Search

Wednesday, July 25, 2018

Highways are not parking-lots!

What are the police doing?


A photograph published by this newspaper yesterday of the Dhaka-Chittagong highway is extremely revealing of the general state of our highways. The photograph shows hundreds of private trucks left parked on the highway, reducing the Dhaka-Chittagong highway to nearly a single lane. What then is the point of extending highways if they are to be reduced to one lane at the end of the day because of parked vehicles? And why are the authorities so shy to take any action against these vehicles and their owners?

Only a few days ago, this newspaper had revealed the Dhaka-Mymensingh highway to have been in a similar state. If vehicles are going to occupy our highways and the authorities are going to be least bothered about it, why not simply build parking lots along the highways instead of extending them and wasting taxpayers' money like this?

What is most ironic about the photograph in question is that it shows vehicles occupying a part of the Dhaka-Chittagong highway near the Jatrabari Police Station. What we would like to know is how are the police, who are stationed so close to the scene, unaware of what is going on? And if they are indeed aware, why can't they take action to have them removed?

The costs, in terms of long tailbacks, etc. that are being incurred because of these parked vehicles and the apathy of the authorities that is allowing this are immeasurable. We call on the government to take action against this practice and to stop the wastage of taxpayers' money by extending highways only to have them reduced to single lanes because of parked vehicles.

  • Courtesy: The Daily Star /Editorial/ Jul 25, 2018

ছাত্রলীগের ‘বাড়াবাড়ি’ ও কাদের-বচন

সোহরাব হাসান
অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন ধারায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, ইতিমধ্যে তার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। সম্মেলনের পর কমিটি গঠিত না হলেও কোনো সমস্যা হয়নি। ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়া এখন শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়ে আদালত অঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের ছাত্রলীগের মারমুখী অবস্থান দেখে শিক্ষাঙ্গনে এ কথাই বেশি প্রচার পাচ্ছে যে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মেধার জোর কম বলেই তারা কোটাকে চাকরির একমাত্র অবলম্বন হিসেবে নিয়েছেন। আবার এও সত্য যে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের অনেকে ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সংগঠনটির বিলুপ্ত কমিটির নেতারা পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ফের ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত রোববার সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা শেষে ছাত্রলীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম জানাতে গেলে তিনি তাঁদের উদ্দেশে বলেছেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে ছাত্রলীগ বাড়াবাড়ি করেছে বলে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। আর যেন কোনো অভিযোগ না আসে, সে বিষয়েও তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের নাকি সতর্কও করে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কথাটি বলেছিলেন ছাত্রলীগের নেতাদের যখন তাঁরা তাঁকে সালাম দিতে এসেছিলেন। আর ওবায়দুল কাদের সাহেব সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সেই কথাটি দেশবাসীকে জানিয়ে দিলেন। এ জন্য তাঁকে কিঞ্চিৎ ধন্যবাদ দিতে হয়। বিলম্বে হলেও ক্ষমতাসীন মহল স্বীকার করে নিল যে ছাত্রলীগ বাড়াবাড়ি করছে। সংসদ বাংলা অভিধান অনুযায়ী বাড়াবাড়ি শব্দের অর্থ হলো আতিশয্য, আধিক্য, কোনো কাজ বা আচরণে সীমা লঙ্ঘন। তিনি পুরো ধন্যবাদ পেতে পারতেন যদি প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের বাড়াবাড়ি ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নিতেন।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। রোববার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দিয়ে একজনকে মারধর করেন। প্রথম আলোর ছবিতে দেখা যায়, ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজনের ওপর চড়াও হয়েছেন এবং একজন সাংবাদিক সেই ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম মারমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তাঁকে হুমকি দেন। পরে অন্য সাংবাদিকেরা সেখানে চলে এলে তিনি বলেন, ‘দৌড়াদৌড়ি দেখতে গিয়েছিলাম।’ ছাত্রলীগ নেতাদের এই ‘দৌড়াদৌড়ি’ দেখার জেরে রোববার এলিফ্যান্ট রোডে বাটা সিগন্যালে দুজন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন পিটুনির শিকার হন। তাঁরাও কোটা সংস্কারের সমাবেশ থেকে ঘরে ফিরছিলেন।

একই দিন কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে অধুনালুপ্ত আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে আহত ও রক্তাক্ত করেন। গত বছর ১০ ডিসেম্বর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাতের দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন তিনি। সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতারা আদালত চত্বরে অবস্থান নেওয়ায় মাহমুদুর রহমান বাইরে যাওয়া নিরাপদ বোধ করেননি এবং জামিন পাওয়ার পরও তিনি আদালতের এজলাসে অপেক্ষা করেন। সাড়ে চার ঘণ্টা পর আদালতের পরিদর্শক ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে অবস্থানরত যুবকেরা লাঠি ও পাথর দিয়ে দফায় দফায় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করলে তাঁর মাথা, কপাল ও গাল কেটে যায়।

মাহমুদুর রহমান যে সাম্প্রদায়িক ও বিভেদাত্মক রাজনীতি করেন, আমরা সব সময়ই তার বিরোধিতা করি। শুধু রাজনীতি নয়, জীবনদর্শনেও তাঁর সঙ্গে আমাদের মিল নেই। ২০১৩ সালে তিনি তাঁর সম্পাদিত আমার দেশ পত্রিকা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকলে আমরা লিখে তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। নিন্দা করেছি। কিন্তু একজন ব্যক্তি যত অন্যায়ই করুন না কেন, আদালত অঙ্গনে তাঁর ওপর হামলে পড়তে হবে কেন? এর মাধ্যমে আক্রমণকারীরা যেমন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তেমনি আদালতকেও অপমান করেছেন। এখানে পুলিশের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁরা মাহমুদুর রহমানকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

