Search

Thursday, August 9, 2018

গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয় - শহীদুলকে মুক্তি দিন

শহীদুল আলমকে ছেড়ে দেয়া উচিৎ বাংলাদেশের। প্রখ্যাত এই ফটোগ্রাফার ও অ্যাক্টিভিস্ট যেই কালাকানুনের অধীনে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার টার্গেট হয়েছেন এমন আরও অনেকেই। তাই শহীদুলকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি এই আইনও পরিবর্তন করা উচিৎ। বৃটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান এক সম্পাদকীয়তে এসব বলেছে। এতে বলা হয়, শহীদুল আলমের ছবি গার্ডিয়ান সহ বিশ্বব্যাপী বহু প্রকাশনায় ছাপা হয়েছে। ৬৩ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফার নিজেই এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

ফেসবুকে ‘উস্কানিমূলক মন্তব্যে’র কারণে বাংলাদেশের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশকে অচল করে দেয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ার ঘণ্টাকয়েক পরে তাকে আটক করা হয়। তিনি নিজে যেমনটা পর্যবেক্ষণ করেছেন, প্রাথমিকভাবে এই বিক্ষোভ ছিল সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে। তবে পরবর্তীতে দুর্নীতি এবং গণমাধ্যমের ওপর শাসক দল আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন থেকে উদ্ভূত ক্ষোভ থেকে এই বিক্ষোভ আরও দাঁনা বেধে উঠে। 

বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় যেই দমনপীড়ন চালানো হয়, সেখানে পুলিশকে রাজপথে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে দেখা গেছে। পরবর্তীতে শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। একেবারেই সাধারণ সমালোচনা কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে আলোচনার দরুন এর আগে বহু নাগরিক ও ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করে মামলা হয়েছে। 

এমনকি সরকারও স্বীকার করেছে এই আইন বাতিল করা উচিৎ। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো এই আইনের স্থলে নতুন যেই আইন প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি আরও ভয়াবহ।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বৃটেন সহ অন্যান্য দেশের উচিৎ এই আইনের সঠিক সংস্কারের দাবিতে চাপ দেয়া। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের প্রতি শহীদুল আলমের মুক্তি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের আহ্বান জানানো হয় সম্পাদকীয়তে। এই ফটোগ্রাফারের বন্ধুরা বলছেন, আদালতে তিনি নিজ থেকে হাঁটতে পারছিলেন না। তিনি বলেছেন যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এই ইস্যুতে চাপ দেয়ার বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে সরকারসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর। ফটোগ্রাফির প্রতি শহীদুল আলমের অবদান সত্যিই বৈশ্বিক মাপের। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ফটো লাইব্রেরি দৃক ও মেজরিটি ওয়ার্ল্ড এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার শ’ শ’ সাংবাদিককে। এছাড়াও, তিনি সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিজিটিং প্রফেসর। নিশ্চিতভাবেই এ ধরণের উচুঁমাপের ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার উদ্দেশ্য ছিল শীতল প্রভাব তৈরি করা। শহীদুল আলমের পক্ষালম্বন করার অর্থ হলো বাংলাদেশে সাংবাদিক ও নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার অধিকারকে সমর্থন করা। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮

শহিদুল আটক ও সরকারের কাছে চারটি প্রশ্ন

আনু মুহাম্মদ


শহিদুলের মত সরকারের সঙ্গে না-ও মিলতে পারে, সেটা কি তঁার অপরাধ? ঘটনাটা আরও অনেক ঘটনার মতোই। রাতে কোনো সময় কিংবা ভোরে মাইক্রোবাসসহ দলে–বলে এসে ত্রাস সৃষ্টি, হুমকি-ধমকি ও জোরজবরদস্তি করে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া। এরপর প্রথমে অস্বীকার করা, পুলিশের নির্লিপ্ত ভাব, কয়েক ঘণ্টা বা কিছুদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো। এরপর রিমান্ড। বিশ্ববিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী, শিক্ষক ও লেখক ডক্টর শহিদুল আলমের ক্ষেত্রেও এই মডেলেই কাজ হয়েছে। 

তবে অপহরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। সিসিটিভি ভাঙা হয়েছে, বাড়ির প্রহরীদের বাঁধা হয়েছে। পরের দিন ৬ আগস্ট সকালে শহিদুলের সন্ধান মিলল, মানে সরকার থেকে আটকের খবর স্বীকার করা হলো। বিকেলে তাঁকে দেখা গেল কোর্টে, খালি পায়ে। হাঁটার শক্তি নেই। এক রাতে সুস্থ, সক্ষম, সক্রিয় ও সরব মানুষকে অচল বানানোর চেষ্টায় নির্যাতনের বহু প্রশিক্ষণ যে তাঁর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, এরই প্রমাণ শহিদুলের শরীরে—আশঙ্কা করি, আরও করার ইচ্ছায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এই আদেশ বাতিলের আবেদন করেছে, যার শুনানি হবে আজ।

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম প্রশ্ন হলো কেউ যদি প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ করে, তাহলে তো আইনসম্মতভাবেই সরকারের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের এখতিয়ার আছে। গৃহস্থবাড়িতে ডাকাতের মতো হামলার কারণ কী? কেন ক্রসফায়ার, গুম নিয়ে অবিরাম মিথ্যাচার? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের কেন এত বেআইনি কাজে আগ্রহ? সরকারের কেন এই পথে এত উৎসাহ?

