Search

Sunday, July 22, 2018

শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি


রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড তাঁদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ কিংবা ন্যায্য মজুরি নির্ধারণে সফল হবে, সেই সম্ভাবনা এখনো উজ্জ্বল নয়। মালিকপক্ষ পাঁচ বছর পরে এবং আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিম্নতম মজুরি বিদ্যমান ৫ হাজার ৩০০ থেকে মাত্র ৬ হাজার ৩৬০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিচ্ছে। তাদের এ অবস্থান নির্দেশ করে শ্রমিকদের দর-কষাকষি করার ক্ষমতা কতটা ভঙ্গুর। কিন্তু তাঁদের কর্মশক্তি ও উৎপাদনশীলতায় কোনো ধস নেই। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বেড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এই কৃতিত্বের গর্বিত অংশীদার তাঁরাও। ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা বলে তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পোশাক উৎপাদনে পড়েছে বলে মালিকপক্ষ কখনো অভিযোগ তুলতে পারেনি। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে সরাসরি চাপ মোকাবিলা করতে হয়, রানা প্লাজার বিয়োগান্ত অধ্যায়ের পর গঠিত অ্যাকর্ড বা অ্যালায়েন্স দীর্ঘদিন বাংলাদেশে কাজ করলেও তারা বোধগম্য কারণেই শ্রমিকের মজুরির বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারেনি। ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন বা ইন্ডাস্ট্রিঅলের মতো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে সোচ্চার হলেও বাংলাদেশে সরাসরি তারা কোনো কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারছে না। সুতরাং বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের চাপ দিয়ে সুবিধা আদায়ের পর্যায়ে সব অর্থে সরকারই ভরসা।

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করতে একটা ঐকমত্যে পৌঁছালেও তারা এই দাবি আদায়ে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার জায়গায় নেই। কেউ এটা আশা করবে না যে ন্যূনতম মজুরি বাড়াতে গিয়ে পোশাক খাত কোনোভাবে অসন্তোষ বা উদ্বেগের মধ্যে পড়ে। দীর্ঘদিন আমরা এই খাতকে একটি স্থিতিশীল অবস্থা পার করতে দেখছি। সবাই আশা করবেন, ন্যূনতম মজুরি এমনভাবে নির্দিষ্ট হওয়া উচিত, যাতে মালিকপক্ষ অহেতুক কোনো চাপের মধ্যে না পড়ে, আবার শ্রমিকেরা যাতে জীবনধারণের উপযোগী মজুরি ভোগ করতে পারেন। এই ভারসাম্য নিশ্চিত করতে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভবত কোনো বিকল্প নেই। 

শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধির কণ্ঠে ইতিমধ্যে আকস্মিকভাবে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা প্রকাশ পেয়েছে। যদিও সব শ্রমিক সংগঠনই হয়তো জানে যে এই ১২ হাজার টাকা হলেও তারা বর্তে যাবে। ২০১৩ সালে শ্রমিক প্রতিনিধি ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ১১৪ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। ১২টি শ্রমিক সংগঠনের জোট ছয় সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারের মাসিক খরচ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা দেখিয়েছে। এর মধ্যে খাবার ব্যয়ই ১৯ হাজার টাকার বেশি। আবার আট ঘণ্টা কাজের জন্য ২ হাজার ৮৮০ ক্যালরি দরকার পড়লেও ওই টাকায় ক্যালরির সবটা পূরণ হয় না, ঘাটতি পড়ে। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য দিক বিবেচনায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য ন্যূনতম মজুরি উপযুক্ত পরিমাণে না হলে তা শ্রমিকদের জীবনযাপনকে এক দুঃসহ অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।

এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে সরকার পাশে না দাঁড়ালে মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধির পক্ষে কোনো কার্যকর দর-কষাকষিতে অংশ নিয়ে মালিকপক্ষকে কোনো কিছু মানাতে বাধ্য করা বাস্তবসম্মত কোনো পরিকল্পনা নয়। খোদ শ্রমিক প্রতিনিধি কার্যত স্বীকার করেছেন, শুধু শ্রমিকপক্ষ নয়, তিনি যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, তার কথাও তাঁর শুনতে হবে। সুতরাং কিসে শ্রমিকেরা বাঁচবেন, তা সরকারকেই সবচেয়ে ভালো বুঝতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিবেচনায় নেবেন যে এবার শ্রমিকদের সন্তুষ্ট করতে পারলে আগামী দুটি সাধারণ নির্বাচনে তাঁরা সুফল আশা করতে পারেন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সম্পাদকীয়/ জুলাই ২১, ২০১৮ 

Erratic power supply causing Bogura industries to bleed

If regular power supply remains one of the key conditions for industries to run smoothly, Bogura, the major industrial hub in the entire northern part of the country, is being deprived of it. Most industrial units operating there have been suffering heavily either for frequent power outages or for low-voltage. Load-shedding is quite an old problem and most factories have learnt to live with it. But what has lately surfaced as an additional problem is the low-voltage. According to a recent newspaper report, the wheels of around 20 thousand factories in the district have almost come to a standstill because of power disruption. Even the refrigerators, televisions and air-conditioners are getting damaged due to erratic power supply. But, regrettably, the authorities concerned are not serious about resolving the problem. When approached, they have made it clear that the problem is unlikely to be solved during the ongoing summer season.

According to the owners of small and cottage industries in Bogura, around 100 factories are located in the industrial estate run by the Bangladesh Small and Cottage Industries Corporation (BSCIC).  But most small and medium industrial units are located outside the BSCIC estate.  Their number is estimated to be several thousand and all of them are electricity-run. Production of a good number of jute mills is being seriously hampered and over five thousand poultry farms-cum-hatcheries are facing losses due to erratic supply of power.

Now, what surprises the sufferers most is the complete indifference of the relevant authorities to addressing the plight of these industrialists in Bogura. The onus, firstly, lies with the Power Development Board (PDB), the agency that very often tries to take credit for being successful in generating a 'record' volume of electricity. Should it not compare its failure to address even in one month's time the problem of low-voltage in an important industrial location? Next in line is the Power Grid Company of Bangladesh (PGCB), the agency tasked with the job of ensuring regular power transmission. The district administration also cannot shy away from its coordinating role at the local level. At the centre, the Ministry of Industries as well as the Power Division also cannot forfeit their supervisory responsibility in resolving such an important problem. But they also appear to be either unaware or uncaring about the problem.

