস্তর দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তা খুলে পড়ছে। এত সংবাদের ভিড়ে এটাও ছোট্ট একটি সংবাদ। এর বেশি কিছু নয়।

চ. লিখছি এলোমেলো কিছু ঘটনা। কিছু বুঝলেও, বুঝি না অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। যেন উত্তর নেই, প্রশ্নের পাহাড়। দেখছি তারুণ্যের হিংস্রতা। শিক্ষার্থীদের পেটানো হচ্ছে নির্দয়ভাবে। আঙ্গুল তুলে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে শিক্ষকদের। আইন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- যেন কেউ কোথাও নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ছাত্রলীগের কমিটি নেই। ছাত্রলীগের নামে কিছু হচ্ছে কিনা দেখতে হবে।

অথচ যারা ছাত্রদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে, ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করছে, শিক্ষকদের অপমান- অসম্মান করছে, তারা প্রায় সবাই পরিচিত, জানা তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও। পত্রিকায় ছবি ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। আক্রমণকারীরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে। পুলিশ তাদের কাউকে ধরছে না, ধরছে আক্রান্তদের।

কোটার মত একটি বিষয়, যা টেবিলে বসে আলোচনা করে খুব সহজে সমাধান করা সম্ভব ছিল। অথচ তারুণ্যের মেধা- নৈতিকতার কী নিদারুণ অপচয়ের সাক্ষী হয়ে থাকছে বাংলাদেশ!

ছ. ৪৭ বছর বয়স ক্লান্ত বা ঝিমিয়ে যাওয়ার নয়। সক্রিয় থাকার কথা পূর্ণ উদ্যমে।

বাংলাদেশ যে ক্লান্ত হয়ে গেছে বা যাচ্ছে বা উদ্যমে ভাটা পড়ছে, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। আশা সম্ভাবনার বহু কিছু আছে।

তা সত্ত্বেও, ৪ কোটি ৮২ লাখ কর্মক্ষম বেকার হতাশা নিয়ে ঘুরছেন। আশার চেয়ে হতাশার পাল্লা কি ভারি হয়ে যাচ্ছে? এর সঠিক উত্তর কি আমরা জানি? জানেন নীতিনির্ধারকরা? চেষ্টা করেছেন জানার? একটু কি অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে না? মেধাকে প্রাধান্য না দিয়ে, কেমন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাইছি?

চোখের সামনে লাখ লাখ অনিয়ম-অরাজকতা। শেখার বা অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো সংবাদের অভাব। থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়, সামনে আসে না। মানুষই তো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যাবে?

এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ তো উদ্যম হারাতে পারে না। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কীভাবে?
  • Courtesy: The Daily Star / Bangla / Jul 16, 2018

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড - ছিল সোনা, হয়ে গেছে মাটি!

  • শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধান
  • ভল্টে রাখা ৯৬৩ কেজি সোনা যাচাই করে গুরুতর অনিয়ম মিলেছে
  • ছিল সোনার চাকতি, হয়ে গেছে মিশ্র ধাতু
  • ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট
  • ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে এনবিআরের চিঠি



‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বেড়াল’। সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল-এর সেই ভুতুড়ে কাণ্ড বাস্তবেও ঘটে। আর তা ঘটেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেই। ছিল সোনা, হয়ে গেছে মাটি। জমা রাখা হয়েছিল ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি, তা হয়ে আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ছিল ২২ ক্যারেট সোনা, হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ ভয়ংকর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। গত জানুয়ারিতে কমিটি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়। গত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। পরিদর্শন দল ভল্টে রাখা সোনার যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ ছিল একটি সোনার চাকতি ও আংটি নিয়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। 

কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। 

প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন দল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া সোনা যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, সোনার অলংকার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্য টাকা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। সোনার ক্যারেটের তারতম্য ঘটানোর কারণে সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

ক্যারেটের তারতম্য হলে সোনার দামের কী পার্থক্য হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নির্বাহী কমিটির সদস্য দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ক্যারেটের মাধ্যমে সোনার মান নির্ধারিত হয়। আর মান অনুসারে সোনার দাম কমবেশি হয়। ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেটের সোনা এবং ১৮ ক্যারেটের সোনার দামে বড় অঙ্কের পার্থক্য আছে।

শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক সোনা নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন সোনা জমা রাখা হয়, তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বর্ণকার দিয়ে পরীক্ষা করে সোনার মান নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই সব সোনা মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি অকল্পনীয়। যারা কাস্টডিয়ান, তাদের হাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিস্মিতই হতে হয়। ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ব্যাংকে কাজ করার সূত্রে আমি জানি, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকেন হাতে গোনা কয়েকজন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে, সে তথ্য থেকে ঘটনার সময় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে। ঘটনাটিকে ছোট ভাবার কারণ নেই। ভল্টের মতো উচ্চ গুরুত্বের জায়গায় এমন অনিয়মকে গুরুত্ব না দিলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আধা-সরকারি পত্র পাঠিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সামনাসামনি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর মেইলে লিখিত প্রশ্ন পাঠালে নয় দিনেও তিনি জবাব দেননি। পরে তাঁর সঙ্গে আবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই অবহিত করার মতো সুস্পষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। কী কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়েছে, কারা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেটা বের করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা করতে না পারলে তাদের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হবে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৭,২০১৮ 

Even teachers are not spared!

Why no action against the attackers?


We have, over the last few weeks witnessed the vicious attacks on students at Dhaka University and Rajshahi University by members of the student wing of the ruling party, attacks that left these students severely injured and then arrested by law enforcement agents. Meanwhile the attackers, the pictures of whom were published in various papers, have gone scot free. This time teachers taking part in a demonstration calling for a safe campus and immediate release of the detained students, have been assaulted – again by alleged members of Chhatra League. It seems these bullies will not stop at any level of indecency when it comes to attacking whoever they find voicing any kind of protest. What is worse is that no action from the authorities is taken against them even though they have clearly violated law.

The three teachers who were assaulted along with students on July 15, by BCL members were doing what is expected of teachers—standing by their students in their legitimate demand to want a campus free from violence and intimidation. But they were not spared and given the minimum courtesy due to a teacher. We must ask at this point, why no action has been taken against these attackers who it seems had planned their assault well in advance? Instead Dhaka university authorities have chided the teachers for taking part in the demonstrations. Where is the administrative support for teachers and students under physical assault?

Thirteen Supreme Court lawyers have sent notices to Dhaka University and Rajshahi University authorities demanding what action has been taken against the BCL men who had carried out previous attacks in those campuses. The inaction of the authorities of the universities has only encouraged the latest spate of violence by members of the same organisation.

The remarks of Awami League General Secretary and road, transport and bridges minister denying that the attackers in the recent incident were BCL members, are baffling, to say the least. The attackers, whose pictures have been published, have been identified as members of this youth organisation with some of them holding leadership posts. Instead of making such incredible statements the minister should condemn the attacks and call for immediate action against these hostile individuals who are maligning their parent party and the government's public image.

Courtesy: The Daily Star /Editorial /Jul 17, 2018

Unsettled L/cs, ghostly import

BB detects violations in forex transactions; importers open LCs, transfer money abroad but no bills of entry submitted

Jebun Nesa Alo

The Bangladesh Bank has detected some gross violations in foreign exchange transactions that have raised concerns about money laundering.
The violations have taken place in the following way.

First, letters of credit (LCs) were opened with loans from banks, and the money was transferred abroad to the designated importer's accounts. But then the importers didn't bother to submit the bills of entry -- the document to prove that the goods actually entered the country. In bankers' opinion, it signifies that the goods did not enter the country and money had taken flight.

This is a major financial irregularity, and this is exactly what is happening right now. According to BB estimates, about 7 percent of the LCs remains mysteriously unsettled with no bill of entry submitted.

Janata Bank alone shares 3 percent of the LCs or about half of the cases of non-submission involving around $1 billion, and a number of cases relate to one company -- Beximco Fashions.

JB DIDN’T PAY HEED TO BB WARNINGS

This major foreign exchange violation has made the BB worried, and it served five warning notices on Janata Bank from January last year to April this year. But the state-run bank did not pay heed to the central bank's warnings and continued to give LC facilities to Beximco Fashions, violating the rules.

Janata Bank even showed callousness in replying to the BB's warning notices. For instance, it replied to the first notice 61 days after it was served, and took 56 days to respond to the second warning.

In its every reply, the state-run lender said the violation had occurred because their officers were not well-trained about the foreign exchange rules.

On January 25, the central bank served a show-cause notice on Janata Bank, threatening to cancel the state-run bank's authorised dealer licence and impose a penalty of Tk 10 lakh. Later, Janata Bank was penalised Tk 10 lakh on May 28 as its reply could not satisfy the central bank.