এর আগের দুদিন শহিদুল পথে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবি তুলতে গেছেন, তাড়া খেয়ে আক্রান্ত হয়ে সেই নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর ভয়াবহ আক্রমণের চিত্র সবাইকে জানাতে চেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ উপস্থিত করেছেন। শহিদুলের মত তো তাঁরই হবে, সেটা তো সরকার বা অন্য যে কারও সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। এই না মেলাটাই কি শহিদুলের অপরাধ? আর এতে যদি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে কারা দায়ী? যারা রামদা, লাঠি, হেলমেটসহ সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় পাঠাচ্ছে—তারা; না যঁারা এ অবস্থার কথা গণমাধ্যমে জানাচ্ছেন, তঁারা?

সরকারকে বলি, শহিদুলের কোনো সাক্ষাৎকার বা বক্তব্য যদি আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয়, তাহলে আপনাদের পাল্টা বক্তব্য উপস্থিত করাই তো যুক্তিযুক্ত ছিল। কথার উত্তর কথা, লেখার উত্তর লেখাই তো হওয়ার কথা। আইনি প্রক্রিয়াতেও তা হতে পারত। যারা তথ্য ও মতের মোকাবিলা করতে পারে না, তারাই অসহিষ্ণু হয়, আর কথা বা লেখার জন্য গুম, খুন বা অত্যাচার—এটা তো জঙ্গিবাদী মতাদর্শ।

গত কিছুদিনে তরুণেরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে রাস্তায় এসেছেন। সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবি কিংবা বলা যায় বেঁচে থাকার দাবি। বাংলাদেশে বছরে প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ খুন হয় রাস্তায়—এর চার গুণ বেশি মানুষ জখম হয়, অনেকের অবস্থা হয় মৃত্যুর চেয়েও খারাপ এবং এসব দুর্ঘটনা ঘটে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া চালক, খারাপ রাস্তা, চালকদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা, প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভর করে ফেলা ইত্যাদি কারণে। সব কটিরই সমাধান সম্ভব, অথচ এর সমাধানে কোনো নজরই দেখা যায়নি সরকারের। বছরের পর বছর একই অবস্থা চলায়, দুর্নীতি-লুণ্ঠন-সন্ত্রাস সব সমাধানের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় যে ক্ষোভ, তারই প্রকাশ ঘটেছে স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েদের আন্দোলনে।

সাত দিন ধরে সড়কে ছিল কিশোর বাহিনী। কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি, ভাঙচুর করেনি। সরকারের আশ্বাস বাস্তবায়নের পথ দেখতে চেয়ে নিজেরাই দিনভর পরিশ্রমের পথ বেছে নিয়েছে। লাইসেন্স, ফিটনেস দেখেছে, রাস্তায় শৃঙ্খলা এনেছে। এই শিক্ষার্থীদের জন্য রাস্তায় চলাচলে কারও সমস্যা হয়নি, বরং আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সড়ক চলাচল, বিনা পয়সায় তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছে। মন্ত্রীরা উল্টো পথে গিয়ে, আইন ভেঙে পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারি বড় কর্মকর্তা, ভিআইপি, সিআইপি ধরা খেয়েছেন এই কিশোরদের হাতে। বহু গাড়িচালকের লাইসেন্স নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেস নেই। জনগণের সমস্যা হয়েছে বরং সরকার-সমর্থিত মাফিয়া চক্রের ধর্মঘটের কারণে, সরকারের সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে। তারা লাইসেন্স ও ফিটনেস ছাড়াই বাস ও দেশ চালাতে চায়—সমস্যা সেখানেই! সে জন্য সমাজের সর্বাত্মক সমর্থনে শক্তিপ্রাপ্ত এই আন্দোলনের মধ্যেও ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, চালক, পথচারীসহ ১০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