Non-availability or irregular and erratic supply of power have often been identified by the business community in the country as one of the biggest challenges confronting the industrial sector in Bangladesh. But despite loud claims about raising electricity production to record levels, the situation on the ground still remains precarious due to faults and inadequacies in transmission cum distribution lines. Mere increases in generation do not make any sense if electricity cannot be utilised properly due to faulty transmission or distribution lines. Therefore, the government should pay due attention to improve the transmission and distribution facilities side by side with efforts to boost power generation. The government has taken up a number of projects to improve both transmission and generation of power. Expeditious execution of these projects needs to be ensured.

  • Courtesy: The Financial Express/ Editorial/ Jul 21, 2018

LNG import to increase energy subsidy by 230pc

Payout to Petrobangla alone could double this fiscal


The subsidies are expected to make a quantum leap this fiscal year, driven by the imports of liquefied natural gas (LNG), officials at the finance division told the FE on Thursday.

This is a new head for subsidies as Bangladesh is importing this alternative fuel to combat gas crisis, especially in the Chattogram region.

The maiden floating storage and re-gasification unit or FSRU carried 133,000 cubic metres of LNG from Qatar in April.

Its commissioning has not started yet, though all necessary preparations had been made by Chattogram-based gas distributing company, said Khaiz Ahmed Mozumder, chief executive at the Karnaphuli Gas Distribution Company.

In the meantime, the government has devised a plan to raise its subsidy outlay by 232 per cent to Tk 196 billion for non-financial institutions, including the Petrobangla.

The Bangladesh Petroleum Corporation (BPC), the sole importer of petroleum products, will also be involved in importing LNG.

"The fuel-related forecast in recent times has forced us to come up with the latest review of extra allocations for subsidies," an official familiar with the matter at the ministry of finance told the FE.

"Look, we had allocated Tk 25 billion to Petrobangla in the just-concluded fiscal year, but this year it may go up to Tk 50 billion on account of the LNG imports," he said.

"We're expecting Petrobangla to require between Tk 20 and Tk 30 billion as subsidies only for the import of LNG this fiscal year," he said.

LNG demand is seasonal and typically peaks during winter season in colder northern Asian markets.

Its demand wanes during the spring season months before picking up again during the summer when consumers use air conditioning, people familiar with the matter told the FE.

"The LNG prices fluctuate and for this reason we cannot predict accurately the actual subsidy needs for Petrobangla," the official said.

The LNG is being imported to meet the demand for the greater Chattogram region, where industries and households have been facing acute gas crisis for a long.

Mahbubul Alam, president of the Chittagong Chamber of Commerce and Industry, said the city is getting a supply of gas of 250mmcfd against the demand for 450-500mmcfd.

He said most of the factories are not running at full capacity due to the lack of gas.

The official, however, said the government may fund the petroleum corporation this year as the oil prices are also on the rise.

The government did not provide any subsidies even in the just-concluded fiscal year (2017-18).

"We believe that the BPC will need subsidies this year as fuel prices may rise further," he said.

Earlier, the finance ministry had not distinguished between the subsidies and loans while funding the state-owned enterprises.

This year there is no definitional error leading to the rise in higher allocations for subsidies, the ministry of finance officials said.

From this year, the division has redefined the subsidies, which is another reason for the significant rise in such payouts.

There was a tussle between the finance division and the BPC over the repayment of money following a definitional error.

  • Courtesy: The Financial Express/ Jul 21, 2018

Wither Bangladesh Bank, wither Bangladesh?

Shahid Islam

Once upon a time, an enticing young lady strolled past her savoured park, enjoyed the charm displayed by blossomed lilies and creeping crocodiles in the nearby lake. She never felt happier until someone robbed her wallet and raped her under a bushy orchard. She asked herself; without the wallet, and the money, and the chastity, how happy am I?
With erasing values, the nation of Bangladesh has been losing its chaste for a long time. Now the wallet and the money are being robbed too. In less than two years’ time, another great heist and a surreal swindling has come to the limelight about the country’s central bank, known as the Bangladesh Bank (BB).

Golden Bengal, golden heist
In February 2016, cyber heist of US$ 1 billion was snapped in the process after $101 million already got electronically robbed. This time, 24 karet gold got replaced by 18 karet cheaper metals at the BB’s central vault, and gold bar and ring weighing 3 kg 300 gram was found to have turned into mixed metal substance; according to an authentically composed media exposure. 
Customs intelligence of National Board of Revenue (NBR) in an investigation has detected a severe mismatch both in quality and quantity of gold deposited to Bangladesh bank vault. 
Bangladesh bank, however, on Tuesday rejected the investigationreport saying that the mismatch took place due to clerical mistakes and differences in measurement. 
But the economist and businesspeople were shocked and demanded an immediate prove. 
Well, these are happening in a country known historically as the golden Bengal. The heist and the swindling are of golden nature too.
These are unique, little heard of incidents that speak volumes about how Bangladesh’s focal institutions turned susceptible to vulnerabilities over the years. Upon being alerted in 2016, the Federal Reserve Bank of New York succeeded in stopping the $1 billion heist; only after $20 million got transferred to an account in Sri Lanka, and another $81 million to the Philippines. The slated remaining thirty other transactions were successfully blocked by the Federal Reserve Bank of New York, but bulk of the stolen money is yet to be recovered.

Inside work
The gold swindling is obviously an inside work; so was the dollar heist incident which occurred after the Federal Reserve Bank of New York received routine instruction from Dhaka’s central bank. The persons involved in the reserve dollar heist were bank staffers who had the security clearance to operate the computerized system and use password to activate the transaction. Following a global uproar, nothing much was heard later; except social media gossip that lingered for months to blame the ‘power that be’ as the main culprits.
What will happen to the gold swindling incident? Nothing much. Smokes may billow for days and weeks, but no fire will lit the horizon. In this benighted nation, traffic signals are still handled by police constables; physically using hand signals and whistling. No one follows street lane and none uses indicators to change lane. At the malls, no sales person can serve one customer peacefully; because four others shout from the side to be served simultaneously. It’s chaos everywhere, everyday. This colossal disorder is touted as the great order of a great nation.

