Search

Thursday, July 19, 2018

বাউবি’র সম্মানিত ভিসি ও তাঁর কীর্তি!

সৈয়দ কবির হুসেন 


আজ সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপককে তাঁদের সফল শিক্ষা কর্মজীবন শেষে সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছে। শিক্ষক ‘সম্মানিত’ আমাদের দেশে আজকে মাত্র কয়েক দশকের ‘সম্ভবত’ রাজনৈতিক প্রথা। আর বলাবাহুল্য সেটি কেবলই অর্থের দাঁড়িপাল্লায়। সে জন্য আজও এক বঞ্চিত শিক্ষক সমাজের সদস্যরা এমপিওভুক্তির জন্য ‘জননীর’ কাছে আবেদন জানিয়ে চলেছেন।  হয়তো তাঁদের সবুর করার পরীক্ষা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের সুবিধাজনক শুভক্ষণে তাঁদের কপালে এমপিও জুটবে। তারা ধন্য হবেন।

শিক্ষকদের সিভিল ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য বহুকাল আগে থেকেই বিসিএস ক্যাডারের হায়ার সেকেন্ডারি পর্যায়ে শিক্ষক নিযোগের রীতি প্রচলিত আছে। এখন হয়তো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সিনিয়র শিক্ষক পদে এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া হবে।

এমপিওধারী শিক্ষকরা বেশ মোটা বেতন পান বলতেই হবে। সে অর্থে তাঁরা সচ্ছল। তাই তরুণেরা এসব পদ পেতে স্বাভাবকি কারণেই খুবই আগ্রহী। সেই সাথে যদি ফাও কোচিংটাও ধরা যায়! আলাদা করে এনটিআরসিএ ( ন্যাশনাল টিচার্স রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) নামে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। আর সেই সাথে এতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কণ্টকিত বিধিবিধান শত হিসেবে দেওয়া হয়েছে যার একমাত্র উদ্দেশ্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা মেধার ভিত্তিতে।

এখন আমরা দেখবো ঐ সব শর্ত আসলে মেধাকে লালন করছে কি না। আমরা দেখেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাম্প্রতিককালে কী সব ঘটনা ঘটেছে। এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী নিজেকেই কেমন করে হেনস্থা যোগ্য করে চুপ হয়ে গেছেন। আর দেখা গেছে আবেদনকারীদের হাতে যে অসাধারণ প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে যার বেশিরভাগ উৎপাদিত হয়েছে কোচিং সেন্টারে আর অবশ্যই ভুলে ভরা। যেভাবেই হোক চলে গেছে ইলেট্রনিক যন্ত্রে, সকল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

আমাদের আজকের আলোচ্য বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৯, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত একটি ছোট সংবাদ। শিরনাম —  ছেলেকে নিয়োগ দিতে আইন শিথিল করলেন ভিসি। উনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায়ের (বাউবি) সম্মানিত উপাচার্য - অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান। খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী ছেলে জাহেদকে বাউবি’র স্কুল অব বিজনেস-এর  সহকারী অধ্যাপক পদে  নিয়োগ দেওয়ার জন্য বারংবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি  শিথিল করেছেন। অবশ্য এই সংশোধনের যথাপ্রক্রিয়া অনুসরণ করার হয়েছে  সে বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য সংবাদে নেই। তবে বলা হয়েছে, এ সম্পর্কিত কাগজপত্রে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধকের স্বাক্ষর থাকার কথা সেখানে ড. মান্নান সই করেছেন। এটা কী ধরনের লক্ষণ বাউবি কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। ‘ এখানে শিক্ষক মহোদয়, ‘স্টেট, আই অ্যাম দ্য স্টেট’ মতো কারবার করেছেন না বলে উপায় নেই। তিনিই সর্বাধিকারী। তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এটা। হয়তো বা তিনি একটি বিশেষ ঐতিহ্যের ধারক যে ঐতিহ্যের ধারক হয়তোবা পদার্থবিদ্যার সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ও বাউবির প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা শমশের আলী নন।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ঠিক পরপরই এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিখ্যাত উপাচার্য ড. আবদুল মতিনের নিজ প্রযোজনায়। তিনি তাঁর আপন পুত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একান্ত করে নেবার ব্যবস্থা করতেন। তখন  সকল বিধিবিধান তুচ্ছ করে সেই বিধিপরিপন্থি একান্ত ব্যবস্থা নিয়ে ছিলেন। কাজেই ড. মান্নান মনে হয় সেই তরিকার অনুসারী। একাজটির দায়ভার অবশ্য তাঁর যে একার নয় তা বলাবাহুল্য। ঢাবির সদ্যসাবেক ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকীর কথাই ধরি। তিনি শতাধিক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে । তাহলে তো ড. মান্নানের জন্য অধিকন্তু না দোষাবে কেন? বর্তমান ভিসি বলেছিলেন, কোটা নিয়ে তাঁর তো কিছু করার নেই। তবু তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। যার এই দুষ্কর্ম ঘটিয়েছে তাদের কোনো ট্রেস করা যায়নি। তবে ভিসি সাহেব ভালো আছেন। আর তাঁর গুণধর পুত্র বলেছেন তিনি কোটা প্রথার সমর্থক। 