মামলার বাদী ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করেননি। তাহলে কারা হামলা করল? শোনো যায়, কুষ্টিয়ার একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নাকি মাহমুদুর রহমানকে ‘হালকা নাশতা’ করানোর কথা বলেছিলেন। সেই হালকা নাশতা ‘ভারী’ হয়ে যাওয়ায় এখন আওয়ামী লীগ বিব্রত। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও বলতে হলো, ‘আমি মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা সমর্থন করি না।’

এর আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপর্যুপরি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, এসব ঘটনা ছাত্রলীগ ঘটিয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার পর বলা যাবে। ছাত্রলীগের নেতারা যখন আন্দোলনকারীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে তাঁদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য আলোকচিত্রীদের অনুরোধ জানান, তখন ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য সত্য অস্বীকারের ব্যর্থ প্রয়াস বলে মনে হয়। বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে তিনি আরেকবার বলেছিলেন, সম্মেলনের পর ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। নতুন কমিটি ছাড়াই যদি ছাত্রলীগ সারা দেশে এমন ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম’ চালাতে পারে, তাহলে কমিটি গঠন করার পর তারা কী করবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।

আমরা ছাত্রলীগকে দুই রূপে দেখেছি। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেন। মার খান। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী জেল-জুলুমের শিকার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। এখন ক্ষমতায় এসে তাঁরা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা কোটা আন্দোলনকারীদের নিশানা করছেন না; তাঁদের হাতে অনেক নিরীহ মানুষও নিগৃহীত হচ্ছেন। চট্টগ্রামে এক কোচিং সেন্টারের মালিকের সেই মার খাওয়ার চিত্র অনেকেরই মনে আছে।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু সরকারের পুলিশ বাহিনীর ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভরসা রাখতে পারছেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে দলীয় কোন্দলে ছাত্রলীগের কতজন নেতা-কর্মী মারা গেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যদি তার হিসাব নিতেন, তাহলে তিনি তাদের অধঃপতনটি উপলব্ধি করতেন। ছাত্রলীগের কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী এক নারী শিক্ষার্থীকে যেভাবে মেরে রক্তাক্ত করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগের পুরুষ নেতাদের কী ভাবান্তর হয়েছে জানি না, নারী নেত্রীরা নিশ্চয়ই লজ্জিত হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতারা হাতুড়ির ঘায়ে একজন শিক্ষার্থীর পা ভেঙে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাঁকে চিকিৎসা শেষ না করেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করেছেন।

কিন্তু এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা নেই। বরং ছাত্রলীগের হাতে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে পুলিশ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক ও বাসাবাড়ি থেকে থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। রিমান্ডের নামে কারও কারও ওপর চালানো হচ্ছে শারীরিক নির্যাতন। এ কারণে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের অন্যতম নেতা রাশেদ খানের সঙ্গে ডিবি অফিসে তাঁর মা দেখা করতে গেলে তিনি একটি অনুরোধই জানান, ‘তাঁকে যেন ওরা আর না মারে।’

ওবায়দুল কাদের একজন পেশাদার রাজনীতিক। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন। সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। ডাকসু নির্বাচন করেছেন। আশির দশকের প্রথমার্ধে ছাত্রলীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা-কর্মী যখন নবগঠিত জাতীয় ছাত্রলীগে চলে যান, সংখ্যালঘিষ্ঠদের নিয়েই আওয়ামী ধারার ছাত্রলীগ টিকিয়ে রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন।

কিন্তু ছাত্রলীগের বর্তমান অধঃপতন ও বাড়াবাড়িতে কাদের সাহেবরা আদৌ বিচলিত বলে মনে হয় না। তাঁরা দিন-রাত বিএনপিকে নসিহত করতে যে সময় ও শক্তি খরচ করছেন, তার সিকিভাগ ছাত্রলীগের পেছনে ব্যয় করলে দেশের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/জুলাই ২৫,২০১৮


কয়লাসংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে

১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে বলে খবর প্রকাশের পরই দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেল। দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তৃতীয় ইউনিট বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো উৎপাদনই বন্ধ হলো। এটা একটা বড় দুঃসংবাদ, কারণ এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে এবং জাতীয় গ্রিডেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত কয়লার মজুত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। অন্যথায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতে পারে না। কিন্তু বড়পুকুরিয়ার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে, অথচ সংকট দূর করার কার্যকর উদ্যোগ যথাসময়ে নেওয়া হয়নি। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে গত ১৪ জুন কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে; এরপর উত্তোলন শুরু হবে আগস্টের শেষে। এই সময়ের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে উদ্বৃত্ত কয়লা মজুত থাকার কথা, কিন্তু দেখা গেল তা নেই।

খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা তোলা শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ১০ লাখ টন কয়লা তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের বরাতেই এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারা এ পরিমাণ কয়লার হিসাবের গরমিলকে বলছে ‘সিস্টেম লস’। এই খনির নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পেট্রোবাংলা; তারা এত দিন এদিকে যথেষ্ট নজর রাখেনি। কয়লা গায়েব কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়েছে এবং মহাব্যবস্থাপককে বদলি করা হয়েছে।