Missing basics
In rarely seen walking pavements, one can be pushed, jostled, molested and shoved around to clear others’ path. Excepting the main streets of the nation’s capital and other major cities, all other streets are totally dilapidated, pot-holed, shattered and impassable. Instead of using standard zebra crossing to cross streets; children, elderlies and incapacitated are compelled to climb hundreds of stairs at foot-over bridges scatteredaround city’s major thoroughfares and intersections that are at times miles away.
These are scattered observations of things that are basic; like the food, drink and shelter of our daily lives. A system is defined by the existence of a structure and its successful operation. We have a nation on paper and in reality, but we couldn’t fix our fundamentals as yet. That means we could not develop a system of governance as yet. We still import the decorative ribbons of the quintessentially used lady garment called saree; despite being the second largest producer and importer of ready-made garments.
The garment production needs the skill and the craftsmanship of a tailor, nothing more. If asked why billions of dollars’ worth of vehicles are being imported from a neighbouring country instead of assembling them here to create local jobs, concerned authorities stare blank with an insipid, indigestible, irritating green.
The gold swindling is an exposed story now; of millions of unexposed ones that make merry go in every institutions of this country, every day. As well, an eerie quietnessmarks the status of the political horizon in an election year; because no one dares to say or do what is needed to prepare the nation for a fair, inclusive election. People learnt the lesson in 2014 when an election without voters produced so successful a government that it even managed to hoist a satellite to orbit around the celestial oblivion.

BB not alone
It’s not a secret that the country’s financial institutions, including the stock market, have been robbed and drenched away long ago by people whom the finance minister dubbed as ‘people beyond reproach.’The BB milking off isn’t a one off incident either. For years, the bureaucracy and the security forces have been politicized to the brink. And, in the process, the ethical mooring of the nation got washed away. You can steal, kill, rob and rupture the society with the blessing of the people in power. Sum up this nation as a one-party, one-person fiefdom. Yet, ask someone in power about the state of the nation, and, get an answer that everything is honkey dory. In reality, a wretched numbness has gripped this nation of about 165 million strong; something hours of stagnation on the street in mind-boggling traffic jam amply testifies.
Yet, more people are buying cars; because, early in the morning, one child takes one to the north to his private school while the other one goes south to his university, so to speak. The mom and dad move with two other cars to their offices and, the entire damn street is under their control; depriving millions of ordinary folks from public transport or other commutable means to go to work. Ask someone in power, are these ordinary people happy? The answer is positive, and, a claim of certainty that this nation has never been happier.
So, under the changed ambiance of a re-defined happiness, we can take the pain and exercise the patience to be numb, silent and inert until some foreign power takes us over in one moonless mid-night. The Bangladesh Bank had gone down the drain long ago. It’s the turn of Bangladesh itself to follow suit.

  • Courtesy :Weekly Holiday/Jul 20, 2018

Saturday, July 21, 2018

ইসি কে চালায়?


বর্তমানে তো ভোট ডাকাতি ও চুরি হচ্ছে  —    সাখাওয়াত হোসেন
সরকারি কর্মকর্তারা বেশি আলীগার হয়েছেন  —  তোফায়েল আহমদ 
ইসির কর্মকর্তারা একটি দলের পক্ষে নিচ্ছে   —   শারমিন মুর্শিদ 



নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীন। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানও নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন আরো চারজন কমিশনার। দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির স্টিয়ারিং কার হাতে? সিইসি’র নের্তৃত্বে গঠিত ৫ কমিশনারের হাতে —  নাকি সরকারি আমলা ইসি সচিবের হাতে? প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিদ্ধান্ত ইসির হাতে থাকা উচিত। আমরা সঠিক ভাবে ইভিএম চালু করতে পারি নাই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তিন মাসে চার লাখ ইভিএম কিভাবে বসানো হবে? 

অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেন, ইসিকে আগে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চেয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বেশি আওয়ামী লীগার হয়েছেন। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনো প্রযুক্তি গ্রহণের আগে তার ভালো-মন্দ দিকগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত। 

ব্রতি’র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ বলেন, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আমরা অাগে থেকে কথা বলে আসছি। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না --- ইসি এটাই জানিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে ইসির কর্মকর্তারা একটি দলের পক্ষে নিচ্ছে।

‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারে ইসি প্রস্তুত নয়’ --- প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা এ ঘোষণা দিয়েছেন কয়েক মাস আগে। তার এই মতের সঙ্গে সব মহল একমত হওয়ার পরও হঠাৎ ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ ১৬ জুলাই সাংবাদিকদের জানান, ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, সময় আছে। কমিশন ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে। খুলনা সিটি নির্বাচনের পর কমিশন সচিব ঘোষণা দেন, ভোটার উপস্থিতিতে ইসি খুশি, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণ যোগ্য হয়েছে। অথচ কয়েকদিন পর গাজীপুর নির্বাচনের সময় সিইসি খুলনার নির্বাচনে অনিয়মের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে বলেন, গাজীপুরের নির্বাচন খুলনার মতো বিতর্কিত হবে না। কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, খুলনা সিটির নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অথচ গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর সচিব প্রতিক্রিয়া দেন ভোট নিরপেক্ষ ও সুন্দর হয়েছে, কিন্তু সিইসি নীরব। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) নয়’ -- মর্মে ইস্যুটি প্রায় ফয়সালা হয়ে যায় ২০১৭ সালে। এ তথ্যটি নিশ্চিত করে বেসরকারি সংস্থা ব্রতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ। ওই বছরের মাঝামাঝি সময় নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপেে বসে। সেখানে দু’একজন ছাড়া সকলেই এ মুহুর্তে ‘ইভিএম নয়’ মত দেন। আওয়ামী লীগ থেকে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় কিনা পরীক্ষা নিরীক্ষার পক্ষে মত দেয়া হয়। কিন্তু বিএনপি থেকে ইভিএম-এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারাও ইসিকে পরামর্শ দেন, ইভিএম দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এ মুহুর্তে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। নতুন করে বিতর্কে না গিয়ে নির্বাচনের অগ্রসর হওয়া উচিত। পরবর্তীতে সিইসি কে এম নূরুল হুদা ‘সব রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা ইভিএমের পক্ষে মত দিলে জাতীয় নির্বাচনও ইভিএম ব্যবহার হবে’ অভিমত দিলে বিএনপি থেকে ‘এটা দুরভিসন্ধিমূলক ও গভীর রহস্য’ অভিহিত করে বিবৃতি দেয়া হয়। অতপর সিইসি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে প্রস্তুত নয়’। সিভিল সোসাইটি, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক-গবেষকরাও একাদশ নির্বাচন ইস্যুতে ইভিএম বিতর্ক না করার পরামর্শ দিলে সিইসি স্পষ্ট করে ঘোষণা দেন ‘স্টেকহোল্ডাররা না চাইলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নয়’। কিন্তু ১৬ জুলাই নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ হঠাৎ করে ইভিএম বিতর্ক সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি-না সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সময় আছে কমিশন ভেবে সিদ্ধান্ত নেবে। অর্ধশত রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেয়া এবং একের পর এক স্থানীয় নির্বাচনে নিয়ন্ত্রিত ভোট হওয়া নিয়ে ইসির ওপর মানুষ যখন আস্থা রাখতে পারছে না তখন কেন নতুন করে ইভিএম বিতর্ক? আর ইসির কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত সিইসি এবং কমিশনারদের বদলে সরকারি কর্মকর্তা ইসি সচিব কেন আগে প্রকাশ করেন? 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের অভিমত হলো নির্বাচন কমিশনের ইমেজ তলানিতে। কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ কার্যত নির্বাচন কমিশনকে সরকারের মেরুদণ্ডহীন আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। কে এম নূরুল হুদা কমিশনের প্রতি প্রত্যাশা ছিল ইসির কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য-গ্রহণযোগ্য’ করে তুলবেন। মানুষের আস্থা অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। নির্বাচন কমিশনের একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ইসির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। কিন্তু খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন বর্তমান ইসির প্রতি মানুষের আস্থা আবার পড়েছে তলানিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞের মতে, নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘তালুবন্দী’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গেছে। তারা সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ করে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভোটের নামে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় যে এখন আর ব্যালট পেপার ছিনতাই, সংঘাত-সংঘর্ষের প্রয়োজন পড়ে না। প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে এমনিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা যায়। 

একাদশ নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘ, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা, ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জার্মানি ইত্যাদি দেশের কূটনীতিকরা মাঠপর্যায়ে থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন কমিশনের কর্মতৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা গত দেড় বছরে কয়েক দফা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নানান পরামর্শ দিয়েছেন। তারা নির্বাচনের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দেন। তারা খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসির পক্ষপাতিত্বের কৌশলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশ সরকার যেন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজন করে এটাই আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বৈঠকে মার্শা বার্নিকাট নির্বাচনগুলো যতোটা সম্ভব অনিয়মমুক্ত করার জন্য সরকারের অবস্থান কি সেটাও জানতে চান বার্নিকাট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশেরই প্রতিফলন ঘটে থাকে জাতীয় নির্বাচনে। ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন বেক বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট-ই শুধু নয়, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই শান্তিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের সবস্তরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রত্যাশা করেন। 

জানতে চাইলে সাবেক কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কমিশন সময় ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। তার পর আমরা সঠিক ভাবে চালু করতে পারি নাই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস সময় আছে সে খানে চার লাখ ইভিএম কিভাবে বসাবে পরে তা আমার জানা নেই। আমি চাই ইভিএম আস্তে আস্তে চালু হোক। তিনি বলেন, আগে শুনতাম ইভিএম ভোট হ্যাক করবে। কিন্তু বর্তমানে তো ভোট ডাকাতি ও চুরি হচ্ছে। তা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। তার মানে বেড়া ক্ষেত খেলে করার কিছু নাই।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনো প্রযুক্তি গ্রহণের আগে তার ভালো-মন্দ দিকগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত। আর নির্বাচনের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। যে প্রযুক্তি গ্রহণ করা হোক না কেন তা রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে তা করা উচিত। খুলনা ও গাজীপুর সিটির ভোট নিয়ে বর্তমান কমিশন বির্তকের সৃষ্টি করছে। আগামীতে এ রকম থাকলে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আসতে আসতে ইভিএম চালু করা যেতে পারে, তবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য নয়। কারণ এত গুলো যন্ত্র নাই এবং জনবলও সংকটে রয়েছে। তার পর ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনীতিক দলগুলোর সাথে কথা বলতে পারে ইসি। তার আগে কিছু নয়। তারা যদি মতামত দেয় তা হলে দুই একটিতে করতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান সিটি নির্বাচন নিয়ে ইসিকে জনগণ বিশ্বাসে নিতে পারছে না। এগুলো করতে হলে ইসিকে আগে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের চেয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বেশি আওয়ামী লীগ হয়েছেন। এ কারণে নিরপেক্ষ বিষয়টি উঠে যাচ্ছে। আর মাঠে থাকা বিএনপি কোনো বিয়ষ নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না।বেসরকারি সংস্থা ব্রতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ ইনকিলাবকে বলেন, ইভিএম ব্যববার নিয়ে আমরা আগে কথা বলে আসছি। তখন ইসি আমাদের জানিয়েছে সমান্য কিছু কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। কিন্তু কয়েকটি সিটিতে ইভিএম ব্যবহার করেছে ইসি সাধারণ মানুষ কিছু বলে নাই। আর পর এখন ইসি এখন বলছে ইভিএম ব্যবহার করবে তার মানে এখনে কিছু খাকতে পারে। বর্তমান ইসির আমলে যে কয়েকটি নিবাচন হয়েছে সব গুলো নিয়ে বির্তক হচ্ছে। ইভিএম নয় আগের পুরাতন নিয়মে জাতীয় নির্বাচন দরকার। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষপনে ইসির কর্মকর্তারা একটি দলের পক্ষে নিচ্ছে এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে সামনে অনেক কঠিন সময় পার করতে হবে।

  • সূত্র —    ইনকিলাব। বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৯, ২০১৮। 

--- 

Thursday, July 19, 2018

বাউবি’র সম্মানিত ভিসি ও তাঁর কীর্তি!