ড. আবদুল মান্নানও সম্ভবত এ ধরনের কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাইছেন বাউবিতে। তাঁর ৩৮ বছর শ্যালিকার  চাকরি দিয়েছেন। অবশেষে পুত্রের একটা ব্যবস্থা করতে সমর্থ হলেন। আর খবর অনুযায়ী, আরও আত্নীয়ের জন্য এই আকালের বাজারে চাকরির একটা রাহা করতে পারলেন। এজন্য তাঁকেও ধন্যবাদ আমাদেরকে দিতেই হয়।

জনতা ব্যাংকে আবারও বড় ঋণ কেলেঙ্কারি


  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধান
  • ভুয়া রপ্তানির নামে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তার অর্থ তুলে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। 


জনতা ব্যাংকে আবারও বড় ঋণ কেলেঙ্কারি। এবার ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।
অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়নও করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদেশে রপ্তানির ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটি সরকারি ব্যাংক ও সরকারের তহবিল থেকে মাত্র পাঁচ বছরেই নিয়ে নিয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। ২০১৩ সাল থেকে এসব অনিয়মের শুরু।

খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, গ্রাহক তিনভাবে এর সুবিধা ভোগ করেছেন। রপ্তানি বিলের টাকা বিদেশে রেখে দিয়েছেন। ব্যাংক সেই বিল কিনে গ্রাহককে নগদ টাকা দিয়েছে। আবার এসব রপ্তানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তাও নিয়েছে গ্রাহক।

জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার মাধ্যমে এত সব জালিয়াতি হয়েছে। শাখাটির মোট ঋণের ৯৮ শতাংশই এ গ্রুপের কাছে আটকা। যার সবই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

জনতা ব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

এর আগে এক গ্রাহককেই নিয়ম লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দেওয়ার খবর দিয়েছিল প্রথম আলো। আবারও একই ব্যাংকের নতুন এক কেলেঙ্কারির খবর মিলল। 

যেভাবে জালিয়াতি

কাগজে-কলমে ক্রিসেন্ট গ্রুপ চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে হংকং ও ব্যাংককে। সেই রপ্তানি বিল ক্রয় করে গ্রুপটিকে নগদে টাকা দিয়েছে ব্যাংক। এখন রপ্তানির টাকা ফেরত আসছে না। ব্যাংক চাপ দেওয়ায় মাঝে মাঝে কিছু অর্থ আসছে দুবাই থেকে। যদিও আমদানিকারক দেশ থেকেই টাকা আসার কথা। 

তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকার থেকে নেওয়া নগদ সহায়তার টাকা দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে গ্রুপটি।
জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় গ্রাহক বলতে ক্রিসেন্ট গ্রুপ একাই। শাখাটির মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের ঋণ ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি কোনো গ্রুপকে অর্থায়ন করা যায় না। কিন্তু ব্যাংকটির শাখা থেকে ঋণ হিসেবে গেছে মূলধনের ৫৫ শতাংশ।

ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, রূপালী কম্পোজিট লেদার, লেক্সকো লিমিটেড, গ্লোরী এগ্রোর কর্ণধার এম এ কাদের। আর রিমেক্স ফুটওয়্যার নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তাঁর ভাই এম এম আজিজ।

রপ্তানির টাকা ফেরত না আসার বিষয়ে গ্রুপটির কর্ণধার এম এ কাদের ১৭ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে সময়মতো ট্যানারি স্থানান্তর না করায় কারখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ কারণে সময়মতো চামড়া রপ্তানি করা যায়নি। ফলে ১ হাজার ২০০ কোটির বেশি টাকা বিদেশে আটকে আছে। চেষ্টা চলছে টাকা ফিরিয়ে আনার। এ জন্য দেড়-দুই বছর সময় লাগবে।

এম এ কাদের আরও জানান, হংকংয়ের প্রতিষ্ঠান চামড়া নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি করেছে। এ জন্য অন্য দেশ থেকে টাকা আসছে। তা ছাড়া তাঁর ভাই কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। আগে নামে ছিল, এখন বাবার পুরো ব্যবসা তিনি একাই দেখভাল করেন।

এত টাকা গেল কোথায়

গ্রুপটির রপ্তানির ৫৭৭টি বিলের টাকা দেশে ফেরত আসেনি। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ২৯৫ কোটি। এসব রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই কিনেছে হংকং ও থাইল্যান্ডের ৯টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন বাংলাদেশিরা। আবার পণ্য হংকংয়ে পাঠানো হলেও রপ্তানি বিল পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি করা এসব প্রতিষ্ঠান ভুয়া। রপ্তানি ভর্তুকির টাকা অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে নিয়ে ফেরত এনেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।

এদিকে, ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ শাখার ভোল্টের সীমা ৩ কোটি টাকা। এ জন্য গ্রাহকের হিসাবে যাওয়া টাকা উত্তোলনে ব্যবহার করা হতো প্রধান কার্যালয়ের পাশের স্থানীয় শাখাকে। সব অর্থই নগদে তুলে নিয়েছে গ্রাহক। এসব টাকার একটা অংশ গেছে শেয়ারবাজার, স্পিনিং মিল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইমামগঞ্জ শাখায় ৮১ কোটি টাকা জমা হলে সেদিনেই বেসরকারি খাতের আরেকটি ব্যাংকের সাতমসজিদ রোড শাখার ক্রিসেন্ট গ্রুপের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এইমস অ্যান্ড গ্রামীণ ওয়ানের শেয়ার কেনা হয়।