খনি থেকে তোলা কয়লার হিসাব রাখা একটি নিয়মিত দায়িত্বের বিষয়। ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা রাতারাতি গায়েব হয়ে যায়নি, যেতে পারে না। প্রতিনিয়ত চুরি হয়েছে। নিয়মিত হিসাব রাখা হলে অনেক আগেই তা ধরা পড়ত। খনি কর্তৃপক্ষ যেমন এর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না, তেমনি তার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলারও দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। তদন্ত করে দেখা দরকার, কী প্রক্রিয়ায় কাদের দ্বারা এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে; এই চুরি সেখানকার একটা স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে কি না। ডিলারদের কাছে কয়লা বিক্রির প্রক্রিয়া কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তা খতিয়ে দেখে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শুধু দায়িত্ব থেকে অপসারণ ও বদলি যথাযথ প্রতিবিধান নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লার মজুত নিশ্চিত করার পরই শুধু উদ্বৃত্ত কয়লা বিক্রি করা যায়। এদিকে কতটা দৃষ্টি রাখা হয়, তা আমাদের জানা নেই। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে হবে, দায়িত্বশীলতা ও সততা নিশ্চিত করতে হবে, সে জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কয়লা উত্তোলন যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে, এই খনির প্রাথমিক কর্তব্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা উৎপাদন ও সরবরাহ করা। খনির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করা দরকার।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে, এটা মোটেই ভালো কথা নয়। আর কয়লাই যেহেতু এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একমাত্র জ্বালানি, সেহেতু পর্যাপ্ত কয়লার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদেরও খনি কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া উচিত।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সম্পাদকীয়/জুলাই ২৫,২০১৮


চোরের ঠ্যাং ছেড়ে লাঠি ধরা বাঙালির বৈশিষ্ট্য

সৈয়দ আবুল মকসুদ
গত হপ্তায় সোনাদানাবিষয়ক এক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরদিন তার প্রতিক্রিয়ায় প্রতি খবর সব মিডিয়ায় আসে। সে সম্পর্কে কোনো মাধ্যম আমার মতামত জানতে চাইলে আমি বলেছিলাম, এসব বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।
সাংবাদিক জানতে চান দায়ী ব্যক্তিরা ধরা পড়বে কি না এবং ধরা পড়লেও শাস্তি পাবে কি না? আমি বলেছিলাম, ‘অসম্ভব!’ একালে বাংলায় সাধারণত চোর ধরা যায় না। চোরের ঠ্যাং মনে করে ধরা হয় চোরের লাঠি।

একসময় সিঁধেল চুরিটা ছিল বঙ্গের বৈশিষ্ট্য। ঘরের দাওয়ায় সিঁধ কেটে চোর ঘরে ঢুকত। আমাদের ছেলেবেলায় আমরা গ্রামে সেটা খুব দেখেছি। এখন বিত্তশালী বাংলায় প্রায় সব ঘরের দাওয়াই পাকা, খন্তা দিয়ে সিঁধ কাটার জো নেই। যাহোক, সেকালে সিঁধ কেটে চুরি করতে গিয়ে কোনো কোনো হতভাগা চোর ধরাও পড়ত। ঘরের লোক ঘুম থেকে জেগে উঠলে চোর সিঁধ দিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইত। ঘরের লোক চোরের ঠ্যাং ধরতে চাইত। কখনো দেখা যেত চোরের ঠ্যাং ছেড়ে ধরে ফেলেছে তার লাঠি। চোর দ্রুত পালিয়ে যেত। কলিকালে আমাদের রাষ্ট্র প্রায় সব ক্ষেত্রেই চোরের ঠ্যাং ছেড়ে দিয়ে চোরের লাঠি শক্ত করে ধরে।

বড় নেতাদের অন্তর্জ্ঞান অসামান্য। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। সোনা এবং চোর শব্দ দুটি আজ বাংলাদেশে বহু ব্যবহৃত।

বঙ্গবন্ধু দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছিলেন একদিন তাঁর প্রিয় দেশে শুধু টাকা এবং ডলার নয়, উত্তম উপায়ে সোনাও উধাও বা চুরি হবে এবং চুরির জন্য এখন আর ঘরে সিঁধ কাটার প্রয়োজন হয় না। এখন ঘরের ভেতরে বসেই অলৌকিকভাবে পছন্দের বস্তু অপহরণ করা সম্ভব।

অন্য কোনো ভাষায় সম্ভবত নেই, শুধু বাংলাতেই প্রবাদ আছে ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি ধরা না পড়ে’। এই বিদ্যায় কোনো কোনো বাঙালির ব্যুৎপত্তি প্রশ্নাতীত। কারও গাছের লিচু বা পাকা আম চুরি দিয়ে শুরু হলেও বাঙালি পুকুরচুরিতেও পাকা। চুরির বস্তু হিসেবে পুকুরও এখন বড় কিছু নয়। খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, বনভূমি, নদী ও পাহাড় পর্যন্ত চুরি হচ্ছে। সোনাদানা তো অতি ছোট বস্তু।

এ যুগে চোরের বিপদ নেই বললেই চলে, চোর যে ধরবে, বিপদ তার। বলা হবে-চোর ধরার তুমি কে হে? এই কারণে চোখের সামনে কাউকে চুরি করতে দেখলেও অনেকে চোখ বন্ধ করে। চুরি করছে তো কী হয়েছে?

সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’। ভূতের কাণ্ডই হোক বা মানবীয় কাণ্ডই হোক, একটা ব্যাপার তো বটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জমা রাখা হয়েছিল ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের চাকতি ও আংটি, তা হয়ে আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ছিল ২২ ক্যারেট সোনা, হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।...দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়ে।’

২০১৫ সালে ব্যাংকে জমা দেওয়ার সময় ছিল ‘বিশুদ্ধ সোনা’, ‘কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা।’

প্রখ্যাত ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিষয়টি জেনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অকল্পনীয়। যাঁরা কাস্টডিয়ান, তাঁদের হাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিস্মিতই হতে হয়।...এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকেন হাতে গোনা কয়েকজন। ঘটনার সময় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে।’

অন্যদিকে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্রকে তাঁর মেইলে লিখিত প্রশ্ন পাঠালে ৯ দিনেও তিনি জবাব দেননি। প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের মুখ বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে আরও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তবে সে সন্দেহ দূর করার প্রচেষ্টা হয় পরদিন। সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, ভল্টে রাখা সোনার পরিমাণে কোনো হেরফের হয়নি। সোনার পরিমাণ একই আছে। বাংলা চার (৪) আর ইংরেজি আট (৪) দেখতে একই রকম বলে লিখতে ভুল হয়েছিল। এটি কারণিক ভুল (ক্ল্যারিকেল মিসটেক)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের দেওয়া সোনা জমা রাখার সময় সোনা ৪০ শতাংশই ছিল। কিন্তু ইংরেজি বাংলা হেরফেরে সেটা ৮০ শতাংশ লিখে ভুলবশত নথিভুক্ত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার এই ভুলটি করেছিলেন।’

এ বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশের তিলমাত্র অবকাশ নেই। দোষ দিলে এখন দিতে হয় যাঁরা বাংলা অক্ষর উদ্ভাবন করেছিলেন, তাঁদের। তাঁদের রোমান হরফ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ছিল বড় বোকামি। ব্যাপারটি বিপরীতও হতে পারত। ছিল রোমান ৪০ (আশি), লেখা হলো বাংলা ৪০ (চল্লিশ)। যিনি লিখেছিলেন সেই গরিব কেরানিকে কোরবানি দিলেই সব সমস্যার সমাধান। মানুষ মনে করবে ওই প্রতিষ্ঠানে শুধু ওই কেরানিই রয়েছেন আর কোনো কর্মকর্তা নেই তাঁর ওপরে। থাকলেও তাঁরা সবাই সাধু।

অতীতে রাজকর্মচারীদের অসাধুতা ও দুর্নীতির কারণে বহু রাজত্ব ও সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটেছে। দোষ গিয়ে পড়েছে রাজা ও সম্রাটের ওপর, কিন্তু সর্বনাশ ঘটিয়েছেন রাজন্যবর্গ ও আমলারা।

অনভিজ্ঞ যুবক সিরাজউদ্দৌলার জন্য বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করতলগত হয়নি। হয়েছিল দুর্নীতিবাদ ও বিশ্বাসঘাতক আমলাদের জন্য।

অদক্ষ ও অবিশ্বস্ত আমলা ও কর্মচারীরা সরকারের যত ক্ষতি করে, সরকারের প্রকাশ্য বিরোধিতাকারীরা তার শতভাগের এক ভাগও করে না। পথেঘাটে ও ময়দানে দাঁড়িয়ে সরকারের সমালোচনা করা এক কথা, আর সরকারের ভেতরে থেকে সবকিছু খেয়ে ঝাঁজরা করে দেওয়া আর এক জিনিস।

তোপখানা রোডে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাস ভরে লোক এনে ‘স্মরণকালের বৃহত্তম’তে বক্তৃতা দিয়েও সরকারের চুলটিও ছিঁড়তে পারেন না কোনো জননেতা; তালা-চাবি ও হাতুড়ি-বাটালি নিয়ে সন্ধ্যার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রুদ্ধ কক্ষে বসে দেশের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া যায়।

বিশ্বস্ত কর্মচারী-কর্মকর্তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পারেন, তার প্রমাণ পেয়েছি একাত্তরে। একই সময়ে দেখেছি বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খানদের। ব্যক্তিস্বার্থে তাদের টিক্কা-নিয়াজি-ফরমানের পা চাটায় অরুচি ছিল না।

শুধু বৃদ্ধ বাহাদুর শাহ জাফরের অযোগ্যতায় মোগল সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয়নি। তা যে হয়নি তা বুঝতে পেরেছি শতাব্দীকাল পর পঁচাত্তরের ১৭ আগস্ট, যেদিন সচিবালয় থেকে একটি অবৈধ প্রশাসনকে আনুগত্য দিতে একজনও অস্বীকার করেননি।

জনগণের কষ্টার্জিত টাকা ও ডলার ব্যাংকগুলোর ভল্ট থেকে কর্পূরের মতো উড়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিন্দুকের সোনা একা একাই রূপান্তরিত হচ্ছে এক অভিনব ধাতুতে। দুনিয়া জাহানে যা ঘটে না, তাই ঘটছে বাংলার মাটিতে। সত্য হোক অথবা ‘পুরো সত্য’ না হোক, কোনো বিষয়ে কোনো রকম অভিযোগ ওঠা মাত্র তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।

দুর্নীতির স্থান-কাল-পাত্র নেই, তা সত্ত্বেও মানুষ মনে করে ভূমি অফিসে তহশিলদারের দুর্নীতি আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো লোকের দুর্নীতি একই মাপকাঠিতে বিচার্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি। পরিমাণ দিয়ে সবকিছু বিচার্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিন্দুক থেকে যদি এক তোলা সোনাও এধার-ওধার হয়ে থাকে, তা খুব বড় ঘটনা। দেশের মানুষ বিষয়টির স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা বা মাছ দিয়ে শাক ঢাকা সব ক্ষেত্রে চলে না।

  • সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ২৫,২০১৮

দেশে আইনের শাসনের বদলে উগ্রতার শাসন চলছে...