সৈয়দ কবির হুসেন 


আজ সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপককে তাঁদের সফল শিক্ষা কর্মজীবন শেষে সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছে। শিক্ষক ‘সম্মানিত’ আমাদের দেশে আজকে মাত্র কয়েক দশকের ‘সম্ভবত’ রাজনৈতিক প্রথা। আর বলাবাহুল্য সেটি কেবলই অর্থের দাঁড়িপাল্লায়। সে জন্য আজও এক বঞ্চিত শিক্ষক সমাজের সদস্যরা এমপিওভুক্তির জন্য ‘জননীর’ কাছে আবেদন জানিয়ে চলেছেন।  হয়তো তাঁদের সবুর করার পরীক্ষা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের সুবিধাজনক শুভক্ষণে তাঁদের কপালে এমপিও জুটবে। তারা ধন্য হবেন।

শিক্ষকদের সিভিল ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য বহুকাল আগে থেকেই বিসিএস ক্যাডারের হায়ার সেকেন্ডারি পর্যায়ে শিক্ষক নিযোগের রীতি প্রচলিত আছে। এখন হয়তো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সিনিয়র শিক্ষক পদে এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া হবে।

এমপিওধারী শিক্ষকরা বেশ মোটা বেতন পান বলতেই হবে। সে অর্থে তাঁরা সচ্ছল। তাই তরুণেরা এসব পদ পেতে স্বাভাবকি কারণেই খুবই আগ্রহী। সেই সাথে যদি ফাও কোচিংটাও ধরা যায়! আলাদা করে এনটিআরসিএ ( ন্যাশনাল টিচার্স রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) নামে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়া হয়েছে। আর সেই সাথে এতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কণ্টকিত বিধিবিধান শত হিসেবে দেওয়া হয়েছে যার একমাত্র উদ্দেশ্য যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা মেধার ভিত্তিতে।

এখন আমরা দেখবো ঐ সব শর্ত আসলে মেধাকে লালন করছে কি না। আমরা দেখেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাম্প্রতিককালে কী সব ঘটনা ঘটেছে। এমনকি খোদ শিক্ষামন্ত্রী নিজেকেই কেমন করে হেনস্থা যোগ্য করে চুপ হয়ে গেছেন। আর দেখা গেছে আবেদনকারীদের হাতে যে অসাধারণ প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে যার বেশিরভাগ উৎপাদিত হয়েছে কোচিং সেন্টারে আর অবশ্যই ভুলে ভরা। যেভাবেই হোক চলে গেছে ইলেট্রনিক যন্ত্রে, সকল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

আমাদের আজকের আলোচ্য বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৯, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত একটি ছোট সংবাদ। শিরনাম —  ছেলেকে নিয়োগ দিতে আইন শিথিল করলেন ভিসি। উনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায়ের (বাউবি) সম্মানিত উপাচার্য - অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান। খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী ছেলে জাহেদকে বাউবি’র স্কুল অব বিজনেস-এর  সহকারী অধ্যাপক পদে  নিয়োগ দেওয়ার জন্য বারংবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি  শিথিল করেছেন। অবশ্য এই সংশোধনের যথাপ্রক্রিয়া অনুসরণ করার হয়েছে  সে বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য সংবাদে নেই। তবে বলা হয়েছে, এ সম্পর্কিত কাগজপত্রে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধকের স্বাক্ষর থাকার কথা সেখানে ড. মান্নান সই করেছেন। এটা কী ধরনের লক্ষণ বাউবি কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। ‘ এখানে শিক্ষক মহোদয়, ‘স্টেট, আই অ্যাম দ্য স্টেট’ মতো কারবার করেছেন না বলে উপায় নেই। তিনিই সর্বাধিকারী। তাঁর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এটা। হয়তো বা তিনি একটি বিশেষ ঐতিহ্যের ধারক যে ঐতিহ্যের ধারক হয়তোবা পদার্থবিদ্যার সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ও বাউবির প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা শমশের আলী নন।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ঠিক পরপরই এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিখ্যাত উপাচার্য ড. আবদুল মতিনের নিজ প্রযোজনায়। তিনি তাঁর আপন পুত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একান্ত করে নেবার ব্যবস্থা করতেন। তখন  সকল বিধিবিধান তুচ্ছ করে সেই বিধিপরিপন্থি একান্ত ব্যবস্থা নিয়ে ছিলেন। কাজেই ড. মান্নান মনে হয় সেই তরিকার অনুসারী। একাজটির দায়ভার অবশ্য তাঁর যে একার নয় তা বলাবাহুল্য। ঢাবির সদ্যসাবেক ভিসি ড. আরেফিন সিদ্দিকীর কথাই ধরি। তিনি শতাধিক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে । তাহলে তো ড. মান্নানের জন্য অধিকন্তু না দোষাবে কেন? বর্তমান ভিসি বলেছিলেন, কোটা নিয়ে তাঁর তো কিছু করার নেই। তবু তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। যার এই দুষ্কর্ম ঘটিয়েছে তাদের কোনো ট্রেস করা যায়নি। তবে ভিসি সাহেব ভালো আছেন। আর তাঁর গুণধর পুত্র বলেছেন তিনি কোটা প্রথার সমর্থক। 

ড. আবদুল মান্নানও সম্ভবত এ ধরনের কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাইছেন বাউবিতে। তাঁর ৩৮ বছর শ্যালিকার  চাকরি দিয়েছেন। অবশেষে পুত্রের একটা ব্যবস্থা করতে সমর্থ হলেন। আর খবর অনুযায়ী, আরও আত্নীয়ের জন্য এই আকালের বাজারে চাকরির একটা রাহা করতে পারলেন। এজন্য তাঁকেও ধন্যবাদ আমাদেরকে দিতেই হয়।

জনতা ব্যাংকে আবারও বড় ঋণ কেলেঙ্কারি


  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধান
  • ভুয়া রপ্তানির নামে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তার অর্থ তুলে নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। 