এ ছাড়া ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের হিসাব থেকে কয়েক দফায় টাকা গেছে দুটি স্পিনিং মিল, একটি বিমা কোম্পানি, একটি শেয়ার লেনদেনকারী কোম্পানি ও সাতটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই।

এম এ কাদের এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি সহায়তা ও ব্যাংকের টাকা দিয়ে সাভারে ১৩টি কোম্পানি করেছি। কোনো টাকা অপচয় করিনি। আমাকে একটু সময় দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। নগদ টাকা দিয়ে চামড়া কেনা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়া হয়েছে, এর সবই ব্যবসায়িক। কোথাও দোকান করতে টাকা দেওয়া হয়েছে, কিছু টাকা শেয়ারেও গেছে।

দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আবদুস সালাম। তাঁর মেয়াদেই সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়। ১৫ জুলাই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সময়ে রপ্তানির বেশির ভাগ টাকা ফেরত এসেছে। ২০০ কোটি টাকার মতো বাকি আছে। মেয়াদের শেষ সময়ে হজে থাকাকালে ও মেয়াদের পরে যেসব রপ্তানি হয়েছে, তা নিয়েই সমস্যা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপক নিজেই এসব অপকর্ম করেছেন।’

তাঁর সময়ে রপ্তানি বিল শাখার দায়িত্বে ছিলেন ডিএমডি মোহাম্মদ ফখরুল আলম। গত ১২ জুন ফখরুল আলমকে কৃষি ব্যাংকে বদলি করে সরকার। ৪ জুলাই কৃষি ব্যাংকে নিজ কার্যালয়ে বসে ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে, সবই শাখার কর্মকর্তারা করেছেন। আমি শুধু পর্ষদ ও এমডির নির্দেশনা পালন করেছি।’

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে জনতা ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে আব্দুছ ছালাম আজাদ। চলতি মাসে একাধিক দিন এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এই প্রতিবেদক। সবশেষ ১৫ জুলাই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যা হলো রপ্তানি বিলের অর্থ দেশে আসছে না। টাকা আনতে সংশ্লিষ্ট শাখা গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। দায়ের সবই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আর ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে চেয়ারম্যান হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। গত ৭ ডিসেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। ১৫ জুলাই প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এসব তো পর্ষদে আসে না। এমডি, ডিএমডি পর্যায়েই বিল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এসবের কিছুই আমি জানি না।’

তাঁদের সময়ে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক নাগিবুল ইসলাম ওরফে দীপু, টাঙ্গাইলের কালিহাতী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগ নেতা আবু নাসের প্রমুখ।

ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারাও এর সুবিধা পেয়েছেন। শাখার কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের চিত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৫-১৭ সালে শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিমের ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতার বাইরে ৬০ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনের চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক 

জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রিসেন্ট গ্রুপকে সহায়তা করার দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ১০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের হিসাব থেকে আর নগদ সহায়তার ৪০৮ কোটি টাকা কেটে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এসব অনিয়মের মূল কারণ হলো, আগের দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠছে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮ 

Govt, central bank must probe vault gold tampering

THE mismatch both in quality and quantity detected in the gold deposited into the Bangladesh Bank vault in an investigation of the Customs Intelligence and Investigation Directorate of the National Board of Revenue comes with shock and worry on a couple of counts. Although the Bangladesh Bank has brushed aside the investigation report saying that the mismatch was due to clerical mistakes and differences in measurement, it leaves people confused, about the efficiency of the people concerned dealing with the deposits and their records and about the event itself. It also questions the security measures that the Bangladesh Bank has deployed. 

The earlier incident of $81 million of the Bangladesh Bank being stolen from the bank’s account with the Federal Reserve Bank in New York in February 2016 only comes to corroborate this perception. The CIID team, which conducted the investigation between January and April 2017 to check the stock of gold in the central bank vault, in some cases, found the quality of deposited gold ornaments better that what they measured at the time of deposition by customs officials. In one case, the team found 11.2 carats, with 46.66 per cent purity, in a gold disk and 2.63 carats, with 15.12 per cent purity, in a gold ring, which the bank received as 18 carat gold with 80 per cent purity.

In 44 cases, the team found the amount of gold more than what was initially recorded. In 23 cases, as for quality, the team found 22 carat gold ornaments which the bank received as 18 carats. A probable embezzlement, pending further investigation, of gold from the disk and the ring could cause the government Tk 1,12,000 in financial losses while disparity in the quantity and quality in gold bars and ornaments could cause the government Tk 19.1 million in financial losses. The central bank officials sought to say that they use a six-tier security system where even the governor needs authentication for entry and that they asked customs intelligence to have the gold checked at the Bangladesh Atomic Energy Commission, which the customs people refused, as they think the problems were with the quality measurement tools of customs intelligence. 