আর সর্বজনের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে শ্রমক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, ঘর্মাক্ত সেই শিশু-কিশোরদের ওপরই পুলিশ সহযোগে সরকারি সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। নিরস্ত্র, দায়িত্বশীল, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ, প্রতিবাদী ও গঠনমূলক ভূমিকা দিয়ে যে কিশোর ছেলেমেয়েরা সারা দেশ এবং বিশ্বের মানুষের সামনে এক মুগ্ধ বিস্ময় ও আশাবাদিতা তৈরি করেছে, তাদের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। কিশোরদের সমর্থনে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পথে নেমেছে, তখন আক্রমণ আরও উলঙ্গ হয়েছে। ৪, ৫, ৬ আগস্ট ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলি, যৌন আক্রমণ, লাঠি, চাপাতি—কোনো কিছুই বাদ দেয়নি এরা। সাংবাদিকেরাও রেহাই পাননি। যেন সরকারকে যেকোনো মূল্যে লুটেরা, চাঁদাবাজ, খুনিদের রক্ষা করতেই হবে! তিন শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ছেলেমেয়ের শরীরে এখন সরকারি পুলিশ কিংবা সন্ত্রাসীদের আঘাত। হেলমেট, চাপাতি, বন্দুকসহ আক্রমণকারীদের এত এত ছবি থাকতেও সরকার তাদের শনাক্ত করতে নারাজ, অনুপ্রবেশকারী বলতে থাকবে কিন্তু কাউকে ধরবে না—এটাই সরকারের অবস্থান।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, বর্তমান সময়ে আইনের শাসন হয়ে দাঁড়িয়েছে এ রকম—যারা প্রকাশ্যে বন্দুক, রামদা, হাতুড়ি নিয়ে মানুষ মারবে, তারা সরকারের সব রকম বাহবা পাবে আর যারা তাদের হাতে ক্ষতবিক্ষত হবে বা যারা মানুষ হিসেবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, হুমকি-হামলা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, রিমান্ড হবে, রাতের অন্ধকারে তুলে নেওয়া হবে। সরকার কি এ অবস্থাকেই আইনের শাসন বলছে?

আমার তৃতীয় প্রশ্ন, সরকারের কেন এত ভয়? সরকারকে গত কিছুদিন থেকেই খুব ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ভয়, প্রশ্নকে ভয়, যেকোনো মতামতকেই ভয়, ক্যামেরা আর সাংবাদিকদের ভয়, ফেসবুক-ইন্টারনেটে ভয়। সরকারের এই ভয়ই বাড়িয়েছে অসহিষ্ণুতা, বাড়িয়েছে দমন-পীড়নের মাত্রা। বর্তমান ডিজিটাল কালে কোনো তথ্যই তো দেশের সীমানায় আটকে থাকবে না। যে সরকার নিজেদের সাফল্যগাথায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং মহাশূন্যে উপগ্রহ স্থাপনকে উচ্চস্থান দেয়, তারাই এখন ইন্টারনেট-ফেসবুক-আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ভয়ে সন্ত্রস্ত। কেন?

আমার চতুর্থ প্রশ্ন, সরকার কি ভুলে গেছে যে দেশে এখনো সংবিধান আছে? বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই প্রত্যেকের আইনসম্মত অধিকার নির্ধারিত আছে। রাতের আঁধারে বাড়িঘরে হামলা করে পরিচয় অস্পষ্ট রেখে কাউকে তুলে নেওয়া যায় না, যখন-তখন তুলে নিয়ে নির্যাতন করা বা খুন করার অধিকার রাষ্ট্রকে এই সংবিধানও দেয়নি। উপরন্তু সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের তাঁর মতপ্রকাশের অধিকার আছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকের প্রতিবাদ, সমাবেশের অধিকার আছে। সরকার তাহলে কেন বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করছে?

মাঝেমধ্যে ভাবতে চাই, সরকারের উপদেষ্টা শুভাকাঙ্ক্ষী বুদ্ধিজীবীদের সবাই নিশ্চয়ই বিকল বা অন্ধ হয়ে যাননি। এঁরা নিশ্চয়ই সরকারকে থামাতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু দেখি, এঁরাও কিশোর-তরুণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হাতুড়ি, রামদা, চাপাতি, পিস্তল, লাঠি হাতে সরকারি সন্ত্রাসীদেরও চোখে দেখেন না। তুলে নিয়ে নির্যাতন, হেফাজতে নির্যাতন, পথে পথে নির্যাতন তাই চলছেই। কিন্তু মিথ্যা কথার তোড়ে, নিয়ন্ত্রণের জালেও ভয়ংকর নির্মম দৃশ্যাবলি ঢাকা যাচ্ছে না। ক্যামেরা ভেঙে, সাংবাদিক রক্তাক্ত করে, মিডিয়ার ওপর রক্তচক্ষু দিয়ে কি সত্য ঢাকা যায়? মানুষের স্মৃতি, রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা কি মুছে ফেলা যায়? 

আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৯, ২০১৮ 

গণতান্ত্রিক পন্থায় বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চায় জাপান

গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় জাপান। একই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা জাপানি নাগরিক এবং দেশটির বিনিয়োগের সুরক্ষাও চায় টোকিও। ১৪ ঘণ্টার সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসা জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো তার সরকারের এমন  আকাঙ্ক্ষার কথাই জানিয়ে গেছেন। এ সময় বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। বাংলাদেশের তরফে তার কাছে দু’টি বিষয় চাওয়া হয়েছে তা হলো- হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ভয়াবহ এবং নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে বাংলাদেশ ভ্রমণে জাপানি নাগরিকদের প্রতি দেশটির সরকার যে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি রেখেছে তা শিথিল করা। 

দ্বিতীয়ত: সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বাত্মক লড়াইয়ে (অল অ্যাফোর্ট ফাইট) টোকিও’র আরো ঘনিষ্ঠ সহায়তা।

জাপানের মন্ত্রী এ দুটি বিষয়েই ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে গেছেন।

মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসা জাপানি মন্ত্রী তারো কোনো রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তার দেশের তরফে মিয়ানমারকে দেয়া  ৫ দফা প্রস্তাব  শেয়ার করে গেছেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। উভয় বৈঠকেই তিনি টোকিও’র আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থান তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকা জাপান এখানে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে জাপানি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ি প্রকল্পের আশপাশের এলাকাগুলোতেই তারা বিনিয়োগে আগ্রহী। সেটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জানিয়েছেন মন্ত্রী তারো কোনো। 

বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- জাপানি মন্ত্রীর সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও এটি অত্যন্ত সফল এবং কার্যকর ছিল। কারণ সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে জাপান এই মুহূর্তে কি ভাবছে তা তিনি স্পষ্ট করে গেছেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হতে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক যে আরো বিস্তৃত এবং গভীর করতে চায় জাপান সেটিও খোলাসা হয়েছে। এক কূটনীতিক বলেন- জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিশেষত: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চেয়ে জাপানের একান্ত চাওয়া সেটি স্পষ্ট করেছেন মন্ত্রী।
একই সঙ্গে তিনি আরো বেশি জাপানি বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের কাছে দু’টি বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন। প্রথমত জাপান এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য (অস্থায়ী) ২০২৩-২০২৪ মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি মেয়াদে জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদ থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে জাপান এ অঞ্চল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো তার এবারের সফরে ফের বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন। দ্বিতীয়ত ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২৫ এ জাপান, রাশিয়া এবং আজারবাইজান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নভেম্বরের মধ্যে ওই ভোটাভুটি হবে। এতেও বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ঢাকা দুটি নির্বাচনে সমর্থন প্রশ্নে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে মালিকদের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে


মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনে পথচারীর নয়, বাস মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা যায় না বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে পরিকল্পনাবিদদের সংগঠনটি।

বিআইপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

এতে বলা হয়, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে একমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনটিতে সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশ দায়ভার যানবাহনের চালকের ওপর বর্তানোর চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। এতে সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরি ব্যক্তি, বাস মালিক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাজনিত দায়মুক্তির সুযোগ রয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলা হয়, সড়কের পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গুণগত মান তদারকি এবং যানবাহনের ফিটনেস, চালক ও শ্রমিকের তদারকির মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও এতে স্থান পায়নি।

প্রস্তাবিত আইনে অবহেলা বা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হলে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে বিআইপি। সংগঠনটির মতে, দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড হওয়া উচিত। পাশাপাশি অর্থদণ্ডের পরিমাণ আরো বাড়ানো এবং কারাদণ্ডের পরিবর্তে অর্থদণ্ডের সুযোগ বাতিল করা উচিত।

প্রস্তাবিত আইনে হত্যার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট গাড়ি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবেন তার বিশেষ বর্ণনা অনুপস্থিত। এই তদন্ত কমিটিতে উপযুক্ত কারিগরি লোক নিশ্চিত না করা গেলে হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আইনে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করা এবং দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য স্বতন্ত্র সেল গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিআইপি।

বিধিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিআইপি বলেছে, আইনের বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য অচিরেই বিধিমালা প্রণয়ন করা দরকার। সড়কে নারী নিরাপত্তাসহ বিশেষ ইস্যুতে আলাদা বিধিমালা প্রণয়ন দরকার।

প্রস্তাবিত আইনে কোনো দুর্ঘটনায় ‘গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে’ শব্দটি আইনের প্রয়োগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি করে দেবে। বিধিতে ‘গুরুতরভাবে’ শব্দটি বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে বিআইপি মনে করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ট্রাফিক মনিটরিং সেল এবং বিশেষ ট্রাফিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।

গাড়ির গতিসীমা সম্পর্কিত কোনো আইন নেই জানিয়ে বিআইপির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন সড়কের জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করতে আইনি কাঠামো ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চালক ও সহযোগীদের শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়ন ছাড়া নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নিয়মিতভাবে চালক ও সহযোগীদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনটির নামকরণ নিয়েও সমালোচনা করে বিআইপি। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত আইনের নামকরণ ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’ করার প্রস্তাব পেশাজীবী ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে করা হলেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। বিআইপি মনে করে, চূড়ান্ত আইনের নামকরণে সড়ক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তার সব অনুষঙ্গ বিবেচনায় নেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার হিসেবে অভিহিত করে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিআইপি। এ সময় বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক একেএম আবুল কালাম, সহসভাপতি আকতার মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ৯, ২০১৮ 