জনতা ব্যাংকে আবারও বড় ঋণ কেলেঙ্কারি। এবার ভুয়া রপ্তানি নথিপত্র তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা নিয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।
অপকর্মে সহায়তা করার পাশাপাশি ক্রিসেন্ট গ্রুপকে অর্থায়নও করেছে জনতা ব্যাংক। ক্রিসেন্টের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। বিদেশে রপ্তানির ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটি সরকারি ব্যাংক ও সরকারের তহবিল থেকে মাত্র পাঁচ বছরেই নিয়ে নিয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। ২০১৩ সাল থেকে এসব অনিয়মের শুরু।

খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, গ্রাহক তিনভাবে এর সুবিধা ভোগ করেছেন। রপ্তানি বিলের টাকা বিদেশে রেখে দিয়েছেন। ব্যাংক সেই বিল কিনে গ্রাহককে নগদ টাকা দিয়েছে। আবার এসব রপ্তানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তাও নিয়েছে গ্রাহক।

জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার মাধ্যমে এত সব জালিয়াতি হয়েছে। শাখাটির মোট ঋণের ৯৮ শতাংশই এ গ্রুপের কাছে আটকা। যার সবই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।

জনতা ব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

এর আগে এক গ্রাহককেই নিয়ম লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা দেওয়ার খবর দিয়েছিল প্রথম আলো। আবারও একই ব্যাংকের নতুন এক কেলেঙ্কারির খবর মিলল। 

যেভাবে জালিয়াতি

কাগজে-কলমে ক্রিসেন্ট গ্রুপ চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে হংকং ও ব্যাংককে। সেই রপ্তানি বিল ক্রয় করে গ্রুপটিকে নগদে টাকা দিয়েছে ব্যাংক। এখন রপ্তানির টাকা ফেরত আসছে না। ব্যাংক চাপ দেওয়ায় মাঝে মাঝে কিছু অর্থ আসছে দুবাই থেকে। যদিও আমদানিকারক দেশ থেকেই টাকা আসার কথা। 

তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকার থেকে নেওয়া নগদ সহায়তার টাকা দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে গ্রুপটি।
জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় গ্রাহক বলতে ক্রিসেন্ট গ্রুপ একাই। শাখাটির মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের ঋণ ২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি কোনো গ্রুপকে অর্থায়ন করা যায় না। কিন্তু ব্যাংকটির শাখা থেকে ঋণ হিসেবে গেছে মূলধনের ৫৫ শতাংশ।

ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, রূপালী কম্পোজিট লেদার, লেক্সকো লিমিটেড, গ্লোরী এগ্রোর কর্ণধার এম এ কাদের। আর রিমেক্স ফুটওয়্যার নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তাঁর ভাই এম এম আজিজ।

রপ্তানির টাকা ফেরত না আসার বিষয়ে গ্রুপটির কর্ণধার এম এ কাদের ১৭ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে সময়মতো ট্যানারি স্থানান্তর না করায় কারখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ কারণে সময়মতো চামড়া রপ্তানি করা যায়নি। ফলে ১ হাজার ২০০ কোটির বেশি টাকা বিদেশে আটকে আছে। চেষ্টা চলছে টাকা ফিরিয়ে আনার। এ জন্য দেড়-দুই বছর সময় লাগবে।

এম এ কাদের আরও জানান, হংকংয়ের প্রতিষ্ঠান চামড়া নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি করেছে। এ জন্য অন্য দেশ থেকে টাকা আসছে। তা ছাড়া তাঁর ভাই কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। আগে নামে ছিল, এখন বাবার পুরো ব্যবসা তিনি একাই দেখভাল করেন।

এত টাকা গেল কোথায়

গ্রুপটির রপ্তানির ৫৭৭টি বিলের টাকা দেশে ফেরত আসেনি। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ২৯৫ কোটি। এসব রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই কিনেছে হংকং ও থাইল্যান্ডের ৯টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন বাংলাদেশিরা। আবার পণ্য হংকংয়ে পাঠানো হলেও রপ্তানি বিল পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি করা এসব প্রতিষ্ঠান ভুয়া। রপ্তানি ভর্তুকির টাকা অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে নিয়ে ফেরত এনেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ।

এদিকে, ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ শাখার ভোল্টের সীমা ৩ কোটি টাকা। এ জন্য গ্রাহকের হিসাবে যাওয়া টাকা উত্তোলনে ব্যবহার করা হতো প্রধান কার্যালয়ের পাশের স্থানীয় শাখাকে। সব অর্থই নগদে তুলে নিয়েছে গ্রাহক। এসব টাকার একটা অংশ গেছে শেয়ারবাজার, স্পিনিং মিল ও আবাসন প্রতিষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইমামগঞ্জ শাখায় ৮১ কোটি টাকা জমা হলে সেদিনেই বেসরকারি খাতের আরেকটি ব্যাংকের সাতমসজিদ রোড শাখার ক্রিসেন্ট গ্রুপের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এইমস অ্যান্ড গ্রামীণ ওয়ানের শেয়ার কেনা হয়।

এ ছাড়া ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্রাহকের হিসাব থেকে কয়েক দফায় টাকা গেছে দুটি স্পিনিং মিল, একটি বিমা কোম্পানি, একটি শেয়ার লেনদেনকারী কোম্পানি ও সাতটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই।

এম এ কাদের এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানি সহায়তা ও ব্যাংকের টাকা দিয়ে সাভারে ১৩টি কোম্পানি করেছি। কোনো টাকা অপচয় করিনি। আমাকে একটু সময় দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। নগদ টাকা দিয়ে চামড়া কেনা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়া হয়েছে, এর সবই ব্যবসায়িক। কোথাও দোকান করতে টাকা দেওয়া হয়েছে, কিছু টাকা শেয়ারেও গেছে।

দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আবদুস সালাম। তাঁর মেয়াদেই সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়। ১৫ জুলাই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সময়ে রপ্তানির বেশির ভাগ টাকা ফেরত এসেছে। ২০০ কোটি টাকার মতো বাকি আছে। মেয়াদের শেষ সময়ে হজে থাকাকালে ও মেয়াদের পরে যেসব রপ্তানি হয়েছে, তা নিয়েই সমস্যা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপক নিজেই এসব অপকর্ম করেছেন।’