“The bank has been fined Tk 10 lakh for not following the central bank's instructions and for repetition of the same irregularities,” the BB said in its letter to the state-run bank on May 28. 

Beximco Fashions, an export-oriented garment company of Beximco Group, opened LCs for imports but could not submit bills of entry to the bank against the imported goods, according to BB findings.

JB CONTINUES DEFYING BB

Janata Bank continued to make advance payments against the LCs of the firm despite having overdue bills of entry which is strictly prohibited as per the BB's foreign exchange guidelines.

According to the guidelines, banks will have to ensure that importers don't have bills of entry pending for submission beyond the stipulated period of four months against any advance remittance for imports. If an importer fails to submit its certified invoice of imported goods, it will not be allowed to open any new LCs through banks.

Contacted, Janata Bank Managing Director Md Abdus Salam Azad said Beximco Group made delays in submitting the bills of entry to the bank against its imported goods. The BB has extended time till September 30 for the Group to match the pending invoice, he said.

According to the BB findings, the overdue bills of Beximco Group with Janata Bank involved about $3.5 million as of April. Of the amount, Beximco Fashions accounted for a significant portion.

Moreover, the bank opened new LCs of $3.6 million against Beximco Fashions from January last year to April this year though the firm had overdue bills of entry. 

An internal audit by the BB raised objection last year against the new LC opening of Beximco Fashions in breach of the rules and asked the department concerned to look into it, according to a source at the BB.

On April 15, Janata Bank sought time extension from the BB to adjust the overdue bills of Beximco Group.

Later, the state-run bank applied to the BB on June 10 for waiving the Tk 10 lakh fine as financial penalty is a serious discredit for its management and board.

Janata Bank's application was placed at the BB board's meeting on Sunday, and the board decided to waive the penalty.

Asked, BB Deputy Governor Abu Hena Mohd Razee Hassan said the board made the decision on condition that the state-run bank would settle the overdue bills of entry.

ISN’T IT MONEY LAUNDERING?

Contacted, Beximco Group claimed that it had submitted documents to Janata Bank for each consignment.

“The number of part shipments made against individual LCs and the bill of entry against each consignment has to be matched with each LC. Since this matching was not done, there was a discrepancy between Bangladesh Bank records and Janata Bank's record,” it said in an email to this newspaper.

Talking to this correspondent, a top executive of a private bank said it is the bank's responsibility to match the bill of entry against each consignment but the client also has an important role to play in this regard.

M Mahfuzur Rahman, a former executive director of the BB and deputy head of the Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU), said overdue bills of entry is a serious issue, and trade-based money laundering is taking place through imports.

Analysts have long been demanding probes into whether money laundering is going on in the name of imports, said Khondkar Ibrahim Khaled, an ex-BB deputy governor.

As the central bank has finally detected suspicious imports through Janata Bank, it should go for a detailed investigation in collaboration with the BFIU and the customs department to unearth this type of cases, he said.

In January this year, the Centre for Policy Dialogue, a think-tank, advised the government to investigate whether capital flight has taken place through imports of sugar, edible oil and cotton.

“Despite global price stability of raw cotton and an upturn in the growth of garment exports, the high growth of more than 75 percent in import payments for this item appears to be suspicious,” the CPD said in its latest study “State of the Bangladesh Economy in FY 2017-18”. 

  • Courtesy: The Daily Star/ Jul 17, 2018

ছাত্রলীগ কি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে?

এবার শিক্ষকদের হেনস্তা


সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমনের অপচেষ্টা ন্যক্কারজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, তাঁরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপরও চড়াও হচ্ছেন। গত রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

শিক্ষকদের উদ্দেশে কটূক্তি করা, তাঁদের ধাক্কা দেওয়া ও নানাভাবে অপদস্থ করার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের ছাত্রত্বের মর্যাদাকেই ভূলুণ্ঠিত করেছেন; এমন আত্মমর্যাদার বোধ তাঁদের আদৌ রয়েছে কি না, এটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

এর চেয়েও বড় আপত্তির বিষয়, ছাত্রলীগ নামধারী এই সন্ত্রাসীদের দ্বারা শিক্ষকদের হেনস্তার ঘটনাটি ঘটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্বিকার রয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসন কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুরোটা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের ভেতরেই ছাত্রলীগের সহিংস দৌরাত্ম্য নীরব দর্শকের মতো অবলোকন করে চলেছে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগত’ প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বলা হলো এই যুক্তি দেখিয়ে যে ক্যাম্পাসের শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তথাকথিত বহিরাগতরা। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যিনি বা যাঁরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালালেন এবং সম্মানিত শিক্ষকদের অপদস্থ করলেন, তাঁরা কি বহিরাগত? যদি বহিরাগত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁরা এসব করার সুযোগ কীভাবে পেলেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আদৌ পালন করছে? নাকি ছাত্রলীগের যা খুশি তা করার সুযোগ নিশ্চিত করছে?