In a situation like this, it is imperative for the government to set up an independent investigation to find out whether the gold deposited into the Bangladesh Bank vault has either been replaced or tampered. It is now for both the government and the central bank to dispel the confusion that has been created centring on the matter.

The government and the central bank, under the circumstance, must set up an investigation to establish what happened to the gold deposited into the central bank vault and make the report public as people have the right to know this, especially after the Bangladesh Bank reserve theft from its account with New York’s Federal Reserve Bank. The issue also entails on the government to weigh the security system that the central bank has deployed and whether it is up to the standards that the central bank claims it to be.

Courtesy: New Age /Editorial /Jul 19, 2018

বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ বিদেশী

মেহেদী হাসান

  • বেকারত্বের বিপরীতে দেশে লাখ লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত
  • দেশে বেকার ৪ কোটি ৮২ লাখ মানুষ
  • রেমিটেন্সের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা প্রতি বছর নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা


দেশে চার কোটি ৮২ লাখ মানুষ প্রকৃত বেকার। বেকারত্বের কারণে ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে বিদেশে কর্মরত। কাজের অভাবে ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে হলেও বিদেশে যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন লাখ লাখ তরুণ বেকার। সংসারের অভাব মেটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা উপায়ে বিদেশের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ মারা যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশী।

একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ বেকার। বেকারত্বের এমন চিত্র যে দেশে সে দেশে তিন লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। এক দিকে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অপর দিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ টাকা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশীরা। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল এবং বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত দেশে এ বিপরীত চিত্র মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। 

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারের এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইএলওর সংজ্ঞা অনুসারে মাসে এক ঘণ্টা কাজ করে এমন লোকও বেকার নয়। তবে বিবিএসের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। 

গত বছর ৮ জুলাই আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে তিন লাখ বিদেশী কর্মরত।

২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এবং তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ বিদেশী কাজ করে। বেতনভাতা বাবদ তারা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যায়।’

২০১৩ সালের ২১ মে সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে ভারতের রেমিট্যান্স অর্জনবিষয়ক একটি খবরে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছে। তাতে ভারত থেকে সে দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, ভারতের যেসব অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে সেগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা। খবরটিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশের গার্মেন্টস, টেক্সটাইলস এবং বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন। 

গত বছর ৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিকের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে শুধু ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে গেছে। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দি ইকোনমিক্স টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের তথ্য অনুযায়ী ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স (বিদেশে কর্মরতদের পাঠানো অর্থ) আয় করে তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের মাধ্যমেই ভারত বাংলাদেশ থেকে এ বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্জন করছে প্রতি বছর। 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১২ ও ২০১৩ সালে ভারত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় সৌদি আরব, চতুর্থ যুক্তরাজ্য ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে। 

২০১৩ সালে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা ১৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। আর বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা ৪ বিলিয়ন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে গেছেন।

একটি তথ্যমতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে ২২ হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট শিল্পের উঁচু পদগুলো বিদেশীদের দখলে রয়েছে মর্মে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা যে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছেন, তা নয়; বরং এ শিল্পের নিয়ন্ত্রণও অনেকটা তাদের হাতে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। 

দক্ষ জনবলের অভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয়সহ বিদেশীরা কর্মরত থাকলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। উচ্চশিক্ষার সাথে বাস্তবতার সমন্বয়হীনতা ও শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি কয়েক বছর ধরে বহুল আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

২০১৬-১৭ বিবিএসের জরিপের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার ১৩ দশমিক ৪ ভাগ। অন্য দিকে যারা কখনো স্কুলে যায়নি তাদের বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম যথা ১ দশমিক ৫ ভাগ। 

২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দ্রুত বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১২তম।

২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে উচ্চশিার সুযোগ বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক েেত্রই তা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে বাড়ছে শিতি বেকারের সংখ্যা। 

ইকোনমিস্টের এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিায় বিনিয়োগ বাড়লেও শিার গুণগত মান বাড়েনি। এর ফলে শিতি বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আর শ্রমবাজার ও শিাসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় নেই। স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের চাহিদানুযায়ী উচ্চশিায় শিতিদের কারিগরি ও কাজ করার মতো দতা কম। তাই উচ্চশিতি স্নাতকদের অনেকে বেতন পান অনেক কম।

সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিদেশী নাগরিকেরা বিশেষজ্ঞ, কান্ট্রি ম্যানেজার, কনসাল্ট্যান্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার, টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, চিকিৎসক, নার্স, ম্যানেজার, প্রকৌশলী, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ডিরেক্টর, কুক, ফ্যাশন ডিজাইনার ও শিক ক্যাটাগরিতে কাজ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় (ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ১১টি অধিভুক্ত/অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সর্বমোট সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৬ জন। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন। 

প্রতি বছর এভাবে লাখ লাখ তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হলেও দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা খুব কম সুযোগ পান।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ১৯,২০১৮ 


আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই আঁতুড়ঘরে

ঢাকার যানজট নিরসনে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সাড়ে তিন বছর পার হলেও এতে অন্তর্ভুক্ত সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই এখনো কাগজে-কলমে। যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর হওয়ায় জনদুর্ভোগও বাড়ছে। ব্যস্ত সড়কগুলোয় মেট্রোরেল, বিআরটির মতো প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মানুষ যেন বিকল্প হিসেবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারে, সেটিই ছিল উদ্দেশ্য। সাত বছরেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা যায়নি। এ কারণে মেট্রোরেল নির্মাণকে ঘিরে মিরপুর এলাকার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। পরিবহন সংকট ও তীব্র যানজট রাজধানীবাসীর অন্যতম নাগরিক সমস্যা। এ সমস্যা মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি ছাড়াও জন্ম দিচ্ছে আরো অনেক সমস্যার। এতে নাগরিকদের মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের ক্ষতি এরই মধ্যে বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি অপচয় বাড়ছে। বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথ নেই। প্রকৃতপক্ষে এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় এর মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আরএসটিপির কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নগরবাসী স্বচক্ষেই তা দেখছে। রাজধানীতে কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ ও কয়েকটি প্রধান সড়ক রিকশামুক্ত করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই। বৃত্তাকার নৌপথ চালু হলেও তা স্থায়ী রূপ পায়নি। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বটে, তবে এসব কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, কে জানে। ফুটপাত দখলমুক্ত করার মতো সামান্য কাজটিও করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বস্তুত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়গুলো বরাবর উপেক্ষিত হয়েই এসেছে। রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট তীব্র। অথচ এ থেকে উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত সীমিত। বিদ্যমান গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্যের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। এ খাতেও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব। ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ২০০৯ সালে এসটিপির আওতায় বিআরএফ অর্থাৎ একটি রুটে একটি কোম্পানির উন্নতমানের বাস ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হলেও যানজট কমেনি। অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপেও এ অবস্থার তেমন পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫-৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নে নেই সরকারের কার্যকর উদ্যোগ। এসটিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ পরিকল্পনা শুধুই কাগজপত্রে। ফলে সরকারের এমন একটি সুন্দর সময়োপযোগী পরিকল্পনা যেন আঁতুড়ঘরেই মারা যাওয়ার পথে। কারণ এসটিপিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব কার্যক্রম বা প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখা হয়, এর মধ্যে দুটি ব্যতীত আর কোনোটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজই শুরু করা যায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কাজ শুরু করতে গেলে প্রাথমিক যেসব কাজ জরুরি, যেমন— প্রাক-সমীক্ষা, চূড়ান্ত সমীক্ষা; সেগুলো শুরু করা যায়নি। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আরএসটিপি প্রণয়নকারী সংস্থায় দক্ষ, যোগ্য ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

ঢাকার যানজট নিরসনে বহু অর্থ ও সময় ব্যয়ে একাধিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নের অভাবে তা কোনো ফলই বয়ে আনেনি ঢাকাবাসীর জন্য। বরং সমন্বয়হীনতা ও এসটিপির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু প্রকল্প গ্রহণ করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আরএসটিপি বাস্তবায়নে অর্থায়নও কম বড় সমস্যা নয়। বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অর্থছাড়ও পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বৈকি। ২০২০ সালে শেষ হবে আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সময়। এ সময়েও যদি অধিকাংশ প্রকল্প আলোর মুখ না দেখে, তাহলে সেটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ জুলাই ১৯,২০১৮ 

শাহাবুদ্দিন আলম ব্যাংক লুটের কারিগর

ওমর ফারুক ও হাছান আদনান


চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন আলম। ভাগ্যগুণে দেশের দুই ডজন ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। ব্যাংকগুলোও বাছবিচার ছাড়াই প্রায় জামানতবিহীন ঋণ দিয়েছে এ ব্যবসায়ীকে। ঋণের অর্থে তিনি গড়ে তুলেছেন দেড় ডজন কোম্পানি। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের ভারে নিমজ্জিত এসএ গ্রুপের এ কর্ণধার এখন চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডোবানোর। যদিও তিনি নিজেই একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক এবং তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক মামলা রয়েছে পাওনাদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।

শাহাবুদ্দিন আলমের এসএ গ্রুপের অধীন অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান ‘সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড’। ঋণের দায়ে নিমজ্জিত হয়ে কোম্পানিটি অবসায়ন বা বিলুপ্তির জন্য আদালতে আবেদন করেছেন তিনি। তবে এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংক।

এসএ গ্রুপকে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা হয়েছে বণিক বার্তার। প্রত্যেকেই জানান, গ্রুপটিকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। নামমাত্র জামানত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামানত ছাড়াই শাহাবুদ্দিন আলম ঋণ পেয়েছেন। ঋণের এ অর্থ আদায়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যাংকের নির্বাহীরা।

তারা বলছেন, ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ে শাহাবুদ্দিন আলমের মতো গ্রাহক দুর্লভ। নানা কৌশলে তিনি ব্যাংকারদের মুগ্ধ করেছেন। এতেই শত শত কোটি টাকার ঋণ তার পকেটে ঢুকেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এসএ গ্রুপের ঋণ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির কাছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ৪৮১ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৪২৩ কোটি ও ব্যাংক এশিয়া সিডিএ শাখার ৩৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার বড় অংকের এ ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে নামমাত্র।

পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া গ্রুপটিকে কেন ঋণ দেয়া হয়েছে— জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বণিক বার্তাকে বলেন, আপনি ব্যাংকার না হয়েও আমাকে এ প্রশ্ন করছেন। অথচ ব্যাংকার হয়েও আমরা নিজেকে প্রশ্নটি করতে পারিনি। এসএ গ্রুপকে ঋণ দেয়া প্রতিটি ব্যাংকই বিপদে আছে। কোম্পানি অবসায়ন আবেদনের বিরুদ্ধে ব্যাংক এশিয়া আপিল করেছে। আপিল আদেশ আমাদের পক্ষে এসেছে।

এসএ গ্রুপের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ২২১ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রুপটির কাছে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণের পরিমাণ ২০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১৫১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘি শাখার ১১৮ কোটি ও কৃষি ব্যাংক ষোলশহর শাখার ১০০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখারও ২৮৮ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এসএ গ্রুপের কাছে।

এসএ গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে গ্রুপটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী। তিনি বলেন, গ্রুপটির কাছে ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ২০-২৫ কোটি টাকার সম্পদ। এজন্য আদালতে কোম্পানি অবসায়নের আবেদনের বিরুদ্ধে পূবালী ব্যাংকের পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আদালতের আদেশ পূবালী ব্যাংকের পক্ষে এসেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা এসএ গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রুপটিতে উত্তরা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ঋণ রয়েছে ৫২ কোটি, প্রাইম লিজিংয়ের ৩৬ কোটি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১৪ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখারও ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এসএ গ্রুপের কাছে।

এসএ গ্রুপকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা ছিল বলে জানান ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্য যে, ব্যাংকিং খাতেরই একজন উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে কোম্পানি অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। গ্রুপটির কাছে ঢাকা ব্যাংকের পাওনা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আদায়ে এরই মধ্যে মামলা করা হয়েছে। এসএ গ্রুপ কোম্পানি অবসায়নের যে আবেদন জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়েছে। আপিল আদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসেছে। কোম্পানিটির যে পরিমাণ ঋণ আছে, সে অনুপাতে সম্পদ নেই বললেই চলে। অবসায়ন হলে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবে।

এসএ গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে কয়েক বছর ধরেই আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ঋণদাতা অধিকাংশ ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধাও গ্রহণ করে গ্রুপটি। তবে নির্দিষ্ট সময় পরও প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এতে আবারো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো আদালতের দ্বারস্থ হয়।

কয়েক বছরে এসএ গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে এ পর্যন্ত ১০০-এর বেশি মামলা দায়ের করেছে পাওনাদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এগুলোর বেশির ভাগই চেক-সংক্রান্ত ও অর্থঋণ মামলা। এসব মামলার বেশ কয়েকটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এমনকি দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও আছে এসএ গ্রুপের কর্ণধারের বিরুদ্ধে।

২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়া ১১ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএ গ্রুপও রয়েছে। ওই সময় এসএ গ্রুপের এসএ অয়েল রিফাইনারি ও সামান্নাজের পক্ষে ৯২৮ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করে ছয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৯ কোটি টাকা পুনর্গঠন করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে কিস্তি পরিশোধের কথা থাকলেও আর কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক আবারো আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। অনেক ব্যাংকের কাছে ঋণের বিপরীতে কোনো বন্ধকি সম্পত্তিও নেই।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ব্যবসার জন্য ঋণ নিলেও দীর্ঘদিনেও ঋণের টাকা ফেরত দেননি এসএ গ্রুপের কর্ণধার। এরই মধ্যে আমরা চেক-সংক্রান্ত ও অর্থঋণ মামলা দায়ের করেছি। একটি মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন আদালত। এ মামলায় শাহাবুদ্দিন জামিনে থাকলেও তার স্ত্রী পলাতক।

পাওনাদার ব্যাংকগুলোর ক্রমাগত চাপ ও আইনি ঝামেলায় পড়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার দায় এড়াতে নতুন কৌশল নিয়েছেন শাহাবুদ্দিন আলম। কোম্পানির অবস্থা ভালো না হওয়ায় সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড অবসায়নের আবেদন করেছে।

কোম্পানি অবসায়নের আবেদন, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও ব্যবসার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে তিনদিন ধরে এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমের সঙ্গে চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয়ে তিনি তার বক্তব্য দেবেন বলেও দেননি। অবশেষে রাত ১১টার দিকে টেলিফোনে তার বক্তব্য পাওয়া যায়। কোম্পানি অবসায়নের আবেদনের বিষয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণেই সামান্নাজ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডকে অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করেছি। কোম্পানির বিলুপ্তির জন্য পৃথিবীব্যাপী এটি স্বীকৃত পন্থা। এখন এটি আদালতের বিষয়। আমি এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমার কাছে ব্যাংকগুলো যে অর্থ দাবি করছে, তা সুদের টাকা।

কিছু ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের শিল্প ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ করেন শাহাবুদ্দিন আলম। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের শিকার হয়ে বাংলাদেশের শিল্পগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি পরিশ্রম করে ১৮টি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছি। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। এক টাকাও বিদেশে পাচার করিনি। বৈষয়িক ও দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এসএ গ্রুপের ভোজ্যতেলের কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার কনডেন্সড মিল্ক, পেপার ইন্ডাস্ট্রি, ট্যানারিসহ অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো ভালোভাবেই চলছে।