তাঁর সময়ে রপ্তানি বিল শাখার দায়িত্বে ছিলেন ডিএমডি মোহাম্মদ ফখরুল আলম। গত ১২ জুন ফখরুল আলমকে কৃষি ব্যাংকে বদলি করে সরকার। ৪ জুলাই কৃষি ব্যাংকে নিজ কার্যালয়ে বসে ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে, সবই শাখার কর্মকর্তারা করেছেন। আমি শুধু পর্ষদ ও এমডির নির্দেশনা পালন করেছি।’

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে জনতা ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে আব্দুছ ছালাম আজাদ। চলতি মাসে একাধিক দিন এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এই প্রতিবেদক। সবশেষ ১৫ জুলাই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যা হলো রপ্তানি বিলের অর্থ দেশে আসছে না। টাকা আনতে সংশ্লিষ্ট শাখা গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। দায়ের সবই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আর ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে চেয়ারম্যান হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। গত ৭ ডিসেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। ১৫ জুলাই প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এসব তো পর্ষদে আসে না। এমডি, ডিএমডি পর্যায়েই বিল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এসবের কিছুই আমি জানি না।’

তাঁদের সময়ে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক নাগিবুল ইসলাম ওরফে দীপু, টাঙ্গাইলের কালিহাতী আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগ নেতা আবু নাসের প্রমুখ।

ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার কর্মকর্তারাও এর সুবিধা পেয়েছেন। শাখার কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের চিত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৫-১৭ সালে শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিমের ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতার বাইরে ৬০ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনের চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক 

জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রিসেন্ট গ্রুপকে সহায়তা করার দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ১০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের হিসাব থেকে আর নগদ সহায়তার ৪০৮ কোটি টাকা কেটে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এসব অনিয়মের মূল কারণ হলো, আগের দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠছে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ১৯,২০১৮ 

Govt, central bank must probe vault gold tampering

THE mismatch both in quality and quantity detected in the gold deposited into the Bangladesh Bank vault in an investigation of the Customs Intelligence and Investigation Directorate of the National Board of Revenue comes with shock and worry on a couple of counts. Although the Bangladesh Bank has brushed aside the investigation report saying that the mismatch was due to clerical mistakes and differences in measurement, it leaves people confused, about the efficiency of the people concerned dealing with the deposits and their records and about the event itself. It also questions the security measures that the Bangladesh Bank has deployed. 

The earlier incident of $81 million of the Bangladesh Bank being stolen from the bank’s account with the Federal Reserve Bank in New York in February 2016 only comes to corroborate this perception. The CIID team, which conducted the investigation between January and April 2017 to check the stock of gold in the central bank vault, in some cases, found the quality of deposited gold ornaments better that what they measured at the time of deposition by customs officials. In one case, the team found 11.2 carats, with 46.66 per cent purity, in a gold disk and 2.63 carats, with 15.12 per cent purity, in a gold ring, which the bank received as 18 carat gold with 80 per cent purity.

In 44 cases, the team found the amount of gold more than what was initially recorded. In 23 cases, as for quality, the team found 22 carat gold ornaments which the bank received as 18 carats. A probable embezzlement, pending further investigation, of gold from the disk and the ring could cause the government Tk 1,12,000 in financial losses while disparity in the quantity and quality in gold bars and ornaments could cause the government Tk 19.1 million in financial losses. The central bank officials sought to say that they use a six-tier security system where even the governor needs authentication for entry and that they asked customs intelligence to have the gold checked at the Bangladesh Atomic Energy Commission, which the customs people refused, as they think the problems were with the quality measurement tools of customs intelligence. 

In a situation like this, it is imperative for the government to set up an independent investigation to find out whether the gold deposited into the Bangladesh Bank vault has either been replaced or tampered. It is now for both the government and the central bank to dispel the confusion that has been created centring on the matter.

The government and the central bank, under the circumstance, must set up an investigation to establish what happened to the gold deposited into the central bank vault and make the report public as people have the right to know this, especially after the Bangladesh Bank reserve theft from its account with New York’s Federal Reserve Bank. The issue also entails on the government to weigh the security system that the central bank has deployed and whether it is up to the standards that the central bank claims it to be.

Courtesy: New Age /Editorial /Jul 19, 2018

বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ বিদেশী

মেহেদী হাসান

  • বেকারত্বের বিপরীতে দেশে লাখ লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত
  • দেশে বেকার ৪ কোটি ৮২ লাখ মানুষ
  • রেমিটেন্সের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা প্রতি বছর নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা


দেশে চার কোটি ৮২ লাখ মানুষ প্রকৃত বেকার। বেকারত্বের কারণে ৭৮ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে বিদেশে কর্মরত। কাজের অভাবে ভিটেমাটি বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে হলেও বিদেশে যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ফিরছেন লাখ লাখ তরুণ বেকার। সংসারের অভাব মেটাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা উপায়ে বিদেশের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ মারা যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশী।

একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে শতকরা ৪৭ ভাগ বেকার। বেকারত্বের এমন চিত্র যে দেশে সে দেশে তিন লাখ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। এক দিকে বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অপর দিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ টাকা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশীরা। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল এবং বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত দেশে এ বিপরীত চিত্র মেনে নিতে পারছেন না অনেকে। 

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারের এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইএলওর সংজ্ঞা অনুসারে মাসে এক ঘণ্টা কাজ করে এমন লোকও বেকার নয়। তবে বিবিএসের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। 

গত বছর ৮ জুলাই আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে তিন লাখ বিদেশী কর্মরত।

২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এবং তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ বিদেশী কাজ করে। বেতনভাতা বাবদ তারা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যায়।’

২০১৩ সালের ২১ মে সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে ভারতের রেমিট্যান্স অর্জনবিষয়ক একটি খবরে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছে। তাতে ভারত থেকে সে দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, ভারতের যেসব অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে সেগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা। খবরটিতে সরকারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতীয় নাগরিকেরা বাংলাদেশের গার্মেন্টস, টেক্সটাইলস এবং বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন। 

গত বছর ৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিকের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে শুধু ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে গেছে। 

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দি ইকোনমিক্স টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের তথ্য অনুযায়ী ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স (বিদেশে কর্মরতদের পাঠানো অর্থ) আয় করে তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের মাধ্যমেই ভারত বাংলাদেশ থেকে এ বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্জন করছে প্রতি বছর। 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১২ ও ২০১৩ সালে ভারত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় সৌদি আরব, চতুর্থ যুক্তরাজ্য ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে। 