গোষ্ঠীগত উগ্রতা যেসব কারণে নিন্দনীয়

কামাল আহমেদ

সরকারি পদক্ষেপের কারণে বন্ধ থাকা আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান একটি মানহানির মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত প্রাঙ্গণে তাঁর ওপর ছাত্রলীগ কর্মীরা যে হামলা চালিয়েছেন, তাকে কেন্দ্র করে দেশে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কেও যথারীতি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের বিভাজন স্পষ্ট। কিন্তু এই দলীয় দৃষ্টিকোণের বাইরেও যে একটা যৌক্তিক ভিন্নমত আছে, তা এড়িয়ে যাওয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের জন্য মোটেও সুখকর নয়।

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখা প্রয়োজন যে আদালতে বিচারাধীন মামলা অন্য কারও বিচার করার অধিকার আছে কি না? যদি না থাকে, তাহলে আদালত যাঁকে জামিন দিয়েছেন, তাঁকে এজলাসের বাইরে যাঁরা শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের নিন্দা করা জরুরি। তা না হলে আইনের শাসনের বদলে আমাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর দলবদ্ধ উগ্রতার শাসন (Mobocracy) প্রতিষ্ঠা পাবে।

দ্বিতীয়ত : সম্পাদক কিংবা সাংবাদিক অথবা অন্য যেকোনো পেশার মানুষের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে তার ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ‘ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’ খুব পুরোনো একটা প্রবচন। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে সাংবাদিক নেতা, বর্তমানে বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ওপর ২০০৬ সালে কুষ্টিয়ায় হামলার কথা উল্লেখ করে কেউ কেউ আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন। এই পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধ গণতন্ত্রে অচল এবং উভয় হামলারই নিন্দা ও হামলাকারীদের বিচার করা উচিত।

তৃতীয়ত : একাধিক নিন্দনীয় অপরাধের জন্য এ ঘটনাকে মাহমুদুর রহমানের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, তা–ও অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি প্রবণতা। তাঁদের অভিযোগ, তিনি নিজের পত্রিকায় অসত্য তথ্য প্রকাশ করেছেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনের সময়ে ব্লগারদের পরিচয় প্রকাশ করে তাঁদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিলেন। একধরনের অসত্য তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগ অন্য দু-একটা কাগজের বিরুদ্ধেও আছে। কিন্তু সরকারের কৃপাদৃষ্টিতে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অভিযোগগুলো গুরুতর এবং সেগুলোর বিচারের আইনি পন্থা আছে এবং সেই পথেই

এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এর অন্যথা হলে এ ধরনের অভিযোগে আর কোনো সাংবাদিককে যে হেনস্তার মুখে পড়তে হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? বর্তমানে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ভুলভাবে ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের পরিবারের খুঁটিনাটি প্রকাশ করে তাঁদের জীবনকে যে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা এখানে স্মরণ করা যায়। যাঁরা মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে ‘জনরোষ’ বা ‘গণধোলাই’-এর শিকার বলে হামলার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন; কোটা আন্দোলনের নেতাদের বেলাতেও তাঁরা একই কথা বলে থাকেন। এটি সমর্থনযোগ্য নয়।

চতুর্থত : পেশাগত যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে এ ধরনের হামলাকে উপেক্ষা করা মোটেও সংগত নয়। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে ‘এডিটর বাই চান্স’ অভিধাটি আদালত প্রয়োগ করলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে কমই পেশাদার সাংবাদিক সম্পাদকের আসনটিতে স্থান পেয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ যাঁর, তিনিই সম্পাদক বা প্রধান সম্পাদক। এঁদের অনেকে উত্তরাধিকার সূত্রেও ওই পদে আসীন হয়েছেন। তাহলে কি সাংবাদিকতা পেশার বাইরে থেকে এসে যিনি বা যাঁরা সম্পাদক হয়েছেন, তাঁদের ওপর হামলার বিষয়টি সহনীয় বলে গণ্য হবে?

পঞ্চমত : রাজনৈতিক বিশ্বাস বা পক্ষপাতের কারণে কোনো সংবাদপত্র, সম্পাদক ও সাংবাদিকের ওপর হামলা সমর্থনযোগ্য নয়। সব দেশেই সংবাদপত্রের কাছে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশিত হলেও অনেকেরই রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকে। আবার সরাসরি রাজনৈতিক দলের প্রকাশনা হিসেবেও পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকে। একসময় বাংলার বাণী আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সরকার–সমর্থক কাগজের আধিক্যের কারণে দলীয় কাগজের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বিএনপির দলীয় প্রকাশনা হচ্ছে দিনকাল। কিন্তু দলীয় প্রকাশনা বলেই তার মতপ্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা বা হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে দলীয় অবস্থান থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা বিবেচ্য নয়। গণতন্ত্রে ভিন্নমতের সুরক্ষায় দলমত-নির্বিশেষে সবারই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

ষষ্ঠত : সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথিত মানহানির মামলা হয়রানির একটা বিপজ্জনক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ফৌজদারি আইনের বাইরেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাও এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদের বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মানহানির মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক বিভাজনের বাস্তবতায় ভিন্নমতের সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হলে, বিষয়টি সহনীয় বলে উপেক্ষিত হলে, তা সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। সুতরাং, রাজনৈতিক বৃত্তের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষায় দলমত-নির্বিশেষে এ ধরনের উগ্রতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