এসএ গ্রুপের কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলমকে শৈশব থেকেই চেনেন এমন একজন ব্যাংকার বলেন, ব্যবসায়িক শৃঙ্খলার অভাবে শাহাবুদ্দিন আলম সব শেষ করে দিয়েছেন। ব্যাংকের টাকা সঠিক খাতে ব্যয় না করে জমি কেনা, বাড়ি তৈরি ও ভোগ-বিলাসে উড়িয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার বিপুল পরিমাণ জমি, বহুতল ভবন, বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ সম্পদের বড় অংশই ব্যাংকের জামানতের বাইরে। শাহাবুদ্দিন আলম নিজে ডুবেছেন, ব্যাংকারদেরও ডুবিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকার খুলশীতে চার একর জমিতে শাহাবুদ্দিনের বর্তমান বাড়ি। তার আত্মীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, খুলশীতে চার একর জমিতে অবস্থিত এ প্রাসাদ কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি। ইপিজেড এলাকায় রয়েছে তাদের পুরনো বাড়ি।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা / জুলাই ১৯,২০১৮ 

Extortion on highways out of control

Who will look after public interest?


It is not every day we find a state minister lay bare what has been public knowledge for long—that there is rampant and uncontrolled extortion on the highways. It is not only the police that are to blame. Rather, the finger has been pointed at a federation of transport workers that is headed by a powerful minister.

What is interesting to note is that there has even been talk about legalising extortion in the transport sector in a bid to control how much each transport may pay nationwide. Besides such activity being totally illegal, this is hardly any way to combat the ad-hoc toll collection by various parties including alleged involvement of law enforcers who are supposed to maintain the law on the highways instead of being party to the unlawful activity.

With rampant extortion by various bodies comes the problem of overcharging both commuters on buses and driving up transport costs for parties that need to move goods between districts. At the end of the day, it is the general public who are forced to bear the costs of these “extra” fees that are levied on transports. As these illicit transactions are being enforced through organisations of owners and workers, headed by powerful lawmakers and their cronies on the one hand and a section of law enforcers on the other, what hope is there for reprieve from extortion?

We have been highlighting these issues for years. Now that we have the blunt admission by a policymaker, who also happens to run a transport business, of the magnitude of the problem, only a political decision at the highest level can rectify the problem. The question is: does the political will exist?

  • Courtesy: The Daily Star/Editorial /Jul 19, 2018

হঠাৎ ককটেল

হামলাকারীদের খুঁজে বের করুন

যেদিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সিটি নির্বাচন নিয়ে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির বৈঠক করলেন, সেখানকার নির্বাচনী পরিবেশ ভালো বলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন, সে দিনই বিএনপির দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগকালে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটল। নিকট অতীতে সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও তা বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে সীমিত ছিল। হঠাৎ করে ঘটা এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গলবার সকালে গণসংযোগ করছিলেন। কর্মীদের নিয়ে তিনি যেখানে জড়ো হয়েছিলেন, এর কাছেই পরপর তিনটি ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বিস্ফোরণের পর স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে আহত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ তিনজন। 

এ সন্ত্রাসী ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একজন প্রার্থীর নির্বাচনী জনসংযোগকালে ককটেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা তাদের শক্তির কথাই জানিয়ে দিল। সরকারের ভাষ্যমতে, সবকিছুই যদি ঠিক থাকে, তাহলে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা এ অঘটন ঘটানোর সাহস পেল কোথায়? সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, সেখানে তারা একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যেভাবে একে অপরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে অপরাধীদের বিচার তাদের কাছে মুখ্য নয়, মুখ্য হলো রাজনৈতিক ফায়দা লাভ। এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। 

ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের সাগরপাড়া বটতলার মোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য হলো, তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায়। বিকট শব্দের পর চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এতে বিএনপির একজন নেতা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে এসব রাজনৈতিক বিতণ্ডাকে আমলে না নিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। যত দ্রুত সম্ভব তদন্তকাজ শেষ করতে হবে। দেরি হলে ঘটনার আলামত নষ্ট হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হলো হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা। 

সে সঙ্গে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো রকম ঘাটতি আছে কি না, সেটিও চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতে্যক নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়েও এ কথা বলা যায় যে যারা চায় না শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক, তারাই এই সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ১০ দিন। এ ঘটনার মাধ্যমে হয়তো সন্ত্রাসীরা জনগণ তথা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের সেই উদ্দেশ্য কখনোই সফল হতে দেওয়া যাবে না। রাজশাহীর পাশাপাশি একই দিন আরও দুই সিটিতে (সিলেট ও বরিশাল) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে তিন সিটিতেই বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উৎসাহী হন। 

আমাদের দেশে মানুষ নির্বাচনকে দেখে উৎসব হিসেবে। সেই উৎসবের আনন্দ যারা ম্লান করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ হামলার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকুক আর না-ই থাকুক, অপরাধীদের খুঁজে বের করাটাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠিন চ্যালেঞ্জ। আশা করি, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে দ্বিধা করবে না। অবিলম্বে হামলাকারীদের খুঁজে বের করুন।

  •  কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলন কি অবৈধ?


কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। দুদিন আগে যে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছিল, আজ সকাল সোয়া ১১টায় ঠিক সেই জায়গায় প্রথমে মানববন্ধন ও পরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন চলছে, তার সমাপ্তির মধ্য দিয়েই ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি হওয়া ঠিক হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কারা এই ছাত্রদের ব্যবহার করছে, সেসব খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগ এখন একটি ছায়া প্রশাসন চালাচ্ছে, সেটাও খুঁজে বের করা উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন কি কোনো অবৈধ আন্দোলন? যদি অবৈধ না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কেন? গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবি করলেই প্রশাসন বলছে আইন আইনের গতিতে চলবে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মশিউরকে কি আইন মেনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুদিন তার কোনো খোঁজ ছিল না।’

মানববন্ধনে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক, অভিভাবকের সামনে সন্তানের ওপর হামলা করেছে শাসক দলের অনুগত ছাত্রসংগঠন। এর নজির আগে কখনো ছিল না। প্রশাসনের কাছে তাঁরা জানতে চান, রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেই কেন তাঁরা অনিরাপদ বোধ করবেন? তাঁরা নিজের ভাষায় নিজের ক্যাম্পাসে কথা বলার জন্য কেন নিপীড়নের শিকার হবেন এবং বিচার চাইতে গেলে কেন উল্টো হয়রানির শিকার হবেন?

অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা সারওয়ার জানান, আবাসিক হলে, নিজের বিভাগে এবং ক্যাম্পাসে কথা বলতে পারছেন না তাঁরা।

আইন বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ক্লাস ফেলে মানববন্ধনে এসেছেন তাঁর বন্ধুর জন্য। তারিকুল ইসলাম আদনানকে ২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এত অনিয়মের পরও প্রশাসন চুপ করে থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, সংবিধান বিষয়ে তাহলে কেন পড়ানো হচ্ছে, তা জানতে চান তিনি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আন্তারা ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হব, আমরা কবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

মানববন্ধন শেষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসীরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘সন্ত্রাসীরা মানুষ নয়, আবার তোরা মানুষ হ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তাঁরা।

গত রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দফায় দফায় বাধা দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই দিন দুপুরের দিকে কর্মসূচির একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ মারমুখী আচরণ করে। তারা ছাত্রীদের মারধর করে। ধাওয়া ও ধাক্কা দিয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

  •  কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮

মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল

কাগজে প্রিন্ট করা মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান নিজেদের এ সিদ্ধান্তের কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডিকে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ইসি নতুন করে কার্ড ছেপে দেওয়ার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় চুক্তি করেছে। এর আগে দরপত্রে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকিয়ে (প্রায় ৯ কোটি টাকা) প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছিল। বিনিময়ে নিম্নমানের কার্ড গুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ভুল করেছে। তারা মানহীন কার্ড তৈরি করেছে। সে জন্য ইসি প্রতিষ্ঠানটির জামানতের টাকার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জরিমানা হিসেবে কেটে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি তারা যাতে পুষিয়ে নিতে পারে, সে জন্য দ্বিতীয় দফায়ও তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।

ইসির সিদ্ধান্ত ছিল, ২০১২ সালের পরে ভোটার হওয়া ৯৩ লাখ ভোটারকে স্মার্টকার্ডের পরিবর্তে আপাতত কাগজে প্রিন্ট ও ল্যামিনেট করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এ জন্য তারা স্মার্ট টেকনোলজিসকে দায়িত্ব দেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে কাজ শেষ হলেও ইসি তদন্ত করে জানতে পারে, ছাপা হওয়া কার্ড অত্যন্ত নিম্নমানের।

জানা যায়, মূলত স্মার্ট টেকনোলজিসের নাম ব্যবহার করে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা কার্ড ছাপার কাজ করেছেন। এসব কার্ড যথাযথ প্রিন্টারে না ছেপে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন গলিতে স্থাপিত কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ১৯ জুন প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা এনআইডি নিম্নমানের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর ইসি মানহীন কার্ড গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৫ জুলাই স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে ইসির নতুন করে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ৯৩ লাখ কার্ড নতুন করে ছেপে দেবে। 
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ইসি ভবনের ১১ তলায় মেশিন বসিয়ে এবং ইসির তত্ত্বাবধানে কার্ড ছাপার কাজ করা হবে।

ইসি সচিবালয় সূত্র আরও জানায়, ছাপা হওয়া মানহীন ৯৩ লাখ কার্ড ইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হবে। আরও জানা যায়, এবারের কাজে স্মার্ট টেকনোলজিসের ৬০ জন দক্ষ কর্মী ইসিতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে কাজ তদারকি করবেন।

জানতে চাইলে স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেরবার আমরা ভুল করেছি। যে কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনামের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এবার সেই ভুল শুধরে নিয়ে কাজ করা হবে এবং ইসির অনুমোদন না নিয়ে কোনো কার্ড সরবরাহ করা হবে না।’
 কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