আরও গুরুতর বিষয় হলো, কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আক্রমণের ঘটনাগুলো ঘটছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই, কিন্তু আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো আন্দোলনকারীদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, মামলার আসামি করা হচ্ছে, পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। 

অর্থাৎ আইন প্রয়োগকারীদের কাছে ছাত্রলীগের সহিংস আচরণ প্রশ্রয় পাচ্ছে, কিন্তু আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত ১৩ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁরা প্রকাশ্যে সহিংস হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুলের পা হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ছবি, তাঁর ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণের ছবি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। আক্রমণকারীদের প্রত্যেকের চেহারা ও পরিচয় প্রচারিত হওয়ার পরও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু কেন? তঁারা কি দেশের আইনকানুনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখন ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই, সম্মেলনের পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগের নামে কিছু হচ্ছে কি না বা কেউ কিছু করছে কি না—এটা আমাকে জেনে নিতে হবে।’ 

মন্ত্রীর এই বক্তব্য কতটা আন্তরিক, সে প্রশ্ন না তুলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন রাখতে চাই, যাঁরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অবিরাম সশস্ত্র আক্রমণ চালাচ্ছেন এবং আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশকারী শিক্ষকদের হেনস্তা-অপদস্থ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? এই আক্রমণকারীরা কারা? কী করে তাঁদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিধিবিধান ও প্রজাতন্ত্রের আইনের শাসন অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে?

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সম্পাদকীয়/ জুলাই ১৭, ২০১৮

Monday, July 16, 2018

সরকারের নৈতিক অবস্থান দেখা যায়নি

কোটা সংস্কার দাবিদারদের ওপর নিপীড়ন

কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়েছেন। এই আন্দোলন অন্যায়, অযৌক্তিক, সংবিধানবিরোধী কিংবা জনমতের বিপক্ষে এ ধরনের কথা কেউ বলেনি; বরং নাগরিক সমাজ ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে এর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়েছে। সিভিল সার্ভিসের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তারা এই আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি জুগিয়েছেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়ে কোটা প্রথা একেবারে বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন সংসদে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করে সব কিছু যেন একেবারে উল্টে গেল। আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন চড়াও হয়েছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে মামলা। অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন, অনেকে পুলিশি রিমান্ডের পর কারাগারে গেছেন। কোনো একটি আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয়ার পর, সেটিকে এ ধরনের অন্যায় পদ্ধতিতে দমনের পথ বেছে নেয়া নজিরবিহীন। কেবল বাংলাদেশেই যেন এটা সম্ভব। এ ধরনের অনৈতিক অবস্থান থেকে সরকার পিছু হটলে তা মঙ্গলজনক নয়। 

এ দিকে কারো কারো ওপর নেমে এসেছে নির্মম নির্যাতন। প্রথমে ছাত্রলীগের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন আন্দোলনকারীদের অনেকে। পরে পুলিশ তাদের আটক করে রিমান্ডে নিয়েছে। এরপর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এখন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে গ্রামের একেবারে দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাশেদসহ কয়েকজন নেতার অবস্থা করুণ। 

এক গোলটেবিল আলোচনায় রাশেদের দরিদ্র মা তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য করুণ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করত, মা কেমন আছো? আজ কত দিন আমার বাবার মুখ থেকে এই মা ডাক শুনি না। আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে। আমার বাবা তো শুধু একটা চাকরি চেয়েছিল। কেন তাকে আজ এত দিন ধরে রিমান্ডে রাখা হয়েছে? প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আমার ছেলেকে আপনারা ফিরিয়ে দিন।’ রাশেদের মা সালেহা বেগম এসব কথা বলে কাঁদলেন, কাঁদালেন অন্যদের। 