বিজয়ী ঘোষণার দাবি আরিফুল হক চৌধুরীর

সিলেটে স্থগিত হওয়া দুটি ভোট কেন্দ্রে সব ভোট আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেলেও বিজয়ী হবেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এমন কঠিন সমীকরণেও হাইকমান্ডের নির্দেশে দুটি কেন্দ্রের ভোটারের কাছে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সঙ্গে প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও। এ দুটি কেন্দ্রের ভোটারের কাছে তারা প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে- এরই মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থকরা দুটি কেন্দ্রের সব ভোটারের হিসাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দেখা গেছে- ৩০১ জন ভোটার এলাকাতেই নেই।

মৃত্যু ও প্রবাসে বসবাস এবং চাকরিতে বদলির কারণে এরা ভোট দিতে পারবেন না। সেই হিসেবে তার বিজয় নিশ্চিত। গতকাল বিকালে সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৩০১ জনের তথ্য দিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ সময় তিনি লিখিতও দেন। তার এ দাবির জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন- তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। পত্রটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন- স্থগিত দুই কেন্দ্রের সব ভোট কামরান পেলেও কামরান বিজয়ী হতে পারছেন না। কারণ, তখনও আরিফ ১৪০ ভোটে এগিয়ে থাকবেন। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে আরিফ পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। নৌকা প্রতীকে কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৬২৬। স্থগিত ওই দুই কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। এর মধ্যে মারা গেছেন ও প্রবাসে রয়েছেন ২৯৮ জন। চাকরির কারণে আরো তিনজন বদলি হয়েছেন। সেই হিসেবে দুই কেন্দ্রে ভোটের দিন ৩০১টি ভোট কাস্ট না হওয়ারই কথা। এগুলো বাদ দিলে এই ওয়ার্ডে ভোটসংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪৮৬টি। এগুলোর সবও যদি কামরান পেয়ে যান তবুও তিনি বিজয়ী হতে পারবেন না। কারণ, তখন আরিফ কামরানের চেয়েও ১৪০ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন। 

ভোটের এই সমীকরণ নিয়ে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামানের কাছে দেয়া পত্রে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক উল্লেখ করেছেন- স্থগিত হওয়া গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটারের মধ্যে মারা গেছেন ৮০ জন ও বিদেশে আছেন ৮০ জন। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২২২১, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার-১১৫৩ ও মহিলা ভোটার-১০৬৮ জন। হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ২৫৬৬। মোট ২৫২৬ ভোটারের মধ্যে মারা গেছেন ৩৮ জন ও বিদেশে আছেন ১০০ জন, চাকরিজনিত কারণে বদলি হয়েছেন ৩ জন। 

যেহেতু দুটি কেন্দ্রে ৩০১ জন ভোটার অনুপস্থিত সুতরাং সেখানে আর কোনো পুনঃভোটের প্রয়োজন নেই। এই হিসেবের প্রেক্ষিতে তাকে বিজয়ী করার দাবি জানান তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান আরিফুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে পত্র সমঝে বিষয়টি তারা দেখবেন বলে জানান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আরিফ। বলেন- ভোটের হিসেবে সব ভোট আওয়ামী লীগ পেলেও তিনি অনেক ভোটে এগিয়ে থাকবেন। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান- আরিফুল হক চৌধুরী যে লিখিত পত্র দিয়েছেন সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন। এবং সেটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। তিনি বলেন- স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভোটের দিন সকালে ওই দুটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। এ ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে বলে জানান তিনি। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের এই ফলাফলে তারা সন্তুষ্ট নন। ফলের ভোট গণনাকালেই তারা বিজয়ের হাল ছেড়ে দেন। এমনকি ফলাফল ঘোষণাকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাননি আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও। ১৩২ কেন্দ্রের ফলাফলের পরও দলীয় প্রধানের নির্দেশে ভোটের মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে গত দুই দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি কেন্দ্রের এলাকার ভোটারদের নিয়ে তারা মতবিনিময় করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও ছিলেন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮  

বাংলাদেশে গঠনমূলক সমালোচনা অনুপস্থিত

টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিবন্ধ


বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণ ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তারা জনগণের স্বার্থে মাঠে নেমেছে। এটা বিস্ময়কর। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কিছু উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বিভিন্ন  জায়গায় পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।