এখানে আরও বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পুলিশ হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে প্রয়োজনের সময়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অন্যায় আচরণের প্রতি একধরনের সহনীয়তা বা প্রশ্রয় লক্ষ করা গেছে। ছাত্রলীগ বা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের প্রতি এই বিশেষ পক্ষপাত আসলে সারা দেশেই একটি নিয়মে পরিণত হতে চলেছে—তা সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলাই হোক অথবা শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাই হোক।

  • কামাল আহমেদ : সাংবাদিক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জুলাই ২৫,২০১৮  

নোয়াখালীতে ডিসি এসপি ও বিআরটিএ অফিস ঘেরাও

সীমাহীন পরিবহন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ডিসি-এসপি অফিস ঘেরাও করে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নোয়াখালী-ঢাকা রুটে চলমান সীমাহীন পরিবহন নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায্য ভাড়া পুনঃনির্ধারণের দাবিতে সোমবার সকাল ১০টায় নোয়াখালী টাউন হল চত্বরে এক মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিআরটিএ নোয়াখালী জোনের পরিচালক অফিস ঘেরাও করে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নোয়াখালীর নানা সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি সমন্বয়ক কমিটি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে অনলাইনভিত্তিক জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন “নোয়াখালী পেইজ”। নোয়াখালী-ঢাকা রুটে নিম্নমানের বাস সার্ভিস ও মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন এই রুটের হাজার হাজার যাত্রী। নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ পর্যন্ত (ভায়া লাকসাম) দূরত্ব প্রায় ১৬২ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া দূরপাল্লার বাসের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১.৪২ টাকা।

সেই হিসেবে এই রুটে বাস ভাড়া হওয়ার কথা ২৩০ টাকা। দুইটি সেতু ও ফ্লাইওভারের টোল বাবদ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হলেও তা কোনোভাবেই ২৫০ টাকার বেশি হওয়া যুক্তিযুক্ত না। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, নোয়াখালীর পরিবহন কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ এইটুকু পথের ভাড়া আদায় করছিল ৩৫০ টাকা যা গত ঈদুল ফিতরে বাড়িয়ে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ঈদের পর থেকে দীর্ঘ দিন ৪০০ টাকা ভাড়া আদায় করার পর সমপ্রতি “নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে” ভাড়া ৩৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে মর্মে উনারা দাবি করছেন। যদিও জেলা প্রশাসক অফিসের বিভিন্ন সূত্র এ তথ্যের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জুলাই ২৫,২০১৮ 

পেট্রোবাংলার গাফিলতি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ 
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা কেলেঙ্কারিতে পেট্রোবাংলার গাফিলতি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে সরকারি এই সংস্থাটি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। কয়লা সংকটের কারণ কি জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, কয়লা চুরির    কেলেঙ্কারির সঙ্গে পেট্রোবাংলার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। সংস্থাটির তদারকিতে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। এটা সাগরচুরির সমান বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, চুরির প্ল্যান একদিনের নয়।

এই চুরির অপারেশন করার জন্য ৬ থেকে ৭ মাস সময় নিয়েছে। দেড় লাখ টন কয়লার দাম বাইরে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা। আর এই কয়লা যদি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ক্রয় করতো তাহলে লাগতো প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। এটি উন্নতমানের কয়লা। প্রতিটন কয়লার বাজার দর ১৭ হাজার টাকা। পিডিবি কিনে টনপ্রতি ১১ হাজার টাকা করে। বিডি রহমতউল্লাহ আরো বলেন, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালু থাকলে প্রতিদিন কয়লা লাগে ৫ হাজার টন। আর দেড় লাখ টন কয়লা দিয়ে চলতে পারে দেড় থেকে দু’মাস। দেড় লাখ টন কয়লা সরাতে কমপক্ষে ১৯ থেকে ২০ হাজার ট্রাক লাগে। স্থানীয় গ্রামের সাধারণ মানুষের বুঝার শক্তি নাই। তবে খনি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যারা কাজ করেন তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন কয়লা কীভাবে গেছে। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে।

আরেক বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কেমিক্যাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। দেশে কয়লা নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তিনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মানবজমিনকে বলেন, এক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা সবকিছুর একটা উত্তর চাই। কয়লা চুরির ঘটনার এখনো সম্পূর্ণ তথ্য জানা নেই। সবাই ধারণা করে বলছেন। তিনি বলেন, খনিতে বারো বছরেও সিস্টেম তৈরি হয়নি। কয়লা কীভাবে মাপতে হয়, কীভাবে রাখতে হয়। এখানে হিসাবের গরমিল থাকতে পারে। হঠাৎ করে কয়লা সংকট কেন হলো? চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটলো।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, পেট্রোবাংলার গাফিলতি রয়েছে। সঠিকভাবে চলছে কিনা দেখেনি সরকারি এই সংস্থা। অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে সংস্থাটি। যার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, শুধু কয়লাই নয়, গ্যাসে, বিদ্যুতেও কেলেঙ্কারি রয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়, জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সরাতে হবে। না হলে এধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটতেই থাকবে। 

এদিকে, গতকাল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। দুদকের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পরদিন মঙ্গলবারই কমিটির সদস্যরা আকস্মিকভাবে কাওরান বাজারে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা বেলা দেড়টা থেকে দু’ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। তারা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহসহ সংস্থার আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন বলে দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলম  গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