২০১৩ সালে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা ১৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। আর বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা ৪ বিলিয়ন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে গেছেন।

একটি তথ্যমতে বাংলাদেশের গার্মেন্টে ২২ হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট শিল্পের উঁচু পদগুলো বিদেশীদের দখলে রয়েছে মর্মে প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা যে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছেন, তা নয়; বরং এ শিল্পের নিয়ন্ত্রণও অনেকটা তাদের হাতে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। 

দক্ষ জনবলের অভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয়সহ বিদেশীরা কর্মরত থাকলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। উচ্চশিক্ষার সাথে বাস্তবতার সমন্বয়হীনতা ও শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি কয়েক বছর ধরে বহুল আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 

২০১৬-১৭ বিবিএসের জরিপের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার ১৩ দশমিক ৪ ভাগ। অন্য দিকে যারা কখনো স্কুলে যায়নি তাদের বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম যথা ১ দশমিক ৫ ভাগ। 

২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দ্রুত বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১২তম।

২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে উচ্চশিার সুযোগ বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক েেত্রই তা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে বাড়ছে শিতি বেকারের সংখ্যা। 

ইকোনমিস্টের এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিায় বিনিয়োগ বাড়লেও শিার গুণগত মান বাড়েনি। এর ফলে শিতি বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আর শ্রমবাজার ও শিাসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় নেই। স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের চাহিদানুযায়ী উচ্চশিায় শিতিদের কারিগরি ও কাজ করার মতো দতা কম। তাই উচ্চশিতি স্নাতকদের অনেকে বেতন পান অনেক কম।

সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিদেশী নাগরিকেরা বিশেষজ্ঞ, কান্ট্রি ম্যানেজার, কনসাল্ট্যান্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার, টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, চিকিৎসক, নার্স, ম্যানেজার, প্রকৌশলী, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ডিরেক্টর, কুক, ফ্যাশন ডিজাইনার ও শিক ক্যাটাগরিতে কাজ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় (ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য ১১টি অধিভুক্ত/অঙ্গীভূত কলেজের শিক্ষার্থী ব্যতীত) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সর্বমোট সংখ্যা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৪৬ জন। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন। 

প্রতি বছর এভাবে লাখ লাখ তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়ে বের হলেও দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা খুব কম সুযোগ পান।

  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ১৯,২০১৮ 


আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই আঁতুড়ঘরে

ঢাকার যানজট নিরসনে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সাড়ে তিন বছর পার হলেও এতে অন্তর্ভুক্ত সাত পরিকল্পনার পাঁচটিই এখনো কাগজে-কলমে। যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের গতি ধীর হওয়ায় জনদুর্ভোগও বাড়ছে। ব্যস্ত সড়কগুলোয় মেট্রোরেল, বিআরটির মতো প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মানুষ যেন বিকল্প হিসেবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারে, সেটিই ছিল উদ্দেশ্য। সাত বছরেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করা যায়নি। এ কারণে মেট্রোরেল নির্মাণকে ঘিরে মিরপুর এলাকার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। পরিবহন সংকট ও তীব্র যানজট রাজধানীবাসীর অন্যতম নাগরিক সমস্যা। এ সমস্যা মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি ছাড়াও জন্ম দিচ্ছে আরো অনেক সমস্যার। এতে নাগরিকদের মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের ক্ষতি এরই মধ্যে বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি অপচয় বাড়ছে। বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ছাড়া এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথ নেই। প্রকৃতপক্ষে এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় এর মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আরএসটিপির কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নগরবাসী স্বচক্ষেই তা দেখছে। রাজধানীতে কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ ও কয়েকটি প্রধান সড়ক রিকশামুক্ত করা ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই। বৃত্তাকার নৌপথ চালু হলেও তা স্থায়ী রূপ পায়নি। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বটে, তবে এসব কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, কে জানে। ফুটপাত দখলমুক্ত করার মতো সামান্য কাজটিও করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বস্তুত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়গুলো বরাবর উপেক্ষিত হয়েই এসেছে। রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট তীব্র। অথচ এ থেকে উত্তরণে সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত সীমিত। বিদ্যমান গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্যের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। এ খাতেও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কর্তৃত্ব। ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ২০০৯ সালে এসটিপির আওতায় বিআরএফ অর্থাৎ একটি রুটে একটি কোম্পানির উন্নতমানের বাস ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হলেও যানজট কমেনি। অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপেও এ অবস্থার তেমন পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫-৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নে নেই সরকারের কার্যকর উদ্যোগ। এসটিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এ পরিকল্পনা শুধুই কাগজপত্রে। ফলে সরকারের এমন একটি সুন্দর সময়োপযোগী পরিকল্পনা যেন আঁতুড়ঘরেই মারা যাওয়ার পথে। কারণ এসটিপিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব কার্যক্রম বা প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখা হয়, এর মধ্যে দুটি ব্যতীত আর কোনোটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাজই শুরু করা যায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কাজ শুরু করতে গেলে প্রাথমিক যেসব কাজ জরুরি, যেমন— প্রাক-সমীক্ষা, চূড়ান্ত সমীক্ষা; সেগুলো শুরু করা যায়নি। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আরএসটিপি প্রণয়নকারী সংস্থায় দক্ষ, যোগ্য ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

ঢাকার যানজট নিরসনে বহু অর্থ ও সময় ব্যয়ে একাধিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নের অভাবে তা কোনো ফলই বয়ে আনেনি ঢাকাবাসীর জন্য। বরং সমন্বয়হীনতা ও এসটিপির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু প্রকল্প গ্রহণ করায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আরএসটিপি বাস্তবায়নে অর্থায়নও কম বড় সমস্যা নয়। বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অর্থছাড়ও পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বৈকি। ২০২০ সালে শেষ হবে আরএসটিপির স্বল্পমেয়াদি সময়। এ সময়েও যদি অধিকাংশ প্রকল্প আলোর মুখ না দেখে, তাহলে সেটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ জুলাই ১৯,২০১৮