এ ধরনের বৈরী আচরণ দুঃখজনক। কেননা, কয়েকটি ভাঙচুরের ঘটনা ছাড়া শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করছিল। এমনকি তারা গাড়িচালকদের লাইসেন্স ও ফিটনেস পেপার যাচাই করে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছিল। শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। খবরে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলে তারাও হামলার শিকার হয়। অথচ পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তবে বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলার কথা অস্বীকার করেছে। বলেছে, তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবি বিবেচনা করছে। এছাড়া সম্প্রতি সরকার বেপরোয়া বা অসতর্কতামূলক গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু বা গুরুতর আহত করার দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে খসড়া সড়ক পরিবহন আইন প্রস্তাব করেছে। 

তবে বেপরোয়া ও অসতর্ক গাড়ি চালনার কারণে কারো মৃত্যু ঘটলে ওই চালকের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়তে রাজি না। কিন্তু এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, সরকার ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা সত্য যে, কোনো নেতৃত্ব ছাড়াই এ আন্দোলন গড়ে উঠেছে। কিন্তু নির্বাচনের বছরে এমন আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বেশ সতর্ক রয়েছে। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ সরকার আন্দোলন নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। বলপ্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘটনা থেকে এটা বোঝা যায়। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাংলাদেশে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা ফুটে উঠেছে। বর্তমানে সেখানে গঠনমূলক সমালোচনা অনুপস্থিত। যখন এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখন জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজের মানুষের চেপে রাখা আকাঙ্ক্ষা ও দাবির বিস্ফোরণ ঘটে। এছাড়া, দেশের নির্বাচনে পরাজিত দলের ফল মেনে না নেয়া ও সংসদে হাজির না হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনেই অংশ নেয়নি। এতে আওয়ামী লীগ অনায়াসে জয় পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাস থেকেই বর্তমান  পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় টিকে থাকা কঠিন। বাংলাদেশকে অতীতের বিষয় নিয়ে রেষারেষি বন্ধ করে ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই পার্লামেন্টে বিরোধী দলের ভূমিকার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তখনই তারা পুরো বাংলাদেশি সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। অন্যথায় বাংলাদেশে জনসম্পৃক্ত আন্দোলন হতেই থাকবে। এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে এসব আন্দোলনে বহিঃশক্তির ইন্ধন থাকতেই পারে। তাই বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যা মেনে নিয়ে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলে এবং পরবর্তী নির্বাচনে সকল বৈধ দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেই ভালো হবে। 

(টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধের অনুবাদ। নিবন্ধটি লিখেছেন রুদ্রনীল ঘোষ। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক।) 
কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮  

শহিদুলের মুক্তি দাবি চার শতাধিক ভারতীয় শিল্পী-আলোকচিত্রীর


আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের নিঃশর্ত ও সম্মানজনক মুক্তি দাবি করেছেন ভারতের চার শতাধিক শিল্পী ও আলোকচিত্রী। তারা শহিদুল আলমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা ভারতীয় ফটোগ্রাফার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীগোষ্ঠী শহিদুল আলমের গ্রেপ্তার নিয়ে চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ। এতে তারা শহিদুল আলমকে নিজের সহকর্মী, বন্ধু ও অভিভাবক অভিহিত করে বলেন, তাকে অকারণে ও বিধিবহির্ভূতভাবে আইসিটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে তুলে ধরে শহিদুল আলম কোনো ভুল করেননি। এসময় তারা সড়কে অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে অনেক অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হয় জানিয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনকে যুক্তিসঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ দাবি করেছেন। তারা বলেন, সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের সঙ্গে একমত না হওয়া ও তার সমালোচনা করা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এ জন্য যদি শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, শহিদুল আলম তার ওপরে শারীরিক নির্যাতনের যে দাবি করেছেন তা নিয়ে ভারতীয় এই শিল্পীগোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে ৪৩৮ জন স্বাক্ষর করেছেন।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/আগস্ট ৯,২০১৮  

Wednesday, August 8, 2018

পাঁচ বছরে ঋণ পুনঃতফসিল ৮৪ হাজার কোটি টাকা

২০১৬ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছিল ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। সেখান থেকে প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়ে গত বছর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে গত বছর মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ পুনঃতফসিল করতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংকগুলো। এভাবে গত পাঁচ বছরে মোট ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঋণ পুনঃতফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারি হয় ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সময়ে আরো দুই দফায় সার্কুলার জারি করে ওই নীতিমালার কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিলের গতি বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছিলেন খেলাপি গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পর গত বছর আরো ২৪ শতাংশ বেড়ে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে শুধু গত পাঁচ বছরেই ব্যাংকগুলো থেকে ৮৪ হাজার ৫০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পেয়েছেন খেলাপি গ্রাহকরা। নির্বাচনী বছর হওয়ায় চলতি বছর দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংকাররা বলছেন, গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ের স্বার্থেই ঋণ পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে চাপের মুখে প্রভাবশালী গ্রাহকদের পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংক। এমনকি একই গ্রাহকের কোনো কোনো ঋণ ১০ বারও পুনঃতফসিল করতে হয়েছে। এর পরও এসব গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যাংকের টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য হলো, বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও প্রভাবশালী কিছু গ্রাহককে অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়েই ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধার অপব্যবহার করছে। বছরের পর বছর ধরে একই গ্রাহককে নানা ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