অনুসন্ধান কমিটির তদারক কর্মকর্তা কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে এই দলে অনুসন্ধান কমিটির প্রধান দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম ও দুই সদস্য সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন এবং সহকারী পরিচালক এএসএম তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। কাজী শফিকুল বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে দুর্নীতি বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়েছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব নথিপত্র আমাদেরকে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময় ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করবেন বলে কাজী শফিকুল জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১শে জুলাই ও ২০১৮ সালের ২৫শে জানুয়ারি দুটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কয়লা বিক্রি করা হয়। গত ১৮ই মার্চ থেকেই বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে অন্য গ্রাহকদের কাছে কয়লা বিক্রি বন্ধ করা হয়। এদিকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫-০৬ সালে বর্তমান স্তর থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। গত ১৩ বছরে একবারও কয়লা বিক্রি করার পর ইয়ার্ডে কি পরিমাণ কয়লা আছে রহস্যজনকভাবে তার হিসাব রাখা হয়নি। শুধু উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এক কোটি ২২ হাজার ৯৩৩ টন কয়লা তোলা হয়েছে তার হিসাব আছে। প্রথম বছরে তিন লাখ তিন হাজার ১৫ টন কয়লা উত্তোলন করে। পরবর্তী বছর থেকে কয়লা তোলার পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ১১ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৭ টন কয়লা তোলা হয়। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২১ হাজার ৬৩৮ টন। এভাবে প্রতি বছরই সাত থেকে নয় লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের গত মার্চ পর্যন্ত ৭ লাখ ৮২ হাজার ২১৪ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শিফট পরিবর্তন করার কারণে কয়লা তোলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখতে কয়লার চাহিদা পূরণের সমান কয়লা মজুত রাখার অনুরোধ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে খনি কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জানায়, এক লাখ টন কয়লা মজুত রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কোনো সংকট হবে না। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কয়লা না থাকার বিষয়টি পিডিবিকে জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ পরিদর্শনে গিয়ে কয়লা না থাকার সত্যতা পান। কয়লা না থাকায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২২শে জুলাই রাত ১০টা ২০ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বড়পুকরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব উদ্দিন আহমদ ও অন্যদের বিরুদ্ধে। ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় রংপুর বিভাগের আট জেলা বিদ্যুৎ সংকটে পড়ায় বিকল্প পথ খুঁজছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। 

কার্টসিঃ মানবজমিন/ জুলাই ২৫,২০১৮ 

নারায়ণগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার বাসা থেকে ইয়াবা উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বরখাস্ত সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) সালাউদ্দিনের দুটি বাসা থেকে পাঁচ হাজার ৬২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১১। জব্দ করা হয় মাদক বিক্রির ৯ লাখ ৪শ’ টাকা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় সালাউদ্দিনের সহযোগী সুমন (২৫) কে। সে র‌্যাবকে জানায়, উদ্ধার ইয়াবা ও টাকার মালিক সালাউদ্দিন ডিবি পুলিশের একজন বরখাস্ত এএসআই। মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রায় সাত মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা থেকে সালাউদ্দিন বরখাস্ত হয়। সেই থেকে সালাউদ্দিন পলাতক রয়েছে বলে জানা যায়।

তবে, পলাতক হলেও সে এখনো নারায়ণগঞ্জ ডিবি’র অফিসার পরিচয় দিয়ে চলে। স্থানীয় লোকজন তাকে সালাউদ্দিন স্যার ও ডিবির স্যার হিসেবে চেনে। তার তিনটি প্রাইভেট কার রয়েছে। এই কার দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাদক পৌঁছে দেয়া হয় এবং প্রতিদিনের ইয়াবা বিক্রির টাকার হিসাব রাখার জন্য ব্যক্তিগত সহকারী রয়েছে। আছে বেতনভুক্ত কর্মচারী। ইয়াবা বিক্রি করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যাওয়া সালাউদ্দিনের ইয়াবা সেবনের জন্য একটি জেন্টস পার্লারও রয়েছে।

সোমবার রাতে শহরের নগরখানপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় ফ্রেন্ডস টাওয়ারে দুটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র এএসপি জসিম উদ্দীন চৌধুরী পিপিএম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সালাউদ্দিন নামক একজন পাইকারি ইয়াবা বিক্রেতার নাম উঠে আসে যে নিজের প্রাইভেট কারে ইয়াবা বিক্রেতাদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেয়। কয়েকদিন আগে গোপনসূত্রে  কদমতলী এলাকায় ফ্রেন্ডস টাওয়ারে সালাউদ্দিনের একটি ভাড়া বাসার সন্ধান পাওয়ার পর র?্যাব-১১ ওই বাসার উপর নজরদারি শুরু করে। একপর্যায়ে সোমবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে কদমতলীর ফ্রেন্ডস টাওয়ারের ভাড়া বাসায় সালাউদ্দিনের অবস্থান জানতে পেরে র?্যাব-১১ অভিযান চালায়। র?্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সালাউদ্দিন ও তার ড্রাইভার জাসিম পালিয়ে গেলেও তার সহকারী সুমন গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তার সুমনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাসার মালিক আলমাস ও কেয়ারটেকারকে সঙ্গে নিয়ে সালাউদ্দিনের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ হাজার ২শ’ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ৮ লাখ ৫০ হাজার ৪শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার নগরখানপুর এলাকায় সালাউদ্দিনের অপর ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ৪শ’ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, উদ্ধার ইয়াবা ও টাকার মালিক সালাউদ্দিন তিনি পুলিশের একজন বরখাস্ত এএসআই। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পৃথক দু’টি মামলা করা হবে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জুলাই ২৫,২০১৮ 

Tuesday, July 24, 2018

ডিজিটাল দুর্নীতিতে বন্ধ হয়ে গেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র


বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির  ও খামখেয়ালিপনার কারণে অবশেষে বন্ধ হলো দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গতকাল সকাল থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লা দিয়ে এ কেন্দ্রে উৎপাদন হতো ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলা বিদ্যুৎ সঙ্কটের মধ্যে পড়বে।

বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কয়লা সরবরাহ করতে না পারায়, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে উত্তোলনকৃত কয়লার মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার মে. টন কয়লা ঘাটতি রয়েছে। কাগজে কলমে এই কয়লা থাকার কথা থাকলেও দৃশ্যমান নয়, যা ডিজিটাল দুর্নীতির নামান্তর। কয়লার হিসাব মেলাতে না পারার কারণে গত ১৯ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কোম্পানির সচিব (জিএম প্রশাসন)কে প্রত্যাহার করেছে, একই কারণে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন ও উপ মহাব্যবস্থাপক (স্টোর)কে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তবে খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১১ বছরে এক কোটি ১০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিস্টেম লসের পরিমাণ এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা।

এ দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড নেসকো-এর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন, এর মধ্যে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে, কিন্তু কয়লা সঙ্কটের কারণে গত এক মাস থেকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট বন্ধ থাকায়, সেখান থেকে মাত্র ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসত। এই কারণে গত এক মাস থেকে বিদ্যুতের কিছু ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ায় এই ঘাটতি আরো বাড়ল। তিনি আরো বলেন, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হলেও বাইরে থেকে বিদ্যুৎ এনে চাহিদা পূরণ করা হবে, তবে এতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই সাথে লোডশেডিং হতে পারে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে, কয়লা উত্তোলন শুরু হলেই কয়লার এই সঙ্কট থাকবে না বলে তিনি আশা রাখেন।

তদন্তে নেমেছে দুদক

পার্বতীপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলিত ‘কয়লার মজুদ কেলেঙ্কারি’র ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বেলা ২টা ৩০ মিনিটে দুদক দিনাজপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্তদল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পরিদর্শন করে। তদন্তদলের অন্যরা হলেন : দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো: কামরুজ্জামান, সহকারী পরিদর্শক ওবায়দুর রহমান ও শাহজাহান আলী। তদন্তদলের প্রধান বেনজির আহমেদ বলেন, দুদক ঢাকা অফিসের নির্দেশে তিনি খনির কয়লা কেলেঙ্কারি তদন্তে এসেছেন। সরেজমিন প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, কয়লা মজুদের নথিপত্র অনুযায়ী খনির কোল ইয়ার্ডে যেখানে এক লাখ ৪৬ হাজার টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। সে জায়গায় রয়েছে মাত্র এক থেকে দেড় টন কয়লা। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে কয়লা মজুদের নথিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট নথিপত্র প্রস্তুত থাকার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

এ দিকে কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তে দুদকের ঢাকা অফিসের পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গতকাল বিকেলে তিন সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্তদল গঠন করা হয়। তদন্তদলের অন্য সদস্যরা হলেন : দুদকের সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ ও সহকারী পরিচালক মো: তাইজুল ইসলাম।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ জুলাই ২৪,২০১৮ 

‘বাড়াবাড়ি নয়’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও আক্রমণে ছাত্রলীগ


প্রধানমন্ত্রীর ‘বাড়াবাড়ি’ না করার নির্দেশনার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটে।

গতকাল রোববার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ছাত্রলীগকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে যেন কোনো বাড়াবাড়ির অভিযোগ আর তিনি না পান; পরিষ্কারভাবে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’ কাদের বলেন, শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনা শেষে তার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কাদের এমন কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

গতকাল বিকেলে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন জন যুগ্ম আহ্বায়ককে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান উজ্জ্বল এই হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হামলার শিকার নিয়াজি সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিকেল ৫টা ১০মিনিটের দিকে সমাবেশ শেষ করে অটোরিকশায় বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তার সঙ্গে যে আর দুজন হামলার শিকার হয় তারা হলেন রাতুল সরকার ও সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশ থেকেই চারটি মোটরসাইকেলে করে তাদের অটোরিকশার পিছু নেয়। কাঁটাবন মোড়ে তারা তাদের থামিয়ে টেনে বের করে মারধর করে। রাতুলের সঙ্গে এক পর্যায়ে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সোহরাবকে তারা বেদম প্রহার করে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

ছাত্রলীগ নেতা সাইদুর বলেন, বাটা সিগনাল দিয়ে যাওয়ার সময় একটি সিএনজি অটোরিকশা আমার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে আমরা সেটিকে থামাই। অটোরিকশার চালকের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার দাবি, ভেতরে কে ছিল তারা সেটা দেখেননি, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি।

তবে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এই ঘটনার ভিডিও ভিন্ন কথা বলে। সেখানে আমির ও সাইদুরসহ ছাত্রলীগের সাত থেকে আটজন নেতাকর্মীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। তারা প্রথমে তাদের ‘ছিনতাইকারী’ আখ্যা দেয়। এসময় আমির রাতুলকে ধরে ছিল ও অন্যরা তাকে কিল-ঘুষি মারছিল। অন্য দুজনকেও একইভাবে মারতে দেখা যায় ভিডিওটিতে।

এসময় দুজন পুলিশকে তাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করতে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিফল হন।

অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম লেমনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত একজনকে মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলার শিকার ছেলেটি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার পরিচয় জানা যায়নি।

গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র ফেডারেশনের একজনকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করায় তার ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের ১০-১২ জন মিলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রাকিবুল রাকিবকে মারধর করে। ক্লাস শেষে বের হয়ে আসার সময় বিবিএ ভবনের সামনে তার ওপর হামলা করা হয়।

  • Courtesy: The Daily Star /Bangla/ Jul 23, 2018