সালেহা বেগম আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন, আমার সন্তানকে আমি ভিক্ষা চাই। তারে পেলে আমি গ্রামে চলে যাবো। আমার মনির (রাশেদের) আর চাকরির দরকার নেই। আমার মনিরে যেন রিমান্ড থেকে মুক্তি করে দেয়। আমার সন্তানকে বাঁচান।’ রাশেদের মা জানান, তার স্বামী রাজমিস্ত্রি। তার কিডনি রোগ রয়েছে। তিনি বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালান। কী কারণে এমন একজনকে রাষ্ট্র নিপীড়ন করবে, তার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্য দিকে প্রবাসে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। 

বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত ৬২ শিক্ষার্থী এক বিবৃতিতে বলেন, কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। তারা বলেন, এমন দমনপীড়নের ঘটনা দিয়ে আমরা বহির্বিশ্বে পরিচিত হতে চাই না। পূর্বঘোষিত আন্দোলনে দমনপীড়নের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। তাদের মতে, ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কোটা সংস্কার যৌক্তিক একটি দাবি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনেককে পুলিশ গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। এমনকি নেতাদের রিমান্ডে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিপীড়িত হয়েছেন। 

বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের নিরাপদ আশ্রয়। শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা জরুরি। আমরা সরকারকে চলমান সঙ্কট দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানাই। 

আন্দোলনকারীদের দুরবস্থার মধ্যে নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে যতটা প্রতিবাদ আসা দরকার ছিল, সেটি দেখা যায়নি। আমরা মনে করি, এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ দরকার। তার চেয়ে বড় বেশি প্রয়োজন সরকারের নৈতিক অবস্থান সমুন্নত করা। সরকার একটি আন্দোলনের ন্যায্যতা স্বীকার করে নিয়ে কিভাবে পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকারীদের ওপর খড়গহস্ত হতে পারে? এ অবস্থা দ্রুত শুধরানো দরকার।

  • Courtesy: NayaDiganta /Editorial/ Jul 16, 2018

সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতিতে দেশ

অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব রোধ করু


২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২২ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে। 

বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না বাড়লেও আমদানি বাড়ছে দ্রুতগতিতে। রফতানি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহের চেয়ে আমদানি দ্রুত বাড়ায় লেনদেনের ভারসাম্যের চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর চাপ গিয়ে পড়ছে মুদ্রা বিনিময় বাজারে, ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ওপরও এক ধরনের চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে এতে। 

সাম্প্রতিক সময়ের রফতানি ও আমদানির ধারা লক্ষ করলে দেখা যায়, এ দুটির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্য হচ্ছে না। আমদানির ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতির বাইরে পেট্রোলিয়াম, খাদ্যপণ্য প্রভৃতি অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে। বিনিয়োগেও শ্লথ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। রফতানির ক্ষেত্রে যেভাবে মূল্যপতন হচ্ছে, আমদানির ক্ষেত্রে সেভাবে হচ্ছে না। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। আমদানি-রফতানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নও উঠছে। এক্ষেত্রে রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলে তা সামগ্রিকভাবেই অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লেনদেন ভারসাম্যে চাপ তৈরি হলে মুদ্রার বিনিময় হারেও তারতম্য দেখা দেয়। মুদ্রার দরবৃদ্ধি ঘটলে তা আমদানি পণ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। 

আবার ঘাটতি যদি ক্রমাগত বাড়তেই থাকে, তাহলে সামগ্রিকভাবে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, মুদ্রার বিনিময় হার, পণ্যমূল্য সবই প্রভাবিত হবে। যখন আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, তখন দেশের নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। এমনিতেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খাদ্য সূচকের মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতির ভেতর বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকলে তা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সুতরাং বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে সংশ্লিষ্টদের এমন পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন, যাতে দেশের অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব না পড়ে।

প্রবাসী আয়ের ধারা অবশ্য কিছুটা ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্যই। শিগগির এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে— এমন কোনো লক্ষণও নেই। এ অবস্থায় উচিত হবে রফতানি আয় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। বিদেশী নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করেও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেজন্য অবশ্য উন্নতি করতে হবে জ্বালানিসহ অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো খাতে। বাস্তবায়নাধীন বড় প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে এ দুই খাতের কিছুটা উন্নতি হয়তো হবে। 

তবে এসবের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতি হিসাবে ভারসাম্য কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যাবে, সেজন্য প্রয়োজনীয় বিকল্পও বের করতে হবে নীতিনির্ধারকদের। মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি দেখিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এ ধরনের প্রবণতা রোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ না থাকলেও বর্তমানের এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও, বিনষ্ট হবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।

  • Courtesy: BanikBarta /Editorial/ Jul 16,2018