ব্যালান্সশিটে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে গিয়েই ব্যাংকগুলো ঢালাওভাবে বড় কিছু গ্রাহককে ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দিচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ঘাটতির কারণে বিশৃঙ্খলা চলছে। এ সুযোগে অসৎ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জনগণের আমানতের অর্থ তছরুপ করছেন। ঋণের নামে ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এর দায় এসে পড়ছে সৎ ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, আমানতকারীসহ সাধারণ মানুষের ওপর।

তিনি বলেন, নানা কারণে ব্যাংকগুলো কিছু গ্রাহককে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। সে ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এখন ঝুঁকি কমাতে গিয়ে ওই গ্রাহকদের বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে। ভালো গ্রাহকরা ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আর খারাপ গ্রাহকরা এটিকে অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। ঢালাওভাবে পুনঃতফসিল সুবিধা না দিয়ে ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব হবে অর্থ আদায়ে মনোযোগী হওয়া। বড় ঋণ থেকে বেরিয়ে এসএমই, কৃষিসহ উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে ব্যাংক ঝুঁকিমুক্ত হবে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়টি ব্যাংকিং খাতের নতুন কোনো ধারণা নয়। তবে ঢালাওভাবে এ সুবিধা দেয়ার পক্ষপাতী আমি নই। ব্যাংকের ব্যালান্সশিট পরিচ্ছন্ন রাখতে অনেক সময় ঋণ পুনঃতফসিল করতে হয়। তবে ক্যাশ ফ্লো দেখে তবেই গ্রাহকদের ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়া উচিত। অন্যথায় একই সুবিধা বারবার দিয়েও গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংকের অর্থ আদায় সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৫৩ দশমিক ১ শতাংশই দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিল করেছে। এক্ষেত্রে সরকারি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবদান ৪ দশমিক ১ শতাংশ। যদিও বিদেশী ব্যাংকগুলো ১ শতাংশেরও কম ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা দিয়েছে।

তবে কোন শ্রেণীর ব্যাংকঋণের কত শতাংশ পুনঃতফসিল করেছে, এমন পরিসংখ্যানে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০১৭ সালে এ ব্যাংকগুলো ঋণের ২৩ দশমিক ২ শতাংশই পুনঃতফসিল করতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ হার ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বেসরকারি ৪০টি ব্যাংক বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ পুনঃতফসিল করেছে। যদিও বিদেশী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০১৭ সালে ঋণ পুনঃতফসিলকৃত ঋণের অর্ধেকের বেশি বা ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশই করেছে মাত্র পাঁচটি ব্যাংক। এ তালিকায় নাম রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ও বেসরকারি দুটি ব্যাংকের। একইভাবে পুনঃতফসিল করা ঋণের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশই মাত্র ১০টি ব্যাংকের। এ তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের পাশাপাশি নাম রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংকের।

বিশেষ শ্রেণীর গ্রাহকের ঋণ প্রতি বছর পুনঃতফসিল করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, নীতিমালায় কোনো ঋণ সর্বোচ্চ তিন দফায় পুনঃতফসিলের কথা উল্লেখ থাকলেও ১০-১৫ বারও এ সুবিধা পাচ্ছেন কোনো কোনো গ্রাহক। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আবদার ও প্রভাবশালীদের চাপের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক নতি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চায় দেশে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকুক। এজন্য বছরের শেষের দিকে বাছবিচার ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল আবেদনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতে ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর বাইরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করে ব্যালান্সশিট থেকে বাদ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।

 কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ৮,২০১৮

দিনে লাখ টাকা ‘চাঁদা আদায়’


মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে ফুটপাতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার হকার বসেন। এতে পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা করার জন্য প্রতিদিন তাঁদের ৫০-১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বর পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩, ৭ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এর মধ্যে পদচারী-সেতুর দক্ষিণ পাশের পুরোটাই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

গত রোববার গোলচত্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতজুড়ে নানা ধরনের স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকানে ফল, মুঠোফোনের সরঞ্জাম, কাপড়চোপড়, মানিব্যাগ, বেল্ট, প্রসাধনসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি ফুটপাতে পুরোনো বই, পত্রিকা, কাপড়, চা ও খাবারের স্থায়ী দোকানও আছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রায় পুরো ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি দোকান থেকে লাইনম্যানরা ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন। দিন শেষে সে টাকার পরিমাণ লাখ ছাড়িয়ে যায়। সে টাকা স্থানীয় পুলিশ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়। ছয়জন লাইনম্যান টাকা তোলেন। তবে ব্যবসায়ীরা লাইনম্যানদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

শাহ আলী প্লাজার সামনে মুঠোফোনের সরঞ্জামাদির একজন বিক্রেতা বলেন, ‘রাস্তায় ব্যবসা করতে হলে সবাইকে খুশি রাখতে হয়। এরপরও মাঝেমধ্যে পুলিশ ঝামেলা করে।’

ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের ছবি তোলার সময় এই প্রতিবেদককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন একজন ফল বিক্রেতা। তিনি মুঠোফোন থেকে ছবি মুছে দিতে বলেন। নাম জানতে চাইলে তিনি সেখান থেকে সরে যান।

এদিকে ফুটপাতজুড়ে দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া রহমান মিরপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ফুটপাতজুড়ে সারি সারি দোকান। হাঁটাচলা করা যায় না। অনেক সময় বাসের জন্য মূল সড়কেই অপেক্ষা করতে হয়।

সেনপাড়া পর্বতার বাসিন্দা হারিচ মোল্লা বলেন, সকালে মেয়েকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার সময় হাঁটার জন্য রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করতে হয়। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক শিক্ষার্থী মূল সড়ক দিয়ে হাঁটে।

গত রমজানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন রশীদ ঈদের পরে তাঁর ওয়ার্ডের অংশের হকার উচ্ছেদ করা হবে বলে প্রথম আলোকে বলেছিলেন। কিন্তু এখনো উচ্ছেদ না হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে করা যাবে না। এটা যৌথভাবে করতে হবে। যাতে উচ্ছেদের পরেই আবার না বসতে পারে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবাশ্বের চৌধুরী বলেন, মেয়র আনিসুল হকের সময় একবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদুল কবীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী চাঁদা তোলা ও টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নন। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু করলে এর দায়ভার আমাদের নয়।’

ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসায়ী উচ্ছেদের দায়িত্ব ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের। প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারণত ফুটপাত সংস্কার বা অন্য কোনো বিষয় মাথায় রেখে উচ্ছেদ করা হয়। আপাতত মিরপুরের গোলচত্বরে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেই। কারণ, উচ্ছেদের পরের দিনই আবার দোকান বসে যায়।

কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘থানার কে কী করে জানি না। তবে আমি ফুটপাতের হকার কেন, কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করি।’

অন্যদিকে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে বদলি হয়ে এই থানায় এসেছি। আসার পরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। তবে অভিযোগের বিষয়টি আমি দেখব।’
  •  কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৮,২০১৮ 

Govt must get down to work, stop beating about the bush

Editorial


THE protests of the school and college students, who had taken to the streets for nine days on end till Monday demanding justice for the death of their fellows in a road accident in Dhaka on July 29, road safety and the cleansing of the road transport administration, ended, bringing to the fore the failures of the government and showing how to do the job that has not been done for decades because of corruption. But what the government has done, and is doing, surrounding the protests of the students reeks of a foul play on a few counts. 

The police, who stopped attacking the protesters after the first two days, got back into their usual self attacking the protesters on August 2 while the activists of the Chhatra League, the student wing of the ruling Awami League, attacked the students continuing with their peaceful protests and the journalists covering the protests in August 3–6. The attacks, by Chhatra League activists, in helmets or with their face wrapped around with pieces of cloth, brandishing arms and sharp weapons, left scores of protesters and about two dozen journalists wounded, a few of them grievously, in the very presence of law enforcers, who are reported to have aided the attackers.


The Editors’ Council has rightly condemned the attack on journalists, saying that such attacks are an affront to the freedom of expression and the media, as is guaranteed by the constitution. Democracy, which is one of the hard earned gains of the liberation war, would be, the council says, destroyed if the media are not allowed to function freely. The Awami League’s general secretary, at a news conference, meanwhile, on Monday, said that the party would take steps against any Chhatra League activists who would be found responsible for attacks on the student protesters and journalists. 

For that to happen, the complaints need to have evidence against Chhatra League activists proving them to be guilty. A group of young people, older than school and college students, attacked the protesters and journalists on three consecutive days and the police are reported to have either stood idle or helped the attackers. Many of the journalists wounded in the attacks had to be treated in hospital. Newspapers and electronic media have published photographs and video footage of the groups of young people attacking the protesters and journalists. 

Yet, the party’s general secretary now claims that they need evidence to act on the marauding Chhatra League activists. The police should find them out by examining the photographs and video footage and hold them to account. The police should, in any case, do this even if the attackers were, as the ruling party leaders claim, not from the Chhatra League. 

What the government has done, or is doing, in a situation like this, seems to be the manifestation of high-handedness and coercion. The government must stop resorting to such ploys to defuse the force that the protests of the students have showed the nation.

  • Courtesy: New Age/ Aug 8, 2018